রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের নয় বরং ভিডিওটি প্রায় দশ বছর আগে ২০১৩ সালে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষের সময়ে ধারণকৃত।
এবিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে RANE নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘Syrian Tank Allegedly Attacked and Airstrikes (raw footage)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: YouTube
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
সেখানে উল্লেখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০১০ সালে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষের সময়ে সরকারি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের ভিডিও।
পরবর্তীতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম DailyMotion এর ওয়েবসাইট থেকেও ভিডিওটি’র ব্যাপারে একই তথ্য জানা যায়।
Screenshot: DailyMotion
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের নয়।
মূলত, ২০১০ সালে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষের সময়ে সরকারি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের একটি ভিডিও সেসময় ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি সেই ভিডিওটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কাতারের মধ্যস্থতায় গত ২৪ নভেম্বর থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে এ যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর আগে গত ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামলা শুরু করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত নতুন মাত্রা পায়৷
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি জাহাজ জব্দের দাবিতে প্রচার করা হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১০ সালে সিরিয়ায় ট্যাঙ্ক ধ্বংসের একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ধ্বংসের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আসন্ন আইপিএল সিজন থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া, একই দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়নি বরং আইপিএল রিটেইনেশনে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের মতো বাংলাদেশি তিন ক্রিকেটারকেও ছেড়ে দিয়েছে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Hindustan Times’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৬ নভেম্বর ‘IPL 2024 Player Retention: বাদ পড়লেন শাকিব-লিটন, কাদের ধরে রাখল KKR, ছেড়ে দিল কোন কোন তারকাকে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Hindustan Times’ website
উক্ত প্রতিবেদনটিতে আসন্ন আইপিএল এ ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ এবং ‘দিল্লি ক্যাপিটালস’ এর স্কোয়াড থেকে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আইপিএল ২০২৪-এর নিলামের আগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কোনো দলে নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএল এর স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ২৭ নভেম্বর দেশীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক ভোরের কাগজের ওয়েবসাইটে ‘আইপিএল থেকে বাদ পড়ল বাংলাদেশি ক্রিকেটারা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot from ‘Bhorer Kagoj’ website
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আইপিএলে বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে, গত আসরে দলে থেকেও তিনি খেলতে পারেননি। এছাড়া, লিটন দাস এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও হাস্যকর ভুলে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর দিল্লি ক্যাপিটালস এর হয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের অবস্থাও ছিল বেশ নাজুক।
সঙ্গত কারণে এবং ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এই তিন খেলোয়ারের বাজে পারফর্মেন্সের কারণ হিসেবে আইপিএল এর এবারের প্লেয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারা।
পরবর্তীতে গত ২৬ নভেম্বর আইপিএলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘IPL 2024 Player retentions’ এর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলের ২০২৪ মৌসুমের খেলোয়াড় রিটেনশনের সময়সীমার শেষ দিনে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি একত্রে ১৭৩ জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে এবং ৯০ জন খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স সাকিব ও লিটনসহ মোট ১২ জন, দিল্লি ক্যাপিটালস মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১১ জন, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১১ জন, পাঞ্জাব কিংস ৭ জন, রাজস্থান রয়েলস ৯ জন, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১১ জন, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ৬ জন, লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস ৮ জন, গুজরাট টাইটান্স ৮ জন এবং চেন্নাই সুপার কিংস ৮ জন খেলোয়াড় রিলিজড করেছে বা ছেড়ে দিয়েছে।
