সম্প্রতি ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেনি বরং ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন কমিশন ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় ‘US religious freedom panel again recommends India for blacklist’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Aj Jazeera
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০১ মে নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগে কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ করার পাশাপাশি ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএসসিআইআরএফ।
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমে The TIMES OF INDIA এর অনলাইন সংস্করণে ‘US panel again takes aim at India on religious freedom’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
Screenshot: Times of India
অর্থাৎ, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবিটি সঠিক নয়।
তাছাড়া, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার কারণে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার ২০২২ সালে জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নীতির প্রচার ও প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। এ ঘটনায় উক্ত সংঘঠনটির পক্ষ থেকে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। ইউএসসিআইআরএফ কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশের বিষয়টি-ই যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী একটি স্বাধীন কমিশন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থাটি ২০২০ সাল থেকে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে উপাধি দেওয়ার জন্য আবেদন করছে। এই ধরনের উপাধি কোনও সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ‘পদ্ধতিগত, চলমান (এবং) গুরুতর লঙ্ঘনের’ জন্য অভিযুক্ত করে এবং এতে করে সেই সরকার বা দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
সুতরাং, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অবিশ্বাস্য সুন্দর ফেলিস সালামন্দ্রা বিড়াল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রকাশিত ছবি গুলো বাস্তব নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবি গুলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে গত ০১ এপ্রিল ‘Kama Usha Bengal’ নামক ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে প্রকাশিত ছবির সাথে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবির সমূহের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
ফেসবুক পোস্টটি থেকে জানা যায়, এপ্রিল ফুল দিবস উপলক্ষে ‘Kama Usha Bengal’ নামক ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন এই গল্পটি বানিয়ে প্রচার করেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২ এপ্রিল ‘Kama Usha Bengal’ পেজে “#midjourney” ক্যাপশন দিয়ে ‘Michael Chilard’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেই ফেসবুক পোস্টটি পড়ে জানা যায় তারা এই ছবি গুলো মজার ছলে বানিয়েছিলো এবং এপ্রিল ফুল দিবস উপলক্ষে মিথ্যা গল্প বলে প্রকাশ করেছিলো। সত্যিকার অর্থে ‘ফেলিস সালামন্দ্রা’ জাতের কোনো বিড়ালের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই।
Screenshot from Facebook
‘Kama Usha Bengal’ পেজটিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এর সাহায্যে তৈরি এ জাতীয় ছবির আরও কয়েকটি পোস্ট পাওয়া যায়। দেখুন এখানে এবং এখানে।
Collage by Rumor Scanner
উক্ত ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ‘Kama Usha Bengal’ পেজের অ্যাডমিন এবং ছবি গুলোর প্রস্তুতকারক French’ এর সাথে কথা হয় রিউমর স্ক্যানার টিমের। তিনি জানান, গত ১ এপ্রিল তারিখে এপ্রিল ফুল’ দিবস উপলক্ষে আমি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে ছবি তৈরির টুল মিডজার্নি দিয়ে কালোর মাঝে হলুদ রঙ দিয়ে বিড়ালের ছবি তৈরি করি এবং সেটার ‘ফেলিস সালামন্দ্রা’ নাম দেই। কিন্তু এই বিড়াল বাস্তবে নেই এবং এগুলো আমার কল্পনায় তৈরি।
অর্থাৎ, অবিশ্বাস্য সুন্দর ফেলিস সালামন্দ্র বিড়াল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রকাশিত ছবি গুলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ছবি তৈরির টুল মিডজার্নি এআই দিয়ে তৈরি।
মূলত, গত ১ এপ্রিল ‘Kama Usha Bengal’ নামক ফেসবুক পেজে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে কিছু বিড়ালের ছবি তৈরি করে ‘ফেলিস সালামন্দ্রা’ নাম দিয়ে মিথ্যা গল্প বলে পোস্ট করে। পরবর্তীতে সেই ছবি গুলোই বাস্তব ফেলিস সালামন্দ্রা বিড়ালের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, মিডজার্নি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি ছবি প্রস্তুতকরক টুল। এটি ব্যবহার করে কিছু কমান্ডের সাহায্যে নিখুঁত ছবি তৈরি করা সম্ভব। মেসেজিং প্লাটফর্ম ডিস্কর্ডে মিডজার্নির সার্ভারে থাকা বট ব্যবহার করে ছবি প্রস্তুত করা যায়।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবি নিয়ে ইন্টারনেটে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ফেলিস সালামন্দ্রা নামক কাল্পনিক বিড়ালের ছবিকে বাস্তব ফেলিস সালামন্দ্রা বিড়ালের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখা গেছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও, যা অভিনয়ের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবের Syed Sadam9085 নামের একটি চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই ‘Real Ghost caught by cctv camera (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Syed Sadam9085
