Home Blog Page 547

ফেক আইডি দিয়ে নওগাঁ-০৫ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী শিষাণের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর গুজব প্রচার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ‘দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষান’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে নওগাঁ-০৫ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে বেশকিছু পোস্ট করা হয়েছে। 

একটি পোস্টে নিজে সরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিতে বলে লেখা হয়েছে– “আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় নওগাঁ বাসি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নওগাঁ-05 থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। কাজেই আপনারা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন প্রার্থীর প্রতি ভরসা রেখে ব্যারিস্টার নিজামুদ্দিন জলিল জন কে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আমরা জন্মসূত্রে আওয়ামী লীগ কোনদিন নৌকার বিরোধিতা করিনি আমার রাজনীতির চল্লিশ বছরেও নৌকার কোনদিন বিপক্ষে যায়নি আসলে নির্বাচনে জোর করে কিছু অসাধু খারাপ লোক আমাকে দাঁড় করিয়েছে। তারা কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে এগ্রিমেন্ট করেছে যদি নির্বাচনে জয়লাভ করি তাহলে সব কাজ আমরা পরিচালনা করব। আমি তাদের এই শর্তে রাজি না কিন্তু এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে নওগাঁবাসী আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে, আর বেশি কিছু বললাম না।”

শিষাণ

আরেক পোস্টে লেখা হয়েছে, “আমি ইতিমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে গেছি, কাজেই আমাদের সকলের প্রিয় প্রার্থী ব্যারিস্টার নিজামুদ্দিন জলিল জন ভাতিজাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।”

এছাড়াও আরও একাধিক পোস্টে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থণ জানানোর দাবি ওই আইডিতে করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁ-০৫ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এর নির্বাচন থেকে সরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি গুজব। বরং, দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এর নামের একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে তার নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থণের বিষয়টি প্রচার করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এর আসল ফেসবুক আইডি Shishan Ahmed খুঁজে পাওয়া যায়। মূল আইডিতে গতকালের একটি পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে ওই পেজের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিকে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করা হয় এবং পেজটি ভুয়া বলে জানানো হয়। 

শিষাণ আহনেদ তার আসল ফেসবুক আইডির ওই পোস্টে লিখেছেন– “কে বা কাহারা আমার নামে এই ফেক আইডি খুলে নির্বাচন কেন্দ্রীক নানামুখী অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নওগাঁবাসীকে এই সব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। আমি নওগাঁ বাসীর সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আগামীকাল ৭ই জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আমি নির্বাচন করছি এবং সবাই কে ট্রাক মার্কায় ভোট দিয়ে আমার পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করছি।

আমার এই একমাত্র ফেইসবুক আকাউন্ট ব্যতিত অন্য কোনো আকাউন্ট নেই।  

নিচের প্রোফাইল টি একটি ফেক প্রোফাইল, সবাই দয়া করে রিপোর্ট করবেন। লিঙ্ক – https://www.facebook.com/profile.php?id=61554461750515&mibextid=LQQJ4d

Screenshot: Facebook 

ওই ফেক আইডির অপপ্রচারের বিষয়ে গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছেন তিনি৷ সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও তিনি তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন। 

ওই সংবাদ সম্মেলনে ফেক আইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার পরাজয় জেনে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তারা আমার নামে ফেক আইডি খুলে আমার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এবং নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার কথা বলে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। তিনি এই অপপ্রচারে নওগাঁ সদর আসনের ভোটারদের বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে আছি এবং থাকবো। এতে বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিষাণ আরও বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে আমার নামে ফেক আইডি খোলা হয়। আমি ওই সময়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। ফেক আইডি থেকে আগে কোন অপপ্রচার করা না হলেও আজ সন্ধ্যা থেকে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ফেক আইডি থেকে অপপ্রচারের বিষয়ে প্রশাসন ও রিটানিং অফিসারকে জানিয়েছি। তবে এখনও কোনো প্রতিকার পাইনি।”

পরবর্তীতে শিষাণ আহমেদ ফেসবুক আইডিতে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বরের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি ওই আইডিটি যে ফেক তা নিয়ে লোকজনকে সতর্ক করে একটি পোস্ট করেছিলেন। 

