সম্প্রতি, “শিশুটির চিকিৎসার জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন।1 Like = 1 টাকা 1 Comment = 2 টাকা 1 Share = 15 টাকা 1 Group Share = 25 টাকা। এমন কোনো পাথরের মানুষ থাকবে যে শেয়ার করবে না” শীর্ষক শিরোনামে এক শিশুর কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাইদুল নামে প্রচারিত ছবিগুলো কোনো বাংলাদেশি শিশুর নয় বরং এগুলো আফসানা নামে ভারতের রোগাক্রান্ত এক শিশুর ছবি।
মূলত, ছবিগুলো আফসানা নামের ৪ বছর বয়সী ভারতের এক শিশুর। শিশুটি চেডিয়াক হিগাশি সিনড্রোম নামক একটি রোগে আক্রান্ত। আফসানা এনএইচ নারায়না সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলো। ৪ বছর বয়সী ভারতীয় শিশু আফসানার ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশি রোগাক্রান্ত শিশু সাইদুলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে সাইদুল নামে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদনকৃত ফেসবুক পোস্টগুলোয় উল্লিখিত ব্যক্তিগত বিকাশ, নাম্বারে যথাক্রমে (01894324532) একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পূর্বেও একই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিকবার প্রচার করা হয়েছিলো। সে সময়গুলোতে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনপ্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সম্প্রতি, “ডায়লগের মাস্টার শেখ হাসিনার সরকার, কয় জনগণের ভোট চুরি করার কি দরকার” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুলিশের কণ্ঠে বর্তমান সরকার বিরোধী গান দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে সম্পাদনা করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে, “Student’s” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ২ জানুয়ারিতে “খোল করতাল বাজিয়ে পুলিশের গান” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি অনুরুপ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot Form students youtube channel
ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন পুলিশ সদস্য হ্যান্ডমাইক হাতে “কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে” শিরোনামের একটি গান গাইছেন এবং উপস্থিত বাকি সদস্যরা হাততালির মাধ্যমে সেটিকে উপভোগ করেছেন।
উক্ত ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাজনৈতিক সংগঠন ‘গণ অধিকার পরিষদ’ এর কোনো এক সমাবেশে এক ব্যক্তি মাইকে “ডায়লগের মাস্টার শেখ হাসিনা সরকার” শীর্ষক শিরোনামের একটি গান গেয়ে শোনাচ্ছেন।
মূলত, বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক সদস্যের গাওয়া একটি গান (ডায়লগের মাস্টার শেখ হাসিনা সরকার) ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ সদস্যের কণ্ঠে গাওয়া ভিন্ন একটি গান (কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে) এর জায়গায় সংযুক্ত করে পুলিশের কণ্ঠে বর্তমান সরকার বিরোধী গান দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, পুলিশ সদস্যের কণ্ঠে গাওয়া ভিন্ন একটি গানের ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ডায়লগের মাস্টার শেখ হাসিনার সরকার’ শীর্ষক গানটি প্রতিস্থাপন করে পুলিশের কণ্ঠে বর্তমান সরকার বিরোধী গান দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সুস্বাস্থ্যের জন্য পানি পান অপরিহার্য। আপনি কি তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছেন? আপনার দিনে কতটুকু পানি পান প্রয়োজন, দৈনিক ৮ গ্লাস? বেশি বেশি পানি পান কি শরীরের জন্য বেশি উপকার বয়ে আনে? আমরা এসব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজবো এই প্রতিবেদনে।
তার আগে চলুন দেখি পানি পান করা নিয়ে মানুষের মধ্যে কি কি তথ্য প্রচলিত আছে-
শুষ্ক ত্বকের হাত থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত জলপান করুন: শরীর ভিতর থেকে আর্দ্র না হলে তার ছাপ পড়বে ত্বকের উপর৷ তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করুন৷ দিনে অন্ততপক্ষে আট-দশ গ্লাস জলপান করা একান্ত আবশ্যক৷ ডাবের জল, ফলের রসও পান করতে পারেন!!!!!
গ্যাসের সমস্যা সমাধানের অনেক বেশি পরিচিত একটি সমাধান হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। আর এটি করলে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি আরও অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করবে। এজন্য নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করুন।
সুস্থ থাকতে মেনে চলুন: প্রতি দিন কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন। খাবারের মাঝে পানি পান না করে খাবার শুরুর আগে ১-২ গ্লাস পানি পান করুন।
তথ্যগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সবাই বলছে সারা দিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে। কিন্তু সুস্থ থাকতে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত?
৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শের উৎস কি?
