বিগত কয়েক বছর ধরেই, “ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেলো” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে, যা সম্প্রতি ফের ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে গান গাওয়া মেয়েটি মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এই মেয়েটি ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি দেশটির পুনেতে পড়াশোনা করছেন।
মূলত, ২০১৯ সালে রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এক কিশোরী মেয়ের একটি অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে তার গলায় গাওয়া একটি গান গাওয়ার পর সেটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি, একই ভিডিও প্রচার করে একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়, ডাক্তারকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে মেয়েটি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, রাপূর্ণা অপারেশনের পর মারা যাননি। ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই তিনি সুস্থ হয়ে যান। বর্তমানে তিনি পুনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সম্প্রতি, ‘শিশুদের ভোটের অধিকার কে নিশ্চিত করেছে’ শীর্ষক মন্তব্যকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য দাবিতে দেশের বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘শিশুদের ভোটের অধিকার কে নিশ্চিত করেছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং যমুনা টিভিও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও লেখার সূত্র ধরে যমুনা টিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ১৪ জানুয়ারি যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে “আবারও নির্বাচনের দাবি মামার বাড়ির আবদার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতীত বাকি অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
ফটোকার্ড দুটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে যমুনা টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে।
অর্থাৎ যমুনা টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে যমুনা টিভি’র ফটোকার্ডের তথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে, “দেশি বিদেশি চাপ আছে: ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দেশি বিদেশি চাপ অতিক্রম করার ক্ষমতা ও সাহস সরকারের আছে। আবারও নির্বাচনের দাবি মামার বাড়ির আবদার। জনগণ সরকারের সাথে আছে। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না তারা।
এছাড়া, ‘শিশুদের ভোটের অধিকার কে নিশ্চিত করেছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য ওবায়দুল কাদের কখনো করেছেন কিনা তা জানতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বলেন, দেশি বিদেশি চাপ অতিক্রম করার ক্ষমতা ও সাহস সরকারের আছে। আবারও নির্বাচনের দাবি মামার বাড়ির আবদার। জনগণ সরকারের সাথে আছে। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না তারা। উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে “আবারও নির্বাচনের দাবি মামার বাড়ির আবদার” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে। তবে সম্প্রতি যমুনা টিভি’র সেই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় বিকৃত করে “শিশুদের ভোটের অধিকার কে নিশ্চিত করেছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ‘শিশুদের ভোটের অধিকার কে নিশ্চিত করেছে’ শীর্ষক মন্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের করেন নি এবং এই দাবিতে প্রচারিত যমুনা টিভি’র ফটোকার্ডের আদলে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, “দেশের জন্য নয় টাকা কামানোর জন্য এমপি হয়েছে সাকিব!! লাইভে এসে ধুয়ে দিলেন ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হচ্ছে-
হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে বলেছেন, ‘মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশের জন্য নয়, টাকা কামানোর জন্য এমপি হয়েছেন।’
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সুমন “দেশের জন্য নয় টাকা কামানোর জন্য এমপি হয়েছে সাকিব” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের ভিন্ন মন্তব্য সম্বলিত পুরোনো একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির ১মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড অংশ পর্যন্ত হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে শোনা যায়, “মানুষ বলে সাকিব আল হাসান নিজের জন্য খেলে, দেশের জন্য খেলে না।” তবে ভিডিওর কোথাও ব্যারিস্টার সুমনকে সাকিবের বিষয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করতে দেখা যায়নি।
তাছাড়াও, ভিডিও ২০২২ সালের আগস্ট মাসের। সুতরাং, স্পষ্টতই ভিডিওটি সাকিব আল হাসানের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ারও বহু পূর্বের।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে “সাকিবকে ৩ লাখ টাকা দিতে চান ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: দৈনিক যুগান্তর
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে বেটিং প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন সাকিব। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তির মুখে সে চুক্তি থেকে সরে আসতে হয় তাকে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এক ফেসবুক ভিডিওতে সাকিব আল হাসানের সমালোচনা করেন।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে সাকিব আল হাসান সম্পর্কে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের আলোচিত মন্তব্যের দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, ২০২২ সালে বেটিং প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের সাথে
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসানের সমালোচনা করেন। সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমনের সে ভিডিও ব্যবহার করে তিনি “দেশের জন্য নয় টাকা কামানোর জন্য এমপি হয়েছে সাকিব” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সুমন এবং সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সাকিব আল হাসান দেশের জন্য নয় টাকা কামানোর জন্য এমপি হয়েছেন শীর্ষক মন্তব্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৪ এ বিশ্বের ৭০টি দেশকে পিছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হয়েছেন বাংলাদেশে সালেহ আহমেদ তাকরিম শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৪ এ বিশ্বসেরা বা প্রথম হননি। প্রকৃতপক্ষে, দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৪ এর আসর এখনও শুরুই হয়নি। আগামী ১২ মার্চ–২৫ মার্চ ২০২৪ এ প্রতিযেগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, ২০২৩ সালের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অ্যাওয়ার্ড জেতায় ২০২৪ সালের এ প্রতিযোগিতায় সালেহ আহমেদ তাকরিমের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি দুবাইয়ের ২০২৪ কোরআন প্রতিযোগিতায় সালেহ আহমেদ তাকরিম প্রথম হয়েছেন বিষয়টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকের কিছু পোস্টের সাথে যমুনা টেলিভিশনের একটি সংবাদের ভিডিও যুক্ত হয়ে প্রচার হওয়ার ফলে দ্রুততরভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে যমুনা টেলিভিশনের ওই ভিডিওটি মূলত গতবছরের প্রতিযোগিতায় তাকরিমের প্রথম হওয়ার সংবাদের।
Screenshot compile by RS
অনুসন্ধানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক হিফ্জুল কুরআন প্রতিযোগিতা দুবাই ২০২৪ এ অংশগ্রহণের জন্য আবেদন আহবান করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা আগামী ১২ থেকে ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। শর্তাবলীর মধ্যে দেখা যায়, ইতোপূর্বে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফয প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের আবেদনের প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Notice Screenshot from Islamic Foundation
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো: আনিছুর রহমান সরকারের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার। বিষয়টি নিয়ে তিনি জানান– “এই প্রতিযোগিতায় তাকরিম জয়ী হয়ে এসেছে। তার আর যাওয়ার সুযোগ নেই। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফয়সাল আহমেদ যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।”
দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সাধারণত প্রতিবছর রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং এ প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের একটি শর্ত হলো পূর্বের কোনো কোরআন প্রতিযোগিতার আওয়ার্ড সেশনে অংশগ্রহণকারীরা আবেদন করতে পারবে না।
মূলত, গতবছর ২৬তম দুবাই আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। সম্প্রতি গতবছরের এই প্রথম হওয়ার সংবাদ ২০২৪ সালের আসরেও প্রথম হয়েছেন হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তবে দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা -২০২৪ এর আসর এখনও শুরু হয়নি, এই প্রতিযোগিতা সাধারণত রমজান মাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং গতবছর অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জেতায় হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমের এ বছর এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আর সুযোগ নেই। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য এই প্রতিযোগিতায়৷ বাংলাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেবেন ফয়সাল আহমেদ।
সুতরাং, হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমের ২০২৪ দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা প্রথম হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এবিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভিডিওটিতে নেটিজেনরা মন্তব্য করেছেন প্রায় দেড় হাজার। ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৪ শত বার। ভিডিওটি’র মন্তব্য ঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেননি এবং সাকিব আল হাসানও কারাগারে যাননি বরং ভিন্ন একটি মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমনের কথা বলার পুরোনো ভিডিও’র সাথে কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে শোনা যায়, এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। আদালত তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উনি আট বছর জেলে থাকবেন, ১৫ লক্ষ টাকা ফাইন (জরিমানা) দিবেন এবং আনাদায়ে আরও এক বছর জেলে থাকবেন।”
উক্ত ভিডিওটি’’ সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, ব্যারিস্টার সুমনের মামলায় সাকিব আল হাসানের ২ বছরের জেল হয়েছে। তবে সেখানে এবিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
বিষয়টি’র সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর “এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’: ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Channel 24
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেসময় ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায় বাংলাদেশের সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’। বিভিন্ন থানায় বসে যে সব ওসিরা নিজেদের জমিদার মনে করেন, তাদের জন্য এ রায় ‘অশনি সংকেত’ হয়ে থাকবে। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে।’
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এটি সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সুমনের করা কোনো মামলা বিষয়ক বক্তব্যের ভিডিও নয়।
পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সুমন কর্তৃক মামলা করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সাকিব আল হাসানের কারাগারে যাওয়ার দাবিটিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। তবে উক্ত ঘটনায় সেসময় বা পরবর্তীতে কোনো ধরনের মামলা করা হয়নি।
তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী সময়েও এই দুই ব্যক্তির প্রকাশ্যে বিবাদে জড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি রাতে তিনি চোখের চিকিৎসা করাতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
মূলত, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করেন এবং ভিডিও বার্তার কিছুদিন পূর্বে সাকিবের বিরুদ্ধে তাকে হামলা চেষ্টা করার ক অভিযোগ করেন। পরবর্তী উক্ত বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হলে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা করেননি এবং সাকিব আল হাসানও কখনো কোনো কারাগারে যাননি। বর্তমানে তিনি চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সুমন এবং সাকিব আল হাসানের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
সম্প্রতি, “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও ভাঙচুর” শীর্ষক শিরোনাম এবং “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার হঠাৎ পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিএম কাদের” শীর্ষক থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কারের দাবিটি সঠিক নয় এবং জি এম কাদের গ্রেফতার হননি বরং গত ১০ জানুয়ারি জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগের দাবিতে বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের একটি ভিডিওকে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওর কোথাও জি এম কাদের ও চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কার কিংবা জি এম কাদেরের গ্রেফতারের কোনো দৃশ্য বা তথ্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দাবিটি প্রসঙ্গে চ্যানেলটির উপস্থাপক বলেন, “দর্শক জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার এবং জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করে ব্যাপক হামলা এবং ভাঙচুর করেছে নেতাকর্মীরা। কেন? চলুন আমরা বিস্তারিত দেখি ভিডিওতে..।”
সংবাদ পাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে যুক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কালবেলার ফেসবুক পেজে গত ১০ জানুয়ারি “Live: জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের বি ক্ষো ভ..” শীর্ষক শিরোনামে একই ভিডিওর ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে গত ১০ জানুয়ারি “জি এম কাদের ও চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে বনানীতে বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে থাকা স্থিরচিত্রর সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অদক্ষতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাই নির্বাচনে ভরাডুবির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে বনানী কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা।
উক্ত ঘটনার ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর – ৩ আসনে জয়ী জি এম কাদের গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে শপথ নিতে যান৷ অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওতে জি এম কাদেরের গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১১ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৩ দিন পর জি এম কাদেরের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অদক্ষতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাই নির্বাচনে ভরাডুবির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি বনানী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওকে “চুন্নু ও জিএম কাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার হঠাৎ পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিএম কাদের” শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যে আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর দল থেকে বহিষ্কার ও জি এম কাদেরের গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রেমিকাকে পাশ করাতে মেয়ে সেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রেমিকের ধরা পড়ার উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ফরিদকোটের।
অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (ডিবিসি নিউজ, ইনকিলাব, সময়ের কণ্ঠস্বর, ঢাকা পোস্ট) এবিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Inqilab
প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদ গুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ফরিদকোট নামের স্থানের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া একাধিক গণমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেজে (১,২, ৩) ঘটনাটি’র বিস্তারিত উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শিরোনাম এবং ফটোকার্ড পোস্ট করার ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।
Screenshot: Channel 24 Facebook
উক্ত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে নেটিজেনদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।
Comment Collage by Rumor Scanner
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে গত ১৫ জানুয়ারি ‘Punjab Man Dressed As His Girlfriend To Write Exam On Her Behalf, Caught’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ফরিদকোটের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে এক যুবক তার গার্লফ্রেন্ডের ছদ্মবেশ নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। অভিযুক্ত ওই প্রেমিকের নাম আংরেজ সিং। তিনি তার প্রেমিকা পরমজিৎ কৌরের ছদ্মবেশ নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলেন।
অর্থাৎ, প্রেমিকাকে পাশ করাতে মেয়ে সেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রেমিকের ধরা পড়ার উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মেয়ে সেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোনো ব্যক্তির ধরা পড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ফরিদকোটে প্রেমিকাকে পাশ করাতে মেয়ে সেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে এক যুবকের ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। উক্ত বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতে প্রেমিকাকে পাশ করাতে মেয়ে সেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রেমিকের ধরা পড়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ব্যারিস্টার সুমনকে চড় মারায় খেপে গেলেন ভারতের সৌরভ গাগুলী শীর্ষক শীরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
যা দাবি করা হয়েছে
ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান চড় মেরেছেন এবং এর কারণে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী প্রতিবাদ করেছেন।
ছোট কথা নামের ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এই ভিডিওটি প্রকাশ অবধি প্রায় ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ২ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে ২৯ হাজারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে চড় মারেননি এবং সুমন ও সাকিবকে জড়িয়ে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীও কোনো মন্তব্য করেননি বরং ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির ৪৫ তম এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট (ওডিআই) শতক করা নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলীর দেওয়া সাক্ষাতকারের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওতে সৌরভ গাঙ্গুলীর সাক্ষাৎকারের ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে Xtra Time নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারিতে “What did Sourav Ganguly say about Virat Kohli scoring 45th ODI ton?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সৌরভ গাঙ্গুলীর একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (ওডিআই) ৪৫ তম শতক করা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কোহলি একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়। এর আগে এমন অনেক ইনিংস খেলেছে, ৪৫টি সেঞ্চুরি এমনি হয়নি। তার একটি বিশেষ প্রতিভা আছে। এমন সময় থাকবে যখন সে রান পাবে না, তবে সে একজন স্পেশাল খেলোয়াড় (বাংলায় অনূদিত)।
তবে এই সাক্ষাৎকারে তিনি সাকিব আল হাসান কিংবা ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে কিছু বলেননি।
সাকিব কি ব্যারিস্টার সুমনকে চড় মেরেছে?
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন’র ফেসবুকে পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন অভিযোগ করেন, রাজধানীর একটি বেসরকারি হোটেলে সাকিবের সাথে দেখা হলে সাকিব তাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন।
ব্যারিস্টার সুমনের এমন দাবি করার আগে থেকেই সৌরভ গাঙ্গুলীর সাক্ষাতকার ইন্টারনেটে বিদ্যমান।
এছাড়া, দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান চড় মেরেছেন এবং সুমন ও সাকিবকে জড়িয়ে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী মন্তব্য করেছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (ওডিআই) করা ৪৫ তম শতক নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার সাবেক সৌরভ গাঙ্গুলী ভিরাট কোহলির প্রশংসা করে বলেন, তার একটি বিশেষ প্রতিভা আছে। এমন সময় থাকবে যখন সে রান পাবে না, তবে সে একজন স্পেশাল খেলোয়াড়। তবে সম্প্রতি উক্ত ভিডিও প্রকাশ করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান চড় মারায় সৌরভ গাঙ্গুলী প্রতিবাদ করেছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের চড় মারার দাবি এবং উল্লিখিত কারণে সৌরভ গাঙ্গুলী প্রতিবাদ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, “নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে! ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস ক্রাউট্যাঙ্গেল অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত একই ক্যাপশনে এক হাজারেরও বেশি পোস্ট হয়েছে এবং সবগুলো পোস্ট মিলিয়ে ১ লক্ষ ৭৩ হাজারেরও অধিক রিয়্যাক্ট পড়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, ফেসবুকের এই টুলস ব্যক্তিগত আইডি থেকে করা পোস্টের সংখ্যা দেখায় না এবং যেসব ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ভেরিফাইড আইডির পোস্ট দেখায় সেগুলোরও নির্দিষ্ট ফলোয়ার সংখ্যা পার হয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ, ছড়ানোর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া এবং ২০২৪ ব্যাচ থেকে পুনরায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালুর দাবিটি সত্য নয়। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সম্প্রতি ‘নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রয়োজনে পরিবর্তন আসবে’ শীর্ষক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনো সূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
বিষয়টি যাচাইয়ে এই দাবির সম্ভাব্য সূত্রপাত খুঁজে বের করার চেষ্টা করি আমরা। গত ১৪ জানুয়ারি ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে ‘Raju’s English Plus’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Mostafizar Rahman Raju’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘পরীক্ষা পদ্ধতি আবারও ফিরতে পারে নতুন শিক্ষাক্রমে’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখি আমরা। তবে এই পোস্টে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা ছিল না।
পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ‘Polapain Of HSC 2K24’ নামের আরেকটি ফেসবুক গ্রুপে একই ক্যাপশনে আরো একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাই। উক্ত পোস্টের কমেন্টে সূত্র হিসেবে ‘dailycampuslive’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিংক দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিবেদনটি ডিলেট করা হয়েছে। তবে একই প্রতিবেদন ‘shikshabarta’ নামের আরেকটি অনলাইন পোর্টাল পাই।
উক্ত প্রতিবেদনটি জুড়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনটিতে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর গত ১২ জানুয়ারি করা মন্তব্য সম্পর্কে লেখা হয়-
‘পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও এর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। এটি এখন যে একেবারে শতভাগ স্থায়ী তা কিন্তু নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের কাছে যে ‘কারেকশনগুলো’ আসবে সেগুলো সমাধান করা হবে।’
প্রতিবেদন জুড়ে ‘ফিরতে পারে’ এবং ‘ইঙ্গিত’ শীর্ষক শব্দচয়নের ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রতিবেদনটি অনুমান নির্ভর।
গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ‘Md Mostakin Hosen’ (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘dailycampuslive’ নামের উক্ত অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করে লেখা হয়েছে ‘নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে!’। এখানেই ঘটেছে তথ্যের বিকৃতি। আবারও ‘ফিরতে পারে’ হয়ে গেছে ‘ফিরে যাচ্ছে’। পরবর্তীতে এই ক্যাপশনে ফেসবুকে আরো অসংখ্য প্রচার হয়। এমন কিছু পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে।
পরবর্তীতে উক্ত দাবি বিবর্তিত হয়ে ‘নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে! ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা’ শীর্ষক দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
গত ০৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি একাধিকবার (১,২) প্রয়োজনে নতুন কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন। তবে পুনরায় পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা ফিরার ব্যাপারে বা নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি তিনি।
এই বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করি আমরা। তিনি জানান, ‘এটা গুজব। এমন কোনো নির্দেশনা নাই।’
তৎক্ষণাৎ বিষয়টি গুজব জানিয়ে গতকাল ১৫ জানুয়ারি রাতে আমাদের ফেসবুক পেজে একটি ডিজিটাল ব্যানার পোস্ট করা হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজেও বিষয়টি গুজব জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক গণমাধ্যমেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিষয়টিকে গুজব জানিয়ে সংবাদ প্রচার হয়।
আজ ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি প্রচার করছেন যে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৪ সালে জেএসসি এবং পিএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই তথ্যটি মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ধরনের তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা হল।”
Screenshot: Facebook.
