Home Blog Page 548

বিরল রোগে আক্রান্ত রাজিবের নাম্বার-ঠিকানা বদলিয়ে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রতারণা 

0

সম্প্রতি, গত ৫ জানুয়ারি Course House নামের একটি ফেসবুক পেজে বিরল রোগে আক্রান্ত রাজিব নামের এক তরুনের চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। পোস্টটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার রিয়্যাক্ট, ৫ শতাধিক কমেন্টস পড়েছে, শেয়ার হয়েছে প্রায় ৫০০ বার।  

পোস্টটিতে লেখা হয়– “টগবগে যুবক রাজিব, পড়াশোনায় ছিল খুবী ভালো। ২০২১ সালে এসএসসি তে ৪.৩৯ পেয়ে উত্তির্ন হয়। পরিবার চালাতে বেকারিতে কাজ করতো, হটাৎ কি যে হয়ে গেলো। এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে দীর্ঘদিন ধরে। যার চিকিৎসা বাংলাদেশে নাই।…এখন জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে আছে সে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ইন্ডিয়াতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ইন্ডিয়া নেওয়া ও ব্যায়বহুল চিকিৎসার এতো অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই আপনাদের সকলের কাছে হাত জোর করে সাহায্য প্রার্থনা করছি। হিন্দু বলে অবহেলা করবেন না। সবার উপরে মানুষ সত্য। তাই সবাই দয়া করে মানবিক ভাবে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিন। বিকাশ/নগদ(পার্সোনাল):01405924842, 01986374193 রাজিবের ঠিকানা: জেলা: নেত্রকোনা, থানা: পূর্বধলা, গ্রাম: হাটকান্দা।”

বিরল রোগে আক্রান্ত

Course House নামের ফেসবুক পেজে এই পোস্ট হওয়ার পর কপি-পেস্ট হয়ে আরও কিছু পোস্ট হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়,  বিরল রোগে আক্রান্ত ছবির ওই তরুনের নাম রাজিব গাইন, তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা নিচ্ছেন। তবে Course House নামের ফেসবুক পেজটির সাথে রাজিবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই পেজটি প্রতারণার উদ্দেশ্যে রাজিব গাইনের ছবি ব্যবহার করে তার ঠিকানা ও নাম্বার বদলিয়ে নিজেদের বিকাশ ও নগদ নাম্বার যুক্ত করে অর্থ সহায়তা তুলছে। 

অনুসন্ধানে আমরা গত ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর ডাঃ মিলন হায়দার নামের একটি ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট খুঁজে পাই। ডাঃ মিলন হায়দার তার ফেসবুক পেজে রাজিবের একটি ভিডিও যুক্ত করে লিখেছেন– “আমাদের বন্ধু রাজিব গাইন। পিতা: কার্তিক চন্দ্র মন্ডল। গ্রাম: মাদিয়া, আশাশুনি,সাতক্ষীরা। দুরারোগ্য এক ব্যাধিতে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। যার চিকিৎসা বাংলাদেশে নাই। এখন জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে আছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ইন্ডিয়াতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ইন্ডিয়া নেওয়া ও ব্যায়বহুল চিকিৎসার এতো অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই আপনাদের সকলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি। উন্নত চিকিৎসা পেলে রাজিব হয়তো বেঁচে যাবে। এক জীবন বাঁচবে,বাঁচবে একটি পরিবার। তাই রাজিবকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন। রাজীব  -01750806651”

ভিডিওতে রাজিবকে বলতে শোনা যায়– “আমি রাজিব গাইন। বাড়ী সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার মাদিয়া গ্রামে। আমি দীর্ঘদিন যাবত বিরল রোগে আক্রান্ত। প্রতিনিয়ত আমার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ফেটে রক্ত বের হয়। এবং হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে এখন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমার পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি আপনাদের কাছে সাহায্য কামনা করছি। আমি বাঁচতে চাই। আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করবেন। ”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিডিয়া নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ এ রাজীবের জন্য দেওয়া একটি মানবিক সাহায্য আবেদনের পোস্টেও রাজিব গাইনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। রাজিবের বিস্তারিত ঠিকানা, সাহায্য পাঠানোর জন্য রাজিবের ফোন নাম্বার, ব্যাংক হিসাব নাম্বার ওই পোস্টে উল্লেখ রয়েছে। পোস্টে লেখা হয়–

“সাহায্য না করতে পারেন, একটু শেয়ার দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবে,,,,,,,মানুষ মানুষের জন্য- জীবন জীবনের জন্য! একটি মানবিক আবেদন।

নাম -রাজিব গাইন
বয়স- ২০
পিতা- কার্তিক চন্দ্র গাইন
গ্রাম – মাদিয়া
ইউনিয়ন- বড়দল
থানা – আশাশুনি
জেলা- সাতক্ষীরা
মোবা-০১৭৫০-৮০৬৬৫১(বিকাশ ও নগদ) রাজিব নিজ।

রাজিব গাইন
ডাচ বাংলা ব্যাংক
একাউন্ট নং-1801580073521

প্রতিমা রানী
রাজিবের পিশিমা
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
একাউন্ট নং-15090311183729”

পরবর্তীতে রাজিব গাইনের ফেসবুক আইডিতে গত ২৪ ডিসেম্বরের (২০২৩) একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে রাজিব লিখেছেন, “আপনাদের দোয়া/আর্শিবাদে আমি একটু সুস্থ হয়েছি৷ আপনারা সকলে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি ইতিমধ্যে ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি, কিন্তু সেখানে যে টাকা খরচ হবে সে টাকা আমি এখনও সংগ্রহ করতে পারিনি। তাই দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমি আপনাদের ভাই, আপনাদের বন্ধু আপনাদের সন্তান, আমি বাঁচতে চাই।  01750806651(বিকাশ, নগদ) পার্সোনাল নিজ..”

Screenshot: Facebook

‘Course House’ নামের ফেসবুক পেজের পোস্টটি এবং তাদের দেওয়া বিকাশ ও নগদ নাম্বার সম্পর্কে জানতে চেয়ে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে রাজিব গাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে রাজিব জানান, “এরা প্রতারক চক্র। এদের জন্য আমি এখনও প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারিনি। আমার প্রকৃত বিকাশ নাম্বার ০১৭৫০-৮০৬৬৫১।”

অর্থাৎ, Course House নামের ফেসবুক পেজ রাজিবের ঠিকানা সাতক্ষীরার আশাশুনির পরিবর্তে নেত্রকোনার পূর্বধলা ব্যবহার করে রাজিবের নাম্বারের (01750806651) পরিবর্তে নিজেদের বিকাশ ও নগদ নাম্বার(01405924842, 01986374193) বসিয়ে রাজিবের ছবি ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার প্রতারণা করছে। 

সুতরাং, রাজিব গাইনের ছবি ব্যবহার করে Course House নামের ফেসবুক পেজের সাহায্যের আবেদনের বিষয়টি প্রতারণামূলক এবং ভুয়া। 

তথ্যসূত্র

ডিবিসির ফটোকার্ড বিকৃত করে চট্টগ্রাম-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালামের নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বিষয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ডিবিসি’র আদলে তৈরি উক্ত ফটোকার্ডে আবদুচ ছালামের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হয়, ‘শেষ মুহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী

উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবদুচ ছালামের বিষয়ে ডিবিসি নিউজ এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ডিবিসি’র ডিজাইনের আদলে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফটোকার্ডে থাকা ডিবিসি নিউজের লোগোর সূত্র ধরে ডিবিসি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করেও উক্ত শিরোনামে বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, ডিবিসি’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে অনুসন্ধানে ডিবিসি’র ভেরিফাইড পেজে গত ৪ জানুয়ারি ‘শেষ মুহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন নজিবুল বশর মাউজভান্ডারী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে এর শিরোনাম লেখার প্যাটার্নের মিল রয়েছে। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডের ‘নজিবুর বশর মাইজভান্ডারী’ লেখাটির পরিবর্তে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ‘সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম’ শীর্ষক লেখাটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। 

এছাড়া অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে আবদুচ ছালামের নামের এই ফটো কার্ডটি ডিবিসি নিউজের নয় শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: DBC News

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। 

এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি মিথ্যা। ডিবিসি নিউজের পক্ষ থেকে এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়নি।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। উক্ত ঘটনায় ডিবিসি নিউজের পেজে এ সংক্রান্ত ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়। উক্ত ফটোকার্ড বিকৃত করে সম্প্রতি, ‘শেষ মুহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম’ শীর্ষক শিরোনামে  ডিবিসি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবদুচ ছালাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর তথ্যটি ভুয়া।  

সুতরাং, ‘শেষ মুহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর হাতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতারের গুজব

গত ০৪ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার ওবায়দুল কাদের, গাড়ি ভাঙচুর ওবায়দুল কাদের আহত’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতার

ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ৭০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৩  হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবর্তন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হননি এবং গাড়ি ভাঙচুরের কারণে তিনি আহতও হননি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপের সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে সেখানে কোথাও সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতার হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাছাড়া গাড়ি ভাঙচুরের ফলে ওবায়দুল কাদেরের আহত হওয়ার কোনো দৃশ্যও সেখানে দেখা যায়নি।

উক্ত দাবিগুলো যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ওবায়দুল কাদের সম্পর্কিত ক্লিপগুলো যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই ‘Minister Obaidul Quader inspects roads at Savar, Gazipur before Eid’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটি’র মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটিতে ওবায়দুল কাদেরকে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়। তিনি যানজটের জন্য এসব গাড়িকে দায়ী করে লাইসেন্স বাতিল সহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘দেশ টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৪ জানুয়ারি ‘ওবায়দুল কাদেরের গণসংযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপটি’র মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

এই ভিডিওটিতে কোথাও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ওবায়দুল কাদেরের আহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত গণসংযোগ চলাকালে ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন না।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সেনাবাহিনীর হাতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতার হওয়া কিংবা গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ওবায়দুল কাদেরের আহত হওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সেনাবাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৪ জানুয়ারি Media Cell 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার ওবায়দুল কাদের, গাড়ি ভাঙচুর ওবায়দুল কাদের আহত’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপের সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।

সুতরাং, সেনাবাহিনীর হাতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতার হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দুর্গার ছবি– গুজব নাকি সত্য?

0

তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে দুর্গার ছবি থাকা নিয়ে ফেসবুকে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। নতুন বছরের প্রথম দিন উৎসবের মাধ্যমে বই বিতরণ হওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের মলাট বা প্রচ্ছদের ভিতর পার্শ্বে হিন্দু ধর্মের দেবী দুর্গার ছবি দেখা যায়। পরবর্তীতে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দুর্গার ছবি বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায় এবং ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। 

অধিকাংশই বিষয়টি সত্য হিসেবে প্রচার করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দূর্গাপূজার মূর্তির ছবি থাকার বিষয়ে সমালোচনা করছে। আবার কেউ এটাকে গুজব বলে সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করছে। অনেকে প্রমাণসহ তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বই লাইভে দেখিয়ে দূর্গার ছবি থাকার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব বলছে। কিছু ফেসবুক পেজ ও আইডি আরও একধাপ এগিয়ে বলছে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর জন্য তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ছবি এডিট করে অনলাইনে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

এমতবস্থায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দূর্গা পূজার প্রতিমার ছবি থাকার বিষয়টি গুজব নাকি সত্য তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। অনেকে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যোগাযোগ করেছে আমাদের সাথেও, জানতে চেয়েছে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা? 

পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের কভার পেজের ভিতরের পার্শ্বে দূর্গা প্রতিমার ছবি থাকার বিষয়টিকে যারা এডিটেড বা গুজব বলছে তাদের দাবি সত্য নয়। আবার ঢালাওভাবে যারা প্রাইমারির ইসলাম বইয়ে হিন্দু ধর্মের দেবী দুর্গার ছবি যুক্ত করা হয়েছে বলছে তাদের দাবিতেও রয়েছে বিভ্রান্তির সুযোগ। মূলত দুইটি জেলার কিছু স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে বইয়ের প্রচ্ছদ বা মলাটের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের মলাট মুদ্রিত রয়ে গেছে। এছাড়া অন্য কোনো জেলার তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে এ সমস্যা নেই৷ তাই ঐ দুই কিংবা একটি জেলার নির্দিষ্ট কিছু স্কুলের বই বাদে অন্য জেলার বই দেখে এ বিষয়টি যাচাই করে এটাকে গুজব বা এডিটেড বলারও সুযোগ নেই– যদিও অনেকে এমনটা করেছে। 

