সম্প্রতি, “অনেক দেরিতে হলেও সুবুদ্ধির উদয় হলো *ধন্যবাদ বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভীকে **২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন *** ” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ,এখানে ,এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এখানে ,এখানে ,এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশের মন্তব্য সংযুক্ত করে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বক্তব্যটি ২০১৯ সালের।
আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে, দেশীয় গণমাধ্যম ‘সময় নিউজ’ এর ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২২ আগস্টে “ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ২১আগস্টের ঘটনায় খালেদাকে জড়ানো হচ্ছে’ | Ruhul Kabir Rizvi | Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির প্রথম ০২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ২ সেকেন্ড পর্যন্ত রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপি সরকারকে জড়িত করে বলেছেন “সেই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি জামায়াত জোটের মদদ ছাড়া দিনে দুপুরে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। ২১ শে আগস্টের ঘটনায় খালেদা জিয়ার সহযোগিতা থাকলেও তাকে আসামি করা হয় নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব ছিলো।” আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন “২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত” এজন্য উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। এইটা তাদের সুপরিকল্পিত একটি নীল নকশা। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যে মামলা এটা নিয়ে আমরা অনেকবার কথা বলেছি তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছি এবং এই বিষয়গুলো বলেছি ।
তাছাড়া, ভিডিওটির ৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট ২৬ সেকেন্ড রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,
আমরা প্রথম থেকেই দেখছি আওয়ামী লীগ ২১ শে আগস্ট বোমা হামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রনীত রাজনীতি করে আসছে। মূলত ২১ শে আগস্ট এর ঘটনা ছিলো গভীর নীলনকশার অংশ। যে নীলনকশার সাথে ক্ষমতাশীলরা জড়িত কি না তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে । এই মামলার সামগ্রিক সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হলে প্রকৃ্ত ঘটনা বেরিয়ে আসতো। কিন্তু তা না করে সুপরিকল্পিত নীল নকশা অনুযায়ী এই ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক কায়দায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে আসছে আওয়ামীলীগ। তার বড় প্রমান হলো কথিত সম্পূরক চার্জশীটের নামে এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়ে ফরমাইশই দায়ে সাজা দেওয়া। যা ২০০৪ সালের “২১ শে আগস্ট আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনা ও ছিলো সম্পূর্ণই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণনীত গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ও দীর্ঘদিনের মাস্টার প্লানের ফসল।” “২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার হতাহতের ঘটনা মর্ম স্পর্শী ও হ্রদয় বিদারক।”
এছাড়াও ভিডিওটির ৬ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে ৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ড বলেছেন,
“এক এগারোর পর ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দীতে তারেক রহমানের নাম ছিলো না।”শুধু তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য মামলায় অন্য মামলায় ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানসিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয় মুফতি হান্নানকে।
ওপরের মন্তব্যগুলো থেকে এটা সহজে অনুমেয় যে রুহুল কবির রিজভী তাঁর বক্তব্যে উক্ত কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। আর সেই কথাগুলোকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে সম্প্রতি এমনভাবে সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে এসব কথা তিনি নিজের বক্তব্য হিসেবে ব্যক্ত করছেন।
মূলত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৯ সালের ২১ আগস্টে এক স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐ হামলায় বিএনপি-জামায়াত সরকার ও তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। ঐ গ্রেনেড হামলায় বিএনপি এবং তারেক রহমানকে জড়ানোর প্রতিবাদে পরেরদিন ২২ আগস্টে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সমালোচনা করেন। সেই সমালোচনার আলাদা সময়ের খণ্ড খণ্ড অংশকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সংযুক্তের মাধ্যমে বিকৃত আকারে বিভ্রান্তিকরভাবে সামাজিক যোগাযোগমা মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া এই বিকৃত ভিডিওটি ২০১৯ সাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে প্রচার হয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারিত ভিডিও ভুয়া চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১৯ সালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভীর কর্তৃক প্রদানকৃত একটি বক্তব্যের ভিডিওকে বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
Somoy Tv: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ২১আগস্টের ঘটনায় খালেদাকে জড়ানো হচ্ছে’ | Ruhul Kabir Rizvi | Somoy TV