Home Blog Page 585

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুর পাড়ে ৩২ টি বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলার সংবাদটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি ‘পুকুর পাড়ে ৩২ বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার মেরে ফেললো স্থানীয়রা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রতিবেদন গণমাধ্যম বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমের ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন চ্যানেল২৪ (আর্কাইভ), আরটিভি (আর্কাইভ), ভোরের পাতা (আর্কাইভ), ডিবিসি নিউজ (আর্কাইভ)। 

গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন ডিবিসি নিউজ (আর্কাইভ), যমুনা টিভি (আর্কাইভ)। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল২৪, আরটিভি, ভোরের পাতা, ঢাকা পোস্ট, সমকাল, বৈশাখী টিভি, সময়ের আলো, দৈনিক আমাদের সময়, যুগান্তর, জাগো নিউজ, বাংলাদেশ টুডে, আমাদের সময়, একুশে সংবাদ, বিডি২৪লাইভ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় কর্তৃক পুকুর পাড়ে ৩২ টি বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেখানে মারা যাওয়া সাপগুলোর মধ্যে একটি রাসেল ভাইপার এবং বাকি সাপের বাচ্চাগুলো নির্বিষ ঢোঁড়া সাপের বাচ্চা।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে বণ্যপ্রাণী, সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডীপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের ফেসবুক গ্রুপে গত ৩ মে একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Deep Ecology and Snake Conservation Foundation 

প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহাদাত হোসেন সোহান ফেসবুক পোস্টটিতে জানান, 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গায় ৩২টি বাচ্চাসহ বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলার ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে Deep Ecology and Snake Conservation Foundation এর বিশেষজ্ঞ দল সংযুক্ত ছবি, ভিডিও পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয় যে প্রচারিত সংবাদ অসত্য। 

প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থলে ১টি বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ ( Russell’s viper) এবং ৩১ টি নির্বিষ ঢোঁড়া (Checkered keelback ) সাপের বাচ্চা গ্রামবাসীর হাতে মারা পড়ে। অর্থাৎ প্রচারিত ৩২টি চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া যাওয়ার সংবাদটি সঠিক নয়।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে রাসেল ভাইপার ও ঢোঁড়া সাপের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে রিউমর স্ক্যানার থেকে শাহাদাত হোসেন সোহানের সাথে যোগাযোগ করে। 

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, দেহের আকার এবং রঙ থেকে সাপ দুইটিকে পরিস্কারভাবে আলাদা করে চেনা যায়। এসময় তিনি রাসেল ভাইপার ও ঢোঁড়া সাপের বাচ্চার মধ্যে পার্থক্যসূচক কিছু ছবিও রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন৷ 

Image Collage: Rumor Scanner 

তার সরবরাহকৃত এসব ছবির সঙ্গে প্রচারিত সাপের বাচ্চার ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

রাসেল ভাইপার ও ঢোঁড়া সাপ একসাথে থাকতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এখানে কয়েকটি বিষয় আছে। যেমন, একসাথে না কাছাকাছি পাওয়া গেছে এটা একটা বিষয়। ঢোঁড়া সাপ পানির আশেপাশেই বাসা করে। সব সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলে, রাসেল ভাইপার মানুষের উপস্থিতিতে আশ্রয়ের জন্য আড়াল হতে পারে এবং কাকতালীয়ভাবে সেখানে ঢোঁড়া সাপের বাচ্চার উপস্থিতি পাওয়া যায় এবং একসাথে ৪০-৫০টা ঢোঁড়া সাপের বাচ্চা খুবই কমন ব্যাপার। অপরদিকে রাসেলস ভাইপার ডিম পারে না, সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। প্রসবের সময় বাচ্চা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। ফলে রাসেল ভাইপারের  বাচ্চা একসাথে থাকার সম্ভাবনা কম। সর্বোপরি, ডীপ ইকোলজি নিশ্চয়তা দিচ্ছে এই ছবির বাচ্চাসাপ গুলো ঢোঁড়া সাপ।

পাশাপাশি সাপ বিষয়ক সচেতনতা নিয়ে কাজ করা স্নেক অ্যাওয়ারনেস নামে ফেসবুক গ্রুপে একই বিষয়ে আরেকটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Snake Awareness

গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ও ভেনম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট রফিক ইসলাম এই পোস্টটিতে লিখেন, ছবিতে প্রাপ্ত বয়ষ্ক সাপটি বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ এটা সত্য, তবে বাচ্চাগুলো সম্পূর্ণ নির্বিষ জলঢোঁড়া (Checkered Keelback) এর বাচ্চা। এইগুলোর দংশনে মৃত্যু ঝুঁকি নেই, যেগুলোকে বিষধর বলে মানুষের কাছে পরিচয় করানো হচ্ছে।

এছাড়া রিউমর স্ক্যানার থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে তথ্যগুলো নিশ্চিত করে বলেন, এখন ঢোঁড়া সাপের বাচ্চা পাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ চন্দ্রোবোড়া সাপের বাচ্চা দেয়ার সময় এখনই নয়, সামনে আসছে। তাই বলা যাচ্ছে, এখন রাসেল ভাইপারের বাচ্চা পাওয়ার বিষয়টির সম্ভাবনা নেই, অস্বাভাবিক। 

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.  মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও  সাপের বাচ্চাগুলোকে Checkered Keelback (ঢোঁড়া সাপ) এর বলে নিশ্চিত করেছেন।

গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তার বক্তব্য প্রসঙ্গে যা জানা যাচ্ছে 

গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদগুলোতে  চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় কর্তৃক সাপ মেরে ফেলার ঘটনায় সাপগুলোর পরিচয়ের ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্যের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এই বিষয়ে আমাকে একজন ফোন দিয়েছিল। উনি স্থানীয় একজন সাংবাদিক। তিনি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে রাসেল ভাইপার সাপের তিনটি ছবি পাঠিয়ে জানতে চান এটি কোন প্রজাতির। আমি তাকে এটি রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করি। 

পরবর্তীতে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় কর্তৃক মেরে ফেলা সাপগুলোর ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, সেখানে মারা যাওয়া বড় সাপটি রাসেল ভাইপার। ছোটগুলোর ছবি স্পষ্ট নয়, তবে বড়টির সাথে যদি কোনটার মিল থাকে দেখতে, তাহলে ওগুলো রাসেল ভাইপারের বাচ্চা হতে পারে। 

অর্থাৎ তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় কর্তৃক মেরে ফেলা সাপগুলোর মধ্যে কেবল একটি সাপকে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করে স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার এই বক্তব্যকেই সবগুলো সাপ রাসেল ভাইপার দাবিতে প্রচার করা হয়। 

মূলত, গত পহেলা মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের একটি পুকুরে ৩২ টি বাচ্চা সাপসহ একটি বড় সাপের দেখা মিললে পুকুর মালিক ও স্থানীয়রা সাপগুলোকে মেরে ফেলে। এ ঘটনায় মেরে ফেলা সাপগুলোর মধ্যে বড় সাপটিকে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ও বাচ্চা সাপগুলোকে রাসেল ভাইপারের বাচ্চা হিসেবে দাবি করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বড় সাপটি রাসেল ভাইপার হলেও মেরে ফেলা সাপের বাচ্চাগুলো রাসেল ভাইপারের ছিল না। প্রকৃতপক্ষে সাপের বাচ্চাগুলো ছিল Checkered Keelback ( ঢোঁড়া সাপ)। অপরদিকে গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদগুলোতে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের যে কর্মকর্তার উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে, তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে জানান যে, বড় সাপটি রাসেল ভাইপারের। তবে ছোটগুলোর ছবি স্পষ্ট না হওয়ায় সেগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.  মনিরুল এইচ খান সাপের বাচ্চাগুলোকে Checkered Keelback ( ঢোঁড়া সাপ) এর বলেই নিশ্চিত করেছেন।

সুতরাং, চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় কর্তৃক পুকুর পাড়ে ৩২ টি বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরে যুগান্তরে ভুল ছবি প্রচার

সম্প্রতি, ঢাকার ধূপখোলাবাজারে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রচারিত হয়েছে।

দৈনিক যুগান্তর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন যুগান্তর। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুরান  ঢাকার ধূপখোলা বাজারে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের মৃত্যু নিয়ে যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটি মেহেদী হাসানের নয় বরং এটি গত ২৯ এপ্রিল মারা যাওয়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাজু আহমেদের ছবি।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে মেহেদী হাসানের দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মূল উৎস খুঁজে পাওয়া যায়। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে ছবিটিকে মেহেদী হাসানের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, সেটি মূলত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু আহম্মেদের। 

image collage: Rumor Scanner 

অপরদিকে অনুসন্ধানে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মৃত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Mahedi Hasan Shawon Facebook Profile 

অ্যাকাউন্টটির বিভিন্ন পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনিই গত ৬ মে (শনিবার) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল গ্রামের বাড়ী পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় ফিরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহম্মেদ। পরবর্তীতে তার সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় তার পিতা অভিযোগ করেন, রাজুকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।

Screenshot: Dainik Mukti

অর্থাৎ গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মৃত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান এর ছবি দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে, সেটি রাজু আহম্মেদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক শিক্ষার্থীর, যার গত ২৯ এপ্রিল অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

মূলত, গত পহেলা মে রাজধানীর পুরান ঢাকার ধুপখোলা বাজারে গ্যাস লাইন মেরামতের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে জবি শিক্ষার্থী শাওনসহ ৮ জন দগ্ধ হন। পরবর্তীতে গত ৬ মে সকালে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনায় দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি মেহেদী হাসানের নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি গত ২৯ এপ্রিল মারা যাওয়া জবির ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রাজু আহম্মেদের।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ঘটনায় গণমাধ্যমে ভুল ছবি প্রকাশ করা হলে বিষয়গুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, গত ২৯ মারা যাওয়া জবি শিক্ষার্থী রাজু আহম্মেদের ছবিকে আজ ০৬ মে মারা যাওয়া জবি শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের ছবি দাবি করে দৈনিক যুগান্তরে প্রচারিত হয়; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ড. ইউনূস বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিদ্যানন্দের কাছে অর্থ সহায়তা দেননি

0

সম্প্রতি নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে ১০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Facebook 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে ১০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য সূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ১০ এপ্রিল Faces of Bangladesh নামের একটি ফেসবুক পেজে উক্ত দাবিতে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ শীর্ষক শিরোনামে ‘বঙ্গবাজার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসলেন ড. ইউনূস’ এবং ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে ১০ কোটি টাকা সহায়তা দিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত একটি ডিজিটাল ব্যানার পোস্ট করা হয়। উক্ত ব্যানারটিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের লোগো এবং নাম যুক্ত করা হয়েছে। 

Screenshot: Facebook

অনুসন্ধানের শুরুতে, প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যমে উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, ড. ইউনূসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, বিষয়টির অধিকতর সত্যতা নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, ‘এই ধরনের কোন অনুদান বিদ্যানন্দ গ্রহন করে নি। এটি একটি ভুল তথ্য। ধন্যবাদ।’

এছাড়া বিষয়টি মিথ্যা বলে নিশ্চিত করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আমরা বঙ্গবাজারের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছি। ১ কোটি ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও এক কোটি দেওয়ার জন্য যাচাই বাছাই চলছে। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিনিদ ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে পড়লে  বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কাছে ১০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

রুয়ান্ডায় সাম্প্রতিক বন্যার খবরে গণমাধ্যমে পুরোনো ছবিতে সয়লাব

সম্প্রতি, রুয়ান্ডায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ১০ টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন কালের কণ্ঠ, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, বিবার্তা২৪, ইত্তেফাক, সংবাদ প্রকাশ, জাগো নিউজ২৪, ডেইলি অবজারভার, রাইজিং বিডি, বাংলা২৪ লাইভ নিউজপেপার, বৈশাখী টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ভোরের ডাক, রিদ্মিক নিউজ, ডেইলি নিউ নেশান, জনবাণী, দীপ্ত টিভি (ইউটিউব), ডিবিসি নিউজ (ইউটিউব)। 

উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রুয়ান্ডায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পূর্বে রুয়ান্ডাসহ ভিন্ন ভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের পুরোনো ছবিকে রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ছবি যাচাই ১

Screenshot source: Desh Rupantor

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, বিবার্তা২৪, ডিবিসি নিউজ (ইউটিউব), দীপ্ত টিভি (ইউটিউব)।

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Rueters এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালে ০৬ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। একই বছরের ০৩ মে কেনিয়ার এনজোয়িআ (Nzoia) নদীর কাছ থেকে সে সময়ের বন্যার ঘটনার এই ছবিটি তুলেছেন থমাস মুকোয়া।

Screenshot source: Reuters

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডায় সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ২ 

Screenshot source: Ittefaq 

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ইত্তেফাক, সংবাদ প্রকাশ

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Rueters এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই প্রতিবেদনে (২০২০ সালে ০৬ মে প্রকাশিত) এই ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়। এটিও একই বছরের ০৩ মে কেনিয়ার বন্যার ঘটনার ছবি।

Screenshot source: Reuters

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও রুয়ান্ডায় সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ৩ 

Screenshot source: Jagonews24

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে জাগো নিউজ২৪

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে স্প্যানিশ সংবাদ সংস্থা Europe press এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়,  এটি ২০২০ সালের মে মাসে রুয়ান্ডার বন্যার ঘটনার ছবি। 

Screenshot source: Europe press

আরও অনুসন্ধান করে, ছবি শেয়ারিং ওয়েবসাইট alamy তেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পাতা থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০২০ সালের ০৮ মে রুয়ান্ডার বন্যার সময়ে তোলা। 

Screenshot source: Alamy

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডায় সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ৪

Screenshot source: Daily Observer

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি অবজারভার, রাইজিং বিডি

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ০৩ মে রুয়ান্ডার বন্যার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে বলে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়৷  

Screenshot source: NDTV

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে, ইমেজ শেয়ারিং ওয়েবসাইট Unsplash এ ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বিস্তার বিবরণী থেকে জানা যায়, জার্মানীর Neustadt am Rübenberge শহর থেকে ছবিটি তুলেছেন Nazrin Babashova। 

Screenshot source: unsplash

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়।

ছবি যাচাই ৫

Screenshot source: Bangla24 Live Newspaper

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে বাংলা২৪ লাইভ নিউজপেপার

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম Diario Ronda এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে স্পেনের বিভিন্ন শহরে সেসময়ের বন্যার বিষয়টি উল্লেখ করে ছবিটি Karl Smallman নামক এক ব্যক্তির তোলা বলে জানানো হয় ক্যাপশনে। 

Screenshot source: Diario Ronda

পরবর্তীতে টুইটারে Karl Smallman এর অ্যাকাউন্টে সে বছরের ২১ অক্টোবর প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Twitter 

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়, স্পেন থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে তোলা ছবি। 

ছবি যাচাই ৬

Screenshot source: Boishakhi Tv

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে বৈশাখী টিভি

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম The New Straits Times এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার Segamat শহরে সেসময়ের বন্যার বিষয়টি উল্লেখ করে ছবিটি Bernama এর তোলা বলে জানানো হয় ক্যাপশনে।

Screenshot source: The New Straits Times

পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা Bernama এর ওয়েবসাইটে গত ০২ মার্চ প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot source: Bernama

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়, মালয়েশিয়া থেকে প্রায় দুই মাস আগে তোলা ছবি। 

ছবি যাচাই ৭

Screenshot source: Kaler Kantho 

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে কালের কণ্ঠ

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বুরুন্ডির সংবাদমাধ্যম Burundi AgNews এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বুরুন্ডিতে সেসময়ের বন্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

Screenshot source: Burundi AgNews

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত বন্যা বিষয়ক ওয়েবসাইট Floodlist এ সে বছরের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বুরুন্ডির Gatumba নামক এক গ্রামে সেসময়ের বন্যার বিষয়টি উল্লেখ করে ছবিটি Burundi Ministry of Security এর তোলা বলে জানানো হয় ক্যাপশনে।

Screenshot source: Floodlist

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়, বুরুন্ডি থেকে প্রায় তিন বছর আগে তোলা ছবি। 

ছবি যাচাই ৮

Screenshot source: Bd Protidin

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, ভোরের ডাক, রিদ্মিক নিউজ। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা Bernama এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি উত্তর ভারতের ভূমিধ্বস বিষয়ক হলেও ছবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি ক্যাপশনে। 

Screenshot source: Bernama

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম Mirat Haber এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি নেপালের ভূমিধ্বস বিষয়ক হলেও এই ছবিটির বিষয়েও কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি ক্যাপশনে। 

Screenshot source: Mirat Haber

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়। এটি অন্তত বছর তিনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।  

ছবি যাচাই ৯

Screenshot source: Daily New Nation 

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি নিউ নেশান। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন এবং ছবির ক্যাপশনে কলাম্বিয়ায় সেসময়ের বন্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

Screenshot source: BBC

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে, ইমেজ শেয়ারিং ওয়েবসাইট Getty Images এ ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বিস্তার বিবরণী থেকে জানা যায়, কলাম্বিয়ায় সেদিন ভূমিধসের এই ছবিটি তুলেছেন Luis ROBAYO।   

Screenshot source: Getty Images 

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার নয়, কলাম্বিয়া থেকে চার বছর আগে তোলা ছবি। 

ছবি যাচাই ১০

Screenshot source: Jonobhani

রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে জনবাণী। 

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রুয়ান্ডার সংবাদমাধ্যম The New Times এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন এবং ছবির ক্যাপশনে রুয়ান্ডায় সেসময়ের ভারী বর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

Screenshot source: The New Times

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি রুয়ান্ডার হলেও সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার নয়, ছবিটি তিন বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো।  

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত বলে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।  

মূলত, সম্প্রতি রুয়ান্ডায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে রুয়ান্ডা এবং ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবি ব্যবহার করে দেশটির সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো রুয়ান্ডার সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, সম্প্রতি রুয়ান্ডায় বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।   

তথ্যসূত্র

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া তিন বিলিয়ন নয়

0

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে কয়লা আমদানী কারক প্রতিষ্ঠান সিএমসি’কে স্যাংশন দিয়েছে চীন বকেয়া ৩ বিলিয়ন ডলার’ শীর্ষক দুইটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,  পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানি বাবদ ৩ বিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এই বকেয়ার পরিমাণ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার বা ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। 

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানি বাবদ বকেয়া বিলের পরিমাণ 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে মূলধারার জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তায় গত ১ মে ‘কয়লা সংকটে বন্ধের উপক্রম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Banik Barta

প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, কয়লা আমদানির বিল বকেয়ার কারণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আর কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। বকেয়া এই বিলের পরিমাণ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার।

Screenshot: Banik Barta

প্রতিবেদনটি সূত্রে আরও জানা যায়, ২৯৩ মিলিয়ন ডলারের এই বকেয়া মূলত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১০ মাসের। আন্তঃব্যাংক ডলার রেট (১ ডলার সমান ১০৭) হিসেবে বাংলাদেশী টাকায় যা ৩ হাজার ১৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। দেশে ডলার সংকটের কারণে এ অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

পাশাপাশি সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভিতে গত ২ মে ‘অশনি সংকেত; কয়লা সংকটে বন্ধ হতে পারে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ১ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলমের একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Jamuna TV

 সাক্ষাৎকারটিতে খোরশেদুল আলম বলেন, ‘২৯৩ মিলিয়ন ওভারডিউ পেমেন্ট। মিনিমাম ৫০ মিলিয়ন ডলার যদি এপ্রিলে পেমেন্ট না পায়, তাহলে মে মাসের কয়লা দিতে পারবে না।’

অর্থাৎ কয়লা আমদানি বাবদ বকেয়া টাকার পরিমাণ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন ডলার এপ্রিলের মধ্যে শোধ করা না হলে মে মাসে কয়লা আমদানিকারক আর কয়লা দিবে না।

উপরিউক্ত প্রতিবেদন দুইটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কয়লা আমদানি বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার নয়। প্রকৃতপক্ষে এই বকেয়ার পরিমাণ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে চীনের নিষেধাজ্ঞা 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি সত্য। 

এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তায় পহেলা মে প্রকাশিত ‘কয়লা সংকটে বন্ধের উপক্রম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র‘ শীর্ষক একই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)কে কয়লা সরবরাহ করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কয়লা আমদানির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

Screenshot: Banik Barta 

পাশাপাশি মূলধারার আরেকটি দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশে একইদিনে প্রকাশিত ‘দেশের বিদ্যুৎ খাত ফের ডলার সংকটে‘ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বকেয়া পরিশোধ না করায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে।

