Home Blog Page 580

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম: ভুল তথ্য যাচাইয়ে স্বীকৃতি পেল রিউমর স্ক্যানার

0

বাংলাদেশে চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন একটি শিক্ষা কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রম চালু করেছে সরকার। আগামী বছর থেকে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতেও এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন আসবে, নতুনত্ব আসবে পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।  

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে। 

কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা থামছে না। শিক্ষাক্রম বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে গত নভেম্বর থেকে ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ বিশেষ করে নভেম্বরের শেষ দিকে এসে বেশ কিছু ভিডিও ইন্টারনেটে রীতিমতো ভাইরাল আকার ধারণ করেছিল যেগুলোকে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছিল। রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক গ্রুপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে যাচাইয়ের অনুরোধ আসার প্রেক্ষিতে আমরা ভিডিওগুলো নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। 

ফেসবুকের মনিটরিং টুল এবং ম্যানুয়াল অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, নভেম্বরের শেষদিক থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অবধি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সর্বাধিক ভাইরাল হয়েছে। টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই শিরোনামের এই ভিডিওতে একটি শ্রেণীকক্ষে একদল নারী-পুরুষের টিলিং টিলিং ছাইকেল চলাই শীর্ষক একটি ছড়া আবৃত্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যাচ্ছিল৷ আমরা ০৪ ডিসেম্বর সকালে যখন এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক ভিডিও প্রকাশ করি সেসময়ের মধ্যেই আলোচিত এই ভিডিওটি ফেসবুকেই প্রায় এক কোটি মানুষ দেখে ফেলেছেন। বিশাল সংখ্যক এই মানুষের কাছে ভিডিওটি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য হিসেবেই ভিডিওটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। 

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম
Screenshot: Facebook

আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পাই, ভিডিওটি বাংলাদেশেরই নয়। গত ১৭ নভেম্বর ভারতের আসামের শিক্ষক রতন লাল সাহা তার ফেসবুক পেজে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট টিলিং টিলিং চাইকেল চলাই শীর্ষক একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। উক্ত ভিডিওকে সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

আমাদের প্রচারিত এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক ভিডিওটি ফেসবুকে রিউমর স্ক্যানারের পেজসহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে রি-পোস্টের মাধ্যমে এখন অবধি প্রায় ১৩ লক্ষাধিক মানুষ দেখেছেন৷ 

এই ফ্যাক্টচেক প্রকাশের পর রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে আরো একাধিক ভিডিও যাচাইয়ের অনুরোধ পেয়েছে। এর মধ্যে দুইটি ভিডিও আলাদাভাবে অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, দুটোই কুমিল্লার একটি অনুষ্ঠানের এবং নিশ্চিতভাবেই এগুলোর সাথেও নতুন শিক্ষা কারিকুলামের কোনো সম্পর্কই নেই। 

প্রথম ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, একদল নারী-পুরুষের ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।

Screenshot: Facebook

আমরা যখন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করি, তখন এই ভিডিও সম্বলিত একটি পোস্টই প্রায় ৩১ লক্ষাধিক মানুষ দেখেছেন। আমরা ভিডিওতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছি। তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মনতলী সরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইয়াছিন। আমরা তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং প্রাসঙ্গিক অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত হয়েছি যে, গত ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের এক প্রশিক্ষণে  আলোচিত একটি ব্যাঙ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এই প্রশিক্ষণেরই দৃশ্য এটি। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলাকালীনই আরেকটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হতে দেখা যায়, যেখানে একদল নারী-পুরুষের ঝিংগা লালা হু শীর্ষক শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে জংলী সদৃশ পোশাকে নৃত্য করছেন।

Screenshot: Facebook

একটি পোস্টের মাধ্যমেই এই ভিডিওটি প্রায় ১০ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বার।

আমরা যাচাই করে দেখেছি, কুমিল্লা প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে (পিটিআই) কাব স্কাউটের গত নভেম্বরের একই প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠানের দৃশ্য এটি৷ 

ভাইরাল এই ভিডিওতে থাকা আব্দুর রহিম স্বপন নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। জনাব স্বপন আমাদের কাছে ঐ দিনের অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছবি পাঠিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে কোনো প্রশিক্ষণের ঘটনা নয়।