আইপিএল রিটেনশনে মূলত দলগুলো নিলামের আগে তাদের কোন খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে চায় এবং কোন খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতে চায় বা অন্য দলের কাছে বিক্রি করতে চায় তা চূড়ান্ত করে এবং তালিকা প্রকাশ করে। ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়রা আইপিএলে খেলতে আগ্রহী হলে তাদের নাম পরবর্তীতে নিলামে আবার উঠবে এবং সেখান থেকে দলগুলো চাইলে তাদের দলে ভেড়াতে পারবে।
সাধারণত একটি আইপিএল দল মেগা এবং মিনি নিলামের আগে যেকোনো সংখ্যক খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে পারে। দলগুলো তাদের পরিকল্পনা বা গেম প্ল্যান, অর্থনৈতিক হিসাব না পার্স, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং তাদের প্রাইস ট্যাগ ইত্যাদিসহ নানা কারণ বিবেচনা করে খেলোয়াড় রেখে দেয় কিংবা ছেড়ে দেয়। নিলামের আগে তারা যত মূল্যের খেলোয়াড় ছেড়ে দেয় তা তাদের পার্সে যুক্ত হয় এবং সেই অর্থ তারা নিলামে নতুন খেলোয়াড় কিনতে ব্যবহার করতে পারে।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুবাইয়ে আইপিএলের মিনি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং এই নিলামকে ঘিরে দলগুলো ইতিমধ্যে প্লেয়াররা রিটেনশনের মাধ্যমে কিছু খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে, কিছু ধরে রেখেছে। সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস কিংবা মোস্তাফিজুর রহমানকে ঠিক একই কারণে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি ছেড়ে দিয়েছে।
এছাড়া, সাকিব-লিটন-মোস্তাফিজের বাদ পড়ার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ইতোপূর্বেও একাধিকবার সাকিব ও মোস্তাফিজকে তাদের পূর্বের ফ্রাঞ্চাইজি নিলামের আগে ছেড়ে দিয়েছে বা রিলিজড করেছিল।
মূলত, আইপিএল ২০২৪ মৌসুম এর মিনি নিলামকে সামনে রেখে দলগুলো তাদের খেলোয়াড় রিটেইন এবং রিলিজ করেছে। দেশি-বিদেশি মিলে প্রতিটি দল তাদের বেশকিছু সংখ্যক খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছে। একইভাবে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মোস্তাফিজির রহমানকেও দলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার এই বিষয়টিকে ভারতের হারে উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেয়ার সাথে মিলিয়ে প্রচার করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) আইপিএলে পাকিস্তানের সাথে সাথে বাংলাদেশি প্লেয়ারদের ও নিষিদ্ধ করেছে শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। উক্ত বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উল্লাসের কারণে আইপিএল থেকে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে একটি মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিও ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি, একই ভিডিও “ডাক্তারকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে মেয়েটি” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে গান গাওয়া মেয়েটি মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এই মেয়েটি ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি দেশটির পুনেতে পড়াশোনা করছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৯ সালে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পেয়েছে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
এর মধ্যে ১৩ নভেম্বর প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতেই প্রায় ১৭ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। তবে সেসময়ের ভিডিওগুলোতে মেয়েটির মৃত্যুর দাবি ছিল না।
Screenshot : Facebook Post
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে আমরা ২০২১ সালে Sukanti Roy নামে একটি অ্যাকাউন্টে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাই। উক্ত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে ‘Rapurna Bhattacharya’ নামক এক নারী মন্তব্য করেন, ভিডিওতে থাকা মেয়েটি হচ্ছেন তিনি।
Screenshot : Facebook Post
উক্ত কমেন্টের সূত্র ধরে আমরা পরবর্তীতে রাপূর্ণা ভট্টাচার্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করি। তার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি ভারতের কলকাতায় বসবাস করেন এবং বর্তমানে পুনের সিমবায়োসিস সেন্টার ফর মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশনে পড়াশোনা করছেন।
রাপূর্ণা ভট্টাচার্যকে নিয়মিতই তার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে। গতকালও (২৬ নভেম্বর) তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
যেহেতু ভিডিওটি ২০১৯ সাল থেকেই ফেসবুকে বিদ্যমান, সেই সূত্রে মেয়েটি আসলেই রাপূর্ণা ভট্টাচার্য কিনা তা নিশ্চিত হতে আমরা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের ছবিগুলোর (১, ২, ৩) সাথে ভিডিওর মেয়েটির চেহারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দৃশ্যমান মিল খুঁজে পেয়েছি।
Image Comparison : Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে থাকা মেয়েটিই রাপূর্ণা ভট্টাচার্য এবং তার ফেসবুক এক্টিভিটি জানাচ্ছে, তিনি দিব্যি সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে আরও জানতে রাপূর্ণা ভট্টাচার্যের মা বিতস্তা ঘোষালের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিতস্তা ঘোষাল বলছিলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তার মেয়ে রাপূর্ণা বাড়িতে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার পর একটি অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। সে বছরের ০৪ নভেম্বর অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগে সে এই গানটি গায়। ভাইরাল ভিডিওটি বিতস্তাই ধারণ করেছিলেন। সপ্তাহখানেক পরই রাপূর্ণা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বিতস্তা রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে অনুরোধ করেন “আপনারা অনুগ্রহ করে বিষয়টি দেখবেন। নিজের সন্তানের মৃত্যুর ভুল খবর প্রচারিত হলে মন খারাপ হয়ে যায়। নিশ্চয়ই এটা বুঝবেন।”
মূলত, ২০১৯ সালে রাপূর্ণা ভট্টাচার্য নামে ভারতের এক কিশোরী মেয়ের একটি অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে তার গলায় গাওয়া একটি গান গাওয়ার পর সেটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি, একই ভিডিও প্রচার করে একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়, ডাক্তারকে নিয়ে গান গেয়ে হাসতে হাসতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে মেয়েটি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, রাপূর্ণা অপারেশনের পর মারা যাননি। ২০১৯ সালে অপারেশনের সপ্তাহখানেক পরই তিনি সুস্থ হয়ে যান। বর্তমানে তিনি পুনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করছেন।
সুতরাং, অপারেশনের পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারদের নিয়ে ভারতের একটি মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিও ব্যবহার করে তিনি মারা গেছেন শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি গত ২৫ নভেম্বর ‘ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। ভিডিওটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ৭ লাখ হাজার বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার বার। এছাড়া, পোস্টটিতে প্রায় ৪২ হাজার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে দাবির প্রেক্ষিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয়নি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনের অন্যকোনো সদস্য পদত্যাগ করেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, তফসিল বাতিল এবং নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা করেছেন সিইসি। তিনি ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এছাড়াও ভিডিটিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Shaifur Rahman নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৪ নভেম্বর শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র একটি অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
তাছাড়া, মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে আজ ২৬ নভেম্বর ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে তা জাতির জন্য সৌভাগ্যের হবে: ইসি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে আসন্ন নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন।
Screenshot: Jamuna TV
অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রচারের পরবর্তী সময়েও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার পদে বহাল রয়েছেন।
এছাড়াও, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেকেই নিজ পদে বহাল আছেন।
Screenshot: Election Commission Website
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা নির্বাচন কমিশনের অন্যকারো পদত্যাগের তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ নভেম্বর ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা নামের একটি ফেসবুক পেজ সহ আরও কয়েকটি পেজে নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত আরেকটি ভিন্ন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, রোবট মানুষের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিও গুলো বাস্তব নয় বরং মানুষের ব্যাডমিন্টন খেলার ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমতার সাহায্যে রোবট যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিও যাচাই ০১
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Phalore bedmation club নামক ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া magicalmagicworld নামক টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ৫ সেপ্টেম্বর আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Tiktok
তবে ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায় এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি।
ভিডিও যাচাই ০২
