Home Blog Page 550

রোহিত শর্মা শরিফুল ইসলামকে নিয়ে লাইভ করেন নি 

গত বছরের (২০২৩) ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের টি২০ সিরিজের ২য় ম্যাচ চলাকালীন বাংলাদেশের শরিফুল ইসলামের ওভারের পঞ্চম বলে ড্যারিল মিচেল ব্যাট করলে তা নন স্ট্রাইকে থাকা সেইফার্টের মাথায় আঘাত লাগে। এর সাথে সাথেই তিনি মাটিতে পড়ে যান। তখন সেইফার্টের হেলমেটে লেগে বল সরাসরি শরিফুলের হাতে চলে আসে। প্রথমে শরিফুল স্টাম্প ভাঙতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আর স্ট্যাম্প ভাঙেননি। স্টাম্প ভাঙ্গলেই সেইফার্ট আউট হতেন। শরিফুলের এমন আচরণে সে সময় আলোচনা সমালোচনাও হয়। এই ঘটনার পরপরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে যাতে দাবি করা হচ্ছে,  শরিফুলের উদারতা দেখে ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মা লাইভে এসেছেন।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

রোহিত শর্মা

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৫২ হাজারেরও বেশি বার। ভিডিওটিতে প্রায় ১৮০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিত শর্মা শরিফুল ইসলামের উদারতা দেখে লাইভে এসে কোনো মন্তব্য করেননি বরং রোহিত শর্মার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পূর্বে ভিন্ন ঘটনায় প্রকাশিত ভিডিওর ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবি নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ক্লিপটির বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

অনুসন্ধানে রোহিত শর্মার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ১৯ জুনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, রোহিত শর্মা সেদিন ভারতীয় ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড হাইল্যান্ডার’র বিষয়ে কথা বলছিলেন। তবে এই ভিডিওতে তিনি শরিফুল ইসলামের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

মূলত, ২০২০ সালের জুনে রোহিত শর্মা তার অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিও প্রকাশ করে ভারতীয় ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড হাইল্যান্ড’র বিষয়ে কথা বলেন। সম্প্রতি, এই ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে রোহিত শর্মা শরিফুল ইসলামের উদারতা দেখে লাইভে এসে মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনায় ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তিনি লাইভে এসে শরিফুল ইসলামের উদারতা দেখে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

লাইভে এসে তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার কথা বলেননি নাফিসা কামাল 

0

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএলে) চলতি বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয়। সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি লাইভে এসে তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার কথা বলেছেন।  

বিয়ে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটিতে ১৮ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় ১২০ বার।

একই ভিডিও টিকটকে দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ৬০ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় ৩৫৬ বার। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত একই ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাফিসা কামাল লাইভে এসে তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার কথা বলেননি বরং ২০২৩ সালে বিপিএলের চলতি আসরের ড্রাফট শেষে তাওহীদ হৃদয়কে দলে পেয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করার সময়কার একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে একাধিক ছবি যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওতে প্রচারিত আলোচিত দাবি নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে যুক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে স্পোর্টস গণমাধ্যম ‘Allrounder’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “হৃদয় আমাদের দলের বেস্ট ইনক্লুশন : নাফিসা কামাল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে তিনি চলমান বিপিএলে নিজের দল নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান। তবে এই ভিডিওতে তিনি তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। 

মূলত, ২০২৩ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের দশম আসরের প্লেয়ার ড্রাফটস। উক্ত প্লেয়ার ড্রাফটস থেকে তাওহীদ হৃদয়কে দলভুক্ত করেন নাফিসা কামালের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।  ড্রাফট শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলেন তিনি। সম্প্রতি, নাফিসা কামালের উক্ত সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি লাইভে এসে তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার কথা বলেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেও আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, লাইভে এসে নাফিসা কামাল তাওহীদ হৃদয়কে বিয়ে করার কথা বললেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ইরফান শুক্কুর লাইভে এসে বাবর আজমের কাছে ক্ষমা চাননি

0

গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর রংপুর রাইডার্স বনাম দুর্দান্ত ঢাকা’র ম্যাচ চলাকালীন ঢাকার উইকেটরক্ষক ইরফান শুক্কুরের সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেটার বাবর আজমের তর্ক শুরু হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্রিকেটাররা তাদের এই তর্ক থামানোর চেষ্টা করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি লাইভে এসে বাবর আজমের কাছে ক্ষমা চাইলেন ইরফান শুকুর শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইরফান শুক্কুর

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে ২ হাজার দুইশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরফান শুক্কুর বাবর আজমের কাছে লাইভে এসে ক্ষমা চাননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইরফান শুক্কুরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, ইরফান শুক্কুর সেদিন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তবে সেদিন এই ভিডিওতে তাকে পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাবর আজমকে নিয়ে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি।

তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য মেলেনি। 

মূলত, গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর রংপুর রাইডার্স বনাম দুর্দান্ত ঢাকা’র ম্যাচ চলাকালীন ঢাকার উইকেটরক্ষক ইরফান শুক্কুর ও পাকিস্তানি ক্রিকেট তারকা বাবর আজমের মধ্যে হঠাৎ তর্ক শুরু হয়। পরবর্তীতে আম্পায়ারসহ অন্যান্য ক্রিকেটাররা তাদের এই তর্ক থামানোর চেষ্টা করেন। এই ঘটনার পরপরই ২০২১ সালে ইরফান শুক্কুরের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিন্ন ঘটনার ভিডিও সংগ্রহ করে লাইভে এসে বাবর আজমের কাছে ইরফান শুক্কুর ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনায় ইরফান শুক্কুরের ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তিনি পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাবর আজমের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Irfaan Shukkur – Facebook Post
  • Rumor Scanner’s own analysis

২০২৩: শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোতে ভুল সংবাদ প্রচারের হার কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ

0

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমে প্রচারিত ১১৮ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, একই বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় শেষ ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোতে ভুল সংবাদ প্রচারের হার প্রায় ৩৪ শতাংশ কমেছে।

পরিসংখ্যান কী বলছে?

রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত ছয় মাসের তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে দেশের ২০৫ টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো যাচাই করেছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে সর্বোচ্চ ৩৩ টি থেকে সর্বনিম্ন শূণ্য ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে। 

পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচারের দরুণ প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই গণমাধ্যম ‘সময় টিভি ও কালবেলা’। ভুল তথ্য ছিল এমন শনাক্ত হওয়া ১১৮ টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৩৩ টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মূলধারার এই দুই সংবাদমাধ্যম। ক্ষেত্র বিবেচনায় শুধু টেলিভিশনের তালিকাতেও ‘সময় টিভি’ই প্রথম। পত্রিকার তালিকাতেও সমান সংখ্যা ভুলে একই অবস্থানে রয়েছে ‘কালবেলা’। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় শীর্ষ স্থানে এসেছে ‘ঢাকা পোস্ট’ ও ‘ডেইলি বাংলাদেশ’। গণমাধ্যমে গেল বছরের শেষ ছয় মাসের মধ্যে আগস্টে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে। পরিসংখ্যানে বেসরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভুল সংবাদ প্রচারের তালিকায় যেমন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও রয়েছে তেমনি বাদ যায়নি বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও। 

আগস্ট মাসে ভুল তথ্য বেশি

গণমাধ্যমে গেল বছরের শেষ ছয় মাসে শনাক্তকৃত ১১৮ টি প্রতিবেদনে ভুলের  মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ টি ভুল তথ্য (২২ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে আগস্ট মাসে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা একই, ২৪ টি (২০ শতাংশ)। তবে শেষ তিন মাসে ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা কমতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।  

শেষ ছয় মাসের সর্বমোট ১৮৪ দিনে ১১৮ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রথম ছয় মাসের তুলনায় অবশ্য এই সংখ্যা কমেছে। গেল বছরের জানুয়ারি থেকে জুন অবধি প্রথম ছয় মাসে ১৭৯ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছিল গণমাধ্যমগুলো। 

মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর সংবাদের ছড়াছড়ি  

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মোট ১১৮ টি ঘটনায় ৬০ টি বিভ্রান্তিকর ৫৭ টি মিথ্যা এবং ০১ টি বিকৃত তথ্যকে সত্য তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১১৮ টি ঘটনায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের হার ছিল ৫১ শতাংশ। তাছাড়া, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর হার প্রায় ৪৮ শতাংশ। 

সময় টিভি ও কালবেলা যৌথভাবে প্রথম যেভাবে

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের এই পরিসংখ্যানে গেল বছরের শেষ ছয় মাসের তথ্য বলছে, তালিকায় যৌথভাবে প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের অন্যতম ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘সময় টিভি’ এবং মূলধারার জাতীয় দৈনিক ‘কালবেলা’। সংবাদমাধ্যম দুটির ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৩ টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সময় টিভি সবচেয়ে বেশি ১৪ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে, শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৪২ শতাংশ। রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন বিষয়ে সমান সংখ্যক (৪টি) ভুল সংবাদ প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এছাড়া, জাতীয় বিষয়ে ০৩ টি, শিক্ষা বিষয়ক ০২ টি এবং ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ও ধর্মীয় বিষয়ে ০১ টি করে ভুল সংবাদ প্রচার করেছে সময়।

ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরণভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় সময় টিভির সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৪), যা গণমাধ্যমটির মোট ভুলের প্রায় ৭৩ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে ‘সময় টিভি’ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৮ টি, যা মোট ভুলের ২৪ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রকাশের হার ৩ শতাংশ। 

‘কালবেলা’ও সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বিষয়েই (১০ টি), শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া খেলাধুলা বিষয়ে ০৬ টি, জাতীয় বিষয়ে ০৫ টি, শিক্ষা বিষয়ক ০৪ টি, রাজনীতি এবং বিনোদন বিষয়ে সমান সংখ্যক ০৩ টি ও ধর্মীয় বিষয়ে ০২ টি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে মূলধারার এই গণমাধ্যম।

ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় কালবেলার সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (২৬), যা সংবাদমাধ্যমটির মোট ভুলের প্রায় ৭৯ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে ‘কালবেলা’ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৭ টি, যা তাদের মোট ভুলের প্রায় ২১ শতাংশ।  

কোন মাধ্যমে বেশি ভুল তথ্য? 

রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদভিত্তিক এই পরিসংখ্যান প্রকাশের ক্ষেত্রে তিন ক্ষেত্রের সংবাদমাধ্যমের সংবাদগুলো যাচাই করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম। যদিও এই তিন ধরণের মাধ্যমেরই ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্যই যাচাই করা হয়েছে।  

ক্ষেত্র বিবেচনায় পত্রিকার তালিকায় ৩৩ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ‘কালবেলা’। পরের অবস্থানে ইনকিলাব, যাদের ভুল সংবাদের সংখ্যা ২২ টি৷ ২১ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে তৃতীয় অবস্থানে ইত্তেফাক। পরের অবস্থানে রয়েছে নয়া দিগন্ত (২০ টি)। পঞ্চম অবস্থানে ভাগ বসিয়েছে চারটি পত্রিকা – প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা, সমকাল, মানবকণ্ঠ, যাদের ভুলের সংখ্যা ১৭ টি। 

একইভাবে ভুল সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে সময় টিভি (৩৩ টি)। পরের অবস্থানে দেখা যাচ্ছে ‘চ্যানেল২৪’কে (৩০ টি)। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে একাত্তর টিভি, যাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ২১ টি। ১৮ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে যৌথভাবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যমুনা টিভি, চ্যানেল আই, বাংলাভিশন। নিউজ২৪ এবং আরটিভি আছে পঞ্চম অবস্থানে, যাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ১৭ টি।

অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ঢাকা পোস্ট এবং ডেইলি বাংলাদেশ (২৪ টি)। পরের চার অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে জুম বাংলা (২২ টি), নিউজজি২৪ (২০ টি), বাংলাদেশ জার্নাল (১৯ টি) এবং আমাদের সময়.কম (১৮ টি)।

২০২৩
Banner: Rumor Scanner 

এই ব্যানারটি ডাউনলোড করুন এখানে।

কোন ক্যাটাগরিতে বেশি ভুল?  