আমাদের নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মনিটরিংয়ে মাধ্যমে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কতিপয় নারী-পুরুষ প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক হাঁসের ডাকের শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে হাঁসের চলার মতো ভঙ্গি করছেন, এমন একটি দৃশ্য ছিল এই ভিডিওতে। দাবি করা হচ্ছিল, এটিও বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।

Screenshot: Facebook

আমরা যাচাই করে দেখেছি, ২০২২ সালের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূল গণিত বইয়ের বিষয়গুলো সহজ ও আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে গণিত অলিম্পিয়াডের আদলে এই শিখন কৌশলটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল৷ তবে এটি এখন আর দেওয়া হচ্ছে না, আর নতুন শিক্ষা কারিকুলামেও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই। নওগাঁর বদলগাছিতে উক্ত প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন এমন একজন শিক্ষকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তাছাড়া, চতুর্থ শ্রেণির ‘আনন্দে গণিত শিখি-কনটেন্ট ডেলিভারি বুক’-এ প্যাকঁ প্যাকেঁর এই শিখন কৌশলের বিষয়ে (৮৩ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ রয়েছে। তবে এটি মূল পাঠ্যবইয়ের অংশ নয়৷ চতুর্থ শ্রেণির গণিত বইয়েও এই বিষয়টির উল্লেখ নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, এই শ্রেণিতে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হবে আগামী বছর। তাই ২০২২ সালে এটির প্রশিক্ষণ হওয়াও অবান্তর। 

নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শুধু যে বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক ভিডিও-ই বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে তা নয়, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি হিন্দি ছড়া আবৃত্তির মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও প্রচার করে এটিকেও বাংলাদেশের সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে। 

Screenshot: Facebook

আমরা এই ভিডিও নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করেছি, পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি ভিডিওটির মূল সূত্রে। এই ভিডিও গেল কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানে প্রচার হয়ে আসতে দেখা গেছে। আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি ভারত ও পাকিস্তানের একাধিক ফ্যাক্টচেকারের সাথে। পাকিস্তানের একজন ফ্যাক্টচেকার আমাদের বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে এটা পাকিস্তানের কোনো দৃশ্য নয়৷ 

ভিডিওটি প্রথম ছড়াতে শুরু করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারতের হায়দারাবাদ ভিত্তিক কিছু ফেসবুক পেজ থেকে। ভিডিওতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘মাম্মি কি রুটি গোল গোল‘ নামে যে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন সেটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি শিশু ছড়া হলেও এটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত নেই বলে ভারতের একজন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন। আমরা ভিডিওর মূল সূত্র নিশ্চিত হতে না পারলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি বাংলাদেশের ভিডিও নয়৷ 

নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ভিন্ন দেশ এবং পুরোনো ঘটনার ভিডিওগুলো অল্প সময়ের ব্যবধানে ফেসবুকে লক্ষ লক্ষ মানুষের পৌঁছে যেতে দেখেছি আমরা৷ এত বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে এই ভুল তথ্যগুলো পৌঁছানোর ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে যেমন ভুল বার্তা গিয়েছে তেমনি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তথা সরকারকেও পড়তে হয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। আমরা এই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ওয়েবসাইটে ফ্যাক্টচেক প্রকাশের পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, টিকটক) ফ্যাক্টচেক ভিডিও-ও প্রকাশ করেছি। আমাদের ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে আরও অধিক মানুষের কাছে সঠিক তথ্যটি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশিত হচ্ছে, তখন অবধি রিউমর স্ক্যানারের নিজস্ব পেজ এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো থেকে প্রায় ২২ লক্ষ বা ২.২ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে এই ভিডিওগুলো। সোশাল মিডিয়া মনিটরিং টুলগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে আমাদের অনুমান, এই ভিডিওগুলো আরো অন্তত ২ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে। 

এই কাজের তাৎক্ষণিক স্বীকৃতিও মেলেছে। গেল ০৯ ডিসেম্বর নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। সেদিন লিডসউইন লিমিটেডের আয়োজনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ব নাগরিক গঠনে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শীর্ষক সম্মেলন- ২০২৩ এ রিউমর স্ক্যানারের পাঁচ সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এবং নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান। দেশব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছে প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের এডুম্যান প্রজেক্ট।

Image: Rumor Scanner 

রিউমর স্ক্যানার টিম বিশ্বাস করে, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য প্রতিরোধ এবং তার স্বীকৃতি পাওয়া এই কাজ চলমান রাখার বিষয়ে দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। সে দায়িত্ব পালনে রিউমর স্ক্যানার টিম কাজ করে যাবে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টা এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করি আমরা।

