রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেনি বরং কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত ভিত্তিহীন দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে কি না- তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: Google
অনুসন্ধানের মাধ্যমে দৈনিক ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মে “ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন কারা, যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
Screenshot: Daily Star
পরবর্তীতে তথ্যটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল বা কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: U.S.Department Of the Treasury
পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from Twitter
সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
পাশাপাশি, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
কি আছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নতুন ভিসা নীতিতে?
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, নতুন এই ভিসা নীতিমালার আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
Screenshot: US Embassy Bangladesh
মূলত, গত ২৫ মে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির আওতায় এখনো কাউকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এমন একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে যেসব পোস্টে উল্লিখিত দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে সেসব পোস্টে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ছাড়াই আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক ভিত্তিহীন দাবিটি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ডিএমপি’র গুলশান থানার ওসির মার্কিন ভিসা বাতিল এর ভুল দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারলেন না সালমান এফ রহমান. আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে সালমান এফ রহমানের বিষয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে UK Kashba TV নামে একটি সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিওটির শুরুতেই উপস্থাপক বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেকিং নিউজ নিয়ে এসেছি। হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ বেক্সিমকোর মালিক এফ সালমান রহমানকে আটকে দিয়েছে বলে আমাদের কাছে গভীর জায়গা থেকে আমাদের কাছে একটি তথ্য এসেছে। আমরা আশা করছি এই তথ্যটি ভুল হবে না, সঠিক হবে।’
অর্থাৎ সালমান এফ রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্র UK Kashba TV ও তার দাবির পক্ষে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে না পারলেও তাকে সূত্র উল্লেখ করেই পরবর্তীতে সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকে দেওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়।
এছাড়া দাবিটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সালমান এফ রহমান যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের একজন চলমান সংসদ সদস্য, তাই স্বাভাবিকভাবেই দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক তাকে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হওয়ার বিষয়টি অনুমেয়।
সালমান এফ রহমান প্রকৃতপক্ষে কোথায় ছিলেন?
রিউমর স্ক্যানার টিম দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অবস্থান নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে সৌদি আরব যান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
পোস্টটির বিস্তারিত বিবরণীতে দেখা যায়, ছবিটি হজ পালন শেষে গত ১০ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ২৮ জুন) মিনার রয়েল গেস্ট প্যালেসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাথে তোলা।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন এবং এই সময় সেখানে সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসেবে হজের পুরো সময়টাই তার সঙ্গে ছিলেন এবং একই সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে,দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক সালমান এফ রহমানকে আটকে দেওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
Screenshot: Bangla Vision Youtube
পাশাপাশি এই প্রতিবেদন লেখার সময়েই ফেসবুকে আরেকটি দাবি (আর্কাইভ) ছড়িয়ে পড়ে যে, ‘দুবাই নয় আবুধাবি থেকেই ইতিহাদের যুক্তরাষ্ট্র গামী ফ্লাইটের গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সালমান এই রহমানকে. উনি ইতিহাদেই হজ্জ্ব করতে গেছিলেন।’
মূলত, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক আটকে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ফেসবুকে প্রচারিত ডিজিটাল ব্যানারটিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের দিকে ইরানে রেজা পারাসতেশ নামের এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যে কিনা দেখতে লিওনেল মেসির মতো। সে নিজেকে লিওনেল মেসি দাবী করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কও করেছিলো। সেই নারীরা ভেবেছিলেন মেসির সাথে এসব কাজ করছেন!
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই শুধুমাত্র একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক টুইটের পর এই দাবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে সোর্স হিসেবে Marca নামটি উল্লেখ পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে স্প্যানিশ স্পোর্টস ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Marca এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৫ জুন ‘The Iranian who pretended to be Messi in order to sleep with 23 women’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Marca
প্রতিবেদনে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ মেসি সেজে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে দাবি করা হলেও সেখানে কোনো সূত্র বা সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানে তুরস্কের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Teyit এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ জুন ‘Did Messi loolalike Reza Parastesh trick 23 women into sleeping with him?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Teyit
প্রতিবেদনে এবিষয়ে প্রথম ছড়ানো দাবি হিসেবে Insolite TV নামের একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্টের কথা বলা হয়। তবে বর্তমানে টুইটারে এই অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় নেই।
২০১৯ সালের ২৩ জুন Insolite TV নামের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রচারিত দাবির স্ক্রিনশট দেখুন এখানে।
Screenshot: Twitter
Teyit এর প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, Insolite TV নামের এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে প্যারোডিধর্মী টুইট প্রচার করেছে। মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত টুইটিও তারই অংশ।
উক্ত দাবির বিষয়ে মেসির মত দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ এর বক্তব্য
প্রচারিত দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot- Instagram
উক্ত ভিডিও বার্তায় তিনি তার বিরুদ্ধে প্রচারিত বিষয়টিকে অস্বীকার করেন এবং এতে তিনি এবং তার পরিবারের সম্মানহানী হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো মাধ্যমে ইরানি যুবক রেজা পারাসতশের বিরুদ্ধে মেসি সেজে নারীদের সাথে প্রতারণার বিষয়ে ওই কথিত নারীদের কেউ অভিযোগ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, এই দাবিটি তথ্যসূত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছে এবং এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে এই দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং কথিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নারীদের কেউ রেজা পারাসতেশের বিষয়ে অভিযোগ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ জুন Insolite TV নামের একটি প্যারোডি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবিটি সর্বপ্রথম ছড়ায়। তবে বর্তমানে টুইটারে এই অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় নেই।
প্রসঙ্গত, মেসির সাথে চেহারার হুবহু মিল থাকায় সেলিব্রিটি তকমা পায় ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ। মেসি সেজে ভক্তদের সাথে সেলফি তোলা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মেসি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমনকিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মেসির মতো দেখতে ইরানি যুবক রেজা পারাসতেশ নিজেকে মেসি দাবি করে ২৩ জন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের অবসর ঘোষণার পর ‘তামিমকে আজ রাত ৮ টায় ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তামিমও ঢাকার জন্য রওনা দিয়েছেন’ শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুক সহ দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অবসর ঘোষণার দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামিমকে গণভবনে আমন্ত্রণ করেননি বরং সেদিন রাত ৮ টার পর থেকে রাত ১০ টারও বেশি সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া, তামিম ইকবালও সেদিন তার চট্টগ্রামের বাসাতেই ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, পরবর্তীতে ৭ জুলাই (শুক্রবার) অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলতে তামিমকে আমন্ত্রন জানান প্রধানমন্ত্রী এবং ঐদিন দুপরেই প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবনে যান তামিম ইকবাল। তবে, বেশকিছু ফেসবুক পেজ থেকে কোনো প্রকার সূত্র উল্লেখ ছাড়াই গতদিন রাত ৮ টায় ডিনারের আমন্ত্রণ শীর্ষক দাবিটি প্রথম প্রচার করা হয়েছিল।
ভুয়া তথ্যের সূত্রপাত যেভাবে
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে ৬ জুলাই বিকাল ৫ টা ৪৫ মিনিটে খেলার পাতা নামে একটি ফেসবুক পেইজে এই সম্পর্কিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Crowdtangle.com
তবে পোস্টটি বিশ্লেষণ করে এই দাবির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
পরবর্তীতে উল্লিখিত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করেও উক্ত তথ্যের কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত বাক্যগুলোর প্রায় হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
এছাড়া প্রতিবেদনগুলোতে সূত্র হিসেবে ‘জানা গেছে।’ এমন অনির্ভরযোগ্য শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো সূত্রহীন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ জুলাই সন্ধ্যায় কোথায় ছিলেন?
গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩ তম বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭ টা ৩২ মিনিটে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনটির লাইভ দেখুন এখানে।
Screenshot: BTV Facebook live
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তামিম ইকবালকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানানোর দাবি করা হলেও ঐ সময় প্রধানমন্ত্রীই স্বয়ং সংসদ অধিবেশনে ব্যস্ত ছিলেন।
৬ জুলাই তামিমের অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
দাবিটি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সময়ে গত ৬ জুলাই ৬ টা ৪৪ মিনিটে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর স্পোর্টস এডিটর আরিফুল ইসলাম রনির একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ariful Islam Roney facebook post
পোস্টটিতে তিনি লিখেন, ‘ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, তামিমকে নাকি প্রাইম মিনিস্টার ডিনারে ডেকেছেন, তামিম নাকি রওনাও দিয়েছেন ঢাকার পথে… অথচ তামিম চট্টগ্রামে নিজের বাসায় আছেন… পরিবারের সঙ্গে আছেন… কোনো কল পাননি, এরকম কিছুই হয়নি…ভাইরে ভাই, জাতি একখান আমরা।’
তার এই পোস্ট থেকে জানা যায়, তামিম ৬ জুলাই চট্টগ্রামেই অবস্থান করছিলেন।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোয় কর্মরত একাধিক ক্রীড়া সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা প্রত্যেকেই বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করে জানান, তামিম ৬ জুলাই চট্টগ্রামেই অবস্থান করছিলেন।
এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তামিম ইকবাল চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার (৭ জুলাই) সকালে ঢাকায় আসেন তামিম। পরবর্তীতে দুপুর ৩টার দিকে গণভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও স্ত্রী আয়েশা ইকবালসহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং সেখানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
পাশাপাশি সাক্ষাৎ শেষে তামিম নিজেই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুপুরবেলায় আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। উনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি।’
Screenshot: The Daily Star
তবে এই প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তামিমকে এর আগের দিন অর্থাৎ ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাত ৮ টায় ডিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। বরং প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, তামিম ঢাকায় এসেছিলেন ৭ জুলাই, তার অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পরেরদিন সকালে এবং তামিম নিজেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তাকে দুপুরবেলা অর্থাৎ ৭ জুলাই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এছাড়া অনুসন্ধানের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক সমকাল ও খেলাধুলা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল বিডি ক্রিক টাইমেও ৬ জুলাই তামিমকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাত ৮ টায় ডিনারে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার বিষয়টিকে গুজব উল্লেখ করে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরেই তামিম ইকবাল অবসর ভেঙে পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেন।
মূলত, বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এরই প্রেক্ষিতে বিকাল নাগাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, বৃহস্পতিবার রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডিনার করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ডিনারে অংশগ্রহণ করতে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে উক্ত দাবিটি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও পরবর্তীতে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তামিম ইকবালকে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণের দাবিকৃত সময়ে তামিম চট্টগ্রামে ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ছিলেন।
সুতরাং, বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তামিমকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানানো ও তামিমের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশের জন্য ঘূর্ণিঝড় একটি আতঙ্কের নাম। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এ সময় জনজীবনের পাশাপাশি স্থাপনার বহু ক্ষয়ক্ষতির উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময়টায় খেয়াল করলে হয়ত দেখবেন, জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কেন এমন নির্দেশনা?
