Home Blog Page 553

আমাজন রেইনফরেস্ট কি পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০ শতাংশ উৎপাদন করে?

0

সম্প্রতি কতিপয় ফেসবুক পোস্টে “প্রায় ৩৯ হাজার কোটি বৃক্ষের আমাজন রেইনফরেস্ট পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে।” শীর্ষক একটি দাবি প্রচারিত হয়েছে। পোস্টগুলোতে পৃথিবীর বেশিরভাগ অক্সিজেন গাছ থেকে আসে না বিষয়টি খণ্ডন করতে গিয়ে ‘আমাজন পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করে’ শীর্ষক বিষয়ের উল্লেখ করা হয়।

আমাজন

ফেসবুক প্রচারিত এ দাবির কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)  এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  আমাজন পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি মিথ।

অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটে “Why the Amazon doesn’t really produce 20% of the world’s oxygen” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে লেখা হয়, 

“গত সপ্তাহে আমাজনে দাবানলের খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে রেইনফরেস্টের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বিভ্রান্তিকর দাবি বারবার প্রচার হচ্ছে যে এটি বিশ্বের অক্সিজেনের ২০ শতাংশ উৎপাদন করে। বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং গণমাধ্যমও এ দাবিটি করেছে এবং অনেকে আমাজন কে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে সম্বোধন করেছে। তবে “পৃথিবীর ফুসফুস” উপাধি দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অতিরঞ্জিত। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন, আমরা শ্বাসের সাথে যে অক্সিজেন নিই তাতে অ্যামাজনের নেট অবদান সম্ভবত শূন্যের কাছাকাছি। 

ম্যাসাচুসেটসের উডস হোল রিসার্চ সেন্টারে অ্যামাজন প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী আর্থ সিস্টেম বিজ্ঞানী মাইকেল কো মন্তব্য করেছেন, “আপনি কেন অ্যামাজনকে জায়গায়(ঠিক) রাখতে চান তার অনেকগুলি কারণ রয়েছে, কেবল অক্সিজেন তাদের মধ্যে একটি নয়।”

Coe জানান, তার কাছে ঐ দাবিটি কোন ফিজিক্যাল সেন্স তৈরি করে না, কারণ গাছের জন্য গ্রহের অক্সিজেনের সম্পূর্ণ পঞ্চমাংশে সালোকসংশ্লেষণ করার জন্য বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নেই।

চিন্তা করুন, গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে, তার প্রতিটি অণুর জন্য তারা প্রায় একই রকম সংখ্যক অক্সিজেন অণুও বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। এখন বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ০.৫ শতাংশেরও কম, অপরদিকে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ হলে অ্যামাজন রেইনফরেস্টের পক্ষে এতো বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

কয়েকজন বিজ্ঞানী আরও নির্ভরযোগ্য অনুমান দিয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিবর্তন ইনস্টিটিউটের একজন পরিবেশবিদ্যাবিদ যাদবিন্দর মালহি তার গণনাটি ২০১০ সালের একটি গবেষণার উপর ভিত্তি করে করেছেন, যা অনুমান করে যে স্থলভাগে ঘটে যাওয়া সকল সালোকসংশ্লেষণের প্রায় ৩৪ শতাংশের জন্য ক্রান্তীয় অরণ্য দায়ী। এর আকারের ভিত্তিতে, আমাজন এর প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী হবে। এর মানে হল যে আমাজন স্থলভাগে উৎপাদিত অক্সিজেনের প্রায় ১৬ শতাংশ উৎপাদন করে, মালহি তার একটি সাম্প্রতিক ব্লগ পোস্টে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সমুদ্রে ফাইটোপ্ল্যাংকটন দ্বারা উৎপাদিত অক্সিজেনকে বিবেচনায় নেওয়ার সময় এই শতাংশটি ৯ শতাংশে নেমে আসে।

