রিউমর স্ক্যানারের টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাব দেখতে বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকতের তীরে চেয়ারে বসে অপেক্ষারত পর্যটকদের নয় বরং ছবিটি ২০২২ সালে পাকিস্তানের করাচির ফ্রেঞ্চ সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা। এক পাকিস্তানি ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে উক্ত ছবির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পাকিস্তানি ইউটিউবার ‘Huzaifa M Khan’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই ‘Ek samandar kinare, kuch yaar purane’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত ছবির সাথে বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকতে রাতে ঘূর্ণিঝড় মোখা দেখতে আসা পর্যটকদের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Huzaifa M Khan’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ২৬ জুলাই ‘A dream I’m living in’ শীর্ষক ক্যাপশনে পাকিস্তানের ‘French Beach Karachi’ তে চেক ইন সমেত অপর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Instagram’
অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড় মোখা দেখার জন্য সমুদ্র সৈকতে অপেক্ষারত দাবিতে পর্যটকদের ছবিটি পাকিস্তানের করাচির ফ্রেঞ্চ সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা।
এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আজ বিকেলের মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মায়ানমারের উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।
Screenshot from Prothom Alo
মূলত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাব দেখতে গতকাল ১৩ মে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমান পর্যটকরা। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ২০২২ সালে পাকিস্তানের করাচির ফ্রেঞ্চ সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা একটি ছবিকে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাব দেখার জন্য অপেক্ষারত পর্যটকদের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় মোখা চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর এবং পটুয়াখালীতে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ২০২২ সালে পাকিস্তানের করাচির ফ্রেঞ্চ সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা পুরোনো একটি ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকতে রাতে মোখা দেখতে আসা পর্যটকদের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “নোলানের সিনেমায় অভিনয় করতে মরিয়া ছিলেন মারফি” শীর্ষক শিরোনামে দেশীয় সংবাদমাধ্যম ‘বণিক বার্তা’র অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ঃ
“ক্রিস্টোফার নোলানের সঙ্গে কিলিয়ান মারফির সম্পর্ক প্রায় ২০ বছরের। এর মধ্যে পিকি ব্লাইন্ডার্সের ছয়টি সিজন, ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি সিনেমা, ইনসেপশন ও ডানকার্ক তৈরি করেছেন নোলান। কিন্তু কখনই নিজের সিনেমায় মারফিকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেননি তিনি। ওপেনহেইমারে প্রথমবারের মতো সে সুযোগ পেলেন মারফি। আণবিক বোমার জনক জে. রবার্ট ওপেনহেইমার। তিনি একজন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। ওপেনহেইমার সিনেমায় এ পদার্থবিজ্ঞানীর চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলবেন কিলিয়ান মারফি। ”
দেশীয় সংবাদমাধ্যম ‘বণিক বার্তা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এই লিংকে।
Screenshot: Bonik Barta
যা দাবি করা হচ্ছে
বণিক বার্তা’র অনলাইন সংস্করণের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “বিখ্যাত ব্রিটিশ-আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের সাথে আইরিশ অভিনেতা কিলিয়ান মারফির প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক। এর মধ্যে পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের ছয়টি সিজন, ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র, ইনসেপশন ও ডানকার্ক তৈরি করেছেন নোলান। কিন্তু কখনই নোলান তার সিনেমায় মারফিকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেননি। নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো সে সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি।” অর্থাৎ প্রতিবেদনে পরোক্ষভাবে ৪টি দাবি প্রতীয়মান হয়ঃ
পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজে মারফি অভিনয় করেননি
পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের ছয়টি সিজন তৈরি করেছেন ক্রিস্টোফার নোলান
নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমায় মারফিকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেননি বা সিনেমাগুলোতে মারফি অভিনয় করেননি
নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি
দাবি ১ঃ পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজে মারফি অভিনয় করেননি
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজে কিলিয়ান মারফি অভিনয় করেনি শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং সিরিজটিতে মারফি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান পদ্ধতি ব্যবহার করে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ সহ বিভিন্ন কন্টেন্ট সম্পর্কিত তথ্যের অনলাইন ডাটাবেস “IMDB”- তে দেখা যায় যে “কিলিয়ান মারফি” সিরিজটির প্রধান “থমাস শেলবি” চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
Screenshot: IMDB
দাবি ২ঃ পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের ছয়টি সিজন তৈরি করেছেন ক্রিস্টোফার নোলান
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের কোনো কিছুই নোলান পরিচালনা করেননি। সিরিজটির ৬টি সিজন ৬ জন আলাদা পরিচালক পরিচালনা করেছেন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের অনলাইন ডেটাবেজ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘Imdb’ এ “Full Cast & Crew: Peaky Blinders (2013–2022)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত পরিচালকের নামের তালিকায় ক্রিস্টোফার নোলানের নাম পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Imdb
ওয়েবসাইটের তথ্য মতে এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া পিকি ব্লাইন্ডার্সের ৬ টি সিজনে মোট ৬ জন পরিচালক পরিচালনা করেছেন। তারা হচ্ছেন টম হারপার, অটো বাদার্স্ট, ডেভিড ক্যাফেরি, টিম মিলেন্টস, কম ম্যাককার্থি ও এনথনি বায়ার্ন।
অর্থাৎ, পিকি ব্লাইন্ডার্স ড্রামা সিরিজের পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান নন।
দাবি ৩ঃ নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমাগুলোতে মারফি অভিনয় করেননি
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমাগুলোতে মারফি অভিনয় করেননি শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং দাবির প্রতিটি সিনেমাতেই কিলিয়ান মারফি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান পদ্ধতি ব্যবহার করে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ সহ বিভিন্ন কন্টেন্ট সম্পর্কিত তথ্যের অনলাইন ডাটাবেস “IMDB”- তে দেখা যায় যে “কিলিয়ান মারফি” ক্রিস্টফার নোলান পরিচালিত ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছে। তবে এগুলোর কোনোটিতেই তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি।
Image Collage by Rumor Scanner
এছাড়াও, মারফি The Dark Knight Trilogy- three Christopher Nolan Batman movies অর্থাৎ, ব্যাটম্যান সিজিরেজ তিনটি সিনেমাতেই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এক্ষেত্রে-ও এগুলোর কোনোটিতেই তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি।
Image Collage by Rumor Scanner
দাবি ৪ঃ নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি
দাবি করা হয়েছে, ক্রিস্টোফার নোলানের সঙ্গে কিলিয়ান মারফির প্রায় ২০ বছরের (Batman Begins এর সময় থেকে) সম্পর্কের মধ্যে নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি।
ফ্যাক্টচেক
নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং নোলানের ওপেনহেইমার চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি।
ইতোমধ্যেই তিন নম্বর দাবির ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, ক্রিসোফার নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমাগুলোতে মারফি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যদিও এগুলোর কোনোটিতেই তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যগাজিন ভ্যারাইটি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্রথমবার ক্রিস্টোফার নোলানের চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন কিলিয়ান মারফি।
