ওবায়দুল কাদের মারা যাননি

সম্প্রতি, “ইন্নাল্লিলাহিও ইন্না ইলাইহি রাজিউন আমাদের মাঝে আর ওবায়দুল কাদের নেই” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওপোস্ট দেখুন-এখানেএখানে
আর্কাইভ দেখুন-এখানেএখানে
টিকটকে প্রচারিত ভিডিওপোস্ট দেখুন-এখানে, এখানে, এখানেএখানে
আর্কাইভ দেখুন-এখানে, এখানে, এখানে, ও এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন-এখানে,এখানে,এখানে,এবংএখানে
আর্কাইভ দেখুন-এখানে,এখানে,এখানে,এবং এখানে।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মারা যাননি বরং তিনি সুস্থ আছেন।

ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু দাবিতে যে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে তা মূলত একটি সংবাদ বুলেটিনের শিরোনাম পড়ার সময়ের ফুটেজ। ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় দেখা যায় উপস্থাপিকার ঠোঁটের সাথে ভিডিওতে শুনতে পাওয়া শব্দ মিলছে না। অর্থাৎ কোনো একটি সংবাদ বুলেটিনের ভিডিওকে এডিট করে ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যুর সংবাদের অডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভিডিওতে দেখানো সংবাদটির শিরোনাম ও সুপার (শিরোনামের নীচে সংবাদ সম্পর্কে ছোটো করে বাড়তি যে তথ্য দেওয়া থাকে) দেখে ধারণা করা যায় তিন বছর আগে ২০১৯ সালের মার্চে ওবায়দুল কাদের এর হার্টের ব্লক অপসারণ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বুলেটিনের ভিডিও এটি। 

কি-ওয়ার্ড সার্চে, ৩ মার্চ ২০১৯ তারিখে দেশীয় প্রথম সারির গণমাধ্যম ‘Independent Television’ এ প্রচারিত একটি সংবাদ বুলেটিন এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবুহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Independent Television

সংবাদটিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হার্টের তিনটি ব্লকের একটি অপসারণ করা হয়েছে। তবে এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হচ্ছে।

পরবর্তীতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত দাবিটির কি-ওয়ার্ড সার্চে একাধিক দেশীয় গণমাধ্যমে ২০১৮ সালে ওবায়দুল কাদেরের মায়ের মৃত্যুর সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়, ওবায়দুল কাদেরের নিজের মৃত্যুর কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় না। 

Screenshot from Daily Jugantar

এছাড়া, ৩১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ‘BBC News বাংলা’র ওয়েবসাইটে “ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from BBC News বাংলা

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সভায় যোগ দিতে আসেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এসময় তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দ্রুত তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একই সাথে মি: কাদের উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা মি: কাদেরকে চিকিৎসা দেন।

পরবর্তীতে, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ‘ডিবিসি’র অনলাইন সংস্করণে “মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ে গেলেন ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from DBC

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলনমেলায় বক্তব্য রাখতে মঞ্চে ওঠেন ওবায়দুল কাদের। বক্তব্যের মাঝেই মঞ্চ ভেঙে পড়ে যান তিনি। তবে গুরুতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সামান্য আহত হলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে পুনরায় বক্তব্য দেন তিনি।

মূলত, গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলনমেলায় বক্তব্য রাখতে মঞ্চে উঠে মঞ্চ ভেঙে পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হন ওবায়দুল কাদের। তবে বড় ধরণের কোনো আঘাত পাননি তিনি। পড়ে যাবার কিছুক্ষণ পড়েই নিজেকে সামলে পুনরায় বক্তব্য দেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন দাবিতে সংবাদ বুলেটিনের কিছু অংশ কেটে অডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ওবায়দুল কাদেরের “প্রয়োজনে জেলে যাবো তবু দেশ ছেড়ে পালাবো না” বক্তব্যকে কেন্দ্র করে “ওবায়দুল কাদের জেলে” শীর্ষক দাবিতে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, সংবাদ বুলেটিনের কিছু অংশ এডিট করে “ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন” অডিও বসিয়ে ওবায়দুল কাদের মারা গেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img