Home Blog Page 547

আইপিএলে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধের গুজব

সম্প্রতি, ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক শিরোনামে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ভিডিও থাম্বনেইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

বাংলাদেশী

উক্ত থাম্বনেইল দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের নিজের আইডিতে উক্ত তথ্যটি স্ট্যাটাস আকারে পোস্ট করেন।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে ( আর্কাইভ)।    

এছাড়াও উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে অনেকে তাদের আইডি ও পেজে ভিডিওও প্রচার করেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের আইপিএলে নিষিদ্ধ করেনি। এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দও তাদের ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত শিরোনামের থাম্বনেইল যুক্ত কোনো ভিডিও প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে  ABP আনন্দ-এর থাম্বনেইলের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া থাম্বনেইলটি তৈরি করা হয়েছে।অনুসন্ধানের শুরুতে ABP আনন্দ-এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ভিডিওসমূহের থাম্বনেইলগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো থাম্বনেইলযুক্ত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ABP আনন্দ-এর ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, ABP আনন্দ-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওসমূহের থাম্বনেইলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত থাম্বনেইলে শিরোনাম লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে ABP আনন্দ-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত থাম্বনেইলগুলোর ফন্টের মিল নেই। 

Thumbnail Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় ও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)-এর ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে  কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক-এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ মার্চ ‘আইপিএলে ‘ছায়া নিষেধাজ্ঞার’ কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ!’ শীর্ষক শিরোনামে আইপিএল-এর ২০২৩ এর আসরে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ittefaq

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর গত ৪ এপ্রিল থেকে টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। তবে আইপিএলে দল পাওয়া তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমান টেস্ট না খেলেই টুর্নামেন্টটিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় খেলোয়াড়দের টেস্ট না খেলে আইপিএলে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দিতে রাজি ছিলনা বিসিবি। যার ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্ট থেকে ‘ছায়া নিষেধাজ্ঞার’ কবলেও পড়তে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। 

অর্থাৎ, বিসিসিআই কর্তৃক বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের আইপিএলে নিষিদ্ধ করার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মূলত, রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে ২০০৮ সালের পর থেকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ পাকিস্তানি ক্রিকেটার নিষিদ্ধ করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই)। এরপর আর কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে আইপিএলে খেলতে দেখা যায়নি। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর এবছর আইপিএলে অংশগ্রহণের জন্যে এনওসি না পাওয়ায় বাংলাদেশী ও শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড় উপর ছায়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু বিসিসিআই এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি উক্ত গুঞ্জনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। তবে সম্প্রতি আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের হারের পর বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক শিরোনামে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ভিডিও থাম্বনেইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে  ABP আনন্দ-এর থাম্বনেইলের ডিজাইন নকলের মাধ্যমে উক্ত থাম্বনেইলটি তৈরি করে আইপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিষেধাজ্ঞার মিথ্যা তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, ‘আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশী প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করলেন BCCI’ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যম ABP আনন্দ-এর নামে প্রচারিত ভিডিও থাম্বনেইলটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সবার আগে কে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ খুলেছিল?

0

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনীতি: বাংলাদেশে ফেসবুকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যবহারকারীদের যোগাযোগের প্রবণতা অন্বেষণ’ শীর্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাঈদ আল-জামানের প্রকাশিত একটি গবেষণার বরাতে গত ২০ নভেম্বর দেশীয় গণমাধ্যম আজকের পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন  প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে ঐ গবেষণার সূত্রে উল্লেখ করেছে, “আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—এই তিন দলের মধ্যে সবার আগে ফেসবুক পেজ খুলেছিল আওয়ামী লীগ, ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট। জামায়াতের পেজটি খোলা হয় ২০১৪ সালের ২০ জুন এবং বিএনপি ফেসবুকে পেজ খোলে ২০১৯ সালের ১৩ জুন। বিএনপি সবার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হলেও দলটির পেজ জনপ্রিয় হয়েছে খুব দ্রুত।”

আওয়ামী লীগ

আজকের পত্রিকার ই-পেপারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে “Social media politics uncovered: exploring user engagement with political parties on Facebook in Bangladesh” শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং সেখানে উপরোক্ত তথ্যটি যেভাবে লেখা হয় তা নিম্নরূপ, 

“Among the three parties mentioned, the oldest Jamaat page was established on 20 June 2014. Conversely, BAL’s Facebook page was created more recently on 30 August 2013. However, BNP’s page  is relatively new, launched on  13  June 2019.”

গবেষণাপত্র এবং এর ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বর্তমানের যে তিনটি ভেরিফাইড অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ রয়েছে সেই তিনটি পেজ বিশ্লেষণ করে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। উল্লেখিত তিন দলের বর্তমান অফিশিয়াল ফেসবুক পেজগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পেজ সবার আগে খোলা হয়েছে। তবে এখানে কেবল দলগুলোর বর্তমান পেজ বিবেচনা করা হয়েছে, কোনো দলের পূর্বে আরও কোনো অফিশিয়াল পেজ থাকতে পারে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি এবং সেটির উল্লেখও করা হয়নি। এটি বিবেচনায় না আনার ফলে দল তিনটির মধ্যে সবার আগে আওয়ামী লীগ ফেসবুক পেজ খুলেছে এবং বিএনপি সবার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে শীর্ষক ভুল তথ্য প্রতিবেদনে থেকে গেছে।

বিএনপি কবে প্রথম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ খুলে?

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্তমান যে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি রয়েছে সেটি ২০১৯ সালের ১৩ জুন খোলা হয়, যা গবেষণাপত্র এবং সংবাদ প্রতিবেদনেও লেখা হয়েছে। তবে এটি তাদের প্রথম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ নয়। তাই এটির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বিএনপি সবার শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে এমনটা বলার সুযোগ নেই।

অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভোরের কাগজে “বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বিএনপির সেসময়কার অফিশিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার বিষয়ে জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  “বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ www.facebook.com/bnpbd.org হ্যাক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দলটির সহ-দফতর সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানান।”

যেহেতু বিএনপির বর্তমান ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি ২০১৯ সালের ১৩ জুন চালু করা হয়, সেহেতু ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির যে ভেরিফাইড পেজটি হ্যাক হয়, সেটি বর্তমান পেজের আগে তাদের অফিশিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ছিল তা সহজেই অনুমেয়।

Screenshot : Creation date of BNP’s current official page

তবে, ভোরের কাগজে বিএনপির হ্যাক হওয়া সেই ফেসবুক পেজের যে লিংক যুক্ত করা হয়েছে সেটি ব্রাউজ করলে বিএনপির বর্তমান ফেসবুক পেজ প্রদর্শিত হয়। বিএনপির পূর্বের পেজ এবং বর্তমান পেজের ইউজারনেম একই সেট করার কারণে মূলত এমনটা হয়েছে। 

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে হ্যাক হওয়ার প্রায় ৪৪ ঘন্টার মধ্যে বিএনপির তখনকার ভেরিফাইড পেজটি উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৩ জুন পুরোনো পেজটি বাদ দিয়ে একটি নতুন ভেরিফাইড পেজ খোলা হয় এবং পূর্বের পেজটির নাম ও ইউজারনেম পরিবর্তন করে পূর্বের পেজের ইউজারনেম (bnpbd.org) নতুন পেজের জন্য সেট করা হয়। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে, বিএনপির সেই পুরোনো ফেসবুক পেজটি খুঁজে পাওয়া যায়, যার বর্তমান নাম Bangladesh National Media, যার ইউজারনেম bangladeshnationalmedia এবং পেজ লিংক www.facebook.com/bangladeshnationalmedia। পেজটি ২০১৯ সালের জুনের পর আর বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। পেজের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে দেখা যায়, পেজটি ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল  Bangladesh Nationalist Party – BNP নামে প্রথম তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জুন নতুন পেজ চালু করার পর ২০১৯ সালের ২১ জুন পেজটির নাম প্রথম পরিবর্তন করা হয় এবং পরবর্তীতে একাধিকবার নাম পরিবর্তনের পর পেজটি বর্তমানে Bangladesh National Media নামে রয়েছে। 

Screenshot : Page transparency of BNP’s old page

যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল এটিই সেই পেজ

এটিই যে বিএনপির পূর্বের সেই ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ তা একাধিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও, পূর্বের ঐ পেজের ইউজারনেমও যে bnpbd.org ছিল, যা পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে ঐ পেজে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের একটি ভিডিওর পোস্ট লিংক সমেত শেয়ার করা হয়। ঐ লিংকে ক্লিক করলে তা ঐ পেজেই নিয়ে যায় এবং এখানে ঐ পেজের পূর্বের ইউজারনেমও bnpbd.org থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
ঐ পোস্টটির লিংক : https://www.facebook.com/bnpbd.org/videos/2267567969944829/

Screenshot from Facebook 

২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বরের দ্য ডেইলি স্টারের একটি পোস্টে বিএনপির ফেসবুক পেজ মেনশন পাওয়া যায়, ঐ মেনশনে Bangladesh Nationalist Party -BNP এর ওপর ক্লিক করলে তা Bangladesh National Media পেজে নিয়ে যায়। 

Screenshot : The Daily Star 

২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার পর গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে ঐ ফেসবুক পেজের যে স্ক্রিনশট পাওয়া যায়, সেই স্ক্রিনশটের ছবিটি Bangladesh National Media পেজে এখনও রয়েছে,  যা ২০১৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ঐ পেজে আপলোড করা হয়েছিল।

Collage by Rumor Scanner 

এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে Bangladesh National Media নামের এই পেজটি বিএনপির পূর্বের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

অর্থাৎ,  বিএনপি প্রথম তাদের ফেসবুক পেজ খুলেছে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজটি খোলা হয় ২০১৪ সালের ২০ জুন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ Bangladesh Awami League খুলেছে ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট। এর পূর্বে আওয়ামী লীগের Bangladesh Awami League নামে অফিশিয়াল কোনো ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়নি। এর পূর্ব থেকে আওয়ামী লীগের নামে কিছু ফ্যানপেজ থাকলেও সেগুলো অফিশিয়াল ছিল না। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকেও এমনটাই জানা যায়।

Screenshot : Bangladesh Awami League FB post

সুতরাং, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী এই তিন দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি সবার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছে। 

তথ্যসূত্র

  1. Rumor Scanner’s Analysis 
  2. বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড 

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার ভিডিও দাবিতে ভিন্ন দেশের পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ জয়ের পর বিশ্বকাপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টিমের দেশে ফেরার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

অস্ট্রেলিয়া

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার কোনো ঘটনার নয় বরং এটি কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষের ফুটবল টিমকে স্বাগত জানানোর ভিডিও। 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির কয়েকটি স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Voice of America’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর “Morocco’s National Football Team Receives Homecoming Welcome”শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও  খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মরোক্কোর জাতীয় ফুটবল দলকে স্বাগত জানাতে মরোক্কোর রাজধানী রাবাতে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হওয়ার সময়কার ভিডিও এটি। 

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Al Jazeera’ এর ওয়েবসাইটে “Morocco’s Atlas Lions receive hero’s welcome on return home” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে বেলজিয়াম, পর্তুগাল এবং স্পেনকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করে দলটি। উক্ত অর্জনে জাতীয় ফুটবল দলের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কুচকাওয়াজের সময় রাজধানী রাবাতে দলটিকে স্বাগত জানায় ভক্তরা।  

অর্থাৎ, ভিডিওটি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সময়ের নয়।

মূলত, কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ মরক্কো ফুটবল দল চতুর্থ স্থান অর্জন করে দেশে ফিরলে দেশটির মানুষ মরক্কো ফুটবল টিমকে স্বাগত জানান। সেই ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে সাম্প্রতিক দেশে ফেরার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ভিন্ন দেশের পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার সাম্প্রতিক ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ;যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ভিডিওটি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করার নয়

সম্প্রতি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের জাহাজ আটক করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি জাহাজ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করার কোনো ঘটনার নয় বরং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলি ধনকুবের আব্রাহাম আনজারের মালাকানাধীন জাহাজ জব্দ করার দৃশ্য উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ নভেম্বর “Houthis release video showing Red Sea ship hijacking” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। হুথি বিদ্রোহীরা দাবি করছে যে জাহাজটির সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। তবে ইসরায়েল জানায়, জব্দ করা জাহাজটি ব্রিটিশ মালিকানাধীন এবং জাপানিদের দ্বারা পরিচালিত।

কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম Al Jazeera এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ নভেম্বর “Yemen’s Houthi rebels seize cargo ship in Red Sea” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবলিক শিপিং ডাটাবেসে উক্ত জাহাজের মালিকানার বিস্তারিত বিবরণীতে জাহাজের মালিকানার তথ্যে ইসরায়েলি ধনকুবের এবং রে কার ক্যারিয়ার লিমিটেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আব্রাহাম আনজার এর নাম পাওয়া যায়। 

Screenshot from Al Jazeera

এছাড়া, ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যম Times of Israel এ গত ২১ নভেম্বরে “Iran-backed Yemen rebels’ attack on Israel-linked ship raises risks in vital Red Sea” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জব্দ হওয়া জাহাজে আব্রাহাম আনজার এর অংশীদার থাকার তথ্য পাওয়া যায়।

Screenshot from Times of Israel

মূলত, গত ১৯ নভেম্বর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের ধনকুবের আব্রাহাম আনজারের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করে। এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ এবং ভিডিও প্রচারিত হয়। সম্প্রতি এই ভিডিওকে  ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলি নাগরিকের একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করার ভিডিও হামাস ইসরায়েলের জাহাজ জব্দ করেছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

মোহাম্মদ রিজওয়ানকে পাকিস্তান ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়নি

0

সম্প্রতি, ওডিআই ক্রিকেটে পাকিস্তানের নতুন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

 পাকিস্তান

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ‘ESPNCricInfo’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ নভেম্বরে “Babar Azam resigns as Pakistan captain in all formats” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Espncricinfo

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের ক্রিকেটার বাবর আজম ক্রিকেটের তিন ফরমেট (টি-টোয়েন্টি, ওডিআই, টেস্ট) এর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

সেদিনই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে “Shan Masood appointed Test and Shaheen Shah Afridi T20I captain” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রেস রিলিজ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: pcb.com.pk

প্রেস রিলিজ থেকে জানা যায়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানি ক্রিকেটার শান মাসুদকে পাকিস্তান পুরুষ ক্রিকেট দলের টেস্ট অধিনায়ক এবং শাহীন শাহ আফ্রিদিকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে উক্ত প্রেস রিলিজে পাকিস্তান ওডিআই দলের (পুরুষ) অধিনায়ক কে হবেন এই ব্যাপারে পিসিবি থেকে কিছু বলা হয়নি।

এছাড়া, এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়া নিয়ে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবর আজম তিন ফরমেট থেকে অবসর নেওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সম্প্রতি টি২০ এবং টেস্ট ফরমেটের জন্য ভিন্ন দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে নিয়োগ দিয়েছে। তবে ওডিআই ফরমেটে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটারকে নিয়োগ দেয়নি। এছাড়া, গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যমে সূত্রেও মোহাম্মদ রিজওয়ানের পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক হওয়া নিয়ে কোনো তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, পূর্বে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:

সুতরাং, মোহাম্মদ রিজওয়ানকে পাকিস্তান ওডিআই ক্রিকেট দলের (পুরুষ) নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

হামাসের তৈরি গোপন সুড়ঙ্গ দাবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সুড়ঙ্গের ভিডিও প্রচার

সুড়ঙ্গ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট  দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত সুড়ঙ্গের ভিডিওটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের তৈরি নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে নির্মিত সেনাবাহিনীদের একটি সুড়ঙ্গের ভিডিও। এছাড়াও সুড়ঙ্গটির সাথে হামাস কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো প্রকার সম্পর্কও নেই।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটিতে @urbexkev ইউজারনেমের একটি টিকটক ওয়াটারমার্ক দেখা যায়। ওয়াটারমার্কটির সূত্র ধরে উক্ত টিকটক আইডিতে  #bunker #war #ww2 #history #underground শীর্ষক হ্যাসট্যাগে গত ৩১ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিওরটির হ্যাশট্যাগ এবং লোকেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির লোকেশনের জায়গায় যুক্তরাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভিডিওটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বাঙ্কার বলেও দাবি করা হয়েছে। 