এক নজরে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে এখন অবধি প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক 

১. ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’ ভিডিওটি নতুন কারিকুলামের অধীন শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয় 
২. শিক্ষা কারিকুলামের নয়, ব্যাঙের ছড়ার নৃত্য প্রশিক্ষণের ভিডিওটি কাব স্কাউটের ট্রেনিংয়ের দৃশ্য 
৩. নতুন শিক্ষা কারিকুলামের নয়, ঝিংগা লালা হু শীর্ষক ভিডিওটি কাব স্কাউটের প্রশিক্ষণের দৃশ্য 
৪. নতুন শিক্ষা কারিকুলামের নয়, প্যাঁক প্যাঁক শীর্ষক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ভিডিওটি ২০২২ সালের 
৫. নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণ দাবিতে হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় 

ফ্যাক্টচেক ভিডিও 

আমেরিকান সংগীত তারকা কোয়াভোর ছবি বিকৃত করে ওবায়দুল কাদেরের নামে প্রচার

0

সম্প্রতি, সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে প্রচারিত এই ছবিটি আসল নয় বরং ইন্টারনেট থেকে আমেরিকান সংগীত তারকা কোয়াভো এর একটি ছবি সংগ্রহ করে তা সম্পাদনার মাধ্যমে সেখানে কোয়াভো এর মাথার স্থলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাথা বসিয়ে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে luvfafits নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৮ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ছবির সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison: Rumor Scanner

উক্ত পোস্টের বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবিতে থাকা ব্যক্তি হচ্ছেন আমেরিকান সংগীত তারকা কোয়াভো।

পরবর্তীতে Donda’s Place নামক এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বরে প্রকাশিত পোস্ট থেকেও একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, আমেরিকান সংগীত তারকা কোয়াভো’র একটি ছবি ২০২১ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান। সম্প্রতি সেই ছবিটিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে কোয়াভোর মুখমণ্ডলের স্থলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখমণ্ডল যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে ফেসবুকে প্রচারিত এই ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আসন্ন পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ এর দলগুলোর এখনও গ্রুপ বিন্যাস হয়নি 

0

সম্প্রতি, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর গ্রুপ বিন্যাসের তথ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তালিকা প্রচার করা হয়েছে।

বিশ্বকাপ ২০২৪

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী দলগুলোর গ্রুপ বিন্যাস প্রকাশ করেনি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে গ্রুপ বিন্যাসের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবির পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পোস্টগুলোতে বলা হয়, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে বাংলাদেশ এবং সবচেয়ে সহজ গ্রুপে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। সেখানে গ্রুপ এ তে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড এবং ওমান, গ্রুপ বি তে পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি এবং নেপাল, গ্রুপ সি তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, কানাডা এবং নামিবিয়া, গ্রুপ ডি তে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র এবং উগান্ডা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ভেরিফাইড টুইটার হ্যান্ডেল পর্যবেক্ষণ করে কোথাও আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ এর গ্রুপ বিন্যাসের কোনো তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আইসিসির ওয়েবসাইটে Men’s Events সেকশনে গিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে প্রকাশিত সর্বশেষ ইভেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে সেখানে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ বিন্যাস এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের আয়োজনে যৌথভাবে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মোট ২০টি দল অংশগ্রহণ করবে এবারের টি২০ বিশ্বকাপে। দলগুলোকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রত্যেক গ্রুপে থাকবে পাঁচটি করে দল। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষে থাকা দু’টি দল সুপার ৮ এর যোগ্যতা অর্জন করবে। এই দলগুলোকে আবারও দু’টি গ্রুপে ভাগ করা হবে। চারটি করে দল থাকবে এই দু’টি গ্রুপে। যেখান থেকে চারটি দল সেমিফাইনাল খেলবে। 

মূলত, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ বিন্যাস হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর একটি তালিকা প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর  গ্রুপ বিন্যাস এখনও প্রকাশ করেনি। এছাড়া আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ নেই। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি’র ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর গ্রুপ বিন্যাস প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • International Cricket Council: Facebook
  • International Cricket Council: Website
  • International Cricket Council: Twitter
  • International Cricket Council: Website 
  • Rumor Scanner’s Own Analysis