এই তথ্যের উৎস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘Myth of 8 Glasses of Water a Day‘ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ মানুষের শরীরে দৈনন্দিন যে পানি প্রয়োজন তা কেবল পানি থেকেই নয়, বরং তার গৃহীত অন্যান্য খাবার থেকেও দেহের পানির চাহিদা পূরণ করে। সেটার উৎস হতে পারে সবজী, ফলের রস, চা-কফি ও অন্যান্য যেকোনো পানীয়।
এছাড়া স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক ওয়েবসাইট Healthline এ ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর “Drink 8 Glasses of Water a Day: Fact or Fiction?” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ৮ গ্লাস বা প্রায় ২ লিটার পরিমাণ পানি পানের নির্দেশনা কারো কারো জন্য অনেক বেশি আবার কারো জন্য পর্যাপ্ত না। সাধারণত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের জন্য এত বিশাল পরিমাণে পানি পানের প্রয়োজনীয়তা পড়ে না। অপরদিকে পর্যাপ্ত পানি না পানের ফলে কেউ কেউ মৃদুমাত্রায় পানি স্বল্পতায় ভুগতে পারেন, পানিশূন্যতার কারণে দেহের ওজন ১-২ শতাংশ কমে যেতে পারে। এই পর্যায়ে যে কেউ মাথা ব্যথা, অবসাদের মতো বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারেন। কিন্তু এই পানিশূন্যতা পূরণে কাউকে মেপে মেপে ৮ গ্লাস পানিই পান করতে হবে না।
একজন মানুষের কতটুকু পানি প্রয়োজন?
প্রতিদিন আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘাম, মূত্রত্যাগ সহ নানাভাবে আমাদের দেহ থেকে পানি নিষ্কাশন করি। আর তাই শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আমাদেরকে পানি সমৃদ্ধ খাদ্য ও পানীয় পানের মাধ্যমে শরীরে পানির জোগান স্বাভাবিক রাখতে হয়।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, একজন পুরুষের দিনে সাড়ে ১৫ কাপ বা ৩ দশমিক ৭ লিটার ও একজন নারীর সাড়ে ১১ কাপ বা ২ দশমিক ৭ লিটার তরল প্রয়োজন। যা পানি, অন্যান্য পানীয় ও খাদ্য থেকে মানুষ পেয়ে থাকে। প্রতিদিনকার প্রায় ২০ তরল সাধারণত খাবার থেকে আসে এবং বাকীটুকু আসে পানীয় থেকে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের Wayne State University এর সহযোগী অধ্যাপক তামারা হিউ-বাটলার মার্কিন গণমাধ্যম CNN কে বলেন, ব্যক্তি বিশেষে পানির চাহিদা নির্ভর করে ব্যক্তি আসলে কতটুকু পানি হারাচ্ছে তার উপর। মানুষের কতটুকু পানি প্রয়োজন তা মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা:
শারীরিক ওজন: বেশি ওজনের মানুষের বেশি পানি প্রয়োজন।
তাপমাত্রার রকমফের: যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে, মানুষ তখন বেশি ঘামে ও শরীর থেকে তরল হারায়।
শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা: অতিরিক্ত পরিশ্রম শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি নিসৃত করে।
এগুলো ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক ওয়েবসাইট Healthline জানায়,
স্বাস্থ্য: যদি কেউ জ্বর বা অন্য কোনো রোগে ভুগে অথবা বমি, ডায়েরিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে তরল বেরিয়ে যায় তাহলে তাকে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। যদি ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থাকে তাহলেও তাকে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
গর্ভধারণ অথবা দুগ্ধপান করানো: গর্ভবতী অথবা বাচ্চা লালনপালনকারী মায়েদের নিজেকে সতেজ রাখতে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে।
খাবারের ধরণ: কেউ যদি প্রচুর কফি এবং অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করে তবে অতিরিক্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে তিনি আরও পানি হারাতে পারেন অথবা খাবারের তালিকায় লবণাক্ত, মসলাযুক্ত বা চিনিযুক্ত খাবার বেশি থাকলেও বেশি পানি পান করতে হবে। অথবা কেউ যদি প্রচুর পরিমাণে হাইড্রেটিং খাবার যেমন তাজা বা রান্না করা ফল এবং শাকসবজি না খায় তবে তারও অতিরিক্ত পানি পানের প্রয়োজন।
তবে এসব কারণে পানির চাহিদা পূরণে একই পরিমাপ সবার জন্য প্রযোজ্য না অর্থাৎ সকলের জন্য আট গ্লাস পানির পরামর্শ অনুপযুক্ত।
খাবার কিভাবে পানির চাহিদা পূরণ করে?
মানুষের শরীরে দৈনন্দিন যে পানি প্রয়োজন তা কেবল পানি থেকেই নয়, বরং তার গৃহীত অন্যান্য খাবার থেকেও দেহের পানির চাহিদা পূরণ করে। সেটার উৎস হতে পারে সবজী, ফলের রস, চা-কফি, দুধ ও অন্যান্য যেকোনো পানীয়। আমরা যেসব খাবার খাই, সেসব খাবারে পর্যাপ্ত মাত্রায় পানি থাকে। একজন ব্যক্তি তার গৃহীত খাবার থেকে কতটুকু পানি পাবে তা নির্ভর করে মূলত কতটুকু পানি সমৃদ্ধ খাবার তিনি খাচ্ছেন?
সবজী এবং বিভিন্ন ফল-ফলাদী বিশেষভাবে পানি সমৃদ্ধ খাবার এ চাহিদা পূরণ করে থাকে। এছাড়া মাংস, মাছ ও ডিমও প্রচুর পরিমাণে পানি সংরক্ষিত রাখে। তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ শতাংশ, ডিমে পানির পরিমাণ ৭৬ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের ভিতরও অল্প পরিমাণে পানি উৎপাদন হয়, যাকে মেটাবলিক ওয়াটার বলা হয়। সুতরাং যে সকল মানুষ খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পানি পায় না, তাদেরকে অন্যদের তুলনায় বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে।
কয়েকটি পানি সমৃদ্ধ খাবার- যা দেহের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে সহজলভ্য একটি ফল তরমুজ। এটি একইসাথে স্বাস্থ্যকর ও পানিসমৃদ্ধ খাবার। ১৫৪ গ্রাম সমপরিমাণ তরমুজের মধ্যে ১১৮ মিলিলিটার পানি থাকে। পাশাপাশি কিছু আঁশ, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও রয়েছে এই ফলে। আবার বেশি পরিমাণে পানি থাকায় তরমুজে ক্যালোরি ঘণত্বও কম। অর্থাৎ, বড় আকৃতির একটি তরমুজের বিপরীতে ক্যালোরি উপস্থিতি নগন্য। ফলে এটি ওজন কমানো সহ নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে থাকে।
স্ট্রবেরি: পানির পরিমাণ ৯১%
তরমুজের মতো স্ট্রবেরিও উঁচুমাত্রায় পানি সমৃদ্ধ খাবার। স্ট্রবেরিতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯১%। স্ট্রবেরি খাওয়ার মাধ্যমে যেকেউ তার প্রতিদিনের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে।
তরমুজের মতোই স্ট্রবেরিও অনেক আঁশ, রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ম্যাঙানিজ সহ অন্যান্য খনিজ সরবরাহ করে থাকে। ধারাবাহিক স্ট্রবেরি খাওয়ার মাধ্যমে প্রদাহ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা সহ বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কমলা: পানির পরিমাণ ৮৮%
একটি পুরো কমলা খেলে প্রায় আধা কাপ বা ১১৮ মিলিমিটার সমপরিমাণ পানি পাওয়া যায় এবং একইসাথে আঁশ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তো সাথে আছেই। যার মধ্যে আছে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
কমলায় থাকা পানি ও আঁশ মানুষকে পরিপূর্ণ সতেজতা প্রদান করে। যা প্রকৃতপক্ষে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কমলা ও কমলাজাতীয় খাবারগুলো কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করে। এছাড়া কিডনিতে পাথর জমা রোধ করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শরীরে যথাযথ পানির উপস্থিতি, যা কমলায় উঁচুমাত্রায় থাকা পানি দিয়ে থাকে।
শসা: পানির পরিমাণ ৯৫%
শসা, বাংলাদেশে বারো মাসেই পাওয়া যাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর ও পানিসমৃদ্ধ খাবার। এটি পুরোটাই পানিসমৃদ্ধ এবং অল্পপরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান যেমন ভিটামিন কে, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে থাকে।
অন্যান্য পানিসমৃদ্ধ সব্জীর তুলনায় শসাতে ক্যালোরির পরিমাণ একদমই কম৷ অর্ধেক কাপ বা ৫২ গ্রাম শসাতে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৮। ফলে খাদ্যে খুব বেশি ক্যালোরি যোগ করা ছাড়াই বৃহৎ পরিমাণে শসা খাওয়া যায়, যা একইসাথে ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
স্যুপ: পানির পরিমাণ ৯২%
স্যুপ সাধারণত পানিসমৃদ্ধ খাবার এবং একইসাথে পুষ্টিকর। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক কাপ বা ২৪০ গ্রাম মুরগী স্যুপের প্রায় পুরোটাই পানির তৈরী। যা একজন মানুষের দৈনিক পানির চাহিদার বিশাল অংশ পূরণ করে দেয়। পাশাপাশি এ ধরনের খাবার ওজন কমানোতেও সহায়তা করে।
সাধারণ দই: পানির পরিমাণ ৮৮%
সাধারণ দই বিপুল পরিমাণ পানি ও পুষ্টি উপাদান ধারণ করে, যা নানাভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। এক কাপ বা ২৪৫ গ্রাম দইয়ের ৭৫ শতাংশই পানির তৈরি। এছাড়া সমপরিমাণ দইয়ে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম সহ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ।