Screenshot: Facebook

উক্ত ভিডিওর হ্যাশট্যাগের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে TheSecretVault নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ জুলাই ‘TIGHT SQUEEZE BUNKER. SECRET Army Battle WW2 Underground HQ. MAN vs HOLE’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সুড়ঙ্গের সাথে উক্ত ভিডিওর সুড়ঙ্গের হুবহু মিল রয়েছে। তবে ভিডিওটিতে সুড়ঙ্গটির নাম অথবা এর অবস্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভিডিওরটির বিস্তারিত বিবরণীতে beyondthepoint নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ৮ জুলাই REIGATE ARMY BATTLE HEADQUARTERS শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের লিংক পাওয়া যায়। 

Screenshot: beyondthepoint

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নতুন ও গোপন একটি সেনা সদরদপ্তর নির্মাণের জন্যে ইংল্যান্ডের সারে’র রিগেট শহরকে বেছে নেন। যার কারণে তিনি রিগেট শহরে আলোচিত এই সুড়ঙ্গটি তৈরি করেন। উক্ত সুড়ঙ্গটিকেই তিনি তার নতুন ও গোপন সেনা সদরদপ্তরে পরিণত করেন। যার দায়িত্ব বার্নার্ড মন্টগোমারি নামের একজন সিনিয়র ব্রিটিশ আর্মি অফিসারকে দেওয়া হয়। যিনি প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধে ব্রিটিশ সেনা সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যার কারণে উক্ত সুড়ঙ্গটি Monty’s Hideout নামেও জনপ্রিয় ছিল। 

Screenshot: beyondthepoint

এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনটিতে সুড়ঙ্গটির বেশকিছু ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত সুড়ঙ্গটির মিল রয়েছে।

Screenshot: beyondthepoint

পরবর্তী অনুসন্ধানে TheSecretVault নামের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর শুরুতে দেখতে পাওয়া কাঠের দরজা, বাদামী রঙের ভবন এবং ভবনের বাইরে ‘The National Trust’ শীর্ষক ফলকটি গুগল স্ট্রিট ভিউ এ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Location Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর সুড়ঙ্গটি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের তৈরি নয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে “দ্য ডেইলি মেইল” এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে ছয়শোর বেশি গুপ্ত বাঙ্কার নির্মিত হয়। এই বাঙ্কারগুলো সৈন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি বেইস হিসেবে কাজ করতো, যেগুলো সৈন্যদের মৌলিক চাহিদা অনুযায়ী কাঠের বিছানা, রান্নার উপকরণ ও কেমিক্যাল টয়লেটে সুসজ্জিত ছিল। সেসময়ের অনেক বাঙ্কার খুঁজে পাওয়া গেলেও তাদের সিংহভাগের অবস্থানই এখনো অজানা।

মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভিন্ন ও নতুন ধরনের গোপন সেনা সদরদপ্তর নিমার্ণের জন্যে ব্রিটেনের সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ইংল্যান্ডের সারে’র রিগেট শহরে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেন। যেটিকে তিনি তার ভিন্নধর্মী সেনা সদরদপ্তরে পরিণত করেন। বিধ্বস্ত সেই সুড়ঙ্গটি বর্তমানে উৎসুক তরুণদের আর্কষণের কেন্দ্র বিন্দু হওয়ায় প্রায়শই বিভিন্ন ইউটিউবার, টিকটকাররা সেখানে গিয়ে সুড়ঙ্গটির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত সুড়ঙ্গেরই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজা উপত্যকায় মাটির নিচে হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, হামাসের তৈরি গোপন সুড়ঙ্গ দাবিতে ‍দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে নির্মিত একটি সুড়ঙ্গের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সিইসির পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দেওয়ার গুজব

সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ক্ষমাচেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম” ও “ক্ষমা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। 

সিইসির পদত্যাগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে শুরুতেই কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। এছাড়া ভিডিওতে চ্যানেলটির উপস্থাপক কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া দাবিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যগের ঘোষণা দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন,সরকারকে অবশ্যই সমঝোতার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে নইলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাবে। এজন্য সরকার অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ আহ্বান জানান।’