সম্প্রতি বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। সে সময় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জেটি থেকে পণ্যবাহী ১৮টি জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিগন্যাল-৫ এ বলা আছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
জেটি থেকে কেন জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা জানতে চাইলে বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বড় জাহাজগুলো জেটিতে থাকলে ঢেউয়ের কারণে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সাগরে জাহাজগুলো ইঞ্জিন চালু রেখে ঢেউ বা ঝড়ের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে ভাসতে পারে। এ জন্য সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বড় জাহাজগুলো সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Screenshot: Prothom Alo
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন এর মতে জাহাজ সাগরে নিরাপদ থাকে। সুপার সাইক্লোন বা হেভিং টো হলে সাগরে জাহাজ ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে, ঢেউ চলে যাওয়ার পর পানিতে আছড়ে পড়বে কিন্তু ডুবে যাবে না। এতে জাহাজে থাকা মালামালও সুরক্ষিত থাকবে।
এসময় জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠিয়ে না দিলে বিপদ বাড়ে। কেননা বর্হিনোঙরে সাধারণ গভীরতা ১০ মিন্টার বা তার আশপাশে। জোয়ারের পানিতে জলোচ্ছ্বাসের ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তখন ঢেউয়ের ধাক্কায় জাহাজ উপরে উঠে যায়। পরবর্তীতে জাহাজ যখন নিচে নামে সেসময় জাহাজের তলা ফেটে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠানোর এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাই এ আশঙ্কা এড়াতে সাধারণত বন্দর থেকে জাহাজগুলোকে সমুদ্রে ২ হাজার মিটার বা তার বেশি গভীরতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় বন্দরের সুরক্ষার জন্যও জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যা চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের কথাতেই স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাহাজ বন্দরে থাকলে তীব্র ঝড়ের ফলে সৃষ্ট ঢেউয়ে জাহাজগুলো একটা আরেকটার সাথে প্রচণ্ড ধাক্কা লেগে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এতে বন্দরে রাখা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়াও এতে বন্দরের জ্বালানি রাখার স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়। এতে বহুমানুষের প্রাণনাশের সম্ভবনা তৈরি হতে পারে।
জাহাজ ঠিকমতো চলাচলের চ্যানেলের সুরক্ষা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি বন্দরে জাহাজ চলাচলের জন্য আলাদা একটা চ্যানেল থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে জাহাজগুলো সমুদ্রে পাঠানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, ঢেউ বা তীব্র গতির ঝড়ের ফলে বড় জাহাজ বন্দর চ্যানেলে ডুবে গেলে সেই জাহাজ না সরানো পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ সরানো বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
২০১৭ সালে চট্রগ্রামের আনোয়ারা সৈকতে ক্রিস্টাল গোল্ড নামে একটি জাহাজ আটকা পড়ে। পরবর্তীতে সেটিকে আর সমুদ্রে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের বিশালাকৃতির জাহাজটি দীর্ঘদিন আটকে থাকায় প্রায় ৫০০ মিটার জায়গায় পলি জমে যায়৷ পরবর্তীতে ২০২১ সালে জাহাজটি কেটে ফেলা হয়।
Screenshot: The Daily Star
বিভিন্ন স্থাপনার সুরক্ষার ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠানো হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্রে জাহাজ পাঠানো না হলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর মাঝখানের একটি বড় অংশ ভেঙে যায়। সেসময় একটি জাহাজের ধাক্কায় সেতুর মাঝখানের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
Screenshot: bdnews24.com
এ ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে সমুদ্রে জাহাজ পাঠানোর নিয়মটি কঠোরভাবে পালন করা হয়।
গভীর সমুদ্রে জাহাজ পাঠানো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন?
ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্রে জাহাজগুলোকে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “Cyclone Preparedness Plan অনুযায়ী আমরা যখন সাইক্লোন আসার পূর্বাভাস পাই তখন ওই প্ল্যান অনুযায়ী আমার সব রকম ব্যবস্থা নেই। সিগন্যাল বাড়লে কী রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে Cyclone Preparedness Plan এ সবকিছু বলা আছে। কখন জাহাজগুলো বের হয়ে যাবে, কখন জাহাজগুলো ফেরত আনবো সবকিছু। এখানে আমাদের কিছু নিজস্ব এলার্ট আছে। সিগন্যাল- ৫ এ গেলে আমরা জেটি এবং চ্যানেলের সুরক্ষার্থে জেটির ভেতরের জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেই। যদি না পাঠাতাম, তাহলে ঝড়, তুফানের কারণে জাহাজগুলো জেটির ক্ষতি করবে নয়তো চ্যানেলে ডুবে গিয়ে চ্যানেল ব্লক হয়ে যেতে পারে।”
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ‘বড় বড় ওয়েভ বা ব্রেক ওয়াটার জোন থেকে ঢেউটা প্রডিউস হয়। আমরা যদি ব্রেক ওয়াটার জোনে গভীরে সমুদ্রে জাহাজগুলোকে পাঠিয়ে দিতে পারি তাহলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে। আমরা যদি জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে পাঠাই তাহলে জাহাজগুলো সেইফ থাকবে।’
এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের সব পণ্যবাহী বড় জাহাজে দুটি ইঞ্জিন কার্যকর থাকে। দুই ইঞ্জিন চালিয়ে অনেক বড় বড় ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারে। নাবিকরা ঝড়ের সময় একটি বিশেষ কৌশলে নির্দিষ্ট গতিতে জাহাজ চালিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখেন। এতে বন্দরের চেয়ে গভীর সমুদ্রে বেশি সুরক্ষিত থাকে জাহাজগুলো।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন জাহিদুল করিম আকন্দ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগর বা আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ে গতিপথের অঞ্চল ছাড়া সাধারণত গভীর সমুদ্রের চাইতে তীরবর্তী অঞ্চলের পানি বেশি ঝঞ্জাক্ষুব্ধ হয়। এত বড় জাহাজগুলো জেটিতে বাঁধা থাকলে প্রচণ্ড ঝড়ে একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়ে বা ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। শুধু জাহাজই নয়, শক্তিশালী এই ধাক্কায় বন্দরেরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বন্দরের চ্যানেলে যদি কোনো জাহাজ ডুবে যায় তবে বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এজন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী ল্যান্ড লক এরিয়া বা প্রাকৃতিকভাবে বেষ্টিত সুরক্ষিত নৌবন্দর না থাকলে বিশ্বের সর্বত্রই ঝড়ের সময় বড় জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া। আর তুলনামূলক মাঝারি ও ছোট জাহাজ ও জলযানকে তীরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়।’
সুতরাং, জাহাজের সুরক্ষা, বন্দরের সুরক্ষা, চ্যানেলের সুরক্ষা এবং স্থাপনার সুরক্ষা সহ অন্যান্য সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই ঘূর্ণিঝড়ের সময় জাহাজগুলোকে সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে Mo Rahman Masum নামের একটি ফেসবুক পেইজে গত ৩ জুলাই ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সালমান এফ রহমান (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Mo Rahman Masum Facebook Post
ভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যেতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রগামী প্লেনের গেইট থেকে ফেরত পাঠিয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন। উনি হজ করে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন, তবে এমিরেটাস বিমানের গেইট থেকে উনাকে দেশে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।’
কিন্তু ভিডিওতে এসব দাবির পক্ষে তিনি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। বরং ভিডিওটিতে তিনি UK Kashba TV নামের একটি চ্যানেলের ভিডিওকে (আর্কাইভ) তার দাবির পক্ষে সূত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন।
Screenshot: UK Kashba TV
তবে অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটিতেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিপরীতে ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওতে উপস্থাপক দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকে দিয়েছে বলে গভীর জায়গা থেকে একটি তথ্য এসেছে। তবে তিনি আশা করছেন, তার এই তথ্যটি ভুল হবে না, সঠিক হবে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তিও তার দাবির পক্ষে কোনো সুনিশ্চিত তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
এছাড়া দুই ব্যক্তির কেউই তাদের ভিডিওতে সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি।
সালমান এফ রহমান কি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়েছেন?
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ৬ জুন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গত ৬ জুন বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
Screenshot: Daily Prothom Alo
বৈঠকটি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বক্তব্য ছিল। সে সব বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে সালমান এফ রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে ভিন্ন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সালমান এফ রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: U.S. Department of the treasury
পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও সালমান এফ রহমানের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ফেসবুক পেইজ ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজেও এমন কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দাবিটি গুজব হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
মূলত, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ায় দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দিয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সালমান এফ রহমান নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ব্রাজিলের ফুটবলার ফিলিপ কুতিনহো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার বিষয়ে তার ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, কুতিনহো তার ফেসবুক পেজের স্টোরিতে একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। প্রশ্নটি এমন, বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড়কে তিনি চেনেন কিনা। জবাবে কুতিনহো জানান, তিনি জামাল ভূঁইয়াকে চেনেন এবং জামাল ভূঁইয়া তার প্রিয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিপ কুতিনহো জামাল ভূঁইয়া প্রসঙ্গে তার ফেসবুক পেজে কোনো স্টোরি দেননি বরং কুতিনহোর নামে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজ থেকে উক্ত ফেসবুক স্টোরিটি দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট থেকে পাওয়া সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘P.Coutinho’ নামক পেজটিতে (আর্কাইভ) আলোচিত স্টোরিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot from Facebook
পেজটির ‘About’ সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্টই লেখা রয়েছে যে পেজটি কুতিনহোর একটি ফ্যান পেজ।
Screenshot from Facebook
পরবর্তীতে পেজটির ট্রান্সপারেন্সি (আর্কাইভ) সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় পেজটি ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট তৈরি করা হয়েছে।
আরো পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পেজটি বাংলাদেশি একজন এডমিন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot from Facebook
অর্থাৎ, কুতিনহো জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে ফেসবুকে যে স্টোরি দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে তা কুতিনহোর নামে চালু থাকা একটি ফ্যান পেজের স্টোরি।
অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Philippe Coutinho’ নামে কুতিনহোর মূল পেজটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পেজটিতে ২০১৫ সালের ০৭ আগস্ট এক ভিডিও বার্তায় (আর্কাইভ) কুতিনহো নিজেই এই পেজটি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বলে জানান।
Screenshot from Facebook
উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কুতিনহো সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি তার পেজে সক্রিয় ছিলেন। সেদিন তিনি তার পেজের Bio সেকশন আপডেট করে জানান, এটি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফেসবুকে আর কোনো পোস্ট করেননি তিনি।
Screenshot from Facebook
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিপ কুতিনহোর ফেসবুক পেজ ছাড়াও অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে বাংলাদেশি ফুটবল খেলোয়াড় জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো পোস্ট খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার কুতিনহো ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলার জামাল ভুঁইয়াকে চেনেন বলে জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ‘P.Coutinho’ নামক ফেসবুক পেজটি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা ফিলিপ কুতিনিহোর আসল পেজ নয় বরং কুতিনহোর নামে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের স্টোরিকে আসল ভেবে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ঢাকা সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সেই সময় চেষ্টা করেছিলেন মার্টিনেজের সাথে দেখা করতে কিন্তু তিনি দেখা করতে পারেননি বলে দাবি এসেছে গণমাধ্যমে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা ফিলিপ কুতিনহোর ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার কুতিনহো ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলার জামাল ভুঁইয়াকে চেনেন বলে জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেপালে গত জুনে ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং নেপালের পূর্বের বন্যার ঘটনার পুরোনো ছবিকে দেশটির সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই- ১
Screenshot source: Dhaka Post
নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয় জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দেশীয় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট, সংবাদ প্রকাশ, সময় ট্রিবিউন।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফরাসি সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
AP নেপালের পুলিশের মুখপাত্র বসন্ত বাহাদুর কুনওয়ারের বরাদ দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে একশোর বেশী মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল।
Screenshot source: AP
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, একটি গণমাধ্যম উক্ত ছবিটি সূত্র হিসেবে NDTV’র নাম উল্লেখ করেছে।
পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ জুন প্রকাশিত নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
NDTV তাদের প্রতিবেদনে এই ছবিটি যুক্ত করে ক্যাপশনে “প্রতীকী” ছবি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিটি সাম্প্রতিক ঘটনার সময়ের নয়।
Screenshot source: NDTV
এ বিষয়ে তাই আরো অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৮ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়।
Reuters এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধসে ভারত এবং চীনা নাগরিকসহ অন্তত ২৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
Screenshot source: Reuters
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
ছবি যাচাই – ৩
Screenshot source: ManobKantha
নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয় জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দেশীয় গণমাধ্যম দৈনিক মানবকণ্ঠ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেপালের মূলধারার গণমাধ্যম THE KATHMANDU POST এর ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায়।
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ভারী বর্ষণের ফলে নেপালে বন্যার সৃষ্টি হয়। সেইসময় নেপালের দারচুলা জেলার মহাকালী নদীর ছবি এটি।
Screenshot: The Kathmandu Post
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলোর ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কতিপয় গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখেনি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, সম্প্রতি নেপালে ভারী বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নেপালের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, সম্প্রতি নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ২৮ এপ্রিল মূল ধারার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল আই “বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী সম্মানসূচক ড. বাংলাদেশের রুশো” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে দাবি করে, “বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সে বিজ্ঞানে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলো বাংলাদেশের মাহির আলী রুশো। যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনির্ভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড স্যোশ্যাল সায়েন্স তাকে এই ডিগ্রি দিয়েছে।”
একইদিন চ্যানেল আই এর ইউটিউব চ্যানেলও এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গত ১০ মে আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনও বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন বাংলাদেশের রুশো শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করে, বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্তির গৌরব এখন বাংলাদেশের হাতে। মাত্র ১৪ বছর ১০ মাস বয়সেই সেই সম্মান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের মাহের আলী রুশো, অর্থাৎ দশম শ্রেণী পড়ুয়া রুশো এখন ড.মাহের আলী রুশো। ডিসটেন্টস লার্নিং ও জিনিয়াস অলিম্পিয়াডে গবেষণা পত্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্স রুশোকে প্রদান করেন সম্মানসূচক এই ডক্টরেট ডিগ্রি । ২৫ এপ্রিল আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস এক ইমেইলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একই দাবিতে আরেক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডিজি বাংলা।
একই দাবিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন AP, Forbes Mexico।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহের আলী রুশো যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পাননি বরং ভুয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে হংকং থেকে পরিচালিত নামসর্বস্ব একটি কথিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থের বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন রুশো।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মাহের আলী রুশোর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের গত ০৬ মে এর আর্কাইভ সংস্করণে আলোচিত ডক্টরেট ডিগ্রিটির সার্টিফিকেট এবং এ সংক্রান্ত একটি চিঠি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
সার্টিফিকেটে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের লোগো রয়েছে যারা যৌথভাবে রুশোকে এই সম্মাননা দিয়েছে।
সার্টিফিকেটের তথ্যমতে, রুশোকে গত ২৫ এপ্রিল Doctor of Science নামক এই সম্মাননা দেওয়া হয়। QAHE এর পক্ষ থেকে গত ২৯ এপ্রিল লেখা এক চিঠিতে রুশোর এই সম্মাননার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে জনস্বাস্থ্য ও সমাজের জন্য অবদান রাখার স্বরূপ রুশোকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে AUBSS এবং QAHE এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
AUBSS কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়?