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে Badminton Ham নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে উক্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর রোবটের জায়গায় দুইজন মানুষ ছিলো। এছাড়া, ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি কোরিয়া বনাম জাপানের ব্যাডমিন্টন খেলা ছিলো।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও দুটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর সাহায্যে মানুষের অবস্থানের স্থলে রোবটের অবয়ব জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি রোবট মানুষের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছে দাবিতে একাধিক ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় ভিডিওগুলো সম্পাদনা করা। প্রকৃতপক্ষে দুটি ভিন্ন ব্যাডমিন্টন খেলার ভিডিওতে উপস্থিত থাকা মানুষের দৃশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিবর্তন করে সেখানে রোবটের দৃশ্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে লিওনেল মেসির ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রোবট মানুষের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিও দুটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, “মিশরে কুরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ দেশকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ” শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হননি বরং বাংলাদেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় দেশের হাফেজদের মধ্যে প্রথম হয়ে আগামী ডিসেম্বরে মিশরের উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তিনি।
আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ের শুরুতেই মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ১৫ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনের ১৪ নম্বর পাতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
Source: Jugantor Epaper
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর মিশরের রাজধানী কায়রোতে ৩০তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী বাংলাদেশী হাফেজগণের আবেদনপত্র আহ্বান করা হয় উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। ২০ নভেম্বর আগ্রহী প্রতিযোগীদের নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানা যায় বিজ্ঞপ্তি থেকে।
অর্থাৎ, বাংলাদেশি হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের হিফজুল কুরআন নামের যে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে তা আগামী ২২-২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
পরবর্তীতে, দাবিটির সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ২০ নভেম্বর প্রকাশিত ফেসবুকের একাধিক পোস্ট (১, ২, ৩) থেকে জানা যায়, নেত্রকোনা জামালুল কোরআন মাদরাসার ছাত্র হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ মিশরে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আমার ভাই মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ, “৩০ তম আন্তর্জাতিক মিশর কুরআন প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ!! সবাই দোয়া করবেন আমার ভাই যেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্ব জয় করে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনতে পারে।”
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, মিশরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোরআন প্রতিযোগিতা নয়, উক্ত কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য দেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ।
কিন্তু ২১ নভেম্বর কতিপয় ফেসবুক পোস্টে আলোচিত দাবিটি অর্থাৎ মিশরে কোরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ দেশকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ শীর্ষক তথ্যটি প্রচার হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার।
আবার, একইদিন আরো কিছু পোস্টে কতিপয় শব্দ বদলে দিয়ে প্রচার করা হয়, “মিশরে কুরআন প্রতিযোগিতায় ২৬০ জনকে পিছনে ফেলে ১ম হয়েছে বাংলাদেশের হাফেজ মুতাসিম বিল্লাহ মুজাহিদ।”
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, একদিনের ব্যবধানে একটি তথ্য বদলে গিয়ে দুইটি ভিন্ন দাবিতে ছড়িয়েছে।
পরবর্তীতে, বিষয়টির অধিকতর সত্যতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকারের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য দেশে আয়োজিত বাছাই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন।
তাছাড়া, বিষয়টি হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেত্রকোনা জামালুল কোরআন মাদ্রাসা’র সিনিয়র শিক্ষক মো: জুবায়েরুল হাসানও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।
জনাব জুবায়েরুল রিউমর স্ক্যানারকে জানান, উক্ত প্রতিযোগিতায় হাফেজ মুহতাসিম বিল্লাহ্ মুজাহিদ হিফজুল কুরআন ৩০ পারা বিভাগে অংশগ্রহণ করবেন।
মূলত, আগামী ২২-২৮ ডিসেম্বর মিশরে ৩০তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশী হাফেজগণের নির্বাচনী পরীক্ষায় হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন। উক্ত ঘটনাকেই হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, পূর্বে হাফেজ তাকরিমের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, মিশরের আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বাছাই পরীক্ষায় দেশের হাফেজদের মধ্যে হাফেজ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রথম হওয়ার ঘটনাকে তিনি মিশরের কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটির বয়স ৩০৯ বছর নয় বরং তিনি ১০৯ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের নাগরিক লুয়াং ফো ইয়াই যিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে মারা যান।
