রবিবার, মে 19, 2024
spot_img

পুরোনো অলংকারের ছবিকে পোড়া কাপড় থেকে তৈরি বিদ্যানন্দের অলংকার দাবি

বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গত ১৫ এপ্রিল তাদের ফেসবুকে পেজ থেকে এবং এক টাকার আহার নামক তাদেরই একটি গ্রুপে কিছু ছবি সমেত একটি পোস্ট করা হয়। 

পোস্টের দাবি 

বিদ্যানন্দের আলোচিত পোস্টে ছয়টি অলংকারের একটি কোলাজ ছবি রয়েছে। তিনটি সারিতে সাজানো ছবিগুলোর প্রতি সারিতে দুইটি করে অলংকারের ছবি স্থান পেয়েছে। 

অলংকারগুলোর বিষয়ে আলোচিত পোস্টের ক্যাপশনে বিদ্যানন্দ দাবি করেছে, “পোড়া কাপড়ের তৈরী সজ্জার অলংকার! আবর্জনা থেকে সম্পদ; এটাই প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কয়েক ঘন্টা আগেই এসব দামী কাপড় ছিলো, আগুন শেষে ছাইয়ে চাপা পোড়া কাপড়। আর সেখান থেকে কাপড়ের অংশ উদ্ধার করে তৈরী করা হচ্ছে সুন্দর সব অলংকার।”

Screenshot source: Facebook 

উক্ত দাবিতে বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজের পোস্টটির স্ক্রিনশট পাওয়া গেলেও পোস্টটটি ডিলিট করে দেওয়ায় এর কোনো আর্কাইভ ভার্সন পাওয়া সম্ভব হয়নি। 

Screenshot source: Facebook 

তবে, এক টাকায় আহার গ্রুপে বিদ্যানন্দের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। বিদ্যানন্দের পেজ থেকে সংস্থাটির অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, গতকাল (১৫ এপ্রিল) ঢাকার নিউমার্কেট লাগোয়া নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগলে সহায়তার হাত বাড়ায় (,,) বিদ্যানন্দ। তবে সেখান থেকে পোড়া কাপড় সংগ্রহ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি তাদের পোস্ট থেকে। 

তবে, গত ০৪ এপ্রিল ঢাকার আরেক সুপরিচিত মার্কেট বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় পাঁচ হাজার দোকানের সব পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় সেখান থেকে পোড়া কাপড় সংগ্রহ করে (,) সংস্থাটি। পরবর্তীতে উক্ত কাপড় বিক্রি এবং কিছু কাপড় থেকে নতুন জামা তৈরির দাবিও রয়েছে সংস্থাটির ফেসবুকে পেজের একাধিক পোস্টে।  

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গতকাল যে পোস্টটি করেছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে কয়েক ঘন্টা আগুনে পুড়ে যাওয়া কাপড়কে কাজে লাগিয়ে অলংকারগুলো তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই পোড়া কাপড়গুলো নিউ মার্কেটের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্ধারকৃত কাপড় বলেই প্রতীয়মান হয়। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যানন্দের পোড়া কাপড় থেকে তৈরি অলংকার দাবিটি সঠিক নয় বরং সংস্থাটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ৬ টি ছবির মধ্যে ৪ টি ছবিই গত ৯ মার্চ WE নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে ফেসবুকে Parvin Shirin নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আজ (১৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।  

পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, বিদ্যানন্দ তার নিজের পন্যের ছবি কপি করেছে। 

শিরিন লিখেছেন, “আমি আমার এই পন্যের ছবিগুলো ৯ই মার্চ অর্থাৎ বঙ্গবাজারের দুর্ঘটনার অনেক আগেই Women and e-Commerce Trust – WE গ্রুপে পোষ্ট করেছি।আর বিদ্যানন্দ আজকে ১৫ই এপ্রিল পোষ্ট করেছে যা স্বাভাবিকভাবেই আমার ছবিগুলো কপি করা।”

Screenshot source: Facebook 

পরবর্তীতে Women and e-Commerce Trust – WE নামক ফেসবুক গ্রুপটিতে গত ০৯ই মার্চ প্রকাশিত পারভীন শিরিনের মূল পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot source: Facebook 

শিরিন তার পোস্টে পাঁচটি অলংকারের ছবি যুক্ত করেছেন। এর মধ্যে চারটি অলংকারের ছবিই বিদ্যানন্দের আলোচিত পোস্টে রয়েছে।

Image Comparison: Rumor Scanner  

অর্থাৎ, বিদ্যানন্দের পেজে ‘পোড়া কাপড়ের তৈরি অলংকার’ ক্যাপশনে প্রকাশিত ৬ টি ছবির মধ্যে ৪ টি ছবিই গত ৯ মার্চ WE নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল।

বাকি দুই ছবি এবং সার্বিক বিষয়ে জানতে বিদ্যানন্দ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। 

তবে আজ (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি পোস্টে (আর্কাইভ) উল্লেখ করা হয়, “সাম্প্রতিক বিদ্যানন্দ পেইজে পোস্ট হওয়া একটি কোলাজ ছবি তে ভুল ছবি সংযুক্ত হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের প্রজেক্ট টিম বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় থেকে অলংকার বানানোর জন্য ইন্টারনেট থেকে বেশ কিছু স্যাম্পল ছবি ডাউনলোড করে। স্যাম্পল ছবি দেখে বানানো প্রোডাক্টগুলোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে পাঠানোর সময় ভুল বশত ইন্টারনেটের রেফারেন্সিয়াল ছবিগুলোও পাঠিয়ে দেয়।”

বিদ্যানন্দ তাদের পোস্টে দাবি করেছে, “সোশ্যাল মিডিয়া টিম যথাযথ ভেরিফিকেশন ও অনুমোদন ছাড়া ছয়টি ছবির একটি কোলাজ তৈরী করে যেখানে দুইটি ছবি বিদ্যানন্দের হলেও বাকী চারটি ছবিই হয় ইন্টারনেটের সে রেফারেন্সিয়াল ছবি।”

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “এ ভুল আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথে আমরা পোস্টটি ডিলিট করি এবং ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন করি। আমরা ভুল ছবি কমিউনিকেট করার দায়ভার নিচ্ছি এবং পেইজের সম্মানিত শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

Screenshot source: Facebook 

অর্থাৎ, বিদ্যানন্দ স্বীকার করেছে যে, তাদের প্রকাশিত ৬ টি ছবির মধ্যে ৪ টি ছবিই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। 

মূলত, সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে কিছু অলংকারের ছবি যুক্ত করে দাবি করে, সেগুলো পোড়া কাপড় থেকে তৈরি। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যানন্দের পেজে ‘পোড়া কাপড়ের তৈরি অলংকার’ ক্যাপশনে প্রকাশিত ৬ টি ছবির মধ্যে ৪ টি ছবিই গত ৯ মার্চ WE নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল। বিদ্যানন্দ মূলত পুরোনো ছবিগুলোই কয়েক ঘন্টা আগে পুড়ে যাওয়া কাপড় থেকে তৈরি অলংকার’ দাবিতে প্রচার করেছে।

সুতরাং, কয়েক ঘন্টা আগে পুড়ে যাওয়া কাপড় থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন অলংকার তৈরি করেছে দাবিতে ভিন্ন একজনের তৈরি পুরোনো অলংকারের ছবি প্রচার করেছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img