ভিডিওটিতে ঘটনার সময় ও তারিখ উল্লেখ থাকলেও এটি পাকিস্তানের কোন হাসপাতালের ঘটনা এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানের লক্ষ্যে রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত চ্যানেলটিতে বিদ্যমান একই দাবিতে প্রচারিত অন্যান্য ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসপাতালে ভূত দেখার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যারা উপস্থিত ছিল, একই ব্যক্তিদের চ্যানেলটির অন্যান্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ভূত দেখার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির স্থানের সঙ্গেও অন্যান্য ভিডিওগুলোর স্থানের মধ্যে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়া উক্ত চ্যানেলটিতে একই ব্যক্তিবর্গ দ্বারা তৈরী একাধিক শর্ট ফিল্মের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের এমন কিছু শর্ট ফিল্ম দেখুন এখানে এবং এখানে।
Image Collage: Rumor Scanner
পাশাপাশি রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখার দাবিতে হুইলচেয়ার চলাচলের যে ভিডিওটি দেখা যায়, সেটির অনুরূপ পূর্বেও ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যা পরবর্তীতে গুজব হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
Screenshot: Hoax or Fact
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Factlyও পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, হুইলচেয়ার চলাচলের এই ভিডিওগুলো সাধারণত বাতাস বা গোপনে সুতার মাধ্যমে টেনে তৈরি করা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে রিমোট নিয়ন্ত্রিত হুইলচেয়ারগুলোকেও এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
Screenshot: Factly.in
মূলত, দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখা গেছে শীর্ষক দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও বাংলাদেশে ফেসবুকে প্রচার হলে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড বা অভিনয়ের মাধ্যমে তৈরী। পাশাপাশি অনুসন্ধানে একই স্থানে, একই ব্যক্তিবর্গ দ্বারা তৈরী অনুরূপ বিভিন্ন ভিডিওচিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়।
সুতরাং, একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে পাকিস্তানের হাসপাতালে ভূত দেখা গেছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বেশ কয়েক বছর যাবত, “কাক দ্বিতীয়বার জোড়া বাঁধেনা” শীর্ষক একটি দাবি একটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
দাবি করা হচ্ছে, কাক একমাত্র প্রাণী যে কিনা সঙ্গী হারানোর শোক কখনো কাটিয়ে উঠতে পারে না এবং সেইসাথে কাক এটাও জানে দ্বিতীয়বার যে আসে সে ভালোবেসে আসে না, বিপদে পড়ে আসে। তখন সবকিছু থাকলেও ভালোবাসা থাকে না।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাক দ্বিতীয়বার জোড়া না বাঁধা শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং কাক তার জীবনকালে একবার জোড়া বাধঁলেও বিশেষ ক্ষেত্রে যদি তার সঙ্গী মারা যায় অথবা বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম হয় তাহলে একটি কাক দুই বা ততোধিকবার জোড়া বাঁধতে পারে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট WebMD এর তথ্যমতে, একাধিক সঙ্গীর পরিবর্তে, একই সাথে কেবল একজন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাকে মনোগ্যামি বলে। একটি মনোগ্যামাস সম্পর্ক হতে পারে শারীরিক অথবা আবেগপূর্ণ। তবে এটি সচরাচর আবেগ এবং শারীরিক চাহিদা উভয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠে।
Screenshot Source: WebMD
মার্কিন সরকারি সংস্থা ‘National Science Foundation’ কর্তৃক “Animal Attraction: The Many Forms of Monogamy in the Animal Kingdom” শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিউজে বলা হয়, ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিংয়ের আবির্ভাবের পূর্বে, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে প্রায় ৯০ শতাংশ পাখির প্রজাতি প্রকৃত অর্থে একগামী (Monogamous) ছিল। কিন্তু Paternity Testing এর মাধ্যমে দেখা যায় বিজ্ঞানীদের এই ধারণা সত্য নয় বরং ৯০ শতাংশ পাখি কেবল সামাজিকভাবেই মনোগ্যামাস। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে জিনগতভাবে কেবল ১০ শতাংশ পাখিই মনোগ্যামাস হয়ে থাকে।
Screenshot Source: National Science Foundation
কাক কি দ্বিতীয়বার জোড়া বাঁধে?
কাক নিয়ে করা গবেষণা ভিত্তিক ওয়েবসাইট Corvid Research কর্তৃক প্রকাশিত একটি ব্লগে বলা হয়, কাক সামাজিকভাবে মনোগ্যামাস হলেও সেক্সুয়ালি এবং জেনেটিক্যালি মনোগ্যামাস নয়। যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী কাকের জোড়া সাধারণত একসাথে থাকলেও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন কাককে এক সঙ্গীর সাথে থাকাকালীন সময়ে অঞ্চলভেদে অন্যান্য কাকের সাথেও মিলিত হতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বসবাসকারী কাকদের ক্ষেত্রে ৮২ শতাংশ শিশু কাকের জন্ম সঙ্গী পুরুষ কাকের সাথে মিলনের মাধ্যমে হলেও বাকি ১৮ শতাংশ শিশু কাক অন্য কাকের সাথে মিলনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে।
