‘CNBC’ এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবিতে দেখা যায়, লিওনেল মেসি বাম হাতে আর্ম ব্যান্ড পড়েছেন। যেহেতু ফুটবল খেলায় অধিনায়করা তাদের হাতের কব্জির উপরে আর্ম ব্যান্ড পড়েন, তাই মেসির হাতে আর্ম ব্যান্ড দেখে বুঝা যায় তিনি ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘BBC’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বরে “Lionel Messi: Inside Argentina captain’s quest for World Cup 2022 glory” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ – ২০২২ এ লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের অধিনায়ক থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘BBC’
এছাড়া, আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘AFA – Selección Argentina’ এ ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক বলে সম্বোধন করে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Facebook’
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে অধিনায়ক দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দলটির অধিনায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও মার্টিনেজের বিষয়ে ভুল তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলোয়াড় এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বলিউড অভিনেতা সালমান খানের সঞ্চালনায় পরিচালিত ‘বিগ বস: ওটিটি সিজন ২’ শোটি প্রথম দু’সপ্তাহে মিনিটে ৪০০ কোটি লোক দেখার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং শোটি প্রথম দু’সপ্তাহে ৪০০ কোটি মিনিট দেখা হয়েছে।
এ প্রতিবেদনগুলো থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ‘বিগ বস: ওটিটি সিজন ২’ এর প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতি মিনিটে ৪০০ কোটি মানুষ নয় বরং এই সময়ে এটি ৪০০ কোটি মিনিট দেখা হয়েছে।
তবে গণমাধ্যমটির বাংলা সংস্করণে এই বিষয়টিকেই বিগ বস OTT 2-এর প্রথম দু’সপ্তাহে মিনিটে ৪০০ কোটি লোক দেখার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অপরদিকে রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে শোটির সময় বাড়ানোর বিষয়ে সালমান খানের ঘোষণার ভিডিওটিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি যাচাই করেও নিশ্চিত হওয়া যায়, সালমান খান ৪০০ কোটি মিনিট দেখার বিষয়টিই বলেছেন। ভিডিওটির একটি কপি রিউমর স্ক্যানারের সংগ্রহে আছে, কপিরাইট ইস্যুর কারণে ভিডিওটি সাইটে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
মূলত, সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা সালমান খান তার সঞ্চালনায় পরিচালিত ‘বিগ বস: ওটিটি সিজন ২’ শোয়ের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়ানোর ঘোষণা দেন এবং একই সময়ে তিনি জানান, শোটির প্রথম দুই সপ্তাহে ৪০০ কোটি মিনিট দেখা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই তথ্যটিকেই বিকৃত করে পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বাংলাদেশি একাধিক গণমাধ্যমে ‘বিগ বস: ওটিটি সিজন ২’ প্রতি মিনিটে ৪০০ কোটি মানুষ দেখেছেন দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ‘বিগ বস: ওটিটি সিজন ২’ প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতি মিনিটে ৪০০ কোটি মানুষ দেখার দাবিতে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘বাংলাদেশের ৫ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের কালো তালিকায়’ শীর্ষক শিরোনামে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয় এই কালো তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি ফর দ্যা ক্রিয়েটিভ আর্টস (ইউসিএ) কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত তথ্যটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
মূলত, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই গত বছর একটি ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সংস্থার বরাতে যুক্তরাজ্যের কমিউনিটিভিত্তিক আইপিটিভিসহ দেশীয় মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘একাত্তর টিভি’ ও ‘চ্যানেল২৪’ এবং ‘কুমিল্লার কাগজ’ এ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি ফর দ্যা ক্রিয়েটিভ আর্টস কর্তৃক বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে দাবি করে সংবাদ প্রচার করে। সম্প্রতি পূর্বের সংবাদ কপি পেস্ট করে নতুন করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। এবিষয়ে গত বছর সেসময় যুক্তরাজ্যের ঐ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক ইমেইল বার্তার মাধ্যমে উক্ত সংবাদটি সত্য নয় বলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিশ্চিত করেছিলেন।
পূর্বেও একই দাবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে ধর্মীয় কারণে আমিশ ও মেনোনাইটদের জন্য ছবিবিহীন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) দেওয়া হয়” শীর্ষক দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভার্জিনিয়ায় ছবি ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের দাবিটি সঠিক নয় বরং অ-মার্কিন নাগরিকদের ছবি বিহীন বিশেষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য একটি বিধানকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে এ সংক্রান্ত দাবি সম্বলিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে যে পরিচয়পত্রের ছবি দেওয়া হয়েছে সেখানে উল্লেখ রয়েছে “NOT VALID FOR VOTING PURPOSES”।