তিনি ওই পোস্টে লিখেন– “কে বা কাহারা আমার নামে এই ফেক আইডি খুলে নির্বাচন কেন্দ্রীক নানামুখী অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নওগাঁবাসীকে এই সব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। আমি নওগাঁ বাসীর সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আপনারাও আমার পাশে থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।”

Screenshot: Facebook 

প্রোফাইল ট্রান্সপারেসি সেকশন থেকে দেখা যায়, ওই আইডিটি গত ৩ ডিসেম্বর (২০২৩) খোলা হয়। এটির প্রোফাইল ও কাভার ছবি ব্যতিত গতকালের পূর্বের আর কোনো পোস্ট বর্তমানে টাইমলাইনে নেই। 

Screenshot: Facebook

অর্থাৎ, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নওগাঁ-০৫ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে ওই আইডিটি তৈরি করে স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর বিপক্ষেই পোস্ট করা হয় এবং সর্বশেষ ওই প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার গুজব প্রচার করা হয়, যা ফেসবুক পোস্ট ও সংবাদ সম্মেলের মাধ্যমে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী অপপ্রচার হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।

সুতরাং, নওগাঁ-০৫ আসনের সংসদ নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এর নৌকা প্রার্থীকে সমর্থণ দেওয়ার বিষয়টি গুজব। 

তথ্যসূত্র

  1. Press conference of the independent candidate Shikhar Ahmed 
  2. Facebook post of Shikhar Ahmed
  3. Rumor Scanner’s own analysis 

মুজিব সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করা জায়েদ খান উত্তরায় রেডিমেড ফ্ল্যাট পাননি

0

সম্প্রতি, “মুজিব সিনেমার ‘টিক্কা’ পেলেন উত্তরায় রেডিমেড ফ্ল্যাট” শীর্ষক শিরোনামে আরটিভি’র লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

মুজিব সিনেমায়

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুজিব সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করা জায়েদ খান উত্তরায় কোনো ফ্ল্যাট পাননি বরং আরটিভিরর প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফটোকার্ডে থাকা আরটিভির লোগোর সূত্র ধরে আরটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করেও উক্ত শিরোনামে বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও, আরটিভি’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে অনুসন্ধানে আরটিভি এর বিনোদনভিত্তিক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ RTV Entertainment । বিনোদন এ গত ২ জানুয়ারি “‘মুজিব’ সিনেমার নায়ক পেলেন রাজউকের ১০ কাঠার প্লট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে এর ডিজাইন, শিরোনাম লেখার প্যাটার্ন এবং প্রকাশের তারিখের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডের নায়ক শব্দের স্থলে ‘টিক্কা’ এবং রাজউকের ১০ কাঠার প্লট লেখাটির পরিবর্তে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ‘উত্তরায় রেডিমেড ফ্ল্যাট’ শীর্ষক লেখাটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি “রাজউকের ১০ কাঠা প্লট পাচ্ছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুজিব সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা আরিফিন শুভ পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়া, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ সিনেমার প্রযোজক লিটন হায়দারের নামেও ৩ কাঠা জমির প্লট বরাদ্দ হয়েছে বলে উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে, ‘মুজিব’ সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করা চলচিত্র অভিনেতা জায়েদ খানের ফ্ল্যাট বা প্লট প্রাপ্তির বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, আরটিভি এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৬ জানুয়ারির একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Source: Rtv Facebook Page

উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায় যে, আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া। আরটিভি উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করেনি।

মূলত, মুজিব সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা আরিফিন শুভ পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান। পরবর্তীতে আরটিভি’র বিনোদন ভিত্তিক ফেসবুক পেজে আরিফিন শুভ’র প্লট প্রাপ্তির বিষয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। আরটিভি’র প্রকাশিত সে ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে মুজিব সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করা জায়েদ খান উত্তরায় রেডিমেড ফ্ল্যাট পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বে লাক্স সাবানের মোড়কে জায়েদ খানের এডিটেড ছবি বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, মুজিব সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করা জায়েদ খান উত্তরার রেডিমেড ফ্ল্যাট পেয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

