Home Blog Page 580

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ৫ সেনা সদস্য নিহত হয়নি

সম্প্রতি ‘ভয়াবহ মোখার হামলায় ৫ সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ৫ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অপারেশন বালুচিস্তানে পাকিস্তানের ৭ সেনা নিহত হয়েছে এবং কোন দেশের সেনা তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করে থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাশ এবং আহাজারির ছবি ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

গত ১৪ মে News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘ভয়াবহ মোখার হামলায় ৫ সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে ও থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাশ এবং আহাজারির ছবি যুক্ত করে ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। সেখানে কোথাও ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেনা নিহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে ৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের সময় পাকিস্তানে অপারেশন বালুচিস্তানে ৭ সেনা নিহতের বিষয়ে সংবাদ পাঠ করা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৬ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।

এবিষয়ে সংবাদপাঠে বলা হয়, পাক সেনাদের মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন। ১২ মে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান। পাকিস্তানের উত্তর বালুচিস্তানের মুসলিম বাগ এলাকার ঘটনা। ১৩ মে সেই অপারেশন শেষ হল বলে খবর। মিলিটারি মিডিয়া উইং শনিবার এই বার্তা দিয়েছে। একাধিক পাক সংবাদ মাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনসের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, একটি রেসিডেন্সিয়াল ব্লকে পণবন্দি করা রাখা হয়েছিল পরিবারকে। তিনটি পরিবারকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জঙ্গিরা শিশুদেরও রেহাই দেয়নি। সব মিলিয়ে ৬জন জঙ্গি ছিল। পুরো অস্ত্রে সজ্জিত ছিল তারা। তাদের নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে তাদের সঙ্গে আর কাদের যোগসূত্র রয়েছে সেটাও দেখা হচ্ছে। তাদের খোঁজেও চলছে তল্লাশি। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে অপারেশনের সময় সব মিলিয়ে সাতজন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে। একজন সিভিলিয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। অন্তত এক মহিলা সহ ৬জন জখম হয়েছেন। এদিকে কারা এই চক্রান্তের পেছনে রয়েছে তা দেখা হচ্ছে। পাক সেনাদের মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন. জঙ্গিদের নিকেশ করতে পাক সেনারা সবরকমভাবে চেষ্টা করছে। গোটা দেশ সেনাদের পাশে রয়েছে। জখমদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।

পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Hindustan Times এর বাংলা সংস্করণে গত ১৩ মে ‘শেষ হল অপারেশন বালুচিস্তান, ৭ পাক সেনার মৃত্যু, নিকেশ ৬ জঙ্গি’ শীর্ষক  শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Hindustan Times

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাক সেনাদের মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন। ১২ মে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান। পাকিস্তানের উত্তর বালুচিস্তানের মুসলিম বাগ এলাকার ঘটনা। ১৩ মে সেই অপারেশন শেষ হল বলে খবর। মিলিটারি মিডিয়া উইং শনিবার এই বার্তা দিয়েছে। একাধিক পাক সংবাদ মাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।

ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনসের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, একটি রেসিডেন্সিয়াল ব্লকে পণবন্দি করা রাখা হয়েছিল পরিবারকে। তিনটি পরিবারকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জঙ্গিরা শিশুদেরও রেহাই দেয়নি। সব মিলিয়ে ৬জন জঙ্গি ছিল। পুরো অস্ত্রে সজ্জিত ছিল তারা। তাদের নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে তাদের সঙ্গে আর কাদের যোগসূত্র রয়েছে সেটাও দেখা হচ্ছে। তাদের খোঁজেও চলছে তল্লাশি। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে অপারেশনের সময় সব মিলিয়ে সাতজন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে। একজন সিভিলিয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। অন্তত এক মহিলা সহ ৬জন জখম হয়েছেন।এদিকে কারা এই চক্রান্তের পেছনে রয়েছে তা দেখা হচ্ছে।

পাক সেনাদের মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। প্রেস বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন. জঙ্গিদের নিকেশ করতে পাক সেনারা সবরকমভাবে চেষ্টা করছে। গোটা দেশ সেনাদের পাশে রয়েছে। জখমদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে  কোনো সেনা সদস্যের নিহত হওয়ার বিষয়ে সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ৫ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনাটি সঠিক নয়। 

মূলত, সম্প্রতি পাকিস্তানের অপারেশন বালুচিস্তানে ৭ সেনা নিহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে উক্ত ঘটনাটিকে বিকৃত করে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ৫ সেনা সদস্য নিহত হয়েছে দাবি করে নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাশ এবং আহাজারির ছবি ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে সাগরের মধ্যে আট বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। রোববার(১৪ মে) বেলা দুইটা থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার তাণ্ডবে দ্বীপটির অন্তত ৯০০ কাঁচা ও টিনের আধা পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ৪২০টি নারকেলগাছসহ অন্তত ৩ হাজার গাছগাছালির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে আহত হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপটির উত্তর পাড়া, পশ্চিম পাড়া ও পূর্ব দিকের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা সনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, পাকিস্তানে অপারেশন বালুচিস্তানে ৭ সেনা নিহতের ঘটনার সাথে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিন্ন একটি সংবাদ পাশাপাশি রেখে ‘ভয়াবহ মোখার তাণ্ডবে  ৫ সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাশ এবং আহাজারির ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আলোচিত ছবিটিতে মিশেল প্লাতিনির জার্সিতে ‘NO CORRUPTION’ লেখা ছিল না

0

সম্প্রতি “ম্যারাডোনার জার্সিতে লেখা ‘নো ড্রাগস’, প্লাতিনির জার্সিতে লেখা ‘নো করাপশন’।” শীর্ষক শিরোনামে ম্যারাডোনা ও প্লাতিনির একটি ছবি  ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,এই ছবিতে ম্যারাডোনার জার্সিতে No Drug লেখা থাকার বিষয়টি সত্য হলেও প্লাতিনির জার্সিতে No Corruption লেখা থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বরং প্লাতিনির জার্সিতেও ফরাসি ভাষায় নো ড্রাগস লেখা ছিল।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফ্রান্সের ফুটবল ক্লাব Nancy Lorraine এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই “Were you at the Platini Jubilee?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Nancy Lorraine

প্রতিবেদনে থাকা ছবিটিতে দেখা যায়, আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনার জার্সিতে ইংরেজিতে ‘No DRUG’ লেখা এবং ফরাসি ফুটবলার মিশেল প্লাতিনির জার্সিতে ফরাসী ভাষায় ‘DROGUE NO’ লেখা। 

পরবর্তীতে মিশেল প্লাতিনির জার্সিতে ফরাসী ভাষায় ‘DROGUE NO’ শব্দটি অনুবাদ করে দেখা যায়, এটির অর্থ ‘Drug no’ বা মাদক নয়।

Screenshot from Google

অর্থাৎ, ম্যারাডোনার জার্সির মতোই মিশেল প্লাতিনির জার্সিতেও মূলত No Drug-ই লেখা। 

এছাড়া আমেরিকান বার্তা সংস্থা Associated Press (AP) এর ওয়েবসাইটেও “DIEGO MARADONA AND PELE WITH MICHEL PLATINI” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ছবিটির আরেকটি ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from AP Images

এখানেও প্লাতিনির জার্সিতে একই লেখা অর্থাৎ ‘DROGUE NO’ বা মাদক নয় শব্দগুচ্ছই খুঁজে পাওয়া যায়।

উপরিউক্ত ছবিটি দুইটির কোথাও প্লাতিনির জার্সিতে ‘No Corruption’ শব্দগুচ্ছ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি “ম্যারাডোনার জার্সিতে লেখা ‘নো ড্রাগস’, প্লাতিনির জার্সিতে লেখা ‘নো করাপশন’।” শীর্ষক শিরোনামে ম্যারাডোনা ও প্লাতিনির একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি পুরোপুরি সত্য নয়। ফ্রান্সের ন্যান্সি স্টেডিয়ামে প্লাতিনির পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি উদযাপন করার জন্য ১৯৮৮ সালের ২৩ মে একটি বিদায়ের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলেকে মাঝে রেখে ইংরেজিতে ‘NO DRUG’ বা ‘মাদক নয়’ লেখা জার্সিতে আর্জেন্টিনার  ম্যারাডোনা, ও ফরাসি ভাষায় ‘DROGUE NO’ বা ‘মাদক নয়’ লেখা জার্সিতে ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনির একটি ছবি তোলা হয়। এই আয়োজনের কোথাও প্লাতিনির জার্সিতে ‘No Corruption’ শব্দগুচ্ছ খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

উল্লেখ্য, পূর্বেও এই বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তৈরি সাপের ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, “আফ্রিকায় ধরা পড়ল অদ্ভুত ডানাওয়ালা সাপ! হতবাক বিজ্ঞানীরা” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ডানাসহ সাপের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আফ্রিকায় অদ্ভুত ডানাওয়ালা সাপ ধরা পড়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি সাপের ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনলাইন গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ‘Deviantart’ এ ‘kuramay’ নামক অ্যাকাউন্টে ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘Winged Snake’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

ছবিটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, ‘kuramay’ অ্যাকাউন্টের ব্যক্তি একটি ডানাওয়ালা সাপ বানাতে চেয়েছিলেন এবং এই ছবিটি কম্পিউটার গ্রাফিক প্রকল্পের জন্য করা হয়েছিল।

Screenshot from Deviantart website

উক্ত ছবির বিস্তারিত অংশে সাপ এবং পাখা সংগ্রহের সোর্স দেওয়া আছে।

Screenshot from Deviantart website

এছাড়া ডানাসহ সাপের ছবিটিতে ডানার ছবিটি উল্টোদিকে অবস্থান করছে এমন দাবিতে এক ব্যক্তিকে ছবির পোস্টে মন্তব্য করলে ‘kuramay’ নামক অ্যাকাউন্টধারী জানান, তিনি এই ছবিটি ক্লাস প্রজেক্টের জন্য বানিয়েছিলেন এবং স্টক ইমেজ সাইট থেকে সঠিক ছবি খুঁজে না পাওয়ায় এমন হয়েছে।

Screenshot from Deviantart website

অধিকতর অনুসন্ধানে আফ্রিকায় ডানাসহ সাপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে শীর্ষক কোনো তথ্য ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।

মূলত, সম্প্রতি আফ্রিকায় অদ্ভুত ডানাওয়ালা একটি সাপ ধরা পড়েছে দাবিতে একটি ডানাসহ সাপের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি বাস্তব কোনো সাপের নয় এবং আফ্রিকায় এমন অদ্ভুত ডানাওয়ালা কোনো সাপও ধরা পড়েনি। ২০১০ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক ব্যক্তি ডানাসহ সাপের উক্ত ছবিটি একটি অনলাইন সাইটে প্রকাশ করেন। সম্প্রতি সেই ছবিটিই আফ্রিকায় অদ্ভুত ডানাওয়ালা সাপ ধরা পড়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবি বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।

সুতরাং, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তৈরি সাপের ছবিকে বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কঙ্গোতে সাম্প্রতিক ভূমিধসের খবরে গণমাধ্যমে তিন বছরের পুরোনো ছবি প্রচার

কঙ্গোতে গত ০২ এপ্রিল ভূমিধসের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।  

উক্ত ছবি ব্যবহার করে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি, বাসস, ডেইলি সান,দীপ্ত টিভি (ইউটিউব থাম্বনেইল), প্রতিদিনের সংবাদ

একই দাবিতে থাম্বনেইল সম্বলিত ফেসবুক ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই ছবি ব্যবহার করে ইউটিউবের থাম্বনেইল সম্বলিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

একই ছবি চলতি বছরের জানুয়ারিতে কঙ্গোর মাটিধ্বসের ঘটনা দাবিতে প্রচার করেছে ডেইলি বাংলাদেশ। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কঙ্গোতে সাম্প্রতিক ভূমিধসের খবরে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৯ সালে কঙ্গোতে ভারী বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ছবি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম TRT World এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন এবং ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সে সময় কঙ্গোতে ভারী বর্ষণের ফলে বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক সড়ক। দেশটির লেম্বা জেলায় উক্ত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ছবি এটি। 

Screenshot source: Trt World 

পরবর্তীতে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘Getty Images’ এর ওয়েবসাইটে একই দিন (২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সংবাদ সংস্থা এএফপির জন্য ছবিটি তুলেছিলেন আঙ্গে কাসোঙ্গো।

Screenshot source gettyimages

অর্থাৎ, কঙ্গোতে সাম্প্রতিক ভূমিধসের খবরে গণমাধ্যমে তিন বছরের পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিটি সংগৃহিত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিটি সাম্প্রতিক ভূমিধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।

কঙ্গোর ভূমিধস বিষয়ে সময় টিভির টাইপিংয়ে গন্ডগোল? 