মূলত, কিলিয়ান মারফি অভিনিত ড্রামা সিরিজ পিকি ব্লাইন্ডার্স এর এ পর্যন্ত ৬ টি সিজন মুক্তি পেয়েছে। এ ড্রামা সিরিজের পরিচালক ছিলেন যথাক্রমে টম হারপার, অটো বাদার্স্ট, ডেভিড ক্যাফেরি, টিম মিলেন্টস, কম ম্যাক কার্থি, এনথনি বায়ার্ন। এই জুলাই মাসের শেষের দিকে ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত এবং কিলিয়ান মারফি অভিনীত আসন্ন নতুন চলচ্চিত্র ‘ওপেনহেইমার’ মুক্তি পাবে। এখানে অনুমেয় যে, কিলিয়ান মারফি’র অভিনীত এই সিরিজটির জনপ্রিয়তা এবং ওপেনহাইমারের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারফি সেহেতু সিনেমাটি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে পিকি ব্লাইন্ডার্স সিনেমার নাম ভুলক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমাগুলোতে মারফি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি উল্লেখ করতে গিয়ে; নোলানের ব্যাটম্যান সিরিজের তিনটি চলচ্চিত্র সহ ইনসেপশন ও ডানকার্ক সিনেমাগুলোতে মারফি অভিনয় করেননি উল্লেখ করে ফেলেছে দেশীয় গণমাধ্যম “বণিক বার্তা”।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে বণিক বার্তা তাদের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভুল তথ্য সংশোধন করেছে।
Image Collage by Rumor Scanner
এছাড়াও, “বণিক বার্তা” তাদের প্রতিবেদনে সূত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যগাজিন ভ্যারাইটি-র কথা উল্লেখ করলেও ইন্টারনেটে উপলব্ধ প্রতিবেদনটির প্রথম আর্কাইভ থেকে আলোচিত ৪টি দাবির একটিও পাওয়া যায়নি। বরং প্রতিবেদনটিতে মারফি’কে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে “পিকি ব্লাইন্ডার্স” শীর্ষক সম্বোধন’কে “বণিক বার্তা” অনুবাদের সময়ে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করেছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ক্রিস্টোফার নোলান এবং কিলিয়ান মারফি’কে নিয়ে দেশীয় সংবাদমাধ্যম বণিক বার্তা’য় চারটি (এই প্রতিবেদনে আলোচিত) দাবি প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি,’মা দিবস উপলক্ষে ইউনিমার্টের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে‘ শীর্ষক একটি দাবি এবং এ সংক্রান্ত একটি লিংক ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া একটি স্ক্রিনশট দেখুন –
Screenshot from WhatsApp
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot from Facebook
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মা দিবস উপলক্ষ্যে ইউনিমার্ট কোম্পানি অর্থ পুরস্কার দিচ্ছে না বরং ইউনিমার্টের নাম ব্যবহার করে ভুয়া লিংকের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের মিথ্যা দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সুপার শপ ইউনিমার্ট এর ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে এ সংক্রান্ত উপহার প্রদানের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Unimart website
পরবর্তীতে ইউনিমার্ট এর ফেসবুক পেজে গত ১১ মে ইউনিমার্টের নামে মা দিবস উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া প্রসঙ্গে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ইউনিমার্ট কর্তৃপক্ষ সেই ফেসবুক পোস্টে উক্ত উপহার প্রদান বিষয়ক দাবিটিকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করে।
Screenshot from Facebook
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য ইউনিমার্টের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার প্রদত্ত লিংকটিতে প্রবেশ করার পর প্রথমেই অভিনন্দন জানিয়ে মোট চারটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার নেওয়ার জন্য একটি অপশন আসে।
Screenshot from fyp1mx.cn
সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দিলে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার পাওয়ার কনফার্মেশন মেসেজ পাওয়া যাবে বলে ওয়েবসাইটটি জানান দেয়।
সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার নেওয়ার জন্য একটি লিংক হোয়াটস অ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে ৫ টি গ্রুপ এবং ২০ জন বন্ধুকে পাঠাতে বলা হয়।
Screenshot from fyp1mx.cn
অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার তাদের সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। কিন্তু কোনো ধরণের ইন্টারনেট অফার পাওয়া যায়নি। শেয়ারকৃত ২০ জনও সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে, তবে সেই ২০ জনের কেউই ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার পায়নি।
মূলত, সম্প্রতি দেশীয় সুপার শপ ইউনিমার্ট মা দিবস উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকার উপহার প্রদান করছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ইউনিমার্ট কোম্পানি এমন কোনো অফার দেয়নি। একটি ভুয়া লিংক ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে রমজান উপলক্ষে 50 GB ফ্রি ইন্টারনেটের অফার, নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে ৫০ জিবি ইন্টারনেটের অফার এবং হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট শীর্ষক একাধিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, একটি ভুয়া লিংক ব্যবহার করে ইউনিমার্ট কোম্পানি ৩০ হাজার টাকা উপহার দিচ্ছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ ভুয়া।