সারাদেশে ৫০০ ভোটকেন্দ্রে আগুন এবং সিইসি কর্তৃক নির্বাচন স্থগিতের গুজব

গত ০৫ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সারাদেশে ৫০০ ভোট কেন্দ্রে আগুন নির্বাচন স্থগিত করলেন সিইসি– শীর্ষক শিরোনামে এবং ৫০০ শত ভোট কেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দিল, এইমাত্র সারাদেশে ভোট স্থগিত করলেন সিইসি– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। 

৫০০ ভোটকেন্দ্রে আগুন

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি এবং সিইসি নির্বাচন স্থগিত করেননি বরং আলোচিত ভিডিও প্রকাশের পূর্বে ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগানোর ঘটনা না ঘটলেও গত ০৬ জানুয়ারি অন্তত ২১ ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে সিইসি’র একটি বক্তব্য দেওয়ার ফুটেজ রয়েছে। পরবর্তীতে ‘সময় টিভি’র একটি সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও রয়েছে। এরপর যমুনা টেলিভিশনের দুইটি সংবাদ প্রতিবেদন রয়েছে এবং চ্যানেল ২৪ এর একটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং একটি সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও রয়েছে। পরিশেষে বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনি’র বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও রয়েছে। 

ভিডিও যাচাই- ১

সিইসি’র বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওটিতে ‘আরটিভি’র লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে আরটিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ২৪ ডিসেম্বর “ভোট কেন্দ্রে কারচুপি ঘটনা ঘটলে, কেন্দ্র বন্ধ: সিইসি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর, (২০২৩) ময়মনসিংহ টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ছয় জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সিইসি।

সভায় তিনি বলেন, এখন কিছু অভিযোগ থাকলেও প্রচারণা ও ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট এক জায়গায় দিলে আরেক জায়গায় চলে যাবে এটার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো ভ্রান্ত প্রচারণা। ভোটের দিন একটি মাত্র কেন্দ্রে কারচুপি হলেও ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটের আগের পনেরো দিন কি হলো না হলো সেটা কিছুদিন পর মানুষ ভুলে যাবে। কিন্তু ভোটের দিন রেজাল্টটা কী হলো, পোলিংয়ের মধ্যে কারচুপি হলো কি না, জবরদস্তি সিল মারা হলো কি না এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

তবে, উক্ত মতবিনিময় সভায় সিইসি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে কিছু বলেননি।

ভিডিও যাচাই- ২

এই অংশে ‘সময় টিভি’র একটি সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও দেখানো হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জানুয়ারি “গাইবান্ধা-৫ আসনে ভোট বন্ধ হয়নি, ইসির বিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

 Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গাইবান্ধা-৫ আসনে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সেই তথ্যের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে সময় টিভি। 

এখানে, সারাদেশে ৫০০ ভোট কেন্দ্রে আগুন দেওয়া বা নির্বাচন স্থগিত করা সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৩

ভিডিওর এই অংশে একজন সংবাদ উপস্থাপককে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায় এবং ভিডিওটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো দেখা যায়। লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জানুয়ারি “নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার আগুনে পুড়ছে বিভিন্ন জেলার ভোট কেন্দ্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে থাকা সংবাদ উপস্থাপক এবং পাঠ করা সংবাদের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা উপস্থাপক এবং পাঠ করা সংবাদের মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, দেশের কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত কয়েকদিনে। এর প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে যমুনা টেলিভিশন। 

তবে, এই প্রতিবেদনে সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি এবং নির্বাচন স্থগিতেরও কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৪

ভিডিওর এই অংশেও একজন সংবাদ পাঠিকাকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায় এবং ভিডিওটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগো দেখা যায়। লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জানুয়ারি “ভোটের আগেই রাজশাহী ও ফেনীতে ৪টি ভোটকেন্দ্রে আগুন” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে থাকা সংবাদ পাঠিকা এবং পাঠ করা সংবাদের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা পাঠিকা এবং পাঠ করা সংবাদের মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, রাজশাহীতে ৪টি ভোটকেন্দ্রে আগুন এবং ফেনীর সোনাগাজীতে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রতিবেদন করে যমুনা টেলিভিশন।