মূলত, আলোচিত ভিডিওর ব্যক্তিটি ১০৯ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের নাগরিক লুয়াং ফো ইয়াই। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে ৩০৯ বছর দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে একই ব্যক্তির বয়স ১৯৩ বছর বলে ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গত কিছুদিন ধরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে Sumon Hosen নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে বিনোদন অঙ্গনের কয়েকজন আলোচিত তারকার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি (আর্কাইভ) থেকে চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা শাবনূর, অপু বিশ্বাস, বুবলি, খলনায়ক মিশা সওদাগর, ডিপজল, কমেডি অভিনেতা কাবিলা এবং ছোটপর্দার অভিনেতা মুশফিক ফারহানের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত তারকাদের কেউই এখন পর্যন্ত মারা যাননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই তারকাদের মৃত্যুর ভুয়া দাবি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত তারকাদের মৃত্যুর বিষয়ে প্রচারিত ভিডিওগুলো প্রত্যেকটি আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিউমর স্ক্যানারের পাঠকদের সুবিধার্থে পৃথক পর্যবেক্ষণ এবং প্রকৃত তথ্য পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলোঃ
শাকিব খান কি মারা গেছেন?
গত ১৭ নভেম্বর ঢালিউড সুপারস্টার চিত্রনায়ক শাকিব খান মারা গেছেন দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
উক্ত পোস্টে বলা হয়, ‘বাংলা সিনেমার চলচ্চিত্র নায়ক শাকিব খান আজকে শুটিং করতে গিয়ে ভোর ছয়টার দিকে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন।’
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুটিং করতে গিয়ে বা অন্যকোনো কারণে শাকিব খানের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে শাকিব খানের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে শাকিব খানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়ক শাকিব খান মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
ফেরদৌস কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার তারকা ফেরদৌস মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ফেরদৌসের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে ফেরদৌসের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে ফেরদৌসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়ক ফেরদৌস মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
শাবনূর কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা শাবনূরের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikoTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে শাবনূরের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা শাবনূর মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
অপু বিশ্বাস খান কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা অপু বিশ্বাসের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: Tiktok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে অপু বিশ্বাসের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে আপুর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে অপুর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মিশা সওদাগর কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত খলনায়ক মিশা সওদাগরের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মিশার মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে মিশার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে মিশার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার কার্যক্রমের পোস্ট প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, খলনায়ক মিশা সওদাগর মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
ডিপজল কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত খলনায়ক ডিপজলের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ডিপজলের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে ডিপজলের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে ডিপজলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, খলনায়ক ডিপজল মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
কাবিলা কি মারা গেছেন?
ঢালিউডের আরেক পরিচিত মুখ এক সময়ের জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা কাবিলা মারা যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখান (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ডিপজলের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, কমেডি অভিনেতা কাবিলা মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
বুবলি কি মারা গেছেন?
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলির মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বুবলির মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে বুবলির মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে বুবলির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের পোস্ট প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, চিত্রনায়িকা বুবলি মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।
মুশফিক ফারহান কি মারা গেছেন?