গণমাধ্যমগুলো চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রচারিত ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে (৪৪ টি), শতকরার হিসেবে যা প্রায় ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৮ টি) খেলাধুলা বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। জাতীয় ও রাজনীতি বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৩ টি, যা তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর বাইরে শিক্ষা ও বিনোদন বিষয়ে ১০ টি করে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ০৫ টি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। ধর্মীয় ০২ টি বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

নির্বাচনের এই বছরে শেষ ছয় মাসে নির্বাচন কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারের হার বাড়ার শঙ্কা ছিল। সে শঙ্কা সত্য প্রমাণ করে এ বিষয়ে ০৮ টি (, , , , , , , ) ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে, যা প্রথম ছয় মাসে ছিল মাত্র একটি। 

কী ধরনের ভুল বেশি?  

ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (৭৩ টি), যা মোট ভুলের প্রায় সাড়ে ৬২ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৩৭ টি, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৩১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ০৮ টি।  

কোন খবরে বেশি ভুল? 

গেল বছরের শেষ ছয় মাসে একাধিক বিষয়েই অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ২২ আগস্ট (২০২৩) জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হেনরি ওলোঙ্গা একটি টুইট বার্তায় জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার ও বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর জানান। পরবর্তীতে তার এই টুইটের বরাতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম সূত্রে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে হেনরি ওলোঙ্গাই আবার ২৩ আগস্ট আরেকটি টুইটে জানান, হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর তথ্যটি গুজব, তিনি বেঁচে আছেন। পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানেও দেখা যায়, হিথ স্ট্রিকের পরিবারই তার মৃত্যুর দাবিটিকে গুজব আখ্যায়িত করে তার জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রিউমর স্ক্যানারের এ সংক্রান্ত প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেশের ১১৪ টি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বেশি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে এমন তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে  বঙ্গবন্ধু টানেল বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবি দাবি করে ভুল তথ্য প্রচার করেছে ৯৭ টি সংবাদমাধ্যম। তবে আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, বসনিয়ার ২০১৪ সালে চালু হওয়া একটি টানেলের ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ক্রমিকফ্যাক্টচেকভুল তথ্য প্রদানকৃত গণমাধ্যম সংখ্যা 
০১হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর গুজবে সয়লাব দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম১১৪
০২বসনিয়ার ছবিকে বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবি দাবি গণমাধ্যমে৯৭
০৩ইরাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে বর-কনে মারা যাওয়ার ভুল তথ্য গণমাধ্যমে৯৩
০৪সাঈদীর সাজা সংক্রান্ত তারিখ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য ৭৭
০৫চট্টগ্রামে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণী দাবিতে গণমাধ্যমে একাধিক জীবিত তরুণীর ছবি প্রচার৭৫

তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্যাক্টচেকটি ভিনদেশের একটি বিয়ের বিষয়ে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইরাকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বর ও কনে উভয়ই মারা গেছেন বলে দাবি করে ৯৩ টি গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো যাচাই করে সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। উক্ত ঘটনায় তারা আহত হলেও জীবিত রয়েছেন। 

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত বছরের ১৪ আগস্ট মারা যান। এরপর তার সাজার তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার করা হয়েছে। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এরপর সাঈদীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। অধিকাংশ গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কতিপয় গণমাধ্যমের দাবি, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন। এ সকল দাবিতে সংবাদ প্রচার করেছে এমন গণমাধ্যমের সংখ্যা ৭৭ টি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তবে সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এই সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি এই তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। 

তালিকার পঞ্চম অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। ২০ আগস্ট চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণ এবং অপরজন তরুণী। এ বিষয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত তরুণের সাথে মৃত তরুণীর ছবি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে নিহত দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে। দেশের ৭৫ টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মৃত তরুণী নাহিন সুলতানার ছবি দাবিতে যে ছয়টি ছবি প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি ছবি ভিন্ন তিন তরুণীর। তাছাড়া, নাহিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি সিটি কলেজের নাম প্রচার করা হলেও তিনি মূলত চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

কোন ইস্যুতে বেশি ভুল? 

