Home Blog Page 551

বিএনপি’র কাছে সিইসি’র ক্ষমা চাওয়ার গুজব

সম্প্রতি, তফসিল ঘোষণা করে ক্ষমা চাইলো সিইসি। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র।– শীর্ষক ক্যাপশন এবং বিএনপির কাছে ক্ষমা চাইলো সিইসি, নির্বাচন নিয়ে মহাবিপদে প্রধানমন্ত্রী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

বিএনপি'র

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিটের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওতে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গণমিছিল ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের এবং নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও যুবদলের মশাল মিছিলের পৃথক তিনটি ভিডিও দেখানো হয়। 

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজলের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ নভেম্বর “নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।  

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৫ নভেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের দৃশ্য এটি। 

Video Comparison by Rumor scanner 

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজলের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ নভেম্বর “নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৫ নভেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের দৃশ্য এটি।

Video Comparison by Rumor scanner 

আলোচিত ভিডিওটিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বক্তব্য দেওয়া একটি ভিডিও দেখানো হয়। 

ভিডিও যাচাই-২

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ৫ নভেম্বর “আজ ৫ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, সারাদেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ সফল করায় জনগণকে ধন্যবাদ এবং সীমিত সামর্থের নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের আহবান।- শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor scanner 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিও যাচাই-৩

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ যুবদলের ব্যানারে একদল মানুষ মশাল মিছিল করছে। এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের লোগো ও দেখা যায়। 

সেই লোগো ও ব্যানারের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ নভেম্বর “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও যুবদলের মশাল মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ১৫ নভেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা করা তফসিল প্রত্যাখান করে মশাল মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা যুবদল। সেই মশাল মিছিলের দৃশ্য

Video Comparison by Rumor scanner 

তবে, উপরোক্ত ভিডিও তিনটির কোথাও বিএনপি’র কাছে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কতৃক ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার হতো। তবে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বিএনপি’র কাছে ক্ষমা চাননি। 

মূলত, ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল (বিএনপি)’র কাছে ক্ষমা চেয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময় চটকদার থাম্বনেইলে গুজব ছড়ানো হলে সেগুলো মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

এমনকিছু প্রতিবেদন পড়ুন 

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বিএনপি’র কাছে ক্ষমা চেয়েছেন  দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

কোক স্টুডিওর কনসার্টে যাওয়া কোনো তরুণী কি আত্মহত্যা করেছে?

0

সম্প্রতি, ‘কোক স্টুডিও কনসার্টে যাওয়া নিয়ে সবার বিরুপ মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে তরুণীর আত্নহত্যা’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,‘কোক স্টুডিও কনসার্টে যাওয়া নিয়ে সবার বিরুপ মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে তরুণীর আত্নহত্যা’ শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি এবং সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সময় টিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে সময় টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সময় টিভির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া সময় টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে শিরোনাম লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে সময় টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডসমূহের ফন্টের মিল নেই। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কোক স্টুডিওর কনসার্টে যাওয়া নিয়ে বিরুপ মন্তব্যের জেরে কোনো তরুণীর আত্মহত্যার কোনো সংবাদ দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, কোক স্টুডিওর কনসার্টে যাওয়া নিয়ে বিরুপ মন্তব্যে তরুণীর আত্নহত্যার বিষয়ে সময় টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

মূলত, গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্ট। সম্প্রতি চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের মাঝে দেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই পণ্যের আয়োজনকে নিয়ে শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার শুরু হয়। কনসার্টটি বয়কটের ডাকও দেন অনেকে। এরই মাঝে কনসার্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শক সারিতে থাকা তরুণ-তরুণীদের ‘আপত্তিকর’ ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে। যার পর থেকে ছবিতে থাকা তরুণীদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার মত ঘটনাও ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘কোক স্টুডিও কনসার্টে যাওয়া নিয়ে সবার বিরুপ মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে তরুণীর আত্নহত্যা’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সময় টিভি তাদের ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি এবং সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে সময় টিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, কোক স্টুডিওর কনসার্টে যাওয়া নিয়ে বিরুপ মন্তব্যে তরুণী আত্নহত্যা করেছে দাবিতে সময় টিভি’র ফটোকার্ডের আদলে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