রুশোকে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামক যে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইট এর About us পেজ থেকে জানা যাচ্ছে, এটি একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় বলে দাবি করছে তারা, যারা ডিসট্যান্স লার্নিং এর সুযোগ দিয়ে থাকে।
কীভাবে এই ডিসট্যান্স লার্নিং এর কাজটি চলে তা জানতে এ সংক্রান্ত পেজে গিয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। দেখুন এখানে।
ওয়েবসাইটের একটি পেজে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে Prof. David Ackah নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে একই নামে ঘানার একজন ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়, যার লিংকডইন অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে লেকচারার হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তবে তার প্রোফাইলে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) এর নাম উল্লেখ নেই। একই নামে ভিন্ন কোনো ব্যক্তির খোঁজ না পেয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে Prof. David Ackah এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ওয়েবসাইটটির Faculty Members সেকশনে এডুকেটর হিসেবে চার ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। এরা হলেন Mr. Yeoh Wee Win, Dr. Deborah S. Brockman, Ms. Mykim Tran এবং Dr. Joseph J. LeVesque।
Screenshot source: AUBSS
এর মধ্যে Mr. Yeoh Wee Win এর লিংকডইন অ্যাকাউন্টে এডুকেটর হিসেবে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) এর নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে Ms. Mykim Tran এর লিংকডইন অ্যাকাউন্ট এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে জানতে Ms. Mykim Tran এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার পক্ষ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া Dr.Deborah Brockman নামে কোনো ব্যক্তির লিংকডইন বা নির্ভরযোগ্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব মেলেনি।
তালিকায় Dr. Joseph J. LeVesque নামে চতুর্থ যে ব্যক্তির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, তিনি গেল বছরের (২০২২) জানুয়ারিতে মারা (১, ২) গেছেন। এর পূর্বে তিনি AUBSS এ এডুকেটর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পরবর্তীতে তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির Contact Us সেকশনে গিয়ে একটি ঠিকানা (8 The Green STE A, Dover, DE 19901) ও ফোন নম্বর (302-335-7477) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: AUBSS
উক্ত লোকেশন গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি The Delaware Company House এর মালিকানাধীন। উক্ত ঠিকানার আশেপাশের স্থাপনায় American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
Screenshot collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে ফোন নম্বরটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ShipToBox নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ফোন নাম্বার।
Screenshot source: BBB
আরও অনুসন্ধান করে কথিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) আরেকটি ঠিকানা (444 Alaska Avenue Suite, Los Angeles, CA, United States, 90503) খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ঠিকানার মিল নেই।
Screenshot source: Facebook
উক্ত ঠিকানাটি গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি Shipito নামে একটি পণ্য পরিবহন কোম্পানির ওয়্যারহাউজ। উক্ত ঠিকানা এবং এর আশেপাশের স্থাপনায় American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব মেলেনি।
Screenshot source: Google Street View
AUBSS এর ফেসবুক পেজটির Page transparency (আর্কাইভ) সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ০২ এপ্রিল চালু করা পেজটি হংকং থেকে এক ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot source: Facebook
প্রতিষ্ঠানটির ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৯ সালের পহেলা এপ্রিল। এর পরদিনই ফেসবুক পেজটি খোলা হয়৷
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামক কথিত আন্তর্জাতিক সংগঠনটির ফেসবুক পেজের Page transparency (আর্কাইভ) সেকশনও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর চালু করা পেজটি হংকং থেকে তিন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot source: Facebook
কিন্তু সংগঠনটির ওয়েবসাইটে তাদের লোকেশন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানা (1406 N. Dupont Hwy. Suite # HK0033 New Castle DE 19720) উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত ঠিকানাটি গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি Fedx নামে একটি পণ্য পরিবহন কোম্পানির দোকান। উক্ত ঠিকানার আশেপাশের স্থাপনায় International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই।
Screenshot collage: Rumor Scanner
সংগঠনটি ডেলাওয়ার রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন করা বলে দাবি করা হলেও ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় সংগঠনটির কোনো হদিস মেলেনি।
সংগঠনটির ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এর পরদিনই ফেসবুক পেজটি খোলা হয়৷
AUBSS এর কি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় দেশটিতে অনুমোদিত তা সার্চ করে দেখা যায়। আমরা American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামটি সেখানে সার্চ করে এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের সাথে কথা বলেছে। দেশটির ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের সহযোগী অধ্যাপক রাগিব হাসান রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন,
“এই বিশ্ববিদ্যালয়ের .edu ডোমেইনও নেই। এটির ওয়েবসাইট দেখে এটি একটি শতভাগ জাল সাইট বলে মনে হচ্ছে।”
রুশোকে কি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে অর্থ খরচ করতে হয়েছে?