গত ৪ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাব এর অনলাইন পোর্টালে “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে দুর্গার ছবি” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘১ জানুয়ারি উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। তবে তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে ঘটেছে কলঙ্কজনক ঘটনা। মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো বেশকিছু বইয়ে পাওয়া গেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী দূর্গার ছবি। সাতক্ষীরার দুটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব বই পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। ঘটনা আচ করতে পেরে একদিন পরই শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বইগুলো ফিরিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ৫-১০টি স্কুলে এ ধরনের ভুল বই পাওয়ার খবর জেনেছি। এর পরপরই আমরা সেগুলো তুলে এনেছি। তবে বইয়ের সংখ্যা কত তা তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা ছাপাখানার ভুল। ভুলটা হলো- ইসলাম শিক্ষা বইয়ের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের মলাট রয়ে গেছে। এটা জানার পরপরই আমরা বই তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। শুনেছি ৪০টি বইয়ে এমন ভুল হয়েছে। সাতক্ষীরার একটি স্কুলে এমন ভুল ছাপা বই পাওয়া গেছে। নতুন করে বই ছাপিয়ে দ্রুত শিক্ষার্থীদের বইটি দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জাগো নিউজের একটি প্রতিবেদনেও এনসিটিবি চেয়ারম্যানের অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়। জাগো নিউজকে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা ছাপাখানার ভুল। ভুলটা হলো- ইসলাম শিক্ষা বইয়ের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের মলাট রয়ে গেছে। এটা জানার পরপরই আমরা বই তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। শুনেছি ৪০টি বইয়ে এমন ভুল হয়েছে। সাতক্ষীরার একটি স্কুলে এমন ভুল ছাপা বই পাওয়া গেছে। নতুন করে বই ছাপিয়ে দ্রুত শিক্ষার্থীদের বইটি দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া উক্ত বিষয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে (দুর্গা) প্রতিমার ছবি নিয়ে তোলপাড় চলছে। সোমবার বই উৎসব করে সাতক্ষীরা জেলায় ১ হাজার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ধরনের বই বিতরণ করা হয়। বই বিতরণের কয়েক ঘণ্টা পরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই সাতক্ষীরা স্থানীয় প্রশাসনকে স্কুল ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব বই তুলে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানায়, সরেজমিনে মঙ্গলবার শহরের টাউন সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ওই বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের সব বই জমা দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। যারা আসতে কিংবা বই জমা দিতে দেরি করছে তাদেরকে মুঠোফোনে দ্রত বই জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন দায়িত্বরত শিক্ষা কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির মুসলিম শিক্ষার্থীদের ইসলাম ধর্মের ৮ হাজার ১৫০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সে বইগুলো পুনরায় সংগ্রহ করছি। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া চৌধুরী বলেন, প্রিন্টিং মিসটেকের কারণে বইগুলো তুলে নেওয়া হচ্ছে।” 

এ বিষয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  “সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই বিতরণের পর ৩১ হাজার ৪৭২টি বই ফেরত নেওয়া হয়েছে। ১ জানুয়ারি বই বিতরণ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর রাতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে দ্রুত শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা জেনেছেন যে এ বইয়ের মলাটের (প্রচ্ছদ) ভেতরের পাতায় ও শেষ পাতার ভেতরে কিছু ভুল হয়েছে। তবে সব বইয়ে ভুল হয়নি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. আবদুল গণি বলেন, সদর উপজেলায় ৮ হাজার ১৫০টি বই বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ২৩৩টি বইয়ের মলাটের ভেতরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এমন বিষয়বস্তু পাওয়া যায়।”

পরবর্তীতে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়ে রিউমর স্ক্যানার এর পক্ষ থেকে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের জানান, “এটি সাতক্ষীরায় গ্রামের একটি স্কুলে ৪০টি বইতে পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সারা দেশে না হয়ে কেনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলো, বইগুলো এনসিটিবি এর কিনা ফরেনসিক টেস্ট করা হবে। তাছাড়া কিভাবে, কেনো হলো তা খুঁজে বের করা হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এটি নিয়ে কাজ চলছে।”

সুতরাং, সারাদেশের সকল জেলায় নয়, কেবল দুই জেলায় বিতরণ করা তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার প্রচ্ছদের ভিতর পার্শ্বে কিছু বইয়ে দুর্গা পূজার প্রতিমা সম্বলিত হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি ভার্সনের প্রচ্ছদ মুদ্রিত হয়ে থাকার ঘটনাটি সত্য। মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি এমন ভুল কেন হলো, কিভাবে হলো সে বিষয় নিয়েও কাজ চলছে।