মূলত, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দায়িত্ব পাওয়ার পর একাধিকবার প্রয়োজনে নতুন কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কিছু অনলাইন পোর্টালে ‘পরীক্ষা পদ্ধতি আবারও ফিরতে পারে নতুন শিক্ষাক্রমে’ শীর্ষক সংবাদ প্রচার হয়। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টি বিবর্তিত হয়ে “নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে! ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা” শীর্ষক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত বিষয়টি গুজব বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
সুতরাং, নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া এবং ২০২৪ ব্যাচ থেকে পুনরায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালুর ঘোষণা হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্প-এ নিয়োগ শিরোনামে কিছু চাকরির বিজ্ঞপ্তি গত বছর দুয়েক ধরে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়ে আসছে। এই চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে চাকরির প্রস্তুতি ফেসবুক গ্রুপগুলো। এছাড়াও বিডিজবসেও তাদের নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখা যায়। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে প্রচারিত প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্পের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত সর্ববৃহৎ আত্মনির্ভর বেসরকারী স্থায়ী গণশিক্ষা প্রকল্প (প্রগতি স্কুল গণ শিক্ষা প্রকল্প)। যার সেবার আওতায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণ শিক্ষা কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিশ্ব বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে ২০০৬ সালে প্রগতি স্কুল (গণ শিক্ষা প্রকল্প) বিশ্বের ০৮তম শিক্ষা সেবা দান কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।”
অপরদিকে, গেল অক্টোবরে প্রচারিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “বেসরকারী শিক্ষা সংস্থা প্রগতি স্কুল ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের দুস্থ, গরিব, এতিম, অসহায় ও পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে। বিশ্বের মোট ০৭টি দেশে গণশিক্ষা প্রকল্প প্রগতি স্কুল শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সরকারের “শিক্ষা অধিদপ্তর” কর্তৃক অনুমতি সাপেক্ষে দাতা সংস্থা “আল-মাকতুম ফাউন্ডেশন, ১১৮ আল মানখুল রোড়, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত” এর সহায়তায় গণশিক্ষা প্রকল্প প্রগতি স্কুল বাংলাদেশের সকল জেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করবে। উক্ত প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহী ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নিম্নলিখিত পদসমূহে আবেদন করার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।”
এ বিজ্ঞপ্তি দুইটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিজ্ঞপ্তি দুইটিতে দুটি ভিন্ন অফিস লোকেশন দেওয়া হয়েছে। ইমেইল এড্রেসেও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্পে নিয়োগ শীর্ষক প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিগুলো ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে কথিত এ প্রগতি স্কুলের বাস্তবিক কোনো অস্ত্বিত্ব নেই। ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নাম করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার প্রগতি স্কুল গণশিক্ষার একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে অসংখ্য বানান, ভাষা ও বাক্যগত অসঙ্গতি এবং বিরামচিহ্নের ব্যবহারজনিত ভুল দেখতে পায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেই এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নানান অসঙ্গতি দেখা যায়।
বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, তবে নেই কোনো অফিস বা স্কুল
কথিত প্রগতি স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে দেখা যায় তারা বিশাল জনবল নিয়োগের কথা বলে। তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা থাকে অনেক অনেক বেশি। থানা শিক্ষা অফিসার, ইউনিট অফিসার, ইউনিয়ন শিক্ষা অফিসার, শিক্ষক ও অফিস সহকারী সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিশাল সংখ্যা তারা উল্লেখ করে থাকে। কথিত এ স্কুলের ২০২২ সালের ২৪ জুনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৭৫৩০ জন, ২০২৩ সালের মে মাসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৭৫০ জন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আরেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও পদ সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৭৫০ জন। লোভনীয় বেতন ও বিশাল সংখ্যায় নিয়োগের কথা বলে মূলত তারা চাকরি প্রার্থীদের আবেদন করতে প্রলুব্ধ করে। আবেদন করার পর আবেদনকারী প্রত্যেককেই নিয়োগের কথা বলে অগ্রিম টাকা চাওয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায় অব্দি বিশাল নিয়োগ দেওয়ার কথা বললেও আদতে কথিত এ স্কুলের কোথাও কোনো স্কুল বা অফিস নেই। অনুসন্ধানে তাদের কোনো স্কুলের সন্ধান মেলেনি– পুরোটাই যেন কাল্পনিক!
