রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮২৩ বছর পর এবছর ডিসেম্বরে ৫টি শুক্রবার আসার দাবিটি সঠিক নয় বরং কয়েক বছর পরপরই এমনটা ঘটে।
মূলত, ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ৩১ দিনের মাস ৭ টি এবং ৩০ দিনের মাস মোট ৫ টি। আর ৩১ দিনের মাস যে বার দিয়ে শুরু হয় সেই বার এবং তার পরবর্তী ২ টি বার উক্ত মাসে ৫ বার আসে। একইভাবে ৩০ দিনের মাস যে বার দিয়ে শুরু হয় সেই বার এবং তার পরবর্তী বার উক্ত মাসে ৫ বার আসে। যেমন চলতি ডিসেম্বর মাস শুরু হয়েছে শুক্রবার, তাই এই মাসে শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার মোট ৫ বার আসবে। একইভাবে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ২০২২ এর এপ্রিল, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসেও মোট ৫ টি করে শুক্রবার এসেছিল।
উল্লেখ্য, একাধিক সময়ে একই দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় এবিষয়ে ফ্যাক্টচেকপ্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, ভারতীয় জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি তার স্ত্রী হাসিন জাহান বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত মন্তব্যটি হাসিনের নামে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এবিষয়ে সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে Indian Cricket Sarcasm নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৫ নভেম্বর ‘Shami gives money to players to take their wickets’ শীর্ষক শিরোনামে হাসিনের ছবি নিয়ে প্রকাশিত ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যানারটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে দেখা যায়, শামিকে নিয়ে তার স্ত্রী হাসিনের উক্ত মন্তব্য সম্বলিত তথ্যের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
Screenshot: Facebook
উক্ত ব্যানারের তথ্যটি পরবর্তীতে বাংলায় অনূদিত হয়ে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে হাসিনের করা বাস্তব মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে উক্ত ব্যানারে ব্যবহৃত হাসিন জাহানের ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কিনা সেবিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম Dynamite News এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ ‘Shami’s wife Hasin Jahan to meet Mamata Banerjee on March 23’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Dynamite News
অর্থাৎ, হাসিন জাহানের এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এছাড়াও, কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ZEENEWS এর ওয়েবসাইটে Mohammed Shami’s Estranged Wife Denies Saying, ‘He Pays Batters To Pick Wickets’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে হাসিন জাহানের একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের বরাতে জানানো হয়, শামিকে নিয়ে প্রচারিত উক্ত মন্তব্যটি হাসিনের নয়।
পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে হাসিন জাহানের ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে গত ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত উক্ত পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Instagram
উক্ত পোস্টে হাসিন জাহান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার নামে মিথ্যা খবর ছড়ানো হচ্ছে এবং সমাজের সামনে তাকে হেয় করার জন্য একদল অসামাজিক লোক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শামি ২০১৮ সালে উমেশ নামের এক মিডিয়া মাফিয়াকে তার নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে তার স্ত্রী হাসিন জাহানের উক্ত মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০১৪ সালে বিবাহের চার বছরের মাথায় ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার মোহাম্মদ শামি এবং তার স্ত্রীর মধ্যকার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি সামনে আসে। পরবর্তীতে শামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে হাসিনকে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসিন জাহান উক্ত মন্তব্যটি করেননি। প্রকৃতপক্ষে Indian Cricket Sarcasm নামের একটি ফেসবুক পেজে সার্কাজম হিসেবে উক্ত দাবিটি প্রচার হওয়ার তা পরবর্তীতে হাসিনের বাস্তব মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকলেও এখন পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি এবং তার স্ত্রী হাসিন জাহানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয়নি।
সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি নিজের বলে আউট হওয়ার জন্য ব্যাটারদেরকে টাকা দিয়েছেন শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। চলমান এই সংঘাতের মধ্যেই সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়েছে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া এই নবজাতক ৩৭ দিন নয় বরং ৩ ঘন্টা আটকে ছিল ধ্বংসস্তূপে।
দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত গালফ নিউজের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে একই তথ্যই উল্লেখ থাকলেও মূল সংবাদে বলা হয়েছে, সংঘাত শুরুর ৩৭ দিনে এসে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গালফ নিউজ তাদের খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি (Nooh Al Shaghnobi) নামে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত থাকা একজন সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করেছে যিনি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
এই তথ্যের সূত্র ধরে ইনস্টাগ্রামে নুহ আল শাঘনোবির অ্যাকাউন্টে গত ২৭ নভেম্বর এই নবজাতক সম্পর্কিত চারটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রথম পোস্টে নবজাতকটিকে উদ্ধারের সময়ের একটি ভিডিও যুক্ত করে তিনি ক্যাপশনে আরবিতে যা লিখেছেন বাংলা ভাষায় তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির বয়স এক মাসেরও কম৷ মা-বাবাকে হারিয়ে সে নতুন জীবন ফিরে পায় যখন তাকে তিন ঘন্টার চেষ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
Screenshot: Instagram
দ্বিতীয় পোস্টে শাঘনোবি নবজাতকটির সাথে ধারণ করা সকল উদ্ধারকর্মীর ছবি পোস্ট করে একই ক্যাপশন দিয়েছেন।
Screenshot: Instagram
তৃতীয় আরেক পোস্টে নবজাতকটিকে নিয়ে গাড়িতে করে ফেরার পথের একটি ভিডিও যুক্ত করেছেন তিনি, যাতে একই ক্যাপশনই রয়েছে।
অর্থাৎ, নবজাতকটির বিষয়ে প্রচারিত খবরের সূত্র হিসেবে নুহ আল শাঘনোবি নামে যে ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম পোস্টের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই৷
এ বিষয়ে আরো জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফিলিস্তিনের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান কাশিফ (Kashif) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিহাম আবু আইতা’র (Reham Abu Aita) সাথে। রিহামও নিশ্চিত করেছেন যে, সালাম নামের আলোচিত মেয়ে নবজাতকটি তিন ঘন্টা আটকে ছিলেন ধ্বংসস্তুপের নিচে।
মূলত, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত চলাকালীন গত ২৭ নভেম্বর গাজায় এক নবজাতককে ধ্বংসস্তূপে তিন ঘন্টা আটকে থাকার পর উদ্ধারের খবর জানান স্থানীয় এক উদ্ধারকর্মী। এই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল নবজাতক, যা সঠিক নয়৷
সুতরাং, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এক নবজাতকের তিন ঘন্টা আটকে থাকার ঘটনাকে গণমাধ্যমে ৩৭ দিন আটকে থাকার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন এবং এই পদের জন্য নতুন দায়িত্বে এসেছেন ইমরুল হাসান” র্শীষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতির পদ থেকে নয় বরং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত “হঠাৎ লিগ কমিটির দায়িত্ব ছাড়লেন সালাউদ্দিন” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Source: প্রথম আলো
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার জায়গায় লিগ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি এবং বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে।
তবে জনাব সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তার স্থলাভিষিক্ত হন ইমরুল হাসান। এই ঘটনাকেই কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের ঘটনাকে বাফুফের সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনোপ্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উক্ত দাবির স্বপক্ষে তথ্য খুঁজের চেষ্টা চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য মেলেনি।
পরবর্তীতে গত ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল ম্যাচের গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের লড়াইয়ের বিষয়ে ফিফার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে আবারো কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হয়। অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ নভেম্বর Argentina and Brazil charged by FIFA after fan violence delays World Cup qualifying game at Maracana শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২১ নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপ – ২০২৬ এর বাছাইপর্বের ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলা শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় ফিফা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
এতে ফিফা আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ভিড়ের ঝামেলা এবং দেরিতে শুরু করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে খেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
তবে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) এই অভিযোগের বিচার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সময়সূচি প্রকাশ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম The Washington Post এ গত ২৪ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, আন্তির্জাতিক ক্রীড়া গণমাধ্যম ESPN এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৪ মার্চের আগ পর্যন্ত ব্রাজিল ফুটবল দলের কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নেই। অন্যদিকে আর্জেন্টিন ফুটবল দলেরও ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নেই।