সমকালের ফটোকার্ড বিকৃত করে জোনায়েদ সাকির নামে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বিষয়ে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকা একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে শীর্ষক দাবি করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমকালের আদলে তৈরি উক্ত ফটোকার্ডে জোনায়েদ সাকি এবং তার স্ত্রী বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রেসিডেন্ট তাসলিমা আখতারের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হয়, “জোনায়েদ সাকির বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলেন তাসলিমা।”

জোনায়েদ সাকির

উক্ত ফটোকার্ড সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জোনায়েদ সাকি ও তাসলিমা আখতারকে জড়িয়ে দৈনিক সমকাল কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সমকালের আদলে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে সমকালের আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৫ জানুয়ারি, ২০২৪।

Screenshot: Facebook

এ সূত্রে অনুসন্ধানে সমকালের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৫ জানুয়ারিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত একাধিক ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। এই ফটোকার্ডগুলোর মধ্যে জোনায়েদ সাকিকে নিয়ে সমকালের ফটোকার্ডের আদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ফটোকার্ডটির ন্যায় কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া সমকাল’র ফটোকার্ড গুলোর ফন্টের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টেরও ভিন্নতা দেখা যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তী অনুসন্ধানে দৈনিক সমকালের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৫ জানুয়ারি একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

সমকাল উক্ত ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এছাড়া, জোনায়েদ সাকির বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে তার স্ত্রী তাসলিমা আখতারের বিবাহ বিচ্ছেদ চাওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গণসংহতি আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে তার স্ত্রী তাসলিমা আখতার বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছেন দাবিতে দৈনিক সমকালের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমন কোনো ফটোকার্ড সমকাল প্রকাশ করেনি। আলোচিত দাবির বিষয়েও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য মেলেনি।

উল্লেখ্য, একতরফা নির্বাচন বর্জনের দাবিতে জোনায়েদ সাকি দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে আসছেন।

সুতরাং, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছেন দাবিতে সমকাল কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া। 

তথ্যসূত্র

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসককে বদলি করা হয়নি

লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে বদলী করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকের কিছু পোস্টে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হোমায়রা বেগম। 

উক্ত দাবিগুলোর বিষয়ে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে বদলী করা হয়নি বরং লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন কর্তৃক বদলির হুমকি পাওয়ার পর উক্ত দাবিটি প্রচার করা হলেও বিষয়টির সত্যতা মেলেনি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গত ০২ জানুয়ারি একাধিক সংবাদমাধ্যমে (, , ) লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের বিষয়ে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। এসব সংবাদে জানানো হয়, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বদলির হুমকি দেওয়ায় পবনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। 

পবনকে ইসির সিদ্ধান্ত জানিয়ে কমিশনের আইন শাখার উপসচিব আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও লক্ষ্মীপুরের রিটার্নিং অফিসার সুরাইয়া জাহানকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ‘অকথ্য, আপত্তিকর ও অশোভন’ কথা বলেন। এই ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে ‘তিন দিনের মধ্যে বদলি করার হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি ‘ভয়-ভীতি’ দেখিয়েছেন যুবলীগ নেতা পবন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পবন এর প্রার্থিতা বাতিলের সদয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। 

তবে এর একদিন পরই প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পড়ুন এখানে, এখানে৷ 

অর্থাৎ, এই ঘটনা থেকেই আলোচ্য দাবিটির সূত্রপাত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের এ সংক্রান্ত শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জেলা প্রশাসকদের বদলি সংক্রান্ত সর্বশেষ সরকারি আদেশ প্রকাশিত হয়েছে গত ২৭ ডিসেম্বর (২০২৩)। উক্ত আদেশসহ এই শাখার কোনো আদেশেই লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে বদলির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। 

তাছাড়া, জাতীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে লক্ষ্মীপুরের জেলার সেকশনে জেলা প্রশাসক হিসেবে সুরাইয়া জাহানের নামই উল্লেখ রয়েছে। 

এছাড়া, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনও নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে জেলা প্রশাসক বদলির খবরটিকে গুজব বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

Screenshot: Facebook 

ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে হোমায়রা বেগম নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, একই নামে এক ব্যক্তি ২০১৭-১৮ সালে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন।