কথিত প্রগতি স্কুল তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে– “বাংলাদেশের সকল জেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সকল জেলা/থানা/ইউনিয়নের প্রকৃত পুরুষ/মহিলাগনের নিকট থেকে ১২ বছর স্থায়ীভাবে মানবতার কল্যাণে কাজ করার নিমিত্তে দরখাস্ত আহবান করা যাচ্ছে। নির্বাচিত সকল প্রার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন ভাতা প্রদান করা হবে। নির্বাচিত সকল প্রার্থীদের কর্মস্থল ও প্রশিক্ষণ নিজ জেলায় রাখা হবে।”
একে তারা কোথাও বলছে তারা ১৯৭৬ সাল থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে, বাংলাদেশসহ ২৬টি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে, তারা ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিনেও জায়গা পেয়েছে সহ নানান গল্প। অন্যদিকে আবার তারাই ২০২৩ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে– ‘স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য’ এর কথা! এই কথার দ্বারা বোঝায় তাদের প্রতিষ্ঠিত কোনো স্কুল নেই। আরেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তারা পাহাড়ি জেলা সহ কয়েকটি জেলায় স্কুল রয়েছে বলেও উল্লেখ করে, তবে অনুসন্ধানে এমন কোনো স্কুল থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
টাইম ম্যাগাজিনের ভুয়া স্বীকৃতি
প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্পের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিশ্ব বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে ২০০৬ সালে প্রগতি স্কুল বিশ্বের ০৮ তম শিক্ষা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে প্রগতি স্কুল নামের কোন কিছুর ফিচার হওয়ার কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। সম্পূর্ণ ভুয়া ভাবে তারা টাইম ম্যাগাজিনের গল্প নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে আসছে।
উপরের বিজ্ঞপ্তিতে প্রগতি স্কুল এর লোগোতে দেখা যায় ২০২০ সাল। তবে অন্য আরেক লোগোতে দেখা যায় ২০২২ সাল। তাদের ২০২০ সালের চেয়ে পুরোনো কোনো লোগো পাওয়া যায়নি। তবে একটি বিজ্ঞপ্তিতে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রগতি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার দাবি দেখা গেছে।
বিভিন্ন দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ভুয়া দাবি
কথিত প্রগতি স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ছাড়াও তারা বিভিন্ন দেশে তাদের গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের বিভিন্ন সময়ের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে তথ্যের গড়মিল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। যেমন ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় বিশ্বের মোট ৭টি দেশে প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বলা হয়– “বিশ্বের মোট ০৭টি দেশে গণশিক্ষা প্রকল্প প্রগতি স্কুল শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ সরকারের “শিক্ষা অধিদপ্তর” কর্তৃক অনুমতি সাপেক্ষে দাতা সংস্থা “আল-মাকতুম ফাউন্ডেশন, ১১৮ আল মানখুল রোড়, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত” এর সহায়তায় গণশিক্ষা প্রকল্প প্রগতি স্কুল বাংলাদেশের সকল জেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করবে।”
আবার ২০২২ সালের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় বর্তমানে ২৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশে তারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “বর্তমানে ২৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের “শিক্ষা অধিদপ্তর” কর্তৃক অনুমতি সাপেক্ষে দাতা সংস্থা “শিশু কল্যাণ ট্রাষ্ট- দুবাই ও প্রগতি স্কুল (গণ শিক্ষা প্রকল্প) ২২৪/বি শিল্প নগরী তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এর যৌথ উদ্যোগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে।”
একই বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে বলা হয়েছে ২৬ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “প্রগতি স্কুল (গণশিক্ষা প্রকল্প) সাউথ কুরিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে ও লাইবেরিয়াসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ২৬তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের “শিক্ষা অধিদপ্তর” কর্তৃক অনুমতি সাপেক্ষে দাতা সংস্থা তারাহুম চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, দুবাই ও প্রগতি স্কুলগণ শিক্ষা প্রকল্প হাউজ – ২২৪.বি শিল্পনগরী এলাকা তেজগাও, ঢাকা- এর যৌথ উদ্যোগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে প্রগতি স্কুল (গণশিক্ষা প্রকল্প) কার্যক্রম টি দুস্থ, গরিব, এতিম ও অসহায় শিশুদের মাঝে স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার আলো পৌছে দেবার লক্ষ্যে এবং নিরক্ষতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায়ে কাজ করে আসছে।”
