ওবায়দুল কাদেরের জেলে যাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “১১ বড় নেতা রিমান্ডে/ ওবায়দুল কাদের জেলে/ ৯০০ শহরে বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে
ভিডিওটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধানে Shofiq Bhai Gaming নামক ফেসবুক পেজে গত ৪ নভেম্বর উক্ত ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহৃত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওতে যা আছে

ফেসবুকের ভিডিও দু’টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিনের ভিডিও। তবে ১১বড় নেতার রিমান্ড,ওবায়দুল কাদেরের জেলে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো সংবাদ উক্ত ভিডিওতে প্রচার হতে দেখা যায় নি। এছাড়াও ৯০০ শহরে বিক্ষোভ সংক্রান্ত কোনো তথ্য উক্ত নিউজ বুলেটিনে পাওয়া যায় নি।

ইউটিউব ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিএনপির কর্মীরা একত্রিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছে। ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ করলে বিএনপির জেলে থাকা নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার চোখে পড়ে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে “১০ তারিখের সম্মেলন/ সফল হোক সফল হোক” স্লোগানটি শোনা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১১ বড় নেতার রিমান্ড, ওবায়দুল কাদের জেলে যাওয়া কিংবা ৯০০ শহরে বিক্ষোভের দাবিগুলোর কোনোটিই সত্য নয় বরং ভিডিওতে এংগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য এমন ক্লিকবেইট থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুসন্ধান

কি-ওয়ার্ড সার্চে গত ৫ নভেম্বর দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম “যুগান্তর”-এ “জেলে যাব, দেশ ছেড়ে পালাব না: ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, “পালানোর ইতিহাস বিএনপির নেতাদের। আমাদের কেউ পালিয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘এই দেশেতে জন্ম আমরা এই দেশেতে মরব।’ আমাদের জন্ম এই দেশে আমরা এই দেশেই মরব। জেলে যাব, কিন্তু পালানোর পথ খুঁজব না। এই দেশ থেকে পালাব না।”

পরবর্তীতে, গত ৪ নভেম্বর দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক “নয়া দিগন্ত”- এর ওয়েবসাইটে “প্রয়োজনে মরবো জেলে যাবো তবুও দেশ ছেড়ে পালাবো না : ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে এ সংক্রান্ত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

সংবাদবিবরণী অনুযায়ী, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালানোর রাজনীতি তো বিএনপি’র, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালানোর রাজনীতি করে না। আমাদের জন্ম এদেশে, প্রয়োজনে মরবো, জেলে যাবো তবুও দেশ ছেড়ে পালাবো না। মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে পালিয়ে তো গেছে বিএনপির নেতা, আওয়ামী লীগের পালানোর ইতিহাস নেই।

পরবর্তীতে, ১১ বড় নেতার রিমান্ড সংক্রান্ত কি-ওয়ার্ড সার্চে ৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম “newsbangla24.com”-এ “বিচারপতি মানিকের ওপর হামলায় ছাত্রদলের ১১ নেতা-কর্মী রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খূঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১১ নেতা-কর্মীকে দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।” 

৯০০ শহরে বিক্ষোভের বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন প্রয়োজনে তিনি জেলে যাবেন, মৃত্যুবরণ করবেন তবু দেশ ছেড় পালাবেন না। তাঁর এই বক্তব্যটিকেই বিকৃত করে ওবায়দুল কাদের জেলে যাচ্ছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিচারপতি মানিকের উপর হামলায় ছাত্রদলের ১১ নেতাকে রিমান্ডে নেওয়ার তথ্যকে আওয়ামী লীগ নেতার রিমান্ডে যাওয়ার তথ্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে ছড়ানো গুজবকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ওবায়দুল কাদেরের জেলে যাওয়া, ১১ নেতার রিমান্ড ও ৯০০ শহরে বিক্ষোভের দাবিতে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img