দইয়ের এই পানির উপস্থিতি ও পুষ্টি উপাদানের কারণে প্রতিনিয়ত দই খাওয়া ক্ষুধামন্দা দূর করা ও ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে এজন্য বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত দইয়ের পরিবর্তে সাধারণ দই খেতে হবে। কারণ, এসব দইয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর উপাদান যেমন চিনি যুক্ত থাকে। যা স্থূলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভূমিকা রাখে।
যেমন ২৪৫ গ্রাম ফ্লেভারযুক্ত দইয়ে ৪৭ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়, যা সমপরিমাণ সাধারণ দইয়ের চিনির উপস্থিতির ৪ গুণ।
টমেটো: পানির পরিমাণ ৯৪%
শীতকালীন সব্জী হলেও টমেটো এখন বাংলাদেশে বছর জুড়েই পাওয়া যায়। একটি মাঝারি টমেটোতে প্রায় অর্ধেক কাপ বা ১১৮ মিলিলিটার পানি পাওয়া যায়। পাশাপাশি এটি বৃহৎ পরিমাণে রোগ প্রতিরোধক ভিটামিন এ সহ অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ সরবরাহ করে থাকে। টমেটোতে পানির উচ্চ উপস্থিতির কারণে এটিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম। এক কাপ সমপরিমাণ বা ১৪৯ গ্রাম টমেটোতে ৩২ ক্যালোরি পাওয়া যায়।
ফুলকপি: পানির পরিমাণ ৯২%
বাংলাদেশের শীতকালীন অন্যতম সবজী ফুলকপি। এটি অনেক পুষ্টিগুণ ও পানিসমৃদ্ধ। এক কাপ বা ১০০ গ্রাম ফুলকপি ৫৯ মিলিলিটারের বেশি পানি সরবরাহ করে থাকে। ফুলকপিতে পানির এই উচ্চমাত্রার উপস্থিতির কারণে এটিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম। পাশাপাশি ফুলকপিতে ১৫ টি ভিন্ন ভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এর মধ্যে অন্যতম কোলিন, যা অনেক খাবারে পাওয়া যায় না। কোলিন হচ্ছে মস্তিষ্কের সুরক্ষা ও মেটাবলিজমের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
বাধাকপি: পানির পরিমাণ ৯২%
বাংলাদেশের শীতকালীন আরেকটি সহজলভ্য সবজী বাধাকপি। এতে পানির পরিমাণ ৯২ শতাংশ। এর কারণে এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম কিন্তু আঁশ ও পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি। উদাহরণ স্বরূপ, বাধাকপিতে থাকা ভিটামিন সি প্রদাহ রোধ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কখন পানি পান করবেন?
মানব শরীর পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে এমনভাবে তৈরি করা যে, যখনই দেহে পানির প্রয়োজন হয় শরীর সেটা বুঝতে পারে। তাই আপনি যখন তৃষ্ণার্ত অনুভব করেন, তখনই পানি পান করুন। যদি উত্তপ্ত পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম করেন তাহলেও ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে যে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, তা পূরণে অতিরিক্ত তরল পানীয় গ্রহণ করতে হবে।
পাশাপাশি পানির চাহিদা বুঝতে মূত্রের রঙও নির্দেশক হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যায়। সাধারণত মূত্রের রঙ মৃদু বা হালকা হলুদ হয়। যদি এটা দেখতে পানির মতো হয়, তবে আপনি অতিরিক্ত পানি পান করছেন বিপরীতে যদি গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের হয় তাহলে বেশি পানি পান করতে হবে।
যখন আপনি কম তৃষ্ণা অনুভব করবেন, আপনার মূত্র রঙ বিহীন অথবা হালকা হলুদ রঙের হবে অথবা আপনার চিকিৎসক যখন আপনার দৈনন্দিন পানি পানের সীমা নির্ধারণ করে দিবে এবং আপনি সেটি অনুসরণ করেন।
মোদ্দাকথা, পানিশূন্যতা এড়াতে ও শরীরে প্রয়োজনীয় পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পছন্দানুযায়ী পানীয় গ্রহণ করুন।
সবচেয়ে ভালো হয় প্রত্যেকবার খাবারের আগে ও খাবারের মধ্যে এক গ্লাস করে পানি পান করার পাশাপাশি শরীর চর্চার সময় ও পরে তৃষ্ণাবোধ করলে পানি পান করা।
কিডনি ভালো রাখতে ৮ গ্লাস পানি !