তামিম ইকবালকে বিশ্বের সেরা ওপেনার বলেননি টম মুডি

0

সম্প্রতি, কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ টম মুডি “গৌতম গম্ভীর এবং সুনীল নারীন আমাকে খুব করে রিকোয়েস্ট করেছে তামিম ইকবালকে দলে ভেড়ানোর জন্য, আমরা চেষ্টা করছি তামিমকে দলে নিতে, তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ও পৃথিবীর সেরা ওপেনার” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

তামিম

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন, এখানে(আর্কাইভ),  এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ টম মুডি ক্রিকেটার তামিম ইকবালকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেননি বরং Sports Diversity নামের একটি ক্রীড়া বিষয়ক ফেসবুক পেজের ফটোকার্ড এডিট করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে তামিম ইকবালের বিষয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ টম মুডির আলোচিত মন্তব্যটির সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

তবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম The Times of India এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল “Rohit Sharma, David Warner world’s best T20 openers: Tom Moody” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Source: The Times of India

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টম মুডি বিশ্বের সেরা টি টুয়েন্টি ওপেনার হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মা এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নারকে বেছে নিয়েছেন।

পরবর্তীতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ফটোকার্ডে থাকা Sports Diversity শীর্ষক নামের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত নামের একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পেজ পর্যবেক্ষণে পেজটিতে গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Source: Sports Diversity Facebook Page

উক্ত ফটোকার্ডে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ টম মুডির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “আমি মনে করি রাসেল এবং নারিনকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে গম্ভীর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে তাদের বোঝে, সে তাদের সাথে খেলেছে, সে তাদের ক্যাপ্টেন এবং সে তাদের থেকে সেরাটা বের করতে সক্ষম হবে।” 

Comparison By Rumor Scanner

অর্থাৎ, উক্ত ফটোকার্ডে টম মুডির মন্তব্যের অংশ এডিট বা সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, আইপিএল ২০২৪ এর আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্স আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারিনকে ধরে রাখার পিছনে গৌতম গম্ভীরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানান কোচ টম মুডি। পরবর্তীতে টম মুডির উক্ত বক্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড Sports Diversity নামের ক্রীড়াবিষয়ক একটি পেজে প্রকাশিত হয়। সেই ফটোকার্ডে টম মুডির বক্তব্যের অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে তামিম ইকবালের নাম জড়িয়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বে তামিম ইকবালের নামে ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ তামিম ইকবালকে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সেরা ওপেনার বলেছেন শীর্ষক দাবিতে  ইন্টারনেটে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটিও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি’র অবস্থান নিয়ে তারেক রহমানের নামে প্রচারিত বক্তব্যটি এআই দিয়ে তৈরি

সম্প্রতি, ফিলিস্তিন নয় যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি– শীর্ষক ক্যাপশনে তারেক রহমানের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলতে শোনা যায়, প্রিয় দেশবাসী! আসসালামু আলাইকুম। আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, ইসরায়েল- হামাস ইস্যুতে বিএনপি’র অবস্থান কী? বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের রাজনীতি খুবই জটিল। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তারা সাপোর্ট করছে ফিলিস্তিনকে। এখন যদি আমরা ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর বেজার হবে, নষ্ট হবে আমাদের সুসম্পর্ক। তাই চুপচাপ থাকবো। সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। কাকে সাপোর্ট করলে ফায়দা আমাদের। সবাইকে ধন্যবাদ!  বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দাবাদ। 

ইসরায়েল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুলন্ধানে দেখা যায়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরায়েলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি নয় বরং তারেক রহমানের ভিন্ন ঘটনার বক্তব্যের ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে আলোচিত দাবি সম্বলিত অডিও যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

শুরুতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন কোনো বক্তব্য দিয়েছেন কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্র হতে উক্ত বক্তব্য সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, তারেক রহমান দেশবাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়ে থাকে। 

তবে, আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তারেক রহমানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পাশাপাশি, বিএনপি’র মিডিয়া সেল এবং বিএনপি’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও উক্ত ভিডিও সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বক্তব্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২৫ জুলাই “লন্ডন হতে সরাসরি। ২৫ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার ২৭ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য”- শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির পোশাক এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মিল খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। তবে, এই ভিডিওতে তারেক রহমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তব্যটি দেননি। 

Comparison Image By Rumor Scanner

এতে প্রতীয়মান হয় যে গত ২৫ জুলাই তারেক রহমানের দেওয়া ভিডিও বক্তব্যটির কোনো একটি অংশ থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওতে থাকা অসংগতি 

