বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি ভারতের

সম্প্রতি ‘বোরকা পরে আসায় পরীক্ষায় বসতে দেয়া হল না ছাত্রীদের’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদের।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (ডেইলি ক্যাম্পাস, দৈনিক আমাদের সময়, জুম বাংলা) ‘বোরকা পরে না আসায় পরীক্ষায় বসতে দেয়া হল না ছাত্রীদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: The Daily Campus 

প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদ গুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের হায়দ্রাবাদের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে একাধিক ফেসবুক পেজ যথাযথভাবে যাচাই না করে অথবা অধিক রিচ পাওয়ার আশায় বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ না করে গণমাধ্যমের শিরোনাম কপি পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করেছে। ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।

এবিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে নেটিজেনদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।

Image Collage by Rumor Scanner

পরবর্তীতে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম Ei Samay এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুন ‘ফের হিজাব বিতর্ক! তেলেঙ্গনায় বোরখা পরে আসা কলেজ পরীক্ষার্থীদের হলে ঢুকতে ‘না’ কর্তৃপক্ষের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ei Samay

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বোরখা পরে আসার কারণে ছাত্রীদের একাংশকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হায়দরাবাদের কেভি রাঙ্গা রেড্ডি কলেজের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে বোরখা খোলার পরেই ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়।

এছাড়া একই দিনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম India Today-র ওয়েবসাইটে  ‘Burqa-clad students denied entry to Hyderabad college, T’gana minister stokes controversy with ‘short dress’ remark’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত  প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

Screenshot: India Today 

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।

মূলত, সম্প্রতি ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদের শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ না প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক ফেসবুক পেজেও বিষয়টি স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। এতে বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত  নোটিশে বলা হয়, বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তের জন্য কানসহ মুখমণ্ডল পরীক্ষা চলাকালীন সময় দৃশ্যমান রাখতে হবে।’ পরবর্তীতে উক্ত সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী ফয়জুল্লাহ ফয়েজের মাধ্যমে  ৩ শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ঐনোটিশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে হাইকোর্টের ওই আদেশ বাতিল চেয়ে আপিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৯ মে  হাইকোর্টের ঐ আদেশ স্থগিত করে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে প্রত্যেক ছাত্রীর কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে বলে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ এবং সেই সঙ্গে আগামী ২ মাসের মধ্যে হাইকোর্টে চলমান এ সংক্রান্ত রিট চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ দুই তরুণের চাকরি না পাওয়ায় চায়ের দোকান দেওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত প্রচারের ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কলেজে বোরকা পরে আসায় ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম ভারত উল্লেখ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img