মূলত, গত ২১ নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপ – ২০২৬ এর বাছাইপর্বের ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলা শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় ফিফা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। যেখানে, ফিফা আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ভিড়ের ঝামেলা এবং দেরিতে শুরু করার অভিযোগে এবং ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে খেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) এই দুই দলের মামলার বিচার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সময়সূচি প্রকাশ করেনি। তবে সম্প্রতি, সে ম্যাচে ‘আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে’ দাবিতে একটি ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, আর্জেন্টিনার দর্শকদের লাঠিচার্জ করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) ব্রাজিলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভুয়া তথ্য, প্রোপাগান্ডা, পাল্টা-প্রোপাগান্ডার প্রচার বাড়ছে। প্রোপাগান্ডা, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং ভুয়া খবর জনমতের মেরুকরণ ও ম্যানিপুলেশন, সহিংসতা উস্কে দেওয়া, সর্বোপরি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নির্বাচনকে ঘিরে ভুয়া তথ্যের প্রচার সামনে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও মিথ্যা সংবাদ ব্যাপকভাবে নানান কৌশলে ও নানান উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তেমন একটি আলোচিত কৌশল হল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে নিজেদের মতো সংবাদ বা তথ্য বসিয়ে প্রচার। অনলাইনে যারা জনগণের মতামতের জগতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, উস্কে দিতে চায়, তারা ভুয়া তথ্যকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিটের মাধ্যমে প্রচার করার এ কৌশল অবলম্বন করছে, যা গত কয়েকমাসে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। লোকজনও সেগুলোকে আসল মনে করে বিশ্বাস করে নিচ্ছে, প্রভাবিত হচ্ছে এবং কেউ কেউ শেয়ারও করছে।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার অন্যতম। সংবাদমাধ্যমগুলো গত কয়েকবছর আগেও তাদের সোস্যাল মিডিয়া পেজে নিউজ আর্টিকেল সরাসরি প্রচার করার মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করতো। গত কয়েকবছরে সামাজিক মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ প্রকাশের কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো আর্টিকেল পোস্ট করার পাশাপাশি এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে নিউজ ফটোকার্ড প্রকাশ। সোস্যাল মিডিয়ায় নিউজ পরিবেশনকে আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং অধিকসংখ্যক রিচ পেতে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। ফটোকার্ডে সাধারণত সংবাদ সংশ্লিষ্ট একটি ছবি এবং সংবাদের হেডলাইনকে সুন্দর ডিজাইনে উপস্থাপন করা হয়। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে সেই সংবাদের পাবলিক এংগেজমেন্ট এবং রিচ বেশি পাওয়া যায়। সংবাদকে আকর্ষণীয় ও অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানোর নিমিত্তে গণমাধ্যমের প্রবর্তিত এ মাধ্যমকে সম্প্রতি অপব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে নিচ্ছে অনলাইন দৃষ্কিতিকারীরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া তথ্য প্রচারের ফলে ভুয়া তথ্য অধিকতর বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেশের মূল ধারার সংবাদমাধ্যম একাত্তর টিভির সৌমিত্র মজুমদার, সমকালের কাজল হাজরা এবং জাগোনিউজ২৪ এর বিভাষ দিক্ষীত বিপ্লব বিএনপি ও শিবির কর্মীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যম তিনটির আদলে তৈরি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সাংবাদিক আক্রমণের শিকার এ দাবিগুলো ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। একাত্তর টিভি, সমকাল ও জাগোনিউজ২৪ এমন কোনো সংবাদের ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং উল্লেখিত সাংবাদিকরা কোনো আক্রমণের শিকার হননি বলে গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ভীতি ছড়াতেও নকল ফটোকার্ড প্রচারিত হয়েছে। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন সকালে মানবজমিন এবং যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড নকল করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে “২৮শে অক্টোবর সমাবেশে কমপক্ষে ৮০-১০০ টা লাশ চায় তারেক জিয়া” শীর্ষক ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়।
ঢাবির বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত দাবিতেও প্রচারিত হয় ভুয়া ফটোকার্ড। প্রথম আলো ও কালবেলা’র ডিজাইন নকল করে নিরাপত্তা বা হরতালজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত হওয়ার গুজব প্রচারিত হয়।
গত ২ নভেম্বর মূলধারার চারটি সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে সরকার পতন ও নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচারিত হয়। প্রথম আলো, একাত্তর টেলিভিশন, আজকের পত্রিকা এবং কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত পৃথক ৪ টি ফটোকার্ডে ৩ নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারের পতন ও ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠন শীর্ষক এ ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হয়।
