Home Blog Page 581

শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়া ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় নি

সম্প্রতি, “৩০ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো অস্ট্রেলিয়া, মাহা বিপদে শেখ হাসিনা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা

যা দাবি করা হচ্ছে

ভিডিওটির থাম্বনেলের লেখায় দাবি করা হচ্ছে যে ৫ শর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো অস্ট্রেলিয়া, মাহা বিপদে শেখ হাসিনা’।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও পরবর্তীতে ফেসবুকেও শেয়ার হয়। এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ শর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি দেওয়ার খবরটি উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওর শুরুতে ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান’ শীর্ষক একটি সংবাদ শিরোনাম দেখা যায় এবং একই দাবিতে ভিডিওটির ১২ সেকেন্ড থেকে ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী রুমিন ফারহানা বক্তব্য দেন।

পরবর্তীতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখানো শিরোনাম এবং রুমিন ফারহানার বক্তব্যের প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে গত ৪ অক্টোবর “অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান” শীর্ষক হুবহু শীরনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জন এমপি চিঠি দিয়েছেন। 

চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার এমপিরা বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যেকোনো কাজকে উদ্বেগজনক মনে করি। এরমধ্যে আছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে মত প্রকাশে বাঁধা দেয়া। এমন অবস্থায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদেরও অনুরূপ নীতি প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক দৈনিক যুগান্তর এ গত ৪ অক্টোবর “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান অস্ট্রেলিয়ার ১৫ এমপির” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ভেতরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ জন এমপির চিঠি লেখার তথ্য থাকলেও ভিডিওটির শিরোনাম এবং টাইটেল ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, বাংলাদেশি কোনো গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে প্রকাশিত কোনো সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জন এমপি চিঠি দেন। তবে সম্প্রতি এই বিষয়টিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত ভিসা নীতির আওতায় নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের নাম বা তালিকা প্রকাশ করেনি।

উল্লেখ্য, পূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে বিষয়গুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন :

সুতরাং, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ জন এমপির চিঠি লেখার খবরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ ব্যক্তির ওপর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শ্বশুরকে নিয়ে দেওয়া বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীর বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার 

বিগত কিছুদিন ধরে ‘এবার ফাঁস হলো নিপুণ রায় চৌধুরীর পরকীয়া কুকীর্তি‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।  


ভিডিওটিতে বিএনপি নেত্রী অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, আমার শ্বশুর, যিনি আমাকে কখনোই বুঝতে দেন নাই যে আমি তার মেয়ে না বউ। এই ডিফারেন্সটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। যেমন, আমি আমার জীবনের সবকিছু তার সাথে শেয়ার করেছি। আামার শ্বশুর অনেক সময় সে যেটা চাচ্ছে কিংবা ভাবছে তার ভাবনার আগেই আমি করে ফেলছি। কিংবা আমি ভবাছি আমার ভাবনার আগেই আমার চাহিদা কিংবা আমার ইচ্ছা সেটা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

নিপুণ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর ভিডিও ফাঁস হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে তার দেওয়া একটি বক্তব্যকে বিকৃত করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের বিশেষ অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রার ইউটিউবে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ‘Tritiyo Matra | Nitai Roy Chowdhury | Nipun Roy Chowdhury|’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

৩৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় উপস্থাপকের এক প্রশ্নের উত্তরে ৫ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে নিপুণ রায় চৌধুরী তার শ্বশুরকে নিয়ে বলছেন, ‘ভগবান প্রদত্ত যদি কোনো কিছু থাকে,  আমার মনে হয় ভগবান নিজের হাতে আমাকে এই রকম দুইটি পরিবার আমাকে দিয়েছে। বিশেষ করে আমি আরেকটা গর্বের সাথে বলতে পারি, আমি আমার বাবাকে যেমন শ্রদ্ধা করি, বাবা তো, তাকে তো অবশ্যই। কিন্তু সেরকম আরেকজন বাবা পেয়েছি। আমার নেতা বলেন কিংবা আমার শ্বশুর। যিনি আমাকে কখনোই বুঝতে দেন নাই যে, আমি তার মেয়ে না ছেলের বউ।’

