Home Blog Page 583

পতঙ্গভূক প্রাণিকে মৃত মানুষের মাংস খায় দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, “কবরে আজাব দেওয়া মুর্দা খোর বিজ্জু” শীর্ষক শিরোনামে বেশ কিছু ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

Screenshot from Facebook

যা দাবি করা হচ্ছে

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, “এটা সেই প্রাণী যে কবরে আজাব দেয়। এর নাম মুর্দা খোর বিজ্জু। এটা গুনাহগার মানুষের কবরে ছিদ্র করে ঢুকে যায় আর তার সারা শরীরের মাংস খেয়ে ফেলে। এটা যখন কোনো কবরের কাছে যায় তখন যদি কোনো কবর থেকে ঘ্রাণ আসে তাহলে সে ঐ কবরে ছিদ্র করেনা। কারণ সে ঐ ঘ্রাণ পেয়ে বুঝে যায় এটা কোনো ইমানদার ব্যাক্তির কবর আর যে কবর থেকে ঘ্রাণ আসে সে ওই কবরে ঢুকে যায়, তার সারা শরীর খেয়ে ফেলে। আর এই ঘ্রাণ শুধু এই প্রাণীটাই পায়, যাতে সে গুনাহগার এবং নেক লোকদের চিনতে পারে।”

দাবি পর্যালোচনা

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে মুর্দাখোর বিজ্জু নামে একটি প্রাণির কথা বলা হলেও সেখানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি আলাদা প্রাণিকে দেখানো হয়েছে। প্রথমে ভিডিওর ১-৫ সেকেডে পর্যন্ত একটি প্রাণিকে দেখা গেলেও ৫-৭ সেকেন্ডের মাথায় সারা শরীরে মোটা আঁশযুক্ত ভিন্ন আরেকটি প্রাণিকে কিছু একটা খুড়ঁতে দেখা যায় এবং সম্পূর্ণ ভিডিওর বাকি অংশে আবার প্রথম প্রাণিটিকেই দেখানো হয়।  

Screenshot Collage by Rumor Scanner 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে যে দুই প্রাণিকে মুর্দা খোর বিজ্জু দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে তারা কখনোই মানুষ বা অন্য কোন প্রাণির মৃতদেহ ভক্ষণ করে না বরং এরা পিঁপড়া এবং উইঁপোকার মতো ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। 

ভিডিওতে প্রচার হওয়া প্রথম প্রাণিটির বিষয়ে যা জানা গেল

ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে প্রথম যে প্রাণিটিকে ‘মুর্দা খোর বিজ্জু’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সেটির প্রকৃত পরিচয় অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে The Dodo নামক একটি ওয়েবসাইট কর্তৃক প্রকাশিত আর্টিকেল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত প্রাণীটির প্রকৃত নাম হচ্ছে Armadillo (আর্মাডিলো)। তবে ছবিতে যে Armadillo টি দেখানো হচ্ছে সেটি সবচাইতে বড় প্রজাতির আর্মাডিলো, যারা Giant armadillos নামে পরিচিত। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

প্রাণি বিষয়ক ওয়েবসাইট Animalia কর্তৃক প্রকাশিত একটি আর্টিকেল থেকে জানা যায়, জায়ান্ট আর্মাডিলোরা Chlamyphoridae পরিবারভূক্ত প্রাণি এবং এদের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Priodontes maximus.

Screenshot source: Animalia

জায়ান্ট আর্মাডিলোরা তাদের নখর ব্যবহার করে বিশ্রামের জন্য বড় বড় গর্ত খনন করে এবং এক্ষেত্রে তাদের নখগুলো কোদালের মতো কাজ করে।  

ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে জায়ান্ট আর্মাডিলোরা মৃত মানুষের মাংস খায় দাবি করা হলেও প্রাণিবিষয়ক ওয়েবসাইট Animalia কর্তৃক প্রকাশিত আর্টিকেলে বলা হয়, জায়ান্ট আর্মাডিলো মূলত পতঙ্গভূক এবং এরা সাধারণত পিঁপড়া, উইপোকা, মাকড়সা এবং বিভিন্ন প্রাণির লার্ভা খেয়ে বেঁচে থাকে। 

Image Source: Animalia 

তাছাড়া, আর্মাডিলো সম্পর্কে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর একটি আর্টিকেলে বলা হয়, আর্মাডিলোরা মূলত নাতিশীতোষ্ণ এবং উষ্ণ আবাসস্থলে বাস করে, যার মধ্যে রয়েছে রেইন ফরেস্ট, তৃণভূমি এবং আধা-মরুভূমি। এদের দৈহিক বিপাকীয় হার কম হওয়াতে এবং চর্বি সঞ্চয়ের সক্ষম অভাবের কারণে, ঠান্ডা আবহাওয়া এদের জন্য অনুকূল নয় এবং এই ধরণের আবহাওয়া এদের পুরো জনসংখ্যাকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে।

এই প্রাণিদের বেশিরভাগ প্রজাতিই গর্ত খনন করে এবং প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমায়। ভোরবেলা এবং সন্ধ্যায় পোকা, পিঁপড়া, উইপোকা এবং অন্যান্য পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। এদের দৃষ্টিশক্তি খুব কম হওয়ার কারণে এরা শিকারের জন্য তাদের তীব্র ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে। এদের শক্ত পা এবং সামনের বিশাল নখগুলো মূলত খননের জন্য এবং লম্বা, আঠালো জিহ্বাগুলো তাদের টানেল থেকে পিঁপড়া এবং উইপোকা বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাগ (এক ধরনের পতঙ্গ) ছাড়াও, আর্মাডিলোরা ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী, গাছপালা এবং কিছু ফল খায়। সেইসাথে মাঝে মাঝে ক্যারিয়ন খাবারও খায়।

Screenshot Source: National Geographic

সুতরাং সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সমস্ত আর্মাডিলোরা মূলত পতঙ্গভূক। অর্থাৎ এরা মৃত প্রাণিদেহ ভক্ষণ করেনা। 

ভিডিওতে প্রচার হওয়া দ্বিতীয় প্রাণিটির বিষয়ে যা জানা গেল

ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দ্বিতীয় যে প্রাণিটিকে ‘মুর্দা খোর বিজ্জু’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, সেটির প্রকৃত পরিচয় অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ১৯ জুন, ২০২১ তারিখে প্রকাশিত ‘BBC News বাংলা’ ফেসবুক পেইজের একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন এবং ছবির প্রাণিটির ছবি দেখে বোঝা যায়, মুর্দাখোর বিজ্জু দাবিতে প্রচার করা দ্বিতীয় প্রাণিটির প্রকৃত নাম বনরুই (Pangolin) এবং এটি সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী।

Screenshot collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে, কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে  “Pangolin Animal Facts – AZ Animals” শিরোনামে প্রাণী বিষয়ক ওয়েবসাইট A-Z Animals একটি আর্টিকেল খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত আর্টিকেলে প্যাঙ্গোলিন সম্পর্কে সুবিন্যস্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত এবং এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তৈরিকৃত একটি তালিকা থেকে জানা যায়, দেহে মাছের আঁশের মতো আবরণযুক্ত বাদামী বর্ণের এই স্তন্যপায়ী প্রাণিটি লম্বায় প্রায় ১-৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং প্রজাতিভেদে এদের ওজন প্রায় ১.৬ থেকে ৩৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

প্যাঙ্গোলিনেরা সাধারণত আঁশযুক্ত Anteaters হিসেবেও পরিচিত। তবে শ্রেণিবিন্যাস এবং জিনগত দিক থকে Anteaters এর সাথে এদের বিস্তর তফাত রয়েছে। সাধারনত প্যাঙ্গোলিন এর মোট ৮ টা প্রজাতি রয়েছে যারা আবার ৩টি ভিন্ন ভিন্ন গণের অন্তর্ভুক্ত। এই তিনটি গণ হচ্ছে Manis, Phataginus, and Smutsia.

Screenshot Source: ITIS

তবে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে প্যাঙ্গোলিনের যে প্রজাতিটিকে খুঁজে পাওয়া যায় সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Manis crassicaudata.

প্যাঙ্গোলিনের তুলনামূলকভাবে ছোট, সূক্ষ্ম মাথা রয়েছে যা পোকামাকড়ের গর্ত এবং বাসায় অনুপ্রবেশের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। এই স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মুখে পরিপূর্ণ দাঁতের অভাব সহ বেশ কিছু অনন্য অভিযোজন ক্ষমতা এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন: তাদের একটি দীর্ঘ জিহ্বা রয়েছে যা পোকামাকড় শিকার করার জন্য পুরোপুরি বিশেষভাবে অভিযোজিত। তাছাড়া, তাদের পায়ে রয়েছে ধারালো নখ যা তাদের গাছ কিংবা অন্য কোনোকিছু আঁকড়ে ধরতে এবং শিকারের বাসা ভাঙতে সাহায্য করে। তাদের পেছনে রয়েছে একটি লেজ যা দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। 

প্যাঙ্গোলিনরা সাধারণত লাজুক এবং একাকী, একা বা জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। এরা প্রাথমিকভাবে নিশাচর (একটি প্রজাতি বাদে) এবং গাছে বা মাটির ধারে খাবার খুঁজে থাকে। যখন এরা শিকারীদের মুখোমুখি হয় তখন তাদের সাঁজোয়া আঁশগুলো একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। অনেকটা আর্মাডিলোর মতো, যখন শিকারীদের মুখোমুখি হয়। তাছাড়া এদের ঘ্রাণ-নিঃসরণকারী গ্রন্থিও রয়েছে যা তাদের হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। 

প্যাঙ্গোলিনদের এশিয়া ও আফ্রিকা উভয় দেশেই পাওয়া যায়। এদের কিছু প্রজাতি বৃক্ষচারী, তাই তারা তাদের বেশিরভাগ সময় ঘুমাতে, শিকারে এবং গাছে বসবাস করে। তাদের নমনীয় লেজটি গাছে উলম্ব বরাবর তাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে যাতে করে তাদের সামনের নখগুলো ব্যাবহার ব্যবহার করে কীটপতঙ্গের বাসা ভাঙতে পারে। প্যাঙ্গোলিনের বাকি প্রজাতিগূলো মূলত,  মাটিতে থাকে এবং সাধারণত গর্তে বাস করে। 

