ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা এড়াতে ১৫ দিন সময় পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী আপনি যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে না থাকা অবস্থায় ট্রাফিক সার্জেন্টের মুখোমুখি হন তাহলে সাথে সাথে ফাইন দিবেন না। আইনত কাগজ দেখানোর জন্য আপনি ১৫ দিনের সময় পাবেন” শীর্ষক একটি তথ্যসম্বলিত একটি ছবি এবং ছবিটির বিভিন্ন সংস্করণ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী ব্যবহারকারীদের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে প্রচার হয়ে আসছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

টুইটারে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে
টুইটগুলোর গুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এছাড়াও, দেশীয় সংবাদমাধ্যম “আমাদের সময়” এর ফেসবুক পেজ-এ আলোচিত ছবিটি প্রচার (পোস্ট) করা হয়। পোস্টটি দেখুন এখানে। পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমবঙ্গে এরকম কোনো আইন নেই বরং সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করে উক্ত ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে, ছবির নিচের অংশে একটি সীল দেখা যায়, সেখান থেকে পাওয়া যায় সীলটি “ভারত P.U.C টেস্টিং সেন্টার- মুর্শিদাবাদ” এর।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা এবং যোগাযোগের নম্বর পাওয়া যায়। ভারতীয় (পশ্চিমবঙ্গের) একজন ফ্যাক্ট-চেকারের মাধ্যমে ঐ টেস্টিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান “এরকম কোনো নোটিশ তারা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচার করেনি। তবে সীলে উল্লেখিত নামে একজন সেখানে বেশ আগে কাজ করতো। তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে সেটি প্রচার করেছেন।”

পাশাপাশি, ইংরেজি এবং বাংলায় দেশীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এরকম কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ কী বলছে

বাংলাদেশে গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ-এর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানান “এরকম কোনো আইন নেই এবং সুপ্রিম কোর্টের এরকম কোনো নির্দেশনাও নেই”। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-তেজগাঁও) সাহেদ আল মাসুদ জানান, এরকম কোনো আইন নেই এবং “জরিমানা করা হলে লাইসেন্স প্রদর্শনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন” শীর্ষক দাবিটি সত্য নয়।

মূলত, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গাড়ির দূষণ পরীক্ষা সেন্টারের এক কর্মচারী সুপ্রিম কোর্টের বরাতে এই ভুল তথ্যটি ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানের সীল ও নিজের স্বাক্ষর বসিয়ে অনলাইনে প্রচার করেছে। কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গে এরকম কোনো আইন নেই। প্রচারিত নির্দেশনাটি বাংলা ভাষায় হওয়ায় তা বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও এরকম কোনো আইন নেই এবং সুপ্রিম কোর্ট এ জাতীয় কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

উল্লেখ্য, P.U.C (Pollution Under Control) টেস্টিং সেন্টার হলো গাড়ির ধোঁয়া এবং আরও বেশকিছু পরীক্ষার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (ভারতীয়)। পশ্চিমবঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স বা সিএফ না থাকলে প্রথম দফায় চালককে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। একই ঘটনা দ্বিতীয় বার ঘটলে চালককে ১৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়

বাংলাদেশে সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৪ ধারায় মোটরযান চালনার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকাটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ক্ষেত্রমতে শিক্ষানবিশ ড্রাইভং লাইসেন্স ব্যতীত কোন মোটরযান পাবলিক প্লেসে চালাতে পারবেন না। এছাড়াও বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যে শ্রেণী বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালানোর লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই শ্রেণী বা ক্যাটাগরির মোটরযান ছাড়া অন্য কোন মোটরযান চালানো যাবে না। তবে এখানে শর্ত দেয়া হয়েছে ভারী যানবাহনের জন্য প্রাপ্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী কোন ব্যক্তি হালকা ও মধ্যম শ্রেণী বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালাতে পারবেন।

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র সাথে না থাকলে যে জরিমানা করা হয় সেই জরিমানার টাকা ২৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ কর্তৃক কাগজপত্র জব্দ করার পর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ একবার কম্পাউন্ড স্লিপ জারি করলে, অপরাধীকে কম্পাউন্ড স্লিপ ইস্যু করার ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ব্যাঙ্কের শাখায় জরিমানা জমা দিতে হয়।

সুতরাং, সুপ্রিম কোর্টের বরাতে দাবি করা হচ্ছে “লাইসেন্স না থাকা অবস্থায় জরিমানা করা হলে লাইসেন্স প্রদর্শনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন”; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img