বাস্তবের দুমুখো মানুষ দাবী করা এডওয়ার্ড মরড্রেক চরিত্রটি বাস্তব নয়

0

সম্প্রতি, এই ব্যাক্তির নাম এডওয়ার্ড মরড্রের্ক, যিনি ১৯ শতকে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন। কিন্তু সবার মতো তার মুখ একটি ছিলোনা বরং উভয় দিকে মাথার সামনে ও পিছনের দিকে ছিলো। তার মুখ ছিলো দুইটি। ওনার ধারণা ছিলো তার অন্য মুখটি ছিলো শয়তানের মুখ।… শীর্ষক দাবি সম্বলিত কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় এডওয়ার্ড মরড্রেক বাস্তবের দুমুখো মানুষ নয় বরং এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র। 

অনুসন্ধানে জানা যায় ১৮৯৫ সালে আমেরিকান লেখক চার্লস লটিন হিলড্রেক The Boston Sunday Post পত্রিকায় এডওয়ার্ড মরড্রেক নিয়ে একটি কাল্পনিক গল্প প্রকাশ করেন। 

Screenshot : The Boston Sunday Post newspapers

পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে ডাক্তার George M. Goulad এবং Walter L. Pyle কর্তৃক প্রকাশিত মেডিকেল কেস স্টাডি বুক “Anomalies and Curiosity of Medicine” এ মরড্রেক চরিত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যা হিলড্রেক এর প্রকাশিত সেই কাল্পনিক গল্প থেকে নেয়া হয়েছিলো। “Anomalies and Curiosity of Medicine” বই প্রকাশের পরপরই এডওয়ার্ড মরড্রের্কের গল্পটি মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে থাকে।

মূলত, সম্প্রতি ১৯শ শতকে জন্ম নেয়া বাস্তবের দুমুখো মানুষটির নাম এডওয়ার্ড মরড্রেক, ২৩ বছর বয়সে আত্মহত্যার আগ পর্যন্ত যিনি ডাক্তারদের কাছে অনুনয় করতেন যেন পিছনের মুখটি সরিয়ে দেওয়া যায়- শীর্ষক ক্যাপশনে কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিগুলো বাস্তব নয় বরং মরড্রেকের দুই মাথার ছবি দাবীতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ছবিগুলো মূলত মোমের তৈরি যা জার্মানির হ্যামবার্গ শহরে অবস্থিত Panoptikum যাদুঘরে রয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।

দুধ দিয়ে গোসল করে যুবকের বিএনপি না করার শপথের দাবিটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, ‘দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপি না করার শপথ যুবকের’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা ছবির যুবক দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপি না করার শপথ নেয়নি বরং বিয়ের ১১ দিনের মাথায় স্ত্রী ডিভোর্স দেওয়ায় দুধ দিয়ে গোসল করে প্রেম এবং বিয়ে না করার শপথ নিয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলার ইশান মাহমুদ শ্রাবণ নামের এই যুবক।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র অনলাইন সংস্করণে গত ১৪ নভেম্বর ‘দুধ দিয়ে গোসল করে বিয়ে না করার শপথ যুবকের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Kalbela

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার ইশান মাহমুদ শ্রাবণ নামের এক যুবক প্রেম করে বিয়ে করার ১১ দিনের মাথায় স্ত্রীর কাছ থেকে ডিভোর্স পান। এর ফলশ্রুতিতে গত ১০ নভেম্বর এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে সারাজীবন আর প্রেম ও বিয়ে না করার শপথ নেন তিনি।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, কালবেলা’র এই প্রতিবেদন ব্যবহৃত  ইশান মাহমুদ শ্রাবণ নামের এই যুবকের ছবি সংগ্রহ কালবেলায় প্রচারিত সংবাদটিকে বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও, কালবেলা ছাড়াও একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমেও (, , ) আলোচিত যুবক ইশান মাহমুদ শ্রাবণের দুধ দিয়ে গোসল করে প্রেম এবং বিয়ে না করার শপথ নেওয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে থেকেও এই ঘটনাটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

মূলত, বিয়ের ১১ দিনের মাথায় স্ত্রী’র কাছ থেকে ডিভোর্স পাওয়ার পর গত ১০ নভেম্বর এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে সারাজীবন আর প্রেম ও বিয়ে না করার শপথ নেন জামালপুর সদর উপজেলার ইশান মাহমুদ শ্রাবণ নামের এক যুবক। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা সহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এবিষয়ে কালবেলায় প্রকাশিত সংবাদে ব্যবহৃত উক্ত যুবকের ছবি’র সাথে ‘দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপি না করার শপথ যুবকের’’ শীর্ষক বাক্য যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপি’র ফটোকার্ড নকল করে তারেক রহমানের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপি না করার শপথ যুবকের’ শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

