পক্ষে নয়, জুমার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ভিডিওটি ছাত্রলীগকে উপহাস করে তৈরি

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন ফাতিমা তাসনিম জুমা। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাতিমা তাসনিমের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে ফাতিমাকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে “শিবিরের গুপ্ত নেত্রী ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ফাতেমা তাসনিম জুমা। শিবিরের উন্নতি দেখে ভালো লাগলো। যাহাই শিবির তাহাই লীগ, শিবির ডাকসুতেও লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে।” 

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, ফাতিমা তাসনিম জুমা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিও সেই ছাত্রলীগ সমর্থনের প্রেক্ষাপটের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফাতিমা তাসনিম জুমার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকৃতপক্ষে, জুমা গত ১৪ জুলাই ছাত্রলীগকে ব্যঙ্গ বা বিদ্রুপের উদ্দেশ্যে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ফাতিমা তাসনিম জুমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৪ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া একটি ভিডিওরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে জুমা লিখেন, “একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নিজেকে সার্কাজম বা আইরনি করেও কখনো রাজাকার দাবী করতে পারে না। যারা আজকে এইসব স্লোগান দিচ্ছে তাদের চিনে রাখুন। দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিন্ডি যাবে রাজাকার। পরের লাইন ভিডিওতে।” এছাড়াও, পোস্টটির মন্তব্য বিভাগে তিনি মন্তব্য করেন, “আমারে বোম মারলেও মুখ দিয়ে একটা স্লোগান বের করাইতে পারে না সবাই মিলে। আর একমাত্র যে স্লোগান বের হইসে সেটা হইলো এটা। সো আমি নিজেকে নিঃসংকোচে সাচ্চা দেশপ্রেমিক দাবী করতে পারি।”

অর্থাৎ, এ থেকে বুঝা যায় যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি তিনি ছাত্রলীগের সমর্থনে দেননি বরং সংগঠনকে ব্যঙ্গ করে স্লোগানটি দিয়েছিলেন।

এছাড়া, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে  বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষে কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। বরং, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাকে ক্যাম্পেইন করতে দেখা যায়। ফাতিমা তাসনিম জুমা বর্তমানে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইনকিলাব মঞ্চ ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান অনুপ্রাণিত একটি সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

এছাড়া, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ফেসবুক কাভার ফটো দিতে দেখা যায়।

সুতরাং, ছাত্রলীগকে ব্যঙ্গ বা বিদ্রুপ করে দেওয়া ফাতিমা তাসনিম জুমার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ভিডিওকে ছাত্রলীগের সমর্থনে দেওয়া স্লোগানের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img