একই দিনে কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা আলমকে জড়িয়ে প্রচারিত হয় ভুয়া গণধর্ষণের খবরও। অনুসন্ধানে দেখা যায় নয়াপল্টনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের ছাত্রী মানসুরা আলমের গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং কালবেলার ফটোকার্ড এডিট করে প্রচার করা হয়েছিল ভুয়া তথ্য।
এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার গত কয়েকমাসে সংবাদমাধ্যমের নিউজ ফটোকার্ড এডিট করে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অসংখ্য উদাহরণ দেখেছে, তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে।
নকল ফটোকার্ড কিছুক্ষেত্রে শনাক্ত করা সহজ হলেও অনেক সময় শুধু দেখে শনাক্ত করা সহজ হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফটোকার্ডের ফন্ট, ওভারভিউ দেখে ভুয়া ফটোকার্ড বোঝা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আসল ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তার ওপরই এডিট করেই ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করা হয়। নকল ফটোকার্ড দক্ষতার সাথে হুবহু নকল করে তৈরি করা হলে সেক্ষেত্রে শুধু দেখে আসল-নকল চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে নিচের ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ডটি দেখা যাক। এই ফটোকার্ডটি আসল কি নকল তা দেখে বলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব। যদিও কেউ কেউ আছে যারা এ ফটোকার্ডকেও আসল হিসেবে গ্রহণ করবে। ফটোকার্ডটির ফন্ট, বানান ইত্যাদি কারণে দেখেই বলা যেতে পারে এটি ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড এর ওপর এডিটকার্য সম্পাদন করে প্রচারিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড।
এবার নিচের ফটোকার্ডটি দেখুন। এখানে মানবজমিন এর ফটোকার্ডে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটি বক্তব্য দেখা যাচ্ছে। যদিও এই ফটোকার্ডটি ভুয়া, কিন্তু উপরের মতো কেবল দেখেই এই ফটোকার্ডটি আসল না নকল তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে মূলত বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একটি ভুয়া বক্তব্য তৈরি করে তা রুমিন ফারহানার নামে মানবজমিন এর ফটোকার্ডে সুন্দর করে এডিট করে প্রচার করার কারণে অনেকেই এটি বিশ্বাস করে নেবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে– ঘটেছেও তাই।
এখন প্রশ্ন হলো যখন দক্ষতার সাথে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড এমনভাবে নকল করা হবে তখন কিভাবে আমরা ফটোকার্ড আসল না নকল চিনব! উপরের এই প্যারাটি প্রথমে ‘কিভাবে নকল ফটোকার্ড চিনবেন’ শিরোনাম দিয়ে শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু পরে দেখা গেল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নকল ফটোকার্ড দেখে চেনার উপায় নেই। বরং এক্ষেত্রে ফটোকার্ড যাচাই করার পর তা আসল না নকল নিশ্চিত হতে হবে। পরে তাই এই প্যারার হেডিং এর সাথে কিভাবে নকল ফটোকার্ড যাচাই করবেন কথাটি যুক্ত করতে হয়েছে। তো চলুন কিভাবে ফটোকার্ড আসল কি নকল তা যাচাই করার সরল একটি পদ্ধতি জেনে রাখা যাক।
উদাহরণ হিসেবে নিচের ফটোকার্ডটি নেয়া যাক। ফটোকার্ড দেখলে বোঝা যাচ্ছে এটি গত ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রথম আলোর ফটোকার্ড, যেখানে মঞ্চে উঠে ওবায়দুল কাদেরকে অতিরিক্ত কথা বলতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এখন এই ফটোকার্ড আসল না নকল তা আমরা সহজভাবে চলুন যাচাই করার চেষ্টা করি। যাচাই এর আগে আমাদের তথ্যের প্রতি সন্দেহপ্রবন হওয়ার প্রয়োজন আছে। এই সন্দেহ যাচাই করার তাড়না বা প্রবণতা সৃষ্টি করবে। ব্যক্তি জীবনে সন্দেহবাতিক হওয়া ভালো না হলেও তথ্য বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সন্দেহপ্রবন হওয়া ভালো। তথ্যের প্রতি আপনার সন্দেহপ্রবণতা ওই তথ্য যাচাই করে নিয়ে বিশ্বাস করার অভ্যাস তৈরিতে সহযোগিতা করবে। তথ্যের প্রতি এই সন্দেহপ্রবনতাকে ক্রিটিকাল থিংকিং এর একটি চর্চা ধরে নিতে পারেন যে আমি সবকিছু সহজ-সরলভাবে বিশ্বাস করে নিতে চাই না। এই তথ্য কিভাবে আসলো, এই মন্তব্য কি আসলেই করেছে, এই তথ্যের সূত্র কি, প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে কি না, আমি এ তথ্য মূল উৎস থেকে দেখে বিশ্বাস করতে চাই। এ বিষয়টি ওপরের ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে হবে– এটা যেহেতু প্রথম আলোর নিউজ ফটোকার্ড তাই প্রথম আলোর পেজ থেকে দেখে তারপর আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই।
অর্থাৎ, নকল ফটোকার্ড এর ফাঁদে পড়ে ভুয়া তথ্য যাতে বিশ্বাস না করে ফেলি সেজন্য ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে আমাদের থার্ড পার্টি কারো কাছ থেকে দেখে তা গ্রহণ না করে যে সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড তাদের পেজে দেখে গ্রহণ করার চর্চা করতে হবে। এমতবস্থায় ফটোকার্ডের ক্ষেত্রে সবসময় সংবাদমাধ্যমের পেজ তথা মূল সোর্স থেকে দেখে নেয়া জরুরি।
