Home Blog Page 581

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি

গতকাল (১৫ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে দুইজনের মৃত্যুর খবর (কোনো গণমাধ্যমে একজন মৃত্যুর খবর এসেছে) প্রচার করা হয়েছে গণমাধ্যমে।

Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে কতিপয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আজকের (১৫ মে) প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত খবর দেখুন- যায়যায়দিন, ডেইলি অবজারভার, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক গণমুক্তি

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন- দৈনিক বাংলা, এশিয়ান টিভি, দ্য রিপোর্ট ২৪, নাগরিক টিভি, এটিএন বাংলা, আরটিভি, মাই টিভি, বায়ান্ন টিভি, যুগান্তর, দৈনিক সংগ্রাম, মানবজমিন, আমাদের সময়, যায়যায়দিনইনকিলাব, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, দেশ রূপান্তর, মানবকণ্ঠ, কালবেলা, ডেইলি অবজারভার, বিজনেস বাংলাদেশ, আলোকিত বাংলাদেশ, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা মেইল, ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টাইমস, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস, দ্য বিজনেস পোস্ট, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি ক্যাম্পাস, নিউজজি২৪, বি বার্তা২৪, সংবাদ প্রকাশ, পূর্ব পশ্চিম বিডি, বাংলাদেশ বুলেটিন, এবিনিউজ২৪, বার্তা বাজার, ফেস দ্য পিপল, আজকালের খবর, আমার সংবাদ, রেডিও টুডে, সোনালি নিউজ, বাহান্ন নিউজ, দ্য ডেইলি মেসেঞ্জার, নিউজ নাও, দৈনিক সরোবর, রিদ্মিক নিউজ, দৈনিক করতোয়া, অর্থসূচক, সময়ের কণ্ঠস্বর, একুশে সংবাদ, ডেলটা টাইমস, মর্নিং টাইমস, কুমিল্লার কাগজ, দৈনিক গণমুক্তি, সংবাদ সারাবেলা, দৈনিক আজাদী, স্টার সংবাদ, গ্লোবাল টিভি, সংবাদ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি), ঢাকা প্রকাশ (ইংরেজি), সানবিডি২৪, সংবাদ প্রতিদিন

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

Image Collage by Rumor Scanner

এছাড়া, আমাদের সময় এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত খবরে প্রচারিত একটি ছবিকে সেন্টমার্টিনের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত(কতিপয় গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং গতকালের ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। 

মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়নি : গণমাধ্যম ভেদে ভিন্ন তথ্য

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা ভাষার সংস্করণ বিবিসি বাংলা’র ওয়েবসাইটে গতকাল (১৪ মে) রাতে “বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখায় প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে। মহাবিপদ সংকেতও আর নেই। কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, সেন্টমার্টিনে গাছ থেকে নারকেল পড়ে এক নারী মাথায় আঘাত পান। মাথায় সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান সেখানকার হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল কাদের।

“মানুষজন ভালো আছে। কিন্তু ঘরবাড়ির অস্তিত্ব নেই, সব তছনছ। আমরা সবাই গরীব মানুষ আমাদের কিচ্ছু নাই।”—বলেন মি. কাদের।

Screenshot source : BBC Bangla 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোও গতকাল দুপুরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে একই নারীর আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। 

মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল বিকেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত নারীর বিষয়ে বলা হয়, ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপায় যে নারী আহত হয়েছেন তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, “দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনারপাড়ায় ঝড়ো হাওয়ার কবলে গাছ চাপায় এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্বীপের ক্লিনিকে নিয়ে আসে।”

গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘প্রথম আলো’ ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনায় সেন্ট মার্টিনে ১১ জনের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর উল্লেখ করা হয়নি। 

‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, ১২ হাজারের মতো ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব প্রশাসনের কাছ থেকে মিললেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী বলছেন? 