তবে, এখানেও সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি এবং নির্বাচন স্থগিতেরও কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৫

ভিডিওর এই অংশে একজনকে সংবাদ পাঠ করতে শোনা যায়। পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ৬ জানুয়ারি “নির্বাচনের আগের রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে আগুন!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনের  মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে আগুন এবং যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে চ্যানেল ২৪। 

তবে, এই প্রতিবেদনেও সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি এবং নির্বাচন স্থগিতেরও কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

ভিডিও যাচাই- ৬

এই অংশে সময় চ্যানেল ২৪ একটি সরাসরি সম্প্রচার দেখানো হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জানুয়ারি “ফেনীর চর শাহাধিকারী ভোটকেন্দ্রে আগুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর চর সাহাভিখারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বিদ্যালয়টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনের একটি ভোট কেন্দ্র। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল সাতটার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তবে, এখানে রিপোর্টার এবং সঞ্চালককে সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি এবং নির্বাচন স্থগিতেরও কোনো তথ্য উল্লেখ করতে শোনা যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৭

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে বিএনপি’ট নেতা গোলাম মাওলা রনিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়৷ পরবর্তীতে অনুসন্ধানে Golam Maula Rony নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ জানুয়ারি “উভয় সংকটে পুলিশ! আ.লীগের গৃহযুদ্ধ চরমে! বিএনপি জামাত পেটানো পুলিশ ডামি মামিদের নিকট অসহায়!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, পুলিশের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে ইতিহাস টেনে ব্যাখ্যা দেন বিএনপি’র এই নেতা। 

তবে, গোলাম মাওলা রনিকে সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি এবং নির্বাচন স্থগিতেরও কোনো তথ্য উল্লেখ করতে শোনা যায়নি। 

এছাড়া, সারাদেশে ৫০০টি ভোটকেন্দ্রে আগুন এবং নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ৭ জানুয়ারি “ভোটের আগে ১৪ জেলায় ২১ কেন্দ্রে আগুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে  শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্তত ২৩ জেলায় ৪২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪ জেলার ২১টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে সারাদেশে ৫০০ ভোট কেন্দ্রে আগুন নির্বাচন স্থগিত করলেন সিইসি- শীর্ষক শিরোনামে এবং ৫০০ শত ভোট কেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দিল, এইমাত্র সারাদেশে ভোট স্থগিত করলেন সিইসি- শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিও প্রকাশের সময় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত ০৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ২১ ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় সিইসি’র দেওয়া একটি বক্তব্যের কিছু অংশ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনও কয়েকটি সরাসরি সম্প্রচার এবং বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনির ভিন্ন বিষয়ের ওপর দেওয়া একটি বক্তব্যকে কেটে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সারাদেশে ৫০০ ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচন স্থগিত করেছেন সিইসি- শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনে নিহত পরিবার দাবিতে জীবিত একটি পরিবারের ছবি প্রচার

0

গত ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আগুনে পুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। 

বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনে নিহত পরিবারের ছবি দাবি করে ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। “এই পরিবারটি গতকাল বেনাপোল এক্সপ্রেসের ট্রেন দূর্ঘটনায় পুড়ে মারা গিয়েছিলো।” এবং “গতকাল বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডে এই স্ত্রী ও তার সন্তানের পুড়ে যাওয়ায় নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিয়েছেন এই ভাই..!” ইত্যাদি শিরোনামে ওই ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।  

এক্সপ্রেসের আগুনে নিহত

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যে ছবিটি প্রচারের মাধ্যমে বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনে নিহত পরিবারের ছবি দাবি করা হয়েছে সেটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে নিহত কোনো পরিবারের ছবি নয় বরং ওই ছবির প্রত্যেকে জীবিত। ছবিটি ভুলভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে নিহত হওয়ার ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে Chanchal Barman নামের ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। চঞ্চল বর্মণ সেই পোস্টে ওই ছবির পরিবার বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনে নিহত হয়েছে শীর্ষক দাবির দুটি পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে লিখেছেন– “আমার এই ছবি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে কেউ ভুয়া নিউজ ছড়াছে…. দয়া করে কেউ বিশ্বাস করবেন না।”