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, আমাদের শরীরের ওজনের ৬০-৭০% শতাংশ পানি উপর তৈরি এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে চায়। এক্ষেত্রে পানি মূত্র আকারে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ বের করে কিডনিকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি পানি রক্তনালীকে সচল রাখে। ফলে রক্ত সহজেই কিডনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং কিডনির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান জোগান দিতে পারে। কিন্তু কেউ যখন জলশূন্য হয়ে যায়, তখন এটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজে বাধা প্রদান করে।
স্বল্পমাত্রায় পানিশূন্যতা মানুষকে ক্লান্ত করে দিতে পারে এবং দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে অসম্পূর্ণ করে তুলতে পারে। আবার অতিরিক্ত পানি শূন্যতার কারণে কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এই পর্যাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ে আগে থেকেই মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, প্রত্যেকে দিনে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। কিন্তু এটি ভুল। ব্যক্তি ও পরিবেশ ভেদে এই পানি গ্রহণের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার কেউ যখন কিডনি সমস্যায় ভোগেন, তার পক্ষে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না৷ এই ধরনের লোকেরা যখন ডায়ালাইসিস গ্রহণ করে, এই অবস্থায় পানি গ্রহণ নিষিদ্ধ।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
অতিরিক্ত পানি পানে স্বাস্থ্যবান এ সুস্থ মানুষের জন্য খুব কম সময়েই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। খেলোয়াড়েরা সাধারণত দীর্ঘ সময় বা তীব্র অনুশীলনের সময় পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে অধিক পরিমাণে পানি পান করে থাকেন। তবে কেউ যখন এভাবে অতিরিক্ত পানি পান করলে তার কিডনি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে পারে না। ফলে শরীরের সোডিয়াম উপাদান দ্রবীভূত হয়ে যেতে পারে। যাকে হাইপোনেট্রেমিয়া (hyponatremia) বলা হয় এবং এটি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
মূলত, প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। কারণ, মানুষের পানির চাহিদা নির্ভর করে তার শারীরিক গঠন, পরিশ্রম, আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির উপর। এছাড়া মানুষের পানির যে চাহিদা সেটা সরাসরি পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল পানীয়, পানি সমৃদ্ধ খাবার থেকেও মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মোদ্দাকথা, ব্যক্তি বিশেষে পানির চাহিদা নির্ভর করে ব্যক্তি আসলে কতটুকু পানি হারাচ্ছে তার উপর।
সুতরাং, মানুষের দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক না বরং আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনের মতে, একজন পুরুষের দিনে সাড়ে ১৫ কাপ বা ৩ দশমিক ৭ লিটার ও একজন নারীর সাড়ে ১১ কাপ বা ২ দশমিক ৭ লিটার তরল প্রয়োজন। যা পানি, অন্যান্য পানীয় ও খাদ্য থেকে মানুষ পেয়ে থাকে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি কাবা শরীফের মিম্বরের কোন ছবি নয় বরং কাবা শরীফে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত সিঁড়ির ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, আব্রাহামিক ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্বের অনলাইন সংরক্ষণাগার madainproject.com এর ওয়েবসাইট থেকে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from madainproject website
ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায় যে, আলোচিত ছবিটি মক্কার মসজিদ আল-হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পবিত্র মসজিদে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হত।
ভূমি থেকে কাবা শরীফের দরজার উচ্চতা ২.২ মিটার (৭.২ ফিট) হওয়ায় কাবা শরীফে প্রবেশের জন্য সিড়ির প্রয়োজন হয়। শতাব্দি ধরে মুসলিম শাসক এবং বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তি এই সিঁড়ি নির্মাণ করে আসছেন।
ছয়টি পিতলের রোলারের উপর নির্মিত কাবায় প্রবেশের সিঁড়িটি উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ এর রাজত্বকালে আনুমানিক ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি, সৌদি আরব ভিত্তিক ইংরেজি ভাষার পত্রিকা Arab News এর প্রকাশিত Makkah museum is a haven for holy artifacts শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from arabnews website
মূলত, ভূমি থেকে কাবার উচ্চতা ২.২ মিটার হওয়ায় কাবা শরীফে প্রবেশ কিংবা পরিষ্কারের জন্য সিঁড়ির প্রয়োজন হয়। উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ এর শাসন আমলে পবিত্র কাবা শরীফে প্রবেশের জন্য আলোচিত সিঁড়িটি নির্মিত হয়। উক্ত সিঁড়িকে কাবা শরীফের মিম্বর দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মসজিদে ইমামের খুতবা প্রদানের জন্য উচু স্থানকে মিম্বর বলা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর শাবান মাসের প্রথম দিন পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সৌদি বাদশাহ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন। অবশ্য শাবান মাসের প্রথমদিন ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় কাবাঘর ধোয়ার উৎসব পরিচালনা করা হয়। এ দিন কাবার দরজার সঙ্গে বিশেষ সিঁড়ি লাগানো হয়। এরপর সবাই কাবাঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় দুই ঘণ্টা দরজা খোলা থাকে।
সূতরাং, কাবা শরীফে প্রবেশের সিঁড়িকে মিম্বর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশে মহেশপুর উপজেলায় এক মুসলিম তরুণী এক হিন্দু তরুণকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাইলে মুসলমানরা হিন্দু তরুণের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে হত্যা করতে চায়। তারা মুসলিম তরুণীটিকে বিয়েতে অনুৎসাহিত করতে হিন্দুদের নিয়ে বাজে মন্তব্যও করে। পরবর্তীতে হিন্দু তরুণটিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।
টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয় বরং পুলিশ নিজেদের হেফাজতে তাদের স্ব স্ব অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়।
মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের স্থানীয় সীমান্ত টিভি নামে একটি ফেসবুক পেজের এডমিন সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সেলিম রেজা রিউমর স্ক্যানারকে জানান, তাদের জবানবন্দি থেকে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ দুজনেই গাজীপুরে থাকতো। মেয়েটির বাড়ি জামালপুরে। ছেলের বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে৷ ছেলের খালুর বাসা মহেশপুরে। তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। ওদের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝেছি, মেয়েটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না৷ মেয়েটির পরিবার এই সম্পর্কের ব্যাপারে অবগত ছিল। তবে তাদের পরিবারের সাথে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাইনি।
তিনি বলেন, তারা গাজীপুর থেকে এসে মহেশপুরে খালুর বাসায় থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে অবগত করে মেম্বারের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে মেম্বার মহেশপুর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে ছেলে-মেয়ে ও তাদের আশ্রয়দাতাকে থানায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমরা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাদেরকে থানায় নেওয়ার পরে কি করা হবে? পুলিশ আমাদেরকে জানায়, তারা ছেলে-মেয়ে দুইজনের অভিভাবকদের ডেকে তাদের হাতে তুলে দিবে।