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে স্থানীয় একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত নারী মৃত্যুর ঘটনাটি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।  এর প্রেক্ষিতে ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, গতকাল আমার ওয়ার্ডে কেউ মারা যায়নি। এটা ভুয়া নিউজ। 

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “আমি দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত করছি, এটা গুজব। কেউ মারা যায়নি গতকালের ঘটনায়।”

তার বরাতে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে এমন মন্তব্য করা হলে তিনি বলেন, “গুজবকারীদের থেকে তারা তথ্য নিয়েছে। আমাদের থেকে নেয়নি।” 

পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো: মুজিবুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “গতকালের ঝড়ে কেউ মারা যায়নি। এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ কেন একটা মুরগীও মারা যায়নি।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানারের টিমের পক্ষ থেকে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশের খানিকক্ষণ পূর্বে জানান, “গতকালকে কেউ মারা যায়নি। আহত ছিল এক মহিলা। গাছ পড়ে আহত হয়েছিল। আমি এই মাত্র কথা বলেছি সেখানে। তিনি সুস্থ আছেন। সেন্টমার্টিনে গতকাল কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।”

আমাদের সময় এর প্রতিবেদনে ভুল ছবি

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে মানুষ মৃত্যুর খবরে আমাদের সময় যে ছবিটি তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে সেটি সেন্টমার্টিনের নয়। ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডব পরবর্তী সময়ের যা মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম Mizzima এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Mizzima

মূলত, গতকাল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন (কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) দাবিতে মূলধারার প্রায় ৪০টি গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে দুইজন নিহতের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে এক নারীর গায়ে গাছ পড়ে আহত হওয়াসহ একাধিক ব্যক্তির আহতের খবর পাওয়া গেলেও সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি উক্ত ঘটনায় কারো মৃত্যু হয়নি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনে দুই ব্যক্তির মৃত্যু(কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, ঝড়ো হাওয়া চলাকালীন মাইকে আযানের শব্দও শোনা যায়।

ভিডিওটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার বলে ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন; এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম এস এ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে আলোচ্য ভিডিওর একটি স্থিরচিত্র ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

উক্ত ভিডিওকে সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু  পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

একই ভিডিওটিকে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে মূলাধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন; এখানে এবং এখানে

একই ভিডিওটিকে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য বিষয়টি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার নয় বরং এটি গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিও।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে এই প্রতিবেদন লেখার অন্তত চারদিন আগে(১০ মে রাত ১১:৩৪ মিনিটে) dreamworldhh নামের একটি অ্যাকাউন্টে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব‘ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: dreamworldhh_Tiktok

ভিডিওটির ক্যাপশনে #gopalganj #breaking news #moka ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়। 

এছাড়া পোস্টটির কমেন্টবক্সে user8084891527119 নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঝড়টি কোন এলাকায় হয়েছে জানতে চেয়ে একজন মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যের সূত্রে পোস্টদাতা Dream World থেকে পোস্টটির উত্তরে জানানো হয় যে, এটি ৯ মে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া থেকে ঝড়ের সময়ে ধারণকৃত।

Screenshot: dreamworldhh_Tiktok

এই পোস্টের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Hello Nazrul Vlog নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১১ মে সন্ধ্যা ৭ টা ৪১ মিনিটে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Hello Nazrul Vlog

ভিডিওটির শিরোনামে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভিডিও। 

পরবর্তীতে এসব পোস্টের সূত্রে ফেসবুকে Md Sahabur Rahman নামে একটি অ্যাকাউন্টে গত ৯ মে ‘গোপালগঞ্জ, ঘোনাপাড়া, ঝড়ে লন্ড ভন্ড‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Md Sahabur Rahman

এখানে প্রাপ্ত ছবিগুলোর সাথে গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কক্সবাজার/সেন্টমার্টিন/মায়ানমারের ঘূর্ণিঝড় দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

এছাড়া অনুসন্ধানে গত ৯ মে গোপালগঞ্জে ঝড় হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধানে ফেসবুকে একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে

Video Collage: Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ বিকেল তিনটায় বাংলাদেশের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে। বাংলাদেশে প্রায় ৩ ঘন্টা তাণ্ডব চালানোর পর সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার দিকে এটি মায়ানমারের দিকে বয়ে যায়। মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২ হাজার ৫২২টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন। এছাড়া, মোখার তাণ্ডবে মায়ানমারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ, আলোচ্য ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানার অন্তত ৪ দিন আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ার ঝড়ের একটি ভিডিও। 

মূলত, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ ১৪ মে বাংলাদেশের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে এবং মায়ানমারের রাখাইনের সিতওয়েতে

আঘাত হানে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ০৯ মে গোপালগঞ্জ হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিওকে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের ভিডিওকে আজ ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি একটি ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

কী দাবি করা হচ্ছে?

১৯ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটিতে প্রবল ঝড়ে গাছপালা উড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের ভয়ার্ত চিৎকারের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার নয় বরং এটি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

আলোচিত ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ১৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি D. McGowan নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৯ মে ‘100 YARDS AWAY VIOLENT STOVEPIPE EF-4 TORNADO – near Katie – Wynnewood, OK – May 9, 2016” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৭ মিনিট ০৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: YouTube

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ২০১৬ সালের ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

এই ভিডিওটি’র ৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী ৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্রের National Weather Service এর ওয়েবসাইট থেকেও উক্ত টর্নেডোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: National Weather Service USA

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোখার নয়। 

মূলত, সম্প্রতি ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার নয় বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইন্দোনেশিয়ার এপ্রিলের ভূমিকম্পের ঘটনার দাবিতে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি প্রচার

গত এপ্রিলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ইন্দোনেশিয়ায় দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উক্ত ছবিগুলো যুক্ত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, সময় টিভি, নিউজবাংলা২৪, সময়ের আলো, ভোরের কাগজ, ডেইলি মেসেঞ্জার।

এসব ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো গত এপ্রিলের নয় বরং পূর্বের বিভিন্ন ভূমিকম্পের ঘটনার ছবিকে ইন্দোনেশিয়ার এপ্রিলের ভূমিকম্পের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ছবি যাচাই ১

Screenshot: Daily Sangram

গত ১৪ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের উত্তরে ভূমিকম্প আঘাত হানার ঘটনায় আলোচিত ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক সংগ্রাম

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। এ নিয়ে অনুসন্ধানে সংবাদ সংস্থা ইউরোপিয়ান প্রেস ফটো এজেন্সির ওয়েবসাইটে Earthquake aftermath Sulawesi island (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The European Pressphoto Agency

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সোলাওয়েসি দ্বীপে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পরে দেশটির উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধার কার্যক্রমের।

ছবি যাচাই ২

Screenshot: Daily Somoyer Alo

একই ঘটনার খবরে ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক সময়ের আলো।

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ছবিটি এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ায় সংঘটিত ভূমিকম্পের নয় বরং এটি ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটির সোলাওয়েসি দ্বীপে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ও এরপরে হওয়া সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি।

Screenshot: BBC News

এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম BBC News এ ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

ছবি যাচাই ৩

Screenshot: Somoy News

একই ঘটনার খবরে এপি’র সূত্রে এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময় টিভি।

তবে এপির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘Strong quake shakes Indonesia’s capital; no tsunami alert‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: AP News

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভূমিকম্পের পরে মানুষ অফিস ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছে। 

অর্থাৎ, ছবিটি গত এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে সংঘটিত ভূমিকম্পের নয়।

ছবি যাচাই ৪

১৪ এপ্রিলের পর গত ২৫ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে নিউজবাংলা২৪

Screenshot: Newsbangla24

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি আলোচিত ভূমিকম্পের নয় বরং ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর সূত্রে জানা যায়, উক্ত ছবিটি ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার মেনটাওয়াই দ্বীপে ভূমিকম্পের পরে মানুষের ঘরের বাইরে জড়ো হওয়ার একটি ছবি।

Screenshot: Getty images

ছবি যাচাই ৫

একই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ভোরের কাগজ।

Screenshot: Bhorer Kagoj

তবে ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সোলাওয়েসি দ্বীপে ৬.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পরে উদ্ধারকারীদের একটি উদ্ধার অভিযানের ছবি, যা ১৬ জানুয়ারি তোলা হয়েছিল।

Screenshot: UNICEF

ছবি যাচাই ৬

একই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি মেসেঞ্জার।

Screenshot: Daily Messenger

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ারই দক্ষিণ সোলাওয়েসি দ্বীপে ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের সময়কার।

Screenshot: BBC News

অর্থাৎ, গণমাধ্যমগুলোতে ইন্দোনেশিয়ায় গত এপ্রিলে সংঘটিত দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনায় প্রচারিত এই ছবিগুলোর কোনোটিই গত এপ্রিলে সংঘটিত ভূমিকম্পের ঘটনার নয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ছবিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত, কেউ-বা ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কতিপয় গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখেনি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ, বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।

মূলত, গত এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ইন্দোনেশিয়ার পুরোনো ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার সংবাদের ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ায় দুইটি ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে রীতি অনুযায়ী মাথা নুয়ে সম্মান না জানানোর তথ্যটি মিথ্যা

