সম্প্রতি, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান বিপিএলে খেলার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সাথে কোনো চুক্তি করেনি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
শুরুতে আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দাবিটির পক্ষে কোনো তথ্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের একটি ভিডিও ক্লিপ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কয়েকটি ছবি যুক্ত করে উপস্থাপককে মনগড়া কিছু কথা বলতে শোনা যায়।
আমরা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০১৭ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছি।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
অন্তত সাড়ে ছয় বছরের পুরোনো এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, একটি ক্রীড়া সামগ্রী বিক্রি করা দোকানের বিজ্ঞাপনের ভিডিও এটি।
মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে দেশের ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর দশম আসর শুরু হয়েছে। এই আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ম্যাক্সওয়েলের ২০১৭ সালের একটি ভিডিও এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কয়েকটি ছবি যুক্ত করে আলোচিতে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত কোনো মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে চলতি বিপিএলে দলে নিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ব্রেকিংঃ সকল শিক্ষার্থীরা পাবে ৫ হাজার করে টাকা, আবেদন এর শেষ সময় ২৮ ফেব্রুয়ারী! শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সকল শিক্ষার্থীর পাঁচ হাজার টাকা করে পাওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর ই-সার্ভিস’র অন্তর্ভুক্ত অনলাইন আবেদন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে ভর্তি সহায়তার অধীনে আর্থিক সাহায্য প্রদান করছে। এই সহায়তার অধীনে বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে ভর্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা ৫ হাজার টাকা সহায়তা পাবে।
তাছাড়া, গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ সংক্রান্ত আবেদন প্রক্রিয়া আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, আবেদনের শেষ সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে ভর্তি সহায়তা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে ভর্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তবে উক্ত তথ্যকেই সম্প্রতি সকল শিক্ষার্থী ৫ হাজার টাকা ভর্তি সহায়তা পাবে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, আবেদন প্রক্রিয়া ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা বলা হলেও ফেসবুকের পোস্টগুলোতে একদিন কমিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি বলে দাবি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কিছু শিক্ষার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তি সহায়তা প্রদানের ঘোষণাকে সকল সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পাবে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, এবার পুলিশকে চরম ধোলাই দিলো ব্যারিস্টার সুমন, ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী – শীর্ষক থাম্বনেইল এবং রাস্তায় পুলিশকে গণধোলাই দিলো ব্যারিস্টার সুমন,রাগে সুমনের উপর ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী – শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে৷
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন পুলিশকে গণধোলাই দিয়েছে এবং এর কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপর ক্ষেপেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউবে প্রচারিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার বার এবং ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সূমন কর্তৃক পুলিশকে গণধোলাই দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সভায় দেওয়া ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে তার একাধিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে উল্লেখিত দাবির সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবিগুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই ০১
সংবাদ পাঠিকার পঠিত সংবাদের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ “ব্যারিস্টার সুমনকে দেখামাত্রই মারতে আসেন সাকিব! কি ঘটেছিলো হোটেলে?।Barrister Sumon । Sakib” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজের মিল রয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সুমনের করা অভিযোগের বিষয় নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন। যেখানে বলা হচ্ছে, ব্যারিস্টার সুমনকে দেখা মাত্রই মারতে আসেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান।
এই ভিডিওর কোথাও পুলিশকে গণধোলাই দেওয়ার কিংবা ব্যারিস্টার সুমনের উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষেপেছেন সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা দৃশ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাই এই ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ০২
ভিডিওর এই অংশে প্রদর্শিত ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে ‘খেলাযোগ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর “হাউ মাউ করে কেন ব্যারিস্টার সুমন কাঁদলেন????” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রচারণার সময় জনতার সামনে বক্তৃতা প্রদানকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্যারিস্টার সুমন। তখনকার একটি ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ০৩