এসময় এলাকাবাসী কর্তৃক তাদেরকে আটকের পর মারধর করা হয় বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে মহেশপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জানিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ দুজনকেই পুলিশ থানায় নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। পরবর্তীতে তাদের নিজ নিজ অভিভাবক এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। তারা স্বেচ্ছায় চলে গেছে। এ নিয়ে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা হয়নি।
মূলত, গাজীপুর থেকে একজন মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় এসে হিন্দু তরুণটির এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠে। সেখানে মহেশপুরের স্থানীয় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে মারধর করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে অবগত করে মেম্বারের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে মেম্বার মহেশপুর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে ছেলে-মেয়ে ও তাদের আশ্রয়দাতাকে থানায় নিয়ে যায়। তবে থানায় নিয়ে আসা হলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি বরং তাদের নিজ নিজ অভিভাবক এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা হয়নি বলে জানান মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সেলিম মিয়া।
সুতরাং, মুসলিম তরুণী ও হিন্দু তরুণ স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চাওয়ায় হিন্দু তরুণকে পুলিশের গ্রেফতারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-কে অনেকে এখনও পিজি হাসপাতাল ডাকে, যার পূর্ণরূপ ‘Pakistan General হসপিটাল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা পিজি হাসপাতালের পূর্ণরূপ ‘Pakistan General হসপিটাল নয় বরং এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম প্রধান মেডিকেল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে এটিকে তৎকালীন সরকার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে এবং দেশের উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এটির সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে।
Screenshot from bsmmu website
পরবর্তীতে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল “হোটেল শাহবাগ থেকে বিএসএমএমইউ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from prothomalo website
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), আগে এর নাম ছিল ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ, সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল।
Screenshot from prothomalo website
প্রতিবেদনটিতে ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ এবং ইফতিখার-উল-আউয়াল সম্পাদিত ঐতিহাসিক ঢাকা মহানগরী: বিবর্তন ও সম্ভাবনা বইটিকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ১৯৬৫ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েটে মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চের জন্য শাহবাগে জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৬৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনজন সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপদেষ্টা স্যার জেমস ডি এস কেমেরন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক এ কে এস আহম্মদকে নিয়ে এই ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। পরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠিত স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের সঙ্গে এটি যুক্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অনুরোধে তৎকালীন মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী মুসলিম লীগের পরিত্যক্ত ভবনটি (ব্লক এ) পোস্টগ্র্যাজুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে এখানেই পিজি হাসপাতালের কার্যক্রম চলে। তবে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নাম দেওয়া হয়।
মূলত, বর্তমানে যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), এটি এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত। যার পূর্ণরূপ ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ। তবে এই তথ্যটিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাকিস্তান জেনারেল হাসপাতাল নামে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা পিজি হাসপাতালের পূর্ণরূপ ‘Pakistan General Hospital নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নারী সদ্য প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নয় বরং তিনি সদ্য প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় গত ৯ সেপ্টেম্বর “ড. আকবর আলি খান আর নেই” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়,” তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে বেশ আগেই মারা গেছেন।”
Screenshot from Jugantor website
এই তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নেহরীন খানের মেয়ে মৃত্যুর খবর জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে নেহরীনের একটি ছবি যুক্ত করা হয়৷ সেই ছবিটির সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো নারীর মিল খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার৷ তাছাড়া বছর ছয়েক আগে মৃত ব্যক্তির পক্ষে এখন গান গাওয়াও সম্ভব নয়।
Screenshot source : Bd pratidin
গুজবের সূত্রপাত
ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যে, উক্ত নারী যখন কথা বলছিলেন সেখানে মূল ধারার গণমাধ্যম আরটিভির মাইক্রোফোনও ছিল।
এই সূত্র ধরে আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ৯ সেপ্টেম্বর আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির থাম্বনেইলে শিরোনাম দেওয়া হয়, “স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ড. আকবর আলি খান”। (আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে)
কিন্তু ভিডিওটির 2:12 মিনিট অংশে দেখা যায়, এক নারী তার বাবা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করছেন। আরটিভি তখন তার পরিচয় দেয় ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার।’
Screenshot from Rtv facebook page
এই তথ্যের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমে (চ্যানেল আই, সময় নিউজ, এটিএন নিউজ) প্রকাশিত কিছু ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধার জন্য শহীদ মিনারে মরদেহ রাখা হয়েছে। ভিডিওগুলোতে একই নারী অর্থাৎ দিঠি আনোয়ারকে জাতীয় শহীদ মিনারে তার বাবা সম্পর্কে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর অসংখ্য গানের গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। গুণী এই ব্যক্তির এক ছেলে (সরফরাজ আনোয়ার) ও এক মেয়ে (দিঠি আনোয়ার) রয়েছে। পরবর্তীতে দিঠি আনোয়ারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
পরবর্তীতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও দিঠি আনোয়ারের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source : Prothom Alo
নেহরীন খান ড. আকবর আলি খানের একমাত্র মেয়ে?