সময় টিভির ওয়েবসাইটে কঙ্গোতে সাম্প্রতিক ভূমিধসের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভূমিধস ঘটেছে গত ০২ মার্চ রবিবার। 

Screenshot source somoynews

কিন্তু গত ০২ মার্চ রবিবার ছিল না। ছিল মঙ্গলবার। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, কঙ্গোতে ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে গত ০২ এপ্রিল রবিবার।

মূলত, গত ০২ এপ্রিল কঙ্গোতে ভূমিধসের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৯ সালে কঙ্গোতে ভারী বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়কের ছবি এটি। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য না দেওয়ায় ছবিটি সাম্প্রতিক ভূমিধসের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। 

সুতরাং, কঙ্গোতে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিধসের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পুরোনো ঘটনার ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বিএনপি-আওয়ামী লীগ মারামারির ঘটনা ঘটেনি

সম্প্রতি ‘ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বিএনপি-আ’লীগ মারামারি, লাশের মিছিল দেখুন’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো মারামারি ক ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের আলাদা সংবাদের সাথে ঘূর্ণিঝড় মোখার সংবাদ এবং ইসরাইলের হামলায় ৪ দিনে ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহতের সংবাদ পাশাপাশি রেখে প্রচার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

গত ১৩ মে News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বিএনপি-আ’লীগ মারামারি, লাশের মিছিল দেখুন’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাঠি হাতে রাস্তায় নামার ছবি যুক্ত করে ৭ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। উক্ত ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে সেখানে কোথাও ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আওয়ামী ও বিএনপি মারামারিতে লাশের মিছিল সম্পর্কিত কোনো সংবাদ পাঠ করা হয়নি। তবে বিস্তারিত সংবাদ পাঠের ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড অংশে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের বিষয়ে বলা হয়।

এবিষয়ে সংবাদপাঠে বলা হয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে। দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপুর ২টায় সমাবেশ ও মিছিল শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১টার পর থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকে নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে নয়াপল্টন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য, সিনিয়র সদস্য ও অঙ্গ সংগঠন নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। সঞ্চালনায় থাকবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ১৩ মে মূলধারার গণমাধ্যম ঢাকা টাইমস এর অনলাইন সংস্করণে 

‘নয়াপল্টনে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dhaka Times

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে। দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপুর ২টায় সমাবেশ ও মিছিল শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১টার পর থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকে নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে নয়াপল্টন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য, সিনিয়র সদস্য ও অঙ্গ সংগঠন নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। সঞ্চালনায় থাকবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে।

এছাড়াও ভিডিও’র ৫ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে ৬ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড অংশে ইসরাইলের হামলায় ৪ দিনে ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহতের বিষয়ে সংবাদ পাঠ করা হয়। 

এবিষয়ে সংবাদপাঠে বলা হয়, “অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। এ নিয়ে গত চার দিনে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৭ জন আহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সর্বশেষ ইসরাইলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের ষষ্ঠ সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত চার দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৪৭ জন।”

খবরে বলা হয়েছে, “শুক্রবারের সর্বশেষ বিমান হামলাটি চালানো হয় গাজার আন-নাসর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে। হামলায় নিহতদের মধ্যে ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের একজন কমান্ডার রয়েছেন। নিহত কমান্ডারের আইয়াদ আল-আব্দ আল-হাসানি ওরফে আবু আনাস বলে জানিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনটি। গাজাভিত্তিক সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয় শিশু ও তিন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া ১৪৭ জন আহত হয়েছেন।অপরদিকে ইসরাইলি বাহিনী গাজার আবাসিক এলাকাগুলো যে হামলা চালিয়েছে, তার প্রতিশোধ স্বরূপ ইসরাইলের গভীরে রকেট হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো।”

পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের সূত্রধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ১৩ মে ‘৪ দিনে ইসরাইলি হামলায় ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jugantor

প্রতিবেদনে বলা হয়, “অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। এ নিয়ে গত চার দিনে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৭ জন আহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।”

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, “সর্বশেষ ইসরাইলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের ষষ্ঠ সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত চার দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৪৭ জন।”

খবরে বলা হয়েছে, “শুক্রবারের সর্বশেষ বিমান হামলাটি চালানো হয় গাজার আন-নাসর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে। হামলায় নিহতদের মধ্যে ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের একজন কমান্ডার রয়েছেন। নিহত কমান্ডারের আইয়াদ আল-আব্দ আল-হাসানি ওরফে আবু আনাস বলে জানিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনটি।”

গাজাভিত্তিক সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “গত মঙ্গলবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয় শিশু ও তিন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া ১৪৭ জন আহত হয়েছেন।