সম্প্রতি ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতা’ শীর্ষক থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি ব্যবহার করে ‘শেখ হাসিনা সহ আ.লীগের ৩০ নেতার ওপর আসলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
Screenshot: Sabai Sikhi YouTube
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের একটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি সহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কয়েকটি পুরোনো ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের একটি পুরোনো ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটির পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের ৩০ নেতা। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেওয়ার জন্য সরকারকে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নইলে আর্থিক ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। এই নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলে মনে করেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot: Jamuna TV YouTube
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে হয়েছে।
Screenshot: Youtube
এছাড়াও শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হলেও বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৮ এপ্রিলই যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Screenshot: Voa Bangla website
গত ০১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত দিনের সফর শেষে গত ০৪ মে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন।
অর্থাৎ, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার উক্ত দাবিটি যেদিন প্রচার করা হয় সেদিন থেকে পরবর্তী ৭ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়।
এছাড়াও, বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের লক্ষ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইট (U.S. DEPARTMENT OF THE TREASURY), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট (USA gov) এবং বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা বা তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩০ আওয়ামী লীগ নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও বাহিনীর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, Sabai Sikhi নামের ইউটিউব চ্যানেলটিতে এর আগেও বেশ কয়েকটি মিথ্যা এবং গুজব নিয়ে তৈরি ভিডিও’র অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। যেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তাছাড়া, পূর্বেও রাষ্ট্রপতিসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
‘ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে নিয়োগ (গণ স্বাস্থ্য প্রকল্প-২০২২)’ শীর্ষক শিরোনামে একই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কিত ইউটিউবে ২০২২ সালে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে জরুরি নিয়োগ দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘের উক্ত সংস্থাটির নাম দিয়ে উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার হয়ে আসছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিতে যত অসংগতি
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ইউনিসেফের ওয়েবসাইটেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটটিতে ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে জরুরি নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি সম্পর্কে আরও অধিকতর যাচাইয়ে বিজ্ঞপ্তিটিতে প্রদত্ত ‘গণ স্বাস্থ্য প্রকল্প’ নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Unicef Fake Job Circular 2023
অনুসন্ধানে ইউনিসেফ বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন কোনো প্রকল্প সম্পর্কে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিটিতে ‘ইউনিসেফ গন স্বাস্থ্য প্রকল্প হাউজ নং-৬৫, আগারগাঁও’ শীর্ষক যে ঠিকানাটি ব্যবহার করা হয়েছে, অনুসন্ধানে সেটিরও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, সেখানে উল্লেখিত ঠিকানার সাথে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লেখিত ঠিকানার কোনো মিল নেই।
Screenshot: Unicef website
এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিতে ইমেইল ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘[email protected]’ শীর্ষক একটি ইমেইল ঠিকানা। আবার কোথাও কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে ‘[email protected]‘ (ইউনিসেফ বানান ভুল)।
Screenshot: Unicef Fake Job Circular 2022