পেট্রোল নয়, আগুন নেভাতে বাসে পানি দিচ্ছিলো পুলিশ  

গত ১২ ই নভেম্বর ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে আগুনের ঘটনার একটি ভিডিওর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে একজন পুলিশ সদস্যকে বোতল দিয়ে বাসের আগুনে তরল কিছু ঢালতে দেখার বিষয়টিকে পুলিশ কর্তৃক বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লিখিত দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল ছয়টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৫ শত বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ১ শত ৩৪ বার। এছাড়া, এই পোস্টগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার ৪২ টি পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

উক্ত দাবির ভাইরাল পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রকাশিত একটি পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে ঐ পুলিশ সদস্য বোতলে করে বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেননি বরং তিনি বাসের আগুন নেভানোর জন্য বোতলে করে বাসে পানি দিচ্ছিলেন।

কিভাবে ছড়ালো এ বিভ্রান্তি?

চ্যানেল ২৪ এর তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে “প্রকাশ্য দিবালোকে যাত্রী বোঝাই বাসে আগুন!” শিরোনামে মিরপুর-১০ এ প্রজাপতি বাসে আগুনের ঘটনার ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে। তবে তাদের এই ভিডিওতে শিরোনাম ব্যতীত কোনো তথ্য উল্লেখ না করে কেবল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে ঐ ভিডিওর পুলিশের বোতলে করে বাসের আগুনে তরল পদার্থ ঢালার দৃশ্যের ১৭ সেকেন্ড অংশ কাট করে বোতলে করে পেট্রোল ঢেলে পুলিশ আগুন লাগাচ্ছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয় এবং যা খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়।

Source: Channel 24

রিউমর স্ক্যানার টিমের ভিডিও পর্যবেক্ষণ

রিউমর স্ক্যানার টিম চ্যানেল-২৪ এর ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড এর ঐ ভিডিও ফুটেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, ঐ পুলিশ সদস্যের বোতলে করে তরল কিছু ঢালার আগে থেকেই বাসে আগুন জ্বলছিল এবং একাধিক ব্যক্তি ঐ পুলিশ সদস্যের আগে ও পরে বোতলে করে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। 

চ্যানেল-২৪ এর ভিডিও পর্যবেক্ষণে যা পাওয়া যায়:

  • চ্যানেল ২৪ এর আপলোড করা ঐ ভিডিওর প্রথম ২০ সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় বাসের পিছনের দিকের সিটে আগুন লাগে, ঐ স্থানের পাশে আওয়ামিলীগের শান্তি সমাবেশ থাকায় পুলিশ উপস্থিত ছিল এবং কয়েকজন পুলিশ ঐ বাসের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। একই সময়ে বাসের যাত্রীদের দ্রুত বাস থেকে নামতে এবং হেল্পারকে পানির বোতল নিয়ে আগুন লেগে যাওয়া পিছনের সিটে দৌড়াতে দেখা যায়। 
  • পুলিশ সদস্য যখন বোতল থেকে তরল কিছু ঢালছিল তখন বাসের ভিতরে এক ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং হেল্পারের বক্তব্য থেকে জানা যায় তিনি ঐ বাসের ভিতর থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। তাই ঐ পুলিশ সদস্য যখন বোতল দিয়ে তরল ঢালছিলেন তখন বাসের হেল্পার ভেতরেই ছিলেন। ভিডিওর ১ মিনিট ১তম সেকেন্ড থেকে পরবর্তী ৭ সেকেন্ডে ভিতরে তার উপস্থিতি দেখা যাবে।
  • ঐ পুলিশ সদস্য আসার আগে থেকেই বাসে আগুন জ্বলছিল। মূলত ঐ পুলিশ সদস্য বাসে আগুনের ঘটনা দেখে বাসের কাছে ছুটে এসেছিলেন, যা চ্যানেল ২৪ এর ভিডিওর প্রথম অংশেই দেখা যায়।
Indication by Rumor Scanner
  • পুলিশের আগে ও পরে এক ব্যক্তি বাইরে থেকে বোতলে করে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। এই একই  কাজ ঐ পুলিশ সদস্যও করেন।
Indication by Rumor Scanner
Indication by Rumor Scanner
  • বাসের ভেতর থেকে এক ব্যক্তিকে বোতলে করে পানি ছিটাতে দেখা যায়। হেল্পারের বক্তব্য থেকে জানা যায় তিনি আগুনের ঘটনার পরপরই বাসে থাকা পানির বোতল দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
Indication by Rumor Scanner

যেহেতু পুলিশ সদস্যের তরল ঢালার দৃশ্যের আগে থেকেই বাসটিতে আগুন ছিল, তাই পুলিশ সদস্য পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগাচ্ছেন বিষয়টি এমন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ঐ পুলিশ সদস্যের বোতল দিয়ে তরল কিছু ঢালার সময় বাসের ভিতর বাসের হেল্পারও অবস্থান করছিলেন এবং পিছনে ছিল একাধিক ক্যামেরা। পাশে আওয়ামিলীগের শান্তি সমাবেশ থাকায় সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল। তাই এই দৃশ্যে পুলিশ পেট্রোল ঢালছেন এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। আবার পুলিশ সদস্যের তরল ঢালার আগের আগুনের উত্তাপ যেমন, সেই তরল পেট্রোল হলে উত্তাপের যে পরিবর্তন হওয়া বা বেশি হওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাওয়ার কথা তেমনটাও ঘটেছে বলে দেখা যায়নি। এছাড়াও একাধিক ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, বোতল থেকে তরল ঢালা ঐ পুলিশ সদস্যকে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত থাকতে তৎপর দেখা গেছে।

ঐ ঘটনার লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া

রিউমর স্ক্যানার টিম চ্যানেল ২৪ এর একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পায়। চ্যানেল ২৪ এর দুপুর ১ টার লাইভ খবরের ২ মিনিট ৫৯তম সেকেন্ডে মিরপুর-১০ থেকে যুক্ত হন চ্যানেল ২৪ এর প্রতিনিধি সুলতান মাহমুদ আরিফ। সংবাদ পাঠকের পক্ষ থেকে মিরপুরে থাকা রিপোর্টার সুলতান মাহমুদ আরিফ এর কাছে জানতে চাওয়া হয় অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েছে কি না, যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে কি না। জিজ্ঞাসার উত্তরে ৫ সেকেন্ড বলার আগেই পিছনে প্রজাপতি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে এবং চ্যানেল ২৪ এর এই প্রতিনিধির লাইভ রিপোর্টিংয়ে আগুন লাগার পরবর্তী ঘটনা উঠে আসে।

Source: Channel 24

লাইভে থাকা রিপোর্টারকে আগুন লাগার মুহুর্ত থেকে পরবর্তী সময়ে যা বলতে শোনা যায় তা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

“….একটু আগে একটি বাসে আগুন দিয়েছে। এই আমি যখন আপনার সাথে কথা বলছি ঠিক সেই মুহুর্তেই। আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে প্রজাপতি পরিবহন, অর্থাৎ মিরপুর ১০ গোলচত্বরে দূর্বৃত্তরা প্রজাপতি পরিবহনে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে বাসটিতে দাউদাউ করে ভিতরে আগুন জ্বলছে। এবং ভিতরে কয়েকজন যাত্রী ছিলেন, যাত্রীরা নেমে যায়। ঠিক গাড়িটির পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন এবং আমরাও ঠিক যখন আপনাকে এখানকার পরিস্থিতি দেখাচ্ছিলাম ঠিক তখনই এখানে আগুনটি দেওয়া এবং সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহজনক একজনকে আটক করে…।  প্রজাপতি পরিবহনে কিন্তু আগুন জ্বলছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্থাৎ পুলিশ সদস্য যারা আছেন তারা কিন্তু বোতলে করে পানি দিয়ে আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করছেন। যেহেতু এটি কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা, এখনও এক দেড় মিনিটও হয়নি তাই এখানে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস আসেনি।..  কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুনটি লাগে এবং মূলত এরপরই পুলিশ সদস্যরা এসে আগুনটি নির্বাপণের চেষ্টা করেন।”

চ্যানেল২৪ এর লাইভের এই অংশটি গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়।