কিন্তু এটিই পুরো গল্প নয়। গাছগুলো শুধু অক্সিজেন ছাড়ে না বরং তারা সেলুলার শ্বসন নামক প্রক্রিয়ায় তা গ্রহণও করে, যেখানে তারা দিনের বেলায় সংগৃহীত শর্করাকে শক্তিতে রূপান্তর করে। এই প্রক্রিয়াকে ক্ষমতায়িত করতে অক্সিজেন ব্যবহার করে। সুতরাং রাতের বেলা যখন সালোকসংশ্লেষণের জন্য সূর্য থাকে না, তখন তারা অক্সিজেনের নেট শোষক হয়। মালহির গবেষণা দল ধারণা করে যে গাছগুলি এইভাবে উৎপাদিত অক্সিজেনের অর্ধেকেরও বেশি নিজেরাই ব্যবহার করে। বাকি অংশ সম্ভবত অ্যামাজনে বসবাসকারী অসংখ্য অণুজীব দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী স্কট ডেনিং ব্যখ্যা করেন, “আমাজন বা অন্য যে কোন জীবব্যবস্থার নেট অক্সিজেনের প্রভাব আসলে প্রায় শূন্য। কারণ অক্সিজেন উৎপাদন এবং ভোগের মধ্যে এই ভারসাম্যের কারণে আধুনিক বাস্তুতন্ত্রগুলি বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা খুব একটা পরিবর্তন করে না। বরং আমরা যে অক্সিজেন শ্বাস নিই, তা হলো সমুদ্রের ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উত্তরাধিকার, যা বিলিয়ন বছর ধরে ধীরে ধীরে অক্সিজেন জমা করে এসেছে এবং বায়ুমণ্ডলকে শ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।”

২০ শতাংশের এই ভ্রান্ত ধারণাটি কয়েক দশক ধরেই চলছে, যদিও এটি কোথায় থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা অস্পষ্ট। মালহি এবং কো বলেছেন, এটি এমন ধারণা থেকে উদ্ভূত হয়েছে যে, আমাজন বনভূমি স্থলে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপাদিত অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করে। এই সংখ্যাটি ভুলভাবে জনসাধারণের জ্ঞানে ‘বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ২০ শতাংশ’ হিসাবে প্রবেশ করে থাকতে পারে। 

আমাজন আমাদের অক্সিজেনের ২০ শতাংশ দেয় না এর অর্থ এই নয় যে আমাজন গুরুত্বপূর্ণ নয়। অবশ্যই এটা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ।”

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান FactCheck.org এবং AP যথাক্রমে Amazon Doesn’t Produce 20% of Earth’s Oxygen এবং Take a breath: the Amazon does not produce 20% of the world’s oxygen শিরোনামে ‘আমাজন পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করার দাবিটিকে মিথ্যা চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে।

মূলত, আমাজন পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করে দাবিটি একটি মিথ, যা কয়েক দশক ধরে প্রচারিত হয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে আমাজন বিশ্বের বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি বিশ্বের অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করে না। প্রকৃতপক্ষে, এটি যতটা অক্সিজেন তৈরি করে তার প্রায় একই পরিমাণ অক্সিজেন নিজের ব্যবহারের জন্য শোষণ করে। তাই আমরা শ্বাসের সাথে যে অক্সিজেন নিই তাতে অ্যামাজনের নেট অবদান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। 

সুতরাং, অ্যামাজন পৃথিবীর ২০% অক্সিজেন উৎপাদন করে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে– শীর্ষক শিরোনাম এবং পদত্যাগের ঘোষনা দিলো প্রধানমন্ত্রী, ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো চরমোনাই– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওতে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। ভিডিও দুইটির কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক সমকালের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ নভেম্বর “চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner.

লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারের তৃতীয় তলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের আগামী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। 

অর্থাৎ, ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের উক্ত লাইভ ভিডিওটির কিছু খণ্ডাংশ কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া একটি ভিডিও দেখানো হয়। 

ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভি’র লোগো দেখা যায়। দেশ টিভি’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ১২ নভেম্বর “আমেরিকার যে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner.