উপরের ফটোকার্ডটি থেকে দেখা যাচ্ছে এটি প্রথম আলোর ২৭ অক্টোবরে প্রকাশিত। তাহলে এটা সহজে যাচাই এর জন্য প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে যেতে হবে। তারপর ফটোস অপশনে গিয়ে ২৭ অক্টোবরে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সকল ফটোকার্ড অনুসন্ধান করলেই ওই ফটোকার্ড প্রথম আলো প্রকাশ করেছে কিনা তা জানা যাবে। এভাবে সাধারণত কোনো ফটোকার্ড আসল না নকল তা সহজেই যাচাই করা সম্ভব। কিংবা ফটোকার্ডের লেখা কপি করে তা সার্চ করে অনুসন্ধানের মাধ্যমেও জানা যেতে পারে। উপরের এ ফটোকার্ড যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে এটি প্রথম আলোর ফটোকার্ড এডিট করে প্রচারিত একটি ভুয়া ফটোকার্ড।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে একটি সংবাদমাধ্যম ফটোকার্ড প্রকাশের পর তা কোনো কারণে সরিয়ে ফেলেছে। এক্ষেত্রে কিছুটা অ্যাডভান্স অনুসন্ধান করে সেটা বের করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটি নিয়ে ভাবনার কিছু নেই এমন ঘটনা কম ক্ষেত্রেই ঘটবে, আর এমন ঘটেছে সন্দেহ হলে আসলেই এমন ঘটেছে কি না তা নিজে অনুসন্ধান করে বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে কিংবা আমাদের জানানো যেতে পারে। আমাদের যেকোনো সন্দেহজনক তথ্য পাঠালে আমরা দ্রুততম সময়ে তা যাচাই করে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল কিংবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে সন্দেহজনক তথ্য যাচাইয়ের অনুরোধ করা যায়।
সম্প্রতি, ‘নাশকতার খরচা তুলতে Bigo Live – এ এসে নোংরামী করছেন রুহুল কবির রিজভী’ শীর্ষক ক্যাপশনে বিগো লাইভ অ্যাপের স্ক্রিনশটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রুহুল কবির রিজভী বিগো লাইভ প্লাটফর্মে কোনো লাইভ করেননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Bangla Politix নামক ফেসবুক পেজে গত ১১ নভেম্বরে প্রকাশিত এ বিষয়ের সম্ভাব্য প্রথম ফেসবুক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from Facebook
তবে Bangla Politix নামক পেজটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার মূলক পেজ এবং পেজটির ক্যাটাগরিতে ‘Comedy club’ উল্লেখ করা রয়েছে। এছাড়া, এই পেজ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলি হাস্যরসাত্মভাবে উপস্থাপন করা হয় বলে লক্ষ্য করা যায়।
রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ বিগো অ্যাপের স্ক্রিনশট সম্পর্কে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ নভেম্বর “রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর দৃশ্যের সাথে বিগো লাইভের আলোচিত স্ক্রিনশটটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর ঢাকা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিএনপির ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেললে যোগ দেন। সেদিন তিনি উক্ত সম্মেলনে সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে বিগো লাইভ অ্যাপে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর ছবি ও নামে গ্রহণযোগ্য কোনো বিগো অ্যাকাউট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Bigo Live App
অর্থাৎ, রুহুল কবির রিজভীর ছবিসহ বিগো লাইভ অ্যাপের এই স্ক্রিনশটটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিএনপির ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেললে যোগ দিয়ে সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। সম্প্রতি সেই সংবাদ সম্মেলনের একটি মূহুর্তের ছবি স্ক্রিনশট নিয়ে বিগো লাইভ অ্যাপের স্ক্রিনশটের আদলে এডিটের মাধ্যমে তৈরি করে, ‘নাশকতার খরচা তুলতে Bigo Live – এ এসে নোংরামী করছেন রুহুল কবির রিজভী’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে নিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:
সম্প্রতি, “সৌদিআরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম করে দিয়েছেন। কারণ হেল অর্থ জাহান্নাম আর হ্যালো অর্থ জাহান্নামী।” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলাকে হারাম বলে ঘোষণা করেননি এবং হ্যালো শব্দটির অর্থও জাহান্নামী নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম হ্যালো বলা হারাম ঘোষনা করেছেন কিনা তা জানতে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর Islamweb নামক একটি ওয়েবসাইটে “Hello has nothing to do with the Hell” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, মক্কার মসজিদুল হারামের কোনো ইমাম কর্তৃক এই ধরনের কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামিক ওয়েবসাইট কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
হ্যালো এবং হেল শব্দের অর্থ কি?
হ্যালো শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাধীন ও অলাভজনক গণমাধ্যম npr.org এ “A (Shockingly) Short History Of ‘Hello’ ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেলিফোন যখন আবিষ্কার হয় তখন হ্যালো শব্দটির প্রচলন হয়নি। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমে সম্ভাষণ হিসেবে টেলিফোনে ‘আহয়’ শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। এটি সাধারণত নাবিকরা ব্যবহার করতেন। তবে হ্যালো বলার প্রচলন শুরু হয় টমাস আলভা এডিসন কর্তৃক হ্যালো শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে। তিনিই প্রথম “হ্যালো” শব্দটির সূচনা করেন। তিনি টেলিফোনে উত্তর দেওয়ার সময় “হ্যালো” ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহবান জানান। এই হ্যালো শব্দটি এসেছে পুরোনো জার্মান শব্দ ‘হ্যালা, হলা’ থেকে। ফেরি নৌকার মাঝিকে ডাকার জন্য ওই শব্দটি ব্যবহার করতো।
