সম্প্রতি ‘ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি বিশাল জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র আছে কি না যাচাই করে দেখে। অনুসন্ধানে পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেশীয় ও ওমানের কোনো গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক ভাষণে জানান, সরকার জ্বালানি সংকট সমাধানে কাতার ও ওমানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করার জন্য কয়লা কিনতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Screenshot: The Business Standard
এর বাইরে প্রতিবেদনটি থেকে কয়লা আমদানির বিষয়ে আর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বাংলাদেশের আরেকটি গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে গত ২৮ মে ‘Bangladesh-Oman foreign office consultations held in Muscat‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রতিবেদনটি থেকেও ওমান থেকে বাংলাদেশে কয়লাবাহী জাহাজ আসার ব্যাপারে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ওমান থেকে কয়লা আমদানি করে কি না এমন তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, দেশের অন্যতম প্রধান পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের রামনাবাদ চ্যানেল হয়ে কয়লা আসে। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকেও কয়লা আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও গণমাধ্যম সূত্রে দেশে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে যেসব দেশের নাম পাওয়া যায়, সেখানেও ওমানের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায়, বাংলাদেশে বহু বছর ধরে ভারত এবং চীন কয়লা রফতানি করে আসছে।
Screenshot: Somoy News
এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওমান থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশের ১০ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি রয়েছে। যা ২০১৮ সালের ৭ মে বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ওমানের সাথে বাংলাদেশের কোনো বানিজ্যিক সম্পর্ক নেই।
এ পর্যায়ে ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লা আসার ব্যাপারে অধিকতর অনুসন্ধানের লক্ষ্যে রিউমর স্ক্যানার টিম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বিষয়টিকে শতভাগ গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।
মূলত, গত ২৫ মে কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট। এরপর কয়লার অভাবে সোমবার, ৫ জুন বেলা ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় পটুয়াখালীর পায়রার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটিও। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কয়লা সংকটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্লান্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মাওলা গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আগামী ২৫ জুনের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে আসবে প্রথম জাহাজ। ফলে ২৬ জুন থেকে আবারও উৎপাদন শুরু হতে পারে দেশের সর্ববৃহৎ এই তাপ বিদুৎকেন্দ্রটিতে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য কয়লা নিয়ে পরপর আরও ১০টি জাহাজ আসারও কথা রয়েছে।
সুতরাং, ওমান থেকে ৭৭ টি জাহাজে বাংলাদেশে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লা আসার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ সংবাদ জানাচ্ছে মেয়েটির নাম বিনীতা। বাড়ি রাজস্থান। মেয়েটি এক ফল বিক্রেতার সাথে প্রেম করে বাইশ দিন ধরে ঘর ছাড়ে। বাইশ দিন পরে তার প্রেমিক তাকে খুন করে এভাবেই বস্তাবন্দী করে মোটর বাইকে করে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাক্রমে মেয়েটির পা বেরিয়ে যায়। একজন গাড়ি চালক সেটা দেখে ছবি তুলে পুলিশকে খবর দেয়।‘ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে প্রচার করা হচ্ছে।
টুইটারে প্রচারিত এমন একটি টুইট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি ভারতের রাজস্থানে মুসলিম প্রেমিক কর্তৃক তার হিন্দু প্রেমিকাকে খুন করে বস্তাবন্দি করে বাইকে নিয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনার নয় বরং এটি মিশরের কায়রোর একটি ঘটনা এবং ছবিতে মোটরসাইকেল চালক বস্তাবন্দি কোনো মৃতদেহ বহন করছেন না বরং তিনি কাপড় মোড়ানো একটি ম্যানিকুইন বহন করছিলেন।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি মিশরের কায়রো থেকে গত মে মাসের ২৭ তারিখ ধারণ করা, যা মূলত দোকানে কাপড় প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত একটি ম্যানিকুইন।
Screenshot: Cairo24
কায়রো২৪ এর প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, একটি তৈরী পোশাক দোকানের মালিক তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ভাস্কর্যকে কায়রোর মোকাত্তাম এলাকায় পৌঁছে দিতে একটি পরিবহন কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়। পরবর্তীতে পরিবহন কোম্পানিটি মোটর সাইকেলে করে এই ভাস্কর্য বা ম্যানিকুইনটি পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় এটির একটি পা বের হয়ে আসে।
উক্ত ছবিটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনীতা নামের এক হিন্দু মেয়ের খুন হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মিশরের BG Collection নামে একটি শপিং স্টোরের ফেসবুক পেইজে গত ৩০ মে আলোচিত ছবিটি সহ একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BG Collection Facebook Post
আরবি ভাষায় প্রদত্ত পোস্টটির শিরোনামটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেখা যায়, ‘This is the men of our stores when you wanted to move a mannequin from Gamal Abdel Nasser branch to Mokattam.
Manager: You guys will know how to behave and move the mannequin, or you will shame us the men of the shop.’ অর্থাৎ জামাল আব্দেল নাসের থেকে মোকাত্তামে একটি ম্যানিকুইন নিয়ে যাচ্ছে এক কর্মচারী। ম্যানেজার: তোমরা কি জানো, কিভাবে ম্যানিকুইনকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হস্তান্তর করতে হয়?