গেল বছরের (২০২৩) ০৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলা কেন্দ্র করে শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত যা এখনও চলছে। এ বিষয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার টিম এই সংঘাত শুরুর পর থেকেই গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরগুলোয় নজরে রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা কেন্দ্রিক সর্বমোট ১০ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন , , , , , , , , , ১০। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একক কোনো ঘটনা বিবেচনায় এই সংঘাত কেন্দ্রিকই সর্বোচ্চ ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো। 

কার বিষয়ে বেশি ভুল? 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হয়ে আসছেন। তবে খবরের পাশাপাশি তার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারেও পিছিয়ে ছিল না গণমাধ্যম। শেখ হাসিনার বিষয়ে ভুল তথ্যের প্রচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাপিয়ে গণমাধ্যমে চলে এসেছে। রিউমর স্ক্যানারের গত বছরের শেষ ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার বিষয়েই সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে, সংখ্যার হিসেবে যা তিনে গিয়ে ঠেকেছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন , ,

ব্যক্তি কেন্দ্রিক এই সংখ্যার বাইরে স্থাপনা কেন্দ্রিক ভুলেও চারটি ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচারিত হয়েছে চট্টগ্রামে গেল বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়া দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলের বিষয়ে। টানেলটির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ শনাক্ত করে প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের চারটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন , , , ৪।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’ এর ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট থাকলেও এসব প্লাটফর্মে গেল বছরের শেষ ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। তবে রাষ্ট্রীয় আরেক সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’ এর ওয়েবসাইটে শেষ ছয় মাসে নয়টি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। সেসব সংবাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন , , , , , , , , ৯। 

প্রচারিত ভুল সংবাদগুলোর মধ্যে ০৬ টি ছিল ছবি কেন্দ্রিক ভুল, ০৩ টি ছিল তথ্য কেন্দ্রিক ভুল।

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও বাদ যায়নি

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা এবং ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে একটি করে এবং ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র ওয়েবসাইটে চারটি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গত বছরের ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত খবরটি প্রচার করতে গিয়ে ‘বিবিসি বাংলা’ তাদের প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে সঠিক তথ্য উল্লেখ করলেও সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যার ফলে ৭ হাজার মামলা দাবিতে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে৷ 

অন্যদিকে, ‘ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে গত আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হিথ স্ট্রিক মারা গেছেন যা সঠিক নয়৷ দেশের একাধিক গণমাধ্যমের সাথে জার্মান ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে৷

গত বছরের জুলাইতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং বন্যার ঘটনায় ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদনে দুইটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ছবিগুলো ভারতের সেসময়ের বন্যার ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবিকে ভারতের এই ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। জুলাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো ভারতের জুলাইয়ের বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়। 

Collage: Logo of the three International media

এছাড়া, গত বছরের ০৮ আগস্ট ‘ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র ওয়েবসাইটে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ আবরার হত্যা মামলায় আশিকুল ইসলাম বিটুকে আসামী দাবি করে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবরারের বাবার মামলা ও পুলিশের দাখিলকৃত চার্জশিটে আসামি হিসেবে আশিকুল ইসলাম বিটুর নাম নেই।

এর বাইরে ‘২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ’ শীর্ষক দাবিতে সংবাদমাধ্যমটি একটি সংবাদ প্রকাশ করে গত বছরের আগস্টে। কিন্তু আপিল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

অর্থাৎ, দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি এই দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি গণমাধ্যমও ভুল সংবাদ প্রচার করেছে।

সার্বিক তালিকায় শীর্ষ দশে যারা

২০২৩ সালের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদ প্রচারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই তালিকায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে দেশের মূল ধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘সময় টিভি’। ৭১ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে গণমাধ্যমটি এই স্থানে এসেছে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে তাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল ৩৮ টি, যা পরের ছয় মাসে পাঁচটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ এ। একই তালিকায় পরের পাঁচ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ডেইলি বাংলাদেশ (৫৯), চ্যানেল২৪ ও কালবেলা (৫২), ঢাকা পোস্ট (৫০) এবং জুম বাংলা (৪৯)।

তালিকাটি দেখুন এখানে। 

৬৪ গণমাধ্যমে উন্নতির আভাস

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ৬৪ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস পেয়েছে। উন্নতির এই তালিকায় সবার উপরে শতভাগ হ্রাসের হার নিয়ে যৌথভাবে রয়েছে ১১ টি সংবাদমাধ্যম। এদের মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ‘ক্যাম্পাস লাইভ২৪’ এর সর্বাধিক ০৬ টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছিল রিউমর স্ক্যানার৷ কিন্তু পরের ছয় মাসে বাকি ১০ টি গণমাধ্যমের সাথে এই গণমাধ্যমেরও ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা শূণ্যে নেমে আসতে দেখা গেছে। এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে নিরাপদ নিউজ, প্রাইম নিউজ, দৈনিক আমাদের সময়, নাগরিক টিভি, আমার সংবাদ, ঢাকা মেইল, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টুডে, ডয়চে ভেলে বাংলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, প্যাভিলিয়ন এবং সংবাদ সারাবেলা।

তালিকাটি দেখুন এখানে।

প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ দশে ছিল কিন্তু এবার নেই এমন গণমাধ্যমের তালিকায় আছে ঢাকা মেইল, ডিবিসি নিউজ, যুগান্তর, দেশ রূপান্তর, দৈনিক আমাদের সময়, কালের কণ্ঠ, জাগোনিউজ২৪, সংবাদ প্রকাশ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। এদের মধ্যে ঢাকা মেইলের ৫৬ শতাংশ, ডিবিসি নিউজের ৪৮ শতাংশ, যুগান্তরের ৩৭ শতাংশ, দেশ রূপান্তরের ৩৯ শতাংশ, দৈনিক আমাদের সময়ের ৬৫ শতাংশ, কালের কণ্ঠের ৩৬ শতাংশ, জাগোনিউজ২৪ এর ৩৮ শতাংশ, সংবাদ প্রকাশের ৩০ শতাংশ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ৫০ শতাংশ হারে ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। 

এছাড়া এবার তালিকার শীর্ষ দশে থাকলেও প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা কমেছে এমন গণমাধ্যম হচ্ছে সময় টিভি, ঢাকা পোস্ট, ডেইলি বাংলাদেশ, ইনকিলাব, জুম বাংলা, যমুনা টিভি, বাংলাভিশন, আমাদের সময়, বাহান্ন নিউজ। 