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

তবে, এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা দেননি এবং আলোচিত ভিডিওটিতেও এই সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তবে এই দাবিকে সবসময় প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মাঝে সম্প্রতি ‘পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী,ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো চরমোনাই শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে তথ্য প্রচার হলে সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

পিটার হাসের ওপর হামলা এবং ওবায়দুল কাদেরকে জো বাইডেনের হুমকির ভুয়া তথ্য প্রচার

বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে দফায় দফায় আলোচনা বসছেন। বিদেশি এই কূটনীতিকদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। সঙ্গত কারণে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে বার বার গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন এই মার্কিন কূটনীতিক। আর এসব কারণে তাকে নিয়ে ইন্টারনেটে আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। 

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে Barisal Waz Tv নামের একটি পেজ থেকে ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উপর হামলা, কাদেরকে হুমকি দিলো জো বাইডেন’ শীর্ষক থাম্বনেইলে প্রচারিত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

পিটার হাস

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

Barisal Waz Tv নামের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত ৭ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার বার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার বার। এছাড়া, পোস্টটিতে প্রায় ৬ হাজার ২ শত পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে মন্তব্য করতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলা কিংবা উক্ত ঘটনায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক হুমকি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি সংযুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১১ নভেম্বর Barisal Waz Tv নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

Screenshot: Facebook

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন। ভিডিওটির কোথাও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলার কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাছাড়া ভিডিওটির বিস্তারিত সংবাদপাঠের অংশেও পিটার হাসের ওপর কেউ হামলা করেছে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

ভিডিওটি’র শুরুতে বলা হয়, “দর্শক বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত যিনি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেন অবশেষে তাকেই হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তাকে সরাসরি পিটিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন। যেজন্য আবার ক্ষেপে গিয়েছেন জো বাইডেন। জো বাইডেন আবার যে বার্তা দিয়েছেন সরকারকে উদ্দেশ্য করে আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন…।’

অর্থাৎ, ভিডিওটির থাম্বনেইলে উল্লেখিত তথ্যের সাথে ভিডিওটি’র বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Nayeem Korea নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমেরিকার বক্তব্যে তোলপাড়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই ভিডিওটির কিছু অংশ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

Screenshot: Facebook

তাছাড়া, পিটার হাসের ওপর হামলার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান কর‍তে গিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম মানবজমিনের ওয়েবসাইটে গত ০৮ নভেম্বর ‘পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি আওয়ামী লীগ নেতার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পিটুনির হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পিটার হাস্ বলেছে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই পিটার হাস্, আমরা খাই পাঁচ আঙ্গুলের ভাত। আর তুই খাস ফিডার। তুই হলি বিএনপি’র ভগবান। আর তোরে এমন পিটুনি দেবো…। বাঙালি কি ফাজিল তা তো জানোস না। তোরা বিএনপি-জামায়াতের ভগবান হতে পারবি। তবে আমাদের একটি… ছিঁড়তে পারবি না।’

অর্থাৎ, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী কর্তৃক পেটানোর হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও বাস্তবে পিটার হাসের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তাছাড়া, উক্ত ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে হুমকি দেওয়া কিংবা এবিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আওয়ামী লীগ নেতার পেটানোর হুমকিকে ‘সহিংস’ উল্লেখ করে এ ধরনের বক্তব্য সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয় বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

এছাড়াও, ওই আওয়ামী লীগ নেতার পিটার হাসকে নিয়ে এমন মন্তব্যের জেরে তার বিরুদ্ধে দলটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো  হয়েছে।

অর্থাৎ, ওবায়দুল কাদেরকে বাইডেনের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়ার দেওয়ারও কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মূলত, গত ০৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পিটুনির হুমকি দিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি যুক্ত করে তাতে ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উপর হামলা, কাদেরকে হুমকি দিলো জো বাইডেন’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলা কিংবা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক হুমকি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলার বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলা এবং ওবায়দুল কাদেরকে জো বাইডেনের হুমকি দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নয়

পুরুষদের চলমান ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে গত ০৭ নভেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০১ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে স্পষ্ট দুইটি দাবি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

দাবি ১ : গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেট এবং বিশ্বকাপে দ্বিশতক করেছেন।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন দ্য ডেইলি স্টার, বিডিনিউজ২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সময় টিভি, ঢাকা ট্রিবিউন, নিউ এজ, বণিক বার্তা, কালের কণ্ঠ, সমকাল, মানবজমিন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, কালবেলা, চ্যানেল২৪, একাত্তর টিভি, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ঢাকা পোস্ট, ডিবিসি নিউজ, বাংলাভিশন, আরটিভি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, যমুনা টিভি, নিউজ২৪, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ভোরের কাগজ, বাংলানিউজ২৪, দেশ রূপান্তর, চ্যানেল আই, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, প্রতিদিনের সংবাদ, প্রতিদিনের কথা, সারাবাংলা, খবরের কাগজ, ২৪লাইভ নিউজপেপার, সময়ের কণ্ঠস্বর, একুশে সংবাদ, দ্যা বাংলাদেশ মোমেন্টস, পিএনএস নিউজ২৪, অধিকার বিডি, বাংলাদেশ টুডে, এবিনিউজ২৪, পদ্মা নিউজ, ঢাকা টুডে। 

দাবি ২: ম্যাক্সওয়েলের করা ২০১ রান  অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, সময়ের আলো, দৈনিক আমাদের সময়, ডেইলি সান, ডেইলি বাংলাদেশ, সোনালী নিউজ, জাগোনিউজ২৪, মানবকণ্ঠ, একুশে টিভি, প্যাভিলিয়ন, দৈনিক করতোয়া, জনবাণী, গণমুক্তি, ঢাকা মেইল, রাইজিং বিডি, বিডি২৪লাইভ, বাহান্ন নিউজ, বিজনেস বাংলাদেশ, রেডিও টুডে নিউজ

তাছাড়া, একই দাবিগুলোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন রয়টার্স, ডন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া

একই দাবিগুলোর বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নন। ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নারী দলের সদস্য বেলিন্ডা ক্লার্ক ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘India Today’ এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি “Sachin Tendulkar becomes first man to score maiden ODI double hundred” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মহিলা বিশ্বকাপের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বেলিন্ডা ক্লার্ক প্রথম ওডিআই ডাবল সেঞ্চুরি করেন।

ইন্ডিয়া টুডের এই প্রতিবেদনে পাওয়া সূত্র অনুযায়ী ক্রিকেট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে নারী ওডিআই বিশ্বকাপ -১৯৯৭ এর অস্ট্রেলিয়া বনাম ডেনমার্কের মধ্যকার ম্যাচের বিস্তারিত অনুসন্ধানে বেলিন্ডা ক্লার্কের ডাবল সেঞ্চুরি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি সেই ম্যাচে অপরাজিত ২২৯ রান করেন। 

Screenshot from Espncricinfo

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টের ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিলের একটি পোস্ট থেকেও বেলিন্ডা ক্লার্কের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআই ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করার বিষয়ে জানা যায়।

Screenshot from X/ICC

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ৮ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরির বিষয়ে বলা হয়, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওডিআইতে ২০০ রানের রেকর্ড করা প্রথম অজি ক্রিককটার নন। এই রেকর্ডটি ১৯৯৭ সালে ডেনমার্কের বিপক্ষে প্রথম করেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বেলিন্ডা ক্লার্ক। 

Screenshot from Cricket Australia

মূলত, চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তার এই কৃতিত্বের বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যম কর্তৃক ম্যাক্সওয়েলকে ওডিআইতে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং এটিকে অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন বেলিন্ডা ক্লার্ক। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেছেন। তাছাড়া, স্বাভাবিকভাবেই  ম্যাক্সওয়েলের করা ২০১ রান অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসও নয়। কারণ বেলিন্ডার ১৯৯৭ সালের আলোচিত সেই ম্যাচেই ২২৯ রান করার রেকর্ড রয়েছে। 

সুতরাং, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ওডিআই ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার দাবি করে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