৪৯ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে থাকা কণ্ঠের সাথে তারেক রহমানের কণ্ঠের মিল নেই এবং কথা বলার সময়ও কণ্ঠস্বরের কোনো পরিবর্তন নেই। 

এছাড়া, চোখের নড়াচড়া ও কথা বলার সময় ঠোঁটর নড়াচড়ার মধ্যেও অসংগতি রয়েছে। 

মূলত, গত ২৭ জুলাই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়ে একটি বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্য তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে সেই ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তাতে ফিলিস্তিন নয় যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে বিএনপি শীর্ষক অডিও যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উক্ত ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয় এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

সুতরাং, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ঘটনায় বিএনপি’র অবস্থান নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিকৃত বা এডিটেড। 

তথ্যসূত্র

ভিরাট কোহলির পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করার গুজব 

0

ভারতীয় ক্রিকেট তারকা ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমা’র সাথে তিনশ কোটি টাকার স্পন্সর বাতিল করবেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ভিরাট কোহলির

যা দাবি করা হচ্ছে

বিরাট কোহলি পুমার সাথে ৩০০ কোটি INR মূল্যের তার যোগাযোগ শেষ করবেন কারণ তারা ইসরায়েলের ক্রীড়া ইভেন্টগুলিতে স্পনসর করছে এবং অবদান রাখছে, যা সরাসরি ইসরায়েলের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তিনি তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহের সাথে বিচ্ছেদ করেছেন, যা তাকে পুমার ৩০০ কোটি INR চুক্তির চুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল। এই দ্বন্দ্বের পর তিনি নিজের ব্র্যান্ড চালু করতে চলেছেন। আপনার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা, কোহলি। স্যালুট বিরাট কোহলি!

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমা’র সাথে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির তিনশত কোটি রূপির চুক্তি ছিল না বরং উক্ত চুক্তি ছিলো ১১০ কোটি ভারতীয় রূপির সমমূল্যের। কিন্তু উক্ত চুক্তি বাতিলের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভিরাট কোহলি এবং তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ’র আলাদা হওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি “Virat Kohli strikes Rs 100-crore deal with Puma” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিরাট কোহলি প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে একটি একক ব্র্যান্ডের সাথে একশত কোটি টাকার এনডোর্সমেন্ট চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন৷ তিনি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে আট বছরের প্রায় ১১০ কোটি ভারতীয় রূপির সমমূল্যের চুক্তি করেছেন।

অর্থাৎ, ২০২৫ সালে ভিরাট কোহলির সাথে পুমার প্রায় ১১০ ভারতীয় রূপির সমমূল্যের চুক্তি শেষ হবে।

এছাড়া, ভারতীয় গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম News 18 এর ওয়েবসাইটে গত ২০ নভেম্বরে “Virat Kohli and His Long-standing Manager Bunty Sajdeh Part Ways” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিরাট কোহলি এবং ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ আলাদা হয়ে গেছেন।

মূলত, গত নভেম্বর মাসে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি এবং তার ম্যানেজার বান্টি সাজদেহ আলাদা হয়ে যান। এই বিষয়ে তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি উক্ত ঘটনাকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ইস্যুর সাথে জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করবেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম কিংবা কোনে গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলি স্পোর্টস লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড পুমার সাথে তিনশ কোটি রূপির স্পন্সর বাতিল করবেন দাবিতে ফেসবুকে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া রুটিন প্রচার

0

সম্প্রতি, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সময়সূচি দাবিতে একটি রুটিনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

এসএসসি

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি বরং ২০২৩ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত রুটিনটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Source: Facebook Claim Post

ছবিটি পর্যবেক্ষণে বেশকিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

  • উক্ত ছবিতে রুটিন প্রকাশের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ৯ নভেম্বর ২০২৪; যা অসঙ্গতিপূর্ণ। তারিখের ফন্টের সাথে অন্যান্য টেক্সট ফন্টের পার্থক্য রয়েছে।
  • সেখানে শুরুতে উল্লেখিত ‘২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি’ বাক্যটির ২০২৪ অংশের ৪ সংখ্যাটি’র ফন্টের সাথে অন্যান্য সংখ্যার ফন্টের পার্থক্য রয়েছে। এতে বোঝা যায়, ২০২৪ এর শেষে ৪ সংখ্যাটি সম্পাদনার মাধ্যমে বসানো হয়েছে।
  • এছাড়াও, রুটিনটিতে উল্লেখিত পরীক্ষার তারিখগুলোর ফন্টের সাথে অন্যান্য টেক্সট ফন্টের মিল পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায়, এই তারিখগুলোও সম্পাদনার মাধ্যমে বসানো হয়েছে।

পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০২৩ এর রুটিনটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Dhaka Education Board

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই রুটিনটি’র সাথে আলোচিত রুটিনটিতে উল্লেখিত সবগুলো বিষয়ের সিরিয়াল এবং দিনের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, ২০২৩ সালের এই রুটিনটি সম্পাদনার মাধ্যমে ২০২৪ সালের রুটিন দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এইচএসসি ২০২৪ এর রুটিন এখনো প্রকাশিত হয়নি।

পরবর্তীতে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘গুজব থেকে সাবধান। এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর রুটিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি’ শীর্ষক ক্যাপশনে আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন।

Screenshot: Facebook

আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক প্রফেসর আবুল কালাম বাশার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো যাচ্ছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হবে। পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইতোমধ্যে ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর সময়সূচি দেখা যাচ্ছে, যা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত বা প্রকাশিত নয়। সময়সূচি চূড়ান্ত হলে সকল বোর্ডের ওয়েবসাইটে এবং জাতীয় পত্রিকাসমূহের মাধ্যমে জানা যাবে।”

এছাড়া ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া রুটিনের ছবির  বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসকে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, বোর্ডের পক্ষ থেকে রুটিন প্রকাশ হলে সেটা আগে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমরা এখনো কোনো রুটিন প্রকাশ করিনি।

অধ্যাপক তপন কুমার আরও বলেন, ‘প্রতি বছর প্রশ্নফাঁসসহ এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি চক্র অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। আমরা তাদের বিষয়ে সজাগ রয়েছি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসরণ করলে আশা করলি বিভ্রান্তি এড়াতে পারবেন। ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সব নিয়মিত, অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচিতে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হলে বোর্ডের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইটে রুটিন প্রকাশিত হবে।’

মূলত, ২০২৩ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সময়সূচির একটি ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সেখানে উল্লেখিত তারিখগুলো পরিবর্তন করে ২০২৪ সালের বিভিন্ন তারিখ বসিয়ে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

সুতরাং, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত রুটিনের ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

মেয়েরা জিন্স পরছে, তাই এত ভূমিকম্প হচ্ছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি মাওলানা ফজলুর রহমান

সম্প্রতি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে জাতীয় ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি সংবাদের স্ক্রিনশট প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান “মেয়েরা জিনস পরছে, তাই এত ভূমিকম্প” হচ্ছে শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। 

মেয়েরা জিন্স পরছে

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে বিগত বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও মতামত কলাম দেখুন কালের কণ্ঠ, জাগোনিউজ২৪, এনটিভি।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান মেয়েরা জিন্স পরছে, তাই এত ভূমিকম্প হচ্ছে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং পাকিস্তানের স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মকমূলক সাইটে ২০১৪ সালে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাস্তব বক্তব্য হিসেবে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত মূলত গত ০২ ডিসেম্বর সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস। পরবর্তীতে কালের কন্ঠ পত্রিকার ২০১৫ সালের একটি সংবাদ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যাতে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

আমরা ২০১৫ সালের ৩১ মে প্রকাশিত কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনটি তাদের ওয়েবসাইটে খুঁজে পেয়েছি। কালের কণ্ঠ দাবি করেছে, ইসলামাবাদে একটি সংবাদ সম্মেলনে জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলামি ফজল (JUI-F)-এর মুখ্য মওলানা ফজলুর রহমান বলেছেন, মেয়েদের জিনস পরাই ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের কারণ। নারীদের বস্তায় পুরে বাড়ির মধ্যে রেখে দিয়ে দেশে শরিয়াহ আইন চালু করলে, তালিবানি ভাইরা আর পাকিস্তান আক্রমণ করবে না বলেও ফজলুর রহমান মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে সংবাদটিতে৷ 

কালের কণ্ঠ তাদের প্রতিবেদনে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করেনি। আমরা যাচাই করে দেখেছি, প্রতিবেদনটি প্রকাশের এক দিন পূর্বে অর্থাৎ ৩০ মে ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজ এর বাংলা ভাষার অনলাইন সংস্করণে একই ভাষায় উক্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনেও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ না পাওয়া গেলেও একইদিন (৩০ মে) দেশের আরেক সংবাদমাধ্যম এনটিভির অনলাইন সংস্করণে একই খবর প্রকাশ হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

এই খবরে দাবি করা হয়, মাওলানা ফজলুর গতকাল শুক্রবার (২৯ মে) দেওয়া এক বক্তব্যে আলোচিত মন্তব্যটি করেন। এই তথ্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মুখপত্র দাবিকৃত শেখইয়ারমামি ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইটের নাম। 

আমরা আলোচিত এই ওয়েবসাইটে ২৫ মে প্রকাশিত খবরটি খুঁজে পেয়েছি। এই প্রতিবেদনেও এসেছে, শুক্রবার তিনি উক্ত মন্তব্য করেন। 

কিন্তু ২৫ মে এর পূর্বে শুক্রবার ছিল ২২ মে। অর্থাৎ, তিনি ২২ মে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২২ মে Khabaristan Times নামে পাকিস্তানের একটি ওয়েবসাইটে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনেও প্রায় একই তথ্যই উল্লেখ পাওয়া যায়। 

এই সাইটটি এখন আর সচল নেই৷ সাইটের ফেসবুক পেজে ২০১৭ সালের জানুয়ারির সর্বশেষ পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২৫ জানুয়ারি থেকে পাকিস্তানে ব্লক করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইট।

Screenshot,: Facebook 

সেসময় পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে, খবরিস্তান টাইমস ছিল মূলত একটি স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গধর্মী সাইট। একাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সাইটটি ব্লক করে দিয়েছে সরকার। 

আমরা এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জেনেছি, ২০১৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি Pakistan Today নামে একটি ওয়েবসাইট একই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে মাওলানা ফজলুরের বক্তব্যের তারিখ ৩১ জানুয়ারি উল্লেখ পাওয়া যায়৷ 

অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, সেসময় পাকিস্তান টুডে এর স্যাটায়ার বিভাগের নাম ছিল “খবরিস্তান টুডে।” পরবর্তীতে এই “খবরিস্তান টুডে” একটি স্বতন্ত্র সাইট হিসেবে খবরিস্তান টাইমস নামে আত্মপ্রকাশ করে। 

অর্থাৎ, তারিখ বদলে দিয়ে একাধিক বার আলোচিত বক্তব্যটি মাওলানা ফজলুরের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।  

মূলত, ২০১৫ সাল থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমানের দাবিতে নারীদের জিন্স পরিধানের সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও এটি মূলত স্যাটায়ার বা ব্যাঙ্গাত্মকমূলক সাইটে ২০১৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাস্তব বক্তব্য হিসেবে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সুতরাং, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান “মেয়েরা জিনস পরছে, তাই এত ভূমিকম্প” হচ্ছে শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে গেল কয়েক বছর ধরেই প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’ পেলো রিউমর স্ক্যানার

0

নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় ‘পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

আজ ৯ই ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার লিডসউইন লিমিটেডের আয়োজনে বাংলা একাডেমীর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ব নাগরিক গঠনে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শীর্ষক সম্মেলন- ২০২৩ এ রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামানসহ প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ সদস্যের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এবং নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান।

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রিউমর স্ক্যানারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো: ছাকিউজ্জামান বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি ইন্টারনেটে শিক্ষা খাত নিয়ে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে রিউমর স্ক্যানার। নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়সহ ২০২৩ সালে শিক্ষা খাত নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ১০০ টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা খাতের বিষয়ে গুজব মোকাবেলায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।

দেশব্যাপী শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছে প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লিডসউইন লিমিটেডের এডুম্যান প্রজেক্ট।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য দাবি করে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওগুলো হচ্ছে- ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’, ‘ওরে ও কোলা ব্যাঙ’, ‘ঝিংগা লালা হু’, ‘প্যাক প্যাক ডাকে প্রশিক্ষণ’ ও ‘মাম্মি কি রুটি গোল গোল’।

বার্তা প্রেরক

মোঃ ছাকিউজ্জামান
সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও উপ-সম্পাদক
[email protected]

সুখের এবং কষ্টের কান্নায় আলাদা চোখ দিয়ে প্রথমে পানি ঝরার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, ‘সুখের কান্নায় ডান চোখে, কষ্টের কান্নায় বাম চোখে আগে পানি আসে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

কষ্টের কান্নায়

খানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটিতে বলা হয়েছে, “আপনি জানলে অবাক হবেন! আমরা যখন সুখে কান্না করি তখন সেটা প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে, এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথম বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে থাকে। আর এই পানি কি শুধুই পানি! এতে রয়েছে শ্লেষ্মা, তেল, ইলেক্ট্রোলাইট-এর এক জটিল মিশ্রণ। যেটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোেধী, যা চোখকে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে থাকে।”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুখের ও কষ্টের কান্নায় যথাক্রমে ডান ও বাম চোখে প্রথমে পানি আসে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে রিউমর স্ক্যানারের পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে চোখের অশ্রু সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো-

অশ্রু কীভাবে উৎপন্ন হয়?

