সম্প্রতি, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের হাঙ্গু মসজিদের ভিতরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা২৪।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বোমা হামলার ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বোমা হামলার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Al jazeera এর ওয়েবসাইটে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Al Jazeera
ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের পেশাওয়ার শহরের একটি মসজিদে হওয়া আত্মঘাতী বোমা হামলার দৃশ্য এটি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে স্পষ্ট করেই দাবি করা হয়েছে যে ছবিটি বেলুচিস্তানের হাঙ্গু মসজিদে হওয়া বোমা হামলার পরের দৃশ্য। কিন্তু ছবিটি এই মসজিদের এবং সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের মাসতাং বিভাগে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দেশের একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বোমা হামলার ঘটনার দাবিতে একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। পাকিস্তানের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক বোমা হামলার ঘটনার খবরে ব্যবহার করে এটিকে উক্ত ঘটনার পরের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বোমো হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে কান্না করার পর মানুষের চোখের অবস্থার ছবি নয় বরং এটি সাবকংজাক্টিভাল হ্যামোরেজ, ইউভিটিস অথবা পিংক আই রোগে আক্রান্ত একটি চোখের ছবি।
মূলত, চোখের সাদা অংশে ছোটো ছোটো রক্তনালী থাকে যা খুব ভঙ্গুর। কোনো কারণে এই রক্তনালী ভেঙ্গে গেলে রক্ত কনজেক্টিভাল মেমব্রেনের নিচে আটকে যায়। এই ফেটে যাওয়া রক্তনালীকে সাবকংজাক্টিভাল হেমোরেজ বলা হয়। তাছাড়া, চোখ ওঠা ও ইউভিটিস রোগেও চোখের রক্তনালী ফুলে যায় ও চোখ লাল হয়ে যায়। তেমনই একটি রোগাক্রান্ত চোখের ছবিকে কান্না করার পর মানুষের চোখের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সুস্থ সবল একটি চোখে কান্নার সময় আইরিশ/স্ক্লেরা বা চোখের অন্য কোনো অংশে রক্তক্ষরণ হয়না।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরাকে গত ২৭ সেপ্টেম্বরের বিয়ের অনুষ্ঠানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে বর ও কনের মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত ঘটনায় তারা আহত হলেও জীবিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ঘটনাটিতে বর ও কনের মৃত্যুর খবরের সূত্র হিসেবে স্থানীয় গণমাধ্যম এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়েছে। কিছু গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা The Iraqi News Agency (INA) এর বরাতেও সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখে অনুসন্ধান করে INA এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ (১,২,৩) যাচাই করে বর ও কনের মারা যাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC এর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টা ৫৪ মিনিটের একটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা মারা গেছেন।
Screenshot: BBC
কিন্তু বিবিসির একই প্রতিবেদনের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২০ মিনিটের আরেকটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, বর ও কনে বেঁচে আছেন। বিবিসি Alsumaria TV নামে ইরাকের একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজ ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারের সহায়তায় যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
Screenshot: BBC
বিবিসির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে Alsumaria TV এর ওয়েবসাইটে ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৭ টা ৩৩ মিনিটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ফুটেজটি খুঁজে পাওয়া যায়। ফুটেজটি দিনের বেলায় মারা যাওয়া বরের আত্মীয়দের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের সময় ধারণ করা হয়েছিল।
Screenshot: Alsumaria TV
ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একই ঘটনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার একটি আর্কাইভ থেকে জানা যাচ্ছে, একজন আত্মীয় ইরাকের টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’কে বলেছেন, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকদের মধ্যে বর ও কনে ছিলেন।
Screenshot: The Guardian
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা ১১ মিনিটের একটি আর্কাইভ থেকেও বর কনের বেঁচে থাকার বিষয়টি জানা যাচ্ছে।
Screenshot: Al Jazeera
যদিও একই প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২ টা ৬ মিনিটের একটি আর্কাইভে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। বরং বলা হয়, তাৎক্ষণিক এই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
Screenshot: Al Jazeera
আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম CNN এর ওয়েবসাইটে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময়দুপুর তিনটার একটি আর্কাইভ থেকে জানতে পারি, বিস্ফোরণস্থলে থাকা অনুষ্ঠানটির একজন অতিথি ইরাকের টেলিভিশন চ্যানেল ‘Alawla Tv’ কে জানিয়েছেন, বর ও কনে ভালো আছেন। তিনি তাদের সাথেই ছিলেন।
Screenshot: CNN
আরবভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিসবারও একই সূত্রের বরাত দিয়ে একই তথ্য দিয়েছে।
Screenshot: Misbar
পরবর্তীতে ফেসবুকে ‘Alawla Tv’ এর ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় ভোর ০৫ টা ১৯ মিনিটে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনেই নিশ্চিত করা হয়, বর ও কনে জীবিত আছেন।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, ২৭ সেপ্টেম্বর ভোরেই জানা গিয়েছে, বর ও কনে জীবিত আছেন।
মূলত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়৷ বর ও কনে আহত হলেও জীবিত আছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের বরাতে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনার পরদিন ভোরেই বর ও কনের সাথে থাকা এক ব্যক্তি নিশ্চিত করেন, তারা দুজনই জীবিত আছেন।
সুতরাং, ইরাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে বর-কনে মারা যাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “হঠাৎ বৈঠকের পর পদত্যাগের ঘোষনা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!। BD Politics। Caretaker Government ” শীর্ষক শিরোনাম এবং প্রায় একই দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ০১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ভিন্ন তিনটি ভিডিও ক্লিপের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড.ফয়জুল হক এবং চ্যানেল ২৪ এর একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ।
উক্ত ভিডিওটিতে এক সাংবাদিকের আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কাউন্সিল ডিসেম্বরে। আওয়ামী লীগ প্রতিবারেই ডিসেম্বরে কাউন্সিল করে থাকে। আগামী কাউন্সিলে নেতৃত্বে নতুন কোনো চমক থাকছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে যদি একজন কাউন্সিলরও তাকে নেতৃত্বে না চায় তাহলে তিনি থাকবেন না। তিনি বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।
ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর সময় টেলিভিশন এর ওয়েবসাইটে “বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর বিকেলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ দিনের সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, যেদিন থেকে আওয়ামী লীগে আমার অবর্তমানে আমাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে তখন থেকেই আমি এই শর্ত মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq নামক ইউটিউব চ্যানেলে “ব্রেকিং নিউজ।। পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা।। যেকোনো সময় গ্রেফতার। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ড. ফয়জুল হল ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন বলে উল্লেখ করেন।
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরে বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশটি হইতো তাকে আর ক্ষমতায় চায় না।তাই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনীর উপর।’
উক্ত প্রতিবেদনে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে ডয়েচ ভেলের বাংলা সংস্করণে গত ১৬ মে “যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসির ইয়ালদা হাকিমের সাথে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জানতে চানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷ তাঁর দাবি,গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে৷’
অর্থাৎ কোনপ্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
মূলত,’Sabai sikhi’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায় অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগ ঘোষণা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বললো রাষ্ট্রপতি – ক্ষেপেছে ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বলে কোনো মন্তব্য করেননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এছাড়া ওবায়দুল কাদেরও রাষ্ট্রপতির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ভিডিও যাচাই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যা বললেন নতুন রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন সাংবাদিক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করা হয়। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যাওয়ার তো আর সুযোগ নেই। তিনি জানান “আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে মনে করি সকলের সংবিধান মানা উচিৎ এবং আমাদের কাছে যে সংবিধানের রূপ আছে, সেখানে নির্বাচনের অধ্যায়ে যা বলা আছে, ঐ ভাবেই নির্বাচন হবে।
অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সেই ভিডিওতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকার পক্ষে তার অবস্থান তুলে ধরেন।
ওবায়দুল কাদেরের ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি “সাংবাদিকদের উপর হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিও থেকে জানা যায়, ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেসময়ের রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তবে, সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেয়ার পথে সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরের কাছে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, “আই হ্যাভ টোল্ড এভ্রিথিং এবাউট হিম”।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ওপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ক্ষীপ্ত হওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মূলত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেসময়ের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে গণমাধ্যমে ব্রিফিং এর মাধ্যমে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তবে সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকরা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আবার প্রশ্ন করলে তিনি রাগান্বিত হন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সংসদে বিল পাশের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়া হয়। আমাদের কাছে যে সংবিধানের রূপ আছে সেখানে নির্বাচনের অধ্যায়ে যা বলা আছে ঐ ভাবেই নির্বাচন হবে।’ তবে সম্প্রতি, উক্ত দুই ভিডিও ফুটেজ এর খণ্ডিত অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জোড়া লাগিয়ে “তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বললো রাষ্ট্রপতি, ক্ষেপেছে ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক ভুয়া দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে ইন্টারনেটে একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হলে সেসব বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন-
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ভিন্ন দুই ভিডিওর খণ্ডিত অংশ জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বলায় ওবায়দুল কাদের ক্ষেপেছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, কানাডা সরকার ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কানাডা সরকার ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছা-সেবক আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি কানাডায় শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কানাডার একটি স্বাধীন সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) এবং ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন অফ কানাডার দেওয়া যৌথ এক বিবৃতির কিছু অংশকে কাট করে কানাডা সরকারের বিবৃতি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত ভিডিওটির ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। যেখানে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটিকে চারটি দাবি পেশ করতে শোনা যায়; অবিলম্বে ভারতে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেওয়া, কানাডায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার শ্রী সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে বহিষ্কার, ভারত এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার উপর একটি আনুষ্ঠানিক স্থগিত এবং RSS-কে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা এবং কানাডা থেকে এর এজেন্টদের অপসারণ করা।
পরবর্তীতে ভিডিওর Description পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মূলত কানাডার খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার-এর হত্যার প্রতিক্রিয়ায় কানাডা সরকারকে নিদির্ষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) এবং ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন অফ কানাডার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতির ভিডিও।
Screenshot: Youtube
এছাড়াও ভিডিওতে বিবৃতিটি পাঠ করে শোনানো ব্যক্তির নাম স্টিফেন ব্রাউন। তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) নামক এনজিওটির সিইও। উক্ত সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এটি একটি স্বাধীন এবং নির্দলীয় এনজিও।
Screenshot: National Council of Canadian Muslims (NCCM)
পরবর্তী অনুসন্ধানে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুসন্ধান এবং প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী কোনো গণমাধ্যমে কানাডা সরকারের আরএসএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, কানাডায় ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ব্যক্তি স্টিফেন ব্রাউনের সাথে কানাডা সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, গত ১৮ জুন কানাডায় একটি শিখ উপাসনালয়ের সামনে কানাডার খালিস্তান টাইগার ফোর্স (KTF)-এর প্রধান হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হত্যার জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করেন। কিন্তু ভারত তার অভিযোগ অস্বীকার করে। যার পর থেকেই কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী শিখদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কানাডার অটোয়া শহরে হাউস অফ কমন্স-এ কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশনের সভাপতি মুখবীর সিং এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম)-এর সিইও স্টিফেন ব্রাউন এক যৌথ বিবৃতি দেন। যেখানে চারটি দাবি পেশ করেন তারা। যার সর্বশেষ দাবিটি ছিল অবিলম্বে কানাডায় RSS-কে নিষিদ্ধ করা এবং কানাডা থেকে এর এজেন্টদের অপসারণ করা। এরপর থেকেই কানাডা সরকার আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবি চারটির ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, কানাডা সরকার কর্তৃক ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লন্ডনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন একাধিক ভিডিও যুক্ত করে কোনরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই চটকদার থাম্বনেইল এবং ক্যাপশন ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ সেচ্ছাসেবক দল, যুক্তরাজ্য ব্যানারে যুক্তরাজ্যে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল করছে।
ভিডিওটির শুরুতে নেতাকর্মীদের বলতে শোনা যায় ‘আমাদের কোনো নেত্রী আছে? আছে’। হাসিনা আমেরিকা থেকে পালিয়ে এসেছে লন্ডনে। তাকে আমরা বিদায় জানাবো। হাসিনা অবৈধ সরকার।
পরবর্তীতে ৩৯ সেকেন্ড থেকে একটি লাইভ ভিডিওর অংশ দেখা যায়। সেখানে বলা হয়, আমরা এখন হোয়াইটচেপেল রেলস্টেশনে আছি। বিএনপির নেতৃবৃন্দরা, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দরা এখানে অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লন্ডন আসছেন আজকে।
৫৫ সেকেন্ডে একজনকে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী আসতেছে বিকেলে। আমেরিকা থেকে ধাওয়া করে দিয়েছে। এখান থেকেও ইনশাআল্লাহ ধাওয়া করবো। গো ব্যাক হাসিনা।
পরবর্তীতে আবারও লাইভের হোস্ট বলেন, এখন আমরা হোয়াইটচেপেলে আছি। হোয়াইটচেপেল স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে আছে সেই হোটেলের দিকে যাচ্ছি। সেচ্ছাসেবক দল বিএনপির..।
পরবর্তীতে ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ড থেকে আরেকটি ভিডিও যুক্ত করা হয়। সেখানে ‘খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়া’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ভিডিও যাচাই
প্রচারিত ভিডিও থেকে ব্যানারের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২ অক্টোবর “লন্ডন থেকে সরাসরি ২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে ১ দফা দাবিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়।
১ ঘন্টা ২৭ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওতে কোথাও শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
পাশাপাশি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তা গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার কথা। কিন্তু উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে এধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া প্রচারিত ভিডিটিতেও সংঘর্ষের কোনো দৃশ্য ছিলো না।
মূলত, গত ০২ অক্টোবর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ সেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরবর্তীতে সেই বিক্ষোভ মিছিলের কিছু ভিডিও কেটে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একসাথে করে “লন্ডনের পুলিশের সামনেই শেখ হাসিনাকে জুতাপিটা করলো” শীর্ষক ক্যাপশনে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লন্ডনের বিএনপির সেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হলে বিষয়টি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রাবার বাগান বা সেলফি রোডের নয় বরং এটি অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপে অবস্থিত একটি রাস্তার।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ছবি শেয়ারিং ওয়েবসাইট ফ্লিকারে ‘Isabelle’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১২ সালের ১ জুন ‘Road on Kangaroo Island’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সেলফি রোড দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Flicker
উক্ত সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ফটো স্টক ওয়েবসাইট অ্যালামিতে ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর ‘Australia, South Australia, Kangaroo Island’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একই রাস্তার ভিন্ন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লিখিত ছবিগুলোর সাথে আলোচ্য ছবির তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় ছবিগুলো একই রাস্তার। অর্থাৎ, আলোচ্য ছবিটি অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপে অবস্থিত একটি রাস্তার।
এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপ সম্পর্কে অনুসন্ধানে ‘Kangaroo Island’ এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটের মুখ্যপৃষ্ঠার সংযুক্ত ছবিটির সাথেও আলোচ্য ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সেলফি রোড তাহলে কোনটি?
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সেলফি রোড সম্পর্কে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গুগল ম্যাপে স্থানটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ব্যবহারকারীদের আপলোডকৃত একাধিক ছবি পর্যালোচনা করেও আলোচ্য ছবির সাথে কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, স্টক ফটো ওয়েবসাইট আইস্টকে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই প্রকাশিত সেলফি রোডের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচ্য ছবির তুলনা করেও বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner.
মূলত, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত রাবার গার্ডেন, যা সেলফি রোড হিসেবে অধিক পরিচিত। উক্ত স্থানের দৃশ্য দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপে একটি রাস্তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সেলফি রোডের দৃশ্য দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপের একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ভালো খেললে বাংলাদেশি এবং খারাপ খেললে হিন্দু হওয়া নিয়ে লিটন দাস মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ ও ধর্মকে জড়িয়ে আলোচিত মন্তব্যটি লিটন দাস করেননি বরং সাবেক জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিলের সমধর্মী বক্তব্যের অনুকরণে এই উক্তিটি তৈরি করে লিটন দাসের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, ২০১৮ সালে জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। নিজের উপর বর্ণবাদী আচরণের প্রেক্ষিতে সে সময়ে মেসুত ওজিল বলেন, “জিতলে আমি জার্মান, হারলে বিদেশি”। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এ বক্তব্যের অনুকরণেই “ভালো খেললে আমি বাংলাদেশি, আর খারাপ খেললে আমি হিন্দু” শীর্ষক উক্তি তৈরি করে লিটন দাসের নামে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লিটন দাস এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় এটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “ভারতের স্টেডিয়ামে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের কাছে আত্নসমর্পণ করার সেই ছবি দেয়ালে টাঙানো এবং ঠিক সেই ছবির সামনে দিয়ে পাকিস্তান দলের প্লেয়াররা হেঁটে যাচ্ছে।” শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের আত্মসমর্পণের ছবির সামনে দিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা হেঁটে যাচ্ছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটি আসল নয় বরং পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হেঁটে যাওয়ার সময়ের একটি স্থিরচিত্র এডিট করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিটি বসিয়ে ভুয়া এ দাবি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, প্রচারিত স্থিরচিত্রটি স্টেডিয়ামের নয় প্রকৃতপক্ষে হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে ধারণ করা।
ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম ZEENEWS এ গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ফটো স্টোরিতেও আলোচিত ছবিটির সাথে প্রায় হুবহু মিল রয়েছে এমন একটি ফ্রেমের ছবি খুঁজে পাওয়া যায় এবং সেখানেও দেয়ালে কোনো ছবি দেখা যায়নি।
Screenshot: Zee News
গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি টুইটার(বর্তমানে এক্স) অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে ছবির সাথে আলোচিত দাবির ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। আসল ছবিতে দেয়ালে ১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের ছবি কিংবা অন্য কোনো ছবি দেখা যায়নি।
Screenshot : X/MSDianabhii
পরবর্তীতে One Sports নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ভারতের হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে পৌছানোর একটি ভিডিও খুঁজে(আর্কাইভ) পাওয়া যায়। ভিডিওর ১০তম সেকেন্ডের দৃশ্যের সাথে দাবির ছবির দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পুরো ভিডিওচিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেয়ালে পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক সেই ছবি পাওয়া যায়নি।
Photo Comparison by Rumor Scanner
মূলত, বিশ্বকাপে অংশ নিতে পাকিস্তান ক্রিকেট দল গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে পৌছায়। হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হেঁটে যাওয়ার সময়ের একটি স্থিরচিত্র এডিট করে সেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ করার ঐতিহাসিক ছবিটি বসিয়ে এই ভুয়া দাবি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক ছবির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড।