রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২ সেনা নিহতের ঘটনা ঘটেনি বরং পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহত হয়েছে এবং অধিক ভিউ পাবার আশায় কোন দেশ তা উল্লেখ না করে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত ০১ মে News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ২ সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের সময় পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহতের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।
এবিষয়ে বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়, ‘উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে একটি অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্পে জঙ্গিরা রকেট এবং বন্দুক দিয়ে হামলা করার সময় একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে অন্তত তিন সেনা সদস্য নিহত হন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা শুক্রবার একথা জানান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি কেউ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঘন ঘন হামলা শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করলে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতেই মসজিদে এক বোমা হামলায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা সংস্করণে ‘পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহত; বলছেন কর্মকর্তারা’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: voabangla.com
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে একটি অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্পে জঙ্গিরা রকেট এবং বন্দুক দিয়ে হামলা করার সময় একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে অন্তত তিন সেনা সদস্য নিহত হন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা শুক্রবার একথা জানান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি কেউ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঘন ঘন হামলা শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করলে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতেই মসজিদে এক বোমা হামলায় ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।’
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও দাবিকৃত ভিডিওতে এই সংবাদ পাঠের অংশে প্রদর্শিত ছবিটিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দাবিকৃত ভিডিও’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে শুধুমাত্র দুই সেনা নিহতের বিষয়ে বলা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে পাকিস্তানে ৩ সেনা সদস্য নিহতের কথা বলা হয়েছে।
পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের অনলাইন সংস্করণে ‘Motorcycle suicide bomber launches Pakistan attack, at least three soldiers killed’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জঙ্গি হামলায় বাংলাদেশে কোনো সেনা সদস্য নিহতের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় সেনা নিহতের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়।
মূলত, সম্প্রতি পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটে। তবে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, ২ সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহতের সংবাদের ভিডিও’র থাম্বনেইলে দেশের নাম উল্লেখ না করে ‘ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, ২ সেনা নিহত’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনি, ৪৬০ মৃত্যু‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনির ঘটনায় ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়নি বরং রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৪৬০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে এবং অধিক ভিউ পাবার আশায় কোন দেশ তা উল্লেখ না করে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনি, ৪৬০ মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: Facebook
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৭ মিনিট ০২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সময়ে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৪৬০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহতের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৪ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।
এবিষয়ে বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়, “রাশিয়ার আক্রমণকারী দলগুলি আর্টিওমভস্কে (ইউক্রেনীয় নাম বাখমুত) ইউক্রেনীয় সৈন্য এবং ভাড়াটে সৈন্যদের ধ্বংস করে চলেছে যখন প্যারাট্রুপার এবং সাউদার্ন ব্যটালগ্রুপ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় গত দিনে তাদের সমর্থন প্রদান করেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বুধবার রিপোর্ট করেছেন। রাশিয়ান বাহিনী গত ২৪ ঘন্টায় কুপিয়ানস্ক এলাকায় ৪০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা, একটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান ও দুটি মোটর গাড়ি, ক্রাসনি লিমানে ৬৫ জন ইউক্রেনীয় সেনা, একটি আকাতসিয়া মোটরচালিত আর্টিলারি বন্দুক, একটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, একটি পিকআপ ট্রাক, একটি মোটর গাড়ি ও একটি ডি-২০ হাউইটজার, ডোনেৎস্ক এলাকায় প্রায় ৩০০ ইউক্রেনীয় সেনা, দুটি পদাতিক যুদ্ধ যান, চারটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, সাতটি মোটর গাড়ি, ডি-২০ এবং এমস্টা-বি হাউইটজার, একটি আকাতসিয়া মোটরচালিত আর্টিলারি বন্দুক এবং একটি যুক্তরাজ্যের তৈরি এল১১৮ হাউইটজার ধ্বংস করেছে,’ মুখপাত্র বলেছেন।”
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন সংস্করণে ‘বাখমুতে রুশ অগ্রযাত্রা অব্যাহত, ৪৬০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot dailyinqilab
প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাশিয়ার আক্রমণকারী দলগুলি আর্টিওমভস্কে (ইউক্রেনীয় নাম বাখমুত) ইউক্রেনীয় সৈন্য এবং ভাড়াটে সৈন্যদের ধ্বংস করে চলেছে যখন প্যারাট্রুপার এবং সাউদার্ন ব্যটালগ্রুপ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় গত দিনে তাদের সমর্থন প্রদান করেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বুধবার রিপোর্ট করেছেন। রাশিয়ান বাহিনী গত ২৪ ঘন্টায় কুপিয়ানস্ক এলাকায় ৪০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা, একটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান ও দুটি মোটর গাড়ি, ক্রাসনি লিমানে ৬৫ জন ইউক্রেনীয় সেনা, একটি আকাতসিয়া মোটরচালিত আর্টিলারি বন্দুক, একটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, একটি পিকআপ ট্রাক, একটি মোটর গাড়ি ও একটি ডি-২০ হাউইটজার, ডোনেৎস্ক এলাকায় প্রায় ৩০০ ইউক্রেনীয় সেনা, দুটি পদাতিক যুদ্ধ যান, চারটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, সাতটি মোটর গাড়ি, ডি-২০ এবং এমস্টা-বি হাউইটজার, একটি আকাতসিয়া মোটরচালিত আর্টিলারি বন্দুক এবং একটি যুক্তরাজ্যের তৈরি এল১১৮ হাউইটজার ধ্বংস করেছে,’ মুখপাত্র বলেছেন।”
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রচারিত ভিডিওটি’র ৪ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের সময়ে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় ৯ বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৪ মিনিট ৫১ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, উক্ত বিষয়ে সংবাদ পাঠের অংশটি মূলধারার গণমাধ্যম নয়া দিগন্ত’র অনলাইন সংস্করণে ‘নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ৯ বছর : চোখের পানিতে নিহতদের স্মরণ’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে হুবহু পাঠ করা হয়েছে।
Screenshot: Naya Dinganta
পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনিতে ৪৬০ জনের মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, নারায়ণগঞ্জে খুনোখুনিতে ৪৬০ জনের মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৪৬০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহতের ঘটনা ঘটে। তবে বাংলাদেশের একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে উক্ত ঘটনার সাথে নারায়নগঞ্জে ৯ বছর আগে সংঘঠিত ৭ খুনের ঘটনার নিহতদের আত্মীয়দের স্মরণের অন্য একটি সংবাদ যুক্ত করে ‘নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনি, ৪৬০ মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে অধিক ভিউ পাবার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৪৬০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহতের ঘটনা এবং নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনে নিহতদের আত্মীয়দের স্মরণ করার বিষয় দুটোকে উক্ত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র ক্যাপশন ও থাম্বনেইলে শুধুমাত্র ‘নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ খুনোখুনি, ৪৬০ মৃত্যু’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ স্লোগানে মুখরিত” শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে ভিডিওটি প্রচারের মাধ্যমে বলা হচ্ছে এটি বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সামনেই ভোট চোর স্লোগান দেওয়ার ভিডিও।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ শীর্ষক স্লোগান দেওয়া হয়েছে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে মূল ভিডিওতে শেখ হাসিনা ভোট চোর স্লোগানের পুরোনো একটি সাউন্ডট্র্যাক এডিটের মাধ্যমে যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, এই ভিডিওটির সাথে ভোট চোর স্লোগান দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া গেছে৷ মূল ভিডিও এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৈর্ঘ্যও(১.১০ মিনিট) সমান পাওয়া গেছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে সেখানে শেখ হাসিনা ভোট চোর শীর্ষক স্লোগান শুনতে পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে মূল ভিডিওতে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা সরকার বারবার দরকার’ ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায়।
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনা ভোট চোর স্লোগান দেওয়া হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ সাউন্ডট্র্যাকটি এডিট করে যুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তীতে ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ (আর্কাইভ) শিরোনামে ৫ মাসে পূর্বে আপলোড করা একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ইউটিউব শর্টস ভিডিওটির সাউন্ডট্র্যাকের সাথে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাউন্ডট্র্যাকের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পুরোনো এই সাউন্ডট্র্যাকটি মূলত উক্ত ভিডিওতে একাধিকবার প্লে করা হয়েছে।
Screenshot: Youtube Shorts
মূলত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িতে ওঠার পূর্বমুহুর্তে ধারণ করা একটি ভিডিওতে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ শীর্ষক পুরোনো স্লোগানের সাউন্ডট্র্যাক যুক্ত করে ভিডিওটি বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর’ স্লোগান দেওয়ার ভিডিও দাবি করে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন আগমনের প্রতিবাদে বিশ্বব্যাংকের সামনে গত ১ মে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠন।
Screenshot: Facebook post
বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে সেখানে রাস্তার বিপরীতে পাশে বিক্ষোভরত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
Screenshot: Voa Bangla website
উক্ত সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
Screenshot: Facebook Post
সুতরাং, বিশ্বব্যাংকের সামনে শেখ হাসিনা ভোট চোর স্লোগান দেয়া হয়েছে দাবি করে যে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে সেটি এডিটেড।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা যাওয়ার দাবিটিসঠিক নয় বরং তিনি সুস্থ আছেন এবং আজ ২রা মে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে “PM Hasina arrives in Washington DC” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১লা মে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেনপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো এর অনলাইন সংস্করনে ২রা মে ২০২৩ তারিখে “যে ৫ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ২২৫ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানাযায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সোমবার(১লা মে) বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণচুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১লা মে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে আয়োজিত “Reflection on 50 years of World Bank-Bangladesh Partnership” শীর্ষক সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
মূলত, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২৫ এপ্রিল টোকিও যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে যান শেখ হাসিনা এবং ১ মে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আগামী ৪ মে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে তার ওয়াশিংটন ত্যাগ করার কথা রয়েছে। তবে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শারীরিক অবস্থা সুস্থ স্বাভাবিক থাকলেও গত ৩০ এপ্রিল থেকে কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে তার মৃত্যুর দাবি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজবের বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ন বানোয়াট এবং গুজব।
সম্প্রতি, “১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপনে জামালপুর দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে, অন্য পাড়ে গাইবান্ধার তিস্তা পাড় ঘাটের মধ্যে চালু করেছিলো এক রেলওয়েফেরী সার্ভিস” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি বাহাদুরাবাদ রেলওয়ে ফেরির ছবি নয় বরং এটি আমেরিকার লুসিয়ানার মিসিসিপি নদী পারাপাররত রেলওয়ে ফেরির ছবি।
ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, ছবির রেলওয়ে ফেরির নাম Mastodon. ফেরিটি দক্ষিণ প্যাসিফিক থেকে পশ্চিমগামী Sunset Limited নামের ট্রেন নিয়ে মিসিসিপি নদী পার হচ্ছিলো। ছবিটি ১৯৩০ সালে, লুসিয়ানার নিউ অরলিন্স থেকে তোলা।
এছাড়াও, মূলধারার সংবাদপত্র প্রথম আলো-এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু হচ্ছে শনিবার শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে ব্রিটিশ সরকার। এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট। এই রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন।ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন।
মূলত, ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে ব্রিটিশ সরকার। ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাট এসে মানুষ নৌরুটে ফেরি দিয়ে নদী পার হয়ে ওপারে বাহাদুরবাদ ঘাটে থাকা ট্রেনে করে ঢাকা আসত। নৌরুট-ফেরি চালুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার নিউ অরলিন্সের মিসিসিপি নদীতে ট্রেন পারাপাররত একটি ফেরির ছবিকে বাংলাদেশের ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদে চালু করা ফেরির ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকেও একই দাবিতে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ইউটিউবে একই দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাচের মঞ্চে আযান দেওয়া হয়েছে দাবিতে যে ভিডিওটি প্রচারিত হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং ইন্ডিয়ান আইডল নামক ভারতের একটি গানের প্রতিযোগিতার একটি এপিসোডের ভিডিওতে আযানের ভিডিও জুড়ে দিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল Set India এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ০৫ এপ্রিল আপলোডকৃত জুনিয়র ইন্ডিয়ান আইডল টিভি শো এর একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশের মিল রয়েছে।
ভিডিওটিতে শাহরুখ খান ও শ্রেয়া ঘোষাল এর পোশাক ও অভিব্যক্তি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচ্য ভিডিওর কিছু অংশ ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়রের উক্ত এপিসোড থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
Rumor Scanner Collage
পাশাপাশি, ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়রের উক্ত এপিসোডটি পর্যালোচনা করে সেই এপিসোড আযান দেওয়ার কোনো ঘটনা খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার। আর ইন্ডিয়ান আইডল একটি গানের প্রতিযোগিতার প্লাটফর্ম। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে একে নাচের মঞ্চ বলে দাবি করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে, অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচ্য ভিডিওটি প্রথম ২০২২ সালের ১৫ ই জুন Sobuj Khan-সবুজ খান নামের ফেসবুক আইডির একটি পোস্টে (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “ভিডিওটি ইডিট করে তৈরি করা।”
অধিকতর অনুসন্ধানে, Sobuj Khan-সবুজ খান নামের জনৈক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি ভিডিও পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচ্য ভিডিওটি সবুজ খান নামের ব্যক্তিরই তৈরি করা এবং ভিডিওটি তিনি এডিটিং টুলস ব্যবহার করে তৈরি করেছেন।
মূলত, সম্প্রতি এক ব্যক্তির নাচের মঞ্চে আযান দেওয়ার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ভিডিওটি এডিটেড। ভারতের গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র এর একটি এপিসোডের মধ্যে আযান দেওয়ার ভিন্ন একটি ভিডিও জুড়ে দিয়ে নাচের মঞ্চে আযান শীর্ষক দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও ব্রিটেন’স গট ট্যালেন্ট এর মঞ্চে আযান শোনানোর দাবিতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সেটি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তাদের দুইটি ভিন্ন সময়ের বক্তব্যের ভিডিও থেকে খণ্ডিত অংশ যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যগুলো যাচাই করে।
ওবায়দুল কাদেরের খণ্ডিত বক্তব্য
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ৬ এপ্রিল ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনি মাঠে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
এই সময় তিনি বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটে যাওয়ার জন্য একজন নিরপেক্ষ লোক দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আমি মির্জা ফখরুলকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ‘আপনাদের সেই নিরপেক্ষ ব্যক্তি কে? আমরা জানতে চাই। নিরপেক্ষ লোক তাদের দরকার নাই। তাদের লোক, তাদের পক্ষের লোক তারা চায়। যে এখানে তত্ত্বাবধায়কের নামে ২০০১ সালের মতো নির্বাচন করবে, ২০০৬ সালের মতো অস্বাভাবিক জরুরি সরকার ক্ষমতায় আনবে। ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারা চায়।’
Screenshot: News Pencil
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যটি শুনুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
Screenshot: Bangla Tribune
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য থেকে কেবল ‘সুষ্ঠু ভোটে যাওয়ার জন্য একজন নিরপেক্ষ লোক দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ অংশটুকু কেটে ওবায়দুল কাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর খণ্ডিত বক্তব্য
অপরদিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছেন দাবিতে তার বক্তব্যের অংশটুকু যাচাই করে দেখা যায়, জাতীয় সংসদে সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩ এপ্রিল একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
Screenshot: Channel24
সেখানে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘এই মডেলটি ব্যর্থ হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে বিভিন্ন অসামঞ্জস্য যেমন, কে এই সরকারের প্রধান হবেন, প্রক্রিয়া কি হবে ইত্যাদি দেখা দেয়৷ তখন আর মডেলটি কার্যকর থাকলো না।’
অর্থাৎ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেননি। বরং তিনি এই ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন।
তার এই সমালোচনা থেকেই খণ্ডিত অংশ কেটে সেটি ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে দুইজনের নামে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছে স্পীকার ও ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, গত ৩ ও ৭ এপ্রিল ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা বা সমালোচনা করে দুইটি আলাদা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তাদের এই আলাদা আলাদা বক্তব্য থেকেই কিছু অংশ কেটে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছে স্পীকার ও ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিচ্ছে স্পীকার ও ওবায়দুল কাদের’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেগুলোতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সংবাদে গণমাধ্যমে প্রচারিত দুইটি ছবি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৫ সালে পাকিস্তানে ভূমিকম্পের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, জার্মান সংবাদমাধ্যম DW (ডয়চে ভেলে) এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত প্রথম ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন (২৬ অক্টোবর) পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উক্ত ঘটনায় পাকিস্তানের কোহাত শহরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ছবি এটি।
Source: DW
ছবিটির সূত্র হিসেবে ডয়চে ভেলে ‘গেটি ইমেজেস’ এর নাম উল্লেখ করেছে।
পরবর্তীতে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে একইদিন (২৬ অক্টোবর) প্রকাশিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটি তুলেছেন বাসিত শাহ।
Screenshot source: Getty Images
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, আলোচিত ছবিটি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্যের হলেও উক্ত ছবিকে সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই ভূমিকম্প (জম্মু কাশ্মীরের) থেকে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।”
Screenshot source: Amader Somoy
তাছাড়া, ভোরের কাগজ পত্রিকার ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ব্যবহার হওয়া একই ছবির উৎস হিসেবে বিবিসির নাম উল্লেখ থাকলেও অনুসন্ধানে বিবিসির সাম্প্রতিক কোনো প্রতিবেদনে ছবিটির অস্তিত্ব মেলেনি। তবে বিবিসির হিন্দি ভাষার সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে মূল ঘটনার (পাকিস্তানের ভূমিকম্প) খবরে উক্ত ছবিটি ব্যবহার করা হয়।
Screenshot source: Rumor Scanner
মূলত, ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে ভূমিকম্প আঘাত হানে। উক্ত ঘটনায় পাকিস্তানের কোহাত শহরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে (৩০ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরের ভূমিকম্পের ছবি দাবি করে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১৫ সালে পাকিস্তানের ভূমিকম্পের ঘটনার একটি ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরের ভূমিকম্পের দাবি করে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, পাকিস্তানে মৃত নারীদের ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে কবরে তালা দেয়া হচ্ছে শীর্ষক একটি সংবাদ গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে একটি ছবি প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, “পাকিস্তানে কবর থেকে মহিলাদের দেহ তুলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। মৃতদেহকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাতে তাই কবরস্থলের চারপাশে লোহার খাঁচা তৈরি করে দিচ্ছেন উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা”।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করতে পাকিস্তানে নারীদের কবর গ্রিল দিয়ে তালাবদ্ধ করার দাবিটি সঠিক নয় বরং যে ছবিটি পাকিস্তানের হিসেবে প্রচার করে উক্ত দাবিটি করা হয়েছে সেটি মূলত ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কবরস্থানের একটি কবর গ্রিলবদ্ধ করার ছবি এবং এই ছবির সাথে ধর্ষণ প্রতিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই।
পাকিস্তানে কি মৃত নারীদের ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে কবর তালাবদ্ধ করা হচ্ছে?
সংবাদগুলোতে পাকিস্তানে মৃত নারীদের ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে কবরে তালা দেয়া হচ্ছে শীর্ষক দাবি করা হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা অনুসন্ধানে Harris Sultan নামের টুইটার অ্যাকাউন্টের একটি ভাইরাল টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে সবুজ গ্রীল দিয়ে কবরকে তালাবদ্ধ করার সেই ছবি সংযুক্ত করে ছবিটিকে পাকিস্তানের দাবি করে নারীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে কবর তালাবদ্ধ করা হচ্ছে বলে প্রচার করা হয়।
ইংরেজি ভাষায় লেখা টুইটে দাবি করা হয়, “পাকিস্তান এমন একটি শৃঙ্গাকার, যৌন হতাশগ্রস্থ সমাজ তৈরি করেছে যে লোকেরা এখন তাদের মেয়েদের কবরে তালা লাগাচ্ছে যাতে তারা ধর্ষণের শিকার না হয়। আপনি যখন বোরকাকে ধর্ষণের সাথে যুক্ত করেন, তখন এই বিষয়টিই আপনাকে কবরে নিয়ে যায় (অনূদিত)।”
Screenshot: Tweet
উপরোক্ত টুইট থেকে ছবি এবং তথ্য নিয়ে ভারতীয় বেশকিছু সংবাদমাধ্যম এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের বেশকিছু সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টির ওপর সংবাদ প্রচারিত হয়।
পাকিস্তানে ধর্ষণ এড়াতে কবর তালাবদ্ধ করার কোনো ঘটনা সত্যি ঘটেছে কি না তা প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড অনুসন্ধানে পাকিস্তানের কোনো মিডিয়ায় এরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম এ বিষয়ে পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছে। তারা ধর্ষণ এড়াতে পাকিস্তানে কবরে তালা দেয়া হচ্ছে শীর্ষক কেনো তথ্য সম্পর্কে জানাতে পারেননি।
Screenshot source: Boom
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করেও এর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে Gabbar নামের টুইটার অ্যাকাউন্টের একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত টুইটে গ্রীল দিয়ে কবর তালাবদ্ধ করার ছবিটি ভারতের হায়দ্রাবাদের ছবি হিসেবে উল্লেখ করে উক্ত কবর ও তার অবস্থানের আরো কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে একটি মসজিদের ছবিও রয়েছে।
Screenshot: Tweet
উক্ত টুইটের মন্তব্যের ঘরে Sayed Salman নামের এক ব্যক্তির মন্তব্য থেকে কবরস্থানটির অবস্থান জানা যায়।
জনাব সায়েদ সালমান লিখেছেন, উক্ত মসজিদটি তার বাড়ির কাছেই অবস্থিত। এটির নাম সালার-ই-মুলক মসজিদ, যার অবস্থান হায়দ্রাবাদের সান্তোষ নগরের দারাব জাং কলোনিতে।
স্থান সংক্রান্ত উক্ত তথ্যের৷ ভিত্তিতে গুগল ম্যাপসে অনুসন্ধানে উক্ত কবরটি গুগল স্ট্রিট ভিউয়ে পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় তালাবদ্ধ কবর এর এই ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দ্রাবাদের মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনি এলাকার একটি কবরস্থানের ছবি।
হায়দ্রাবাদের এই কবরটি ঠিক কী কারণে গ্রিলবদ্ধ করা হয়েছে সেই কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পরবর্তীতে একটি ভিডিও টুইট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে এক ব্যক্তি উক্ত কবরস্থানের ঐ কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবরস্থান সংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিনকে সাথে নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে স্পটে গিয়ে কথা বলে ভিডিও করছেন।
Screenshot: Tweet
উক্ত মুয়াজ্জিনের বক্তব্য থেকে জানা যায়, কবরটি প্রায় দুই বছর পুরোনো। উক্ত কবরের ওপর যাতে আর কোনো কবর কেউ দিয়ে না ফেলে সেজন্য উক্ত কবরস্থানে সমাহিত ব্যক্তির পরিবার গ্রীল দিয়ে তালাবদ্ধ করেছে।
মুয়াজ্জিন বলেছেন, “অনেক লোক এখানে আসে এবং অনুমতি ছাড়াই পুরোনো কবরের উপর লাশ দাফন করে। যাদের আগে থেকেই এখানে কবরস্থ করা হয়েছে, তাদের কাছের মানুষেরা ফাতেহা পড়তে আসলে তাদের অভিযোগ থাকে। অন্যরা যেন এভাবে এক লাশের ওপর অন্য লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য তারা সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে।”
ভারতের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজও বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে এবং সরেজমিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। রিউমর স্ক্যানার টিম সংস্থাটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়ের এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে গ্রিলবদ্ধ কবরটি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হয়েছে।
Screenshot: Tweet
অর্থাৎ, পাকিস্তানে মৃত নারীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে গ্রীল দ্বারা তালাবদ্ধ করার দাবিটি মিথ্যা এবং যে ছবিটি প্রচারে মাধ্যমে উক্ত দাবিটির সৃষ্টি সে ছবিটি পাকিস্তানের কোনো কবরস্থানের নয় বরং এটি ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কবরস্থানের।
একই সংবাদের সাথে ভিন্ন ছবি প্রচার
কতিপয় সংবাদমাধ্যম (চ্যানেল আই, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস) সবুজ রঙের গ্রীলবদ্ধ কবরের ভাইরাল ছবিটির পরিবর্তে নিম্নোক্ত ভিন্ন ছবিটি ব্যবহার করেছে। কেউ কেউ এই ছবিটিকে সরাসরি পাকিস্তানের দাবি করেছে আবার কেউ কোনোকিছুই উল্লেখ করেনি।
Image Collage: Rumor Scanner
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায় ছবিটি পাকিস্তানের কোনো কবরস্থানের ছবি নয় বরং এটি ফ্রি স্টক ইমেজ সাইট পিক্সাবে তে আপলোড করা আলজেরিয়ার একটি কবরস্থানের পুরোনো ছবি।
Image Comparison by Rumor Scanner
নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য
মৃতদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করাকে নেক্রোফিলিয়া বলে। নেক্রোফিলিয়া এক ধরণের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রাফাইল, যারা মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
মৃতদেহের প্রতি যৌন আগ্রহ বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন একটি বিরল প্যারাফিলিয়া, যা কেবল প্রায় একচেটিয়াভাবে পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, তারা নিজেরাই ভুক্তভোগীকে হত্যা করে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়, মর্গ, শ্মশান বা কবরের মাধ্যমে মৃতদেহগুলোতে সহজে তারা পেয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ১৯৮৯ সালে ১২২ জন নেক্রাফাইল ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঐ গবেষণায় বলা হয়, ‘বাধা দেবে না বা প্রত্যাখ্যান করবে না’ মূলত এমন যৌন সঙ্গী পাওয়ার বাসনা থেকে মরদেহের সাথে যৌন সংসর্গ করে থাকে নেক্রোফাইলরা।
পাকিস্তানে কি নেক্রোফিলিয়া বেড়েছে?