মাহের আলী রুশোকে AUBSS এর সাথে যৌথভাবে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানকারি আরেক প্রতিষ্ঠান International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে আবেদনকারিদের ১২০০ ডলার খরচ করতে হবে৷
Screenshot collage: Rumor Scanner
একই ওয়েবসাইটের আরেকটি পেজে এই ডিগ্রির জন্য আবেদন করার নিয়মাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শুরুতে একটি নমিনেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর তাদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হবে। পরবর্তীতে যোগ্য বিবেচিত হলে আবেদনকারিকে ফি এর রশিদ পাঠানো হবে। পেপালের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করার ৭-১০ দিনের মধ্যে ইমেইলে ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ড এবং ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে অ্যাওয়ার্ডের হার্ডকপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে রিউমর স্ক্যানার টিমের আবেদন, অতঃপর…
রুশোর ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন সদস্য ছদ্মবেশে গত ২০ জুন “ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে চায়” জানিয়ে এর জন্য কী কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে তা জানতে চেয়ে QAHE কে ইমেইল করে। মেইলে আমরা জানাই, হিরণ নামে ১২ বছর বয়সী একজন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিটি পেতে আগ্রহী। একইদিন ফিরতি ইমেইলে তারা হিরণের সিভি পাঠাতে বলে। তবে আমরা পরবর্তীতে আর তাদের সাথে যোগাযোগ করিনি।
কিন্তু এর দিন ছয়েক পর, গত ২৮ জুন QAHE থেকে রিউমর স্ক্যানার টিমের উক্ত সদস্যকে মেইল করে জানানো হয়, হীরণের বয়স কম হওয়ায় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সে Young Achiever Award 2023-2024 এর জন্য আবেদন করতে পারে।
এই বিষয়টি কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইমেইলে তা লক্ষ্য করুন, “We suggest that we could apply for our Young Achiever Award 2023-2024.”
যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “আমরা পরামর্শ দেই যে আমরা আমাদের ইয়াং অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২০২৪ এর জন্য আবেদন করতে পারি।”
Screenshot source: Email from QAHE
একই ইমেইলে উক্ত অ্যাওয়ার্ডের ফি ৪০০ মার্কিন ডলার এবং এর সাথে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ফি পরিশোধ করার পর আমাদেরকে ইমেইলের মাধ্যমে ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ড পাঠানো হবে। ওয়েবসাইটে হীরণের নাম এবং খবর প্রকাশ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে হীরণের সিভি পাঠাতে বলা হয় এবং এরপর তারা ফি এর রশিদ পাঠাবে বলে জানায়।
তবে আমরা ফিরতি ইমেইলে জানিয়ে দেই, আমাদের ডক্টরেট ডিগ্রিই প্রয়োজন।
কিন্তু QAHE কর্তৃপক্ষ আমাদের ইমেইলের ভাষা বুঝতে পারেনি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ, তারা পরবর্তীতে যে ইমেইলটি পাঠিয়েছে তাতে শুরুতেই যা লেখা তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে, “আমাদের ইয়াং অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২৪ -এর মনোনয়নের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
এরপর তারা তাদের সংগঠন এবং এই অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে শেষ প্যারায় লিখেছে, অতিমারী চলার কারণে এখন সশরীরে কোনো অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান হবে না।
Screenshot source: Email from QAHE
তবে অতিমারী শেষ হওয়ার ঘোষণা এখনও না এলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বৈশ্বিক যে জরুরি অবস্থা ছিল তার আর নেই এখন। কিন্তু অতিমারীর কারণ দেখিয়ে কোনো অনুষ্ঠান না হওয়ার কথা বলছে QAHE।
এই ইমেইলের জবাবে আমরা QAHE কে আমাদের পাঠানো পূর্বের মেইলটি আবার পড়ার পরামর্শ দিলে তারা জানায়, তাদের একাডেমিক বোর্ড এই নমিনেশন গ্রহণ করতে পারছে না। এরপর আর আমাদের যোগাযোগ হয়নি।
অর্থাৎ, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে QAHE এর কাছে আবেদন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাদের বয়সের কারণ দেখিয়ে অন্য একটি অ্যাওয়ার্ড এবং তার যাবতীয় ফি সম্পর্কে জানিয়েছে। তবে এই ইমেইল চালাচালিতে তাদের ইমেইলে একাধিক শব্দগত এবং বোঝার ভুল লক্ষ্য করা গেছে।
সম্মানসূচক ডক্টরেট পেতে কি ফি দিতে হয়?
রাগিব হাসান বলছিলেন, “প্রকৃত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধুমাত্র বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। সত্যিকার বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করতে কখনো ফি গ্রহণ করবে না। যদি এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান যারা অর্থের বিনিময়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে বলে আপনার সাথে যোগাযোগ করে, তাহলে এটি শতভাগ প্রতারণা। অর্থের বিনিময়ে অমুক জায়গা থেকে কেউ যদি ‘ডক্টরেট’ পায়, তবে তারা হয় খুব বোকা, নয়তো নিজেরাই প্রতারক বলে বিবেচিত হবে।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম মাহের আলী রুশোর সাথে যোগাযোগ করলে তার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে তিনি আমাদের জানান।
এপি-ফোর্বসে অর্থের বিনিময়ে রুশোর বিষয়ে প্রতিবেদন?
