গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। ২৪ আগস্ট (রোববার) দিবাগত রাতে তিনি ঢাকা ছাড়েন। ২৩ আগস্ট রাত থেকে ‘এই মুহূর্তে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরের প্রতিবাদে, ঢাকায় হাজার হাজার সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি দূতাবাসে হামলা ও ঘেরাও করেছে। পাকিস্তানের হাইকমিশনার অবরুদ্ধ।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের ঢাকা সফরের প্রতিবাদে ঢাকায় পাকিস্তানের দূতাবাসে হামলা কিংবা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেনি। পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে অবরুদ্ধও করে রাখা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, সিলেটে গত ১৫ আগস্ট যাত্রীছাউনি ভাঙা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Giyas Sany II নামক ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়৷

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন সন্ধ্যা থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে পাপড়ি রেস্টুরেন্ট এলাকায় যাত্রী ছাউনি নিয়ে কথা কাটাকাটি জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। ভিডিওটি উক্ত ঘটনার চিত্র।
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৬ আগস্ট ‘যাত্রীছাউনি ভাঙা নিয়ে সিলেটে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে যাত্রীছাউনি ভাঙা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় এই সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে একটি রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করা হয়।
জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে নর্দমার নির্মাণকাজ চলছে। বাজারের মসজিদের পাশে থাকা একটি যাত্রীছাউনি ভাঙা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ছাউনি ভেঙে নর্দমা নির্মাণের পক্ষে ছিলেন লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর সমর্থকেরা। আর ছাউনি রেখে কাজ করার পক্ষে বাজারের ব্যবসায়ী ও মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ জুবায়ের আহমদ ও তাঁর পক্ষের লোকজন। জুবায়ের আহমদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও তাঁর কোনো পদপদবি নেই। বাজারে তাঁর ‘পাপড়ি রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমিনুর রহমান ও জুবায়ের আহমদ দুজনই আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। এ কারণে তাঁদের আগে থেকেই রেষারেষির সম্পর্ক ছিল। গতকাল (১৫ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ছাউনি ভাঙা নিয়ে দুই পক্ষের বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন। এ সময় জুবায়ের আহমদের রেস্টুরেন্টটি ভাঙচুর করা হয়।
সুতরাং, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতিবাদে পাকিস্তানের দূতাবাসে হামলা ও ঘেরাও করা হয়েছে দাবিতে সিলেটের লালাবাজারে যাত্রী ছাউনি ভাঙা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Giyas Sany II – Facebook Post
- আজকের পত্রিকা – যাত্রীছাউনি ভাঙা নিয়ে সিলেটে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