বিপরীতে ইউনিসেফের মূল ওয়েবসাইট থেকে প্রতিষ্ঠানটির যে ইমেইল ঠিকানাটি পাওয়া যায়, সেটি হলো [email protected]। সাধারণত এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইলেই ব্যবহার করে থাকে। বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে যে ইমেইল ঠিকানা পাওয়া যায় সেগুলো গুগলের পরিষেবা, যা যে কারো পক্ষে খোলা সম্ভব।
পাশাপাশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে কমপক্ষে ২০ এর অধিক বানান ভুল রয়েছে।
Image: Pronunciation Analysis by Rumor Scanner
একই সাথে নিয়োগের শর্তাবলীতে নিয়োগপত্র দেওয়ার পূর্বেই নির্বাচিত প্রার্থীদের ৫৫০ টাকা শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রেরণ এবং এই টাকা জমা দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীকে যোগদানপত্র দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Unicef Fake Job Circular 2022
তবে ইউনিসেফ বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমন ভুলের ছড়াছড়ি ও নিয়োগপত্র দেওয়ার পূর্বেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের শর্তাবলী থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, এ জাতীয় বিজ্ঞপ্তিগুলো সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে এ জাতীয় কোনো শর্তাবলীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখুন এখানে।
Screenshot: DGHS Job Circular
মূলত, দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে জরুরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব প্রচারের ক্ষেত্রে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোর কেবল তারিখ ও ইমেইল ঠিকানাই পরিবর্তন হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে বানান ভুল সহ বেশ কিছু অসংগতিও ধরা পড়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে।
সুতরাং, ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে জরুরি নিয়োগ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পুনরায় ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বা আবেদন করার দাবিটি সঠিক নয় বরং গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরেই বাংলাদেশি নাগরিকদের এই লটারিতে আবেদনের অনুমতি নেই।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ডিভি ভিসার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে। দেশটিতে যেসব দেশের অভিবাসীদের হার কম সাধারণত সেসব দেশের নাগরিকদের এই কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৭ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে বাংলাদেশীদের জন্য অভিবাসন কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় ২০১২ সাল থেকেই বাংলাদেশ ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছে। তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, ডিভি লটারিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ ১৯টি দেশ। দেশগুলোর নাম দেখা যাবে এখান থেকে।
মূলত, ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ডিভি ভিসার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে। ফলে ২০১২ সাল থেকে ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায় বাংলাদেশি নাগরিকরা। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব দেশের অভিবাসীদের হার কম তাদের এই কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা হয়। তবে অভিবাসীদের হার তুলনামূলক বেশি হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশসহ ১৯ টি দেশকে ডিভি কর্মসূচী থেকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, বিষয়টি পূর্বেও মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি “সয়াবিন তেল খাওয়ার বা রান্নার তেল নয়! সয়াবিন একটি কেমিক্যাল বিশেষ এবং মানব শরীরের জন্য বিষ!” – ডাঃ দেবী শেঠি” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য ডাঃ দেবী শেঠির মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সয়াবিন তেলের বিষয়ে ডাঃ দেবী শেঠি উক্ত মন্তব্যটি করেননি বরং কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে মন্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে ব্যবহার করে মূলধারার কোনো গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে উক্ত বক্তব্যের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