এখান থেকে বেশ কয়েকটি বড় অসঙ্গতি পাওয়া যায়–
এক. শিক্ষা অধিদপ্তর নামে একটি দপ্তরের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করা হয়। তবে এ নামে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট করে কোনো অধিদপ্তর নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থাকলেও কেবল ‘শিক্ষা অধিদপ্তর’ নামে কোনো অধিদপ্তর নেই।
দুই. কথিত প্রগতি স্কুল তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন সময়ে দুবাই ভিত্তিক কথিত কিছু দাতা সংস্থার নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়। যেমন উপরের তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে তারা দাতা সংস্থা আল-মাকতুম ফাউন্ডেশন, দুবাই, শিশু কল্যাণ ট্রাষ্ট, দুবাই এবং দাতা সংস্থা তারাহুম চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, দুবাই নামের তিনটি সংস্থার নাম উল্লেখ করেছে।
তিন. একটি বিজ্ঞপ্তিতে তারা ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রগতি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বললেও তারা অন্তত তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে ২৩তম দেশ হিসেবে, ২৪তম দেশ হিসেবে এবং ২৬ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেছে। অর্থাৎ, প্রগতি স্কুল বাংলাদেশের কথিত শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করার কথা বলে পরবর্তীতে বাইরের বিভিন্ন দেশে আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর এ প্রকল্প বাংলাদেশে এসেছে বলে বুঝিয়েছে। ২০২৩ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে এমন কি ৭ দেশের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
প্রগতি স্কুল নামে ভিন্ন কেনো দেশে কোনো স্কুল আছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভারতে প্রগতি স্কুল নামের একটি স্কুল খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৬৯ সালে জনাব এম. পি. জৈন প্রগতি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়ের সকল তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে। বাংলাদেশের কথিত প্রগতি স্কুলের সাথে ভারতের গুজরাটের এই প্রগতি স্কুলের যোগসূত্র অনুসন্ধান করে এ দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। উপরন্তু, দেখা গেছে ভারতের প্রগতি স্কুলের লোগো নকল করে কথিত প্রগতি স্কুল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির একটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে।
Logo Comparison by Rumor Scanner
বিভিন্ন চাকরির গ্রুপে ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে প্রচার করা হয় বিজ্ঞাপন
অনুসন্ধান দেখা গেছে প্রগতি স্কুল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রচারের জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন চাকরি প্রস্তুতি ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ। চাকরির ফেসবুক গ্রুপগুলোতে লোভনীয় বেতনের বিশাল এ নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো বিভিন্ন ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে। প্রগতি স্কুল, প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রজেক্ট, প্রগতি স্কুল বাংলাদেশ, Pragati School নামের ফেসবুক আইডিসহ আরও ভিন্ন ভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে গ্রুপগুলোতে পোস্ট করা হতো। তাদের নেই কোনো অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। ১৯৭৬ সাল থেকে বিশ্বের ২৬ দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা টাইম ম্যাগাজিনে ফিচার হওয়া প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল কোনো ফেসবুক পেজ কিংবা সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নেই– ভাবা যায়! আরেকটা মজার ব্যাপার হলো ২০২২ সালের পূর্বে কথিত স্কুল সম্পর্কে ফেসবুকে কোনো তথ্য বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়না। ২০২২ ও ২০২৩ সালেই কেবল এ কথিত স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো পাওয়া যায়।
Screenshot: Pragati School FB accounts
এছাড়াও, www.pragatischoolbd.net এবং https://pragatischoolbd.com/ নামের দুটি ওয়েবসাইটেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তারা প্রচার করতো। বর্তমানে ওয়েবসাইট দুটি এভাইলেবল নেই। ওয়েবসাইট দুটিতে প্রবেশ করতে গেলে ডোমেইন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও, কথিত এ প্রতিষ্ঠান বিডিজবসেও তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করতো। ইউনিসেফ সংস্থা নামের একটি ভুয়া আইডি থেকেও প্রগতি স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচার করা হয়। ওই একই পেজে ইউনিসেফ স্বাস্থ্য প্রকল্পে নিয়োগ নামের একটি ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করতে দেখা গেছে, যা নিয়ে ইতিপূর্বেই “ইউনিসেফের স্বাস্থ্য প্রকল্পে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া” শিরোনামে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