ভিডিওর সর্বশেষ অংশে দেখানো ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল “সরকারের বারোটা বাজাতে মানুষের জায়গা দখল করেছেন পুলিশ-ব্যারিস্টার সুমন। Playground । Rtv News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির কিছু অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সভায় সরকারের বারোটা বাজানোর জন্য দু-চারজন পুলিশ অফিসারই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। কিন্তু ভিডিওর কোথাও পুলিশকে গণধোলাই দেওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।
মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১০ জানুয়ারি এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনের পূর্বে ব্যারিস্টার সুমনের নির্বাচনী প্রচারনার একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সভায় দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে অভিযোগের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে “এবার পুলিশকে চরম ধোলাই দিলো ব্যারিস্টার সুমন, ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং “রাস্তায় পুলিশকে গণধোলাই দিলো ব্যারিস্টার সুমন, রাগে সুমনের উপর ক্ষেপলো প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে যে, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, একাধিক ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)-এর দল ফরচুন বরিশাল কোটি টাকার বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করামকে দলে নিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত একটি ভিডিওই দেখা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় চার হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলমান বিপিএলে খেলার জন্য ফরচুন বরিশালের সাথে এইডেন মার্করামের কোনো চুক্তি হয়নি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবিটির পক্ষে কোনো তথ্য গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, ফরচুন বরিশালের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং বিপিএলের ওয়েবসাইটে দলটির খেলোয়াড় সংক্রান্ত পেজে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটার তামিম ইকবালের একটি ভিডিও দেখানো হয়। এরপরই এইডেন মার্করামের ও তামিম ইকবালের কয়েকটি ছবি দেখিয়ে ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন কোটি টাকার বিনিমনে মার্করামকে ফরচুন বরিশালে নেওয়া হয়েছে। তবে তামিম ইকবালের ভিডিওটির কোনো অংশেই উপস্থাপকের এই সকল দাবির বিষয়ে তাকে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। বরং ভিডিওটিতে তাকে ‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। বিশেষ করে যারা বরিশাল থেকে আছেন।’ শীর্ষক মন্তব্য করতে শোনা যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
তবে ভিডিওটির কোথাও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে তামিম ইকবালকে কোনো কথা বলতে শোনা যায় না। বরং ভিডিওতে তিনি ‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। বিশেষ করে যারা বরিশাল থেকে আছেন। খুব বেশি সময় আর বাকি নেই বিপিএলের। আমরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে যে কাজগুলো বাকি আছে, সেগুলো ঠিকঠাক করতে পারি। আমাদের মালিক মিজান ভাই উনি আমাদের অনেক সময়ও দিচ্ছেন। আমাদের যা যা চাহিদা সেটা চেষ্টা করছেন পূরণ করে দেওয়ার। আসলে এমন কঠিন একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি। আপনারা জানেন যে, বিপিএল এমন সময়ে শুরু হচ্ছে। একই সময়ে আরও পাঁচটা লিগ একইসঙ্গে চলবে। অনেক খেলোয়াড় আসা-যাওয়ার ওপর থাকবে, আমরা ওইটাই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি এখন বসে সবাই। আমাদের যেন খুব বেশি এফেক্টেড হতে না হয়, তারপরও যারা ফরচুন বরিশালের ফ্যানরা আছেন আপনাদেরকে মেনে নিতে হবে। কারণ পরিস্থিতিটাই এরকম। আশা করি আমাদের দলের অতটা ক্ষতি হবে না। ইনশা-আল্লাহ অন্য সবদিক থেকে আমরা প্রস্তুত। আমি মনে করি আমরা একটা ভালো দল তৈরি করেছি, যেটা চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত থাকবে।’ শীর্ষক কথাগুলো বলেন। এছাড়াও সমর্থকদের সমর্থন চেয়ে আরও কিছু কথা তাকে বলতে শোনা গেলেও দলটিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করামকে নেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি।
মূলত, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)-এর ফ্রেঞ্চাইজি ফরচুন বরিশাল কোটি টাকার বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করামকে দলে নিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটার তামিম ইকবালের ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিওর সাথে কয়েকটি ছবি যুক্ত করে আলোচিতে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিপিএলের দল ফরচুন বরিশাল কোটি টাকার বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করামকে দলে নিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১১ মার্চ, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ইউটিউবে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
সম্প্রতি, “বিশ্ব নবীর চাঁদ দুইভাগ করার রহস্য প্রমাণ করল আধুনিক বিজ্ঞান! সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ” শীর্ষক শিরোনামে নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসার বিজ্ঞারা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাননি বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া নাসাকে উদ্ধৃত করে উক্ত ভুয়া তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Scientific and Academic Publishing নামের একটি জার্নালে “The Evidence of the Split of the Moon” শীর্ষক শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব অনুসারে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
Source: Scientific and Academic Publishing
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইটে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞানী ব্র্যাড বেইলির একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: NASA
চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ইন্টারনেটে পড়া সবকিছুই বিশ্বাস করতে নিরুৎসাহিত করছি। পিয়ার-রিভিউড জার্নাল বৈজ্ঞানিক তথ্যের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। বর্তমানের কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অতীতে চাঁদের দুই বা ততোধিক ভাগে খণ্ডিত হয়ে যাওয়া এবং পুনরায় একত্র হওয়ার তথ্যকে সমর্থন করে না।
ছবি যাচাই
দ্বিখণ্ডিত চাঁদের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ওয়েবসাইটে ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison Image By Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি চাঁদের বুকে অবস্থিত Ariadaeus Rille নামক দীর্ঘকায় খাদের ছবি। ছবিটি ১৯৬৯ সালের মে মাসে অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা ধারণ করেন।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রমাণ পাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে যে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে সেটি চাঁদের বুকে অবস্থিত Rima Ariadaeus নামক একটি দীর্ঘ খাদের ছবি। ছবিটি ১৯৬৯ সালের মে মাসে অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা ধারণ করেন। চাঁদের বুকে অবস্থিত দীর্ঘ এই খাদটি টেকটোনিক প্লেটের স্থান পরিবর্তনের কারণেই সৃষ্ট। এর সাথে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা চাঁদের বুকে একটি দীর্ঘকায় খাদের ছবি ধারণ করেন। অ্যাপোলো মিশনের মহাকাশচারীদের ধারণকৃত সে ছবি ব্যবহার করে বিগত কয়েকবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বিশ্বনবীর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে, নাসার দায়িত্বশীল একজন বিজ্ঞানী নিশ্চিত করেছেন যে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব অনুসারে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য, পূর্বে চন্দ্রযান-৩ এর তোলা ছবি দাবিতে এআই জেনারেটেড ছবি প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, নাসার বিজ্ঞানীরা বিশ্বনবীর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে নিয়েছে ভারতের ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবি সম্বলিত টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপিএলে খেলতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে বিরাট কোহলির কোনো চুক্তি হয়নি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
শুরুতে আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান এর স্বপক্ষে কোনো তথ্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালকে বক্তব্য দিচ্ছেন। পরবর্তীতে দলটির অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরপর নাফিসা কামাল, ইমরুল কায়েস এবং বিরাট কোহলির কয়েকটি ছবি যুক্ত করে উপস্থাপককে মনগড়া কিছু কথা বলতে শোনা যায়।
তবে, আলোচিত ভিডিওটিতে বিরাট কোহলিকে দলে ভেড়ানো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এরপর আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল এবং অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওগুলো আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই-১
এই ক্লিপে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যে তিনি বলেন, চমকের জায়গা বা খুব এক্সাইটমেন্ট না এটা ভেরি কমফোর্টেবল ফ্যামিলিয়ার একটা জায়গা।
উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল চলমান আসরের দল কেনার পর দেওয়া বক্তব্য এটি। এখানে বিরাট কোহলি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি তাকে।
ভিডিও যাচাই-২
এই অংশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যে তিনি বলেন, কুমিল্লা তো প্রথম প্রত্যেক বছরই ম্যাচ হারে, ফার্স্ট ম্যাচ। গত বছর শুধু ম্যাচ জিতেছিল।
উক্ত ভিডিওর কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ৪ মিনিট ২৮ মিনিটে দলটির অধিনায়ক ইমরুল কায়েস প্রথম ম্যাচ হারা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। এছাড়া ৭ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি ইমরুল কায়েস।
মূলত, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে দেশের ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর দশম আসর শুরু হয়েছে। চলমান বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলে নিয়েছে ভারতের বিরাট কোহলিকে- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল এবং অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেওয়া পুরোনো বক্তব্যের ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিতে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত কোনো মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিরাট কোহলিকে দলে ভিড়িয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২০১৫ সাল থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম নেতা ও দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ “মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুসলিম নারীদের কবর থেকে তুলে ধর্ষণ সংক্রান্ত মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করেননি বরং ২০০৭-০৮ সালে তার উপস্থিতিতে তারই দলের ভিন্ন এক ব্যক্তি উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭-০৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সিদ্ধার্থনগরে হিন্দু যুব বাহিনী আয়োজিত হিন্দু চেতনা র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিতে বর্তমানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার সংগঠন হিন্দু যুব বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর ভাষণে দাবি করেন হিন্দু সংস্কৃতি ও মুসলিম সংস্কৃতি কখনো একসাথে বাস করতে পারে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একই র্যালিতে যোগী আদিত্যনাথের সহবক্তা মুসলিম নারীদের কবর থেকে বের করে ধর্ষণের দাবি জানান।
প্রতিবেদনটিতে যুক্ত বক্তব্যের ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে মুসলিম নারীদের ধর্ষণ সংক্রান্ত মক্তব্যটির সময় ক্যামেরার এক ফ্রেমে আদিত্যনাথকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া আলোচ্য মন্তব্যকারীর কণ্ঠের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের কণ্ঠের আমিলও লক্ষ্যা করা যায়।
অর্থাৎ, মুসলিম নারীদের ধর্ষণ সংক্রান্ত মক্তব্যটি তিনি করেননি।
এছাড়া একই দাবি ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ২০২০ সালে ভারতের দুইটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ এবং দ্য কুইন্ট এ বিষয়ে ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুইটি সংস্থাই জানায়, আলোচ্য মক্তব্যটি যোগী আদিত্যনাথের নয় বরং তার সহবক্তার।
তবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম প্রধান নেতা এবং দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিভিন্ন সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন। যেমন ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, যদি তিনি সুযোগ পান তবে প্রত্যেক মসজিদে গৌরী-গণেশের মূর্তি স্থাপন করবেন।
মূলত, ২০০৭-০৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে আয়োজিত হিন্দু চেতনা র্যালিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অন্যতম প্রধান নেতা এবং দেশটির উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতিতে তার সংগঠন হিন্দু যুব বাহিনীর একজন নেতা মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করা সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে উক্ত মন্তব্যটি ২০১৫ সাল থেকে যোগী আদিত্যনাথের করা মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে যোগী আদিত্যনাথ হিন্দু যুব বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০২২ সালে তিনি সংগঠনটির সমস্ত ইউনিট বিলুপ্তির ঘোষণা করেন।
সুতরাং, “মুসলিম নারীদের লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর” শীর্ষক মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ’ এর বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে শাড়ি পরিহিত এক নারীর নৃত্য পরিবেশনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি উক্ত কলেজের একজন নারী শিক্ষক।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ৬ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ৩ শত ৮২ বার। উক্ত দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে অনেক নেটিজেনকে ভিডিওটি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটিতে নৃত্য পরিবেশনকারী এই নারী মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের কোনো শিক্ষক নন বরং এই নারী উক্ত কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী। তার নাম প্রিয়া।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি নিয়ে ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্য ঘর পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে উক্ত ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারীকে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করে করা বেশ কয়েকটি মন্তব্য রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে।
Comment Collage by Rumor Scanner
Mehedi Hassan নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন “ভাই এটা ম্যাডাম না, অনার্সের একজন স্টুডেন্ট।”
এক ব্যক্তির জিজ্ঞেসার বিপরীতে Md Sadekul Islam Sumon নামের একজন লিখেন, “ধুর এটা স্টুডেন্ট।”
আরও একজন ব্যক্তির জিজ্ঞেসার বিপরীতে Mohammed Nayan Islam লিখেন, “কইছে কে এইডা মেডাম। ইনি ত সিনিয়র আপু আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর।”
এছাড়া Amir Hamja নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, “আমাগো ডিপার্টমেন্টের।”
উক্ত মন্তব্যগুলোর সূত্র ধরে এই মন্তব্যকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে আমির হামজা ও মোহাম্মদ নয়ন ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সাথে আমরা যোগাযোগ সমর্থ হই।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আমির হামজা জানান, “ভাইরাল ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারী শিক্ষক নন, উনি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। উনার নাম প্রিয়া।”
একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নয়ন ইসলামও রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য জানান।
এছাড়াও, ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর ওয়েবসাইটে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকদের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকাটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে শুধুমাত্র একজন নারী শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়। তিনি সোনিয়া তাহমিন জুলেখা।
পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে কলেজটি’র ব্যবস্থাপনা বিভাগের একমাত্র নারী শিক্ষক সোনিয়া তাহমিন জুলেখা’র ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
আমরা সোনিয়া তাহমিন জুলেখা’র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র নৃত্য পরিবেশনকারী নারীর চেহারা তুলনা করে দেখেছি। তাদের চেহারার মিল পাওয়া যায়নি।
Face Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “ভাইরাল ভিডিওটি’র ব্যাপারে শুনেছি। ওই অনুষ্ঠানে কোনো নারী শিক্ষিক নাচেনি। এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভিডিওটি’র নারী আমাদের কোনো শিক্ষিকা না। যারা নেচেছে সবাই ছাত্রী।”
এছাড়া অনুসন্ধানের শেষ দিকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর এই বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি (আর্কাইভ) রিউমর স্ক্যানার টিমের নজরে আসে।
Collected from Facebook
বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, “প্রতি বিভাগকে স্ব উদ্যোগে পিঠা উৎসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং প্রতি বিভাগ থেকে ০২ (দুই) জন করে শিক্ষার্থী নৃত্য/গান/কবিতা আবৃত্তি ইভেন্টে পারফর্ম করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”
অর্থাৎ, বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব উপলক্ষ্যে কলেজ প্রশাসন প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানা যাচ্ছে উক্ত আয়োজনে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের নৃত্যসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের কথা ছিল। তবে বিজ্ঞপ্তির কোথাও অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পারফর্ম করার কথা উল্লেখ নেই।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওর নৃত্য পরিবেশনকারী নারী সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর শিক্ষার্থী।
মূলত, বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রশাসন কর্তৃক কলেজ প্রাঙ্গণে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব আয়োজন করা হয়। উক্ত আয়োজনে কলেজটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য/গান/কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানেই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়া একটি গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি দেবেন্দ্র কলেজের নারী শিক্ষকের নাচের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ এর এক নারী শিক্ষার্থীর নৃত্য পরিবেশনের ভিডিওকে উক্ত কলেজের নারী শিক্ষকের নৃত্য পরিবেশনের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Statement from Amir Hamza (Student, Govt. Debendra College, Manikganj)
Statement from Mohammed Nayan Islam (Student, Govt. Debendra College, Manikganj)
‘মূহূর্তেই ভাইরাল, বিপিএল খেলতে এসে, লাইভে একি বললেন ক্রিস গেইল’ শীর্ষক শিরোনামে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে ১ শত ২৭টি মন্তব্য করা হয়েছে এবং ভিডিওটি ৫৬ বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ক্রিস গেইল চলতি আসরে ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলতে আসেননি বরং ক্রিস গেইলের পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি’র শুরুতে ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ক্রিস গেইলকে কথা বলতে দেখা যায়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “সবার আগে বিপিএল খেলতে এসে লাইভে এসে বিপিএল খেলা নিয়ে এ কি বললেন ক্রিস গেইল। বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে তিনি বলেন, আমি এসে গেছি বিপিএলে যোগ দিতে। দলে যোগ দেওয়ার আগেই ক্রিস গেইল জানালেন, ফরচুন বরিশালের হয়ে এবারেও নিজেকে মেলে ধরতে চান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফরচুন বরিশাল আমাকে নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। সবার সঙ্গে দেখা করতে মুখিয়ে আছি আমি। দারুণ কিছু করার অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, এটাই হয়তোবা আমার ক্যারিয়ারের সর্বশেষ বিপিএল হতে যাচ্ছে তাই শেষটা বাংলাদেশের মাটিতে উজ্জ্বল করতে পারি যেন সেই প্রচেষ্টায় থাকবো।”
ভিডিওটি’র শুরুর অংশে দেখানো ক্রিস গেইলের ভিডিও ক্লিপটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ক্রিস গেইলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে ক্রিস গেইল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ – আইপিল এর বিষয়ে কথা বলেন।
Screenshot: Chris Gayle Facebook
এই ভিডিওটি’র শুরুর অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র শুরুতে দেখানো ক্রিস গেইলের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে বিপিএল এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, বিপিএল ফ্রেঞ্চাইজি ফরচুন বরিশাল’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দলটি’র সাথে চুক্তিবদ্ধ অন্যান্য বিদেশি ক্রিকেটারদের বিষয়ে নিয়মিত আপডেট থাকলেও সেখানে ক্রিস গেইলের বিপিএলের চলতি আসরে খেলতে আসা নিয়ে কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ক্রিস গেইলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ, ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কিংবা ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টেও এসম্পর্কিত কোনো তথ্য বা ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিপিএলের চলতি আসরে ক্রিস গেইলের খেলতে আসার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ক্রিস গেইল সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছিলেন ২০২২ সালে টুর্নামেন্টের ৮ম আসরে। সে বছর তিনি সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বিপিএল ফ্রেঞ্চাইজি ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেছিলেন। এর পরবর্তী সময়ে তাকে আর বিপিএলে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, চলতি বিপিএলে ক্রিস গেইলের ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে আসার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ক্রিস গেইল বিপিএলের চলতি আসরে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে এসেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। ক্রিস গেইল চলতি আসরে ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলতে আসেননি। প্রকৃতপক্ষে, ক্রিস গেইলের পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ ও ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত দাবি সম্বলিত শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও রংপুর রাইডার্সের হয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বিপিএলে খেলতে আসার ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার
সুতরাং, চলতি বিপিএলে ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ক্রিস গেইল বরিশালের হয়ে খেলতে এসেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের (খ) পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে “খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের (খ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত। এর পূর্বে একইদিন রাত ০২ টা ০৫ মিনিটে ফেসবুকে Nazmus Shakib (আর্কাইভ) নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “Dhaka বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ‘B’ ইউনিটের’ এর প্রশ্ন রাত ২:৩ মিনিট প্রশ্নের কিছু অংশ ফ্রি তে দিলাম পরীক্ষার পর এসে মিলিয়ে নিয়ো।আমি এডভান্স টাকা ছাড়া কাউকে কোন প্রশ্ন দেই নি আর কোনদিন দিবোও না।বলছিলাম পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে ফ্রি দিবো কিছু দিলাম এইটুকু ই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। যাদের রাবি,জাবি,চবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১০০% কমন প্রশ্ন লাগবে তারা দ্রুত যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্স যারা বাংলা কম বুঝো দয়া তারা অযথা কোন মেসেজ দিয়ে ব্লক খাবে না। যারা আমাকে আগে থেকেই চিনো তারা ভালো করেই জানো আমি কেমন। নতুন করে কোনো কিছু বলার নেই। ধন্যবাদ সবাইকে।”
পোস্টে একটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে একটি ছাপা প্রশ্নের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে ঢাবির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় পৌনে দুই ঘন্টা পর ওই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রের সাথে ঢাবির খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের মিল (১, ২) পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত পোস্টটির (Nazmus Shakib নামক একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট) ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ০২ টা ০৫ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। দুপুর ০২ টা ১১ মিনিটে ওই পোস্টে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
একই অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনার আরো উদাহরণ
Nazmus Shakib নামের অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটিতে পূর্বেও এমন প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
যেমন, গত ০৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করেন। পোস্টে তিনি লিখেন, “মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩-২০২৪ এর প্রশ্ন আমাদের হাতে চলে আসছে নিচে প্রশ্নের কিছু অংশ দেওয়া হলো। সময় ০৯/০২/২০২৪ তারিখ রাত ১২ টা ৪০ মিনিট এই টুকুই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট । যারা টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ প্রশ্ন সংগ্রহ করতে চাও তারা দ্রুত ইনবক্সে যোগাযোগ করো। টাকা ফিক্সড এবং এডভান্সড। ঢাবি,রাবি ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪ এর ১০০% অরজিনাল প্রশ্ন নিতে চাইলে ইনবক্সে যোগাযোগ করো।”
কিন্তু পোস্টে কোনো ছবি যুক্ত ছিল না সেসময়।
সেদিনই (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিটে এই পোস্টে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, ০৯ ফেব্রুয়ারির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবি করে সেদিনের কোনো ছবি ছাড়া প্রকাশিত একটি পোস্টে পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই ঘন্টা পর প্রশ্নের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
মূলত, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের (খ) পরীক্ষা বেলা ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে একই দিন রাত ০২ টা ০৫ মিনিটে ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে “খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হয়। উক্ত পোস্টে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ০২ টা ১১ মিনিটে রাতের পোস্টটি এডিট করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের এই ভর্তি পরীক্ষাটি শুরুর আগের দিন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে টেলিগ্রামে প্রশ্নপত্র সরবরাহের প্রলোভন দেখাচ্ছিল একটি চক্র। এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
প্রসঙ্গত, গত বছরও একই কায়দায় ঢাবি, মেডিকেলসহ একাধিক পাবলিক এবং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।