Screenshot: Pratidiner Bangladesh 

এছাড়া যমুনা টিভিতে গত ২ মে ‘অশনি সংকেত; কয়লা সংকটে বন্ধ হতে পারে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

উল্লেখ্য, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিএমসির যৌথ মালিকানায় পরিচালিত একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কয়লা আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং সেই কোম্পানিকে কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি। 

Screenshot: BBC Bangla 

তবে বর্তমানে  ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ সিএমসিকে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। আর এর ফলে ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানিকে সিএমসি কর্তৃক বকেয়া পরিশোধ না করতে চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সিএমসির ওপর কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷ অর্থাৎ বাংলাদেশে কয়লা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি সত্য। 

মূলত, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হয়ে থাকে। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে কয়লা আমদানি করা হয়, সেটি মূল্য পরিশোধ করে থাকে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিএমসি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সিএমসি আমদানিকৃত কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১০ মাসে কয়লা আমদানি বিল বাবদ বকেয়া দাঁড়ায় ২৯৩ কোটি টাকা। অপরদিকে এই বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সিএমসিকে কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির সঙ্গেই কয়লা আমদানি বিল বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ৩ বিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকায় বাংলাদেশে কয়লা আমদানিকারক সিএমসিকে চীন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি আংশিক মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি

সম্প্রতি ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হননি বরং কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অধিক ভিউ পাবার আশায় থাম্বনেইলে মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবি ব্যবহার করে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ০৫ মে News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবি  ব্যবহার করে ১০ মিনিট ০৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: Facebook 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। তবে ভিডিওটি’র কোথাও মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে ১০ মিনিট ০৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সময় কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।

উক্ত সংবাদ পাঠে বলা হয়, কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএনপির এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় গ্রেফতারের ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর আগে, দুপুরে তাকে উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার শরীফুল হক স্বপন (৫১) উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে। তিনি কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জানা যায়, আগামী ৬ মে কসবা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের জন্য উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী-পাতাইসার উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফখর উদ্দিন আহাম্মদ খানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানায় নেতাকর্মীরা।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম Dhaka Mail এ ‘কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: dhakamail.com

প্রতিবেদনে বলা হয়, কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএনপির এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় গ্রেফতারের ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর আগে, দুপুরে তাকে উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার শরীফুল হক স্বপন (৫১) উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে। তিনি কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জানা যায়, আগামী ৬ মে কসবা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের জন্য উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী-পাতাইসার উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফখর উদ্দিন আহাম্মদ খানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানায় নেতাকর্মীরা।’

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ঢাকা মেইলে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও দাবিকৃত ভিডিও’তে এই সংবাদ পাঠের অংশে প্রদর্শিত ছবিটিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র কোথাও মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের বিষয়ে  অধিকতর নিশ্চিতের জন্য প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এ গত ০৫ মে ‘নির্বাচিত নয় বলে সরকার জনগণের কথা শুনছে না: মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

প্রতিবেদন দেখা যায়, শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেছেন। অপরদিকে মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিও একই দিনে পোস্ট করা হয়।

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি।

পাশাপাশি, মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা বিএনপি সংশ্লিষ্ট কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি ব্যবহার করে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি’র ক্যাপশনে মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের কথা লেখা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত প্রতিবেদনে কোথাও এবিষয়ে বলা হয়নি। সেখানে কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি। 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ০৯ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে এ ঘটনায় এক মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের ০৯ ই জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির গ্রেফতারের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি, “আবিস্কার বিহীন বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না! এখন দুবাইতে অবস্থান করতেছে!” শীর্ষক শিরোনামসহ ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বেশকিছু একাউন্ট থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বর্তমান সময়ে তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। 

গুজবের সূত্রপাত 

ফেসবুক মনিটরিং টুলস এবং এডভান্স সার্চের মাধ্যমে গত ০৪ মে সকাল ১১টা ৪৪ মিনিটে ‘ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা‘ নামের একটি ফেসবুক পেইজে এ সম্পর্কিত প্রায় অনুরূপ প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে তার অবস্থান করার দাবিটি সত্য নয় বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন এবং গত ০২ মে (মঙ্গলবার) তারিখে ওয়াশিংটনে একটি উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে উপস্থিত ছিলেন। 

ফেসবুকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ‘জুনাইদ আহমেদ পলক‘ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে গত ০৩ মে সকাল ১০ টা ৩৫ মিনিটে, যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোলটেবিল বৈঠক এবং সফরসঙ্গীদের উপস্থিতি সংক্রান্ত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source : Facebook 

উক্ত পোস্টে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উল্লেখ করেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র সফররত বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (২ মে ২০২৩) ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্স ভবনের গ্রেট হলে ইউএস চেম্বার অব কমার্স ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের  (ইউএসবিবিসি) যৌথ আয়োজনে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী’ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও অন্যান্য সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।” 

পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ওয়েবসাইটে গত ০২ মে “মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব, বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’ website 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০২ মে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শুধুমাত্র মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিবেদিত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ রাখার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ মানে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া এবং স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের উপর এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত।” 

এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তাঁর সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Screenshot from ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’ website 

অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে সফররত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়া, ০২ মে তারিখে ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের উক্ত অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে দূর্নীতির কোনো সুযোগ নেই‘ শীর্ষক একটি বক্তব্য দিয়েছেন। 

Screenshot from ‘Somoy Tv’ Facebook Page 

মূলত, গত ০৪ মে সকালে ‘ডাঃ সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে ভিত্তিহীনভাবে “বেশ কয়েকটি গোপন সুত্রে খবর পেয়েছি! আবিস্কার বিহীন বিজ্ঞানী সাড়ে হাজার কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না! এখন দুবাইতে অবস্থান করতেছে!” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে, এই তথ্যটির পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর নাম সংযুক্ত করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বর্তমান সময়ে সে দুবাইয়ে অবস্থান করছে শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গণমাধ্যমে তুরস্কের ছবিকে এপ্রিলে রাশিয়ার ভূমিকম্পের ঘটনার ছবি দাবি

গত ৩ এপ্রিল রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন সময় টিভি

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি রাশিয়ার গত এপ্রিলের ভূমিকম্পের সময়ের নয় বরং গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ভূমিকম্পের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘NPR’ এর ওয়েবসাইটে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot Comparison by Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের দক্ষিণে এবং সিরিয়া সীমান্তের কাছাকাছি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে গত ২১ ফেব্রুয়ারি “TURKEY-SYRIA-QUAKE” শীর্ষক ক্যাপশনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Getty Images

ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের দক্ষিণে আন্তাকিয়া শহরে ৬.৪ মাত্রার ভুমিকম্প আঘাত হানে।

মূলত, গত ৩ এপ্রিল রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমিকম্প আঘাত হানার সংবাদে কতিপয় গণমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি রাশিয়ার ভূমিকম্পের নয়। তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প আঘাত হানার ছবি এটি। 

প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন ভূমিকম্প নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল ছবি প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, রাশিয়ার গত এপ্রিলের ভূমিকম্পের খবরে তুরস্কের গত ফেব্রুয়ারির ভুমিকম্পের ছবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মাওলানা মামুনুল হক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি

সম্প্রতি, “কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লাইভে আসলেন মামুনুল হক” শীর্ষক দাবিতে একটি ফেসবুক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ),এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

টিকটকে একই দাবিতে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

পাশাপাশি, “আলহামদুলিল্লাহ্ জামিনে মুক্তি পেলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক” শীর্ষক শিরোনামে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককারাগার থেকে মুক্তি পাননি বরং, সম্প্রতি ৫টি মামলায় জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলার কার্যক্রম চলমান থাকায় তার এখনই কারামুক্তির সুযোগ নেই।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আলোচ্য ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র দৈনিক সেন্টমার্টিন নামের একটি ফেসবুক একাউন্টের ৮ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে আপলোকৃত একটি ভিডিওতে(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচ্য ভিডিওটি কোনোভাবেই সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

