সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, ঝড়ো হাওয়া চলাকালীন মাইকে আযানের শব্দও শোনা যায়।
ভিডিওটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার বলে ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে কোনো স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন; এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম এস এ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে আলোচ্য ভিডিওর একটি স্থিরচিত্র ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
উক্ত ভিডিওকে সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবি করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই ভিডিওটিকে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে মূলাধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন; এখানে এবং এখানে।
একই ভিডিওটিকে ঘূর্ণিঝড়ের মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য বিষয়টি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের ঘটনার নয় বরং এটি গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিও।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে এই প্রতিবেদন লেখার অন্তত চারদিন আগে(১০ মে রাত ১১:৩৪ মিনিটে) dreamworldhh নামের একটি অ্যাকাউন্টে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব‘ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে #gopalganj #breaking news #moka ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া পোস্টটির কমেন্টবক্সে user8084891527119 নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঝড়টি কোন এলাকায় হয়েছে জানতে চেয়ে একজন মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যের সূত্রে পোস্টদাতা Dream World থেকে পোস্টটির উত্তরে জানানো হয় যে, এটি ৯ মে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া থেকে ঝড়ের সময়ে ধারণকৃত।
এই পোস্টের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Hello Nazrul Vlog নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১১ মে সন্ধ্যা ৭ টা ৪১ মিনিটে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির শিরোনামে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভিডিও।
পরবর্তীতে এসব পোস্টের সূত্রে ফেসবুকে Md Sahabur Rahman নামে একটি অ্যাকাউন্টে গত ৯ মে ‘গোপালগঞ্জ, ঘোনাপাড়া, ঝড়ে লন্ড ভন্ড‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এখানে প্রাপ্ত ছবিগুলোর সাথে গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কক্সবাজার/সেন্টমার্টিন/মায়ানমারের ঘূর্ণিঝড় দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া অনুসন্ধানে গত ৯ মে গোপালগঞ্জে ঝড় হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধানে ফেসবুকে একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ বিকেল তিনটায় বাংলাদেশের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে। বাংলাদেশে প্রায় ৩ ঘন্টা তাণ্ডব চালানোর পর সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার দিকে এটি মায়ানমারের দিকে বয়ে যায়। মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২ হাজার ৫২২টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন। এছাড়া, মোখার তাণ্ডবে মায়ানমারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
অর্থাৎ, আলোচ্য ভিডিওটি ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানার অন্তত ৪ দিন আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে এটি গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ার ঝড়ের একটি ভিডিও।
মূলত, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ ১৪ মে বাংলাদেশের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে এবং মায়ানমারের রাখাইনের সিতওয়েতে
আঘাত হানে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ০৯ মে গোপালগঞ্জ হওয়া ঝড়ের একটি ভিডিওকে মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গত ০৯ মে গোপালগঞ্জে হওয়া ঝড়ের ভিডিওকে আজ ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- dreamworldhh_Tiktok: ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব
- Hello Nazrul Vlog: গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভিডিও
- Md Sahabur Rahman_Facebook: গোপালগঞ্জ, ঘোনাপাড়া, ঝড়ে লন্ড ভন্ড
- BBC Bangla: মোখায় মিয়ানমারের বিমানবন্দরে ভবন ধস, মোবাইল টাওয়ার বিধ্বস্ত, সিতওয়েতে হাঁটু পানি
- Ajker Patrika: কক্সবাজার সদরে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মোখার তাণ্ডব টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে