রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনায় হওয়া ভূমিকম্পের নয় বরং চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইয়েচিওনে এলাকা থেকে তোলা ছবিকে আর্জেন্টিনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Yahoo এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুলাই “South Korea’s death toll from destructive rainstorm grows to 40 as workers search for survivors” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Yahoo
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল (বাঁ দিক থেকে চতুর্থ) দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েচিওনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন।
এছাড়া, ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে একই তারিখে “La cifra de muertos por las destructivas tormentas en Corea del Sur sube a 40 personas” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচিত মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: AP
ছবিটির ক্যাপশনেও একই তথ্যই উল্লেখ ছিল।
গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটি সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ করা বা কোন তথ্য উল্লেখ না করায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি আর্জেন্টিনায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত জুলাই মাসে আর্জেন্টিনায় ভূমিকম্পের ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এটি চলতি বছরের জুলাই মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইয়েচিওনে এলাকা থেকে তোলা। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য না দেওয়ায় ছবিটি সাম্প্রতিক আর্জেন্টিনায় ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে কঙ্গোতে ভারী বর্ষণে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্জেন্টিনার ভূমিকম্পের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভিন্ন দেশের ভিন্ন ঘটনার একটি ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বার্বি সিনেমাটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে’ দাবিতে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবে বার্বি সিনেমা নিষিদ্ধ হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং উক্ত দেশগুলোতে গত ১০ আগস্টই সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সৌদি ভিত্তিক গণমাধ্যম আরব নিউজে গত ৭ আগস্ট ‘‘Barbie’ to release in Saudi Arabia on Aug. 10’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ আগস্ট বার্বি মুক্তি পাওয়ার কথা জানানো হয়।
Screenshot: Arab News
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বার্বি সিনেমাটি বাহরাইনে মুক্তির জন্য সবুজ সংকেত পেয়েছে।
পাশাপাশি বাহরাইন ভিত্তিক রেডিও স্টেশন রেডিও বাহরাইনের ওয়েবসাইটে গত ৮ আগস্ট ‘Barbie is officially coming to the kingdom’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাহরাইনে ১০ আগস্ট বার্বি সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলে জানানো হয়।
Screenshot: Radio bahrain
পরবর্তীতে Time Out Riyadh নামের সৌদি ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে গত ১২ আগস্ট ‘The Barbie movie is in Saudi cinemas now’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে গত ১০ আগস্ট বার্বি সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। দেশটিতে সিনেমাপ্রেমীরা বর্তমানে সিনেমাটি দেখতে পাচ্ছে।
Screenshot: Time Out Riyadh
এই ওয়েবসাইটটির সূত্রে বার্বি সিনেমাটির ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে থাকা ওয়ার্নার ব্রোসের মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১০ আগস্ট প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, বার্বি সিনেমাটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবে বার্বি সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে এবং টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।
Screenshot: Warner bros me
এছাড়া ভক্স সিনেমা সৌদির ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ঘুরেও দেখা যায়, দেশটিতে অর্থাৎ সৌদি আরবে বার্বি সিনেমার টিকেটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।
Screenshot: vox cinemas ksa
এসবের বাইরে দেশ তিনটিতে সিনেমাটি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ বার্বি সিনেমাটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবে নিষিদ্ধ নয়।
মূলত, সম্প্রতি বার্বি সিনেমাটিকে সমকামিতা প্রদর্শনের অভিযোগ এনে ও কুয়েতি বিশ্বাস ও নৈতিকতার পরিপন্থী উল্লেখ করে কুয়েতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দেশ লেবাননও সিনেমাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। এর প্রেক্ষিতেই দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, বার্বি সিনেমাটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বার্বি সিনেমাটি উক্ত দেশগুলোতে গত ১০ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে প্রদর্শিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে দেশীয় গণমাধ্যমে এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে বার্বি সিনেমাটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিনেমাটি ফিলিপাইনে নিষিদ্ধ করা হয়নি। বরং এর কিছু অংশ ঝাপসা করে দিয়ে প্রদর্শনী চলছে।
গত ১০ আগস্ট মূলধারার গণমাধ্যম একাত্তর টিভির এক ভিডিও প্রতিবেদনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উবায়দুল্লাহ ফারুককে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিটি (৬:২০ মিনিট সময় থেকে) দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উবায়দুল্লাহ ফারুক জামায়াতে ইসলামীর নেতা নয় বরং তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ০৯ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেট-৫ আসনে (কানাইঘাট -জকিগঞ্জ) মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা উবায়দুল্লাহ ফারুকের নাম আলোচনায় রয়েছে।
Screenshot source: Jugantor
আরো অনুসন্ধান করে মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন মাওলানা জিয়াউদ্দিনকে সভাপতি এবং মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে মহাসচিব করে নতুন কমিটি গঠন করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। একই কমিটিতে সংগঠনটির সহ-সভাপতি হিসেবে পুননির্বাচিত হন উবায়দুল্লাহ ফারুক।
Screenshot source: Bangla Tribune
অর্থাৎ, উবায়দুল্লাহ ফারুক জামায়াতে ইসলামীর নেতা নয়।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, উবায়দুল্লাহ ফারুক এ পর্যন্ত দুইবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, দুইবারই তিনি তার দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষে প্রার্থী হয়েছেন।
Screenshot source: Prothom Alo
মূলত, সম্প্রতি একাত্তর টিভির এক ভিডিও প্রতিবেদনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উবায়দুল্লাহ ফারুককে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হিসেবে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। উবায়দুল্লাহ ফারুক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং পূর্বে তিনি তার দলের হয়ে দুইবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী নভেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানিয়েছেন।
সুতরাং, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা উবায়দুল্লাহ ফারুককে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দাবি করে একাত্তর টিভিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ছবিগুলো এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের নয় বরং এগুলো ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ধারণ করা।
ছবি যাচাই- ১
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের ছবি দাবিতে এই ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উক্ত ছবিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ছবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে গণজমায়েতের ছবি দাবিতে এই ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
কিন্তু, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এশিয়ান নিউজ নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট “Student protesters arrested in Bangladesh” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচ্য ছবিটি ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় তোলা।
অর্থাৎ, আলোচ্য ছবিগুলো এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত নয়।
মূলত, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকায় ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়। উক্ত আন্দোলনের সময়ে ধারণকৃত কিছু ছবিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া পুরোনো ছবি শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, তিনটি পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি,“ধন্যবাদ রেজভী আহমেদকে এতবছর পর সত্য কথা বলার জন্য সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না” শীর্ষক শিরোনামে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে রুহুল কবির রিজভীকে বলতে শোনা যায়, “আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ছাত্র ছিলাম। আমার যতটুকু লেখাপড়া তাতে আমি এইটুকু বলতে পারি যে ২৬শে মার্চ থেকে অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের কোনো অবদান নেই। জিয়াউর রহমান ISI এর চর, জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেনি এতকিছু ঘটনা। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে যখন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে বিজয় দিবস পর্যন্ত যে সমস্ত বরেণ্য নেতৃবৃন্দ দায়ী যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কলঙ্গিত করা, তাদেরকে বিভিন্নভাবে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু আমি তো বলব আপনার শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে। হিংসা প্রতিহিংসার জ্বালায় আপনি অস্থির হযে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়াতে অনেক ধরনের কারখানা করেছেন, ইন্ডাস্ট্রি করেছেন, অনেক টাকা আপনার বিভিন্ন জায়গায় টাকা। আপনি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় পতাকা নিয়ে কন্ট্রাক্টরি করেন, ঠিকাদারি করেন। অথচ আপনার দেশপ্রেমের কোনো চিহ্ন আমরা পাই না।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সমালোচনা করে দলটির জৈষ্ঠযুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কোনো মন্তব্য করেননি বরং আলোচ্য ভিডিওতে ২০১৪ যুক্তরাজ্য বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে করা রিজভীর সমালোচনামূলক মন্তব্যের খণ্ড খণ্ড অংশ জোড়া লাগিয়ে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, hokkotha.com নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর“Ruhul Kabir Rizvi | The Atrium | 15 Dec 2014” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড পর্যন্ত রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ছাত্র ছিলাম।আমার যতটুকু লেখাপড়া তাতে আমি এইটুকু বলতে পারি যে ২৬শে মার্চ থেকে অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামীলীগ, আওয়ামীলীগের প্রধান নেতৃত্ব এবং মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কোনো অবদান নেই।”
৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনাদের দলের যাদের ভূমিকা আছে তাদের সন্তানরাই অথবা যারা অংশগ্রহণ করছেন তারাই কিন্তু প্রতিদিন আসল কথাটা, আপনার থলে থেকে বিড়াল বের করে দিচ্ছে। আর এজন্যই আপনার শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে। হিংসা প্রতিহিংসার জ্বালায় আপনি অস্থির হযে যাচ্ছেন। সিনিওর ভাইস চেয়ারম্যান যখন লন্ডন থেকে ইতিহাসের কথা বলছেন তখন আপনারা সমস্ত সভ্যতা, ভব্যতা, সমস্ত ধরনের শিষ্টাচারকে অতিক্রম করে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন।”
ভিডিওর ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে রুহুল কবির রিজভী বিএনপির সিনিওর ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি বিরোধী দলের নেত্রীকে কখনোই বাজে আক্রমণ করে কথা বলেননি অথচ আপনার বিরুদ্ধে বলেছে আপনি নাকি মালয়েশিয়াতে অনেক ধরনের কারখানাকরেছেন, ইন্ডাস্ট্রি করেছেন, অনেক টাকা আপনার বিভিন্ন জায়গায় টাকা। আজকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেছেন আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান করে, একবছর আছেন ক্ষমতা ডাকাতি করে। কই! কোথাও থেকে তো পারলেন না মালয়েশিয়ায় কতটা কারখানা আছে তারেক রহমানের বের করতে। কই, এত যে কথা বলেছেন একটা টাকাও তো আপনারা ফেরত নিয়ে আসতে পারলেন না তারেক রহমান সাহেবের।”
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, রুহুল কবির রিজভীর উপরোক্ত বক্তব্যকে বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, ২০১৪ সালে লন্ডনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করে বক্তব্য প্রদান করেন বিএনপির জৈষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সম্প্রতি তার উক্ত বক্তব্যের আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশের মন্তব্য ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করে বিকৃতভাবে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে রুহুল কবির রিজভী বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে দলটির জৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, ভারতের কিংবদন্তী নাট্যকার উৎপল দত্ত ও শোভা সেন দম্পতির কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দত্তের মেয়ে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাট্যকার উৎপল দত্তের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি বিষ্ণুপ্রিয়ার নয় বরং ছবিটি একই নামের ভিন্ন এক ব্যক্তির।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত দাবিতে থাকা ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ সংক্রান্ত প্লাটফর্ম লিংকডইন এর ওয়েবসাইটে ‘Bishnupriya Dutta‘ (আর্কাইভ) নামের একটি অ্যাকাউন্টে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Bishnupriya Dutta’s Linkedin profile
প্রোফাইলে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ছবিতে থাকা ব্যক্তিটির নাম বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত। তবে তিনি কোনো অধ্যাপিকা নন। তিনি একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন।
অর্থাৎ ছবিটির নাম আলোচিত ব্যক্তির সাথে মিললেও তার পরিচয় মিলছে না।
উক্ত প্রতিবেদনে বিষ্ণুপ্রিয়া দত্তের একটি ছবি রয়েছে এবং তিনি সেখানে নিজেকে কিংবদন্তী নাট্যকার উৎপল দত্তের মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি দিল্লি জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তিনি জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড অ্যাসথেটিকস বিভাগের একজন প্রফেসর।
Screenshot : Jawaharlal Nehru University
পাশাপাশি IFTR (International Federation for Theatre Research) নামক সংস্থাটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিষ্ণুপ্রিয়ার নাম এবং ছবির উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot: International Federation for Theatre Research
মূলত, সম্প্রতি কিংবদন্তী নাট্যকার উৎপল দত্ত ও শোভা সেন দম্পতির কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দত্তের মেয়ে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি উৎপল দত্তের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করা একই নামের ভিন্ন এক ব্যক্তির ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, নাট্যকার উৎপল দত্তের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার দাবিতে ভিন্ন এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এত বছর পর্যন্ত জানতাম এই ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ছড়াটা ৪ লাইন। আসলে এটা রোকনুজ্জামান খানের ৫২ লাইনের অসম্ভব সুন্দর একটি ছড়া।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য প্রচার হয়ে আসছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি ৫২ লাইনের নয় এবং এটি রোকনুজ্জামান খানেরও লেখা নয় বরং মূল ছড়াটি ৪ লাইনেরই এবং এই ছড়ার সাথে রোকনুজ্জামান খানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
‘হাট্টিমাটিম ছড়াটি ৫২ লাইন’ দাবির উৎস অনুসন্ধান
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অন্তত ২০১৬ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে যে, ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ছড়াটির শুধু শেষদিকের ৪ লাইনই পড়ানো হতো। তবে সে সময় দাবি করা হয় যে, ছড়াটি ৫২ নয়, ৫৬ লাইনের একটি ছড়া।
২০১৬ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
Screenshot: Facebook Claim Post
তবে পরবর্তীতে ২০১৭ সাল থেকে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছড়াটি ৫২ লাইন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে এবং পূর্বের ছড়াটি থেকে শেষ ৪ লাইন অর্থাৎ ‘তাদের বাড়ি ব্যাঙ এর বাসা/কোলা ব্যাঙ এর ছা/খায় দায় গান গায়/তাই রে নাই রে না।’ অংশটুকু বাদ দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্লগিং ওয়েবসাইট somewhereinblog এ ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ ‘একটি হাট্টিমাটিম ছড়া এবং তারপর….’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ব্লগ খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ব্লগটিতে নাদিয়া জামান নামে একজন ব্লগার লিখেন, “সপ্তা খানিক আগে হঠাত ফেইসবুকে বেশ কিছু ম্যাসেজ পেলাম, বিষয় ছিল হাট্টিমাটিম ছড়াটির প্রথম ৪৮ লাইন! অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখলাম, সে কি কান্ড, হাট্টিমাটিম পুরো ছড়া আবিস্কার করে রীতিমত সাড়া জাগিয়ে ফেলেছেন অনেকেই!
ফেইসবুকে অসংখ্য পেইজ পেলাম যেখানে আলোচিত শিরোনাম ” এত বছর পর্যন্ত জানতাম এই ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ছড়াটা ৪ লাইন। আসলে এটা রোকনুজ্জামান খানের ৫২ লাইনের অসম্ভব সুন্দর একটি ছড়া।” এই টপিকে সকলের শেয়ার, কমেন্ট আর আলোচনার বন্যা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। এতো সুন্দর একটা ছড়ার সম্পর্কে এই ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি দেখে তা দূর করার জন্য কিছু একটা না লিখলেই যে নয়। দাদাভাই (রোকনুজ্জামান খান) এর লেখা ৪ লাইনের চমৎকার শিশুতোষ ছড়া হাট্টিমাটিম টিম। ২০১২ সালের দিকে লিখেছিলাম প্রথম দিকের লাইনগুলো। দাদা ভাইয়ের লেখা চারটি লাইন ছোটবেলায় পড়েন নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, আর তাই যখন আমি এই ছড়াটির প্রথম দিকের লাইন লিখেছি তখন রেফারেন্সিং এর প্রয়োজন ও বোধ করি নি।
Screenshot: somewhereinblog
বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ আর ফোরামে এক্টিভ থাকার কারনে ছড়াটি সে সময় পোস্ট ও করেছিলাম আর চমৎকার সব রেসপন্স ও পেয়েছিলাম। কিন্তু এই ছড়া নিয়ে যে এতো বিভ্রান্তির শুরু হতে পারে তা ঘুণাক্ষরে ও মনে আসেনি। ছড়াটি নিয়ে এই ভুল তথ্য যেভাবে হাওয়ার বেগে ছড়িয়েছে, আমি আশা করবো সঠিক তথ্যটিও এভাবে ছড়াক। “
নাদিয়া জামানের এই ব্লগে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হাট্টিমাটিম ছড়াটির প্রথম ৪৮ লাইন অর্থাৎ ‘হাট্টিমাটিম টিম/ তারা মাঠে পারে ডিম/ তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমাটিম টিম।’ অংশটুকু ছাড়া বাকি অংশটুকু তার লেখা।
তার এই দাবির পক্ষে সত্যতা যাচাইয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে একই ব্লগ সাইটে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘হাট্টিমাটিম গল্প’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছড়া খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: somewhereinblog
ব্লগে প্রকাশিত এই ছড়াটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছড়াটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি ব্লগটির মন্তব্যবক্সে বিভিন্ন জনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নাদিয়া জামান লিখেন, হাট্টিমাটিম ছড়াটির ‘হাট্টিমাটিম টিম/ তারা মাঠে পারে ডিম/ তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমাটিম টিম।’ এই চার লাইন ব্যতীত বাকি লাইনগুলো তারই লেখা।
Image collage: Rumor Scanner
এই পর্যন্ত অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, হাট্টিমাটিম ছড়াটির ৪ লাইনের সঙ্গে অতিরিক্ত যে ৪৮ লাইন প্রচার করা হচ্ছে সেটি এই ছড়াটির মূল অংশ নয় বরং এটি নাদিয়া জামান নামে একজন ব্লগারের লেখা। তবে নাদিয়া জামান দাবি করেন, হাট্টিমাটিম ছড়াটির মূল চার লাইন রোকনুজ্জামান খান থেকে নেওয়া। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতেও দাবি করা হচ্ছে ছড়াটি রোকনুজ্জামান খানের লেখা।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই পর্যায়ে হাট্টিমাটিম ছড়াটির সঙ্গে রোকনুজ্জামান খানের সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধান করে।
হাট্টিমাটিম ও রোকনুজ্জামান খানের সম্পর্ক
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলা একাডেমি থেকে ২০০১ সালে প্রকাশিত খালেক বিন জয়েনউদদীনের লেখা ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই (১৯২৫-১৯৯৯)’ শীর্ষক একটি জীবনী গ্রন্থ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। বইটির ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, রোকনুজ্জামান খানের একটি বইয়ের নাম ‘হাটটিমা টিম।’ যেটি তার প্রকাশিত তৃতীয় ও প্রথম ছড়াগ্রন্থ। এটি ১৯৬২ সালে ঢাকার কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে ঢাকার ব্র্যাক থেকে। বইটির প্রচ্ছদপট ও বহুরঙা অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পী হাশেম খান।
Image captured from book
পরবর্তীতে একই বইয়ের যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৫২ নাম্বার পৃষ্ঠায় রোকনুজ্জামান খানের হাট টিমা টিম বইয়ের প্রচ্ছদ ও তার লেখা ২২ লাইনের ‘হাট টিমা টিম’ ছড়াটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছড়াটির কোথাও ‘হাট্টিমাটিম টিম/ তারা মাঠে পারে ডিম/ তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমাটিম টিম।’ এই চার লাইন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ ‘হাট্টিমাটিম টিম/ তারা মাঠে পারে ডিম/ তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমাটিম টিম।’ এই চার লাইন রোকনুজ্জামান খানের লেখা নয়। এছাড়া পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছড়াটি রোকনুজ্জামান খানের লেখা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সেটি নাদিয়া জামান নামে একজন ব্লগারের লেখা।
‘হাট্টিমাটিম টিম’ মূল ছড়াটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
এই ব্লগটির সূত্রে ‘খুকুমনির ছড়া’ নামের একটি বইয়ের ৩৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় চার লাইনের ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ছড়াটিখুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Khuku Monir Chora book
খুকুমনির ছড়া বইটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই বইটি বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দ ,ইংরেজি ১৮৯৯ সালে কলকাতার ৬৪ নং কলেজ স্ট্রীটের সিটি বুক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত। এই বইটি সংকলন করেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার।
Screenshot: Khuku Monir Chora book
প্রসঙ্গত, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত রোকনুজ্জামান খানের জীবনী গ্রন্থমালা থেকে জানা যায়, রোকনুজ্জামান খানের জন্ম ১৯২৫ সালে, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায়। অর্থাৎ তাঁর জন্মের আগে থেকেই হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
Image captured from book
উল্লেখ্য, চার লাইনের মূল ‘হাট্টিমা টিম’ ছড়াটি কার লেখা তা নিয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। কারো কারো মতে, এটি সুকুমার রায়ের লেখা, আবার কারো মতে অন্নদা শঙ্কর রায়ের লেখা। তবে মূল লেখক নিয়ে বিতর্ক থাকলে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি রোকনুজ্জামান খানের লেখা নয় এবং মূল ছড়াটিও ৫২ নয় মাত্র ৪ লাইনের।
মূলত, দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে যে, ‘হাট্টিমাটিম টিম’ ছড়াটি ৪ লাইনের নয়, এটি রোকনুজ্জামান খানের ৫২ লাইনের একটি ছড়া। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘হাট্টিমাটিম টিম/ তারা মাঠে পারে ডিম/ তাদের খাড়া দুটো শিং/তারা হাট্টিমাটিম টিম।’ ছড়াটি এই চার লাইনেরই। ছড়াটি ৫২ লাইন দাবিতে অতিরিক্ত যে ৪৮ লাইন প্রচার করা হচ্ছে, সেটি মূলত নাদিয়া জামান নামে একজন ব্লগারের লেখা। যিনি ২০১২ সালে এটি লিখেছিলেন এবং ছড়াটির সঙ্গে শিশু সাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের লেখা ২২ লাইনের ‘হাট টিমা টিম’ ছড়াটির কোনো মিল নেই। পাশাপাশি ‘হাট্টিমাটিম টিম’ চার লাইনের ছড়াটিও রোকনুজ্জামান খানের লেখা নয় বরং তাঁর জন্মের আগে থেকেই ছড়াটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
সুতরাং, হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি ৫২ লাইন ও এটি রোকনুজ্জামানের লেখা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘জামায়াত-শিবিরের ভয়ে মুক্তি পেলো জামায়াতের আমির’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘ জামায়াত আমিরের মুক্তি রাজধানী দখলে নিলো জামায়াত শিবির ‘ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,জামায়াতে ইসলামীর আমির ড.শফিকুর রহমান কারা থেকে মুক্তি পাননি বরং ভিন্ন একটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচারিত হয়।
গত ৯ আগস্ট ‘Taza News‘ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে জামায়াত-শিবিরের ভয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ড.শফিকুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।
Screenshot : Teza News
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির থাম্বনেইলে জামায়াতে ইসলামীর আমির ড.শফিকুর রহমানের মুক্তির কথা বললেও ভিডিওটিতে এমন কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ ভিডিওটির থাম্বনেইলের সাথে ভিডিটিতে থাকা বিষয়বস্তুর কোনো মিল নেই।
পরবর্তীতে ভিডিওটিতে থাকা ব্যানারের লেখার সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় গণমাধ্যম নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৮ মে ‘ রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতের বিক্ষোভ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে থাকা একটি ছবির ব্যানারের সাথে আলোচ্য ভিডিওটিতে থাকা ব্যানারের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Nayadiganta
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণকমিশনের দেশ বরেণ্য ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও ইসলামের অপব্যাখ্যার কথিত অভিযোগের প্রতিবাদে এবং গণকমিশনের হোতাদের আইনের আওতায় আনার জন্য জামায়াতে ইসলামী ঢাকা উত্তর মহানগরের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১ গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যালে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এবং সমাবেশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন দেশ, জাতি, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেন।
পাশাপাশি ‘Bangladesh Jamaat-e-Islami ‘এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে গত ৯ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কে একটি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে তোলার বিষয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমানের মুক্তি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot : Bangladesh Jamaat-e-Islami fb page
অর্থাৎ উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মুক্তি পাননি।
মূলত, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট(সিটিটিসি)। সম্প্রতি তিনি কারামুক্তি পেয়েছেন এমন একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সর্বশেষ গত ০৮ আগস্ট একটি মামলায় হাজিরা দিতে তাকে আদালতে তোলা হয়েছিলো। হাজিরা শেষে তাকে আবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তি দাবিতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটি।
পূর্বে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ারের কারামুক্তি পাওয়ার দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং,জামায়াতে ইসলামীর আমির ড.শফিকুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘এইচএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নেওয়ার আলোচনা চলছে’ শীর্ষক একটি তথ্যকে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার এর মন্তব্য দাবিতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার কোনো মন্তব্য করেননি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলোর আদলে একটি ফটোকার্ড তৈরির মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১১ আগস্ট ২০২৩।
Screenshot: Facebook
অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ আগস্ট বা তার আগে পরে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া প্রথম আলো ছাড়াও অন্যকোনো গণমাধ্যমেও প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার আলোচনার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারের মন্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আরটিভির ওয়েবসাইটে গত ১১ আগস্ট ‘এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সুযোগ নেই : শিক্ষামন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: RTV
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুর পুরানবাজার কলেজের ডাকাতিয়া নদীপাড়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা চত্বর উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যথাসময়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। কেননা দেশের ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে, শুধু নির্ধারিত সময়ের এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য।’
অর্থাৎ, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে এবং সেপ্টেম্বরে নেওয়ার আলোচনার বিষয়টিও সঠিক নয়।
পাশাপাশি, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ‘এইচএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নেওয়ার আলোচনা চলছে’ শীর্ষক মন্তব্যটি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারের নয় এবং কোনো গণমাধ্যমও উক্ত মন্তব্য সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রচার করেনি।
মূলত, গত ১০ আগস্ট এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটক বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে পরীক্ষার্থীরা। অবস্থান শেষে তারা পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এ ঘটনার একদিন পর অর্থাৎ গত ১১ আগস্ট ‘এইচএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নেওয়ার আলোচনা চলছে’ শীর্ষক একটি তথ্যকে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার এর মন্তব্য দাবিতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং প্রথম আলোও উক্ত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারের বরাত দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হবে দাবিতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি ভুয়া এবং আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটিতে বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদবের সাথে বাংলাদেশের নায়ক শাকিব খান থাকার দাবিটি সত্য নয় বরং উক্ত ছবিতে রাজপাল যাদবের সাথে বলিউড অভিনেতা অভিষেক ব্যানার্জী ছিলেন।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদবের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একই দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Rumor Scanner
ভিডিওতে থাকা ক্যাপশন, হ্যাশট্যাগ এবং ট্যাগ থেকে জানা যায় রাজপাল যাদবের অপর পাশে বলিউড অভিনেতা অভিষেক ব্যানার্জী ছিলেন।
এছাড়া অভিষেক ব্যানার্জীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি রাজপালের ভিডিওটিই শেয়ার করেছেন।
Screenshot from Instagram
মূলত, সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ছবি প্রচার করে বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদবের সাথে বাংলাদেশি অভিনেতা শাকিব খান থাকার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে রাজপাল যাদবের সাথে শাকিব খান ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে সেই ছবিতে অপর বলিউড অভিনেতা অভিষেক ব্যানার্জী ছিলেন।
সুতরাং, বলিউড অভিনেতা রাজপাল যাদব এবং অভিষেক ব্যানার্জী করা একটি ভিডিও থেকে একটি মূহুর্তের দৃশ্য স্ক্রীনশট নিয়ে সেখানে শাকিব খান উপস্থিত ছিলেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।