Screenshot: Facebook
কিন্তু নিয়মানুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমেই ভোট প্রদান করতে হয়। তাছাড়া, ফটোকার্ডে থাকা স্ক্রিনশটে একটি নিউজের শিরোনাম দেখা যাচ্ছে যেখানে কোনো এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র নয় বরং শুধু আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র উল্লেখ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা নিউজ ক্লিপটির মূল লিংক খুঁজে পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন নিউজ পোর্টাল Virginia Mercury তে। একই প্রতিবেদনে আইডি কার্ডের হুবহু একই ছবি রয়েছে।
Screenshot source: Virginia Mercury
২০১৯ সালের ০৮ মার্চ প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই কার্ডটি ভোটিং বা ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
Screenshot source: Virginia Mercury
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে ভার্জিনিয়ার মোটরযান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে ছবি বিহীন পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না। সেখানে বসবাসরত অ-মার্কিন নাগরিকদের ছবি বিহীন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য একটি বিধান করা হয়েছে, যেখানে কয়েকটি মানদণ্ড পূরণ সাপেক্ষে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ভার্জিনিয়া অ-মার্কিন নাগরিকদের জন্য ড্রাইভার প্রিভিলেজ কার্ড অফার করা হবে। এটি তাদের জন্য যারা ভার্জিনিয়ার আইনগত প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে পারেনি।
Screenshot: wistv.com
মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে ধর্মীয় কারণে ছবি বিহীন পরিচয়পত্র দেওয়া হয় শীর্ষক দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ভার্জিনিয়াতে ছবি বিহীন পরিচয়পত্র নয়, বরং সেখানে বসবাসরত অ-মার্কিন নাগরিকদের শর্ত সাপেক্ষে ছবি বিহীন বিশেষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য একটি বিধান করা হয়েছে ২০২০ সালে। যা ২০২১ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন মহিলা আনজুমান দরবার শরীফ, রাজারবাগ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে মুখের ছবি ছাড়া আঙুলের ছাপের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান মহিলা আনজুমানের মুখপাত্র শারমিন ইয়াসমিন।
সুতরাং, “যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে ধর্মীয় কারণে ছবি বিহীন পরিচয়পত্র দেওয়া হয়” শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, সন্তানের শ্বাসকষ্ট সমস্যায় বাবার বুক চিড়ে ফুসফুস কানেকশন করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে ছবি সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে প্রিম্যাচিউর শিশুটিকে তার বাবার বুক ছিদ্র করে ফুসফুসের সাথে যুক্ত করে শ্বাস দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বরং শিশুটিকে কেবল বুকে রেখে স্কিন টু স্কিন থেরাপি দেয়া হচ্ছিল, যা সাধারণত প্রিম্যাচিউর নবজাতকদের দেওয়া হয়ে থাকে।
মূলত, অকালে বা প্রিম্যাচিউর হয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য স্কিন টু স্কিন বা ক্যাঙ্গারু কেয়ার উপকারি হয়। জেনি সানচেজ এবং রাসিক ডিকি দম্পতির ৫ মাসে জন্ম নেওয়া প্রিম্যাচ্যুর শিশুকে তার বাবার বুকে রেখে সেই স্কিন টু স্কিন থেরাপি দেওয়ার সময়ের তোলা কিছু ছবি শিশুটির মা তার ইনস্টাগ্রামে আপলোড করেন। পরবর্তীতে সেই ছবিগুলো বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচারিত হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশো কাজী মেটার থ্রেডসের সহপ্রতিষ্ঠাতা নন বরং তিনি থ্রেডস ডট কম (threads.com) নামের ভিন্ন একটি অ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে The Daily Star এর অনলাইন সংস্করণে গত ০৯ জুলাই ‘Meet Rousseau Kazi, the Bangladeshi-born CEO and Co-Founder of the other ‘Threads’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Daily Star
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশো কাজীর অ্যাপ থ্রেডস এর সাথে মেটার থ্রেডস এর কোনো সম্পর্ক নেই। টুইটারের আদলে তৈরি মেটার থ্রেডস এর ডোমেইন ডট নেট(threads.net), অন্যদিকে রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস এর ডোমেইন ডট কম(threads.com)। অর্থাৎ আগে থেকেই রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস চালু থাকার কারণে মেটার থ্রেডস ডট কম ডোমেইনটি না পেয়ে ডট নেট ডোমেইন ব্যবহার করছে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে থ্রেডস ডট কম এর ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Threads on Twitter
দুই থ্রেডস নিয়ে নেটিজেনরা যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়ে সেজন্য এই টুইটার অ্যাকাউন্টের বায়োতে উল্লেখ করা হয়েছে এটি মেটার থ্রেডস নয়। এছাড়াও এটি স্ল্যাক নামের অপর একটি এপ্লিকেশনের রিপ্লেসমেন্ট।
পাশাপাশি, মেটার থ্রেডস এবং রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস এর লোগোর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। টুইটারের আদলে তৈরি মেটার থ্রেডস থেকে টুইটারের মতো কাউকে সরাসরি মেসেজ পাঠানোর সুযোগ নেই। অন্যদিকে, রুশো কাজীর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস থেকে ব্যবহারকারীদের জন্য সরাসরি মেসেজ পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস এর সাথে মেটার থ্রেডস এর মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে এবং এগুলো সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি অ্যাপ।