১২১ গণমাধ্যমে উল্টো চিত্র 

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ১২১ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অবনমনের এই তালিকায় সবার উপরে ৯০০ শতাংশ হার নিয়ে রয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বহুমাত্রিক’। সংবাদমাধ্যমটি প্রথম ছয় মাসে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করলেও পরের ছয় মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশে। 

এছাড়া, ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হারে ভুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে সারা বাংলা আজকের দর্পণ, বিজনেস আওয়ার২৪, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইউএনবি, প্রবাসীর দিগন্ত, পদ্মা টাইমস২৪, বাংলাদেশ পোস্ট, অলরাউন্ডার, জনবাণী, বিবিএস বাংলা, পদ্মা নিউজ, ঢাকা রিপোর্ট২৪, খবর সংযোগ, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা, শেয়ার নিউজ, খবরের কাগজ, জবাবদিহি, মত ও পথ, জয় যুগান্তর, এশিয়ান এজ, সকালের সময়, মোহনা টিভি, আমার বার্তা, স্বাধীন আলো, ডেইলি স্টার, ঢাকা ট্রিবিউন, অনফিল্ড, ডেইলি ক্রিকেট, বাংলাদেশ বুলেটিন, বাংলা টিভি, দি ঢাকা টাইমস, ফেস দ্য পিপল, দৈনিক সরোবর, সানবিডি২৪, সুখবর, এমটি নিউজ২৪, বিজনেস ইনসাইডার, একাত্তর পোস্ট, প্রতিদিনের কাগজ, অধিকার বিডি, বার্তা২৪, এশিয়ান টিভি, ঢাকা টুডে, দূরবীন নিউজ, দেশ টিভি, এটিএন বাংলা, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, টি স্পোর্টস, জিটিভি, গ্লোবাল টিভি, বিডি ক্রিকটাইম, পিবিএ এজেন্সি, বিবার্তা২৪, স্টার গল্প, ভোরের দর্পণ, রেডিও টুডে নিউজ, আগামী নিউজ, সংবাদ প্রতিদিন, ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ, বিএনএ নিউজ২৪, কারেন্ট নিউজ, ডিএমপি নিউজ, ঢাকা জার্নাল, আমাদের নতুন সময়, অধিকার.নিউজ, প্রবাস জার্নাল, গণকন্ঠ এবং বাঙ্গি নিউজ।

তালিকাটি দেখুন এখানে।

প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ দশে ছিল না কিন্তু এবার আছে এমন গণমাধ্যমের তালিকায় রয়েছে প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা, কালবেলা, একাত্তর টিভি, নিউজ২৪, সমকাল, আরটিভি, ইত্তেফাক, নয়া দিগন্ত, বাংলাদেশ জার্নাল, চ্যানেল আই, মানবকণ্ঠ, নিউজজি২৪, বাংলা ইনসাইডার, এবিনিউজ২৪, প্রতিদিনের সংবাদ, সাম্প্রতিক দেশকাল। 

এদের মধ্যে আজকের পত্রিকার ৫৪ শতাংশ, কালবেলার ৭৪ শতাংশ, একাত্তর টিভির ১৭ শতাংশ, নিউজ২৪ এর ৩১ শতাংশ, সমকালের ৩১ শতাংশ, আরটিভির ২১ শতাংশ, ইত্তেফাকের ১৭ শতাংশ, নয়া দিগন্তের ১১ শতাংশ, বাংলাদেশ জার্নালের ২৭ শতাংশ, চ্যানেল আইয়ের ১২ শতাংশ, মানবকণ্ঠের ৬ শতাংশ, নিউজজি২৪ এর ৬৭ শতাংশ, বাংলা ইনসাইডারের ৮৯ শতাংশ, এবিনিউজ২৪ এর ৩১ শতাংশ , প্রতিদিনের সংবাদের ৪৫ শতাংশ হারে ভুল সংবাদ প্রচারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাকিদের ক্ষেত্রে (প্রথম আলো, সাম্প্রতিক দেশকাল) হার বৃদ্ধি পায়নি। যেমন, ‘প্রথম আলো’ প্রথম ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচার করেছিল ১৭ টি, শেষ ছয় মাসেও সংখ্যাটা একই। ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’ এর ক্ষেত্রে উভয় সময়কালেই সংখ্যাটা ১৬। 

২০ গণমাধ্যমের অবস্থানের পরিবর্তন নেই 

রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালের প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, পরিসংখ্যানের অধীনে থাকা ২০৫ টি গণমাধ্যমের মধ্যে ২০ টি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস এবং শেষ ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচারের হার হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। এরা হলো বিবিসি বাংলা (১), প্রথম আলো (১৭), বিজনেস বাংলাদেশ (৪), সাম্প্রতিক দেশকাল (১৬), ফ্রিডম বাংলা নিউজ (৬), আমাদের অর্থনীতি (১), খেলা ৭১ (১), এটিএন নিউজ (২), একুশে সংবাদ (১৪), মাই টিভি (৩), ক্যাম্পাস টাইমস (২), শেয়ার বিজ (২), ভোরের পাতা (২), ঢাকা টাইমস (১১), নতুন সময় (১), দৈনিক গণমুক্তি (১), প্রবাস বাংলা (১), তৃতীয় মাত্রা (২), আমাদের কাগজ (১), বাংলা খবর বিডি (১), তরঙ্গ নিউজ (১)। এসব গণমাধ্যমে প্রথম ছয় মাসে যে পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল, শেষ ছয় মাসেও একই পরিমাণ ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। 

ভুলের বৃত্ত থেকে বের হওয়া কতটা কঠিন? 