পরবর্তীতে হেল শব্দটির অর্থ অনুসন্ধানে ইংরেজি অভিধান Merriam Webster থেকে জানা যায়, হেল শব্দটির পুরোনো ইংরেজি শব্দ হেল (hell) বা হেলে (helle) যা দিয়ে ‘মৃতদের আবাস বা মৃত্যু দেবী’ বুঝানো হতো। এই শব্দ দুটো ‘প্রোটো জার্মানিক’ শব্দ halja থেকে এসেছে যার অর্থ কোনো কিছু ঢাকে বা লুকিয়ে রাখা৷
অর্থাৎ হেল শব্দের সাথে হ্যালো শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া “Where Does ‘Hello’ Come From” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেক্সপিয়ারের সময়ে হেইল (Hail) শব্দটি অভিবাদন জানাতে ব্যবহার করা হতো এবং এটি হেইল শব্দটি স্বাস্থ্যবিষয়ক শব্দ হেল, হেলথ, হোল এর সাথে সম্পর্কিত এবং এই হেইল শব্দটি যেহেতু অভিবাদন জানানোর জন্য ব্যবহৃত হতো তাই এটি হোলো, হালো এবং হ্যালোওসহ ( hollo, hallo, halloa) বেশ কয়েকটি রূপে পরিবর্তিত হতে পারে বলেও জানা যায়।
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবের আলেমরা ফোনে হ্যালো বলা হারাম করেছেন দাবিতে একটি তথ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে হেল অর্থ জাহান্নাম এবং হ্যালো অর্থ জাহান্নামী। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে সৌদি আলেম কর্তৃক এমন কোনো ফতোয়া দেওয়া হয়নি এবং হেল শব্দের অর্থ জাহান্নাম হলেও হ্যালো শব্দের অর্থ জাহান্নামী নয়। হেল এবং হ্যালো শব্দ দুটির মধ্যে অর্থগত এবং উৎপত্তিগত পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং, সৌদি আরবের ৭০ জন আলেম ফোনে হ্যালো বলা হারাম ঘোষণা করেছেন এবং হ্যালো শব্দটির অর্থ জাহান্নামী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার অনুর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আনফলো করেছেন’ শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার জন্য লিওনেল মেসি তাকে ইনস্টাগ্রাম থেকে আনফলো করে দিয়েছেন।
এছাড়া মূলধারা অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের আর্টিকেলেও একই ভুল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার কারণে আর্জেন্টিনা অনুর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে লিওনেল মেসি আনফলো (Unfollow) করার দাবিটি সত্য নয় বরং লিওনেল মেসি তাকে কখনও ইনস্টাগ্রামে Follow (অনুসরণ) করতেন না।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব এবং ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় রিও ফার্ডিনান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ নভেম্বর “Garnacho Goal Better Than Rooney?। Rio Comes To The Defence Of Gary Neville Career” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো করেন।
৪৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের টক শোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রিও ফার্ডিনান্ড ভিডিওটির ১৭ মিনিটে বলেন, আলেজান্দ্রো গার্নাচো আমাকে বলেছে মেসি তাকে (গার্নাচোকে) আনফলো করেছে।
রিও ফার্ডিনান্ড এই মন্তব্যের পর বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে, আলেজান্দ্রো গার্নাচোর ভাই রবার্তো গার্নাচো তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন।
Screenshot: X
পোস্টে তিনি বলেন, মিথ্যা, মেসি কখনো তাকে (গার্নাচোকে) অনুসরণই করেননি।
আলেজান্দ্রো গার্নাচোর ভাইয়ের এক্স পোস্টে রিও ফার্ডিনান্ড এটি সার্কাজম বা মজা করে বলেছেন উল্লেখ করে একটি মন্তব্য করেছেন।
Screenshot: X
অপরদিকে লিওনেল মেসির অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে ৩০৭ টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টকে অনুসরণ করছেন।
Screenshot: Instagram
অর্থাৎ, লিওনেল মেসি যদি ২৬ নভেম্বরের পর গার্নাচোকে আনফলো করে থাকেন তাহলে লিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম Following অবশ্যই ৩০৭ এর বেশি হতে হবে। অন্তত ৩০৮ হতে হবে।
তবে, সমাজিক মাধ্যম পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট Social Blade-এলিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৬ নভেম্বর থেকে লিওনেল মেসির ইনস্টাগ্রাম ফলোয়িং সংখ্যা কমেনি বরং দুইটি বেড়েছে।
Screenshot: Social Blade
ওয়েবসাইটটিতে লিওনেল মেসির গত ১৫ দিনের INSTAGRAM STATS SUMMARY তে দেখা যায়, লিওনেল মেসির ফলোয়িং সংখ্যা গত ১৭ নভেম্বর একটি বেড়েছে, ১৮ নভেম্বর একটি কমেছে ও ১৯ নভেম্বর একটি বেড়েছে এবং সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর আরও দুইটি বেড়েছে।
অর্থাৎ, Social Blade এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ২৬ নভেম্বরের পর লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে কাউকে আনফলো করেননি বরং নতুন দুইটি অ্যাকাউন্টকে ফলো করেছেন।