চলতি বছরের মে মাসে প্রথম আলো’র ঈদ সংখ্যায় একটি সাক্ষাৎকার দেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তার মৃত্যুর পর পত্রিকাটি গত ৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। নিজের সর্বশেষ প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বই ‘পুরানো সেই দিনের কথা’র পাঠকপ্রিয়তা সম্পর্কে সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে নেহরীন খানের খুব আগ্রহ ছিল আমার পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে যেন আমি লিখি। আমার মেয়েটা মারা গেছে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে আমি একটু বিস্তারিতভাবে পরিবারের ইতিহাস লিখেছি।”
পরবর্তীতে ড. আকবর আলি খানের লেখা ”পুরানো সেই দিনের কথা‘ বইতে (২১ পৃষ্ঠা) দেখা যায় তিনি তার মেয়ে নেহরীনকে নিজের একমাত্র সন্তান বলেছেন।
Screenshot from rokomari website
মূলত, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিল্পী গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা যান। বাবার মৃত্যুতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন মেয়ে দিঠি আনোয়ার। কিন্তু অনুভূতি প্রকাশের এই ভিডিওকে গত ৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের মেয়ে দাবি করে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রচারিত হয়েছে। অথচ, ড. আকবরের একমাত্র মেয়ে ২০১৬ সালে মারা যান।
উল্লেখ্য, ড. আকবর আলি খান গত ৮ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান৷
প্রসঙ্গত, ড. আকবর আলি খানের একমাত্র মেয়ে নেহরীন খান ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
সুতরাং, ভিডিওতে দেখানো নারী ড. আকবর আলি খানের মেয়ে নয়।
সম্প্রতি “মুরগির মতো যারা দানা কুড়িয়ে নিচ্ছে তারা এককালের রাজা আফ্রিকান। যিনি ছিটিয়ে দিচ্ছেন তিনি একালের রানী। বদান্যতায় অনন্য (?) রানীর মৃত্যুর স্মরণে ভিডিওটি দিলাম। ভিডিওটি নিয়েছি আফ্রিকান এক ভাইয়ের কাছ থেকে।” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক আফ্রিকানদের মাঝে খাবার ছিটিয়ে দেওয়ার ভিডিও নয় বরং এটি তার জন্মেরও আগে ফ্রান্সে প্রদশর্নীর জন্য ধারণ করা একটি ভিডিওচিত্র।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Early Cinema‘ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে প্রকাশিত “Vietnamese Children” শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে রানী এলিজাবেথ এর খাবার ছিটিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও ডেসক্রিপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ১৯০০ সালে Gabriel Vayre নামক একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরি করেন। ভিডিওতে কয়েন ছিটিয়ে দেওয়া দুজন নারী হলেন তৎকালীন ইন্দো-চীনের (বর্তমান ভিয়েতনাম) গভর্নর জেনারেল Paul Doumer এর স্ত্রী এবং কন্যা।
এছাড়াও আরো জানা যায়, গ্রাব্রিয়েল বেয়ার ভিয়েতনামের ফরাসী উপনিবেশ ভ্রমন করে প্যারিস এক্সপোজেশন ইউনিভার্সেলে ফরাসী সরকারের প্রদর্শনীর জন্য প্রায় ৩৯ টি মোশন পিকচার এবং ছবি ধারণ করেছিলেন। প্রচারিত ভিডিওটিও সেসময় ভিয়েতনামে ধারণ করা একটি মুভির, যা ১৯০১ সালে ফ্রান্সে “Indo-Chine : Vietnamese children picking up cash in the front of ladies pagoda” শিরোনামে প্রদর্শিত হয়েছিলো।
ভিডিও ডেসক্রিপশন থেকে প্রাপ্ত Lumiere.com নামক ওয়েবসাইটের লিংক পাওয়া যায়। ফ্রেন্স ভাষার ওয়েবসাইটিতে প্রাপ্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওটি তৎকালীন ইন্দো-চীনে (বর্তমান ভিয়েতনাম) ধারণকৃত। ভিডিওতে দেখানো শিশুগুলো ভিয়েতনামী শিশু।
গুজবের সূত্রপাত
রানী এলিজাবেথের কর্তৃক আফ্রিকানদের মাঝে খাবার ছিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, উক্ত ভিডিওটি একজন আফ্রিকান ভাইয়ের কাছ থেকে সংগৃহীত করা হয়েছে।
উক্ত ক্যাপশন এর সূত্র ধরে ইংরেজি কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Peter Banda (আর্কাইভ) নামক আইডি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রচারিত “The late queen & your grandparents” ক্যাপশনে উক্ত ভিডিওটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই ভিডিওটি রানী এলিজাবেথ কর্তৃক আফ্রিকানদের মাঝে খাবার ছিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
মূলত, ফরাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রাব্রিয়েল বেয়ার ভিয়েতনামের ফরাসী উপনিবেশ ভ্রমন করে প্যারিস এক্সপোজেশন ইউনিভার্সেলে ফরাসী সরকারের প্রদর্শনীর জন্য প্রায় ৩৯ টি মোশন পিকচার এবং ছবি ধারণ করেছিলেন। সেখানকার একটি ভিডিওচিত্র সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক আফ্রিকানদের মাঝে খাবার ছিটিয়ে দেওয়ার ঘটনা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর।
সুতরাং, সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক আফ্রিকানদের মাঝে খাবার ছিটিয়ে দেওয়ার ভিডিও দাবিতে তার জন্মেরও আগে ফ্রান্সে প্রদশর্নীর জন্য ধারণকৃত একটি ভিডিওচিত্র ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ভারতীয় গণমাধ্যম Zee News এ গত ০৫ সেপ্টেম্বর “চার দিনের ভারত সফরে দিল্লি পৌঁছালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ভারতে গিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