আবার আরেকটি পৃথক গবেষণায় দেখা যায়, ২৫ টি কাক পরিবারের মধ্যে ৩৬ শতাংশ কাক সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও অন্য কাকের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং জন্ম নেয়া ১৬ শতাংশ কাকের পিতা তাদের মায়ের স্থায়ী সঙ্গী নয়।
যাইহোক, এটা পরিষ্কার নয় যে স্ত্রী কাকেরা অন্য পুরুষ কাকের সাথে আসলেই সেচ্ছায় সঙ্গম করার চেষ্টা করেছিল কিনা। তবে বেশিরভাগ তথ্য থেকে বোঝা যায় যে অতিরিক্ত সঙ্গী কাকের উপর স্ত্রী কাকদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকেনা।
তবে যদি পুরুষ সঙ্গী কাকের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কোনো কারণে কমে যায়, তখন স্ত্রী কাক অন্য কাকের শুক্রাণু দ্বারা নিজের শুক্রাণু নিষিক্ত করে; যদিও এটা খুবই কম সমর্থিত।
Screenshot Source: Corvid Research
তাছাড়া, পাখি বিষয়ক ওয়েবসাইট Bird Fact কর্তৃক “Do Crows Mate For Life?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আর্টিকেলে বলা হয়, বেশিরভাগ কাকই সারাজীবনের জন্য একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এরা একটি সঙ্গী পাখির সাথে দৃঢ় বন্ধন তৈরি করে এবং বছরের পর বছর একসাথে থেকে বাচ্চাদের বড় করে। তবে,কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, তারা অন্যান্য পুরুষ কাকের সাথেও সঙ্গম করে।
Screenshot Source: Bird Fact
তাছাড়া পাখি বিষয়ক আরেক ওয়েবসাইট Bird Watching Buzz কর্তৃক প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়, যদিও কাক মনোগ্যামাস তারপরেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা নিজেদের সঙ্গীকে ত্যাগ করতে পারে।
এর কারণ হচ্ছে, জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য কাকদের প্রজনন করতে হয়। তাই, বাসায় থাকা অবস্থায় অথবা বাসায় থাকা বাচ্চারা সদ্য উড়তে শুরু করলে স্ত্রী কাক অন্যান্য পুরুষের সাথে সঙ্গম করে।
কিছু পাখিরা অবিশ্বাসের কারণেও অনেক সময় নিজেদের সঙ্গী পরিবর্তন করে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হয়ে নতুন সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার পরিবর্তে একসাথে থেকে একাধিক পাখির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। গড়ে একটি কাক তার জীবদ্দশায় তিন থেকে পাঁচটি অংশীদারের সাথে সঙ্গম করে।
Screenshot Source: Bird Watching Buzz
একই আর্টিকেলে উল্লেখ রয়েছে, যদিও কাক তাদের সঙ্গীর সাথে একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তৈরি করতে পারে, তবে তারা প্রকৃত অর্থে মনোগ্যামাস নয়। সঙ্গী কাক মারা গেলে বা অদৃশ্য হয়ে গেলে কাক নিজেদের নতুন সঙ্গী বেছে নেয়।
কখনও কখনও সঙ্গী কাক মারা গেলে বেঁচে থাকা কাক একই লিঙ্গের অন্য সঙ্গী খুঁজে বের করে, যাতে তারা বাচ্চা পাখিদের একসাথে বড় করতে পারে।
Screenshot Source: Bird Watching Buzz
অর্থাৎ সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ক্ষেত্রবিশেষে কাকেরাও একাধিকবার জোড়া বাঁধতে পারে।
মূলত, গেল কয়েক বছর ধরে কাক দ্বিতীয়বার জোড়া বাঁধেনা” শীর্ষক একটি দাবি একটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। কাক সাধারণ ভাবে জীবনে একবার জোড় বাঁধলেও নিজেদের সঙ্গী মারা গেলে বা হারিয়ে গেলে বিশেষ ক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় কিংবা একের অধিক বার জোড় বাঁধতে পারে। এমনকি কখনো কখনো এরা মূল সঙ্গীকে ছেড়ে না দিয়ে একই সাথে একের অধিক সঙ্গীর সাথেও মিলিত হয়।
সুতরাং, কাক তার জীবনকালে একের অধিক সঙ্গীর সাথে জোড়া বাঁধার তথ্যকে কাক দ্বিতীয়বার জোড়া বাঁধেনা শীর্ষক দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ইন্টারনেটে “মালাকুল ম-উত কখন আসবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা” শীর্ষক শিরোনামযুক্ত কিছু ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে মার্কিন পেশাদার কুস্তিগীর এডি গুয়েরেরো রেসলিং রিংয়ে থাকাকালীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রেসলিং ম্যাচে এডি গুয়েরেরো মারা গিয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০০৫ সালে মারা যাওয়া এই রেসলারের ২০০৪ সালের একটি ম্যাচের ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখানো রেসলিং ম্যাচটি কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে MusicwweFan নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে ২০২০ সালের ০২ এপ্রিল আপলোড হওয়া একটি ভিডিও খুঁজে পায় যার শেষের অংশ ছিল ভাইরাল হওয়া ক্লেইম পোস্টের অনুরূপ।
উক্ত ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে থাকা “#SmackDown MAY 20, 2004 TV-14” শব্দগুচ্ছ দ্বারা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ২০০৪ সালের ২০ মে কোনো একটি টিভি শোতে এই রেসলিং ম্যাচটি দেখানো হয়েছিল।
তাছাড়া, ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল Professional Wrestling Advertisement নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, এডি গুয়েরেরো স্ম্যাকডাউন ইভেন্টের সময় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার কারণে JBL – WWE ইউনিভার্স (জন ব্র্যাডশ লেফিল্ড) এডি গুয়েরেরো কে দ্রুত পরাজিত করে।