অপরদিকে ইসরাইলি বাহিনী গাজার আবাসিক এলাকাগুলো যে হামলা চালিয়েছে, তার প্রতিশোধ স্বরূপ ইসরাইলের গভীরে রকেট হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ সংগঠনগুলো।”

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত এই সংবাদের অংশের ছবিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি, মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো  মারামারিরসংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মারামারি এবং এতে লাশের মিছিল নিয়ে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। 

মূলত, সম্প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ইসরাইলের হামলায় ৪ দিনে ৩৩ ফিলিস্তিনির নিহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে উক্ত ঘটনা দুইটিকে পাশাপাশি প্রচার করতে গিয়ে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে ‘ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বিএনপি-আ’লীগ মারামারি, লাশের মিছিল দেখুন’ শীর্ষক অপ্রাসঙ্গিক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড়ের দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাঠি হাতে রাস্তায় নামার ছবি যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে চটকদার ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে ছাত্রলীগের ডাকা সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয় এবং এতে ১৭ জন আহত হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ইসরাইলের হামলায় ৪ দিনে ৩৩ ফিলিস্তিনির নিহতের ঘটনার দুইটি সংবাদকে পাশাপাশি রেখে ‘ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বিএনপি-আ’লীগ মারামারি, লাশের মিছিল দেখুন’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে ঘূর্ণিঝড়ের দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষের লাঠি হাতে রাস্তায় নামার ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

৭২ বছরে দালজিনদার কৌর সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, দালজিনদার কৌর নামে এক ভারতীয় বৃদ্ধা ৭২ বছর বয়সে পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে কিছু ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

Image collage by Rumor Scanner

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

ভারতেও একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং উক্ত বৃদ্ধার মা হওয়ার ঘটনাটি সাত বছরের পুরোনো। তাছাড়া, তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সে মা হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটিও বানোয়াট। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ভারতীয় গণমাধ্যম ‘The Indian Express’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১২ মে ’72-year-old woman becomes mother for the first time’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতের দালজিনদার কৌর নামের একজন বৃদ্ধা ৭২ বছর বয়সে একটি সুস্থ পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। তবে প্রতিবেদনটিতে দালজিনদার কৌরের বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot from ‘The Indian Express’

অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Hindustan Times’ এ ২০১৬ সালের ১৩ মে ’72-yr-old gives birth, doctors say she’s too old: What’s the right age?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনেও ভারতের দালজিনদার কৌরের ৭২ বছর বয়সে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই প্রতিবেদনেও দালজিনদার কৌরের বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ ছিল না। 

Screenshot from ‘Hindustan Times’

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ‘Indian woman, 73, gives birth to twin girls’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দক্ষিণ ভারতের ৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা মংগয়ামমা ইয়ারামাতি দুইটি সুস্থ মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

Screenshot from The Guardian

অর্থাৎ, দালজিনদার কৌরের চেয়েও বেশি বয়সে ভিন্ন ব্যক্তির সন্তান জন্ম দানের রেকর্ড রয়েছে। তিনি যদি ২০১৬ সালে উক্ত স্বীকৃতি পেয়েও থাকতেন, সেক্ষেত্রে তার সেই স্বীকৃতি পরবর্তীতে মংগয়ামমা ইয়ারামাতিরও পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না৷ 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানের করতে গিয়ে রেকর্ড বিষয়ক সংস্থা ‘Guinness World Records’ এর ওয়েবসাইটে ‘Oldest person to give birth’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, মারিয়া দেল কারম্যান বওসাদা লারা নামক এক নারী ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৬৬ বছর বয়সে জমজ ছেলে সন্তান জন্ম দেন।

Screenshot from Guinness World Records

সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি দিয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০১৬ সালে ভারতের দালজিনদার কৌর  ৭২ বছর বয়সে এক পুত্র সন্তান জন্মদানের খবরকে সম্প্রতি সাল উল্লেখ না করে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া উক্ত ঘটনাটিকে সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হলেও এমন কোনো স্বীকৃতির তথ্য সে সময়ের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, সম্প্রতি ৭২ বছরে দালজিনদার কৌর সবচেয়ে বয়স্ক মায়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।  

তথ্যসূত্র

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি

গতকাল (১৫ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে দুইজনের মৃত্যুর খবর (কোনো গণমাধ্যমে একজন মৃত্যুর খবর এসেছে) প্রচার করা হয়েছে গণমাধ্যমে।

Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে কতিপয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আজকের (১৫ মে) প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশিত খবর দেখুন- যায়যায়দিন, ডেইলি অবজারভার, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক গণমুক্তি

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

উক্ত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন- দৈনিক বাংলা, এশিয়ান টিভি, দ্য রিপোর্ট ২৪, নাগরিক টিভি, এটিএন বাংলা, আরটিভি, মাই টিভি, বায়ান্ন টিভি, যুগান্তর, দৈনিক সংগ্রাম, মানবজমিন, আমাদের সময়, যায়যায়দিনইনকিলাব, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, দেশ রূপান্তর, মানবকণ্ঠ, কালবেলা, ডেইলি অবজারভার, বিজনেস বাংলাদেশ, আলোকিত বাংলাদেশ, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা মেইল, ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টাইমস, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস, দ্য বিজনেস পোস্ট, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি ক্যাম্পাস, নিউজজি২৪, বি বার্তা২৪, সংবাদ প্রকাশ, পূর্ব পশ্চিম বিডি, বাংলাদেশ বুলেটিন, এবিনিউজ২৪, বার্তা বাজার, ফেস দ্য পিপল, আজকালের খবর, আমার সংবাদ, রেডিও টুডে, সোনালি নিউজ, বাহান্ন নিউজ, দ্য ডেইলি মেসেঞ্জার, নিউজ নাও, দৈনিক সরোবর, রিদ্মিক নিউজ, দৈনিক করতোয়া, অর্থসূচক, সময়ের কণ্ঠস্বর, একুশে সংবাদ, ডেলটা টাইমস, মর্নিং টাইমস, কুমিল্লার কাগজ, দৈনিক গণমুক্তি, সংবাদ সারাবেলা, দৈনিক আজাদী, স্টার সংবাদ, গ্লোবাল টিভি, সংবাদ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি), ঢাকা প্রকাশ (ইংরেজি), সানবিডি২৪, সংবাদ প্রতিদিন

Image Collage by Rumor Scanner
Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

Image Collage by Rumor Scanner

এছাড়া, আমাদের সময় এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত খবরে প্রচারিত একটি ছবিকে সেন্টমার্টিনের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত(কতিপয় গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক নয় বরং গতকালের ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিনে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। 

মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়নি : গণমাধ্যম ভেদে ভিন্ন তথ্য

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা ভাষার সংস্করণ বিবিসি বাংলা’র ওয়েবসাইটে গতকাল (১৪ মে) রাতে “বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখায় প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে। মহাবিপদ সংকেতও আর নেই। কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, সেন্টমার্টিনে গাছ থেকে নারকেল পড়ে এক নারী মাথায় আঘাত পান। মাথায় সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান সেখানকার হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল কাদের।

“মানুষজন ভালো আছে। কিন্তু ঘরবাড়ির অস্তিত্ব নেই, সব তছনছ। আমরা সবাই গরীব মানুষ আমাদের কিচ্ছু নাই।”—বলেন মি. কাদের।

Screenshot source : BBC Bangla 

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোও গতকাল দুপুরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে একই নারীর আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। 

মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল বিকেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত নারীর বিষয়ে বলা হয়, ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপায় যে নারী আহত হয়েছেন তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, “দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনারপাড়ায় ঝড়ো হাওয়ার কবলে গাছ চাপায় এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্বীপের ক্লিনিকে নিয়ে আসে।”

গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘প্রথম আলো’ ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনায় সেন্ট মার্টিনে ১১ জনের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর উল্লেখ করা হয়নি। 

‘Bdnews24’ এর ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, ১২ হাজারের মতো ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব প্রশাসনের কাছ থেকে মিললেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী বলছেন? 

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে স্থানীয় একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত নারী মৃত্যুর ঘটনাটি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।  এর প্রেক্ষিতে ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফয়েজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, গতকাল আমার ওয়ার্ডে কেউ মারা যায়নি। এটা ভুয়া নিউজ। 

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “আমি দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত করছি, এটা গুজব। কেউ মারা যায়নি গতকালের ঘটনায়।”

তার বরাতে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে এমন মন্তব্য করা হলে তিনি বলেন, “গুজবকারীদের থেকে তারা তথ্য নিয়েছে। আমাদের থেকে নেয়নি।” 

পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো: মুজিবুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “গতকালের ঝড়ে কেউ মারা যায়নি। এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ কেন একটা মুরগীও মারা যায়নি।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানারের টিমের পক্ষ থেকে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশের খানিকক্ষণ পূর্বে জানান, “গতকালকে কেউ মারা যায়নি। আহত ছিল এক মহিলা। গাছ পড়ে আহত হয়েছিল। আমি এই মাত্র কথা বলেছি সেখানে। তিনি সুস্থ আছেন। সেন্টমার্টিনে গতকাল কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।”

আমাদের সময় এর প্রতিবেদনে ভুল ছবি

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে মানুষ মৃত্যুর খবরে আমাদের সময় যে ছবিটি তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে সেটি সেন্টমার্টিনের নয়। ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডব পরবর্তী সময়ের যা মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম Mizzima এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Mizzima

মূলত, গতকাল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে গাছচাপায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন (কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) দাবিতে মূলধারার প্রায় ৪০টি গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে দুইজন নিহতের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনে এক নারীর গায়ে গাছ পড়ে আহত হওয়াসহ একাধিক ব্যক্তির আহতের খবর পাওয়া গেলেও সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি উক্ত ঘটনায় কারো মৃত্যু হয়নি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনে দুই ব্যক্তির মৃত্যু(কিছু গণমাধ্যমের মতে এক ব্যক্তি) হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, ঝড়ো হাওয়া চলাকালীন মাইকে আযানের শব্দও শোনা যায়।

ভিডিওটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার বলে ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন; এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম এস এ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে আলোচ্য ভিডিওর একটি স্থিরচিত্র ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

উক্ত ভিডিওকে সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু  পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Image Collage by Rumor Scanner

একই ভিডিওটিকে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে মূলাধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন; এখানে এবং এখানে

একই ভিডিওটিকে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য বিষয়টি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার নয় বরং এটি গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিও।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে এই প্রতিবেদন লেখার অন্তত চারদিন আগে(১০ মে রাত ১১:৩৪ মিনিটে) dreamworldhh নামের একটি অ্যাকাউন্টে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব‘ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: dreamworldhh_Tiktok

ভিডিওটির ক্যাপশনে #gopalganj #breaking news #moka ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়। 

এছাড়া পোস্টটির কমেন্টবক্সে user8084891527119 নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঝড়টি কোন এলাকায় হয়েছে জানতে চেয়ে একজন মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যের সূত্রে পোস্টদাতা Dream World থেকে পোস্টটির উত্তরে জানানো হয় যে, এটি ৯ মে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া থেকে ঝড়ের সময়ে ধারণকৃত।

Screenshot: dreamworldhh_Tiktok

এই পোস্টের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Hello Nazrul Vlog নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১১ মে সন্ধ্যা ৭ টা ৪১ মিনিটে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Hello Nazrul Vlog

ভিডিওটির শিরোনামে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভিডিও। 

পরবর্তীতে এসব পোস্টের সূত্রে ফেসবুকে Md Sahabur Rahman নামে একটি অ্যাকাউন্টে গত ৯ মে ‘গোপালগঞ্জ, ঘোনাপাড়া, ঝড়ে লন্ড ভন্ড‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Md Sahabur Rahman

এখানে প্রাপ্ত ছবিগুলোর সাথে গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কক্সবাজার/সেন্টমার্টিন/মায়ানমারের ঘূর্ণিঝড় দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

এছাড়া অনুসন্ধানে গত ৯ মে গোপালগঞ্জে ঝড় হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধানে ফেসবুকে একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে

Video Collage: Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ বিকেল তিনটায় বাংলাদেশের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে। বাংলাদেশে প্রায় ৩ ঘন্টা তাণ্ডব চালানোর পর সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার দিকে এটি মায়ানমারের দিকে বয়ে যায়। মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২ হাজার ৫২২টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন। এছাড়া, মোখার তাণ্ডবে মায়ানমারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ, আলোচ্য ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানার অন্তত ৪ দিন আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ার ঝড়ের একটি ভিডিও। 

মূলত, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ ১৪ মে বাংলাদেশের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে এবং মায়ানমারের রাখাইনের সিতওয়েতে

আঘাত হানে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ০৯ মে গোপালগঞ্জ হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিওকে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের ভিডিওকে আজ ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি একটি ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

কী দাবি করা হচ্ছে?