ফেসবুক এবং ইউটিউবের বেশ কিছু ভিডিওতে প্যাঙ্গোলিনেরা মৃত মানুষের মাংস খায় দাবি করা হলেও একাধিক প্রাণিবিষক ওয়েবসাইটে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। বরং সকল স্থানে এটিকে কীটপতঙ্গভূক হিসেবেই উল্লেখিত করা হয়। 

A-Z Animal এর আর্টকেলটিতে বলা হয়, অনেকটা অ্যান্টেটারের মতোই, প্যাঙ্গোলিনেরাও একচেটিয়া কীটপতঙ্গভূক বড় বাসাগুলোতে বসবাসকারী দূর্বল শিকারের সন্ধান করে। তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হলেও, তারা তাদের অত্যন্ত শক্তিশালী গন্ধের অনুভূতি দিয়ে এই অভাব পূরণ করে। তাদের প্রখর নাক মাটির নিচে কিংবা গাছের ছালের নিচে বসবাসকারী কীট-পতঙ্গদের খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারে। এরা মূলত পিঁপড়া এবং উঁইপোকা এবং বিভিন্ন প্রাণির লার্ভা খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে।

Screenshot Source: A-Z Animal

তাছাড়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইটে “Pangolin facts and information” শিরোনামের একটি আর্টিকেলেও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া “মুর্দা খোর বিজ্জু” নামে প্রচারিত প্রাণিটিকে পতঙ্গভূক হিসেবেই উল্লেখিত করা হয়েছে।

Screenshot Source: National Geographic

সুতরাং সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্যাঙ্গোলিনেরা (Pangolin) মূলত পতঙ্গভূক এবং এরা মৃত প্রাণিদেহ ভক্ষণ করেনা।

মূলত, Armadillo এবং Pangolin নামের দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রাণির ভিডিও ক্লিপ একত্রিত করে এদেরকে ‘মুর্দা খোর বিজ্জু’ নামে ডাকা হচ্ছে এবং একই সাথে দাবি করা হচ্ছে যে এই প্রাণিগুলো মৃত মানুষের মাংস খায়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই প্রাণিগুলো মোটেও মানুষের মাংস ভক্ষণ করেনা, বরং এরা উভয়েই পতঙ্গভূক।   

সুতরাং ফেসবুক এবং ইউটিউবে প্রচারিত বেশকিছু ভিডিওতে দুটি পতঙ্গভূক প্রাণিকে ‘মৃত মানুষের মাংস খায়’ দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যায় গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি

সম্প্রতি, নিউজিল্যান্ডে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দুইটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি বাংলাদেশ, মানবকণ্ঠ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি), সংবাদ প্রকাশ।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত জানুয়ারি মাসের দেশটির বন্যার পুরোনো ছবিকে নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ছবি যাচাই ১

Screenshot source: Daily Bangladesh 

নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি বাংলাদেশ, মানবকণ্ঠ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি)। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। নিউজিল্যান্ডে সে সময়ের বন্যার ঘটনার এই ছবিটি তুলেছেন রয়টার্সের জন্য তুলেছিলেন MONTECHRISTONZ।

Screenshot source: BBC

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে ছবিটি তোলা হয়েছিল। 

Screenshot source: Reuters

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ২

Screenshot source: Sangbad Prokash

নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে সংবাদ প্রকাশ। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, টুইটারে BBC এর অ্যাকাউন্টে গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক টুইটে নিউজিল্যান্ডের সেসময়ের বন্যার বিষয়ক একটি সংবাদের শেয়ারকৃত লিংকের ফিচারে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Twitter  

লিংকে প্রবেশ করে উক্ত ছবিটি না পাওয়া গেলেও বিবিসির সেসময়ের একই ঘটনার আরও একটি সংবাদের ফিচারেও একই ছবি ব্যবহার করা হয় যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

Screenshot source: BBC

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত বলে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।  

মূলত, সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে নিউজিল্যান্ডের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবি ব্যবহার করে দেশটির সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বন্যার ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।  

তথ্যসূত্র

আরএফএল কোম্পানি মা দিবস উপলক্ষে ৩০০০০ টাকা পুরস্কার দিচ্ছে শীর্ষক দাবিটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, আরএফএল কোম্পানি মা দিবস উপলক্ষে ৩০০০০ টাকার উপহার প্রদান করছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মা দিবস উপলক্ষ্যে আরএফএল কোম্পানির অর্থ উপহারের দাবিটি সঠিক নয় বরং, ভুয়া লিংক ব্যবহার করে অর্থ প্রদানের মিথ্যা দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে আরএফএল এর ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার। কিন্তু, আরএফএল এর ওয়েবসাইটের কোথাও উক্ত অর্থ উপহারের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি।