অর্থাৎ, চ্যানেল ২৪ এর লাইভ চলাকালীন সময়ে ঐ বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে এবং সেখানে উপস্থিত রিপোর্টার জানিয়েছেন ঐ দৃশ্য পুলিশ সদস্য বোতলে করে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টার ঘটনার৷ যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পানির ব্যবস্থা কিংবা ফায়ার সার্ভিস আসার সুযোগ ছিল না তাই পুলিশ সদস্য, বাসের স্টাফ এবং আশেপাশের লোকজন বোতল এবং বিভিন্ন পাত্রে আশপাশ থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। 

প্রজাপতি পরিবহনের ঐ বাসে আগুন লাগার ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে মোহনা টিভির একটি লাইভ আমরা খুঁজে পাই৷ ঐ লাইভ ভিডিও পর্যবেক্ষণ করেও উপস্থিত লোকজন এবং পুলিশ সদস্যদের আগুন নেভাতে তৎপর দেখা যায়। 

সুতরাং, রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে ঐ পুলিশ সদস্য ঐ দৃশ্যে আগুন নেভানোর জন্য বোতলে করে অন্যদের মতোই পানি ঢালছিলেন, পেট্রোল নয়। তাই সার্বিক বিবেচনায় আলোচিত দাবির ভাইরাল পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

তথ্যসূত্র

দেশ রূপান্তরের সংবাদ বিকৃত করে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটকের ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, ‘নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে বাসে আগুন দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটক’ শীর্ষক শিরোনামে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তরের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের আদলে একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

বাসে আগুন

ফেসবুক প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে সূত্র উল্লেখ করে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

এছাড়াও কোনো ছবি ও তথ্যসূত্র ব্যতীত ‘নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে বাসে আগুন দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে দুই ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে বাসে আগুন দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর আটক বা গ্রেপ্তার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত বিএনপি’র দুই কর্মী আটকের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে  আলোচিত দাবি সম্বলিত স্ক্রিনশটটি তৈরি  করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ১৩ নভেম্বর ‘জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Desh Rupantor

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে বাসে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতিকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের লস্করদী মধ্যপাড়া এলাকার মো. অপু মিয়া ওরফে আকাশ (১৯) এবং একই এলাকার মো. ফয়সাল আহম্মেদ মেহেদী (২৪) পুলিশের হাতে আটক হন। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোট চার বোতল পেট্রোল জব্দ করা হয়। পুলিশের দাবি, তারা বিএনপির কর্মী।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি এবং শিরোনামে সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটের শিরোনামের সামঞ্জস্যতা  এবং ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Screenshot Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, দেশ রূপান্তরের অনলাইন সংস্করণে ‘জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট বিকৃত করে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। সেখানে গতকাল (১৪ নভেম্বর) ‘দেশ রূপান্তরের সংবাদ বিকৃত করে প্রচার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে আলোচিত স্ক্রিনশটটিতে বিকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাসে আগুন লাগার ঘটনায় ছাত্রলীগের কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ১৩ নভেম্বর দেশের মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইটে ‘জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট নিয়ে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে শিরোনামে বিএনপি কর্মীর স্থলে দুই ছাত্রলীগ কর্মী শব্দগুচ্ছ যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বে প্রথম আলো’র ফটোকার্ড নকল করে ছাত্রদল নেতাদের নামে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ‘জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটক’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং দেশ রূপান্তরের নামে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েছে দাবি করে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১৪ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের এক ইউটিউব চ্যানেলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েই মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে এবং ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী! ভয়ে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটিতে এক লাখ চুরাশি হাজারের বেশি ভিউ এবং আড়াই হাজারের বেশি লাইক ও ৭৫টি মন্তব্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আরও দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পূর্বের কিছু কার্যক্রম দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে গোপন বৈঠক করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের অনুরোধ জানান। পিটার হাস বলেন, সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি। এজন্য সেনাপ্রধান বলেন, নির্বাচনে যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Somoy TV’র ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ০৪ জুন ‘মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রতিহত করবে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে সেসময়ে দেশের জনগণের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর দিকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের সাথে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও, ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Channel I’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনকে ঘিরে যে কোনো সহিংসতা রোধে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এটি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রচারিত সংবাদের ভিডিও; যার সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তাছাড়া, ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রচারিত অপর একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Independent TV’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘মধ্যরাতে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রচারিত সংবাদের ভিডিও; যার সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়া বা মাঠে নামার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রবণতা বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েই মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে এবং ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী! ভয়ে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে একটি ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপি’র নিবন্ধন নিষিদ্ধ করেননি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে রাজনীতির ময়দান এখন সরগরম। এরই মধ্যে গতকাল ১৪ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘নির্বাচনের আগে একি সিদ্ধান্ত নিলো, বিএনপি নিবন্ধন নিষিদ্ধ করল সিইসি’ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