তারেক রহমানকে নিয়ে মির্জা ফখরুলের ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতোন ফোন নাম্বার বদলায়-তারেক শীর্ষক তথ্য বা মন্তব্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

যা দাবি করা হচ্ছে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতোন ফোন নাম্বার বদলায় তারেক। তারেক রহমানের কোন নির্দিষ্ট নাম্বার নেই। একেক নাম্বারে একেকজনকে ফোন করেন। সাধারণ মানুষের যেমন একটি নির্দিষ্ট নাম্বার থাকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় কিন্তু তারেক রহমানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি দাউদ ইব্রাহীম বা অন্যান্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো।

তারেক রহমান

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো ফোন নাম্বার বদলায়-তারেক’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ছড়ানো উক্ত মন্তব্যের অস্তিত্ব কোনো গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এ ২৪ অক্টোবরে “কোনো কিছুই মহাসমাবেশ আটকাতে পারবে না: ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কোনো কিছুই ২৮ অক্টোবরের ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে আটকে রাখতে পারবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনারা যখন লিখবেন… কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কোনো ভয়-ভীতি, তাদের সভা-সমিতি যত কিছুই করুক, আমাদেরকে, রাস্তার মানুষকে তাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো কিছুতে আটকে রাখতে পারবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনি গ্রেপ্তার বলেন, মামলা বলেন, রাত্রিবেলা আদালতে মামলা পরিচালনা বলেন, কোনোটাই আটকে রাখতে পারবে না। সুতরাং এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এবারকার আন্দোলন ফলাফলের দিকে যাচ্ছে এবং জনগণের বিজয় অনিবার্য।”

পরবর্তীতে, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৭ অক্টোবর “মহাসমাবেশের অনুমতি নিয়ে ‘শেষ পর্যন্ত দেখতে’ চান মির্জা ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসমাবেশ করতে পারার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত দেখবেন। এরপর তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

নয়াপল্টনে পুলিশ অনুমতি না দিলে বিকল্প কিছু ভাববে কি না বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে মহাসমাবেশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আমরা নয়াপল্টনে করতে চাই। চিঠি দিয়েছি মৌখিকভাবেও বলে দিয়েছি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি আমরা সফলতার সঙ্গে করেছি। এত কিছুর পরও। এর আগেও রেইড হয়েছে। এর আগেও মারপিট করেছে। মেরে ফেলেছে গুলি করে। তারপরও কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে এতটুকু সরিনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তারা যদি কোনো রকমের বাড়াবাড়ি করে অত্যাচার নির্যাতন করে তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারকে বহন করতে হবে। পরিণতি যেটা হবে তার দায়দায়িত্ব তাদের। বিএনপির সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করছে, করবে।

উক্ত গণমাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমানকে নিয়ে “শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো ফোন নাম্বার বদলায়-তারেক” শীর্ষক কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে অধিকতর সত্যতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়টিকে মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

মূলত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো ফোন নাম্বার বদলায়-তারেক’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে, কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে উক্ত মন্তব্যটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির বিষয়টিকে মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর গুলশান-২-এর বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আটক করে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে কালবেলা’র নকল ফটোকার্ডে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যনার।

সুতরাং, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রচারিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো ফোন নাম্বার বদলায়-তারেক’ শীর্ষক মন্তব্যটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ইসলাম ধর্মের কোনো নবীকে জেলে দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেননি

সম্প্রতি, ইসলামী স্লোগান দেয়ায় নবীকে জেলে দিতে বললেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস- শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে জনতাকে “নবী প্রেমীদের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার” শীর্ষক স্লোগান দিতে শোনা যায়। 

পরবর্তীতে বিএনপি’র নেতা মির্জা আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, এই কার কথা বলতেছো? নামটা পরিষ্কার করে বলতো। কার কথা বলতেছো? ওই ব্যাটা, কার কথা কইতাছস তুই? ফাজিল কোথাকার! নবীরে ধইরা জেলে দিয়া আয় কমুনে শালার ব্যাটারা। ফাজিলগুলা কোথাকার।

