ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেননি ঢাবি ভিসি

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেবো; শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন ও ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, দেশ টিভি, জিটিভি, দেশ রূপান্তর, যায়যায়দিন, ঢাকা প্রকাশ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, বার্তা বাজার, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, বাংলাদেশ টাইমস, ঠিকানা নিউজ, বিডি২৪রিপোর্ট, ফেস দ্যা পিপল, প্রতিদিনের সংবাদ, রুপালী বাংলাদেশ, স্বদেশ প্রতিদিন, এবং বিশ্ব বাংলা।  

যমুনা টেলিভিশন এবং বাংলাভিশন তাদের ফেসবুক পেজে একই দাবিতে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে পরবর্তীতে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।  

অন্যান্য ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন বলে মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তার দেওয়া ‘এই আয়োজনে সবাই যতক্ষণ আমার হাত ধরে থাকবেন ততক্ষণ আমি মাঠে থাকবো। যেখানে আমার হাত ছেড়ে দেবেন, আমি পরিষ্কার আপনাদেরকে ডেকে বলে দিব যে এই জায়গাতে আমার বাধা হচ্ছে।’ শীর্ষক বক্তব্যটিকে গণমাধ্যমগুলোতে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার Nur Hossen-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৩ আগস্ট করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটিতে তিনি আরেক ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনে আলোচিত শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডের একটি স্ক্রিনশট প্রচার করে বলেন, ‘ডাকসু ভোট বাধাগ্রস্ত হলে নির্বাচনী দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেবো’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি মিসলিডিং। গতকাল অর্থাৎ, ২৩ আগস্ট ঢাবির কালো দিবস উপলক্ষে টিএসসি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় সাংবাদিকরা তাকে ডাকসু বিষয়ে কথা বলতে অনুরোধ করলে তিনি ডাকসু নিয়ে, ‘ছাত্রসংগঠনগুলোর আচরণে আমরা আশাবাদী। অনেক মতভেদ মতানৈক্য সত্তেও তারা ডাকসুতে অংশ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে- এটা আশাব্যঞ্জক। এই আয়োজনে যতক্ষণ আমার হাত ধরবেন ততক্ষণ আমি মাঠে থাকবো। আমার হাত ছেড়ে দিলে আমি পরিষ্কার সবাইকে বলে দেবো কোথায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’ শীর্ষক মন্তব্য করেন বলে দাবি করেন নূর হোসেন। এছাড়াও সেসময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলেনও পোস্টটিতে জানান।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ আগস্ট প্রচারিত ঢাবি উপাচার্যের সেদিনের পুরো বক্তব্যের ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে তার বক্তব্যের কোনো অংশেই তাকে ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেবো; শীর্ষক মন্তব্য করতে শোনা যায়না। তবে ভিডিওটির ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ড থেকে তাকে, ‘এটি এককভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কিংবা একটি নির্ধারিত মহলের বিষয় না। এই আয়োজনে সবাই যতক্ষণ আমার হাত ধরে থাকবেন ততক্ষণ আমি মাঠে থাকবো। যেখানে আমার হাত ছেড়ে দেবেন, আমি পরিষ্কার আপনাদেরকে ডেকে বলে দিব যে, এই জায়গাতে আমার বাধা হচ্ছে; পরিষ্কার কথা। এটি একটি জাতীয় দায়। যদিও এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠান কিন্তু পুরো জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।’ শীর্ষক মন্তব্য করতে দেখা যায়। 

এছাড়াও উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতভাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাবি জনসংযোগ দফতর থেকে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়।

অর্থাৎ, এ থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেবো; শীর্ষক মন্তব্যটি করেননি। 

সুতরাং, ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেবো; শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img