দেশীয় এবং ভারতীয় বেশকিছু মিডিয়ায় পাকিস্তানি পোর্টাল ডেইলি টাইমস এর বরাতে পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়া বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেছে। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে গত ২৮ এপ্রিল ডেইলি টাইমস এর সেই প্রতিবেদনটি খুঁজে দেখা যায় সেটি একটি সম্পাদকীয়।
সম্পাদকীয়টি পাকিস্তানে নারীদের প্রতি সহিংসতা নিয়ে লেখা। সাথে এতে নেক্রোফিলিয়ার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে এ বিষয়টি লিখতে গিয়ে লেখক হারিস সুলতান নামের সেই ব্যক্তির ভুয়া টুইটের তথ্যটিও যুক্ত করেছে।
সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়ার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করলেও এ দাবির সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে কোনো ডাটা উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ পাকিস্থানে নেক্রোফিলিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে এটি সম্পাদকীয় লেখকের মতামত বা মন্তব্য হিসেবে সেখানে পাওয়া গেছে। পাকিস্তানেনে ক্রোফিলিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে কি না তা অনুসন্ধানে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ডাটা পাওয়া যায়নি।
মূলত, হারিস সুলতান নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী গ্রীলবদ্ধ কবরের একটি ছবিকে পাকিস্তানের হিসেবে উল্লেখ করে ছবিটির ওপর ভিত্তি করে ‘ধর্ষণ থেকে নারীদের বাঁচাতে পাকিস্তানে কবর তালাবদ্ধ করা হচ্ছে’ শীর্ষক দাবিটি প্রচার করে। তার উক্ত টুইটকে সূত্র ধরে ভারতীয় বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানের একটি পোর্টালে টুইটটির তথ্যের ভিত্তিতে একটি সম্পাদকীয় লেখা হয়। তবে যে ছবিটির ওপর ভিত্তি করে উক্ত টুইট এবং সংবাদ প্রকাশিত হয় সেই ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কবরস্থানের ছবি। বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় হারিস সুলতান তার আলোচিত টুইটটি ডিলিট করে দেন।
সুতরাং, ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি কবরস্থানের ছবিকে পাকিস্তানের দাবি করে মৃত নারীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে পাকিস্তানের পিতামাতারা কবর তালাবদ্ধ করছেন শীর্ষক যে সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে সেটি মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কোনো বিরল প্রজাতির মৎস্যকন্যার নয় বরং একটি মৎস্যকন্যা আকৃতির পুতুলের ভিডিওকে বাস্তব মৎস্যকন্যা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে dmitry.arts নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একই ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি আর্ট স্টুডিওর সেই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেখা যায়, মৎস্যকন্যার আদলে তৈরি পুতুলটি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।
এছাড়াও, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটি পর্যালোচনা করে আরো দেখা যায়, dmitry arts নামের সেই আর্ট স্টুডিওতে বিভিন্ন ধরনের Mermaid বা মৎস্যকন্যার আদলে পুতুল তৈরি করা হয়।
পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে আলোচ্য পুতুলটি তৈরি করার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি কোনো বিরল প্রজাতির মৎস্যকন্যার নয় বরং কাল্পনিক মৎস্যকন্যার আদলে মানুষের তৈরি এক ধরণের পুতুল।
মূলত, সম্প্রতি বাস্তব মৎস্যকন্যার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্ট স্টুডিওতে মৎস্যকন্যার আদলে তৈরিকৃত একটি পুতুলের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে পুতুলের ভাস্কর্যের ছবিকে বাস্তব শিশুর ছবি দাবিতে প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মৎস্যকন্যার আদলে তৈরিকৃত একটি পুতুলের ভিডিওকে বিরল প্রজাতির বাস্তবিক মৎস্যকন্যার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।