মির্জা আব্বাস

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি’র নেতা মির্জা আব্বাস ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে উক্ত মন্তব্য করেননি বরং স্থানীয় বিএনপি’র নেতা নবী উল্লাহ নবীকে নিয়ে জনতা ‘নবী ভাই, নবী ভাই’ স্লোগান দেওয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন তিনি৷ 

অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন গণমাধ্যম জাগো নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর “স্লোগানে বিরক্ত হয়ে মেজাজ হারালেন আব্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উপস্থিত জনতা নবী ভাই, নবী ভাই বলে স্লোগান দিচ্ছে। পরবর্তীতে মির্জা আব্বাস জনতাকে স্লোগান দেওয়া বন্ধ করতে বলেন। স্লোগান বন্ধ না করায় তিনি মেজাজ হারিয়ে উক্ত মন্তব্য করেন। 

এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে একই দিনে জাগো নিউজে “স্লোগানে বিরক্ত হয়ে মেজাজ হারালেন আব্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজেও “সমাবেশে মেজাজ হারালেন মির্জা আব্বাস” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি রিল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

মূলত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বক্তব্য দেওয়ার সময় উপস্থিত জনতা বিএনপি’র স্থানীয় নেতা নবী উল্লাহ নবীকে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকলে স্লোগান থামাতে বলেন মির্জা আব্বাস। তবুও স্লোগান না থামায় তিনি মেজাজ হারিয়ে বলেন, এই কার কথা বলতেছো? নামটা পরিষ্কার করে বলতো। কার কথা বলতেছো? ওই ব্যাটা, কার কথা কইতাছস তুই? ফাজিল কোথাকার! নবীরে ধইরা জেলে দিয়া আয় কমুনে শালার ব্যাটারা। ফাজিলগুলা কোথাকার।’ 

তবে এই ঘটনার একটি ভিডিও থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘নবী ভাই নবী ভাই’ শীর্ষক স্লোগানের অংশ বাদ দিয়ে  “নবী প্রেমীদের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার” শীর্ষক স্লোগান যুক্ত করে দাবি করা হচ্ছে; বিএনপির সমাবেশে ইসলামী স্লোগান দেয়ায় মির্জা আব্বাস ইসলাম ধর্মের নবীকে জেলে দিতে বলেছেন।

সুতরাং, সমাবেশে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের মেজাজ হারিয়ে দেওয়া মন্তব্যের একটি ভিডিওকে আংশিক বিকৃত করে সাম্প্রদায়িকভাবে প্রচার করার কারণে রিউমর স্ক্যানার টিম ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তথ্যসূত্র

আরটিভি’র ফটোকার্ড বিকৃত করে নাজমুল হাসান পাপনের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি “বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি পদত্যাগ করব না।” শীর্ষক মন্তব্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন করেছেন দাবিতে মূলধারার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

আরটিভি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি পদত্যাগ করব না’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং আরটিভিও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি পাপনের মন্তব্য নিয়ে আরটিভিতে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড নকল করে তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে আরটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আরটিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে ২৮ অক্টোবরে আরটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘পরাজয় বুঝতে পেরে আগেই মাঠ ছারেন পাপন’ শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison: Rumor Scanner

ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডটির ডিজাইন এবং ফটোকার্ডটিতে যুক্ত ছবির মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডটির টেক্সট ফন্টের সাথে আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে। ধারণা করা যায়, এই ফটোকার্ডটি এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া, উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট (পুরুষ) বিশ্বকাপ-২০২৩ এ বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হয়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরাজয়ের ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে আরটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১২ নভেম্বর ‘ভুয়া সংবাদ’ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টে আরটিভি’র নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল’ বলে জানানো হয়।

