বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর 21, 2023
spot_img

চাকরি না পাওয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিংপাস দুই তরুণের চায়ের দোকান দেওয়ার ঘটনাটি ভারতের

সম্প্রতি ‘মিলছে না চাকরি, চায়ের দোকান দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস দুই তরুণ!’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাকরি না পাওয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং পাস দুই তরুণের চায়ের দোকান দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের মালদহের।

ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম Channel 24, The Daily Campus, Dhaka Post সহ একাধিক অনলাইন পোর্টালে চাকরি না পেয়ে চায়ের দোকান দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা দুই তরুণ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে শুধুমাত্র শিরোনামটি কপি-পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করছেন। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও ভারত শব্দটি উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

যেমন, Md Azad Khondoker নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘চাকরি না পেয়ে দুই ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু মিলে চায়ের দোকান চালু করলেন।এদেশে মেধাবীদের মূল্য নেই, মূল্য আছে চাটার দলের।’

আবার অনেকেই সংবাদটির স্থান সহ বিস্তারিত উল্লেখ না করে কেবল শিরোনাম ও ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। 

যেমন, NTRCA শিক্ষক নিবন্ধন নামে একটি ফেসবুক পেইজে এই সংবাদটি নিয়ে পোস্টে বলা হয়, ‘মিলছে না চাকরি, চায়ের দোকান দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস দুই তরুণ!’

Top history. বাংলা নামে আরেকটি ফেসবুক পেইজে এই সংবাদটির বিস্তারিত উল্লেখ না করে কেবল ‘চাকরি না পেয়ে চায়ের দোকান দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা দুই তরুণ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি শেয়ার করা হয়। 

ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চায়ের দোকানটির ঠিকানায় লেখা ‘কানির মোড়, ঝালঝালিয়া, মালদা।’ যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত।

এছাড়া অনলাইন পোর্টালগুলোর ফেসবুক পেইজ সহ অন্যান্য পেইজে এই সম্পর্কিত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করেও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে আলোচিত ঘটনাটি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার সূত্রে জানা যায়, মালদহের দুই ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর খান ও রাহুল আলি ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোডে কানি মোড়ে ভাড়া নিয়ে ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’ নামে এই চায়ের দোকানটি দিয়েছেন। তারা দুইজনেই মালদহের একটি  কারিগরি কলেজের ছাত্র ছিলেন।

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, তারা চায়ের দোকান দিলেও এর পাশাপাশি চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

মূলত, ভারতের মালদহের ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা দুই তরুণ কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়ে নিজ এলাকায় ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’ নামে একটি চায়ের দোকান খুলেন৷ যা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও সংবাদটি প্রকাশ করা হলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে শুধুমাত্র শিরোনামটি কপি-পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করছেন। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও ভারত শব্দটি উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত তিন বন্ধু মিলে পড়াশোনার খরচ যোগাতে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান দিয়েছেন। যা নিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে৷ 

সুতরাং, চাকরি না পাওয়ায় ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং পাস দুই তরুণের চায়ের দোকান দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে ‘ভারত’ শব্দ উল্লেখ না করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img