তবে WWE কর্তৃক ২০০৪ সালের ২০ মে এমন কোনো টেলিভিশন শো প্রকাশিত হয়েছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে prowrestling.fandom নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে Smackdown নামক একটি টিভি শো এর ব্যাপারে জানা যায় যেটির আয়োজক ছিলো World Wrestling Entertainment (WWE)।
উক্ত টেলিভিশন শো এর একটি পর্ব প্রকাশিত হয়েছিলো ২০০৪ সালের ২০ মে। উক্ত পর্বে এডি গুয়েরেরোর সেই ম্যাচটি দেখানো হয় যেখানে তাকে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে গুরুতর অসুস্থ হতে দেখা গিয়েছিল।
তবে Smackdown এর উক্ত এপিসোডে এডি গুয়েরেরো সত্যিই গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, ঐ ম্যাচে গুয়েরেরো হার্ট অ্যাটাক করেছিল। আবার কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয়, ঐ ম্যাচটিতে তিনি হার্ট অ্যাটাকের মাধ্যমে মারা গিয়েছেন।
Screenshot from Facebook
তবে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বহুজাতিক কন্টেন্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান whatculture এর ওয়েবসাইটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই পুরো ব্যাপারটিকেই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,”এটা সত্য যে, এত লোক ভিডিওগুলোতে মন্তব্য করেছে যে এডি আসলে রিংয়ে মারা গেছে, যা উদ্বেগজনক। ইন্টারনেটে কিছু মানুষ যা দেখে/পড়ে তা বিশ্বাস করে এবং তথ্যের দিকে তাকায় না। সেসব ব্যক্তিদের জন্য প্রশ্ন হচ্ছেঃ আপনি কি সত্যিই মনে করেন যে WWE একটি ম্যাচ চলাকালীন একজন কুস্তিগীর মারা যাওয়ার ফুটেজ প্রচার করবে? WWE শোষক হতে পারে কিন্তু তারা অতটাও নয়।”
একই তথ্য এসেছে ক্রীড়া বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট Sportskeeda এর এক প্রতিবেদনেও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐদিনের ম্যাচে অত্যধিক রক্তক্ষরণ এডি গুয়েরেরোকে দুর্বল করে দেয় তাই তিনি রিংয়ে পড়ে যান। তবে, এটা ছিল একেবারেই সাজানো নাটক। প্রো রেসলিং কিংবদন্তি এডি গুয়েরেরোর মারা যাওয়ার সাথে রেসলিং রিংয়ে পতনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। উপরন্তু, এটি যদি হার্ট অ্যাটাক হতো, তাহলে WWE সেগমেন্টটি সম্প্রচার চালিয়ে যেতে পারত না।
যাইহোক, সেইদিনের ম্যাচে এডি গুয়েরেরো সত্যিই হার্ট অ্যাটাকের স্বীকার হয়েছিল নাকি সেটা WWE এর সাজানো স্ক্রিপ্ট ছিলো সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও সেদিন তার মারা যাওয়ার খবরটি যে শতভাগ মিথ্যা সে ব্যাপারে নিশ্চিত রিউমর স্ক্যানার টিম।
রেসলিং বিষয়ক ওয়েবসাইট ATLETIFO WRESTLING এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এডি গুয়েরেরো WWE-তে রিংয়ে মারা যাননি বরং সাবেক এই ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন ২০০৫ সালের ১৩ নভেম্বর মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসের ম্যারিয়ট হোটেল সিটি সেন্টারে তার হোটেল কক্ষে মারা যান।
givemesport নামের একটি ক্রীড়া বিষয়ক ওয়েবসাইটে বলা হয়, ২০০৫ সালের ১৩ নভেম্বর গুয়েরেরো হৃদরোগের জন্য আকস্মিক মৃতুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ভাতিজা তাকে একটি হোটেলে খুঁজে পান। তবে মৃত্যুর পূর্বে তার দেহে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ ছিলনা। এমনকি সে তার মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন আগেও একটি একক রেসলিং প্রতিযোগিতায় মিস্টার কেনেডিকে পরাজিত করেছিলেন।
তাছাড়া এডি গুয়েরেরোর মৃত্যুর ব্যাপারে Vice New Zealand পেইজে তার স্ত্রী এবং ভাতিজার দেওয়া একটি সাক্ষাতকার খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানেও গুয়েরেরোর মৃত্যু হোটেল কক্ষে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার ভাতিজা চ্যাভো গুয়েরেরো জুনিয়র (Chavo Guerrero Jr.)।
মূলত, ২০০৪ সালে রেসলার এডি গুয়েরেরোর একটি রেসলিং ম্যাচের ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ম্যাচে রিংয়ে থাকাকালীনই তার মৃত্যু হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। এডি গুয়েরেরো এরও প্রায় বছরখানেক পর ২০০৫ সালে মারা যান।
সুতরাং, রেসলার এডি গুয়েরেরো রিংয়ে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘আল্লাহুআকবার এর স্লোগানে গোটা বিশ্ব কাপিয়ে দেয়া সেই মুসকান পরিক্ষায় গোটা রাজ্যে প্রথম হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতে হিজাব আন্দোলনে তাকবীর দিয়ে আলোচনায় আসা মুসকানের কর্ণাটক রাজ্যে প্রথম হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কর্ণাটক রাজ্যে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন তাবাসসুম শাইক নামে ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কর্ণাটকের দ্বাদশের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক থেকে তাবাসসুম শাইক ৬০০ নাম্বারের মধ্যে ৫৯৩, বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনন্যা কেএ ৬০০ এর মধ্যে ৬০০ পেয়ে ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএম কৌশিক ও সুরভী এস ৬০০ এর মধ্যে ৫৯৬ নাম্বার পেয়ে যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কর্ণাটকের উক্ত পরীক্ষায় বিজ্ঞান, বাণিজ্য বিভাগ এবং মানবিক বিভাগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিক্ষার্থী মেধা তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। এই মেধা তালিকায় মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন তাবাসসুম শাইক।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ কর্ণাটকে পরীক্ষায় গোটা রাজ্যে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন তাবাসসুম শাইক। তবে এই তাবাসসুম শাইককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসকান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