ডাঃ দেবী শেঠি ভারতের একজন বিখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি ভারতে নারায়না হেলথ নামে একটি বহু-স্পেশালিটি বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন ২০০০ সালে। প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটার অ্যাকাউন্টেও আলোচিত বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে ডাঃ দেবী শেঠির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তাঁর প্রতিষ্ঠান নারায়না হেলথে তাঁর অফিস থেকে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়, তিনি সয়াবিন তেল বিষয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
মূলত, ভারতের কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ দেবী শেঠির বক্তব্য দাবিতে বিভিন্ন সময়েই কিছু ভুয়া বক্তব্য প্রচারিত হতে দেখা গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সয়াবিন তেলের বিষয়ে দেবী শেঠিকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু ডাঃ দেবী শেঠি সয়াবিন তেলের বিষয়ে উক্ত মন্তব্যটি করেননি বলে তাঁর প্রতিষ্ঠান নারায়না হেলথে তাঁর অফিসের পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিবাহিত পর পুরুষের সাথে ঘুমানোর পরে এক মহিলার শারীরিক গঠন গরুর মতো হয়ে যাওয়ার অভিযোগটি সত্য নয় বরং অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করার উদ্দেশ্যে উক্ত নারী গরু সদৃশ কৃত্রিম পা ও লেজ লাগিয়েছে।
একই স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী কাউন্টার (বিপরীত) ভিডিও বানিয়েছে তানজানিয়া গসিপ এবং ওফোরো টিউব। ভিডিওতে অন্য একজনের স্বামীর সাথে শোয়ার পর মহিলাটি গরুতে পরিণত হয়েছে হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মূলত, ২০২২ সালের মে মাসে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে পরকীয়া করার কারণে জিম্বাবুয়েতে এক পুরুষ গরুর মতো হয়ে গেছে দাবিতে অভিনয় করা হয়। উক্ত ভিডিওর কনসেপ্ট থেকেই তানজানিয়ার একটি বিনোদনমূলক ভিডিও নির্মাণকারী দল এটার স্ত্রী ভার্সন মঞ্চস্থ করে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করে। তাদের করা এই ভিডিওটি বর্তমানে বাস্তব ঘটনা দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
গতকাল (১২ মে) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকা এ বিষয়ে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে ‘শান্ত অভিষেক (ওয়ানডে) ম্যাচে শতক ছুঁয়েছেন’ শীর্ষক দাবি করেছে।
উক্ত দাবিতে জাতীয় দৈনিক সমকালের ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot source: Facebook/Samakal
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘শান্ত গতকাল অভিষেক ম্যাচে শতক ছুঁয়েছেন’ শীর্ষক দৈনিক সমকালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হতে প্রচারিত পোস্টের দাবিটি সঠিক নয় বরং গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩ তম ম্যাচে খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে ক্রিকেট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Cricbuzz এর ওয়েবসাইটে নাজমুল হক শান্তর প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শান্ত গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ২৩ তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। আগের ২২ টি ম্যাচে তার কোনো শতক না থাকলেও গতকালের ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি।
Screenshot source: Cricbuzz
ক্রিকেট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Cricinfo এর ওয়েবসাইটেও একই তথ্য রয়েছে।
ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ICC এর ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় শান্তর।
Screenshot source: ICC
মূলত, গতকাল (১২ মে) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। এ বিষয়ে মূলধারার জাতীয় দৈনিক ‘সমকাল’ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে ‘শান্ত গতকাল অভিষেক (ওয়ানডে) ম্যাচে শতক ছুঁয়েছেন’ বলে দাবি করে। তবে, অনুসন্ধানে জানা যায়, গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ক্যারিয়ারে ২৩ তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন। নাজমুল হোসেন শান্ত’র ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০১৮ সালে।
উল্লেখ্য, গতকাল (১২ মে) বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার অনুষ্ঠিত ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত ৯৩ বলে ১১৭ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন। ৪৫ ওভারে ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩ বল বাকি রেখে ৩ উইকেটে জয় লাভ করে বাংলাদেশ।