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম চারটি ভিডিও ক্লিপই ২০২২ সালে ‘ভোটের মাঠে তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ান’ এমন বক্তব্যের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভি, মাছরাঙা টিভি(, ) এবং ডিবিসি নিউজ এ প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ভোটের সময় সহিংসতা করতে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ করার কথা বলেন সিইসি। 

অর্থাৎ, উক্ত বক্তব্যের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।  

আলোচিত ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এর দুইটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। ভিডিওগুলোর অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই চ্যানেলে ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় সংকটে নির্বাচন কমিশন BNP। Election Commission। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের ১মিনিট ৩৬ সেকেন্ড এবং ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে বিএনপির না আসার ঘোষণায় কমিশন বলছে, এ অবস্থায় নির্বাচন হলেও, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক সংলাপে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকটের সমাধান হতে পারে আলোচনা কিংবা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও সমঝোতার তাগিদ দেন সিইসি।

অর্থাৎ, এই দুইটি ভিডিও ক্লিপও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়ার সম্পর্কিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পুর্ণবহাল করা হয়নি। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষনা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছে” শীর্ষক দাবি যুক্ত করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি  প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ,  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেট প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়ার গুজব

সম্প্রতি, ‘নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী’শীর্ষক ক্যাপশনে এবং ‘সেনাবাহিনী কথা শুনছে না হাসিনার সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব নিলো আর্মি’ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

সেনাবাহিনীর

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে 1A News এর সম্পাদন কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন নামের একজন ও নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার বক্তব্যের ভিডিও দেখানো হয়৷ 

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিওতে 1A News এর লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে 1A News ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ নভেম্বর “হাসিনা কি সেনাবিদ্রোহের ভয়ে ভীত?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

১৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে 1A News এর সম্পাদক কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতেও বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এনটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ নভেম্বর “প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে : রাশেদা সুলতানা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর সাথে একটি অংশের আলোচিত ভিডিওর এই অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের একথা বলেন

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি “নির্বাচনের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনার কথা শুনছে না সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর পেয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দর্শকদের হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানাচ্ছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত

গত ১৯ নভেম্বর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের (পুরুষ) ফাইনাল ম্যাচে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া দল মুখোমুখি হয়। এরই প্রেক্ষিতে “সেদিন ১৪২ কোটি মানুষের হয়ে ১১টা ছেলে লড়ছে। হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানাচ্ছে ভারতীয় দর্শক” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

চল্লিশায়

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই ভিডিওটি গত ১৪ অক্টোবর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচেও হনুমান চল্লিশায় ভারতীয় দর্শকদের প্রার্থনা জানানোর দাবিতে ইউটিউবে প্রচার করা যায় হয়। ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের (পুরুষ) – ২০২৩ এর ফাইনাল ম্যাচে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে কিংবা এর আগে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের সময় ভারতীয় দর্শক হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানানোর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৪ অক্টোবরে বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশনের সময় ধারণকৃত এই ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওর আসল ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দিয়ে তাতে হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানানোর ভিন্ন একটি ভিডিওর অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আলোচিত ভিডিওর কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Sadashiv52815 শীর্ষক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ অক্টোবরে “Darshan Raval at Narendra Modi Stadium” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর শিরোনামে থাকা তথ্য থেকে জানা যায় গত ১৪ অক্টোবরে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশন করেন। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে গত ১৫ অক্টোবরে দর্শন রাওয়ালের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিও থেকে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) – ২০২৩ এ গত ১৪ অক্টোবরে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে সংগীত পরিবেশন করার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

অডিও যাচাই

প্রাসিঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে jaipur.waley_ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩ জুনে প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা করছিলেন।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়।

মূলত, গত ১৪ অক্টোবরে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে (পুরুষ) – ২০২৩ ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে ভারতীয় সংগীত শিল্পী দর্শন রাওয়াল সংগীত পরিবেশন করেন। সেই মূহুর্তে দর্শকসারি থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়। তবে সম্প্রতি সেই ভিডিও ডাউনলোড করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড বাদ দিয়ে তাতে ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা করার সময়ে ধারণকৃত ভিন্ন ভিডিওর অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দর্শকরা হনুমান চল্লিশায় প্রার্থনা জানাচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র