Facebook Screenshot

পাশাপাশি কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালেরকণ্ঠে ৯ এপ্রিল,২০২১ তারিখে প্রকাশিত “\’বিতর্কিত\’ লাইভ ভিডিও সরিয়ে নিলেন মামুনুল হক” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে, ২০২১ সালের এপ্রিলে মামুনুল হকের ফেসবুক লাইভের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি এও জানা যায় যে, ফেসবুক লাইভটি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে সেসময় সেই লাইভ ভিডিওটি মামুনুল হকের ফেসবুকপেজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

Source: কালেরকণ্ঠ

এছাড়া, মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ মে ‍”দুই বছর পর পাঁচ মামলায় মামুনুলের জামিন, মুক্তি নয় এখনই” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনটি থেকে  জানা যায়, রাজধানীর পল্টনের ৪টি এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ১টি মামলায় তাকে জামিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, তার আইনজীবীর বরাত দিয়ে জানানো হয়, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকার কারণে তিনি এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না।

Source: bdnews24.com

পাশাপাশি কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণে ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে  “মুক্তি পেতে আরও ২৮ মামলায় জামিন লাগবে মামুনুল হকের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মামুনুল হকের মুক্তির জন্য মোট ২৮ টি মামলায় জামিন পেতে হবে।

অর্থাৎ, ৩রা মে ৫ মামলায় জামিন পাওয়ার পরও মুক্তির জন্য তাকে আরও ২৩টি মামলায় জামিন পেতে হবে।

Source: ডয়েচে ভ্যালে

এছাড়া, গত ০৩ মে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক মানবকণ্ঠ এর ওয়েবসাইটে মাওলানা মামুনুল হকের আইনজীবীর বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

মূলত, গত ৩ মে ৫টি মামলায় আদালত হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে। মামুনুল হক ৫ মামলায় জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধেআরো কিছু মামলার কার্যক্রম চলমান থাকারকারণে তিনি কারাগার থেকে এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না। তবে সম্প্রতি তার ৫ মামলায় জামিন পাওয়াকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের মামুনুল হকের পুরোনো লাইভ ভিডিওকে  ‘জামিনে মুক্তি পেয়েই লাইভে আসলেন মামুনুল হক’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেফতারের পূর্বে তার বিরোধী একাধিক মামলা থাকলেও ঠিক কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো তা পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়নি পুলিশ।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মাওলানা মামুনুল হকের কারামুক্তির ব্যাপারে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেটি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

গত ০২ মে Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হলেন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদন ভিডিও। ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও’তে বলা হয়, “এবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত পহেলা মে আইএমএফ এর বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশের আয়োজন করলে আওয়ামী পন্থীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় ২০-৩০ নেতাকর্মী আহত হয়। পরে ৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ওয়াশিংটন পুলিশের হস্তক্ষেপ নেওয়া হয়। পরে ওয়াশিংটন পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। এই সংঘর্ষের পেছনে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে জানান ওয়াশিংটন পুলিশ। এজন্য শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে গিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাইডেনের সাথে কথা বলেন।”

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়াও একই ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৩ মে ‘নিউইয়র্কের হোটেল থেকে গ্রেফতার হলেন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে অন্য একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদন ভিডিও। ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই ভিডিও’তে বলা হয়, “এবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৫ এপ্রিল ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে আইএমএফ এর বিষয় অধিবেশনে যোগ দিতে বের হলে তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের আদেশ দেন যুক্তরাষ্ট্র।”

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ৩০ সেকেন্ড মূল ধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সর্বশেষ’ শীর্ষক শিরোনামে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: Somoy TV YouTube

এবিষয়ে দাবি এবং প্রকৃত তথ্যের পাশাপাশি তুলনা দেখুন:

Image Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও বিষয়টি অধিকতর অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক আমাদের সময় এর অনলাইন সংস্করণে গত ০২ মে ‘বিশ্বব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত ৫, গ্রেপ্তার ৩’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Amader Somoy

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের সময় বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উভয় দলের ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ উভয় দলের ৩ সমর্থকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যকার সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি। এতে উভয় দলের ৩ জন সমর্থক গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এছাড়াও অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এ ‘লন্ডনের পথে ওয়াশিংটন ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: bdnews24.com

উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) বরাতে জানানো হয়, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডন রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার(০৪ মে) সকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ছাড়েন।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ০২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের সময় বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে দাবি করা হয় এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হলে সেসময় এবিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র