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে গিয়ে জাপানি রীতি অনুযায়ী “নড” না করে কেবল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্যসম্বলিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে জাপানের পতাকাবাহী গার্ডদের অভিবাদন জানানোর সময় তাঁর ‘নড’ না করে কেবল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং গার্ডদের অভিবাদন জানানোর সময়ে প্রধানমন্ত্রী ‘নড’ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে অভিবাদন জানানোর সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি আংশিক ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেসরকারি গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এ গত ২৬ এপ্রিল ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হলো‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Channel 24

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার এ ভিডিওটির ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে দেখা যায়, গার্ড অব অনার দেওয়ার এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে নেমে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দেশটির পতাকার সামনে একসঙ্গে ‘নড’ তথা মাথা নুয়ে সম্মান জানান।

Screenshot: Channel 24

এছাড়াও আরেকটি বেসরকারি চ্যানেল এখন টিভিতে একইদিনে ‘জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার‘ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ekhon TV 

এই ভিডিওটির ৫ মিনিট ৫ সেকেন্ডেও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাথা নুয়ে সম্মান জানাতে দেখা যায়। 

Screenshot: Ekhon TV

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানি রীতি মেনেই জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘নড’ শিষ্টতা পালন করেছিলেন। 

প্রসঙ্গত, ‘নড‘ হচ্ছে জাপানি সংস্কৃতির অবাচনিক বা নন-ভার্বাল যোগাযোগের একটি রীতি। এটি দ্বারা মূলত কথোপকথনের সময় একে অপরের প্রতি সম্মতি বা সম্মানসূচক ইঙ্গিত বুঝায়। এ ‘নড’ করার ক্ষেত্রে সাধারণত মাথা সামনের দিকে ঝোঁকাতে হয়।

Screenshot: Cultural Atlas

মূলত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের  সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে গত ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জাপান সফর করেন। এই সফরের সময় গত ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাপানের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তবে এ গার্ড অব অনার দেওয়ার সময়ের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড অব অনার নেওয়ার সময় জাপানি রীতি মেনে ‘নড’ করেননি বা মাথা নোয়াননি। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড অব অনার নেওয়ার এক পর্যায়ে জাপানি রীতি মেনে জাপানের পতাকার সামনে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘নড’ করেছেন বা মাথা নুয়ে সম্মান জানিয়েছেন।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে গিয়ে জাপানি রীতি অনুযায়ী “নড” না করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মাসে দুইবার রক্ত দিয়ে নয়, স্ট্রোকের ফলে ছেলেটির মৃত্যু হয়

0

সম্প্রতি একমাসে দুইবার রক্তদান করার ফলে একটি ছেলে মারা গেছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির সাথে এক ব্যক্তির দুইটি ছবিও যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে যে ব্যক্তির ছবি রয়েছে তার নাম আরেফিন শুভ এবং এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়নি বরং তিনি ছয় মাসে দুইবার রক্ত দিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোক করে।

এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০২২ সালে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে মৃত আরেফিন শুভর ভাই মুহাম্মদ রাফি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেসময় তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এক মাসে দুইবার রক্ত দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। পুরোটাই গুজব। আসলে ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দিয়েছিল আমার ভাই। তবে শেষবার রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে আমরা বারডেম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেলে তার ব্লাড কালচার করিয়েছিলাম। কোনো সমস্যা পাইনি।”

তার অসুস্থতার ব্যাপারে রাফি সরকার বলেন, “শুভ কুরবানি ঈদের(২০২২) এক সপ্তাহ পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা নয়নপুর জেনারেল হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিল। এর দুইদিন পর তার জ্বর আসে এবং অসুস্থ হয়ে যায়। পরে কসবায় আমার তার চিকিৎসা করাই। কিন্তু সেখানে ভালো না হওয়ায় ডাক্তার আমাদেরকে তাকে কুমিল্লা নিয়ে যেতে বলে। অপরদিকে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে শুভের অগ্ন্যাশয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এটি চিকিৎসায় ভালোও হয়ে যায়। এর মধ্যে তার পেটের অভ্যন্তরে পুনরায় একটি ফোঁড়া হয়। যেটিকে চিকিৎসকেরা টিউমার হিসেবে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে আমরা আরও নিশ্চিত হতে ঢাকায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমাদের জানায়, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং এক পর্যায়ে সেটি পেঁকে যায়।”