মূলত, সম্প্রতি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার নতুন অ্যাপ থ্রেডস এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশো কাজী শীর্ষক দাবিতে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রুশো কাজী মূলত থ্রেডস নামের ভিন্ন একটি অ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং এই অ্যাপটি মেটার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। তাছাড়া রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস এর ডোমেইন ডট কম হলেও মেটার থ্রেডস এর ডোমেইন ডট নেট। এছাড়াও এই দুই এপ্লিকেশনের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, রুশো কাজী ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে থ্রেডস এর কো-ফাউন্ডার এবং সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ছয় বছর (২০১১ – ২০১৭) ফেসবুকের সাথে কাজ করেছেন। রুশোর তৈরি অ্যাপ থ্রেডস মূলত কর্মক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার স্ল্যাকের আদলে সেবা পরিচালনা করে থাকে। ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৫ লাখ ডলারের বিনিয়োগও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সুতরাং, গণমাধ্যমে থ্রেডস ডট কম এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশো কাজীকে মেটার থ্রেডস ডট নেট এর সহপ্রতিষ্ঠাতা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ০৬ জুলাই বাথরুম থেকে কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনে গায়িকা লি সাং ইউনের ছবি দাবিতে একজন নারীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোরিয়ান গায়িকার মৃত্যুর ঘটনায় প্রচারিত সংবাদে ব্যবহৃত ছবিটি কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউনের নয় বরং এটি কোরিয়ান অভিনেত্রী সিও ইয়াজির ছবি, যিনি এখনো জীবিত আছেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মৃত গায়িকার ছবি দাবিতে ব্যবহৃত ছবিটির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়।
Screenshot: South China Morning Post
হংকং ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম South China Morning Post এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিতে প্রদর্শিত ঐ নারীর নাম সিও ইয়াজি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বিনোদন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম PinkVilla এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ জুলাই ‘Korean Soprano singer Lee Sang Eun found dead in washroom right before performance’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: PinkVilla
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউন ৪৬ বছর বয়সে গিমচন কালচার অ্যান্ড আর্ট সেন্টারে ০৬ জুলাই তার লাইভ পারফরম্যান্সের আগে মারা যান।
এছাড়াও কোরিয়ান গণমাধ্যম Koreaboo এর ওয়েবসাইটে ‘Singer Lee Sang Eun Found Dead In Bathroom Minutes Before Performance’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Koreaboo
এই প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন দুইটিতে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ছবির অমিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউনের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি দেশটির জীবিত অভিনেত্রী সিও ইয়াজির ছবি।
গায়িকা হাসিওর ছবিকে লি সাং ইউনের ছবি দাবিতে প্রচার
কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউনের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে দেশটির জীবিত অভিনেত্রী সিও ইয়াজির ছবির পাশাপাশি চলতি বছরের গত ১৬ মে মারা যাওয়া কোরিয়ান আরেক গায়িকা হাসিওর ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বহুমাত্রিক.কম নামের একটি অনলাইন পোর্টাল।
মূলত, গত ৬ জুলাই, বাথরুম থেকে কোরিয়ান গায়িকা লি সাং ইউনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কতিপয় দেশীয় গণমাধ্যমে মৃত গায়িকা লি সাং ইউনের ছবির পরিবর্তে ভিন্ন এক কোরিয়ান অভিনেত্রী সিও ইয়াজির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যিনি এখনো জীবিত আছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেনি বরং কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত ভিত্তিহীন দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে কি না- তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Google
অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মে “ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন কারা, যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
Screenshot: Daily Star
পরবর্তীতে তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল বা কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: U.S.Department Of the Treasury
পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Twitter
সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
পাশাপাশি, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
কি আছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নতুন ভিসা নীতিতে?