Video comparison: Rumor Scanner

এই ডিফারেন্সটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। যেমন, আমি আমার জীবনের সবকিছু তার সাথে শেয়ার করেছি অ্যান্ড তার সবকিছু আমার কাছে শেয়ার করে। এই শেয়ারিংয়ের ব্যাপারটাতেই সে আমাকে খুব ভালোমতো বুঝে অ্যান্ড আমিও তাকে খুব ভালোমতো বুঝি। এই কম্বিনেশনে দেখা যাচ্ছে যে, অনেক সময় আমার শ্বশুর অনেক সময় সে যেটা চাচ্ছে কিংবা ভাবছে তার ভাবনার আগেই আমি করে ফেলছি। কিংবা আমি যা ভাবছি, আমার ভাবনার আগেই আমার চাহিদা কিংবা আমার ইচ্ছা সেটা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।’

অর্থাৎ চ্যানেল আইয়ের এই অনুষ্ঠানে ৫ মিনিট সময়কালে দেওয়া নিপুণ রায় চৌধুরী তার শ্বশুর গয়েশ্বর রায় চৌধুরী সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, তার শ্বশুর কখনোই তাকে বুঝতে দেননি যে, তিনি তার মেয়ে না ছেলের বউ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার বক্তব্যের এই অংশটুকু থেকেই সম্পাদনার মাধ্যমে ‘ছেলে’ শব্দটি বাদ দিয়ে আলোচিত দাবিতে উপরিউক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে। 

মূলত, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের বিশেষ অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রার একটি পর্বে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও তার বাবা সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই চন্দ্র রায় চৌধুরী। এই পর্বে আলোচনা প্রসঙ্গে নিপুণ রায় চৌধুরী তার শ্বশুর গয়েশ্বর রায় চৌধুরী সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, তার শ্বশুর কখনোই তাকে বুঝতে দেননি যে, তিনি তার মেয়ে না ছেলের বউ। তার বক্তব্যের এই অংশটুকু থেকেই ‘ছেলে’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘এবার ফাঁস হলো নিপুণ রায় চৌধুরীর পরকীয়া কুকীর্তি’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।  

সুতরাং, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরকীয়ার ভিডিও ফাঁস হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

দম্পতির ছবিগুলোর সাথে বয়সের পার্থক্য সম্পর্কিত গল্পটি মিথ্যা 

0

সম্প্রতি, ‘এক বছরের জুনিয়র তাতে কি, কথা দিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত থাকবো, থেকে বুঝিয়ে দিলাম সবাই ছেড়ে যায় না কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়।’ শীর্ষক ক্যাপশনে এক দম্পতির কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

দম্পতির

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল দম্পতির ছবির সাথে বয়স নিয়ে জুড়ে দেওয়া গল্পটি সঠিক নয় বরং আলোচিত এই যুবক তার স্ত্রীর থেকে দুই বছরের বড়।

মূলত, ২০২২ সালের জুন মাসে এই দম্পতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন। পরবর্তীতে তাদের বিয়ের ছবিগুলো ফটোগ্রাফি এজেন্সির পেজে পোস্ট করা হলে, তাদের দুইজনের বয়সের পার্থক্য নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গল্প জুড়ি দিয়ে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

এই বিষয়ে সেই সময়ে বরের (নাদিম আহমেদ) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কনে তার চেয়ে দুই বছরের ছোট। বিয়ের ভারী সাজের কারণে ও তিনি  ক্লিন শেইভ করায় তাকে ছোট লাগছিলো। 

সাম্প্রতিক সময়েও একইভাবে এই দম্পতির বিয়ের ছবির সাথে বয়সের পার্থক্যের বানোয়াট গল্প জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, এক দম্পতির বিয়ের ছবি ব্যবহার করে বয়সের পার্থক্যের একটি গল্প ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

চটকদার থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রীর বরাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান শীর্ষক ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান, জানালেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং একই তথ্য সম্বলিত শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে আসবে সেনাপ্রধান এমন কোন প্রকার মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।  

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘Sabai Sikhi’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান জানালেন শেখ হাসিনা। BD politics news” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে।’