Screenshot: Facebook 

সেই পোস্টে তিনি তার স্ত্রী Babita Roy এর ফেসবুক আইডিও ট্যাগ করেছেন। ববিতা রায়ের আইডিতেও ওই একই পোস্ট পাওয়া যায়। চঞ্চল বর্মণ এবং ববিতা রায়ের সাথে ভাইরাল ওই ছবির স্বামী-স্ত্রীর হুবহু মিল রয়েছে। অর্থাৎ, ওই ছবির স্বামী-স্ত্রী হচ্ছেন চঞ্চল বর্মণ ও ববিতা রায় দম্পতি এবং তারা তাদের ছবি নিয়ে প্রচারিত ভুল তথ্য নিজেরাই ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে চঞ্চল বর্মণের আইডির একটি পোস্টে ভাইরাল ওই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। “রূপম বাবুর বছরের প্রথম পূজায় ঘুরাঘুরি” শিরোনামে গত বছরের ২৩ অক্টোবর তিনি ওই ছবিটিসহ মোট ৭টি ছবি যুক্ত করে পোস্টটি করেছিলেন।

Screenshot: Facebook

মূলত, গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনের ঘটনায় মৃত পরিবার দাবিতে চঞ্চল বর্মণ ও ববিতা রায় দম্পতির তাদের সন্তানের সাথে তোলা গত বছরের পূজোর একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। নিজেদের ছবি নিয়ে এই ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়লে ওই দম্পতি বিষয়টিকে ভুয়া নিশ্চিত করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

সুতরাং, বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনে মারা যাওয়া পরিবার দেখিয়ে চঞ্চল-ববিতা দম্পতির পরিবারের ছবি প্রচার করে তাদের নিহত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Chanchal Barman: Facebook Post
  • Rumor Scanner’s own analysis  

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জড়িয়ে ডেইলি স্টারের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

সম্প্রতি “সারা দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে খুশি ইইউ।” শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার বাংলা’র একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়েছে।

উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সারা দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে খুশি ইইউ শীর্ষক কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড দ্য ডেইলি স্টার প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা গণমাধ্যমটির ফটোকার্ড এডিট করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

ওই ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি গতকাল ৬ জানুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশিত ফটোকার্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

Screenshot:  Facebook

পরবর্তীতে এই তারিখ অনুযায়ী ডেইলি স্টারের পেজে অনুসন্ধান করে এরূপ কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। দ্য ডেইলি স্টার বাংলার ফেসবুক পেজে গতকাল ৬ জানুয়ারির প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলি অনুসন্ধান করে সেখানে লাল-সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের দুটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। যার মধ্যে আলোচিত ফটোকার্ডটি নেই। দ্য ডেইলি স্টার এর আসল ফটোকার্ডের সাথে ওই ফটোকার্ডের ফন্টেরও কোনো মিল নেই।

Photocard Comparison: Rumor Scanner  

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ওই ফটোকার্ড সম্পর্কে জানতে চেয়ে রিউমর স্ক্যানার এর পক্ষ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে ওই ফটোকার্ডটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়। 

আমাদের যোগাযোগের খানিকক্ষণ পর ডেইলি স্টার এর ফেসবুক পেজে ওই ফটোকার্ডটিকে ভুয়া চিহ্নিত করে একটি পোস্টও দেওয়া হয়।

Screenshot: Facebook 

এছাড়াও, সারাদেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে খুশি ইইউ শীর্ষক কোনো সংবাদ অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, দ্য ডেইলি স্টার বাংলার ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে ওই ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষজনক ফলাফল পেয়ে খুশি ইইউ শীর্ষক ফটোকার্ডটি ভুয়া, এটি দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশিত কোনো ফটোকার্ড নয়।

তথ্যসূত্র

  1. Rumor Scanner Investigation 
  2. Statement of The Daily Star 

নৌকায় সিল মারা ব্যালটের এই ছবিটি ২০১৮ সালের, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের নয় 

আজ (০৭ জানুয়ারি) সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ০৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের। 

নৌকায় সিল

উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নৌকায় সিল মারা ব্যালটের ছবিটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নয় বরং এটি ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুরোনো ছবি।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল – তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: DW.