মূলত, গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২৩) লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ‘অকথ্য, আপত্তিকর ও অশোভন’ কথা বলার অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগে জানান, তাকে এবং পুলিশ সুপারকে ‘তিন দিনের মধ্যে বদলি করার হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি ‘ভয়-ভীতি’ দেখিয়েছেন পবন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পবনের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে এর একদিন পরই প্রার্থিতা ফিরিয়ে পান তিনি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, তাকে বদলি করা হয়নি। পবন নিজেও এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

সুতরাং, লক্ষ্মীপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে বদলি করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ 

তথ্যসূত্র

কুমিল্লা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জনমতে এগিয়ে দাবিতে প্রথম আলো ও ডিবিসি কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি 

সম্প্রতি, ডিবিসি নিউজ এবং প্রথম আলো’র আদলে তৈরি পৃথক পৃথক ফটোকার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দুই ফটোকার্ড প্রকাশ করে শামসু্দ্দোহা বারি নামে এক ব্যক্তি জনাব জাহেরকে তার পোস্টে (আর্কাইভ) মেনশন করেছেন, জানিয়েছেন শুভকামনাও। 

কুমিল্লা-৫ আসনের

ডিবিসি’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘কুমিল্লা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপ বা ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে আছে দাবি করে ডিবিসি কিংবা প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত ফটোকার্ড দুটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

ডিবিসি কি উক্ত শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?

অনুসন্ধানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করেও উক্ত শিরোনামে বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, ডিবিসি’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Photocard Analysis: Rumor Scanner

তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের সাথে ডিবিসির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ডিবিসির পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোতে আলোচিত ফটোকার্ডের মত পুরো লাল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এছাড়াও শিরোনামের ফন্ট ডিজাইন ও ছবি ব্যবহারের ধরণেও ভিন্নতা রয়েছে।

প্রথম আলো কি উক্ত শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?

অনুসন্ধানের শুরুতে ‘প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ৩ জানুয়ারি ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে ‘প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৩ জানুয়ারি বা তার আগে বা পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Photocard Analysis: Rumor Scanner

এছাড়াও দেখা যায়, ৩ জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে রাজনীতি ক্যাটাগরিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়নি এবং আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে তাদের ফটোকার্ডের ডিজাইনেরও পার্থক্যের পাশাপাশি ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

তাছাড়া প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পত্রিকাটির অনলাইন ভোট সেকশনেও গত কিছুদিনে এ সংক্রান্ত কোনো জরিপের তথ্য মেলেনি। 

এ সংক্রান্ত কোনো জনমত বা জরিপের খবর গণমাধ্যমে না পেয়ে আমরা কুমিল্লার একাধিক সাংবাদিকের সাথেও কথা বলেছি এ বিষয়ে। তারা কেউই এমন কোনো জরিপের তথ্যের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন৷ 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রচারণার একটি বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং – ব্রাহ্মনপাড়া) আসনে জনমত জরিপে এগিয়ে এম এ জাহের’ এবং ‘কুমিল্লা-৫ ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে এম এ জাহের’ শীর্ষক শিরোনামে ডিবিসি ও প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত দুটো ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক প্রথম আলো কিংবা ডিবিসি তাদের ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিবিসি ও প্রথম আলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, কুমিল্লা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন দাবিতে ডিবিসি এবং প্রথম আলো’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ড দুইটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • DBC News Facebook Page  
  • Prothom Alo Facebook Page
  • Rumor Scanner’s Own Analysis

পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষ নেওয়া এবং সেনাবাহিনীর ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ শীর্ষক ভুয়া দাবি ইউটিউবে 

সম্প্রতি, বিএনপির ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছে সেনাবাহিনী পুলিশ বিএনপির পক্ষ নিল– শীর্ষক শিরোনামে এবং ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছে সেনাবাহিনী। হঠাৎ পুলিশ সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষ নিল– থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড‌ভো‌কেট নিপুণ রায় চৌধুরী রাস্তায় লিফলেট বিতরণ করছেন ও পুলিশের সাথে জনতার বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও ক্লিপ এবং একটি জনসমাবেশে ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