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, নতুন এই ভিসা নীতিমালার আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
Screenshot: US Embassy Bangladesh
মূলত, গত ২৫ মে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির আওতায় এখনো কাউকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এমন একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে যেসব পোস্টে উল্লিখিত দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে সেসব পোস্টে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছাড়াই আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক ভিত্তিহীন দাবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ডিএমপি’র গুলশান থানার ওসির মার্কিন ভিসা বাতিল এর ভুল দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারলেন না সালমান এফ রহমান. আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সালমান এফ রহমানের বিষয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে UK Kashba TV নামে একটি সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিওটির শুরুতেই উপস্থাপক বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেকিং নিউজ নিয়ে এসেছি। হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ বেক্সিমকোর মালিক এফ সালমান রহমানকে আটকে দিয়েছে বলে আমাদের কাছে গভীর জায়গা থেকে আমাদের কাছে একটি তথ্য এসেছে। আমরা আশা করছি এই তথ্যটি ভুল হবে না, সঠিক হবে।’
অর্থাৎ সালমান এফ রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্র UK Kashba TV ও তার দাবির পক্ষে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে না পারলেও তাকে সূত্র উল্লেখ করেই পরবর্তীতে সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকে দেওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়।
এছাড়া দাবিটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সালমান এফ রহমান যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের একজন চলমান সংসদ সদস্য, তাই স্বাভাবিকভাবেই দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক তাকে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হওয়ার বিষয়টি অনুমেয়।
সালমান এফ রহমান প্রকৃতপক্ষে কোথায় ছিলেন?
রিউমর স্ক্যানার টিম দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অবস্থান নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে সৌদি আরব যান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
পোস্টটির বিস্তারিত বিবরণীতে দেখা যায়, ছবিটি হজ পালন শেষে গত ১০ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ২৮ জুন) মিনার রয়েল গেস্ট প্যালেসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাথে তোলা।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন এবং এই সময় সেখানে সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসেবে হজের পুরো সময়টাই তার সঙ্গে ছিলেন এবং একই সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে,দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক সালমান এফ রহমানকে আটকে দেওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
Screenshot: Bangla Vision Youtube
পাশাপাশি এই প্রতিবেদন লেখার সময়েই ফেসবুকে আরেকটি দাবি (আর্কাইভ) ছড়িয়ে পড়ে যে, ‘দুবাই নয় আবুধাবি থেকেই ইতিহাদের যুক্তরাষ্ট্র গামী ফ্লাইটের গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সালমান এই রহমানকে. উনি ইতিহাদেই হজ্জ্ব করতে গেছিলেন।’
মূলত, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক আটকে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ফেসবুকে প্রচারিত ডিজিটাল ব্যানারটিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের দিকে ইরানে রেজা পারাসতেশ নামের এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যে কিনা দেখতে লিওনেল মেসির মতো। সে নিজেকে লিওনেল মেসি দাবী করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কও করেছিলো। সেই নারীরা ভেবেছিলেন মেসির সাথে এসব কাজ করছেন!
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই শুধুমাত্র একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক টুইটের পর এই দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে সোর্স হিসেবে Marca নামটি উল্লেখ পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে স্প্যানিশ স্পোর্টস ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Marca এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৫ জুন ‘The Iranian who pretended to be Messi in order to sleep with 23 women’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Marca
প্রতিবেদনে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ মেসি সেজে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে দাবি করা হলেও সেখানে কোনো সূত্র বা সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানে তুরস্কের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Teyit এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ জুন ‘Did Messi loolalike Reza Parastesh trick 23 women into sleeping with him?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Teyit
প্রতিবেদনে এবিষয়ে প্রথম ছড়ানো দাবি হিসেবে Insolite TV নামের একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্টের কথা বলা হয়। তবে বর্তমানে টুইটারে এই অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় নেই।
২০১৯ সালের ২৩ জুন Insolite TV নামের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রচারিত দাবির স্ক্রিনশট দেখুন এখানে।
Screenshot: Twitter
Teyit এর প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, Insolite TV নামের এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে প্যারোডিধর্মী টুইট প্রচার করেছে। মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত টুইটিও তারই অংশ।
উক্ত দাবির বিষয়ে মেসির মত দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ এর বক্তব্য
প্রচারিত দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot- Instagram
উক্ত ভিডিও বার্তায় তিনি তার বিরুদ্ধে প্রচারিত বিষয়টিকে অস্বীকার করেন এবং এতে তিনি এবং তার পরিবারের সম্মানহানী হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো মাধ্যমে ইরানি যুবক রেজা পারাসতশের বিরুদ্ধে মেসি সেজে নারীদের সাথে প্রতারণার বিষয়ে ওই কথিত নারীদের কেউ অভিযোগ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, এই দাবিটি তথ্যসূত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছে এবং এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে এই দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং কথিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নারীদের কেউ রেজা পারাসতেশের বিষয়ে অভিযোগ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ জুন Insolite TV নামের একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবিটি সর্বপ্রথম ছড়ায়। তবে বর্তমানে টুইটারে এই অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় নেই।
প্রসঙ্গত, মেসির সাথে চেহারার হুবহু মিল থাকায় সেলিব্রিটি তকমা পায় ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ। মেসি সেজে ভক্তদের সাথে সেলফি তোলা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মেসি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমনকিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।