গণমাধ্যমে ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান প্রকাশের উদ্দেশ্য একটাই, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করা। গণমাধ্যম তার আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলুক, এমন প্রত্যাশা আমরা করি না। সেই লক্ষ্যে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক সূত্র থেকে ক্রসচেক করে নেওয়া, প্রয়োজনে মূল সূত্র থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারে গণমাধ্যমগুলো। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ঘটনার ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির ব্যবহার করে ছবিটি পুরোনো কিনা সে বিষয়ে সহজেই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া সম্ভব (এই পদ্ধতির বিস্তারিত এখানে)। 

তবে কিছু সংবাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রসচেক কিংবা প্রচলিত অনুসন্ধান কাজে দেয় না। এ ধরণের সংবাদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া একটি সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশেও এ বিষয়টির চর্চা শুরু হতে দেখেছি আমরা। দেশের একাধিক গণমাধ্যম তথ্য যাচাইয়ে বিগত সময়ে রিউমর স্ক্যানারের সহায়তা নিয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতারই আশ্বাস দিয়ে থাকে। 

২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান  

0

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের প্রবণতা বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচিত একটি বিষয়। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক স্বীকৃত বাংলাদেশের অন্যতম তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ‘রিউমর স্ক্যানার’ও প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) মোট ১৭৯ টি বিষয়ে দেশের ১৭৬ টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বমোট ১৪২৭ টি প্রতিবেদনে থাকা ভুল (তথ্য, ছবি, ভিডিও) শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এবার ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে রিউমর স্ক্যানার। উক্ত সময়ের মধ্যে মোট ১১৮ টি বিষয়ে দেশের ২০৫ টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বমোট ১৫৫১ টি প্রতিবেদনে থাকা ভুল (তথ্য, ছবি, ভিডিও) শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। উল্লিখিত ১১৮ টি ঘটনায় ৫৭ টি মিথ্যা, ৬০ টি বিভ্রান্তিকর এবং ০১ টি বিকৃত তথ্যকে সত্য তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

Image: Rumor Scanner

এই ব্যানারটি ডাউনলোড করুন এখানে। পুরো তালিকা দেখুন এখানে।

ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের বিকাশের ফলে ভুল তথ্যের প্রচার সহজ হয়ে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে গণমাধ্যমগুলোতেও ভুল সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। তথ্য যাচাইয়ে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া, দ্রুত সংবাদ প্রকাশের প্রবণতাসহ নানান কারণে এই ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে লক্ষণীয়। এটি যেমন গণমাধ্যমের নির্ভরযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে, তেমনি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে। গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের প্রচার গণমাধ্যমের ওপর পাঠক ও দর্শকের আস্থাকেও দুর্বল করছে। এজন্য ভুল তথ্য প্রচার কমিয়ে আনতে তথ্য যাচাই প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন ভুল তথ্য প্রচার করাকে আরও সহজ করে তুলেছে, তেমনি তথ্য যাচাই করার প্রক্রিয়াও আরও সহজতর হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম বিশ্বাস করে, দর্শক ও পাঠকের কাছে যাচাই সাপেক্ষে সঠিক তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ পরিবেশনের প্রবণতা কমিয়ে আনা এবং মানুষের নিকট আস্থার জায়গা হিসেবে গণমাধ্যমের সেই অবস্থান বজায় রাখা সম্ভব।

একাত্তর টিভি ও সময় টিভিকে জড়িয়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন ফেসবুকে

0

সম্প্রতি ক্যাসিনোতে জয়ের একটি বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে এসেছে দাবি করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। সাকিব নামের একজন ঢাকা নিবাসী অনলাইন ক্যাসিনো ‘Crazy Time Banger’ অ্যাপে খেলে জ্যাকপটে ১০০ মিলিয়ন বাংলা টাকা জিতেছেন শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিওতে একজন উপস্থাপিকার খবর পাঠের ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এতে সময় টিভির একটি লোগোও যুক্ত রয়েছে। 

জুয়ার বিজ্ঞাপন

এই ভিডিও ব্যবহার করে ফেসবুকের  কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্যাসিনোতে জয়ী হওয়ার কথিত এই বিজ্ঞাপনের বিষয়ে সময় টিভি কোনো সংবাদ প্রচার করেনি বরং একাত্তর টিভির ‘একাত্তর সংযোগ’ টকশোর ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তাতে সময় টিভির লোগো এবং ভিন্ন অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রতিবেদনে উপস্থাপিকার সামনে থাকা মগে একাত্তর টেলিভিশনের লোগো এবং তার পেছনের ‘সংযোগ’ লেখাটির সূত্র ধরে একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে খেলছে অনেকেই, বড় খেলোয়াড় চীন ? | Ekattor TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনের ১৭ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে ১৭ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরু অংশের সাথে মিল রয়েছে।

Video Comparison by Rumor Scanner

এই ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি টেলিভিশন চ্যানেলটির ‘একাত্তর সংযোগ’ নামের একটি টকশোর ভিডিও। এই পর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট বাংলাদেশের জন্যে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে তা কীভাবে নিরসন করা যায় সে বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক কনস্যুলেট প্রধান ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর এর সাথে আলোচনা করা হয়। 

অর্থাৎ, এর সাথে আলোচিত দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া সময় টিভিতেও এমন কোনো সংবাদ প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। 

মূলত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একাত্তর সংযোগ- টকশোতে চলমান মিয়ানমার সংকট বিষয়ক আলোচনার ভিডিও প্রচার করা হয়। উক্ত ভিডিওর উপস্থাপিকার একটি অংশ কাট করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তাতে সময় টিভির লোগো, ভিন্ন একটি অডিও এবং ‘Crazy Time Banger’ নামের একটি অনলাইন ক্যাসিনো অ্যাপের বিজ্ঞাপন যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এতে দাবি করা হচ্ছে, সাকিব নামের একজন ঢাকা নিবাসী উক্ত অ্যাপে জুয়া খেলে জ্যাকপটে ১০০ মিলিয়ন বাংলা টাকা জিতেছেন। যার মাধ্যমে তিনি বাড়ি, গাড়ি ক্রয় করেছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে একাত্তর বা সময় টিভি কর্তৃক এমন কোনো সংবাদ প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। 