লিফলেট বিতরণ

ইউটিউবে প্রচারিত এই ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবি সম্বলিত ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক লিফলেট বিতরণ এবং বিএনপির পক্ষে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাজ করার দাবিগুলো সঠিক নয় বরং বিএনপির নেত্রী নিপুণ রায়ের সেনাবাহিনীকে লিফলেট বিতরণের ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এর সাথে অপ্রাসঙ্গিক কিছু ক্লিপ যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড‌ভো‌কেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে রাস্তায় লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে গত ০৩ জানুয়ারি বিএনপি’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে “ঢাকা জেলা || ৩ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার। ডামি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে ঢাকা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপির লিফলেট বিতরণ।” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নিপুণ রায় চৌধুরী রাস্তায় লিফলেট বিতরণ করছেন। তখন রাস্তায় টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও তিনি লিফলেট প্রদান করেন। তবে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা কোনো লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে সেসময় ‘ঢাকা প্রকাশ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩ জানুয়ারি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে সুবাড্ডায় জেলা পরিষদ মার্কেটে লিফলেট বিতরণ শেষে ফেরার পথে সেনাবাহিনীকেও এই লিফলেট বিতরণ করেন নিপুণ রায় চৌধুরী।

অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিপুণ রায় চৌধুরী লিফলেট দিয়েছেন, সেনাবাহিনী কাউকে লিফলেট বিতরণ করেনি। 

এছাড়া, ভিডিওতে বাকি যে ক্লিপগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তাতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি এবং সেনাবাহিনীর বিষয়ে কোনো তথ্যও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, অনুসন্ধানে গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে উক্ত দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে দফায় দফায় কর্মসূচি ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে দলটি। এরই মধ্যে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছে সেনাবাহিনী হঠাৎ পুলিশ সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষ নিল- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়ের সেনাবাহিনীকে লিফলেট বিতরণের একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচ্য দাবিটি (সেনাবাহিনী বিএনপির পক্ষে লিফলেট বিতরণ করছে) প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর সাথে অপ্রাসঙ্গিক কিছু ক্লিপ যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিএনপি’র পক্ষ নিয়েছে এবং সেনাবাহিনী ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছে প্রচারিত দাবিগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ভুয়া তথ্য ইউটিউবে

গত ০৩ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে “রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সেনাপ্রধানের নিকট পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি কয়েকটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ATN Bangla News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি “রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যা বললেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু । Sahabuddin Chuppu | ATN Bangla News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত বছরের  (২০২৩) ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, জনগণ যাকে চাইবে সে-ই সরকার গঠন করবে। সেইসাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর আহ্বান জানান তিনি।

অর্থাৎ, ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি “দেশের মানুষ ভোট উৎসবে অংশগ্রহণ করবে; প্রত্যাশা রাষ্ট্রপতির | President | Election 2024 | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী উভয়ই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ সময় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এগিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অর্থাৎ, ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের আলোচিত দাবিটির সত্যতা জানা যায়নি।

মূলত, আগামী ০৭ অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সেনাবাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৩ জানুয়ারি Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সেনাপ্রধানের নিকট পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপের সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

নির্বাচন ঠেকাতে রাতেই নুর বাহিনীর ঢাকা ঘেরাও দাবিতে পুরোনো ভিডিও ফেসবুকে  

সম্প্রতি, “এইমাত্র পাওয়া! রাতেই ঢাকা ঘেরাও নির্বাচন ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো নুর বাহিনী।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

নুর বাহিনীর ঢাকা ঘেরাও

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নুর বাহিনীর নির্বাচন ঠেকাতে ঢাকা ঘেরাওয়ের  দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই  সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের মিছিলের ভিডিওকে ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে ‘Bangla News HD’ নামক একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই “পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে দিলো নুর বাহিনী, পিছু হটলো পুলিশ! মশাল হাতে রুখে দাঁড়ালো নুর।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই “পুলিশের বাঁধায় পণ্ড গণঅধিকার পরিষদের মশাল মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল বের হয়। 

অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

পাশাপাশি, গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সূত্রে নির্বাচন ঠেকাতে গণঅধিকার পরিষদ বা নুরুল হক নুরের ঢাকা ঘেরাও করার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল বের হয়। সম্প্রতি ঐ মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে নির্বাচন ঠেকাতে নুর বাহিনীর রাতেই ঢাকা ঘেরাও করার ভিডিও দাবিতে ভুয়া লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

উল্লেখ্য, একতরফা নির্বাচনের প্রহসনের ভোট বর্জন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদ।

সুতরাং, পুরোনো ভিডিওকে নির্বাচন ঠেকাতে রাতেই নুর বাহিনীর ঢাকা ঘেরাও করার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র