সুতরাং, নাজমুল হোসেন শান্ত’র ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩ তম ম্যাচে করা প্রথম সেঞ্চুরিকে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি শীর্ষক একটি দাবি দৈনিক সমকাল পত্রিকার ফেসবুক পোস্টে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সফলতার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্প্রতি বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৭০ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ২৬ তম দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন তিনি।
তার এই অর্জনের পর বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ইউটিউবে তাকে নিয়ে চটকদার থাম্বনেইলযুক্ত বিভিন্ন আধেয় প্রচার হতে থাকে।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই প্রতিবেদনে তাকরিমকে ঘিরে বিশ্ব নেতৃত্ব ও বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে তৈরী করা ইউটিউবের এসব আধেয়ের স্বরূপ উন্মোচন করেছে।
ভিউ বাড়ানোর উপায় ‘চটকদার থাম্বনেইল’!
আধেয়গুলোর স্বরূপ উন্মোচন করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি আধেয়তেই ব্যবহার করা হয়েছে চটকদার থাম্বনেইল। অধিকাংশ থাম্বনেইলগুলো তৈরি করা হয়েছে আধেয়ের ভিতরে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী।
এভাবে থাম্বনেইলে ছবির ব্যবহার দর্শক মনে কৌতূহল বা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে যে, আধেয়টির সাথে হয়তো উক্ত ব্যক্তিদেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যা একইসাথে দর্শককে আধেয়টি দেখতে প্রলুব্ধ করবে।
সাধারণত যেকোনো ভিডিও আধেয়ের দর্শকেরা প্রথমেই সেই আধেয়ের থাম্বনেইল ও শিরোনামটি দেখে। এর মাধ্যমে তারা ভিডিও আধেয়টি সম্পর্কে ধারণা নেয় এবং সেটি দেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।
Screenshot: YouTube Help Center
ইউটিউবের সাপোর্ট সেন্টারের পরিসংখ্যান বলছে, ইউটিউবের ৯০ শতাংশ সফল ভিডিওয়ের কাস্টমাইজড বা নিজস্ব থাম্বনেইল ছিল।
অর্থাৎ, দর্শককে নিজের ভিডিও আধেয়ের দিকে টানার অন্যতম আকর্ষণীয় এক উপায় হলো কাস্টমাইজড থাম্বনেইল।
তবে এসব থাম্বনেইল তৈরি করতে গিয়ে সেখানে যদি এমন কোনো বিষয়ের উপস্থাপন থাকে যা মূল ভিডিওতে নেই, সেসব থাম্বনেইলকে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইল হিসেবে আখ্যা দিয়ে এ ধরনের থাম্বনেইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও এসব থাম্বনেইলের অহরহ ব্যবহার ইউটিউবে ঢুকলেই দর্শকমাত্র চোখে পড়বে।
Screenshot: YouTube Help Center
তবে এমন থাম্বনেইলের ব্যবহার বিশেষভাবে দেখা যায় খেলাধুলা, রাজনীতি ও বিনোদনের ক্ষেত্রে। এসব থাম্বনেইলগুলো মাঝেমধ্যে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, দর্শক রীতিমতো বাকরুদ্ধ পর্যন্ত হয়ে পড়েন।
Screenshot: The Financial Express
যদিও অধিকাংশ দর্শকেই জানেন যে, এই ধরনের থাম্বনেইলগুলো ভুয়া, তবুও তারা কেবল থাম্বনেইলের কারণে ভিডিও আধেয়গুলো দেখে থাকেন।
অর্থাৎ থাম্বনেইলগুলো খুবই নিম্নমানের ও ভুয়া হলেও ইউটিউবের দর্শক টানতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই বিষয়টি উপরিউক্ত হাফেজ তাকরিমকে নিয়ে নির্মিত ভিডিও আধেয়গুলোর ভিউ সংখ্যা বিশ্লেষণ করলেও প্রতীয়মান হয়। যা এই প্রতিবেদনের পরের অংশের আলোচনায় থাকবে।
সূত্রহীন বক্তব্য
হাফেজ তাকরিমকে নিয়ে নির্মিত ভিডিও আধেয়গুলো বিশ্লেষণের এই পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম তাকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওগুলোতে প্রদত্ত তথ্যগুলোর কোনো তথ্যসূত্র নেই। অর্থাৎ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বা রাজনৈতিক নেতৃবর্গ কখন, কোথায় তাকরিমকে নিয়ে এসব মন্তব্য করেছে সেসব সম্পর্কে কোনো তথ্য ভিডিওগুলোতে পাওয়া যায় না। বরং দেখা যায়, ভিডিওগুলোতে ভয়েজ ওভারে (নেপথ্য কণ্ঠ) তথ্যগুলো কেবল উপস্থাপন করে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে প্রচারিত বক্তব্যগুলোর মধ্যে সাদৃশ্যও খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, তাকরিমকে নিয়ে 24 News BD নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমের বাড়িতে গিয়ে ১০ লক্ষ টাকা উপহার দিলেন ডিপজল‘ শীর্ষক একটি ভিডিওতে অভিনেতা ডিপজলের নামে প্রচারিত বক্তব্যটি হলো, ‘হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম আবারও বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আরও একটি বিশ্বজয় নিয়ে এসেছে সালেহ আহমেদ তাকরিম। আমি হাফেজ আহমেদ তাকরিমের কুরআন তেলাওয়াত অনেকবার শুনেছি। আমি তাকরিমের তেলাওয়াত শুনে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। এই বিষয়ে এত সুন্দর কুরআন তেলাওয়াত করে হাফেজ তাকরিম। সত্যিই অবাক করার মতো। আমি ইতোমধ্যে শুনেছি, দুবাইয়ে কুরআন প্রতিযোগিতায় তাকরিম প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি এবং সবসময় তার পাশে আছি।’