নাম ও ছবির বিভ্রান্তি
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে কর্ণাটকে পরীক্ষায় গোটা রাজ্যে প্রথম হওয়া তাবাসসুমকে তাবাসসুম মুসকান’ নামে পরিচয় করিয়ে দিতে শোনা যায়। পাশাপাশি দুইটি ছবিও ব্যবহার করতে দেখা যায়।
তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম ও মুসকান দুইজন আলাদা আলাদা ব্যক্তি এবং তাবাসসুম দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও তাবাসসুমের নয়।
Image Collage: Rumor Scanner
প্রকৃতপক্ষে ছবিটি কর্ণাটকের মুসকান খান নামে ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর। প্রসঙ্গত, তিনিও হিজাব আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবির শিক্ষার্থীটির নাম মুসকান খান৷ তিনি কর্ণাটকের মান্দ্যাইয়া জেলার পিইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই শিক্ষার্থীর আরও কিছু ছবি দেখুন এখানে, এখানে।
Screenshot: Zee News
অপরদিকে তাবাসসুম শাইক ছিলেন কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর Nagarathnamma Meda Kasturirangan Setty Rashtreeya Vidyalaya (NMKRV) College for Women এর শিক্ষার্থী।
Screenshot: Indian Express
অর্থাৎ, তাবাসসুমের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর।
মূলত, কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনে অংশ নেওয়া মুসকান খান এবং তাবাসসুম শাইক দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাবাসসুমের ছবির সাথে মুসকানের ছবিও তাবাসসুম দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ভারতের কর্ণাটকের হিজাব আন্দোলনের তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হননি বরং তিনি নিজ প্রদেশ কর্ণাটকে মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
প্রসঙ্গত, একই সময়ে বাংলাদেশি একাধিক গণমাধ্যমে তাবাসসুম শাইক দাবিতে মুসকানের ছবি প্রচার করা হয়েছিল। এ সম্পর্কিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে।
২০২০ সালে একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ভিডিওটি জাকির নায়েকের গাড়িবহরের ভিডিও নয় বরং, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ২০১৫ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্ট যাত্রার গাড়িবহরের ভিডিও।
ভিডিওটির স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Temidayo London নামের ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ২১ আগস্টের একটি পোস্টে আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিও থেকে জানা যায়, ভিডিওটি রানি এলিজাবেথের এয়ারপোর্ট যাত্রার সময় ধারণকৃত।
পরবর্তীতে, রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, News Naira নামের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালে প্রকাশিত “8 Most Protected People In The World” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। নিরাপত্তারক্ষীর বিচারে শীর্ষ ৮ বিশ্বনেতারা একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকার ৪ নম্বরে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিকিউরিটির স্থিরচিত্রের মাঝেও আলোচ্য ভিডিওর কি-ফ্রেমের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের গাড়িবহরের সাথে আলোচ্য ভিডিওর গাড়ি বহরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মিল খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
Rumor Scanner Collage
তাছাড়া, বার্লিনের অফিশিয়াল সাইট থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়, ২০১৫ সালের ২৫ জুন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে যাত্রা করেছিলেন।
মূলত, সম্প্রতি জাকির নায়েকের গাড়িবহর দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ২০১৫ সালের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে যাত্রাকালীন তার গাড়িবহরের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে ওমানে জাকির নায়েক গ্রেপ্তার হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেটি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের গাড়িবহরের একটি ভিডিওকে জাকির নায়েকের গাড়িবহর দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ন মিথ্যা।
বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’ গত ০৪ মে তাদের ‘এক টাকায় আহার’ নামক প্রজেক্টের ফেসবুকে পেজ থেকে রাজশাহীর একটি স্থানে খাবার বিতরণ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করে।
পোস্টের (আর্কাইভ) ক্যাপশনে এ সংক্রান্ত তথ্যে উক্ত স্থানের নাম “মসজিদ পট্টি, চন্দ্রিমা থানা, রাজশাহী” বলে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot source: Facebook
কিন্তু পোস্টটির কমেন্ট এবং ফেসবুকে বেশকিছু স্বতন্ত্র পোস্টে মসজিদ পট্টি নামে রাজশাহীতে কোনো এলাকা না থাকা শীর্ষক দাবি ছড়িয়ে পড়েছে।
এক টাকায় আহার’ এর পোস্টে উক্ত দাবিতে কিছু কমেন্ট দেখুন –
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীতে ‘মসজিদ পট্টি’ নামক স্থান না থাকার দাবিটি সঠিক নয় বরং রাজশাহীতে চন্দ্রিমা থানাধীন উক্ত নামে একটি স্থান রয়েছে যা লোকেমুখে পরিচিতি থাকলেও সাইনবোর্ড বা কোনো নেমপ্লেটে এই নাম নেই যা স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষকসহ একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রাজশাহীতে চন্দ্রিমা নামে কোনো থানা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া থানা ও পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের অংশ নিয়ে চন্দ্রিমা থানাগঠিত হয়।
তবে একাধিক মাধ্যমে (গুগল সার্চ, ফেসবুকের সার্চ টুলস, রাজশাহী সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপ) অনুসন্ধান করেও রাজশাহীতে মসজিদ পট্টি নামে কোনো স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গুগলের ম্যাপ লোকেশন ব্যবহার করে ‘চন্দ্রিমা থানা মসজিদ পট্টি‘ লিখে সার্চ করলে সার্চের ফলাফলেও চন্দ্রিমা থানার অধীনে ‘মসজিদ পট্টি’ নামে কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে উক্ত সার্চ রেজাল্টে ‘ছোটবনগ্রাম’ নামক একটি এলাকার বেশকিছু স্থাপনার (যেমন ছোটবনগ্রাম উত্তর পাড়া জামে মসজিদ, ছোট বনগ্রাম পূর্ব পাড়া বড় জামে মসজিদ) লোকেশন দেখানো হয়।
Screenshot source: Google Map
ওপেন সোর্সে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য না পেয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে গত ০৫ই মে সকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করেন, উক্ত স্থানের এমন নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে গুগল ম্যাপ লোকেশন চাওয়ার প্রেক্ষিতে তারা রিউমর স্ক্যানারকে নিম্নোক্ত স্ক্রিনশটটি পাঠান।
Screenshot source: Bidyanondo Foundation
বিঃদ্রঃ স্ক্রিনশটটির উপরে লগইন আইডির আইকন মুছে বাকিসব কিছু অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
স্ক্রিনশটটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রিউমর স্ক্যানার টিম গুগল ম্যাপের লোকেশনে ‘চন্দ্রিমা থানা মসজিদ পট্টি’ লিখে সার্চ করার পর ‘ছোটবনগ্রাম’ নামক যে স্থান সম্পর্কে জেনেছিল সেই একই স্থানই বিদ্যানন্দের পাঠানো স্ক্রিনশটে রয়েছে।
অর্থাৎ, বিদ্যানন্দেরও দাবি ‘ছোটবনগ্রাম’ নামক স্থানেই মসজিদ পট্টি রয়েছে।
এক টাকার আহার এর ফেসবুক পেজের পাশাপাশি একই প্রজেক্টের অফিশিয়াল গ্রুপেও একই পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। উক্ত পোস্টে একই দিন (০৫ই মে) দুপুরে গ্রুপের অন্যতম এডমিন রেশমা আহমেদ এক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার উত্তরে মসজিদ পট্টির ঠিকানা লিখেন, “চন্দ্রিমা, ছোটবোন গ্রাম পূর্ব পাড়া বড় মসজিদ এর পূর্ব দিকে রাস্তায় একটি বড় বস্তি এলাকা রয়েছে সেটা মসজিদ পট্টি নামে ডাকা হয়।”
লক্ষ্যণীয় যে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে পাওয়া লোকেশন, বিদ্যানন্দের পাঠানো লোকেশন স্ক্রিনশট এবং রেশমা আহমেদের করা কমেন্ট একই স্থানই নির্দেশ করছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফেসবুকে প্রকাশিত দুইটি ভিডিও নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা রকি ইসলামের একই দিন (০৫ই মে) দুপুরে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে (আর্কাইভ) মসজিদ পট্টি এলাকার বিষয়টি উঠে আসে।
তিনি চন্দ্রিমা থানা থেকে মসজিদ পট্টি পর্যন্ত যাওয়ার পথ ভিডিও করে দেখান এবং স্থানীয় দুইজন ব্যক্তির সাথে কথা বলেন। তারা জানান, উক্ত এলাকার নাম মসজিদ পট্টি এবং এক টাকায় আহার কর্তৃক খাবার বিতরণের তথ্যটিও সত্য বলে জানান।
Screenshot source: Facebook
পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’র রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার রিমন রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে এক দোকানদার এলাকাটি মসজিদপাড়া বা মসজিদ পট্টি নামে পরিচিত বলে জানান। অন্য এক ব্যক্তি এলাকাটিকে চৌধুরীপাড়া মসজিদপট্টি নামে ডাকা হয় বলে জানান।
Screenshot source: Facebook
একই দিন (০৫ই মে) বিকেলে ‘আজকের, পত্রিকা’য় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “নগরীর চন্দ্রিমা থানার ছোটবনগ্রাম মোড় থেকে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলেই ছোটবনগ্রাম পূর্বপাড়া। এই মোড় থেকে কিছুটা পূর্বে এগিয়ে গেলেই রয়েছে একটি বস্তি। এই স্থানটির নামই মসজিদপট্টি। এটি সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। এলাকাটিকে কেউ চৌধুরীপাড়া মসজিদপট্টি আবার কেউ ছোটবনগ্রাম পূর্বপাড়া মসজিদপট্টি হিসেবে চেনেন।”
Screenshot source: Ajker Patrika
স্থানটির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম ফের গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হয়।
ছোটবনগ্রাম’ নামক স্থানটির স্ট্রিটভিউ পদ্ধতি ব্যবহার করে উক্ত ‘ছোটবনগ্রাম পূর্বপাড়া’ নামক স্থানটিতে কোনো সাইনবোর্ড বা নামপ্লেটে ‘মসজিদ পট্টি’ নাম রয়েছে কিনা সেটি খুঁজে দেখি আমরা।
তবে উক্ত রাস্তার একাধিক দোকানের সাইনবোর্ড এবং বাসার নামফলকে খুঁজেও ‘মসজিদ পট্টি’ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, উক্ত স্থানের স্ট্রিট ভিউটি সর্বশেষ ২০১৫ সালে আপডেট করা হয়। তাই উক্ত স্থানে পরবর্তী আট বছরে নতুন স্থাপনা এবং তাদের নামফলকের বিষয়ে কোনো তথ্য আপডেট হয়নি।