রাফি সরকার সেসময় আরও বলেন, ‘জ্বরের কারণে আমার ভাইয়ের মুখে খাবারের রুচি না থাকায় আমার মা তাকে মাল্টা খেতে দিয়েছিল। মাল্টা টক জাতীয় ফল হওয়ায় শুভর ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে ব্রেইনস্ট্রোক করে মারা যায়।‘

মূলত, ২০২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেফিন শুভের মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোকের ফলে। এর আগে আরেফিন শুভ ছয় মাসের ব্যবধানে দুইবার রক্ত দেন। সবশেষ ২০২২ সালে কুরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পর রক্ত দিয়েছিলেন৷ রক্ত দেওয়ার দুইদিন পর তার গায়ে জ্বর আসে। ডাক্তাররা জানান, তার পেটের অভ্যন্তরে ফোঁড়া হয়ে সেটি সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ফুলে গিয়েছে এবং পেঁকে গিয়েছে। পরবর্তীতে খাবারের ক্রিয়ায় ফোঁড়াটি ফেটে যায় এবং কিডনি, রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে আরেফিন শুভ মারা যান।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্যাগোডা ফুল ৪০০ বছরে ১ বার ফোটার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি ‘প্যাগোডা ফুল’ ৪০০ বছরে ১ বার ফোটে, হিমালয়ের তিব্বত অংশে দেখা যায়’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ফুল ভর্তি গাছের ছবি প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিমালয়ের তিব্বত অংশে ৪০০ বছরে একবার ফোটা প্যাগোডা ফুল দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে থাকা ফুলটির নাম প্যাগোডা নয় বরং প্যাগোডা ফুলের রং, গঠন এবং আকৃতির সঙ্গে এই ফুলের কোনো মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্যাগোডা ফুল দেখতে কেমন? ফুটে কখন?

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার Florida Museum এ ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ‘Pagoda Flower‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Florida Museum

ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, প্যাগোডা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum paniculatum। এটির স্থায়ী নিবাস ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। 

Screenshot: Florida Museum

এটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। 

Image Comparison: Rumor Scanner 

পাশাপাশি প্যাগোডা ফুলের ফোটার সময় নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ফুলটি প্রতিবছরের গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে।

Screenshot: www.almostedenplants.com

অর্থাৎ প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সঙ্গে সত্যিকারের প্যাগোডা ফুলের কোনো সামঞ্জস্য নেই এবং প্যাগোডা ফুল ৪০০ বছর পরপর নয় বরং প্রতি বছরই গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে। 

প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি কিসের?

প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ok.ru নামের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর তৈরী করা ‘BEAUTIFUL FAIRY TALES (রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুদিত)’ শীর্ষক একটি অ্যালবাম খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যালবামটির আর্কাইভ দেখুন এখানে। 

Screenshot: ok.ru

অ্যালবামটিতে চলতি বছরের গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ছবিটিতে বিস্তারিত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

Screenshot: ok.ru

উল্লেখ্য, ‘BEAUTIFUL FAIRY TALES (রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুদিত)’ শীর্ষক অ্যালবামটি ঘেটে দেখা যায়, এই অ্যালবামটি প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরী বিভিন্ন প্রাণী, ফুল, গাছের ছবিতে পূর্ণ।

পাশাপাশি Fotostrana নামের আরেকটি রাশিয়ান ওয়েবসাইটেই গত ৮ এপ্রিল About everything শীর্ষক শিরোনামে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Fotostrana

ছবিটির শিরোনামে এটিকে জাপানের Wisteria নামের একটি গাছ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই ছবিটির সূত্রে পরবর্তীতে Wisteria নামের গাছের অনুসন্ধানে ছবিটির সঙ্গে Wisteria গাছের হুবহু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে আরও পড়ুন এখানে। এ পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে ছবিটির সুনিশ্চিতভাবে প্রকৃত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ৪০০ বছর পর প্যাগোডা ফুল ফোটার দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি প্যাগোডা ফুলের কোনো ছবি নয়। 

কোনো ফুল কি ৪০০ বছর ফুটে? 

অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান AAP FactCheck এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে একাধিক বিশেষজ্ঞের বরাতে জানাচ্ছে,  হিমালয় বা পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন কোনো ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যেটি ফুটতে ৪০০ বছর সময় লাগে।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের Smithsonian Museum of Natural History এর গবেষক লরেন্স ডরকে উদ্ধৃত করে জানায়, তিনি এমন কোনো উদ্ভিদ কল্পনা করতে পারেন না, যাতে প্রতি ৪০০ বছরে ফুল ফোটে। তবে উদ্ভিদের এমন কিছু প্রজাতি আছে, যেগুলো এতদিন বেঁচে থাকতে পারে। 

Screenshot: AAP FactCheck

এ নিয়ে AAP FactCheck এর নেওয়া অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মন্তব্য পড়ুন এখানে। 

এছাড়া গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে ধীরে ফোটা ফুলের উদ্ভিদ বলিভিয়ার পুয়া রাইমন্ডি। এই গাছের ফুল পুয়া রাইমন্ডির গাছের জীবদ্দশার ৮০-১৫০ বছরের মধ্যে দেখা যায়। 

Screenshot: Guinness World Records 

মূলত, সম্প্রতি ৪০০ বছরে একবার ফুটে এমন তথ্য উপস্থাপন করে প্যাগোডা ফুল দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে যে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রকৃত প্যাগোডা ফুলের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। পাশাপাশি প্যাগোডা ফুল প্রতি বছরই গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটে থাকে। অপরদিকে প্যাগোডা ফুল দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেই ছবিটিকেও তথ্যসূত্রহীনভাবে ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখা যায়। এছাড়া রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে হিমালয় বা পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন কোনো ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যেটি ফুটতে ৪০০ বছর সময় লাগে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্যাগোডা ফুলের দাবিতে ভিন্ন আরেকটি ফুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেটি নিয়েও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। 

সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে একটি ফুলের ছবি সংগ্রহ করে ৪০০ বছর অন্তর অন্তর ফোটা প্যাগোডা ফুল দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ছবিগুলো কোনো বাস্তব মাছের নয়

সম্প্রতি, “কখনও বাঘ আবার কখনও ডলফিন! ঝড়ের গতিতে ভাইরাল মাছের ছবি” শীর্ষক ক্যাপশনে কিছু মাছ সদৃশ প্রাণির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে  ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

পাশাপাশি ভারতীয় ফেসবুক পেজের একই দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, আলোচ্য ছবিগুলো এডিটেড দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য মাছের ছবিগুলো কোনো বাস্তব বা এডিটেড নয় বরং ছবিগুলো এআই টুল মিডজার্নির মাধ্যমে তৈরি করা।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আলোচ্য ছবিটি Ari Jayaprakash নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্টে খুঁজে পাওয়া যায়। 

পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে #midjourneyart হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যা থেকে আলোচ্য ছবিটি মিডজার্নি ব্যবহার করে তৈরি করা বলে প্রতীয়মান হয়। 

Screenshot Source: Facebook

পরবর্তীতে ফেসবুক পেজটির About সেকশন থেকে জানা যায়, অরি জয়প্রকাশ নামের উক্ত ব্যক্তি একজন আর্টিস্ট। তার প্রোফাইল পর্যালোচনা করে আলোচ্য ছবি ছাড়াও মিডজার্নির তৈরি করা ছবি সম্বলিত বেশকিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot Source: Facebook

এছাড়াও অরি জয়প্রকাশের টুইটার একাউন্টেও আলোচ্য ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। টুইটারের সেই পোস্টের ক্যাপশনেও #MidjourneyAI হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।

Screenshot Source: Twitter

পাশাপশি, উক্ত শিল্পীর ইনস্টাগ্রাম একাউন্টেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও দেখা যায় ছবিগুলো মিডজার্নি ব্যবহার করে তৈরি করা। 

Screenshot Source: Instagram

মূলত, বাঘ ও ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রাণির মত দেখতে একটি মাছের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিগুলো বাস্তব নয়। অরি জয়প্রকাশ নামের ভারতীয় এক শিল্পী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার মিডজার্নি ব্যবহার করে উক্ত ছবিগুলো তৈরি করেছেন। 

প্রসঙ্গত, পূর্বে পোপ ফ্রান্সিসের এআই জেনারেটেড ছবি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সেটিকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, মিডজার্নি দিয়ে তৈরি মাছের ছবিকে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইতালিয়ান মিউজিয়ামে রাখা ব্যাগগুলো সমুদ্রে মারা যাওয়া অভিবাসীদের নয়