ডিপজল আরও বলেন, আমি শুনেছি হাফেজ তাকরিমের পারিবারিক অবস্থা ভালো না। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। আমার পক্ষ থেকে তাকরিমের জন্য ১০ লক্ষ টাকা উপহার হিসেবে দিব এবং এই টাকা তাকরিম তার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে। তাকরিমের আরও টাকা লাগলে ভবিষ্যতে আমি তাকে সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।’
আবার Popular News BD নামের আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলে তাকরিমকে বাড়িতে গিয়ে কন্টেন্ট নির্মাতা হিরো আলমের ২০ লাখ টাকার উপহার দেওয়ার দাবিতে ‘বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিমের বাড়িতে গিয়ে ২০ লাখ টাকার উপহার দিলেন হিরো আলম‘ শীর্ষক ভিডিওতে হিরো আলমের যে বক্তব্যটি তার সঙ্গে ডিপজলের বক্তব্যের হুবহু সাদৃশ্য বিদ্যমান।
একইভাবে সাদৃশ্য পাওয়া যায় তাকরিমকে নিয়ে বলিউড অভিনেতা সালমান খান ও শাহরুখ খানের বক্তব্যেও।
অর্থাৎ, রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, ইউটিউব চ্যানেলগুলো কেবল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম এবং তাদের দাবিতে প্রচারিত বক্তব্যগুলোর সামান্য পরিবর্তন করে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র উল্লেখ ছাড়াই প্রচার করছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সম্প্রতি হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমকে অভিনেতা ডিপজলের পক্ষ থেকে কোটি টাকার বাস উপহার দেওয়ার দাবিতে একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়।
হাফেজ তাকরিমের সাম্প্রতিক সফলতা নিয়ে তৈরী উপরিউক্ত ১১ টি ভিডিও আধেয়ের দর্শক সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওগুলোর গড় দর্শক সংখ্যা ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯ শত জন।
দর্শক সংখ্যা বিবেচনায় এই আধেয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনে আছে
এর মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় স্থানে থাকা ভিডিও দুইটি আবার Most Topic নামে একই ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত।
Screenshot: Most Topic YouTube Channel
এই চ্যানেলটি দুইটি ভিডিও থেকে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ দর্শক পেলেও চ্যানেলটির সাবস্ক্রিপশন বা গ্রাহক সংখ্যা মাত্র সাড়ে ২২ হাজার।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ চ্যানেলটি এই গ্রাহক সংখ্যা নিয়েই কিছু চটকদার থাম্বনেইল ও সূত্রহীন ভুয়া বক্তব্য দিয়ে মাত্র দুইটি ভিডিও আধেয় তৈরি করে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ দর্শকের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে।
অপরদিকে হাফেজ তাকরিমের সাম্প্রতিক সফলতা নিয়ে তৈরী উপরিউক্ত ১১ টি ভিডিও আধেয় নেওয়া হয়েছে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে।
ওপেন সোর্সে পাওয়া একাধিক টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, এই ছয়টি চ্যানেলের প্রতিটিতেই মানিটাইজেশন বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ চালু রয়েছে। ফলে ভিউ প্রাপ্তি এবং এর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ থাকায় এই চ্যানেলগুলো থেকে এমন চটকদার থাম্বনেইল ও সূত্রহীন ভুয়া বক্তব্য দিয়ে ভিডিও তৈরির বিষয়টিও স্বাভাবিক বলেই প্রতীয়মান হয়।
মূলত, সম্প্রতি বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৭০ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে ২৬ তম দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। তার এই অর্জনের পর দেশীয় বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে চটকদার থাম্বনেইল ও বিশ্ব নেতৃত্ব ও বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নামে বক্তব্য ব্যবহার করে তাদের পক্ষ থেকে তাকরিমকে বিভিন্ন উপহার দেওয়ার দাবি প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, চটকদার থাম্বনেইলের আড়ালে বিশ্ব নেতৃত্ব ও বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নামে প্রচারিত এসব বক্তব্যগুলোর কোনো তথ্যসূত্র নেই। অর্থাৎ এ বক্তব্যগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ইউটিউব চ্যানেলগুলো তাদের আধেয়ের ভিউ বাড়াতে এসব থাম্বনেইলের আড়ালে ভিত্তিহীন উক্ত বক্তব্যগুলো প্রচার করে আসছে।
সুতরাং, ইউটিউবে ভিউয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের আশায় সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাকরিমের অর্জনকে ঘিরে বিশ্ব নেতৃত্ব ও বিভিন্ন সেলিব্রিটি কর্তৃক তাকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে শীর্ষক চটকদার শিরোনাম এবং বিকৃত থাম্বনেইল ব্যবহার করে প্রচার করা হচ্ছে; যেগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।