সুতরাং, একাত্তর টেলিভিশনের টকশোর ভিডিওতে সময় টিভির লোগো এবং অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

হলিউড তারকাদের সাথে মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি এডিটের মাধ্যমে যুক্ত করে প্রচার

0

সম্প্রতি, “দুর্লভ একটি ছবি! হলিউড তারকাদের সাথে এক ফ্রেমে মিঠুন চক্রবর্তী!” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হলিউড চলচ্চিত্র ডেডপুল ও ওলভারনি’র সুট পরিহিত কিছু ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে টালিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী রয়েছেন।

মিঠুন চক্রবর্তীর

উক্ত ছবি প্রচার করে ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ওপার বাংলা থেকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হলিউড তারকাদের সাথে এই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী ছিলেন না বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এই ছবিতে মিঠুনের ভিন্ন একটি ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম Daily Mail এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই “Ryan Reynolds and Hugh Jackman are joined by lookalike stunt doubles as Wolverine returns for brutal Deadpool 3 fight scene in front of a toppled 20th Century Fox sign” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে থাকা একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির আনুষঙ্গিক মিল থাকলেও ছবিতে মিঠুনের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

Image Collage: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ডেডপুল-৩ নামক হলিউড চলচ্চিত্রের সেট’র ফাইটিং দৃশ্য থেকে তোলা। এসময় রায়ান রেনল্ডস এবং হাগ জ্যাকম্যান সহ তাদের স্টান্টম্যানদের সাথে কথা বলছিলেন।

পরবর্তীতে মিঠুন চক্রবর্তীর ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় পোর্টাল Postoast.com এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল “17 Photos That Prove Mithun Chakraborty Fashion Sense Was Way Ahead Of Its Time” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে টালিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর ফ্যাশন সম্পর্কিত পোশাকের কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনের একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে থাকা মিঠুনের ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison: Rumor Scanner

এছাড়া, ডেডপুল-৩ চলচ্চিত্রের অভিনয় তালিকায় মিঠুন চক্রবর্তী থাকার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, ডেডপুল-৩ নামক একটি হলিউড চলচ্চিত্রের সেটের ফাইটিং দৃশ্যে চলচ্চিত্রটির অভিনেতা রায়ান রেনল্ডস এবং হাগ জ্যাকম্যান-সহ তাদের স্টান্টম্যানদের সাথে কথা বলছিলেন। সেসময়ের শুটিংয়ের একটি ছবিতে টালিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী থাকার দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মিঠুন চক্রবর্তীর একটি পুরোনো ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে ডেডপুল-৩ সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্যের ছবিতে যুক্ত করা হয়েছে।

সুতরাং, ডেডপুল-৩ নামক হলিউড চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের দৃশ্যে টালিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি যুক্ত করে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

এটি সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের ছবি নয়

0

সম্প্রতি, মোঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে “উনার জন্যই শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছিলো।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

শাহজাহানের স্ত্রী

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির নারী মোঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহল নন বরং এটি ভোপালের বেগম বিখ্যাত সুলতান শাহজাহান বেগমের ছবি। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের রয়াল কালেকশন ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে “Sultan Shahjahan Begum, GCSI (1838-1901), Begum of Bhopal : Prince of Wales Tour of India 1875-6 (vol.3)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছবি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যাচ্ছে।

Image Comparison: Rumor Scanner

ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, এই নারীর নাম সুলতান শাহজাহান বেগম। তিনি ১৮৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং  ভারতের ভোপালের বেগম ছিলেন। ছবিটি ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস ও রানী ভিক্টোরিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র অ্যালবার্ট এডওয়ারর্ডের ভারতবর্ষ ভ্রমণের সময়ে তোলা হয়েছিল।

ছবির স্টোরেজ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট অ্যালামি’তেও একই তথ্য উল্লেখ রয়েছে।

মমতাজের বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের তাজমহলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে মমতাজের বায়োগ্রাফি থেকে জানা যাচ্ছে, সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের আসল নাম আরজুমান্দ বানু বেগম। তিনি ১৫৯৩ সালের এপ্রিল মাসে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৬৩১ সালের ১৭ জুন মারা যান। অন্যদিকে ক্যামেরা আবিষ্কার হয়  ১৮১৬ সালে। তাই তার ছবি পাওয়াও এক্ষেত্রে সম্ভব নয়। তবে পাকিস্তানের লাহোরের একটি জাদুঘরে মমতাজ মহলের অন্তত একটি পোট্রেটের সন্ধান মিলেছে। এই পোট্রেটের সাথে অবশ্য আলোচিত ছবিটির কোনো মিল পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস ও রানী ভিক্টোরিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র অ্যালবার্ট এডওয়ারর্ড ভারতবর্ষ ভ্রমণের সময় অন্যান্য শাসক প্রধানদের মতো ভোপালের বেগম সুলতান শাহজাহান বেগমেরও ছবি তোলেন। উক্ত ছবিকে সম্প্রতি মোঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ভোপালের বেগম সুলতান শাহজাহান বেগমের ছবিকে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বিপিএলে তামিমের উদযাপন নিয়ে মাশরাফি কোনো মন্তব্য করেননি 

চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রংপুর রাইডার্স এবং ফরচুন বরিশালের ম্যাচে সাকিব আল হাসান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তামিম ইকবালের উদযাপন নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

