শনিবার, অক্টোবর 5, 2024
spot_img

কর্ণাটকে দ্বাদশের পরীক্ষায় মুসকান নয়, প্রথম হয়েছেন তাবাসসুম শাইক

সম্প্রতি ‘আল্লাহুআকবার এর স্লোগানে গোটা বিশ্ব কাপিয়ে দেয়া সেই মুসকান পরিক্ষায় গোটা রাজ্যে প্রথম হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতে হিজাব আন্দোলনে তাকবীর দিয়ে আলোচনায় আসা মুসকানের কর্ণাটক রাজ্যে প্রথম হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কর্ণাটক রাজ্যে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন তাবাসসুম শাইক নামে ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থী। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে গত ২২ এপ্রিল ‘Karnataka 2nd pre-university pass percentage jumps to 74.7; DK, Udupi districts top‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Times of India

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কর্ণাটকের দ্বাদশের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক থেকে তাবাসসুম শাইক ৬০০ নাম্বারের মধ্যে ৫৯৩, বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনন্যা কেএ ৬০০ এর মধ্যে ৬০০ পেয়ে ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএম কৌশিক ও সুরভী এস ৬০০ এর মধ্যে ৫৯৬ নাম্বার পেয়ে যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

Screenshot: Times of India

পাশাপাশি আরেকটি ভারতীয় গণমাধ্যম The Indian Express এ একইদিনে ‘Karnataka 2nd PUC Result 2023 Updates: Over 5.24 lakh students cleared the exam‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: The Indian Express

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কর্ণাটকের উক্ত পরীক্ষায় বিজ্ঞান, বাণিজ্য বিভাগ এবং মানবিক বিভাগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিক্ষার্থী মেধা তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। এই মেধা তালিকায় মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন তাবাসসুম শাইক।

Image Collage: Rumor Scanner

অর্থাৎ কর্ণাটকে পরীক্ষায় গোটা রাজ্যে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন তাবাসসুম শাইক। তবে এই তাবাসসুম শাইককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসকান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

নাম ও ছবির বিভ্রান্তি

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে কর্ণাটকে পরীক্ষায় গোটা রাজ্যে প্রথম হওয়া তাবাসসুমকে তাবাসসুম মুসকান’ নামে পরিচয় করিয়ে দিতে শোনা যায়। পাশাপাশি দুইটি ছবিও ব্যবহার করতে দেখা যায়। 

তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম ও মুসকান দুইজন আলাদা আলাদা ব্যক্তি এবং তাবাসসুম দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও তাবাসসুমের নয়। 

Image Collage: Rumor Scanner 

প্রকৃতপক্ষে ছবিটি কর্ণাটকের মুসকান খান নামে ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর। প্রসঙ্গত, তিনিও হিজাব আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘Hijab row: Complaint filed against outfit for announcing reward to Mandya girl‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাবাসসুম দাবিতে ব্যবহৃত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Times of India

ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবির শিক্ষার্থীটির নাম মুসকান খান৷ তিনি কর্ণাটকের মান্দ্যাইয়া জেলার পিইএস কলেজ অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই শিক্ষার্থীর আরও কিছু ছবি দেখুন এখানে, এখানে। 

Screenshot: Zee News

অপরদিকে তাবাসসুম শাইক ছিলেন কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর Nagarathnamma Meda Kasturirangan Setty Rashtreeya Vidyalaya (NMKRV) College for Women এর শিক্ষার্থী।

Screenshot: Indian Express 

অর্থাৎ, তাবাসসুমের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন আরেক শিক্ষার্থীর।

মূলত, কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনে অংশ নেওয়া মুসকান খান এবং তাবাসসুম শাইক দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাবাসসুমের ছবির সাথে মুসকানের ছবিও তাবাসসুম দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ভারতের কর্ণাটকের হিজাব আন্দোলনের তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাবাসসুম শাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে প্রথম হননি বরং তিনি নিজ প্রদেশ কর্ণাটকে মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। 

প্রসঙ্গত, একই সময়ে বাংলাদেশি একাধিক গণমাধ্যমে তাবাসসুম শাইক দাবিতে মুসকানের ছবি প্রচার করা হয়েছিল। এ সম্পর্কিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img