যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেনি

সম্প্রতি ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেনি বরং ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন কমিশন ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় ‘US religious freedom panel again recommends India for blacklist’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Aj Jazeera

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০১ মে নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগে কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ করার পাশাপাশি ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএসসিআইআরএফ। 

এছাড়াও, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমে The TIMES OF INDIA এর অনলাইন সংস্করণে ‘US panel again takes aim at India on religious freedom’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: Times of India

অর্থাৎ, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবিটি সঠিক নয়। 

তাছাড়া, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার কারণে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার ২০২২ সালে জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নীতির প্রচার ও প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। এ ঘটনায় উক্ত সংঘঠনটির পক্ষ থেকে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। ইউএসসিআইআরএফ কর্তৃক ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশের বিষয়টি-ই যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী একটি স্বাধীন কমিশন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থাটি ২০২০ সাল থেকে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে উপাধি দেওয়ার জন্য আবেদন করছে। এই ধরনের উপাধি কোনও সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ‘পদ্ধতিগত, চলমান (এবং) গুরুতর লঙ্ঘনের’ জন্য অভিযুক্ত করে এবং এতে করে সেই সরকার বা দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

সুতরাং, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img