Screenshot source: Google Map
পরবর্তীতে উক্ত রাস্তার স্ট্রিট ভিউ’তে ‘স্বপন ইলেকট্রিক এন্ড মাল্টিমিডিয়া জোন‘ নামক একটি দোকান এবং দোকানটির সাইনবোর্ড পাওয়া যায়। সাইনবোর্ডে দোকানটির অবস্থান ‘ছোটবনগ্রাম পূর্বপাড়া, বড়মসজিদের মোড়, বোয়ালিয়া, রাজশাহী’ বলে উল্লেখ রয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম দোকানটির সাইনবোর্ডে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে দোকানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো: স্বপন সরকারের সাথে আলাপ করে৷ তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এলাকাটিকে অনেকে মসজিদ পট্টি নামেও ডাকে। তবে সাইনবোর্ডে ইউজ (ব্যবহার) হয় না।”
উক্ত সাইনবোর্ডে স্থাপনাটির অবস্থান ‘ছোটবনগ্রাম পূর্বপাড়া-বড় মসজিদ সংলগ্ন, সপুরা, রাজশাহী’ বলে উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot source: Google Map
রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত সাইনবোর্ডে থাকা ফোন নাম্বারটি যাচাই করে দেখতে পায়, এটি হাফেজ আবদুল মজিদ নামক এক ব্যক্তির নাম্বার।
পরবর্তীতে জনাব মজিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বর্তমানে উক্ত মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্ত নন বলে জানান। তবে তিনি একই এলাকার উত্তর পাড়ায় ‘দারুণ নাজাত মাদ্রাসা’ নামে আরেকটি মাদ্রাসায় দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।
হাফেজ আবদুল মজিদের কাছে আলোচ্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ” মসজিদের কিছু জায়গা আছে, ওখানে ওই এলাকায় যারা থাকে তাদের কাছে মসজিদ পট্টি হিসেবে নামটি পরিচিত। এমনিতে সাইনবোর্ড বা ব্যানারে কেউ ওই নাম ব্যবহার করে না।”
অর্থাৎ, স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিই বলছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকাটি মসজিদ পট্টি নামেও পরিচিত।
মূলত, গত ০৪ মে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃক রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার মসজিদ পট্টি এলাকায় খাবার বিতরণ সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়ার পর কমেন্ট এবং বেশকিছু স্বতন্ত্র পোস্টে মসজিদ পট্টি নামে রাজশাহীতে কোনো এলাকা না থাকার একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যানন্দ রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানা এলাকার ছোটবনগ্রাম পূর্ব পাড়া বড় মসজিদ এর পূর্ব দিকে রাস্তায় খাবার বিতরণ করেছে। উক্ত স্থানটি স্থানীয়দের কাছে মসজিদ পট্টি নামে পরিচিত বলে মাদ্রাসার শিক্ষকসহ একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বে কয়েক ঘন্টা আগে পুড়ে যাওয়া কাপড় থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন অলংকার তৈরি করেছে দাবিতে ভিন্ন একজনের তৈরি পুরোনো অলংকারের ছবি প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের খাবার বিতরণ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে ‘মসজিদ পট্টি’ নামক স্থান না থাকা শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাপানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং জাপানে পূর্বে সংঘটিত ভূমিকম্পের পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই ১
Screenshot collage: Rumor Scanner
জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ইনকিলাব, বৈশাখী টিভি। কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ছবিটি শুরুতে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম euro news এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ করা হয় AP এর তোলা ছবিটি ২০২২ সালের ১৬ মার্চ জাপানের ফুকুশিমায় ভূমিকম্পের ঘটনার পরের দিনের দৃশ্য।
পরবর্তীতে মার্কিন সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৭ মার্চ প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot source: AP
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ২
Screenshot source: Daily Bangladesh
জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি বাংলাদেশ। কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ছবিটি শুরুতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম NBC news এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ করা হয় AP কর্তৃক ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল তোলা ছবিটি জাপানের মাশিকিতে ভূমিকম্পের ঘটনার পরের দিনের।
পরবর্তীতে মার্কিন সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot source: AP
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত ০৫ মে জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কতিপয় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জাপানের পূর্বের ভূমিকম্পের ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সম্প্রতি জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘আম খাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানীয় পান করবেন না’ শীর্ষক শিরোনামে কিছু পোস্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের চণ্ডীগড়ে আম খাওয়ার পরপরই কোল্ড ড্রিংক (ঠান্ডা পানীয়) পান করে কিছু পর্যটক মারা যান।
কী দাবি করা হচ্ছে?