উক্ত ব্যালটের ছবি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ব্যালটে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ফরিদ আহমেদ ও মোমবাতি প্রতীকে মো. জালাল উদ্দিন এর নাম রয়েছে। উক্ত প্রার্থীদের নাম এবং প্রতীকের সাথে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল – তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মিল পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত নাম ও প্রতীকের সূত্র ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৯ জুলাই মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “গাজীপুর সিটি: নির্বাচিতদের তালিকার গেজেট প্রকাশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ বিষয়ক উক্ত সংবাদে সেসময় গাজীপু্র সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকের তথ্য পাওয়া যায়। সে তথ্যের সাথে আলোচিত ব্যালট পেপারে থাকা প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকের মিল পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, প্রচারকৃত ব্যালটের ছবিটি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের।

মূলত, চলমান দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শুরুর আগেই ০৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ব্যালটের ছবি দাবি করে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নৌকায় সিল মারা ব্যালটের ছবিটি ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের।

অর্থাৎ, ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সিল মারা ব্যালট পেপারের পুরোনো ছবিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জো বাইডেনের ধন্যবাদ জানানোর ভুয়া তথ্য প্রচার 

সম্প্রতি “অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন জো বাইডেন ” শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক ‘কালবেলা’র একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়েছে। এই ফটোকার্ডের লেখাটি এমন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

কালবেলার ফটোকার্ড

উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন জো বাইডেন শীর্ষক কোনো সংবাদের ফটোকার্ড কালবেলা প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা গণমাধ্যমটির ফটোকার্ড এডিট করে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করে বাইডেনের ধন্যবাদ জানানোর ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে কালবেলার ফেসবুক পেজের ফটোস অপশনে ওই ফটোকার্ডটি অনুসন্ধান করা হয়৷ তবে এরূপ কোনো ফটোকার্ড সেখানে পাওয়া যায়নি। 

কালবেলার ফেসবুক পেজের ফটোকার্ডগুলি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তাদের নিউজ ফটোকার্ডে সাধারণত তারিখ উল্লেখ থাকে, যা প্রচারিত ওই ফটোকার্ডে নেই। এছাড়াও কালবেলার ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির চারপাশে ফ্রেমটি কিছুটা রাউন্ড করে দেওয়া হয়। তবে প্রচারিত ওই ফটোকার্ডে এমনটা নেই।

Photocard Comparison by Rumor Scanner   

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জো বাইডেনের ধন্যবাদ দেওয়ার কালবেলার এই ফটোকার্ডটি নির্বাচনের আগের দিন থেকেই প্রচার করা হয়েছে। 

Screenshot: Facebook 

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ওই ফটোকার্ড সম্পর্কে জানতে চেয়ে রিউমর স্ক্যানার এর পক্ষ থেকে কালবেলার সাথে যোগাযোগ করা হলে কালবেলা কর্তৃপক্ষ ওই ফটোকার্ডটিকে ভুয়া নিশ্চিত করে জানায়– “কালবেলা এমন কোনো কার্ড বা নিউজ প্রকাশ করেনি। এটা ভুয়া কার্ড। প্রধানমন্ত্রীকে জো বাইডেন ধন্যবাদ জানিয়েছেন এমন কোনো তথ্যও কালবেলার কাছে নেই।”

এছাড়াও, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচন অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধন্যবাদ জানানোর বিষয়ে অনুসন্ধান করে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ 

মূলত, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধন্যবাদ জানানোর একটি ভুয়া তথ্য কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে নির্বাচনের আগের দিন থেকে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন জো বাইডেন শীর্ষক ফটোকার্ডটি ভুয়া, এটি কালবেলার প্রকাশিত কোনো ফটোকার্ড নয়।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner Investigation 
  • Statement of Kalbela 