Source: RFL

পাশাপাশি, আরএফএল এর ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান করেও আলোচ্য দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে উপহার সংগ্রহের জন্য যে লিংক প্রদান করা হয়েছে সেটি অনুসরণ করে নিম্নোক্ত ওয়েবপেজটি পাওয়া যায়।

Source: Account better

কিন্তু, ওয়েবপেজটিতে উপহার সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ, একটি ভুয়া লিংক ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, সম্প্রতি আরএফএল কোম্পানি মা দিবস উপলক্ষে ৩০০০০ টাকার উপহার প্রদান করছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। আরএফএল কোম্পানি এমন কোনো অফার দেয়নি। একটি ভুয়া লিংক ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মা দিবস পালিত হয়। সে হিসেবে এ বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার অর্থাৎ আগামী ১৪ই মে বিশ্বব্যাপী মা দিবস পালিত হবে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ৩০ হাজার টাকা, হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ACI কোম্পানি থেকে ৫০০০ টাকা উপহারের দাবিতে একইভাবে ভুয়া ক্যাম্পেইন ছড়িয়ে পড়লে সেগুলোর ব্যাপারে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, একটি ভুয়া লিংক ব্যবহার করে   আরএফএল কোম্পানি ৩০০০০ টাকা উপহার দিচ্ছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ ভুয়া।

তথ্যসূত্র

  • RFL Website: rflbd.com
  • Facebook Page: RFL 
  • Rumor Scanner’s own analysis

সম্প্রতি নয়, জার্মানিতে আগে থেকেই  মসজিদে আজানের অনুমতি রয়েছে

0

সম্প্রতি ‘জার্মানিতে অনুমতি পেল আজানের। আজ থেকে জার্মানির প্রত্যেকটা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান হবে। আলহামদুলিল্লাহ।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জার্মানিতে সম্প্রতি সকল মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের অনুমতি দেওয়া শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং জার্মানির কয়েকটি শহরে আগে থেকেই লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার অনুমতি আছে এবং পূর্বে অনুমতি পাওয়ার পর ২০২২ সালের অক্টোবরে কোলন শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে শুধু জুমআর নামাজের আজান লাউডস্পিকারে দেওয়ার বিষয়টি কার্যকর করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর ‘জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদে প্রথমবারের মতো আযান প্রচার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: DW Bangla

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জার্মানির বিভিন্ন শহরের মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান প্রচারের অনুমতি রয়েছে। তবে কোলন কর্তৃপক্ষ এই মসজিদটিকে ২০২১ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আজান প্রচারের অনুমতি দেয়।

পাশাপাশি, দেশীয় গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর ‘জার্মানির কোলনে মাইকে জুমার নামাজের আজান দেওয়ার অনুমতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jugantor

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জার্মানির কোলন শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে শুক্রবার মাইকে জুমআর নামাজের আজান দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাস আগেই মাইকে জুমআর আজান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তা এতদিন চূড়ান্ত হয়নি।

মূলত, জার্মানির বিভিন্ন শহরে আগে থেকেই লাউডস্পিকারের আজান দেয়ার অনুমতি ছিল। তবে ২০২১ সালে “কোলন” কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কিছু শর্তে শুধু শহরের সেন্ট্রাল মসজিদে কেবল জুমআর নামাজের আজান লাউডস্পিকারে দেওয়ার অনুমতি দিলেও বিভিন্ন কারণে পরবর্তীতে তা কার্যকর করা যায়নি। ২০২২ সালের অক্টোবরে কোলন শহরে একটি মসজিদে লাউডস্পিকারে শুধু জুমআর আজানের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি জার্মানিতে সকল মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।  

উল্লেখ্য, বিষয়টি পূর্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হলে সে সময় বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

মেসিকে ক্লাব থেকে তাড়ানোর ব্যাপারে পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি কোনো বক্তব্য দেননি

সম্প্রতি, লিওনেল মেসির বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়া সম্পর্কে পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফির একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং, এখানে

কি দাবি করা হচ্ছে

লিওনেল মেসির বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়া সম্পর্কে পিএসজি প্রেসিডেন্ট খেলাইফির যে বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো: “বার্সেলোনা মেসিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অফার করলে আমরা রাজি। যেকোনো মূল্যে আমি তাকে ক্লাব থেকে তাড়াতে চাই। আমার এখনও আফসোস হয় কেনো আমি ২০২১ সালে সুযোগ থাকা স্বত্বেও কিং রোনালদোকে সাইন না করে মেসিকে সাইন করে ছিলাম। “

তিনি আরও বলেন : “যদি আমি ২০২১ সালে কিং রোনালদোকে সাইন করতাম, তাহলে আমরা এতো দিনে অন্তত একটি ইউসিএল জিততে পারতাম “

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, লিওনেল মেসির বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়া সম্পর্কে পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি এমন কোনো বক্তব্য দেননি বরং পিএসজি প্রেসিডেন্ট খেলাইফি লিওনেল মেসিকে পিএসজিতে রাখার আশা করছেন।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গত ২৬ মার্চ ২০২৩ এ ক্রীড়া গণমাধ্যম ‘Marca’ তে “Nasser Al-Khelaifi on Messi and Mbappe’s contract renewals: We will not make mistakes” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) এর প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি তাদের দলের দুই তারকা লিওনেল মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ক্লাবে থাকার চুক্তি নবায়ন করার কথা বলেছিলেন এবং তারা রাজিও আছেন।