মূলত, গত ২৬ নভেম্বর আর্জেন্টিনা অনুর্ধ্ব-১৭ দল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করেন। পরবর্তীতে, গত ২৭ নভেম্বর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের সাবেক ফুটবলার রিও ফার্ডিনান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলের একটি টক শোতে মেসি গার্নাচোকে ইন্সটাগ্রাম থেকে আনফলো করেছেন বলে গার্নাচো তাকে (রিও ফার্ডিনান্ড) জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার উক্ত মন্ত্যবের প্রেক্ষিতে, ‘গত ২৬ নভেম্বর এভারটনের বিপক্ষে গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করার জন্য লিওনেল মেসি গার্নাচোকে ইনস্টাগ্রাম থেকে আনফলো করেছেন’ দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টের মাধ্যমে গার্নাচোর ভাই জানায়, লিওনেল মেসিকে কখনো ফলো বা অনুসরণ করেননি। পরবর্তীতে রিও ফার্ডিনান্ড গার্নাচোর ভাইয়ের এক্স পোস্টের কমেন্টে উক্ত বিষয়টি তিনি মজার ছলে বলেছেন বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানেও দেখা যায়, লিওনেল মেসি তার ইনস্টাগ্রাম থেকে গত ২৬ নভেম্বরের পর থেকে কোনো অ্যাকাউন্ট আনফলো করেননি বরং দুইটি অ্যাকাউন্টে ফলো দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও লিওনেল মেসি আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে ইনস্টাগ্রামে আনফলো করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গোল করার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মত উদযাপন করায় নিজ দেশের ফুটবলার আলেজান্দ্রো গার্নাচোকে লিওনেল মেসি ইনস্টাগ্রামে থেকে আনফলো করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, দেশের অসংখ্য মুঠোফোন ব্যবহারকারী একটি খুদে বার্তা পেয়েছেন। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত খুদে বার্তাটির স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন বহু মানুষ। রিউমর স্ক্যানার টিম ফেসবুক মনিটরিং টুল এবং ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণে দেখেছে, খুদেবার্তাটির ভাষা প্রায় একই রকম যাতে লেখা রয়েছে, “Dear, you have successfully passed interview. Give me reply today to receive 2000TK,Click: https://wa.me/8801331630313 “
এই খুদেবার্তাটি একেকজন একেক ফোন নাম্বার থেকে পেয়েছেন। কিন্তু টাকার পরিমাণটি একই উল্লেখ রয়েছে৷
Screenshot collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে এই বিষয়ে অসংখ্য জিজ্ঞাসা এবং এই অফারের সত্যতা জানতে চেয়ে মেসেজ আসার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি৷
আমরা এই খুদেবার্তা পাওয়া এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ করা এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। গত ১৫ নভেম্বর তিরা মোস্তফা নামে ওই নারীর কাছে একই খুদেবার্তা আসে +8801758861759 নাম্বার থেকে।
Screenshot: Tira Mustafa
আমরা নাম্বারটি যাচাই করে দেখেছি, এটি কোনো একটি সি-ফুড রেস্টুরেন্টের Santos, Bruce and Shea নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার।
Screenshot: WhatsApp
তিরা বলছিলেন, “সন্দেহ ছিল যে এটা স্ক্যাম, তাও নক দিলাম আমার দ্বিতীয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে।”
মেসেজ পাঠানোর পর প্রতিত্তোরে তিরাকে বলা হয়, প্রতিদিন অবসর সময়ে ফেসবুকের নির্দিষ্ট কিছু ভিডিওতে লাইক দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি লাইকের বিনিময়ে ৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় দিনে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলেও জানানো হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমকে তিরা বলছিলেন, তাকে শুরুতে তিনটি ফেসবুক ভিডিও লিংক পাঠানো হয়। এই ভিডিওগুলো গত জুনে জার্মানভিত্তিক স্বনামধন্য একটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছিল।
Screenshot: Tira Mustafa/Whatsapp
তিরা ভিন্ন একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক রিয়েক্ট দিলেন ৩টি পোস্টেই। উক্ত ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে পাঠালেন এ সংক্রান্ত স্ক্রিনশটও। পরবর্তীতে তিরাকে একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট দেওয়া হয়, যার লিংক https://t.me/NuwairaAhamedHridhi। এই লিংকে গিয়ে নির্দিষ্ট জব কোড দেওয়ার পর তাকে ১৫০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
Screenshot: Tira Mustafa/Whatsapp
আমরা অ্যাকাউন্টটি যাচাই করে দেখেছি, এটি এখন আর সচল নেই। তিরা আমাদের কাছে বিকাশ পেমেন্টের স্ক্রিনশটটিও পাঠিয়েছেন। তাকে 01932831884 এই নাম্বার থেকে বিকাশ করা হয়েছিল।
আমরা নাম্বারটি ট্রু-কলারে যাচাই করে দেখেছি, এটি উজ্জ্বল (Ujjal) নামে কোনো এক ব্যক্তির নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেসবুকে চলতি বছর এমন আরো কিছু অফার সংক্রান্ত একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩) একই নাম্বার ব্যবহার করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার প্রমাণ মিলেছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
তিরা রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলছিলেন, এরপর তাকে বলা হলো ৩২ টি টাস্ক সম্পন্ন করতে পারলে ১৬০০ টাকা পাবেন তিনি। তবে আগে তাকে ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করতে হবে। তিরা তাদের সাথে আর কথোপকথন চালিয়ে যেতে চাননি। টেলিগ্রাম গ্রুপটি থেকে লিভ নিয়ে নেন তিনি।