চোখের গোলকের বাইরের অংশে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিতে অশ্রু উৎপন্ন হয়। এই গ্রন্থি টিয়ার ফিল্মের মধ্যম স্তর নিয়ে গঠিত। স্বাস্থ্যকর অশ্রু চোখকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। চোখের কর্নিয়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি অশ্রু উৎপন্ন করে। মানুষ যখন কাঁদে তখন তরল চোখের বাইরে বের হয়ে আসে, যাকে আমরা অশ্রু বলি।

অশ্রুর ধরন

মানুষের চোখের সুস্থতার জন্য অশ্রু একটি অপরিহার্য জিনিস। অশ্রুর সাথে মানুষের আবেগের সংযোগ রয়েছে। মানুষের চোখ থেকে ৩ ধরনের অশ্রু উৎপন্ন হয়।

বেসাল টিয়ার্স

এটি চোখের মৌলিক অশ্রু। বেসাল টিয়ার্স চোখের পাতা নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। কারণ এর মাধ্যমে চোখ পিচ্ছিল থাকে। এটি তিনটি লেয়ারের সাহায্যে তৈরি হয় যার সবচেয়ে ভেতরেরটি মিউকাস লেয়ার, মাঝেরটি অ্যাকুয়াস লেয়ার আর ওপরেরটি তৈলাক্ত লিপিড লেয়ার। এই লেয়ারগুলো চোখের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এরা চোখকে ভেজা রাখে, বাইরের ময়লা এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ইরিটেন্ট টিয়ার্স বা রিফ্লেক্স টিয়ার্স

চোখকে ধোঁয়া, ধুলাবালি বা জ্বালাপোড়ার হাত থেকে এই অশ্রু সাহায্য করে। এটি চোখকে পরিষ্কার রাখে। যখন চোখে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়, তখন এই টিয়ার তৈরি হয়ে চোখের জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী পদার্থকে চোখ থেকে বের করে দেয়। এটি ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

ইমোশনাল টিয়ার্স

মানুষের দুঃখ, কষ্ট, ভয়, আনন্দ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এই অশ্রু তৈরি হয়। এ কান্নায় অনেক বেশি মাত্রার হরমোন এবং প্রোটিন থাকে।

চোখের বিভিন্ন স্তর

মানবদেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে কয়েকটি স্তর রয়েছে। এরমধ্যে একটি হল আভ্যন্তরীণ বা শ্লেষ্মা স্তর, যা অশ্রুকে চোখের কাছে আটকে রাখে। আরেকটি স্তর হল, জলীয় মাঝারি স্তর। এটি চোখের সবচেয়ে পুরু স্তর। এই স্তরটি চোখকে হাইড্রেটেড রাখে, ব্যাক্টেরিয়া দূর করে এবং কর্নিয়াকে রক্ষা করে। তৃতীয় স্তরটি হল, বাইরের তৈলাক্ত স্তর, যা চোখের চোখের অশ্রু পৃষ্ঠকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

এবার আসি আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে। আমরা কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্টের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্টের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত চোখের অশ্রু সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই।

উক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ডের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানানো হয়, কষ্ট বা সুখের জন্য কান্না আলাদা আলাদা হয় না। অর্থাৎ, অশুনালিতে চোখের জলের পরিবর্তন হয় না, একইভাবে থাকে।

উক্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা চেকইওরফ্যাক্টকে আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজি জানায়, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।

এছাড়াও, স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে এবং কষ্টের কান্না করলে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝড়ার  তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে ‘সুখের কান্না করলে প্রথমে ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ফটোকার্ড সম্বলিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমেরিকান একাডেমি অব অপথালমোলজির মতে, ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির সময়ে আলাদা চোখ থেকে প্রথমে পানির আসার দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।

সুতরাং, সুখের কান্না করলে প্রথম ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরে এবং কষ্টের কান্না করলে প্রথমে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র