মার্কিন সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ (এপি) গত ২৩ মে রুশোর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রুশো সবচেয়ে কম বয়সে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
প্রতিবেদনের শুরুতেই এপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি পেইড কন্টেন্ট যা KISSPR নামক সাইট থেকে নেওয়া। এপির নিউজ স্টাফদের এই কন্টেন্টের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই।
Screenshot source: AP
পরবর্তীতে KISSPR এর ওয়েবসাইটে আলোচিত কন্টেন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
নিচের স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করুন, কন্টেন্টটি জনাব মাহের আলী রুশোই লিখেছেন বলে দেখা যাচ্ছে।
Screenshot source: KISSPR
ফোর্বস মেক্সিকোতে রুশোর বিষয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত ০৪ জুলাই। এই প্রতিবেদনেও রুশোর সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি উঠে এসেছে।
তবে ফোর্বসের এই প্রতিবেদনের লেখক হিসেবে কারো নাম উল্লেখ নেই, লেখকের স্থলে Forbes Content উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষে লেখা রয়েছে, কন্টেন্ট হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয় সেগুলোর দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড ও তাদের মুখপাত্র বা এজেন্টদের এবং ফোর্বস মেক্সিকো-এর অবস্থান এবং সম্পাদকীয় লাইন এ ব্যাপারে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
তবে ফোর্বসের স্টাফ বা সংবাদমাধ্যমটির অথোর কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উক্ত শেষ প্যারাটি উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, ফোর্বস মেক্সিকো’তে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করানো সম্ভব। এমন একটি ওয়েবসাইট পেয়েছি আমরা, যেখানে বলা হচ্ছে, ফোর্বস ম্যাক্সিকোতে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে। এই ধরনের একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনির্ভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড স্যোশ্যাল সায়েন্স বাংলাদেশের মাহির আলী রুশো নামক এক শিক্ষার্থীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নয় এবং এর কোনো স্বীকৃতি বা অনুমোদন নেই। ভুয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ওয়েবসাইটে দিয়ে হংকং থেকে সাইটটির ফেসবুক পেজ পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া, উক্ত কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে যৌথভাবে QAHE নামক যে সংগঠন এই ডিগ্রি দিয়েছে তারাও সাইটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছে। সাইটটির দেয়া তথ্যমতে, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে ১২০০ ডলার খরচ করতে হয়। কিন্তু স্বীকৃতি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানে কোনো অর্থ গ্রহণ করে না।
উল্লেখ্য, পূর্বে মাহের আলী রুশো কলোরাডো ইউনিভার্সিটি বোল্ডারে মাস্টার্সে ৯০ শতাংশ স্কলারশিপ পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অনুমোদনহীন ভুয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিকে মাহের আলী রুশো কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, অনলাইন পোর্টাল রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটের আদলে গণমাধ্যমটির লোগোযুক্ত একটি ছবিতে এবং কিছু পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে “যত সময় বসে কাঁচা মরিচের দামের স্ট্যাটাস দেন, তত সময় ছাদের টবে একটা মরিচ গাছ লাগালে দৈনন্দিনের চাহিদা মিটে যেতো। গাছ না লাগালে তো ৭০০ টাকা কেজি হবেই।” শীর্ষক একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটের আদলে গণমাধ্যমটির লোগোযুক্ত ছবি ব্যবহার করে এবং কিছু পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে উক্ত মন্তব্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে রাইজিং বিডি নামের একটি অনলাইন পোর্টালের লোগো দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook Claim Post
এই লোগোর সূত্রে রাইজিং বিডি অনলাইন পোর্টালটিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য নিয়ে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পোস্টটিতে অনলাইন পোর্টালটি জানায়, রাইজিংবিডির নামে ছড়ানো এই ছবিটি নকল। ছবিটি আমাদের তৈরি নয়। এমনকি ছবিতে ব্যবহৃত বক্তব্যের সঙ্গেও রাইজিং বিডির কোনো সম্পর্ক নেই। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ফলো করুন।
অর্থাৎ, রাইজিং বিডির ছবি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আলোচিত মন্তব্যটি প্রচার কর হলেও অনলাইন পোর্টালটি জানায়, এই ছবিটি নকল এবং এর সঙ্গে রাইজিং বিডির কোনো সম্পর্ক নেই।
বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানেও অন্য কোনো গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত আলোচিত মন্তব্যটি নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সোমবার (৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শাপলা হলে খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মরিচ উৎপাদন করতে ছাদবাগান, ভাসমান বাগান বা ঝুলন্ত বাগান করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। কেন করতে হবে? আমি জানি বর্ষাকালে খেতে পানি উঠে যায়। মরিচ তোলা যায় না বা মরিচ পচে যায়। সেজন্য সমস্যা হয়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২১ জুন (বুধবার) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের ক্ষেতে কেউ মরিচ তুলতে যেতে পারে না। কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। সবাইকে আহ্বান করবো, এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন, বর্ষাকালে যখন দাম বাড়বে তখন সেখান থেকে খাওয়া যাবে। একটু পানি লাগলেই তাজা হয়ে যায়, আবার রান্না করে খাওয়া যায়, সহজ বুদ্ধি।’
মূলত, সম্প্রতি দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে এবং ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি মন্তব্য অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডির লোগো ব্যবহার করে এবং অনেক পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ব্যতীতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাঁচা মরিচ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া প্রসঙ্গে ও একইসাথে ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো নিয়ে কোনো মন্তব্য কিংবা রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটে এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় কাঁচা মরিচের দাম। তবে পরবর্তীতে ভারত থেকে আমদানি করার কারণে কাঁচা মরিচের দাম কমে আসে। গত ৩ জুলাই দেশের শীর্ষস্থানীয় কাঁচা বাজার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৫০-২০০ টাকায়।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে এবং ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রচারিত মন্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।