গাইবান্ধা-১ আসন থেকে সরে দাঁড়াননি নাহিদ নিগার, ডিপফেক ভিডিও ফেসবুকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ নিগারের দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে নাহিদ নিগার সদৃশ ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “সম্মানিত সুন্দরগঞ্জবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আমি আপনাদের নাহিদ নিগার। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ থেকে ঢেঁকি মার্কায় নির্বাচন করার কথা ছিল। তবে আজ থেকে আমি নির্বাচনে আর অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছি না।…”

“গাইবান্ধা গেজেট – Gaibandha Gadget” নামে একটি পেজ থেকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে- “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম এবং শামিম হায়দার পাটোয়ারি ভাইকে সমর্থন করলাম। আপনারা সবাই দলে দলে কেন্দ্রে যাবেন এবং শামীম হায়দার পাটোয়ারি ভাইয়ের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিবেন। সবাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

গাইবান্ধা-১

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ নিগার এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং এই ভিডিওটিও তার নয় বরং নিগারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি ছবি সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।  

আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে নাহিদ নিগারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্টারে উক্ত ছবির সন্ধান পাই যার সাথে ভিডিওতে দেখানো নাহিদ নিগারের পোশাকের হুবহু মিল পরিলক্ষিত হয়। তার প্রোফাইলে একই ছবি একাধিকবার আপলোড করা হলেও এই পোস্টটিই সবচেয়ে পুরোনো। 

Screenshot: Facebook

তবে নাহিদ নিগারের এই প্রোফাইলে আলোচিত ভিডিওটির অস্তিত্ব না মেললেও আজই তাকে এ সংক্রান্ত পোস্ট করতে দেখা যায়। এতে বলা হয়, “গত ৬ ঘণ্টা আগে আমার নামে ফেইক আইডি করে আমার ছবি দিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি বলে একটা মিথ্যা বানোয়াট অডিও –  ভিডিও প্রকাশ করে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” 

Screenshot: Facebook

পোস্টে সংযুক্ত তার স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তিনি ‘নাহিদ নিগার’ নামে আরেকটি প্রোফাইলকে ফেক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পাশে দিয়েছেন তার মূল পেজের স্ক্রিনশট। 

নাহিদ নিগার তার একই প্রোফাইলে এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে এ সংক্রান্ত ফেক আইডিতে প্রচারিত ভিডিওটির লিংক যুক্ত করেছেন। তবে লিংকে ক্লিক করে ভিডিওটির অস্তিত্ব মেলেনি। অর্থাৎ, ইতোমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভিডিওটি।  

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ (০৭ জানুয়ারি)। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ নিগার “নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, নিগারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি ছবি সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, চলমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনের ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘বিউটি বেগম’ও একইভাবে ডিপফেকের শিকার হয়েছেন৷ এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

প্রসঙ্গত, ডিপফেক হলো বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।

সুতরাং, একটি ডিপফেক ভিডিওর মাধ্যমে গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ নিগার “নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

তথ্যসূত্র

নির্বাচনের পূর্বের রাতে ঢাকার ভয়াবহ অবস্থা দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

আজ অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের পূর্বের রাতে ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ দাবিতে সম্প্রতি “ঢাকাবাসী কেউ ঘর থেকে বের হবেন না ঢাকার অবস্থা খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি খারাপ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।  

রাতে ঢাকার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচনের পূর্বের রাতে ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ দাবিতে যে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অবরোধের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মশাল মিছিলের সময়কার একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এর মন্তব্য ঘরে ভিডিওটি সিলেটের বলে অনেক নেটিজেনদের মন্তব্য করতে দেখা যায়। 

Screenshot Collage : Rumor Scanner 

উক্ত মন্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Voice of Golapganj’ নামক একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর “সিলেটে সিএনজি অটোরিকশা -এ্যাম্বুলেন্সে আ*গু*ন-ভাঙ-চু-র করলো বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওতে থাকা বিস্তারিত বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাটি সিলেটের এবং এটি প্রায় দেড় মাস পূর্বের একটি ভিডিও। 

ভিডিওটির সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর “সিলেটে অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল,যানবাহনে আগুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে দেখানো স্থিরচিত্রের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায় এবং এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রতিবেদনটি উক্ত ঘটনার। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অবরোধের সমর্থনে সিলেটে মশালমিছিল করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি সিলেটের সুবিদবাজার মোড় এলাকায় পৌঁছালে সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পাঠানটুলা এলাকার দিক থেকে আম্বরখানাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