Zee News এর প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন এখানে।
এছাড়া, একই দিনে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘abp আনন্দ’ এর ওয়েবসাইটে দিল্লি পৌঁছলেন শেখ হাসিনা, ভারত-সফরে কী নিয়ে আলোচনা? শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রকাশিত প্রতিবেদনেও প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ভারতে গিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
Abplive এর প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ ভার্সন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনে ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে সফরসঙ্গী দলের তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি।
কি- ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ভারত সফর নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম BBC NEWS বাংলা এর ওয়েবসাইটে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত “এ কে আব্দুল মোমেন: শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে বাদ পড়লেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা জানা যাচ্ছে” শিরোনামের প্রতিবেদন হতে জানা যায় ৪ সেপ্টেম্বর ভারত সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে তার থাকার কথা নিশ্চিত করলেও ৫ সেপ্টেম্বর একেবারে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাল ঠিকঠাক, আজ ‘অসুস্থ’ এবং বাদ! শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে থাকছেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারত যাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পাশাপাশি বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো এর গত ৫ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী দল থেকে বাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিরোনামেরপ্রতিবেদন থেকে জানা যায় ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী দলে নেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ কে আব্দুল মোমেন।
মূলত, গত ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে তার থাকার কথা নিশ্চিত করলেও শেষ মুহুর্তে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সফর সঙ্গীর তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারতে পৌঁছানোর পরবর্তী সময় নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ এবং এবিপি আনন্দ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সফর সঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর থাকার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, চার দিনের ভারত সফরে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা জানানোর পাশাপাশি এসময়ে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার প্রশ্নে আলোচনা ছাড়াও দুই দেশের মাঝে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর দেওয়া “আমি ভারতে গিয়ে যেটি বলেছি যে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।“ বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সুতরাং, সম্প্রতি ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ছিলেন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি,” যশোর শার্শা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’র নবম শ্রেণীর ছাত্র মেহেদী হাসান সাগরকে পিটিয়ে জখম করেছে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম।” শীর্ষক একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মেহেদী নামের স্কুল ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ঘটনাটি তিন বছর পুরোনো এবং প্রচারিত ছবিগুলো মেহেদীর নয়, এগুলো নিজ বাবা কর্তৃক নির্যাতনের শিকার এক ইয়েমেনি শিশুর পুরোনো ছবি।
মূলত, আলোচিত ছবির শিশুটির নাম Shamakh Rashid Al-Qahaili এবং সে ইয়েমেনের বাসিন্দা। শিশুটির বাবা তার নিজ সন্তানকে শাসন করার জন্য পিটিয়ে জখম করেছিলো এবং পরবর্তীতে ইয়েমেনের পুলিশ শিশুটির বাবাকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি নিয়ে ২০২০ সালে ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যম গুলোতে সংবাদ প্রচারিত হয়।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে স্কুলড্রেসের প্যান্ট ছাড়া শুধু শার্ট পরিধান করে স্কুলে যাওয়ার কারণে যশোরের শার্শা উপজেলার সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান সাগরকে পিটিয়ে জখম করেন ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। একই সময়ে উক্ত ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম গুলোতে সংবাদ প্রচারিত হয়।
অর্থাৎ, ২০১৯ সালে যশোরে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র পেটানোর ঘটনার তথ্য এবং ২০২০ সালে ইয়েমেনে এক বাবা কর্তৃক সন্তানকে পিটিয়ে আহত করার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে যশোরে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ও নির্যাতিত শিশুর ছবি দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
পূর্বেও একই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিকবার প্রচার করা হয়েছিলো। সে সময়গুলোতে বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।