সম্প্রতি ‘ইতালি যাওয়ার সময় সমুদ্রে মারা যাওয়া অভিবাসীদের ব্যাগ সংগ্রহ করে ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে ইতালিয়ান মিউজিয়ামের ভেতরে রাখা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে অসংখ্য ব্যাগের ছবি সম্বলিত একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এগুলো ইতালি যাওয়ার সময় সমুদ্রে মারা যাওয়া অভিবাসীদের ব্যবহৃত ব্যাগের ছবি নয় বরং এগুলো অ্যারিজোনা মরুভূমি অতিক্রমকারী অভিবাসীদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ দিয়ে তৈরি প্রদশর্নীর ছবি।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং শিল্পকলার ওয়েবসাইটের অধিনে থাকা State of Exception” নামের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from State of Exception

ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অ্যারিজোনা মরুভূমি অতিক্রমকারী অভিবাসীদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ দিয়ে তৈরি প্রদশর্নীর ছবি এটি।

মূলত, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় অ্যারিজোনা মরুভূমিতে ফেলে আসা বস্তু এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ জেসন ডি লিওন তার গবেষণার অংশ হিসেবে সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ডি লিওনের সহযোগিতায় ফটোগ্রাফার রিচার্ড বার্নস এবং কিউরেটর আমান্ডা ক্রুগলিয়াকের সংগ্রহ করা প্রায় একশত ব্যাগ এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও এই বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

তারেক রহমান কন্যা জাইমা রহমানের ভিডিও দাবিতে পাকিস্তানের এক ড্যান্সারের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানের নাচের দৃশ্য’ দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Facebook

উক্ত দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Youtube

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের নাচের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর নারী জাইমা রহমান নয় বরং এটি পাকিস্তানের এক পার্টি ড্যান্সারের নাচের ভিডিও, যা ২০১৭ সাল থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।   

ভিডিও বিশ্লেষণে কী জানা যাচ্ছে? 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, একই ভিডিও কোনো পোস্টে ৫৮ সেকেন্ডের দৈর্ঘ্য, কোনো পোস্টে মিনিট দেড়েক এবং কোনো কোনো পোস্টে দুই মিনিটের কিছু বেশি সময়ের দৈর্ঘ্যে আপলোড করা হয়েছে।  

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষের চারদিকে কিছু ব্যক্তি বসে আছেন। এদের বেশিরভাগেরই পরনের পোশাকের সাথে পাকিস্তানি বা ভারতের পাঞ্জাবের পোশাকের মিল রয়েছে। এক নারীকে তাদের মাঝখানে নাচতে দেখা যাচ্ছে। এক ব্যক্তি টাকা উড়িয়ে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে নাচতে থাকা নারীকে জাইমা রহমান বলে দাবি করা হচ্ছে। 

ফেসবুকের কিছু পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হচ্ছে, “এই পার্টিটি লন্ডনে তার (জাইমা রহমান) পাকিস্তানী বন্ধু জাওয়াত জিয়ানের হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। জাওয়াত জিয়ান পাকিস্তান বংশদ্ভূত লন্ডনের নাগরিক, পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।”

Screenshot source: Facebook

একটি পোস্টের (আর্কাইভ) কমেন্টে একজনের জিজ্ঞাসায় পোস্টদাতা বলেছেন, জাইমার জিয়ানের সাথে ইনস্টাগ্রামে ছবিও দিয়েছেন।

Screenshot source: Facebook

ছড়িয়ে পড়া একই ভিডিও সম্বলিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) এক ব্যক্তি কমেন্ট করেছেন, “এটা ইন্ডিয়ার পান্জাবের ভিডিও। এটা নতুন না অনেক আগের ভিডিও।”

Screenshot source: Facebook

ভিডিও বিশ্লেষণের সূত্র ধরে অনুসন্ধানের শুরুতে জাইমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে উক্ত প্লাটফর্মে কিওয়ার্ড সার্চ করে জাইমা রহমান নাম ব্যবহার করে একাধিক অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এর কোনোটিতেই কোনো পুরুষের সাথে জাইমা রহমানের (যেহেতু দাবি করা হয়েছে, জাইমার জিয়ানের সাথে ইনস্টাগ্রামে ছবিও দিয়েছেন) ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

জাইমা রহমানের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের বিষয়ে নিশ্চিত হতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, জাইমা রহমানের অফিসিয়াল কোনো ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নেই। 

অর্থাৎ, জাইমা রহমান জাওয়াত জিয়ান নামে জনৈক ব্যক্তির সাথে ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়৷ 

তাছাড়া, জাইমা রহমানের জাওয়াত জিয়ান নামে কোনো পাকিস্তানি বন্ধু আছে কিনা সে বিষয়টি ব্যক্তিগত বিধায় এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা যায়নি। 

পরবর্তীতে, ভিডিওটি ভারতের পাঞ্জাবের শীর্ষক তথ্যের সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুক, ইউটিউবসহ একাধিক প্লাটফর্মে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য মেলেনি। 

অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে এসে আলোচ্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইউটিউবে ‘Ganda Bacha’ নামক একটি চ্যানেলে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ‘Mujra in Karachi’ শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: YouTube

২:৫৫ মিনিটের এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে শেষদিকে উক্ত নারীর মুখের অবয়ব কিছুটা স্পষ্ট ধরা পড়ে ক্যামেরায়। তবে উক্ত নারীর সাথে জাইমা রহমানের চেহারার মিল পরিলক্ষিত হয়নি।

Screenshot source: Facebook

এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে, ফেসবুকে Live murja নামক পেজে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত একই দৈর্ঘ্যের একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ভিউ পাওয়া এই ভিডিওর ক্যাপশনে কিছু লেখা ছিল না।

Screenshot source: Facebook

পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে, ফেসবুকে Alisha Malik নামক পেজে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত একই দৈর্ঘ্যের একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। দেড় হাজার ভিউ পাওয়া এই ভিডিও সম্বলিত পোস্টের ক্যাপশনে ভিডিওতে যে গান চলছিল তার নাম (kamil yar d) লেখা ছিল। হ্যাশট্যাগে পেজের নাম অনুযায়ী malik শব্দটি উল্লেখ ছিল ক্যাপশনে।

Screenshot source: Facebook

রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ২০১৭ সালের পূর্বে ভিডিওটি ইন্টারনেটে খুঁজে পায়নি। 

সর্বশেষ খুঁজে পাওয়া পেজটি (আর্কাইভ) (Alisha Malik) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি এখন আর সক্রিয় নেই। 

আলোচিত ভিডিওটিতে যে নারীকে নাচতে দেখা গেছে, তিনি এবং আলিশা মালিক একই ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেজের কন্টেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। একই সময়ে পেজের ইনবক্সেও এ বিষয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা জানিয়ে রেখেছিলাম আমরা। 

পেজটির About সেকশনে আলিশা নিজের বিষয়ে লিখেছেন, Party Dancer। অর্থাৎ, তিনি বিভিন্ন পার্টিতে নেচে থাকেন। পেজটি ২০১৬ সালে বর্তমান নামেই খোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নাম পরবর্তন করা হয়নি।

Screenshot source: Facebook

পেজের এক্টিভিটিগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ২০১৭ সালে প্রকাশিত আরো কিছু নাচের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ০৪ মে প্রকাশিত এক ভিডিওর (আর্কাইভ) ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “আমার খুব প্রিয় বন্ধু মেহেক মালিক ও উরোজ।” 

Screenshot source: Facebook

এই তথ্যের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, মেহেক মালিকও পাকিস্তানের একজন নৃত্য শিল্পী এবং টিকটক স্টার। এ বিষয়ে তথ্য পেতে রিউমর স্ক্যানার টিম মেহেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে পাকিস্তানি ফ্যাক্টচেকারদের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তারাও ভিডিওর নারীটি পাকিস্তানের ট্রান্স ড্যান্সার আলিশা মালিক হতে পারে বলে মত দিয়েছেন। 

ট্রান্স ড্যান্সাররা সাধারণত পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হন। আলিশার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে এবং তিনি পার্টি ড্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। তবে আলিশা ঠিক কবে ট্রান্স ড্যান্সারে রূপান্তরিত হয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে জানতে একাধিক মাধ্যমে রিউমর স্ক্যানার টিম আলিশা মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।  

মূলত, সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের নাচের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত নারী জাইমা রহমান নয়। পাকিস্তানে আলিশা মালিক নামক একটি পেজে এই নাচের ভিডিও ২০১৭ সাল প্রকাশ করা হয়। আলিশা মালিক পাকিস্তানের একজন পার্টি ড্যান্সার। পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকাররা উক্ত নারীটি পাকিস্তানের ট্রান্স ড্যান্সার আলিশা মালিক হতে পারে বলে মত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও জাইমা রহমানের বিষয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, পাকিস্তানের এক নারীর নাচের পুরোনো ভিডিওকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের নাচের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র