ছোটপর্দার তারকা অভিনেতা মুশফিক ফারহানের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot: TikTok
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ফারহানের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। টিকটকে ফারহানের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের পরবর্তী সময়ে ফারহানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তার কার্যক্রমের ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, উক্ত তারকাদের মৃত্যু নিয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়।
মূলত, বিনোদন অঙ্গণের তারকাদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে সূত্র ও প্রমাণবিহীন নানা ধরনের তথ্য প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়। গত কিছুদিন ধরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে Sumon Hosen নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা শাবনূর, অপু বিশ্বাস, বুবলি, খলনায়ক মিশা সওদাগর, ডিপজল, কমেডি অভিনেতা কাবিলা এবং ছোটপর্দার অভিনেতা মুশফিক ফারহানের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত তারকাদের কেউই এখন পর্যন্ত মারা যাননি। মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত তাদের কারো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত তারকাদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে সচল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় নির্ভরযোগ্যকোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারকাদের মৃত্যুর ভুয়া দাবি টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন তারকাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা শাবনূর, অপু বিশ্বাস, বুবলি, খলনায়ক মিশা সওদাগর, ডিপজল, কমেডি অভিনেতা কাবিলা এবং ছোটপর্দার অভিনেতা মুশফিক ফারহান মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো ভুয়া এবং বানোয়াট।
সম্প্রতি, “২০২২ সালে মাশরাফি বিন মোর্তজার সম্পত্তির পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, “২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় মাশরাফি বিন মোর্তজার উল্লেখিত সম্পত্তির পরিমাণ ৯ কোটি ১৫ লাখ। ২০২২ সালে সম্পত্তির পরিমাণ ৫১০ কোটি।”
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাশরাফি বিন মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা শীর্ষক তথ্যটি সঠিক নয় বরং কতিপয় অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রচারিত পুরোনো ভিত্তিহীন তথ্যটি নতুন করে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, কিছু অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের দেওয়া ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর ভারতীয় ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকট্র্যাকারে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশর শীর্ষ ১০ ধনী ক্রিকেটারের তালিকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করে। সেখানে তারা মাশরাফি মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভিত্তিহীন কিছু ওয়েবসাইটের বরাতে উল্লেখ করার পর সেসময় তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর সংবাদের সূত্রের গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তারা দুঃখপ্রকাশ করে সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিয়ে।
প্রকৃতপক্ষে মাশরাফি বিন মোর্তজার বর্তমান প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ কত তা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে মাশরাফি মোর্তজার সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি শীর্ষক দাবিটি যে সূত্র থেকে এসেছে সেটি যে অনির্ভরযোগ্য এবং ভিত্তিহীন তা ২০২২ সালে ইন্টারনেটে একই দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আলোচিত এই দাবি নিয়ে সেসময় রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ইরাকের কারবালা শহরে ধারণ করা।
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটির ১৬ সেকেন্ড থেকে ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকুর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করে ভিডিওটি সম্পর্কে কারবেলার একই তথ্য জানা যায়।
Screenshot: Youtube
পরবর্তী অনুসন্ধানে Tuwairij’s run এবং Hussein শব্দ দুটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইরানের সংবাদ সংস্থা Iran Press এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ‘Tuwairij run’ takes place in Holy city of Karbala, Iraq শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Iran Press
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রতিবছর মহররমের ১০ম দিনে ইরাকের কারবালা শহরে ইমাম হোসাইন (আ.) এর পরিবার এবং সঙ্গীদের দুঃখ ও কষ্টের কথা স্মরণ করে কালো পোশাকধারী শোকার্ত তীর্থযাত্রীরা তুওয়াইরিজ দৌঁড় পালন করে থাকেন। এটি মূলত হাঁটা এবং দৌড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়কে নির্দেশ করে যা উদ্বেগ, ভয় ও উত্তেজনা থেকে বেরিয়ে আসে।
Screenshot: Iran Press
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইমাম হোসাইনের মাজারের প্রবেশদারের একটি ছবি পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির দরজার মিল পাওয়া যায়।
Place Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের ভিডিও নয়।
মূলত, প্রতিবছর মহররমের সময় ইরাকের কারবালায় তীর্থযাত্রীরা ইমাম হোসাইন (আ.) এর পরিবার এবং সঙ্গীদের দুঃখ কষ্টের কথা স্মরণ করে তুওয়াইরিজ দৌড় পালন করে থাকেন। এসময় তীর্থযাত্রীরা ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে ইমাম হোসাইনের মাজারে যান। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও সম্প্রতি আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ইরাকের কারবালায় আশুরা উদযাপনের ভিডিওকে আল আকসা মসজিদের জুমার নামাজের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।