উক্ত পোস্টটি ছাড়াও একই পেইজে আলোচিত এই ছবিটি নিয়ে আরও একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
Image Collage: Rumor Scanner
এসব পোস্ট থেকে প্রতীয়মান হয়, উল্লেখিত ঘটনাটির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবিটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মিশরীয় গণমাধ্যম কায়রো২৪কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ নাসর বলেন, তিনি মৃতদেহ সদৃশ যে বস্তুটি বহন করছিলেন সেটি আসলে একটি ম্যানিকুইন। তার ডেলিভারি অ্যাপে একজন কাস্টমারের অনুরোধে তিনি এই ম্যানিকুইনটি ডেলিভারি করছিলেন।
অপরদিকে অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের রাজস্থানের বিনীতা নামের কোনো মেয়ের প্রেমিকের হাতে খুন হওয়া ও প্রেমিক কর্তৃক মোটরসাইকেলে করে মৃতদেহ বহন সম্পর্কিত কোনো ঘটনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, মিশরের জামাল আব্দেল নাসের থেকে মোকাত্তামে একটি কাপড়ের দোকানের জন্য মোটরসাইকেলে করে ম্যানিকুইন ডেলিভারি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন একটি পরিবহন কোম্পানির ডেলিভারিম্যান৷ এই সময় ম্যানিকুইনটির একটি পা বের হয়ে আসে। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেই মুহূর্তের ধারণকৃত একটি ছবিকেই সম্প্রতি ভারতের রাজস্থানের বিনীতা নামের কোনো মেয়ের ভিন্ন ধর্মী প্রেমিকের হাতে খুন হওয়া ও প্রেমিক কর্তৃক মোটরসাইকেলে করে মৃতদেহ বহন সম্পর্কিত ঘটনা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, মিশরের একজন ডেলিভারিম্যানের মোটরসাইকেলে করে ম্যানিকুইন ডেলিভারি করার মুহূর্তের একটি ছবিকে ভারতে ভিন্ন ধর্মী প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকাকে খুন করে লাশ বহনের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে বাড়ি ফেরার কথা বলে তার স্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন দাবিতে মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজের পোস্ট ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ফেসবুকে মেসিকে বাড়ি ফেরার কথা বলে কোনো পোস্ট দেননি বরং মেসির স্ত্রীর নামে তৈরি একটি ভেরিফাইড ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্টকে কেন্দ্র করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রোকুজ্জোর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটির উৎস খুঁজতে কিওয়ার্ড সার্চ করে Antonela Roccuzzo নামে পরিচালিত একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) গতকাল (০৫ জুন) প্রকাশিত আলোচিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source:, Facebook
আলোচিত পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত পেজটি ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৈরি করা হয়েছে। তবে পেজটির অ্যাডমিন লোকেশন হাইড থাকায় পেজটি কোন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে তথ্য মেলেনি।
Screenshot: Antonela Roccuzzo Facebook
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর ভেরিফাইড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা আছে, তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।
Screenshot: Instagram
অর্থাৎ, Antonela Roccuzzo নামের আলোচিত ফেসবুক পেজটি মেসির স্ত্রীর নয় বরং তার নামে তৈরি একটি ভুয়া পেজ।
মূলত, গত ০৫ জুন আর্জেন্টিনার ফুটবলার লিওনেল মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে পরিচালিত একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে মেসিকে বাড়ি ফেরার কথা বলে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আলোচিত পোস্টটি ফেসবুকে মেসির স্ত্রী মেসিকে বাড়ি ফিরতে বলেছেন দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, পেজটি মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে তৈরি একটি ভুয়া ভেরিফাইড পেজ। মেসির স্ত্রী নিজেই তার ইন্সটাগ্রাম আইডির বায়োতে স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ‘তার কোনো টুইটার এবং ফেসবুক আইডি নেই।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ক্লাব ফুটবলে মেসির দলবদল নিয়ে আলোচনা চলছে। সৌদি আরবের আল হিলাল, স্পেনের বার্সেলোনাসহ একাধিক দলের সাথে মেসির চুক্তির বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও রোকুজ্জোর নামে পরিচালিত একাধিক ভুয়া পেজকে আসল ভেবে সেসব পেজের পোস্টকে রোকুজ্জোর মন্তব্য ভেবে নিয়ে গণমাধ্যমেও নিউজ হয়েছে যা নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসিকে বাড়ি ফিরতে বলে তার স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২৯ মে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে তুরস্কের নির্বাচন বিষয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এক তুর্কি নারীর তুর্কি ভাষায় দেওয়া একটি মন্তব্য প্রচার করা হয়।
যমুনা টিভি দাবি করেছে, উক্ত নারী তার বক্তব্যে বলেছেন, “আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এরদোয়ানের জয় হয়েছে। তিনি যদি পরাজিত হতেন, তাহলে তুর্কিরা নিজস্ব যে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধারণ করছে এটা মুছে যেত।”
একই প্রতিবেদন যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে দেখুন (ভিডিওর ৮:৩০ মিনিট থেকে) এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা টিভিতে তুরস্কের নির্বাচন বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদনে তুরস্কের তিনজন নাগরিকের তুর্কি ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের যে বাংলা অনুবাদ প্রচার করা হয়েছে তা সঠিক নয় বরং ভুল এবং অসঙ্গতিতে ভরা বাংলা অনুবাদকে উক্ত তিন ব্যক্তির বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মূল ভিডিওটি খুঁজে বের করার নিমিত্তে কিওয়ার্ড এবং রিভার্স ইমেজ সার্চের সমন্বয়ে কানাডা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Global News এর ইউটিউব চ্যানেলে ৩০ মে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওতে উক্ত নারী যখন তুর্কি ভাষায় কথা বলছিলেন (ভিডিওর ৪২ সেকেন্ড) তখন স্ক্রলবারে ইংরেজি অনুবাদও ভেসে উঠছিল।
উক্ত নারী বক্তব্য Global News অনুবাদ করেছে এভাবে, “I think it was unjust election because the country is in a bad situation. I pray to god that he is going to be good for everyone. we had a different candidates in our hearts. someone who could really lead this country. But it didn’t work out, lets hope for the best.”
Screenshot source: YouTube
ভিডিওতে উক্ত নারীর নাম Ceylan Ilhan এবং তিনি ট্যুরিজম সেক্টরে কাজ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিম এই তথ্যের সূত্র ধরে উক্ত নারীর খোঁজ পাওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে Global News এর করা অনুবাদটির বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে তুর্কি ভাষা বোঝেন এমন একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি।
শুরুতে তুরস্কে অবস্থানরত এক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আমাদের অনুরোধে উক্ত বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ করেন এভাবে, “অন্যায় একটা নির্বাচন হয়েছে বলে মনে করছি। সত্যিকার অর্থেই দেশ খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আল্লাহর কাছ থেকে সবার ভালো চাচ্ছি। আমাদের হৃদয়ের প্রার্থী পুরো ভিন্ন ধরনের একজন মানুষ ছিলেন। সত্যিকারের দেশ পরিচালনা করার মত একজন ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু যেহেতু হয়নি তো ভালো চাই সবার। ধন্যবাদ।”
অর্থাৎ, Global News এর সাথে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীটির অনুবাদের মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে তুরস্কের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Dogrula এর এডিটর Furkan Akca এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বক্তব্যটির ইংরেজি অনুবাদ করেন এভাবে, “I think it is an unfair election. The country is in a really difficult situation. I wish the best for everyone. The candidate in our hearts was a different person.”
একই সাথে তুরস্কের আরেক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Teyit এর এডিটর ইন চিফ Emre Ilkan Saklica এর সাথে যোগাযোগ করার পর তিনি আমাদের কাছে উক্ত নারীর বক্তব্যটির ইংরেজি অনুবাদ করে পাঠান এভাবে, “I think it was an unfair election. The country is really in a bad situation. I hope the God will do the best for everyone. The candidate in our hearts was someone completely different. Someone who could really govern the country. May it be for the best.”
অর্থাৎ, আলোচিত বক্তব্যে উক্ত নারী তুর্কি ভাষায় যা বলেছেন তার বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে, “আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। দেশটা সত্যিকার অর্থেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমি আশা করি, প্রভু সকলের জন্যই ভালো করবেন। আমরা মনে মনে অন্য একজন প্রার্থীকে চাইতাম যে সত্যিই দেশ পরিচালনা করতে পারতেন। কিন্তু তা হয়নি। ভালোটাই হোক।”
কিন্তু যমুনা টিভি একই বক্তব্য প্রচার করেছে ভিন্ন অনুবাদে।
Image: Rumor Scanner
এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর যমুনা টিভির একই প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে আরও দুই ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
৭:৪২ মিনিট সময়ে যমুনার প্রতিবেদনে যে ব্যক্তির তুর্কি ভাষার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে তার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে, “এরদোয়ান তুরস্কের পুরো সিস্টেমটাকেই বদলে দিয়েছেন। যদি তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যান তাহলে আমরা আগের তুরস্কে ফিরে যাব, এটা আমরা কখনোই চাই না।”
Screenshot source: Facebook
কিন্তু এই অনুবাদেও অসঙ্গতি পেয়েছে রিউমর স্ক্যামার টিম।
Global News একই বক্তব্যের (১:১০ মিনিট সময় থেকে) ইংরেজি অনুবাদ করেছে এভাবে, “There’s a functioning system and I Don’t think its good to change the system. any new government would have taken four to five years to rebuild the system and this will bring the country backwards. The system was not destroyed and I think everyone won.”
Teyit এর এডিটর ইন চিফ Emre Ilkan Saklica উক্ত পুরুষের বক্তব্যটির ইংরেজি অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন এভাবে, “There is an order going on. It is not right to disrupt this order anyway. If the newcomers were to re-establish and change the system, it would take the country back 4-5 years. The system did not break down. Everyone won.”
অর্থাৎ, আলোচিত বক্তব্যে উক্ত পুরুষ তুর্কি ভাষায় যা বলেছেন তার বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে, “এখানে একটা সিস্টেম চলছে। আমি মনে করি, এই সিস্টেম ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। নতুন কেউ ক্ষমতায় এলে তার জন্য চার-পাঁচ বছর লেগে যাবে নতুন সিস্টেম তৈরিতে। এটি দেশকে পিছিয়ে দেবে। সিস্টেম ভাঙে নি। আমি মনে করি, সকলেই জিতেছে।”
৮:৪৫ মিনিট সময়ে যমুনার প্রতিবেদনে যে ব্যক্তির তুর্কি ভাষার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে তার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে, “এরদোয়ান তো কোনো সামরিক শাসক নন। আমরা জনগণ তাকে নির্বাচিত করেছি কারণ আমরা মনে করি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা শুধু তারই আছে।”
Screenshot source: Facebook
কিন্তু এটিও ভুল বাংলা অনুবাদ বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যামার টিম।
Global News একই বক্তব্যের (৫৮ সেকেন্ড সময় থেকে) ইংরেজি অনুবাদ করেছে এভাবে, “Now we have a real resentful youth. I look at the people who are around me and who were supporting opposition, and all of them are resentful. we forget about the spring in this country. we have to make our own spring because the people seem to be happy with winter. There’s nothing to do.”
Emre Ilkan Saklica উক্ত নারীর বক্তব্যটির ইংরেজি অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন এভাবে, “There is a really resentful youth now. I look at all the people around me and they are resentful. We have left the spring of the country and we will have our own spring. People are happy with winter.”
অর্থাৎ, আলোচিত বক্তব্যে উক্ত নারী তুর্কি ভাষায় যা বলেছেন তার বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে, “এখন সত্যিই বিরক্তিকর তারুণ্য আছে। আমার চারপাশে যারা আছে এবং যারা বিরোধী দলকে সমর্থন করছিল তাদের দিকে আমি তাকাই এবং তারা সবাই বিরক্ত। আমরা এদেশে বসন্তের কথা ভুলে যাই। আমাদের নিজেদের বসন্ত তৈরি করতে হবে কারণ মানুষ শীতে খুশি বলে মনে হয়। এখানে কিছুই করার নাই।”
মূলত, গত ২৯ মে যমুনা টিভিতে তুরস্কের নির্বাচন বিষয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে তুরস্কের এক নারীর তুর্কি ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের যে বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে তা ভুল এবং অসঙ্গতিতে ভরা। মূল ভিডিওতে উক্ত নারী এরদোয়ান বিরোধী বক্তব্য দিলেও যমুনা টিভি এরদোয়ানের পক্ষে বাংলা অনুবাদ করেছে। একই প্রতিবেদনে আরও দুই তুর্কি নাগরিকের বক্তব্যেরও ভুল বাংলা অনুবাদ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। তুর্কি ভাষা জানেন এমন ব্যক্তি ও দেশটির একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, যমুনা টিভিতে তুরস্কের নির্বাচন বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদনে তুরস্কের তিনজন নাগরিকের তুর্কি ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের ভুল বাংলা অনুবাদ প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ মে “Sheikh Hasina is Asia’s iron lady” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার এবং প্রাসঙ্গিক নানা ইস্যুতে পত্রিকাটির নিজস্ব বিশ্লেষণ স্থান পায়।
Screenshot source: The Economist
কী আছে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে?
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এর পুরো প্রতিবেদনটিই হুবহু বাংলায় অনুবাদ করা হলো :
ইকোনমিস্টের আলোচিত প্রতিবেদনটির শিরোনামের নিচেই সাব-হেডলাইনে লেখা রয়েছে “Her tragic past now threatens Bangladesh’s future.” এই লাইনটি বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “তার করুণ অতীত এখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে।”
মূল প্রতিবেদনে কী আছে তা জানা যাক এবার।
Screenshot source: The Economist
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা নারী সরকার প্রধান, এবং উভয় লিঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একজন। দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থেকে তিনি ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশটিতে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার ক্ষমতার মেয়াদের বেশিরভাগ সময়ে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছিল। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে এর মধ্যে পরপর তিনটিসহ মোট চার নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার সময়কালের চেয়েও বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন বলে আশা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার হোটেল স্যুটে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট।
Screenshot source: The Economist
‘আমি এই দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে তৈরি করতে চাই।’ তারপর ভয়ঙ্কর ইতিহাস, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সূচনা করে এবং এখনও ছায়া হয়ে আছে সেসবের বিষয়টি উল্লেখপূর্বক তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি কী ভাবতে পারেন, তারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে?’
তার বাবা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা লাভের চার বছর পর ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। তার ১৭ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় খুন হয়েছিলেন। সেই সময় শেখ হাসিনা ইউরোপে থাকায় বেঁচে যান। ‘তারা আমার দুই ভাইকে, আমার মাকে, আরেক মাত্র দশ বছর বয়সী ভাইকে হত্যা করেছে! আমার দুই বোন জামাই (কাজিন), আমার একমাত্র চাচা, একজন প্রতিবন্ধী, তাকেও হত্যা করেছে’- বলেন শেখ হাসিনা। অশ্রুসিক্ত নয়নে এসব কথা বলেন তিনি।
তার উপদেষ্টারা এই সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ইকোনমিস্টের প্রতিবেদককে সেই দীর্ঘকাল আগের ট্র্যাজেডি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে বলেছিলেন। প্রতিবেদক সেটি জিজ্ঞেস না করলেও শেখ হাসিনা তা তুলে ধরেন, যা তিনি প্রায়ই করে থাকেন। এটি তার ক্ষতি এবং নিয়তির বিশাল অনুভূতিকে চিত্রিত করে এবং যার উপর তিনি একটি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। শেখ মুজিবের বিশাল প্রতিকৃতি পৃথিবীজুড়েই রয়েছে তার চেয়ারের পাশে হেলান দিয়ে, তিনি আছেন শত মানুষের বেস্টনীর মধ্যে। তিনি মাথা নোয়ান প্রতিকৃতির দিকে, যেন খুন হওয়া ব্যক্তিটিকে কথোপকথনে ডেকে আনা হলো।
Screenshot source: The Economist
বাংলাদেশিদের সামনে প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নেত্রীর অভিযোগ বিষয়ক অনুভূতি এবং বংশগত অধিকার তার উত্তরাধিকার এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে কিনা। সাক্ষাৎকারটি তারই ইঙ্গিত দেয়।
কোনও রাজনীতিবিদই সমালোচনা পছন্দ করেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার রেকর্ড অসম্পূর্ণ দাবি করে সামান্যতম কথাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন; এবং তার প্রতিক্রিয়া তার নিজের ব্যতীত প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশী সরকারেরই দ্রুত সমালোচনারই ইঙ্গিত দেয়। দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হওয়া সামরিক সরকারকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তার সরকারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করেন। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল, সেটির কোনও অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, “হয়তো নিচের স্তরে আছে (দুর্নীতি)। তবে আজকাল তেমন নেই। তারা দুর্নীতির সাহস করলেও আমি ব্যবস্থা নেব!”
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আফগানিস্তানের পরই আছে বাংলাদেশ। তালেবানের উত্থানে এই অঞ্চলে এখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান। এর কিছু গ্রাফ বাস্তবে একদলীয় রাষ্ট্রের লক্ষণ দেখায় যা শেখ হাসিনা তার পিতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তৈরি করেছেন।
Screenshot source: The Economist
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে পুনরায় র্নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মধ্যে বারবার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, মিডিয়া, পুলিশ এবং আদালত সহ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা স্বাধীনতা পেয়েছিল। এখন মিসেস জিয়া গৃহবন্দী, তার দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে, মিডিয়া ভীত এবং পুলিশ ও আদালত শেখ হাসিনার দলের অধীন। কাকতালীয়ভাবে নয়, তারা দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দুটি দল।
আগামী নির্বাচন বিএনপিকে ফেরার পথ দেখাবে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে কেবল ‘প্রকৃত রাজনৈতিক দলকেই’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া উচিত এবং তার বিরোধীরা কোনো মানদণ্ডের সঙ্গেই মানানসই নয়।
তিনি অর্ধশতাব্দী আগে সেনা শাসনের অধীনে গঠিত বিএনপিকে ‘একজন সামরিক শাসক কর্তৃক অবৈধভাবে গঠিত’ রাজনৈতিক দল বলে অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, “পাকিস্তানের সাবেক মিত্র দেশের সবচেয়ে বড় একটি ইসলামি দল; যাদের প্রায় সবাই যুদ্ধাপরাধী। আমাদের বক্তব্য হল, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া এমন কোনও দল নেই, যারা সত্যিই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।”
Screenshot source: The Economist
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর কব্জায় থাকার কারণে বাংলাদেশ সম্ভবত কিছু ক্ষেত্রে উপকৃতও হচ্ছে। তবে তা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার স্পষ্টতই খুব বেশি বাড়ায়নি। বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগেই এই প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল। পূর্বের বিদ্যমান বিভিন্ন অবকাঠামো ও অন্যান্য উপাদানের কল্যাণে তা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে দেশের পোশাক শিল্প এবং অভিজাত এনজিওগুলোর সরবরাহ করা সেবা। তারপরও তিনি দেশের অবকাঠামো বিনিয়োগসহ বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করেছেন; যা প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সহায়তা করেছে, কোনো দুর্বল সরকার হলে এসব সম্ভব হতো না।
কিন্তু এই কর্তৃত্ববাদের কারণে আয় হ্রাস পেয়েছে। পোশাকের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল বাংলাদেশকে নতুন রপ্তানির বিকাশ ঘটানো দরকার। আর এই বাস্তবতা দেশটির সরকার খুব কমই মোকাবিলা করছে। (শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ হস্তশিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বিকাশের দিকে নজর দিচ্ছে। তবে এটি এক অপর্যাপ্ত সমাধান।) কিছু বাংলাদেশি বিতর্কের জন্ম দিয়ে তার কঠোরতায় লাগাম দিচ্ছে। হোটেলের বাইরে কয়েক শতাধিক বিক্ষোভকারী। অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, নির্বাচন সহিংস হতে পারে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো একসময় শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিল। এখন দেশটি প্রধানত উদ্বিগ্ন এই কারণে যে শেখ হাসিনার চীনকে স্থান দেওয়া উচিত নয়, যা তার সরকার বিনিয়োগের জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের সাথে যেখানে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তারাও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই তিন শক্তির সাথে সম্পর্ক ঢেলে সাজাতে পারদর্শী বলে মনে হয়। বাস্তববাদী হওয়ায় এটি তার একটি সফলতা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা এবং চীনের সম্পর্ক তাদের নিজেদের ব্যাপার। আমি কেন সেখানে নাক গলাবো?’ এরপর আমেরিকার সমালোচনা করেন তিনি। কারণ এই দেশটি এক সময় খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলে, তারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র… কিন্তু আমাদের দেশে তারা এর চর্চা করে না। কেন তারা আমাকে সমর্থন করে না?’
Screenshot source: The Economist
আসলে তারা করে, কিন্তু সম্ভবত করা উচিত নয়। শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্মজীবন সাহসিকতার এবং ক্ষমতার নির্মম ব্যবহারের গল্প, কিছু নীতিগত সাফল্য যা তিনি দাবি করতে পারেন, এবং মহাকাব্যের মতো কোনো জাতীয় উন্নয়ন হয়তো তিনি ঘটাতে পারবেন না রাতারাতি, কিন্তু তিনি চেষ্টা করছেন। তার এই গল্পটি কীভাবে শেষ হবে তা দেখা কঠিন। তিনি ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী এবং অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছেন এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন, অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।
তার সরকারের সর্বশেষ পরিকল্পনার শিরোনাম হলো ভিশন-২০৪১। তবে তিনি এটি দেখে যেতে পারবেন না বলে স্বীকার করেছেন। নেতৃত্বের তৃতীয় দশক পেরিয়ে গেলেও উত্তরাধিকার পরিকল্পনা তার এজেন্ডায় নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারণ, আমি যদি না থাকি… তাহলে কে ক্ষমতায় আসবে, তা আমি জানি না।’
ইকোনমিস্ট কোন অর্থে শেখ হাসিনাকে আয়রন লেডি বলেছে?
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে মার্গারেট থ্যাচার টানা দীর্ঘ ১২ বছর (১৯৭৯-১৯৯০) দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে বসার বছর তিনেক আগে, ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার সংবাদপত্র Krasnaya Zvezda তাকে আয়রন লেডি উপাধি দেয়। তবে ঠিক কী কারণে তাকে এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম The Washington Post ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, Krasnaya Zvezda হচ্ছে একটি প্রপাগাণ্ডা আউটলেট। থ্যাচারের এই উপাধিটি অপমান (insult) করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে থ্যাচারের মন্ত্রীসভার একজন সদস্য জানান, থ্যাচারকে আয়রন লেডি উপাধি অপমান অর্থে দেওয়া হয়নি। বরং তার কিছু কট্টর বক্তৃতার জন্য তিনি এই উপাধি পেয়েছিলেন।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ শেখ হাসিনাকে ঠিক কোন অর্থে আয়রন লেডি নামে অভিহিত করেছে তা আমরা জানতে পারিনি। পত্রিকাটির এশিয়া প্রেস অফিসে আমরা এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। ইকোনমিস্ট তাদের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার প্রশংসা যেমন করেছে তেমনি সমালোচনা করতেও ছাড়েনি। তাই শেখ হাসিনাকে আয়রন লেডি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক অর্থে বলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
শেখ হাসিনার প্রশংসায় ইকোনমিস্ট
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ তাদের প্রতিবেদনের শুরুর অংশে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে লিখেছে, “দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থেকে তিনি ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশটিতে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার ক্ষমতার মেয়াদের বেশিরভাগ সময়ে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছিল।”
পত্রিকাটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেছে, “শেখ হাসিনার কঠোর কব্জায় থাকার কারণে বাংলাদেশ সম্ভবত কিছু ক্ষেত্রে উপকৃতও হচ্ছে। তিনি দেশের অবকাঠামো বিনিয়োগসহ বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করেছেন; যা প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সহায়তা করেছে,কোনো দুর্বল সরকার হলে এসব সম্ভব হতো না।”
শেখ হাসিনার সমালোচনায় ব্রিটিশ এই পত্রিকা
প্রশংসার চেয়ে অবশ্য শেখ হাসিনাকে নিয়ে সমালোচনাই বেশি স্থান পেয়েছে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছে, “বাংলাদেশিদের সামনে প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের নেত্রীর অভিযোগ বিষয়ক অনুভূতি এবং বংশগত অধিকার তার উত্তরাধিকার এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে কিনা। সাক্ষাৎকারটি তারই ইঙ্গিত দেয়।”
বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করে পত্রিকাটি বলছে, “এর (বাংলাদেশের) কিছু গ্রাফ বাস্তবে একদলীয় রাষ্ট্রের লক্ষণ দেখায় যা শেখ হাসিনা তার পিতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তৈরি করেছেন।”
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, “এখন মিসেস জিয়া গৃহবন্দী, তার দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে, মিডিয়া ভীত এবং পুলিশ ও আদালত শেখ হাসিনার দলের অধীন। কাকতালীয়ভাবে নয়, তারা দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দুটি দল।”
শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছে, বাংলাদেশ হস্তশিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বিকাশের দিকে নজর দিচ্ছে। তবে পত্রিকাটি এটিকে একটি অপর্যাপ্ত সমাধান হিসেবে অভিহিত করেছে।
ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়, “শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্মজীবন সাহসিকতার এবং ক্ষমতার নির্মম ব্যবহারের গল্প, কিছু নীতিগত সাফল্য যা তিনি দাবি করতে পারেন এবং মহাকাব্যের মতো কোনো জাতীয় উন্নয়ন হয়তো তিনি ঘটাতে পারবেন না রাতারাতি, কিন্তু তিনি চেষ্টা করছেন। তার এই গল্পটি কীভাবে শেষ হবে তা দেখা কঠিন।”
প্রতিবেদনের শেষদিকে পত্রিকাটি শেখ হাসিনার সমালোচনা করে লিখেছে, “তিনি ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী এবং অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছেন এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন, অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।”
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই দ্য ইকোনমিস্টের আলোচিত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রতিবেদনের পুরো অংশ কতিপয় গণমাধ্যমে স্থান পেলেও অধিকাংশ গণমাধ্যমই শেখ হাসিনার বিষয়ে ইকোনমিস্টের প্রশংসাসূচক বাক্যগুলোই শুধু রেখেছে।
সুতরাং, ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ কর্তৃক সম্প্রতি “Sheikh Hasina is Asia’s iron lady” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার এবং প্রাসঙ্গিক নানা ইস্যুতে পত্রিকাটির নিজস্ব বিশ্লেষণ স্থান পায়। উক্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার যেমন প্রশংসা করা হয় ঠিক তেমনি নানা ইস্যুতে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা মুখর ছিল পত্রিকাটি। প্রতিবেদনটির প্রায় পুরো অংশ কতিপয় গণমাধ্যমে স্থান পেলেও অধিকাংশ গণমাধ্যমই শেখ হাসিনার বিষয়ে ইকোনমিস্টের প্রশংসামূলক বাক্যগুলোই শুধু রেখেছে। এতে করে গণমাধ্যমের দর্শক এবং পাঠকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে করা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের বিভ্রান্তিকর একটি বার্তাই গিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বহিস্কৃত হননি এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টিও সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ০৩ জুন Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ০৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
Screenshot: Sabai Sikhi YouTube
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের পুরোনো কয়েকটি ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটির শুরুতেই ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের পুরোনো একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়। এরপর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বহিস্কার হলেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। কতকাল সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক খবর জানানো হয়। ইতোমধ্যেই ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে একুশে টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ‘ছেলের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাদলেন এসপি হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: ETV YouTube
এই ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময়ে হারুন অর রশীদের একটি পুরোনো বক্তব্যের ভিডিওকে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ০২ জুন ‘১৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন ডিবিপ্রধান হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jugantor
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজের এবং স্ত্রীর চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। ০৩ জুন থেকে ১৩ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির অনলাইন সংস্করণে আজ(০৪ জুন) ‘সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ গিয়ে ফিরবেন না, এটা গুজব: হারুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Somoy TV
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে বলা হচ্ছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছাড়বেন এবং আর ফিরবেন না।
বিষয়টি নিয়ে রোববার (৪ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘শুধু আমাকে নিয়ে নয়, কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে কে বা কারা দেশের বাইরে থেকে ভিডিও বানাচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তারা অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরবেন না, এটা সম্পূর্ণ গুজব।’
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ যাওয়ার ছুটি পেতে অনেক দিন লাগে। অনেক স্তর পার হতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, যারা এসব করছে তারা ভিউ বাড়ানোর জন্য এমন করছে। তারা টাকা কামানোর জন্য করছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা যারা সরকারি চাকরি করি আমাদেরও পরিবার আছে, আমাদেরও বিশেষ প্রয়োজন আছে। আমাদেরও ছুটির প্রয়োজন হয়। কেউ যদি মনে করেন যে এ ধরনের ভিডিও বানিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেবে, তাহলে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব ছড়ালে তারা হয়তো ভিউ পেতে পারে, টাকা আয় করতে পারে, কিন্তু এগুলো করে পুলিশের মনোবল ভাঙা যাবে না।’
উক্ত বিষয় নিয়ে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম, বাংলাদেশ পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুনের বহিস্কার বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ডিএমপির ডিবি মোহাম্মদ প্রধান হারুন অর রশীদের বহিস্কার এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে প্রচারিত বিষয়গুলো সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) গোয়েন্দা(ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বহিস্কার এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদকে বহিস্কার কিংবা তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বরং হারুন ও তার স্ত্রীর চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতিসহ ৩ জুন থেকে ১৩ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভিডিও প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের) গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে বহিস্কার এবং তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’: সিএমপি কমিশনার’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)’র কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ‘ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি বরং উক্ত মন্তব্যটি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম করেছেন এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা। এবং সেই সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মন্তব্য প্রদান করেছেন সিএমপি কমিশনার।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং পক্ষপাতদুষ্ট দাবি করে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। পাশাপাশি সিএমপি কমিশনার বলেন, অর্থ দিয়ে অফিসার ইনচার্জ হওয়ার সামান্যতম সুযোগ সিএমপি প্রশাসনে নেই। কেউ প্রমাণও দিতে পারবে না।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সেবাপ্রার্থীকে ‘নগদ ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চেয়ারে (ওসির চেয়ার) বসেছি। ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারও কথার আমি ধার ধারি না…।’ শীর্ষক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে৷’
এছাড়া, আলোচিত মন্তব্যটি সিএমপি কমিশনার করেছেন এমন দাবিতে এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত মর্নিং নিউজ ব্যতীত দেশের মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমেই কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। একাধিক প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমেও উক্ত মন্তব্য সম্বলিত কোনো অডিও-ভিডিও রেকর্ড ইন্টারনেটে খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
অর্থাৎ, ‘ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’ শীর্ষক মন্তব্যটি সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের নয়।
এছাড়া সিএমপি কমিশনারের মন্তব্য দাবিতে এই তথ্যটির প্রচারকারী গণমাধ্যম মর্নিং টাইমস তাদের ফেসবুক পেজ হতে প্রচারিত ডিজিটাল ব্যানারে উক্ত সংবাদের বিষয়ে কোনো তথ্যসূত্র(অডিও-ভিডিও রেকর্ড) উল্লেখ না করায় সংবাদের সূত্র জানতে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ প্রসঙ্গে মর্নিং টাইমসের সম্পাদক ও প্রকাশক রিপন গাজী রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটি আমাদের ভুল ছিল। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের পেইজ থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিয়েছি।
মূলত, গত ৩০ মে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)’র চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলামের নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সেবাপ্রার্থীকে ‘নগদ ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চেয়ারে (ওসির চেয়ার) বসেছি। ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি।’ শীর্ষক মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়৷ পরবর্তীতে সিএমপির কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এই মন্তব্যটিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘অর্থ দিয়ে অফিসার ইনচার্জ হওয়ার সামান্যতম সুযোগ সিএমপি প্রশাসনে নেই। কেউ প্রমাণও দিতে পারবে না।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের এই চ্যালেঞ্জ জানানোর মন্তব্যটিকেই বিকৃত করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’: সিএমপি কমিশনার’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক আজকের পত্রিকা ইতোমধ্যে তাদের ওয়েবসাইট থেকে আলোচিত সংবাদটি সরিয়ে ফেললেও রিউমর স্ক্যানারের এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংবাদটি পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণ(আর্কাইভ) ও ফেসবুক পেইজে (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
সুতরাং, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)’র কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসার মন্তব্য দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশি ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে শীর্ষক দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ এর কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই তথ্যটি সঠিক নয় বরং প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ থেকে ‘চালডাল’ এর কর্মী নিয়োগের ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ এর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক কর্মী নিয়োগের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত ৩১ মে তারিখে ‘জনস্বার্থে সকলকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ রইলো’ ক্যাপশনে ডিজিটাল ব্যানার সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রকাশিত সতর্কবার্তায় চালডাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘চালডাল নাম ও লোগো ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভুল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করে প্রতারণার চেষ্টা করছে। চালডাল বা এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এই মুহূর্তে নিয়োগের জন্য নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যতীত অন্য কোনো প্লাটফর্মে কোনো প্রকার প্রচারণা চালাচ্ছে না।’