উক্ত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে,“কয়েকজন পর্যটক ভারতের চণ্ডীগড়ে গিয়ে আম খাওয়ার পরপরই কোল্ড ড্রিংক পান করেছিলেন এবং তারা সবাই অসুস্থ এবং অজ্ঞান বোধ করতে শুরু করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের সবাইকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আম খাওয়ার পর কোনো কোল্ড ড্রিংক বা কোমল পানীয় পান করা উচিত নয়। আমের সাইট্রিক অ্যাসিড এবং কোল্ড ড্রিংকের জৈব অ্যাসিড একত্রিত হয়ে বিষ তৈরি করে।”
একই দাবি ফেসবুকের মেসেঞ্জারেও ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot source: Messenger
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় পানে মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয় বরং উক্ত দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় পান করা যাবে না শীর্ষক কোনো পরামর্শ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় পান করলে মৃত্যু হতে পারে শীর্ষক ঘটনাটি ভারতের চন্ডীগড়ের দাবিতে প্রচারের সূত্রে তথ্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ এবং ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করে উক্ত দাবিটির কোনো সত্যতা ভারতের গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো খবর অনুসন্ধানে মেলেনি।
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, আমে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড এবং ঠান্ডা পানীয়তে থাকা জৈব এসিড মিলিত হয়ে বিষ তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘Live Strong’ কর্তৃক ‘A List of Fruits With Low Citrus Levels’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একটি আমের pH মান সচরাচর ৫.৮ থেকে ৬ এর মধ্যে থাকে, যা তুলনামুলক বেশি উল্লেখ করা হলেও ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে Frontiers in Plant Science জার্নালে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে বলা হয়, আমের মধ্যে জৈব এসিডের পরিমাণ খুবই কম। এসব জৈব এসিডের মধ্যে রয়েছে অক্সালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড — কিন্তু তাদের আণবিক ওজন কম, মানে আমে খুব বেশি সাইট্রিক এসিড নেই।”
Screenshot Source: Live Strong
অপরদিকে, ‘Live Strong’ কর্তৃক প্রকাশিত অন্য আরেকটি আর্টিকেলে বলে হয়, কোমল পানীয়গুলোতে সচরাচর যে তিনটি জৈব এসিড ব্যাবহৃত হয় সেগুলো হচ্ছে সাইট্রিক এসিড, কার্বনিক এসিড এবং ফসফরিক এসিড।
Screenshot Source: Live Strong
লিভ স্ট্রং কর্তৃক প্রকাশিত উপরোক্ত দুইটি আর্টিকেল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আম এবং কোমল পানীয়, এই দুইটি খাবারেই সাইট্রিক এসিডসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব এসিডই রয়েছে।
অর্থাৎ, সাইট্রিক এবং জৈব এসিড একত্রিত হওয়ার জন্য আম এবং কোমল পানীয়কে একত্র করারই প্রয়োজন পড়ে না। আমে যেমন এই দুই উপাদান আছে তেমনি কোমল পানীয়তেও উক্ত দুই উপাদানের অস্তিত্ব রয়েছে।
তাছাড়া বিস্তর অনুসন্ধান করেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমন কোনো গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি যেখানে বলা হয়েছে যে আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় কিংবা কোমল পানীয় পান করলে মৃত্যু হতে পারে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে ভারতের এ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান Dr Priyanka Rohatgi জানিয়েছেন, “এই ধরনের বার্তা গত দুই-তিন বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে এবং সেগুলির কোনও সত্যতা নেই।”
তাছাড়া, ম্যাক্স হাসপাতালের সিনিয়র গ্যাস্ট্রো এনটারোলজিস্ট Dr Ashwani Setya বলেছেন,“সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই দাবিটি মোটেও সত্য নয়, এটি কেবল মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে।”
“কিছু ভারতীয় পর্যটক চীনে গিয়ে আম খাওয়ার পর কোকাকোলা খেয়ে মারা গিয়েছে” দাবিতে সমজাতীয় আরেকটি দাবি ২০১৭ সালে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন সময় কোকোকোলা ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ দাবিটিকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে।
মূলত, সম্প্রতি ‘আম খাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানীয় পান করবেন না’ শীর্ষক শিরোনামে কিছু পোস্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয় ভারতের চণ্ডীগড়ে আম খাওয়ার পরপরই কোল্ড ড্রিংক পান করে কিছু পর্যটক মারা যান। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, উক্ত দাবিটি বানোয়াট। ভারতে এমন ঘটেনি। তাছাড়া, আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় পান করা যাবে না শীর্ষক কোনো পরামর্শ বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত নয়।
সুতরাং, আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় কিংবা কোমল পানীয় পান করলে মৃত্যু হওয়া এবং আম খাওয়ার পর ঠান্ডা পানীয় পান করা যাবে না শীর্ষক ডাক্তারের পরামর্শের দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Live Strong: A List of Fruits With Low Citrus Levels
Frontiers: Chemical Composition of Mango (Mangifera indica L.) Fruit: Nutritional and Phytochemical Compounds