রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এমন কোনো বক্তব্য দেননি বরং ২০২২ সালে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত তোফায়েলের একটি বক্তব্য সম্বলিত শিরোনামকে এডিট করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার তারা জোটবদ্ধ অত্যাচার-নির্যাতন করবে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ওরা গরু পুড়িয়ে মেরেছে। নারীদের সম্ভ্রমহানী করেছে। ইজ্জ্বত বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েও সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি অনেক নারী।
এই সংবাদের শিরোনাম এবং ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে ছড়ানো স্ক্রিনশটের প্রাসঙ্গিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সংবাদটির শিরোনামে উল্লিখিত ‘নির্যাতন’ শব্দের স্থলে ‘পুটকি’ শব্দটি বসিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
একই তারিখ জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে আরেকটি প্রতিবেদনেও তোফায়েলের একই বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Daily Jugantor
মূলত, ২০২২ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ “বিএনপি ক্ষমতায় এলে জোট বেঁধে পুটকি মারবে” শীর্ষক একটি মন্তব্য করেছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। তোফায়েল আহমেদ এমন কোনো মন্তব্য করেনি বরং একটি গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম এডিট করে সেটি তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।
সুতরাং, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের একটি মন্তব্যকে এডিট করে ভিন্ন শব্দ জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে; যা বিকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের বন্যায় এক ব্যক্তি কর্তৃক তার মায়ের লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার চিত্র শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় মূল ছবিটি ২০২২ সালে সিলেটের বন্যার ঘটনার এবং উক্ত ছবিতে কোনো লাশ ছিল না, যা প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে বসিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালের ২৪ জুন MA Nezami নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই ছবি ব্যবহার করে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশনেও প্রায় একই তথ্যই উল্লেখ ছিল।
একইদিন এ বিষয়ে প্রকাশিত আরো একটি পোস্ট দেখুন এখানে ( আর্কাইভ)।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে ২০২২ সালের ১৯ জুন অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে সেসময়ের সিলেটে বন্যার বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ছবিতে লাশ সদৃশ কোনো বস্তু দেখা যায়নি।
Screenshot : Dhaka Post
অর্থাৎ, আলেচিত ছবিটিতে লাশের ছবি এডিটের মাধ্যমে যুক্ত করে বিগত বছর থেকেই ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
সেসময় আরেকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই ছবি দেখুন এখানে।
Screenshot :Abnews24.com
মূলত, চট্টগ্রামের বন্যায় এক ব্যক্তি কর্তৃক তার মায়ের লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার চিত্র দাবিতে উক্ত ছবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূল ছবিটি ২০২২ সালের জুনে সিলেটের বন্যার ঘটনার এবং ছবিটিতে কোনো লাশ ছিল না। মূলত, প্রযুক্তির সহায়তায় এডিটেড এই ছবিটি গত বছর থেকেই ভিন্ন ভিন্ন স্থানের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
সুতরাং, চট্টগ্রামের বন্যায় লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি এডিটেড।
সম্প্রতি “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে না থাকা অবস্থায় ট্রাফিক সার্জেন্টের মুখোমুখি হন তাহলে সাথে সাথে ফাইন দিবেন না। আইনত কাগজ দেখানোর জন্য আপনি ১৫ দিনের সময় পাবেন” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমবঙ্গে এরকম কোনো আইন নেই বরং সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করে উক্ত ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গাড়ির দূষণ পরীক্ষা সেন্টারের এক কর্মচারী সুপ্রিম কোর্টের বরাতে এই ভুল তথ্যটি ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানের সীল ও নিজের স্বাক্ষর বসিয়ে অনলাইনে প্রচার করেছে। কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গে এরকম কোনো আইন নেই। প্রচারিত নির্দেশনাটি বাংলা ভাষায় হওয়ায় তা বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও এরকম কোনো আইন নেই এবং সুপ্রিম কোর্ট এ জাতীয় কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার জন্য টাইটান ধ্বংসের পর ওশানগেট নতুন কোনো বিজ্ঞাপন দেয়নি বরং ইন্টারনেট আর্কাইভ অনুযায়ী উক্ত বিজ্ঞাপনটি টাইটান ধ্বংসের আগে থেকেই ওয়েবসাইটে রয়েছে।
মূলত, টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পাঁচজন আরোহী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেটের টাইটান নামে একটি সাবমেরিন গত ১৮ জুন আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে যাত্রা শুরু করে। তবে যাত্রার প্রায় দুই ঘন্টা পরেই সাবমেরিনটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থাকা মূল জাহাজের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে গত ২২ জুন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশির পর উদ্ধারকারীরা সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা জানান। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যম সূত্রে ওশানগেটের আবারও টাইটানিক দেখতে যাওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়ার দাবিতে একটি তথ্য ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে ইন্টারনেট আর্কাইভ অনুযায়ী উক্ত বিজ্ঞাপনটি টাইটান ধ্বংসের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায় এবং দূর্ঘটনার পর টাইটানিক দেখতে যাওয়ার জন্য ওশানগেট কর্তৃক পুনরায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় এটি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “এইচএসসি ২৩ ব্যাচ ১৭ তারিখ পরীক্ষা দিতে না চাইলে ২৪ ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিতে পারবে- দীপু মনি” শীর্ষক শিরোনামে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “HSC ২৩ ব্যাচ ১৭ তারিখ পরীক্ষা দিতে না চাইলে ২০২৪ ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিতে পারবে” এমন কোনো বক্তব্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেননি বরং কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে জন্য অনুসন্ধান করে দেশের কোনো গণমাধ্যমে উক্ত মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে দীপু মনির এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে দেওয়া সাম্প্রতিক মন্তব্য সম্বলিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীকে পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আগামী ১৭ আগস্ট থেকেই শুরু হবে এ পরীক্ষা।
দীপু মনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
মূলত, সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য দাবিতে ”চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ১৭ আগস্ট পরিক্ষা দিতে না চাইলে ২০২৪ ব্যাচের সাথে পরিক্ষা দিতে পারবে’ শীর্ষক একটি মন্তব্য প্রচার করা হলেও রিউমর স্ক্যানানের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিপু মনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, দীপু মনি এই পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন।
সুতরাং, “HSC ২৩ ব্যাচ ১৭ তারিখ পরীক্ষা দিতে না চাইলে ২০২৪ ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিতে পারবে” শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন কংগ্রেস ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বরং গত ২৮ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে এই প্রস্তাব পাশ হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের গণমাধ্যমগুলোর এ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন (১,২,৩) নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের। প্রতিবেদনগুলোয় পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের বরাতে বলা হয়, মার্কিন কংগ্রেসে ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে ইসলামের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এই প্রস্তাব করা হয়। টেক্সাস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস ম্যান আল গ্রিন এই প্রস্তাবটি রাখেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন ইলহান ওমর, রাশিদা তালিব ও কংগ্রেস ম্যান আন্দ্রে কারসন।
পরবর্তীতে দ্য ডন এর ওয়েবসাইটে গত ০৪ আগস্ট প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত ট্রেকারে দেখা যাচ্ছে, ২৮ জুলাই প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর সেদিনই হাউজ কমিটি অন ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের (House Committee on Foreign Affairs) কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এটাই সর্বশেষ আপডেট হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
Screenshot source: Congress
তাছাড়া, প্রস্তাবটি পাশ বা স্বীকৃতি পেয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্যও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, আলোচিত প্রস্তাবটি মার্কিন কংগ্রেসে এখনো স্বীকৃতি পায়নি।
মূলত, সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানূ যায়, দাবিটি সঠিক নয়। গত ২৮ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে টেক্সাস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস ম্যান আল গ্রিন ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রস্তাব রাখেন। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে, প্রস্তাবটি হাউজ কমিটি অন ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের কাছে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ, এটি এখনো স্বীকৃতি পায়নি।
সুতরাং, মার্কিন কংগ্রেস ইসলামকে ‘মহান ধর্ম’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রস্তাবের ঘটনাকে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “একাত্তর টিভি আনফলো করা শুরু হয়ে গেছে। তাদের প্রায় ২০ লাখ ফলোয়ার কমে গেছে।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির ২০ লাখ ফলোয়ার কমে যাওয়ার তথ্যটি সত্য নয় বরং কোনো প্রকার তথ্য প্রমান ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
শুরুতে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজের ডাটা নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার।
ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ক্রাউট্যাঙ্গলের সাহায্যে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজের গত ৩০ দিনের ফলোয়ার গ্রোথ দেখে জানা যায়, গত ৮ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্তু একাত্তর টিভির ফেসবুক ফলোয়ার সংখ্যা কমেনি বরং এ তিনদিনে পূর্বের মতোই একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজের ফলোয়ার সংখ্যা ক্রমবর্ধমানই ছিলো।
Screenshot from crowdtangle
এছাড়া, জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল ব্লেড থেকে পাওয়া গত ৩০ দিনের তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একাত্তর টিভির ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫০১ জন (এই রিপোর্ট লেখা চলাকালীন)। তবে সোশ্যাল ব্লেন্ডে সম্প্রতি একাত্তর টিভির ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা কমার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Socialblade
সোশ্যাল ব্লেডের পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া গত ৩০ দিনের তথ্যানুযায়ী, একাত্তর টিভির টুইটারের ফলোয়ার সংখ্যা ৩৪ হাজার ২১৯ জন (এই রিপোর্ট লেখা চলাকালীন)। গত কয়েক দিনের ফলোয়ার সংখ্যার ডাটা বিশ্লেষণ করে একাত্তর টিভির ফলোয়ার সংখ্যা ২০ লাখ ছিলো এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Socialblade
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে এটা নিশ্চিত যে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও টুইটার কোনো প্লাটফর্মেই একাত্তর টিভির ফলোয়ার কমেনি।
মূলত, সম্প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি ও একাত্তর টিভির টকশো অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এরই প্রেক্ষিতে একাত্তর টিভির ২০ লাখ ফলোয়ার কমে যাওয়ার দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, একাত্তর টিভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফলোয়ার সংখ্যা ৮.৪ মিলিয়ন(এই রিপোর্ট লেখা চলাকালে)। ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ক্রাউট্যাঙ্গ থেকে তথ্য যাচাই করে এটা নিশ্চিত যে, ফেসবুকে সম্প্রতি একাত্তর টিভির ফলোয়ার কমেনি। অপরদিকে একাত্তর টিভির ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারের ফলোয়ার সংখ্যা এই দাবি প্রচার হওয়ার আগে থেকেই ২০ লক্ষেরও অনেক কম ছিলো এবং সম্প্রতি ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারেও একাত্তর টিভির ফলোয়ার কমার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানলের সাবস্ক্রাইবার কমার ভুয়া দাবিপ্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির ২০ লাখ ফলোয়ার কমে গিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, দেশের আত্মনির্ভরশীল ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান Association for Social Advancement (আশা)’তে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হচ্ছে, সংস্থাটি ট্রেইনি হিসাবরক্ষক এবং ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আশা ট্রেইনি হিসাবরক্ষক এবং ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি বরং এনজিওটির নাম ও লোগো ব্যবহার করে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে আশা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আশা’র ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি আশা’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানানো হয়।
Screenshot: ASA BANGLADESH Facebook Page
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, “এই মর্মে সর্বসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করা যাচ্ছে যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল দেশের শীর্ষস্থানীয় এনজিও (এমএফআই) ‘আশা’র নাম, লোগো ও ভুয়া ইমেইল এ্যাড্রেস ব্যবহার করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে প্রকাশের মাধ্যমে সরলমতি মানুষদের সঙ্গে প্রতারণার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।”
“প্রতারক চক্র কৌশলে ‘আশা’র নাম ও লোগো ব্যবহার করে অতিসম্প্রতি অনলাইন জবস পোর্টালে ট্রেইনি হিসাব রক্ষক (২৭৫৩ জন) ও ফিল্ড অফিসার (৩৪৮৬ জন ) পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরলপ্রাণ মানুষদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।”
মূলত, দেশীয় এনজিও আশা’র নাম ও লোগো ব্যবহার করে “আশা’য় কর্মী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। আশা থেকে সম্প্রতি এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি বলে সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি আশিকুল ইসলাম বিটু ক্লাসে যোগ দেওয়ায় বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) বিটুকে খুনের মামলার আসামী উল্লেখ করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন:
এই বিজ্ঞপ্তিটি বিএনপির মিডিয়া সেলের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘বুয়েটে খুনের মামলার আসামি যাওয়াটা নিন্দনীয়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারও করা হয়। এ সম্পর্কিত পোস্টটি দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আবরারের বাবার দায়েরকৃত মামলা এবং মামলার চার্জশিটে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই। প্রকৃতপক্ষে আশিকুল ইসলাম বিটুকে আবরার ফাহাদ হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছিল। তবে বিটুর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বুয়েট কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেন।
আবরার ফাহাদ হত্যায় তার বাবার দায়েরকৃত মামলায় বিটুর নাম নেই
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ‘আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত এই ১৯ আসামির বিস্তারিত নাম, পরিচয় বিশ্লেষণ করে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া এই ১৯ জনকে সেই সময় বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়।
পুলিশের চার্জশিটেও নেই বিটুর নাম
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটটিতে উল্লেখিত আসামিদের নাম যাচাই করে দেখে।
এ নিয়ে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ‘আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট, ছাত্রলীগের নেতাসহ আসামি ২৫’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ২৫ জনের নাম যাচাই করেও সেখানে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিটুর বহিষ্কারের বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ যা জানায়
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে আশিকুল ইসলাম বিটুকে কেন বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এ নিয়ে অনুসন্ধান করে।
Buet Notice collected by open source investigation
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্ট অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সদস্য সচিব ও ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান কর্তৃক স্বাক্ষরিত ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২৬ জনকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত। যাদের নাম ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিটুর বিষয়ে যা বলছে
সম্প্রতি আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম (বিটু) ক্লাসে ফিরেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে গত ০৯ আগস্ট ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আবরার ফাহাদ হত্যার তদন্তে অসহযোগিতা এবং র্যাগিংয়ের ঘটনায় বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এরকম একজনের সঙ্গে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনোভাবেই রাজি নই।’
Screenshot: Desh Rupantor
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আবরারের বাবার মামলা ও পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে তাকে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির সাথে বহিষ্কার করে। যদিও বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু জানায়নি বহিষ্কার আদেশে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালেও আশিকুল ইসলাম বিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিলে এর প্রতিবাদে বুয়েট ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
তবে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেখা যায়, সে সময় আবরার ফাহাদ হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যাদেরকে আটক ও রিমান্ডে নেওয়া হয় সেখানে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন আবরার হত্যা: ১০ আসামি পাঁচদিনের রিমান্ডে।
Screenshot: bdnews24
পাশপাশি আশিকুল ইসলাম বিটুর পরিবারও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন যে, সে সময়ে বিটুকে আটক ও রিমান্ডে নেওয়া হয়নি।
আশিকুল ইসলাম বিটুর পরিবার যা বলছে
সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম আশিকুল ইসলাম বিটুর ভাই ওয়াসিউল ইসলাম ডিটুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ২০১৯ সালে বেশ কিছু মিডিয়ায় তার ভাইয়ের আটক ও রিমান্ডের বিষয়ে খবর প্রচার করা হলেও সে সময়ে এমন কিছু ঘটেনি। বরং সে সময় তার ভাই পাবনাতে পরিবারের সাথেই অবস্থান করছিলেন।
মূলত, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় অভিযুক্ত হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আশিকুল ইসলাম বিটুর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বুয়েট কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেন। সেই স্থগিতাদেশ নিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল তাকে ক্লাসে ফেরার অনুমতি দেয়। সে বছরের ২২ মে তিনি অনলাইন ক্লাসে অংশ নিলে শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি আর ক্লাসে আসেননি। তবে সম্প্রতি তিনি পুনরায় ক্লাসে আসলে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও নতুন করে প্রতিবাদে নামে। এরই প্রেক্ষিতে দেশীয় গণমাধ্যমে আশিকুল ইসলাম বিটুকে আবরার হত্যা মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবরারের বাবার মামলা ও পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটে আসামি হিসেবে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী ৬ অক্টোবর রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে সেসময় অভিযোগ ওঠে। আবরার ফাহাদের বাবা এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই হত্যা মামলাতেই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এক ২০২১ সালে ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তারপরই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে, অন্যদিকে খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিরা। তবে এখনো এই বিষয়ে আপিলের শুনানি শুরু হয়নি।
সুতরাং, আশিকুল ইসলাম বিটুকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি দাবি করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিসের দাবানলের ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে গ্রিসের সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Reuters এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ আগস্ট গ্রিসের ইভিয়া দ্বীপের কিরিনথোস গ্রামে দাবানলের আগুন জ্বলে উঠলে একটি বাড়ির কাছ থেকে জ্বলার দৃশ্য এটি।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই গ্রিসের এথেন্সের কাছে কিনেটাতে দাবানলের সময় একটি বাড়ির অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি ভিন্ন ঘটনার ও পাঁচ বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৩
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাগো নিউজ২৪।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই এথেন্সের কাছে রাফিনা শহরে একটি দাবানলের উপর একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি পাঁচ বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৪
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নয়া দিগন্ত।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত জুন মাসে জার্মানীর লুবথিনের একটি জঙ্গল এলাকা থেকে ধোঁয়া এবং শিখা আকাশে উঠে যাওয়ার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি গ্রিসের নয়।
ছবি যাচাই- ৫
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নাগরিক টিভি।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Reuters এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই তুরস্কের আন্টালিয়া রিসর্ট শহরের পূর্বে মানাভগাট শহরের কাছে একটি অগ্নিনির্বাপক যান কর্তৃক বনের আগুন নিভানোর সময় তোলা ছবি এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি গ্রিসের নয় বরং তুরস্কের এবং ছবিটি দুই বছরের পুরোনো।
ছবি যাচাই- ৬
এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা ট্রিবিউন।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে Reuters এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Reuters
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মী ল্যান্ডিরাসের কাছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন, যেহেতু দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গিরোন্ডে অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে। ছবিটি ২০২২ সালের ১৫ জুলাই তোলা।
ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে Getty Images এর ওয়েবসাইটে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাইতে তুরস্কের দাবানলের ঘটনার দৃশ্য এটি।
অর্থাৎ, ছবিটি ভিন্ন ঘটনার এবং দুই বছরের পুরোনো।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো গ্রিসের সাম্প্রতিক দাবানলের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত জুলাইতে গ্রিসের দাবানলের ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্রিসের ঘটনার দাবিতে সাতটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয়। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে গ্রিসের সাম্প্রতিক দাবানলের ঘটনার খবরে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো গ্রিসের সাম্প্রতিক দাবানলের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, গ্রিসের দাবানলের ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।