সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব, সরকার-কে টেনে হেচড়ে নামানোর ঘোষণা’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের অভিযানের কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ঘটনাটি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাসভবনে ঘটেছে এবং কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করা এবং ভিডিও’র থাম্বনেইলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব, সরকার-কে টেনে হেচড়ে নামানোর ঘোষণা’ শীর্ষক ক্যাপশন ব্যবহার করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ বাংলা টিভি এবং Ourislam24.com নামের দুটো আলাদা পেজ থেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব’ শীর্ষক শিরোনাম এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে ‘সরকারকে টেনে হেচড়ে নামানোর ঘোষণা’ শীর্ষক থাম্বনেইল দিয়ে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের সময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডবের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, ইসলামাবাদে আদালতে হাজির হতে রওনা দিতেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। লাহোরে তাঁর বাসভবন জামান পার্কে এ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ইমরান টুইট করে জানিয়েছেন, বাড়িতে তাঁর স্ত্রী বুশরা বেগম একা আছেন। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় আজ শনিবার ইমরান খানের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জাজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘ইমরান খানের বাসভবনে পুলিশের অভিযান’ শীর্ষক শিরোনামে গত ১৮ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম এএফপি’র একটি ছবি শেয়ার করে জানানো হয়, ইসলামাবাদে আদালতে হাজির হতে রওনা দিতেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। লাহোরে তাঁর বাসভবন জামান পার্কে এ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ইমরান টুইট করে জানিয়েছেন, বাড়িতে তাঁর স্ত্রী বুশরা বেগম একা আছেন। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় আজ শনিবার ইমরান খানের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জাজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইমরান খান টুইট করে লিখেছেন, ‘পাঞ্জাব পুলিশ আমার বাড়ি জামান পার্কে হামলা চালিয়েছে, সেখানে আমার স্ত্রী বুশরা বেগম একা। কোন আইনে তারা এমনটা করছে? এটি লন্ডন পরিকল্পনার অংশ। যেখানে একজনকে নিয়োগে সম্মত হতে পলাতক নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’
ইমরান খানের ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৮ই মার্চ প্রকাশিত টুইটটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু দাবিকৃত ভিডিওতে পাঠ করা হয়েছে। এছাড়া প্রচারিত ভিডিও’র প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব অংশে ব্যবহৃত ছবিটিও প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিংবা অন্যকোনো সূত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব নিয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডবের বিষয়টি সঠিক নয় বরং ঘটনাটি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাসভবনে ঘটেছে।
মূলত, সম্প্রতি ইসলামাবাদে আদালতে হাজির হতে রওনা দিতেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে দেশটির নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ পুলিশের ছবি ব্যবহার করে ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে ‘সরকারকে টেনে হেচড়ে নামানোর ঘোষণা’ শীর্ষক থাম্বনেইল দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে৷ এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাসভবনে পুলিশের অভিযানের সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ পুলিশের ছবি ব্যবহার করে শুধুমাত্র ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পুলিশের তাণ্ডব’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo: ইমরান খানের বাসভবনে পুলিশের অভিযান
- Imran Khan Twitter Account : Tweet
- Rumor Scanner Own Analysis