তামিমের উদযাপন

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি ২ লাখ ৪ হাজারের উপরে মানুষ দেখেছে। এছাড়া, ভিডিওটিতে ১১ হাজারের উপরে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়েকশন দেখানো হয়। পাশাপাশি ২৮৮ টি মন্তব্য এবং ৪৫ বার ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাকিব আল হাসান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তামিম ইকবালের উদযাপন করা নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা কোনো মন্তব্য করেননি বরং ভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে মাশরাফির দেওয়া পুরোনো বক্তব্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শুরুতে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে উপস্থাপিকাকে মনগড়া কিছু বক্তব্য দিতে শোনা যায়। 

মাশরাফি বিন মুর্তজার বক্তব্যটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত বছরের (২০২৩) ২৮ সেপ্টেম্বর মাশরাফি বিন মুর্তজার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “আমার চোখে এই মূহুর্তে সাকিব-তামিম।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা মাশরাফির বক্তব্যের মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত বছরে বিশ্বকাপ দলে তামিম ইকবাল না থাকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরবর্তীতে তামিম ইকবালের দেওয়া একটি বক্তব্য এবং সাকিব আল হাসানের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সমালোচনা আরও বৃদ্ধি পায়। এরপর সাকিব-তামিম ইস্যু নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় নিজের মতামত তুলে ধরেন। 

সেই ভিডিও বার্তাটির কিছু অংশ কেটে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এছাড়া, বিপিএলে সাকিবের আউটের পর তামিমের আলোচিত উদযাপনের প্রেক্ষিতে মাশরাফিকে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।  

মূলত, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সের হয়ে সাকিব আল হাসান এবং ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলছেন তামিম ইকবাল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এই দুই ফ্রেঞ্চাইজি মুখোমুখি হয়। ২২ বলে ৩৩ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৫ বলে ২৯ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব আল হাসান। দুইজনের আউটের সময় প্রথমে সাকিব আল হাসান এবং পরবর্তীতে তামিম ইকবালের উদযাপন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এরইমধ্যে, সাকিব আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তামিমের উদযাপন নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের সাকিব-তামিম ইস্যুতে মাশরাফি বিন মুর্তজার দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ কেটে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনায় মাশরাফি বিন মুর্তজার বক্তব্য ব্যবহার করে সম্প্রতি সাকিব আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তামিমের উদযাপন নিয়ে মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী কর্তৃক ওবায়দুল কাদের ও আনিসুল হককে গণধোলাই দেওয়ার ভুয়া দাবি ইউটিউবে 

0

সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই গণধোলাই খেলো আইনমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের।” শীর্ষক শিরোনাম এবং “সংসদে আইনমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাই দিলো জাতীয় পার্টির এমপিরা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

গণধোলাই

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ইউটিউবে প্রচারিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওই দেখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯৫ হাজার।

উক্ত ভিডিওর লিংক শেয়ার করে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জাতীয় পার্টির এমপিরা গণধোলাই দেয়নি বরং তারা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটির কোথাও ওবায়দুল কাদের ও আনিসুল হককে জাতীয় পার্টির এমপিরা গণধোলাই দিয়েছেন শীর্ষক কোনো তথ্যপ্রমাণের অস্তিত্ব মেলেনি অর্থাৎ ভিডিওটি’র শিরোনাম ও থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে দেখানো ভিডিও ক্লিপগুলোর বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ ফেব্রুয়ারি “সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে হাতাহাতি | Maldives Parliament Incident | Maldives | Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মালদ্বীপের সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জোর মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনুমোদন দিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসে। মুইজ্জো সরকারের নতুন চার মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিলে প্রবল অসম্মতি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এর থেকেই দুই দলের এমপিদের মধ্যে মারামারি ও চুল টানাটানির ঘটনা ঘটে।

ভিডিও যাচাই ০২ 

দ্বিতীয় ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৬ জুন “বাজেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে হাতাহাতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের শুরুর দিকের কিছু অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনে সেসময় পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সরকার ও বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এক দল অন্য দলের দিকে বই ও নথিপত্র ছুঁড়ে মারার বিষয়ে বলা হয়। 

ভিডিও যাচাই ০৩ 

আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ভিডিও ক্লিপটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বায়ান্ন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২২ জুন “৩ বার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করেছি সংসদে জাপা মহাসচিব। Mujibul Haque Chunnu” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের একটি অংশই আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner

সেসময় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় জাপা মহাসচিব মুজিবুল হল চুন্নুর অংশ নেওয়ার সময়কার এই ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়। 

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে যুক্ত করা হয়েছে।  

এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ওবায়দুল কাদের এবং আনিসুল হককে জাতীয় পার্টির এমপিরা গণধোলাই দিয়েছেন শীর্ষক দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২৮ জানুয়ারি মালদ্বীপের সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জোর মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনুমোদন দিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসে। মুইজ্জো সরকারের নতুন চার মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিলে প্রবল অসম্মতি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। সেসময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের চেম্বারে প্রবেশের বাধা দেন সরকারি দলের এমপিরা। এর থেকেই দুই দলের এমপিদের মধ্যে মারামারি ও চুল টানাটানির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ২০২১ সালে বাজেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ও বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা এবং ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দেওয়া বক্তব্যের সময় উত্তেজিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা নিয়ে নিয়ে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরই প্রেক্ষিতে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের কিছু ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই গণধোলাই খেলো আইনমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের। জাতীয় সংসদ। BD politics news’ শীর্ষক শিরোনাম এবং সংসদে আইনমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরকে গণধোলাই দিলো জাতীয় পার্টির এমপিরা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে একাধিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সংসদে ওবায়দুল কাদের এবং আনিসুল হককে জাতীয় পার্টির এমপিরা গণধোলাই দিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র