Screenshot from Marca

অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ২৬ মার্চ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘The Daily Mail’ এ “Nasser Al-Khelaifi insists PSG will do everything to keep Lionel Messi and Kylian Mbappe” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনেও আল খেলাইফি লিওনেল মেসিকে পিএসজি ক্লাবে রাখার রাখার আগ্রহের কথা জানান।

Screenshot from ‘The Daily Mail’

গত ৯ ডিসেম্বর ২০২২ এ ক্রীড়া গণমাধ্যম ‘Sky Sports’ এ “PSG president Nasser Al-Khelaifi exclusive: Lionel Messi happy in Paris; Marcus Rashford as a free agent – why not?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে আল খেলাইফি বিশ্বকাপের পর মেসির চুক্তি বাড়ানোর কথা উঠে আসে।

Screenshot from ‘Sky Sports’

অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ৭ ডিসেম্বর ২০২২ ‘Marca’ তে “PSG’s blunt response on the signing of Cristiano Ronaldo” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পিএসজির প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফির রোনালদোর সাথে চুক্তির অনাগ্রহ উঠে আসে।

Screenshot from Marca

এছাড়া, পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি “যদি আমি ২০২১ সালে কিং রোনালদোকে সাইন করতাম, তাহলে আমরা এতো দিনে অন্তত একটি ইউসিএল জিততে পারতাম” শীর্ষক এমন কোন বক্তব্য ইন্টারনেটে খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।

অর্থাৎ, লিওনেল মেসিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অফার করলে পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি রাজি থাকা এবং রোনালদোকে পিএসজিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেননি।

মূলত, প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) এর প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফির নামে বার্সেলোনা লিওনেল মেসিকে ফিরিয়ে নেওয়ার অফার করলে রাজি থাকা এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে পিএসজিতে চুক্তিবদ্ধ করার একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। তবে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) এর প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি মেসিকে পিএসজিতে রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, লিওনেল মেসি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) ফুটবল ক্লাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তথ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, এর আগেও লিওনেল মেসিকে নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

সুতরাং, লিওনেল মেসির বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়া সম্পর্কে পিএসজি প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফির বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মুজিব শতবর্ষের লোগোসহ ইন্টারনেটে প্রচারিত জুতার ছবিটি এডিটেড

বিগত কয়েক বছর ধরে মুজিব শতবর্ষের লোগো সম্বলিত একজোড়া সাদা জুতার ছবি এবং সেই জুতায় Made in India লেখা একটি লাইন রয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। 

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। এই উদযাপনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছবিসমেত একটি বিশেষ লোগোও উন্মোচন করা হয় যা পরবর্তীতে সর্বস্তরে ব্যবহার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত লোগোটি জুতায়ও ব্যবহার হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে।

Screenshot from Facebook

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একজোড়া সাদা জুতায় মুজিব শতবর্ষের লোগো রয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে মুজিব শতবর্ষের লোগো এবং Made in India লেখা একটি লাইন সাদা জুতার সাথে জুড়ে দিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন উপকরণ বিক্রয়ের ওয়েবসাইট ‘Pumplikesk’ এর ওয়েব সাইটে ২০১৯ সালে “2019 Spring Newest White Shoes Men’S Boys White Board White Shoes Korean Casual Shoes Trend Spring Student Wild Tide Vegan Shoes Comfort Shoes From Factory” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ছবির সাথে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেই ছবিতে মুজিব শতবর্ষের ছবি এবং ‘Made in India’ লেখা ছিলো না।

Image Comparison by Rumor Scanner

অনুসন্ধানের মাধ্যমে চীনের অপর একটি ফ্যাশন উপকরণ বিক্রয়ের ওয়েবসাইট ‘Dhgate’ এ “2020 spring newest White shoes men’s boys white board white shoes Korean casual shoes trend spring student wild tide” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ছবির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যায়। এই ছবিতেও মুজিব শতবর্ষের ছবি এবং ‘Made in India’ লেখা উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Screenshot from ‘Dhgate’ Website

অর্থাৎ, ফ্যাশন উপকরণ বিক্রয়ের ওয়েবসাইট থেকে সাদা জুতার ছবি সংগ্রহ করে মুজিব শতবর্ষের লোগোটি এডিটের মাধ্যমে বসানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তৈরি ওয়েব সাইটে মুজিব শতবর্ষের লোগোসহ সাদা জুতার ছবি বা এ সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধুর ছবিসমেত একটি বিশেষ লোগোও উন্মোচন করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে উক্ত বিশেষ লোগো জুতায়ও ব্যবহার হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা সাদা জুতার ছবিতে এডিটের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষের লোগো যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।  

প্রসঙ্গত, পূর্বে শেখ মুজিব পাবলিক টয়লেট শীর্ষক টয়লেটের একটি এডিটেড ছবি ফেসবুকে প্রচারিত হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে সাদা জুতার ছবি সংগ্রহ করে তাতে মুজিব শতবর্ষের লোগো বসিয়ে মুজিব শতবর্ষের লোগোটি জুতায়ও ব্যবহার হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে; যা প্রকৃতপক্ষে এডিটেড ছবি। 

তথ্যসূত্র

শিক্ষাছুটিতে থাকা কুবি শিক্ষকদের সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য

সম্প্রতি, “২৬৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬৫ জন ছুটিতে” শীর্ষক শিরোনামে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদটিতে যা দাবি করা হচ্ছে

  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যসূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬৬ জন শিক্ষক আছেন এবং এর মধ্যে ৬৫ জন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।
  •  ইউজিসির প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২৬৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। যার মানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ২৪:১ এবং দায়িত্বরত শিক্ষকের সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ৩২:১।

গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনটি দেখুন ‘রাইজিং বিডি’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ কে তথ্যসূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও অনুপাত নিয়ে প্রকাশিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং প্রতিবেদনটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্যগুলো সাংঘর্ষিক। 

পুরানো সূত্র উল্লেখ করে নতুন তথ্য প্রচার 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনটির পিডিএফ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ছিলো ২৬৬ জন। এর মধ্যে সেই সময়ে শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন ৫৭ জন শিক্ষক।

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

পরবর্তীতে বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা সম্পর্কে অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে  ২৬৫ জন শিক্ষক রয়েছেন।  

Screenshot from Comilla University Website

অপরদিকে বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের সংখ্যা অনুসন্ধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালে প্রকাশিত একাডেমিক ডায়েরি ঘেটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৬৫ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ৬৪ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনটি ইউজিসির ২০২১ সালে প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা হলেও এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ২০২৩ সাল বা বর্তমান সময়ের তথ্য, যার সঙ্গে ইউজিসির প্রতিবেদনটির কোনো মিল নেই।

মোট শিক্ষার্থী ও দায়িত্বরত শিক্ষকের অনুপাত নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য 

গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ৬ হাজার ৩৮৪ জন এবং এর বিপরীতে কর্তব্যরত শিক্ষকের সংখ্যা ২০৩ জন উল্লেখ করা হয়েছে। এই হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত দেখানো হয়েছে ৩২:১। 

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

কিন্তু অনুসন্ধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ‘cou.ac.bd’ এর হালনাগাদকৃত প্রাপ্ত তথ্য অনু্যায়ী,  বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মোট ৭ হাজার ১৪১ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৬৫ জন। 

Screenshot from Comilla University Website

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন একাডেমিক ডায়েরি সূত্রে এই ২৬৫ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে থাকা শিক্ষকের সংখ্যা ২০১ জন। ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের এবং অনুপাত দাঁড়ায় ৩৬:১। 

অর্থাৎ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনটির সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও এদের অনুপাত ঠিক নেই। 

মূলত, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ৩০ মার্চ তাদের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ প্রকাশ করে৷ এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে “২৬৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬৫ জন ছুটিতে” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবেদনটি ইউজিসির প্রতিবেদন সূত্রে করা হলেও ঐ প্রতিবেদনের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্যের গড়মিল রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবেদনটিতে এমন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে যা ইউজিসির প্রতিবেদনটিতে বিদ্যমান নেই এবং কোথাও কোথাও ২০২২ সালে প্রকাশিত ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্যকেই বর্তমান সময়ের তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের পুরানো তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সংখ্যা ও এদের অনুপাত নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

বলিউড তারকা টাইগার শ্রফের মৃত্যুর গুজব প্রচার

সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা গেছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

একই দাবিতে হিন্দি ভাষায় ছড়িয়ে পড়া কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া, টাইগার শ্রফ বর্তমানে তার নতুন সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফের মারা যাওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওগুলো যাচাই করলে দেখা যায়, এগুলো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি ও ক্লিপ উক্ত দাবিটির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

গত ০৬ মে Bongo Tv নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে রোড এক্সিডেন্টে বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়।

Screenshot: YouTube

তবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেখানে টাইগার শ্রফের পুরোনো কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ভিডিওটির থাম্বনেইলে প্রদর্শিত টাইগার শ্রফের ছবিটিও বাস্তব নয় (এডিটেড)।

এছাড়াও গত ০৫ মে STAR UPDATED BD নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও‘র শিরোনামে টাইগার শ্রফের মারা যাওয়ার দাবি প্রচার করা হলেও বিস্তারিত অংশে তিনি আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

Screenshot: YouTube

এছাড়াও গত ০৪ মে  Siddikur Rahman TV নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে টাইগার শ্রফের মারা যাওয়ার দাবিতে ভিন্ন এক ব্যক্তির মূমুর্ষু অবস্থার ভিডিও শেয়ার করা হয়।

Screenshot: YouTube

একই দাবিতে প্রচারিত অন্যান্য ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলেও দেখা যায়, সেখানে প্রদর্শিত ছবি ও ভিডিও ক্লিপগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং তা ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। 

বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে জানা যায়, তিনি বর্তমানে তার নতুন সিনেমা ‘বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া‘র শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন।

টাইগার শ্রফের মারা যাওয়ার দাবিটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে দেখা যায়, আজ (১০ মে) সকালেই অভিনেতার ফিজিক্যাল এক্টিভিটির একটি রিল ভিডিও শেয়ার করা হয়।

Screenshot: Facebook

এছাড়াও গত ০৭ মে তিনি একটি পোস্টে তার নতুন সিনেমা ‘বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া‘র শুটিংয়ের একটি দৃশ্য শেয়ার করেন। 

Screenshot: Facebook

এছাড়াও Box Office Worldwide এর টুইট থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: Twitter

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। 

পাশাপাশি, ভারতীয় গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই অভিনেতার মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা গেছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। টাইগার শ্রফ সুস্থ আছেন এবং তিনি বর্তমানে তার নতুন সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

প্রসঙ্গত, টাইগার শ্রফের সাথে বর্তমানে একই সিনেমায় কাজ করছেন বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা অক্ষয় কুমার। এই সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে তিনি চলতি বছরের মার্চে আহত হন।

উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বলিউড অভিনেতা টাইগার শ্রফ মারা গেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি গুজব।

তথ্যসূত্র

বিশ্বে সততায় শেখ হাসিনার ও শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে খালেদা জিয়ার তৃতীয় নির্বাচিত হওয়ার দাবি দুইটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘পার্থক্যটা এখানেই’ শীর্ষক শিরোনামে দুইটি বৈশ্বিক জরীপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থান দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদনের ছবি একটি ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ডিজিটাল ব্যানারে থাকা প্রতিবেদন দুইটিতে যথাক্রমে দাবি করা হচ্ছে:

  • বিশ্বের সৎ পাঁচ নেতার তালিকায় শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে 
  • বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা
Image Collage: Rumor Scanner

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের সৎ পাঁচ নেতার তালিকায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় ও বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের মধ্যে  বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৃতীয় নির্বাচিত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভিত্তিহীন, ভুয়া ওয়েবসাইটের সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম তথ্য দুইটি প্রচার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

দাবি: বিশ্বের সৎ পাঁচ নেতার তালিকায় শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bangla Insider এ ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের ৩য় সৎ সরকার প্রধান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from banglainsider

প্রতিবেদনটিতে উক্ত তথ্যের সূত্র হিসেবে ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ নামে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে। তবে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধানে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উক্ত নামে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে কেবল কিছু বই ও সিরিজের নাম পাওয়া যায়। 

Screenshot: Web Search

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যতীত ঐ তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকী ৪ জনকে নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানেও তাদের নামে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, ভিত্তিহীন একই প্রতিষ্ঠানের সূত্রে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কর্মঠ সরকার প্রধানদের তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে আছেন দাবিতেও প্রচার করা হয়েছিল। 

Screenshot from banglatribune

এ সম্পর্কিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধান দেখুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের তৃতীয় সৎ সরকার প্রধান নির্বাচিত হননি

দাবি: বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bangla Insider এ ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর ‘দুর্নীতিতে জিয়া পরিবার বিশ্বে ৩য়‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from banglainsider

প্রতিবেদনটিতে এসব তথ্যের উৎস হিসেবে অনলাইন পোর্টালটি তিনটি আলাদা আলাদা সূত্র ব্যবহার করেছে। যথা:

  • ফক্স নিউজ পয়েন্ট
  • র‌্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড 
  • ফক্স নিউজ ফোর

তবে রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই তিনটি সূত্রের মধ্যে 

  • দ্বিতীয় সূত্র র‌্যাংকার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্যান-পরিচালিত র‍্যাংকিং ওয়েবসাইট। যেখানে ওয়েবসাইটটির ব্যবহারকারীরা নিজেরাই বিভিন্ন র‍্যাংকিং তৈরি করে থাকেন। এই সাইটটিতে যে কারোর পক্ষে তালিকা তৈরি করা, ভোট দেওয়া ও ভোট সরিয়ে নেওয়া সম্ভব৷ অর্থাৎ এ ওয়েবসাইটটি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নয়।
  • তৃতীয় সূত্র ফক্স নিউজ ফোর যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস থেকে পরিচালিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। তবে নিউজ পোর্টালটিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবার’ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধান দেখুন বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় নির্বাচিত হয়নি

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকাটি বাংলা ইনসাইডারের উপরিউক্ত প্রতিবেদনটির সূত্রে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর  ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা’ শীর্ষক শিরোনামে লিড সংবাদটি প্রকাশ করে।

Image: Daily Purbokone News Screenshot

তবে এরপরের দিনই এই সংবাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পূর্বকোণ পত্রিকাটি জানায়, ‘তাদের ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা’ শীর্ষক লিড সংবাদটি নিয়ে পাঠকমহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টাল banglainsider.com/bangladesh/8090 থেকে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী লিখে Google-এ অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সেটিও মিথ্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধান পড়ুন এখানে। 

তথ্যসূত্র

সাবের হোসেন চৌধুরী প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নয়

0

সম্প্রতি, তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ এর মে মাসের সংখ্যায় ১৬তম পৃষ্ঠায় “মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আজীবন সদস্য মাশরাফী” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

যেখানে দাবি করা হয়েছে, “ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (MCC) আজীবন সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্তুজা। এ বছর আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয় ১৯ জনকে, যেখানে আছেন ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সাবেক খেলোয়াড়েরা। ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত MCC ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৮৩৫০ জন পূর্ণ ও ৬০০০ সহযোগী সদস্য আছেন MCC’র।”

Screenshot from ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’

অর্থাৎ, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দাবি করছে, ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৩ সালে প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) আজীবন সদস্যপদ পাননি সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বরং তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এমসিসি’র আজীবন সদস্য পদ পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ১৯৮২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পান বিসিবির সাবেক সহ–সভাপতি প্রয়াত রাইসউদ্দিন আহমেদ।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, এমসিসির (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) ওয়েবসাইটে গত ০৫ এপ্রিল “MCC ANNOUNCES LATEST COHORT OF HONORARY LIFE MEMBERS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Lord’s website 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মোট ১৭ জন নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারকে এবার আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে প্লেয়িং ক্যাটাগরিতে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আছেন মাশরাফি। এছাড়া, ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্য নন প্লেয়িং ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন আরও দুইজন। 

Screenshot from Lord’s website  

এমসিসির এমন সম্মাননা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাবের হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে জানতে ‘প্রথম  আলো’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৫ এপ্রিলে “প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এমসিসির আজীবন সদস্য মাশরাফি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রথম আলো লিখেছে, “এর আগে বাংলাদেশ থেকে এমসিসির সম্মানসূচক এই সদস্যপদ পেয়েছিলেন ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত দুজন। বিসিবির সাবেক সহ–সভাপতি প্রয়াত রাইসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন এমসিসির সদস্যপদ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি। এরপর সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।” 

Screenshot from ‘Prothom Alo’ website

পাশাপাশি, গত ০৫ এপ্রিল ‘Cricket97’ নামের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে রাইসউদ্দিন আহমেদ নামক ব্যক্তিকে এমসিসির পক্ষ থেকে পাঠানো আজীবন সদস্য পদ সংক্রান্ত একটি চিঠির ছবি টুইট করা হয়। 

Screenshot source: Twitter 

তবে, এমসিসির ওয়েবসাইটে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে রাইসউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম, এমসিসি’র ওয়েবসাইটে আজীবন সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, তালিকার সকলেই বেঁচে আছেন। মৃত ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলা হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে অধিকতর অনুসন্ধানে এমসিসি’র টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৯ আগস্ট রুডি কোয়ের্টজেন এবং ২০২১ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে টুইট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে দুই ব্যক্তিকেই এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot source: Twitter 

কিন্তু এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকায় উক্ত দুই ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে, মৃত ব্যক্তির নাম এমসিসি’র ওয়েবসাইটে ‘আজীবন সদস্যদের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে’ শীর্ষক সম্ভাবনাটি জোরালো হয় বলে প্রতীয়মান হয়। 

এই তথ্যের সূত্র ধরে উক্ত তারিখের (২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি) পূর্বের এমসিসির ওয়েবসাইটের আজীবন সদস্যদের তালিকা বিষয়ক পেজটির আর্কাইভ ভার্সন (২০২০ সালের ০৯ আগস্ট) খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত আর্কাইভ ভার্সন থেকে দেখা যায়, পেজে তখন রাইসউদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে। 

Screenshot from Lord’s website

একইসাথে এমসিসি’র টুইটে যে দুজনের (রুডি কোয়ের্টজেন এবং ক্যাপ্টেন স্যার টম মোরে) মৃত্যুর বিষয়ে জানিয়েছে তাদের নামও খুঁজে পাওয়া যায় একই আর্কাইভ ভার্সনে। 

অর্থাৎ, এমসিসির আজীবন সদস্য পদ পাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি মারা যান তবে তার নাম এমসিসি’র ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এক্ষেত্রে তাই রাইসউদ্দিন আহমেদের নামও সরিয়ে নিয়েছে এমসিসি। 

মূলত, সাম্প্রতিক তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ এর মে মাসের সংখ্যায় ১৬তম পৃষ্ঠায় “মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আজীবন সদস্য মাশরাফী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে দাবি করা হয়, ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে MCC’র আজীবন সদস্যপদ পান সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়৷ সাবের হোসেন চৌধুরীর উক্ত সম্মাননা পাওয়ার পূর্বে ১৯৮২ সালে রাইসউদ্দিন আহমেদ এই সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদ পেয়েছিলেন।  

সুতরাং, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগে সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী MCC’র আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন দাবি করে সাম্প্রতিক তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

উল্লেখ্য, পূর্বে যথাক্রমে ‘প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মাশরাফি এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন’ এমন দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদেন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।