Screenshot from ‘Facebook’
ওই সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়, ‘এই ধরণের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চালডাল দায়বদ্ধ থাকবে না। জনস্বার্থে সকলকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হলো।’
মূলত, বাংলাদেশি ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে এমন একটি তথ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুড ‘চালডাল’ এর কর্মী নিয়োগ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। চালডাল কর্তৃপক্ষ তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সামাজিক মাধ্যমে চালডালের নামে ছড়িয়ে পড়া কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে এই বিষয়ে জনসাধারণকে সর্তক থাকতে অনুরোধ করেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিকাশের ছয় কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষ্যে ব্যবহারকারীদের ৬৬০০ টাকা বোনাস দেওয়ার দাবিতে মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশি ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘চালডাল’ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পথে চলতে হরহামেশাই গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কখনো কি আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন গাছের গায়ে সাদা রং করা হয়? প্রকৃতপক্ষে, কোনো একক কারণ নয় বরং গাছের গায়ে সাদা রং করার সাথে বেশকিছু বিষয় জড়িয়ে আছে। সেসব বিষয়ে জানাতেই আজকের এই লেখা।
সানস্কাল্ড থেকে সুরক্ষা
গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ গাছকে সানস্কাল্ড থেকে মুক্তি দেয়। যখন কোনো গাছ সূর্যের আলোকরশ্মির অতিরিক্ত তাপের মধ্যে থাকে, তখন অনেক সময় গাছের বাকল খসে পড়ে। সূর্যের অতিরিক্ত তাপদাহের ফলে গাছের বহিরাবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার এই ঘটনাকেই সানস্কাল্ড বলে। গাছের বাকল ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ যেমন: পাতা, ফল ইত্যাদিও সানস্কাল্ডের শিকার হতে পারে।
গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ দেওয়ার ফলে গাছের বাকল খসে পড়া কিংবা গাছের বহিরাবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে গাছ রক্ষা পায়। যেহেতু, সাদা রং সবচেয়ে কম মাত্রায় আলোকরশ্মি শোষণ করে সেহেতু গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ থাকলে সূর্যরশ্মি শোষিত না হয়ে প্রতিফলিত হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক তাপমাত্রাজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকেও গাছ রক্ষা পায়।
গাছের গায়ে সাদা রংয়ের জন্য হরহামেশাই চুন ব্যবহার করা হয়। তবে, শুধুমাত্র সাদা বর্ণের কারণেই গাছের গায়ে চুন ব্যবহৃত হয় না। চুনের রয়েছে আরো উপকারী গুণ।
উইপোকা গাছের গায়ে এবং বাকলের নিচে বাসা বাঁধে যা গাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গাছের গায়ে চুন ব্যবহারের ফলে গাছে এ ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে না। কারণ, চুন পোকামাকড়ের কোষকে শুষ্ক করে তোলে এবং নিঃশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে, গাছের গায়ে চুনকাম করলে পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে না।
গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ গাছকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্মন্ট এর গবেষণায় দেখা গেছে, গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ গাছকে রোডেন্ট এবং বোরার রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ দিলে তা সূর্যরশ্মি থেকে গাছের নতুন কুঁড়িকে সুরক্ষা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, গাছের নতুন কুঁড়ির সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সাদা রংয়ের প্রলেপ।
রাস্তার দুইধারে গাছ লাগানো হলে প্রায়শই সে গাছের গায়ে সাদা রং করে দেওয়া হয়। মূলত, রাতের বেলা গাড়ি চালকদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। যে সকল রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের ব্যবস্থা থাকে না, সেসব রাস্তার দুই ধারে গাছের গায়ে সাদা রং করার ফলে গাড়ি চালনায় সুবিধা হয়।যেহেতু সাদা রং সবচেয়ে বেশি আলো প্রতিফলনে সক্ষম, সেহেতু গাড়ির হেডলাইটের আলো গাছের গায়ের সাদা রংয়ের উপর পড়লে তার প্রায় পুরোটাই প্রতিফলিত হয়। ফলে, চালকদের জন্য রাস্তার সীমানা অনুমান করে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
সুতরাং, গাছের গায়ে সাদা রং করার ফলে বহুমাত্রিক উপকার পাওয়া যায়। এটি যেমন গাছের সুস্থভাবে বেঁচে থাকায় ইতিবাচক প্রভাব রাখে তেমনি পথচলতি মানুষ এবং যানবাহনের জন্যও উপকার বয়ে আনে অনেকটা সংকেত সদৃশ এই রং।
সম্প্রতি ‘সেনাবাহিনীকে ভয় করলে শিবিরকে দিন‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ড. কামাল হোসেনের মন্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
এসব পোস্টে ড. কামাল হোসেনের নামে যা প্রচার করা হচ্ছে
‘সেনাবাহিনীকে ভয় করলে শিবিরকে দিন। নির্বাচন কমিশনকে একটা পরামর্শ দিতে পারি, নির্বাচনে সেনাবহিনীকে মোতায়েন করলে যদি আপনাদের ভয় লাগে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ইসলামী ছাত্র শিবির মোতায়েন করেন। দেখবেন নির্বাচন সুষ্ঠু গ্রহনযোগ্য হয়েছে, কারণ এদের কাছে সেনাবাহিনীর ট্রেনিং না থাকতে পারে, ইসলামি আদর্শের ট্রেনিং আছে।’
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ড. কামাল হোসেনের পরামর্শ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসা ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ভয় করলে শিবিরকে দিন’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. কামাল হোসেন করেননি। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব থেকে তার নামে উক্ত মন্তব্যটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
মূলত, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন পূর্ব থেকে দীর্ঘদিন ধরেই গণফোরাম সভাপতি ও সেসময় বাংলাদেশের সমমনা রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেনের নামে ‘সেনাবাহিনীকে ভয় করলে শিবিরকে দিন’ শীর্ষক একটি মন্তব্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেসময় ড. কামাল হোসেনের নামে উক্ত মন্তব্যটি প্রচার করা হলেও ফেসবুকের সেসব পোস্টে এই মন্তব্যটির কোনো তথ্যসূত্র বা সময়কাল উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া রিউমর স্ক্যানারের সার্বিক অনুসন্ধানেও এই দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইসাথে ড. কামাল হোসেনের পরিবার থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ড. কামাল হোসেনের নামে প্রচারিত এই মন্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।