১৯ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটিতে প্রবল ঝড়ে গাছপালা উড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের ভয়ার্ত চিৎকারের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার নয় বরং এটি ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

আলোচিত ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ১৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি D. McGowan নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৯ মে ‘100 YARDS AWAY VIOLENT STOVEPIPE EF-4 TORNADO – near Katie – Wynnewood, OK – May 9, 2016” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৭ মিনিট ০৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: YouTube

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ২০১৬ সালের ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

এই ভিডিওটি’র ৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী ৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্রের National Weather Service এর ওয়েবসাইট থেকেও উক্ত টর্নেডোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: National Weather Service USA

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোখার নয়। 

মূলত, সম্প্রতি ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখার নয় বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিও।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের উইনউড শহরে আঘাত হানা একটি টর্নেডোর ভিডিওকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইন্দোনেশিয়ার এপ্রিলের ভূমিকম্পের ঘটনার দাবিতে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি প্রচার

গত এপ্রিলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ইন্দোনেশিয়ায় দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উক্ত ছবিগুলো যুক্ত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, সময় টিভি, নিউজবাংলা২৪, সময়ের আলো, ভোরের কাগজ, ডেইলি মেসেঞ্জার।

এসব ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো গত এপ্রিলের নয় বরং পূর্বের বিভিন্ন ভূমিকম্পের ঘটনার ছবিকে ইন্দোনেশিয়ার এপ্রিলের ভূমিকম্পের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ছবি যাচাই ১

Screenshot: Daily Sangram

গত ১৪ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের উত্তরে ভূমিকম্প আঘাত হানার ঘটনায় আলোচিত ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক সংগ্রাম

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। এ নিয়ে অনুসন্ধানে সংবাদ সংস্থা ইউরোপিয়ান প্রেস ফটো এজেন্সির ওয়েবসাইটে Earthquake aftermath Sulawesi island (আর্কাইভ) শীর্ষক শিরোনামে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The European Pressphoto Agency

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সোলাওয়েসি দ্বীপে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পরে দেশটির উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধার কার্যক্রমের।

ছবি যাচাই ২

Screenshot: Daily Somoyer Alo

একই ঘটনার খবরে ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক সময়ের আলো।

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ছবিটি এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ায় সংঘটিত ভূমিকম্পের নয় বরং এটি ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটির সোলাওয়েসি দ্বীপে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ও এরপরে হওয়া সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি।

Screenshot: BBC News

এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম BBC News এ ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

ছবি যাচাই ৩

Screenshot: Somoy News

একই ঘটনার খবরে এপি’র সূত্রে এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময় টিভি।

তবে এপির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘Strong quake shakes Indonesia’s capital; no tsunami alert‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: AP News

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভূমিকম্পের পরে মানুষ অফিস ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছে। 

অর্থাৎ, ছবিটি গত এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে সংঘটিত ভূমিকম্পের নয়।

ছবি যাচাই ৪

১৪ এপ্রিলের পর গত ২৫ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে নিউজবাংলা২৪

Screenshot: Newsbangla24

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি আলোচিত ভূমিকম্পের নয় বরং ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর সূত্রে জানা যায়, উক্ত ছবিটি ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার মেনটাওয়াই দ্বীপে ভূমিকম্পের পরে মানুষের ঘরের বাইরে জড়ো হওয়ার একটি ছবি।

Screenshot: Getty images

ছবি যাচাই ৫

একই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ভোরের কাগজ।

Screenshot: Bhorer Kagoj

তবে ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সোলাওয়েসি দ্বীপে ৬.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পরে উদ্ধারকারীদের একটি উদ্ধার অভিযানের ছবি, যা ১৬ জানুয়ারি তোলা হয়েছিল।

Screenshot: UNICEF

ছবি যাচাই ৬

একই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি মেসেঞ্জার।

Screenshot: Daily Messenger

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ারই দক্ষিণ সোলাওয়েসি দ্বীপে ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের সময়কার।

Screenshot: BBC News

অর্থাৎ, গণমাধ্যমগুলোতে ইন্দোনেশিয়ায় গত এপ্রিলে সংঘটিত দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনায় প্রচারিত এই ছবিগুলোর কোনোটিই গত এপ্রিলে সংঘটিত ভূমিকম্পের ঘটনার নয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ছবিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত, কেউ-বা ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কতিপয় গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখেনি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ, বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।

মূলত, গত এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার দুইটি আলাদা ভূমিকম্পের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ইন্দোনেশিয়ার পুরোনো ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার সংবাদের ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ায় দুইটি ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র