সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি শ্রেণিকক্ষে একদল নারী-পুরুষ “অ’ ককা হাতী” শীর্ষক ছড়া সদৃশ্য একটি গান গাওয়ার মাধ্যমে শারীরিক কসরতে অংশ নিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উল্লিখিত দাবিতে সংযুক্ত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ২১ লক্ষ বা ২.১ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্যের নয়, এমনকি এটি বাংলাদেশের ভিডিওই নয় বরং ভারতের আসামের ক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে থাকা অ’ ককা হাতী শীর্ষক উক্ত ভংগীমা গীতটি গাওয়ার মাধ্যমে সেখানকার একটি স্কুলে শিক্ষকদের কসরত প্রদর্শনের ভিডিও এটি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একজন নারী যে গানটি গাইছেন করছেন তা হলো,
অ’ ককা হাতী
মই যে তোমাৰ নাতি
তোমাৰ তলত সোমাই থাকিম
মোক নেলাগে ছাতি।
মস্ত এডাল নেজ
আৰু
মস্ত এটা পেট
চকু দুটা ইমান সৰু
লাজ লাগি যায় ধেৎ।
অ’ ককা হাতী
মই যে তোমাৰ নাতি
মোৰ ওপৰত বহি নিদিবা
পেট যাব মোৰ ফাটি।
রিউমর স্ক্যানার টিম গত ১৫ মার্চ Easy to learn Academy নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রকাশ হতে দেখেছে।
ভিডিওটির ডেসক্রিপশন অংশ থেকে জানা যাচ্ছে, এটি অসমীয়া ভাষার একটি ভংগীমা গীত। যে নারীকে এটি গাইতে দেখা যাচ্ছে তার নাম মৃদুলা দত্ত (Mridula Dutta)।
একই ইউটিউব চ্যানেলের অধীনে থাকা ফেসবুক পেজেও (Easy to Learn) এই ভিডিওটি (আর্কাইভ) একইদিন প্রকাশ করা হয়।
এই পোস্টে মৃদুলা দত্তের অ্যাকাউন্টটি এক ব্যক্তি মেনশন করে জানান, তিনি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছেন।
আমরা মৃদুলা দত্তের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, গত ০৬ ডিসেম্বর এক ব্যক্তি Assam Learning Centre নামে একটি পেজে প্রকাশিত একই ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, স্কুলে তার গাওয়া শেষ গান এটি। তিনি পোস্টের ক্যাপশনে স্কুলের পেজও মেনশন করেছেন যার নাম, Lambudar Borgohain Sankardev Sishu Vidya Niketan।
এই স্কুলটি আসামের মধুপুরের ডিমৌতে অবস্থিত৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি আমরা। তবে তাদের পক্ষ থেকে উত্তর মেলেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিম আসামের আম্বারি শিশুকল্যাণ এলপি স্কুলের শিক্ষক রতন লাল সাহার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তিনি বলছিলেন, ক শ্ৰেণির কৰ্মপুথি নামের বইতে এটি আছে। বইটির নাম:-অকণিৰ কৰ্মপুথি।
আমরা আসামের বাজ্যিক শিক্ষা-গবেষণা আব্রু প্রশিক্ষণ পরিষদের ওয়েবসাইটে বইটির কাভার পেজের ছবি খুঁজে পেলেও বইটির কোনো কপি পাইনি।
অকণিৰ কৰ্মপুথি নামের এই বইটির বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে আমরা ইউটিউবের একটি চ্যানেলে একটি প্লে-লিস্ট খুঁজে পেয়েছি যেখানে আলোচিত ভংগীমা গীতটি রয়েছে।
আসামে ক শ্রেণিতে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয় অকণিৰ কৰ্মপুথি নামের এই বইটি। দেখুন এখানে, এখানে।
মূলত, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি শ্রেণিকক্ষে একদল নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ্য গান গাওয়ার মাধ্যমে শারীরিক কসরতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত গত মার্চ মাস থেকেই ভারতের আসামের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসমীয়া ভাষায় অ’ ককা হাতী শীর্ষক যে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন সেটি আসামের ক শ্রেণির অকণিৰ কৰ্মপুথি নামের পাঠ্য বইয়ের একটি ভংগীমা গীত।
প্রসঙ্গত, নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য প্রতিরোধে অবদান রাখায় গত ০৯ ডিসেম্বর ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ভারতের আসামের একটি স্কুলে শিক্ষকদের ভংগীমা গীত করার একটি দৃশ্যকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Easy to Learn: Facebook Video
- Statement from Ratan Lal Saha
- Rumor Scanner’s own investigation