২০২৬ সালে প্রথমবারে মতো ডিভি লটারিতে বাংলাদেশের নাম না থাকার দাবিটি সত্য নয়

সম্প্রতি ‘২০২৬ সালের ডিভি লটারি: দুঃসংবাদ, তালিকায় নেই বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি দাবি গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে- জনকণ্ঠ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রামের সুযোগ সাম্প্রতিক সময়ে স্থগিত করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ডিভি ভিসা প্রোগ্রাম ২০১২ সালে শেষ হয়ে গেলেও এটিকে সাম্প্রতিক দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে গণমাধ্যম জনকণ্ঠের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২৬ সালের ডিভি লটারির তালিকাতে বাংলাদেশের নাম না থাকার বিষয়টিকে ‘দুঃসংবাদ’ বলে অবহিত করা হয়েছে। তবে, উক্ত প্রতিবেদনে ২০১২ সাল থেকে বিগত ১৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ডিভি লটারির তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকার কথাটি উল্লেখ করা হয়নি, যা এ বিষয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে৷ 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টসমূহের মন্তব্যের ঘর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এটিকে ২০২৬ সালের প্রথমবার ঘটতে যাওয়া ঘটনা অনুমান করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করছেন। 

Screenshot: Facebook 

অনুসন্ধানে গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ০৮ ডিসেম্বর হালনাগাদকৃত ‘বাংলাদেশিদের জন্য আর ডিভি লটারি নয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে গেছে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এই পাঁচ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বরাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে পাঁচ বছরে কোনো দেশ থেকে যদি ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, তাহলে সে দেশ আর ডিভি প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে না। একারণে বাংলাদেশ ডিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আর যোগ্য নয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ‘ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি)’ শিরোনামে একটি ঘোষণা অনুযায়ী, “২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এই ভিসার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে বলে বাংলাদেশ এই যোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ ডিভি কর্মসূচি সেই দেশগুলোর জন্য যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার তুলনামূলকভাবে কম।”

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ডিভি লটারি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে কোন কোন দেশ আবেদন করতে পারবে- এই তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং শেষে কারা আবেদন করতে পারবে না সেটিও উল্লেখ রয়েছে। আবেদনের অযোগ্যদের সেই তালিকায় ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে (২০২৩, ২০২৪, ২০২৫) অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জন্য ডিভি লটারি কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়নি।

সুতরাং, ডিভি লটারি কার্যক্রমে ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাদ পড়ার বিষয়টিকে সাম্প্রতিক ঘোষণা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img