জেনারেল এসএম শফিউদ্দীন আহমেদের কথার সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ এর নভেম্বরে “মাতৃভূমিকে রক্ষায় সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটির খণ্ডাংশ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রামুতে সেনাবাহিনীর আন্তঃফরমেশন অ্যাসল্ট প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে জেনারেল এসএম শফিউদ্দীন আহমেদ বলেন,দেশ মাতৃকাকে যেকোন বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষায় সৈনিকদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

উক্ত ভিডিওটি কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর “ভয়েস অব আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার। Voice of America। PM Sheikh Hasina। Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ৩৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওর কয়েকটি খণ্ডাংশ নিয়ে আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner

সময় টেলিভিশন এর উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ভয়েজ অব আমেরিকায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এক সাক্ষাৎকারের ভিডিও এটি।

উক্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে ৩০ সেপ্টেম্বর “আমেরিকায় আসতে না পারলে আসবে না,আমার দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেয়।’ 

উক্ত ভিডিওটিও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী অংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক এর ছবি অপ্রাসঙ্গিক ভাবে যুক্ত করা হয়েছে।

অর্থাৎ, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান বিষয়ক কোনো প্রকার মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী করেননি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ‘Sabai Sikhi’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায় অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাপ্রধান জানালেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

২০২১ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ভবন ধসের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, একটি ভবন ধসের পড়ার ভিডিওকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক হামলার নয় বরং ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের গাজা শহরের একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির উপরের দিকে বাম দিকে Al Jazeera এর লোগো রয়েছে। কিন্তু কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Al Jazeera’ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ভিডিও প্রকাশ হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। 

পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে আল জাজিরার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৪ মে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video screenshot comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ১২ মে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা শহরের আল-শোরুক টাওয়ারে বিমান হামলা চালালে ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়।

তাছাড়া, লন্ডন ভিত্তিক গণমাধ্যম Middle Esat Eye এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১২ মে “Israeli air strikes level third high rise in Gaza” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Middle east eye

মূলত, সম্প্রতি একটি ভবন ধসের পড়ার ভিডিওকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত দৃশ্যটি প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় পূর্বের। ২০২১ সালের ১২ মে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা শহরে অবস্থিত আল-শোরুক টাওয়ারে বিমান হামলা চালালে এই ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়। 

সুতরাং, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় গাজা শহরে ধসে পড়া ভবনের পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সুনীল গাভাস্কার কোনো মন্তব্য করেননি

0

সম্প্রতি, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্টার স্পোর্টসে বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

দাবি করা হচ্ছে, সুনীল গাভাস্কার বলেছেন, “আমি নিজেকে ভারতীয় বলতে লজ্জিত। এটাই সবচেয়ে বাজে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। খালি স্টেডিয়াম, স্কোরবোর্ড নেই, বিসিসিআইয়ের করুণ ব্যবস্থাপনা।

সুনীল গাভাস্কার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সুনীল গাভাস্কার কোনো মন্তব্য করেননি বরং একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত দাবিটি ছড়ালেও গাভাস্কার তার নামে প্রচারিত এই মন্তব্যটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে সুনীল গাভাস্কারের এমন মন্তব্যের বিষয়ে কোনো সংবাদ ভারতের গণমাধ্যমে খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পরবর্তীতে দাবিটির সূত্রের খোঁজে অনুসন্ধান করে এক্সে গত ০৬ অক্টোবর বিকেলে ASG নামক একটি অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি টুইটে  গাভাস্কারের উক্ত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: X

সেদিন (০৬ অক্টোবর) চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস। এর আগে ০৫ অক্টোবর প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। 

ম্যাচগুলোতে গাভাস্কার ধারাভাষ্য দিয়েছেন কিনা এমন তথ্য অনুসন্ধানে ভারতের সংবাদমাধ্যম Aaj Tak এর স্পোর্টস বিভাগের ম্যানেজিং এডিটর ভিক্রান্ত গুপ্তের একটি টুইট নজরে এসেছে আমাদের। 

ভিক্রান্ত জানান, গাভাস্কার ম্যাচে ধারাভাষ্যই দেননি।

Screenshot: X

পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম India Today এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক রিপোর্টে সুনীল গাভাস্কারের এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। 

আলোচিত মন্তব্য প্রসঙ্গে গাভাস্কার জানিয়েছেন, “যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন যে আমি ভারতীয় হতে কখনোই লজ্জিত হব না। আমি একজন গর্বিত ভারতীয় আছি এবং থাকব।”

Screenshot: India Today

অর্থাৎ, গাভাস্কার আলোচিত মন্তব্যটি করেননি। 

মূলত, সম্প্রতি ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্টার স্পোর্টসে বক্তব্য দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত মন্তব্যটি গাভাস্কারের দাবি করে প্রচার করা হলেও গাভাস্কার নিজেই বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সুনীল গাভাস্কার মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নেপাল ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার 

সম্প্রতি, “ক্রিকেট সুন্দর যদি তা সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়” শীর্ষক শিরোনাম এবং মানবতা বাংলাদেশ থেকে শেখা উচিত শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ক্রিকেট ম্যাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচের একটি ভিডিও। 

আয়ারল্যান্ডে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ) এবং ভিডিও (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানবতা বাংলাদেশ থেকে শেখা উচিত শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচের দাবিতে যে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের কোনো ভিডিও নয় বরং ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের মূল প্রতিযোগীতার পূর্বে ওয়ার্মআপ ম্যাচে নেপাল এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার একটি ম্যাচের খণ্ডাংশ আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। আলোচিত ভিডিওতে থাকা স্কোরবোর্ডে খেলোয়াড়দের নাম এবং জার্সিতে থাকা দেশের নামের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ‘Cricket Official’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Ireland vs Nepal। Highlights। Oman Quadrangular। T20l Series। Match 6” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ৫ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ড এর মধ্যকার অংশটুকুর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে আরো অনুসন্ধানে গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ এ ‘Andrew Leonard’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলেও “Nepal’s Aasif Sheikh shines with outstanding Spirit of Cricket Moment” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একটি ওয়ার্মআপ ম্যাচে আয়ারল্যান্ড এবং নেপালের মধ্যকার ম্যাচটিকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

পরবর্তীতে ভিডিওটির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে  ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি “‘Spirit of cricket’ – Nepal wicket-keeper draws plaudits for stunning act of sportsmanship” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের মূল প্রতিযোগিতার আগে ওয়ার্মআপ ম্যাচের ১৯ তম ওভারের তৃতীয় বলে নেপালের কমল সিং স্ট্রাইকিং এন্ডে থাকা আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যান  মার্ক অ্যাডায়ারকে বল করেন। মার্ক অ্যাডায়ার সঠিকভাবে ব্যাট বলের সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন,  তবুও নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে থাকা অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে দ্রুত সিঙ্গেলের জন্য ডাকেন। 

নন-স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যানের ডাকে সাড়া দিলেও, ক্রিজের অপর প্রান্তে যাওয়ার পথে বোলারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। উইকেট-রক্ষকের হাতে বল ছুড়ে দেওয়ার সময় ম্যাকব্রিন পপিং ক্রিজ থেকে অনেক দূরে ছিলেন। তখন নেপালের উইকেট-রক্ষক আসিফ শেখ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে রানআউট করতে অস্বীকার করেছিলেন।’

এছাড়া, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলা বিষয়ক গণমাধ্যম ‘Fox Sports’ এ “I’ve got goosebumps’: Touching act wins over cricket world” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই বিষয়ের উল্লেখ করা হয় এবং উক্ত প্রতিবেদনে ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটির উল্লেখ করা হয়। 

মূলত, ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতার পূর্বে আয়ারল্যান্ড এবং নেপালের মধ্যকার ওয়ার্মআপ ম্যাচে নেপালের উইকেট-রক্ষক আসিফ শেখ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাসম্যান অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে রানআউট করেননি। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও-ই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যাচের দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দলের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে রানআউট না করার ঘটনাকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রান আউট না করার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ছবিটি নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের নয়

0

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্টেডিয়ামের গ্যালারির ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের।

মোদী স্টেডিয়াম

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি ভারতের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের নয় বরং দেশটির হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এক্সে (সাবেক টুইটার) C.VENKATESH নামক একটি অ্যাকাউন্টে গত ০৩ অক্টোবর দুপুরে প্রকাশিত একটি টুইটে এ সংক্রান্ত মূল একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। টুইটে বলা হয়, উপল স্টেডিয়ামে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।

Screenshot: X

উপল ভারতের হায়দারাবাদের একটি শহরের নাম। শহরটিতে থাকা স্টেডিয়ামের নাম রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম

একই ব্যক্তি সেদিন (০৩ অক্টোবর) বিকেলে তার অ্যাকাউন্টে আরেক টুইটে স্টেডিয়ামের আরেকটি ছবি প্রকাশ করেন যেখানে একটি টিকেটের ছবিও দেখা যাচ্ছে। টিকেটেও লেখা রয়েছে, উক্ত টিকেটটি রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ০৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রস্তুতি ম্যাচের। 

জনাব C.VENKATESH জানান, যারা বলেছেন যে ছবিটা ফেক বা পুরোনো, তাদের জন্য এই ছবি। আমি এখন অবস্থান করছি স্টেডিয়ামে।

Screenshot: X

তিনি সেদিন সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও-ও প্রকাশ করেন যেখানে গ্যালারির ভাঙা এবং পুরোনো চেয়ারের দৃশ্যটি দেখা যাচ্ছিল। 

Screenshot: X

C.VENKATESH এর এক্স প্রোফাইল থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি স্টার স্পোর্টস এবং সনি টেলিভিশনের একজন ধারাভাষ্যকার।

পরবর্তীতে, বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভারতের সংবাদমাধ্যম The Indian Express এর ফ্যাক্টচেক টিমের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও ছবিটি রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের সাম্প্রতিক দৃশ্য বলে জানান।

মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা ভাঙা ও পুরোনো চেয়ারের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি ভারতের হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের। ভারতে বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে একটি প্রস্তুতি ম্যাচের সময় এই ছবিগুলো ধারণ করেন দেশটির একজন ধারাভাষ্যকার।

প্রসঙ্গত, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ এর বিষয়ে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ভারতের হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের ছবিকে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • C.VENKATESH: Tweet 1
  • C.VENKATESH: Tweet 2
  • Statement from Indian Express Fact Check team

আরটিভি’র ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃত এবং ছবি পরিবর্তন করে ঢাবি শিক্ষার্থীর নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

0

সম্প্রতি, “ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে হাত মারছে ঢাবি শিক্ষার্থী” শীর্ষক শিরোনামের সাথে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ঢাবি শিক্ষার্থী

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক  

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আরটিভি’র ডিজাইন সম্বলিত উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আরটিভি’র প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা  হয়েছে ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং আরটিভি’র লোগোর সূত্র ধরে আরটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ৬ সেপ্টেম্বর “সুইসাইড নোট লিখে ফেসবুকে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে আড্ডা দিচ্ছেন যুবক” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ও পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, ফটোকার্ডটিতে কোনো ব্যক্তির ছবি নয় বরং সুইসাইড নোটের ছবি দেখা যায়।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এই ফটোকার্ডকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে শিরোনাম বিকৃত এবং ছবি পরিবর্তন করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।  

আরটিভি’র এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজবাড়ীর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের ভবানিপুর গ্রামে প্রেমের সম্পর্কে ভাটা পড়ায় এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যার মিথ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সুইসাইড নোটটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জেলা পুলিশের নজরে আসে। এ সময় তাৎক্ষণিক পুলিশের মোবাইল টিম ওই যুবককে উদ্ধার করতে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে তিনি ফেসবুকে মিথ্যা পোস্ট দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে ফেসবুকে ছড়িয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। শামিম হোসেন নামে উক্ত ব্যক্তি আলোচিত ছবিটি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করেন গত ২ সেপ্টেম্বর। শামিমের অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছেন। 

Screenshot source: Facebook

মূলত, রাজবাড়ীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফেরদৌস নাঈম ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যার মিথ্যে হুমকি দেওয়ার পর পুলিশের মোবাইল টিম ওই যুবককে উদ্ধার করতে বাড়িতে গিয়ে দেখে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে যুবক। এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘সুইসাইড নোট লিখে ফেসবুকে পোস্ট, পুলিশ গিয়ে দেখে আড্ডা দিচ্ছেন যুবক’ শীর্ষক শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডে থাকা ছবিটির স্থলে ঢাবির আরেক শিক্ষার্থীর ছবি বসিয়ে এবং ভিন্ন শিরোনামে আরটিভি’র ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও একই ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে আরেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪ এর নকল ফটোকার্ড প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, আরটিভি’র ফটোকার্ডে থাকা ঢাবির এক শিক্ষার্থীর সংবাদে আরেক শিক্ষার্থীর ছবি বসিয়ে ভিন্ন শিরোনামে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা না করা নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত কোনো মন্তব্য করেননি

সম্প্রতি, “হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন” শীর্ষক একটি তথ্যকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ভিসা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ভিসানীতির বিরোধিতা না করা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কোনো মন্তব্য করেননি বরং তাঁর ভিন্ন একটি মন্তব্যকে বিবৃত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Voice Bangla’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ‘নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন!’ শীর্ষক শিরোনামে ও থাম্বনেইলে প্রকাশিত ৬ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Voice Bangla Facebook

আলাচিত দাবিটির যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতেই মোস্তফা ফিরোজ দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম পড়ে শোনান। শিরোনামটি ছিল ‘রাষ্ট্রদূত জানালেন- হস্তক্ষেপ বিরোধী বাংলাদেশের অবস্থানে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে চীন।’

শিরোনাম পড়ে শোনানোর পরই এই বিষয়ে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন(রাষ্ট্রদূত) কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেননি। এটা একটা ইঙ্গিত দেয় সম্ভবত নির্বাচন নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চায় না চীন।’

এরপর মানবজমিনের পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান তিনি। প্রতিবেদনটি পড়ার পর এ বিষয়ে তার নিজস্ব মতামত দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিষয়ে চীন ও রাশিয়ার নিকট অতীতের অবস্থানকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে তিনি বলেন, এটা হতে পারে, চীন হয়তো বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন আসন্ন। পরিবর্তন যদি হয় তাহলে পরবর্তী সরকার যে ই আসুক না কেন তার সঙ্গে চীন কাজ করবে।

অর্থাৎ, ভিডিওটিতে কোথাও সরাসরি ‘নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন’ শীর্ষক দাবিটি চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য হিসেবে প্রচার করা হয়নি এবং ভিডিওটির শিরোনামে ও থাম্বনেইলে উক্ত দাবিটি উল্লেখ করা হলেও উভয়ই স্থানের কোথাওই এটিকে রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়নি বরং শিরোনামের শেষে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটিতে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বিরোধী বাংলাদেশের অবস্থানে চীনের সমর্থনের বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতের দেওয়া একটি বক্তব্য বিশ্লেষণ করেছেন এবং এ বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করে বেশ কিছু কথা বলেছেন। এছাড়া, মতামতে তিনি ‘ইঙ্গিত দেয়’, ‘সম্ভবত’, ‘হয়তো’ ও ‘যদি হয়’ এর মতো শব্দদ্বয় উল্লেখ করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ভিডিওটি প্রকাশেরই পরই ‘নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন’ শীর্ষক তথ্যটি চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে  মানবজমিনের অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বেইজিং অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রিসিপশন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় চীন ঢাকাকে সমর্থন করে, যাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

প্রতিবেদনেের কোথাও ‘হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন’ শীর্ষক তথ্য উল্লেখ নেই।

পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ‘চীন ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপের’ বিরোধীতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে : রাষ্ট্রদূত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকেও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এর বক্তব্যের বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন “হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি।

মূলত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রিসিপশন অনুষ্ঠানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বেইজিং অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানান ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তার এই বক্তব্য নিয়ে দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে নিজের ফেসবুক পেজ Voice Bangla তে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে মোস্তফা ফিরোজের মতামতের ওপর ভিত্তি করে উক্ত ভিডিওর শিরোনাম ও থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ‘হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন’ শীর্ষক মন্তব্যটিকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের এমন কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

উল্লেখ্য, পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, “হস্তক্ষেপ বিরোধী হলেও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধিতা করবে না চীন” শীর্ষক একটি তথ্যকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র