Sonali media নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত ভিডিওটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩ শত বার। এছাড়া, পোস্টটিতে প্রায় ১৩ হাজার পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নিবন্ধন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি বরং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত দলের তালিকায় এখনো বিএনপি’র নাম আছে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিব আলোচিত দাবিটিকে মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপি’র নিবন্ধন নিষিদ্ধ করেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে উক্ত দাবিতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নাম খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: ecs.gov.bd

এ ব্যাপারে অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত সচিব মোঃ রিয়াজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক বিএনপি’র নিবন্ধন নিষিদ্ধ করার তথ্যটি মিথ্যা তথ্য বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

মূলত, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নিবন্ধন নিষিদ্ধ করেছেন দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার তথ্যটি বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় উক্ত দাবিতে ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আজ ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন বলে নির্বাচন কমিশন থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নিবন্ধন নিষিদ্ধ করার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Bangladesh Election Commission – Website
  • Statement from Md: Riaz Uddin

চরমোনাই পীরের ওপর হামলার গুজব

সম্প্রতি, গত ১৫ নভেম্বর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে “তফসিল ঘোষণা নিয়ে উত্তপ্ত নির্বাচন কমিশন। সিইসিকে হুমকি দিলো চরমোনায় ও তারেক” শীর্ষক শিরোনাম এবং “এইমাত্র নির্বাচন কমিশন ঘেরাও সংঘর্ষ চরমোনায় পীরের উপর হামলা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

চরমোনাই

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে ( আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার বিশ্বস্ত তথ্যসূত্র ছাড়া একাধিক ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে  চরমোনাই পীরের উপর হামলা বিষয়ক কোনো সংবাদ বা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৬ মিনিটের এই ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে দুইটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওতে থাকা তথ্যের সাথে ভিডিওর থাম্বনেইল এবং শিরোনামে থাকা তথ্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ভিডিও যাচাই 

অনুসন্ধানে প্রথম ভিডিওটিতে থাকা ডিবিসি নিউজের লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে আজ ( ১৫ নভেম্বর) ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে “নির্বাচন কমিশনের অভিমুখে ইসলামি আন্দোলনের গণমিছিল। DBC NEWS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটির একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,আজ (১৫ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এর প্রতিবাদে ও তফসিল ঘোষণা বন্ধের দাবিতে গণমিছিল করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলটি পল্টন-কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে আসলে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়।

অর্থাৎ উক্ত ভিডিওটিকে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

পরবর্তী ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেখানো হয়। তারেক রহমানের কথার সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ৫ নভেম্বর “অবরোধ সফল করায় জনগনকে ধন্যবাদ এবং সীমিত সামর্থের নির্বাচন  কমিশনকে পদত্যগের আহ্বান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়,গত ৫ নভেম্বর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় বিএনপি। উক্ত অবরোধকে সফল হয়েছে দাবি করে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান।

পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা চরমোনাই পীরের আহত অবস্থার ছবিটি যাচাইয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টে’র ওয়েবসাইটে গত ১৩ জুন “চরমোনাই পীরের ওপর হামলার নিন্দা রওশন এরশাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা ছবির অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison : Rumor Scanner 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার মেয়র প্রার্থী চরমোনাই পীরের ওপর দুষ্কৃতিকারীদের হামলার ঘটনার।

মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারী রবিবার ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল। উক্ত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার বিষয়কে কেন্দ্র করে তসফিল ঘোষণার পূর্বে আজ বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের আয়োজন করে। পরবর্তীতে উক্ত গণমিছিলের একটি ভিডিওর সাথে থাম্বনেইলে চরমোনাইয়ের ওপর হামলার পুরোনো একটি ছবিসহ ‘নির্বাচন কমিশন ঘেরাও সংঘর্ষ চরমোনায় পীরের উপর হামলা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘর্ষ কিংবা হামলার ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের  নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে সংঘর্ষ ও চরমোনায় পীরের ওপর হামলা দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র