মূলত, গত বছরের ২৬ নভেম্বর অবরোধের সমর্থনে সিলেটে মশাল মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার পুরোনো ভিডিওকেই নির্বাচনের আগের রাতে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, আজ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের রাতে ঢাকার ভয়াবহ অবস্থা দাবি করে ইন্টারনেটে একটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বগুড়া-২ আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি বিউটি বেগম 

ফেসবুকে ‘বিউঢী বেগম’ নামের এক অ্যাকাউন্টধারী নিজেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনের ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘বিউটি বেগম’ দাবি করে আজ (০৬ জানুয়ারি) একটি ভিডিও (আর্কাইভ) ও একটি ডিজিটাল ব্যানার (আর্কাইভ) পোস্ট করে দাবি করেন, তিনি বগুড়া-২ আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

বগুড়া-২

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিউটি বেগম বগুড়া-২ আসন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি বরং তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে চালু থাকা একটি ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এই কাজে যে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে তার অডিওটিও ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি যে অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয় সেটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

Screenshot: Facebook 

এই অ্যাকাউন্টের বন্ধু তালিকায় মাত্র ৬৮ জনকে দেখা যাচ্ছে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর এই অ্যাকাউন্টের প্রথম এক্টিভিটি দেখা যাচ্ছে। সেসময় একটি প্রোফাইল পিকচার আপলোড করা হয়। এরপর ১৩ ডিসেম্বর একটি কাভার ফটো আপলোড করা হয়। তবে এই দুই ছবি বিউটি বেগমের ছিল না। একটিতে ফুল এবং অন্যটিতে একটি কক্ষের সাজসজ্জা দেখা যাচ্ছে। সার্বিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, সেসময় এই অ্যাকাউন্টটি ভিন্ন নামে চালু ছিল। 

এই অ্যাকাউন্টে বিউটি বেগমের বিষয়ে প্রথম তথ্য বা ছবি প্রকাশ করা হয় আজই (০৬ জানুয়ারি)। দুপুরে বিউটি বেগমের একটি ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করা হয়৷

Screenshot collage: Rumor Scanner

এর ঘন্টা দুয়েক পরই বিউটি বেগমকে ভোট দেওয়ার আহ্বান সম্বলিত নির্বাচনী লিফলেট পোস্ট করা হয় অ্যাকাউন্টটিতে।

Screenshot: Facebook 

এর কিছুক্ষণ পর প্রথমে তার নির্বাচন সরে দাঁড়ানোর দাবি করে একটি ব্যানার এবং পরবর্তীতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। 

আমরা ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে  একই সাজ এবং শাড়ি পরিহিত বিউটি বেগমের একটি ভিডিও  তার নামে পরিচালিত আরেকটি অ্যাকাউন্টে খুঁজে পাই। তবে এটি আরো কিছুটা দীর্ঘ এবং অডিও-ও ভিন্ন। লাইভ সম্প্রচারিত এই ভিডিওতে বিউটি বেগম তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তবে তাকে এই ভিডিওতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে দেখা যায়নি।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, এই ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে নিয়ে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে বিউটি বেগম তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বিউটি বেগম তার অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিতই লাইভ করেন। ২০১৪ সালে খোলা এই অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিতই তিনি নির্বাচনী প্রচারণার খবরাখবর দিয়েছেন। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে আজ একটি ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, ফেক অ্যাকউন্ট থেকে তার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি বলেও নিশ্চিত করেন। 

মূলত, বগুড়া-২ আসনের ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থী বিউটি বেগম গত ০৪ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তার সেই ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে তার নামে চালু করা একটি ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটির সাথে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে তিনি তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, ফেসবুকে ‘বিউঢী বেগম’ নামে এক অ্যাকাউন্টধারী নিজেকে আসন্ন  নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘বিউটি বেগম’ দাবি করে ডিপফেক ভিডিও ও ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে দাবি করেন, বিউটি বেগম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র