সম্প্রতি ‘হাইকোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি কিংবা এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এসম্পর্কিত কোনো ঘোষণাও দেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ০২ আগস্ট Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাইকোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে বলা হয়, ‘এবার হাইকোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিলো নতুন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আদালতের রায়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আগামী তিন মাসের মধ্যেই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের ঘোষণা দেন।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লিখিত দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
তাছাড়া, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে বিল পাশ হওয়ার পূর্বে এধরণের বিষয়ে বিচার বিভাগ কিংবা রাষ্ট্রপতির সরাসরি হস্তক্ষেপেরও সুযোগ নেই।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘হাইকোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলো রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক শিরোনাম এবং ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই এবং আলোচিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ইন্টারনেটে একাধিক ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, হাইকোর্টের নির্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- BBC Bangla: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা
- Laws of Bangladesh: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-30072.html
- Rumor Scanner’s Own Analysis