Screenshot: Facebook post
কথিত প্রগতি স্কুলে আবেদনকারী কিছু ব্যক্তির অভিজ্ঞতা
রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে অসংখ্য চাকরি প্রার্থীর মন্তব্য দেখেছে যারা কথিত এ প্রগতি স্কুলে আবেদন করে প্রতারিত হয়েছে। তেমন কয়েকটি মন্তব্য থাকছে এ পর্বে।
প্রগতি স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির একটি পোস্টে Mahmudul Hasan Akash নামের এক ব্যাক্তির মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি প্রগতি স্কুলের অফিস খুঁজতে গিয়ে তার কোনো অস্ত্বিত্ব পাননি। মন্তব্যে তিনি লিখেছেন,
“ঢাকা থাকার সুবাদে আজকে তাদের অফিস ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। যখন তারা বুঝতে পারে যে আমি ঢাকায় থাকি এবং তাদের অফিসের সামনে আমাকে যেতে বলে তাতে অফিস থেকে প্রথমে বলে ভূমি অফিসের সামনে তো আমি ভূমি অফিসের সামনে যাইয়া তাদের ফোন দিই। ও তারা মনে হয় তখন বুঝে গেছে যে আমি আসলেই ভূমি অফিস চিনি তো তারপরে ভূমি অফিসের সামনে যেয়ে ফোন দেওয়ার পরে তারা ফোন রিসিভ করেনা চার-পাঁচবার পর ফোন রিসিভ করার পরে তারা বলে আগোরার সামনে যেতে কিন্তু সাত রাস্তার মাথায় আগোরার কোন সপ নেই। তারপরে বললাম যে ভাই আমি ব্যস্ত মানুষ আইসা নিয়া যান তাহলে ভালো হয় তো তারা বলে আচ্ছা ঠিক আছে আসতেছি ওয়েট করেন। এরকম ওয়েট করতে করতে প্রায় ১৫ ২০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর ফোন দিচ্ছি তো তারা আবার বলল রাবেয়া মেনশন এর সামনে যে। তো তেজগঞ্জ এরিয়াতে আপনার রাবেয়া মেনশন নামেও কোনো বাড়ি নেই। বিজ্ঞাপনে এমন অ্যাড্রেস দিছে যে আপনি এই এড্রেসে কোন ঠিকানাই খুঁজে পাবেন না।মানে এক কথায় পুরা ভুয়া পোস্ট তো কেউ অগ্রিম টাকা দিবেন না আর যারা দিছেন তো দিছেন ই।”
প্রগতি স্কুলের অপর আরেকটি নিয়োগ পোস্টের কমেন্টে Masud Saodagar নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন,
“সালারা ভুয়া, চিটার, বাটপার, কেউ এদের এখানে এপ্লাই করিবেন না। এরা আপনাদের কল দিবো বলবে ১ ঘন্টার মধ্যে ১৭৫০/১৯৫০/২২৫০ ইত্যাদি পরিমান টাকা পাঠান, নয়লে আপনার এপ্লাই বাতিল হবে। সারাদেশে এদের কোন অফিস নাই। এদের থেকে সাবধান হন। কোন প্রকার টাকা দিবেন না।”
ডিসেম্বর-২০২২ এর আরেকটি নিয়োগ পোস্টে তিনজন ব্যক্তির টাকা পাঠিয়ে কথিত প্রগতি স্কুল এর কাছে প্রতারিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। Saiful Alam নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন,
“সাবধান, প্রতারক,আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। শুধু টাকা নিবে মোবাইল ব্যাংকিং এর মধ্যেমে। যে সার্কুলার ঐ অফিস এটা না। যারা আবেদন করবেন ঐ অফিস এর অনলাইনে চেক করে তারপর সিভি পাঠাবেন। প্রতারক থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন।”
Md Dedar Mazumdar নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, “সাবধান, প্রতারক,আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর যোগাযোগ করে না।”
Md Dedar Mazumder এর কমেন্টের রিপ্লাইয়ে Shakila Azad Shakila নামের আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “সঠিক বলেছেন ভাই। আমার কাছ থেকেও টাকা নিয়ে আর খবর নাই।”
অপর আরেক পোস্টে উম্মে আইমান নামের একজন লিখেছেন, “এটা ফেক। কেউ এপ্লাই কইরেন না….তাদের নাকি স্কুলটা এখনও স্থাপনই হয় নাই.. তারা লোক নিয়োগ নিচ্ছে তারপর স্কুলটা করবে। সব টাকা নেওয়ার ধান্দা। ”
এছাড়াও আরও অসংখ্য মন্তব্য আমরা দেখেছি যেখানে কথিত এ স্কুলে আবেদন করে আগে টাকা পাঠিয়ে লোকজন প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ স্কুলের কোনো অস্তিত্ব না থাকার কথা জানিয়েছে। উপরের মন্তব্যগুলোসহ আরও এমন মন্তব্যের স্ক্রিনশটগুলো থাকছে এখানে।
কথিত এ প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্প কিংবা এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আরও অনেক অসঙ্গতি আমরা দেখতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে যেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার ভিত্তিতেই বলা যায়– প্রগতি স্কুল নামের কথিত এ স্কুলের বাস্তবিক কোনো অস্তিত্ব নেই, পুরোটাই কাল্পনিক।
ইতিপূর্বে, আনন্দ স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্প নামে একটি চক্র ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে একইভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। কথিত ওই আনন্দ স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে ভুয়া চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রগতি স্কুল গণশিক্ষা প্রকল্পের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া।