তিরা বলছেন, এরা শুরুতেই বিনিয়োগের কথা বলে না। টাস্ক দিতে থাকে। এরপর হঠাৎ করে বিনিয়োগ করতে বলে। বিনিয়োগ না করলে প্রতি টাস্কের বিপরীতে ৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা দেয়। এরপর আবার এভাবে চারটা টাস্ক সম্পন্ন করার পর বিনিয়োগের টাস্ক আসে। তখনও বিনিয়োগ না করলে ২৫ টাকা থেকে টাস্ক প্রতি উপার্জন ৫ টাকায় নেমে আসে। এরপর ওরা বলে, যদি বিনিয়োগ না করি তাহলে সারাদিনে যে টাকা উপার্জন হবে সেটা তারা দেবে না।
তিরা হোয়াটসঅ্যাপের যে স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন তাতে আলোচিত নাম্বারটিতে এক নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে। তিরা আমাদের জানিয়েছেন, টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটিতেও একই ছবি ছিল। আমরা ছবি এবং টেলিগ্রামের অ্যাকাউন্টটির নামের সূত্র (NuwairaAhamedHridhi) ধরে ফেসবুকে এই নামে একই নারীর দুইটি অ্যাকাউন্টের (১, ২) খোঁজ পেয়েছি। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্টে গত ২২ অক্টোবর আলোচিত ছবিটি প্রকাশ করা হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
হ্রদি নামের এই নারী চলতি বছর ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তার অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে জানা যাচ্ছে, তিনি প্রায়ই কনটেন্ট প্রমোশনের কাজ করে থাকেন। রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
এই কেস স্টাডিতে আমরা যে পন্থা অবলম্বন করতে দেখেছি তা যে সকলের ক্ষেত্রেই একইরকম এমন নয়।
ইউটিউবে আমরা গত ০২ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছি যেখানে একইরকম আরেকজন ভুক্তভোগীর কেস স্টাডি শেয়ার করা হয়েছে। এই কেস স্টাডিতেও একই পন্থা এমনকি একই নারীর (NuwairaAhamedHridhi) নাম সম্বলিত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: YouTube
তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন বিকাশ নাম্বার (01878435234) ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করা দেখা যায়, ভুক্তভোগী দুই দফায় (প্রথমে তিন এবং পরে ১৬ হাজার) নির্দেশদাতাকে প্রায় ১৯ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। তৃতীয় টাস্কের অংশ হিসেবে তাকে আরো ৩৪ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। জানানো হয়, এই টাকা পাঠালে তাকে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু তার কাছে সমপরিমাণ অর্থ না থাকায় তিনি পাঠাতে পারেননি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে আরো একজন ভুক্তভোগী সমজাতীয় প্রতারণায় শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মাহিন দেওয়ান নামে এই ব্যক্তির কাছে সম্প্রতি একটি ফোনকল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি মাহিনকে বলেন, তাদের হাতে একটা কাজ আছে। টিকটক আইডি ফলো করলে ২০ টাকা করে দেওয়া হবে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রটির সাথে যোগাযোগ শুরু হয় মাহিনের। হোয়াটসঅ্যাপে মাহিনকে চক্রের অন্য এক সদস্য ল প্লে স্টোরে থাকা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের প্রচারণার কাজের অফার দেন। তাদের নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করলে ৫০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। মাহিন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ইনস্টল করার পর তাকে টাকা পাঠানো হয়। এরপর তাকে ১৭০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। জানানো হয়, এই টাকা পাঠালে তাকে প্রায় ২২০০ টাকা দেওয়া হবে। মাহিন তাদের কথামতো ১৭০০ টাকা পাঠালেও তিনি ২২০০ টাকা পাননি।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রতারণাগুলোর বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন কাজ শুরু করেছে। সাইবার অপরাধ ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলছেন, “ওই চাকরির মেসেজ নিয়ে আমাদের কাছে দু-একটা অভিযোগও এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। হয়তো অচিরেই এই অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে। তার আগে আমরা স্বউদ্যোগী হয়ে সচেতনতা তৈরিরও চেষ্টা চালাচ্ছি-যাতে কেউ এদের ফাঁদে পা না দেয়।”
তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক ফেসবুক পোস্টও দেওয়া হয়েছে।
Screenshot: Facebook
এতে লিংকে ক্লিক না করে এসএমএস মুছে ফেলার পরামর্শ যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনই এসএমএস পাঠানো নম্বরগুলোকে ব্লক করে দিতে বলেছে পুলিশ।
অর্থাৎ, মুঠোফোনে খুদেবার্তা এবং সরাসরি ফোনকলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির অফার পেয়েছেন দেশের অসংখ্য মানুষ৷ রিউমর স্ক্যানার টিম এই ধরণের তিনটি প্রতারণার কেস স্টাডি এই লেখায় তুলে ধরেছে। এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, দৈবচয়নভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে মুঠোফোনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয়ের সুযোগের কথা জানিয়ে খুদেবার্তা বা ফোনকল দেওয়া হয়৷ কেউ যদি তাতে সাড়া দেয়, তাকে কিছু টাস্ক দেওয়া হয়। টাস্ক সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে প্রথমদিকে কিছু অর্থ প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয় ভুক্তভোগীকে। কেউ সে ফাঁদে পা দিয়ে অর্থ খুইয়ে প্রতারিত হওয়ার প্রমাণও মিলেছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কাজ করছে এবং অচিরেই এই অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।