Screenshot: Facebook

অর্থাৎ, ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি পদত্যাগ করব না: নাজমুল হাসান পাপন’ শীর্ষক শিরোনামে আরটিভি কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট (পুরুষ) বিশ্বকাপ – ২০২৩ এ বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হয়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরাজয়ের ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। যার প্রেক্ষিতে মূলধারার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি তখন সংবাদ প্রতিবেদন এবং ফেসবুক পেজে ‘পরাজয় বুঝতে পেরে আগেই মাঠ ছারেন পাপন’ শীর্ষক শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করে। সম্প্রতি সেই ফটোকার্ডটি-ই ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি পদত্যাগ করব না: নাজমুল হাসান পাপন’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। 

প্রসঙ্গত, পূর্বে বিভিন্ন দেশিয় গণমাধ্যমের ফটোকার্ড বিকৃত করে ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:

সুতরাং, ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি পদত্যাগ করব না: নাজমুল হাসান পাপন’ শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে আরটিভি’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

ফিলিস্তিনকে ১৩৮ দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার খবরটি সত্য

0

ফিলিস্তিনের ওপর ইজরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ও গণহত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ব্রেকিং নিউজ আকারে জাতিসংঘের ১৩৮টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে শীর্ষক তথ্য প্রচার হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে, তথ্যটি সত্য তবে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্বীকৃতি ও জাতিসংঘে তাদের পক্ষে ভোটের এ ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০১২ সালে “জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের স্টাটাস” শিরোনামের একটি প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে ১৩৮ টি দেশ ভোট দেওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজেরিয়ায় প্যালেস্টাইন জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার পর অনেক রাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশকিছু রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী দেশের সংখ্যা বর্তমানে ১৩৯টি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ এবং তাদের স্বীকৃতির সংশ্লিষ্ট তারিখ দেখা যাবে এখানে

ফিলিস্তিন একটি আংশিকভাবে স্বীকৃত সার্বভৌম রাষ্ট্র, যা বর্তমানে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৩৮ টি সদস্য দেশ এবং একটি পর্যবেক্ষক দেশ ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিন নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। আর এই ঘোষণার এক মাসের মধ্যে ৭৫টির বেশি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৯ সালের মে মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনের পিএলও সরকার এবং ‘স্টেট অব প্যালেস্টাইন’ কে স্বীকৃতি দেয় ১০৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র। 

২০১১ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সরকারী মর্যাদা ছিল ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক সত্তা’। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি-মুনের কাছে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য একটি আবেদন জমা দেন। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, মহাসচিব তখন আবেদনটি তৎকালীন নিরাপত্তা পরিষদের (লেবানন) প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠান। নিরাপত্তা পরিষদে নতুন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে অনেক আলোচনার পর ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর কাউন্সিলে রিপোর্ট গৃহীত হয়, যাতে অনেক কাউন্সিল সদস্য সমর্থন প্রকাশ করেন, পাশাপাশি দুটি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনের আবেদন সমর্থন করেনি, যার মধ্যে ভেটো ক্ষমতা সম্পন্ন স্থায়ী সদস্য দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। তাই কমিটি আর ফিলিস্তিনের সদস্যপদের আবেদন নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে সুপারিশ করতে পারেনি। ফিলিস্তিনের সেই আবেদন ইতিবাচক সুপারিশের অপেক্ষায় এখনও নিরাপত্তা পরিষদের সামনে রয়ে গেছে।

আরো পড়ুনঃ জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভুলবশত ভোট দেয়নি ইসরায়েল

সাধারণত জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ দেশের মধ্যে সকল বা ৫ টি স্থায়ী রাষ্ট্রের সমর্থনসহ কমপক্ষে ৯ টি দেশের সমর্থন প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতায় ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের আবেদনটি জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্সিলের পক্ষে সাধারণ পরিষদে সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, একই বছরে ইউনেস্কো ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সেসময় ইউনেস্কোতে তাদের তহবিল প্রত্যাহার করেছিল।

১৩৮
Image by Rumor Scanner 

২০১২ সালে ফিলিস্তিন তার জাতিসংঘের মর্যাদা উন্নীত করে ‘অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ এর মর্যাদা পেতে আরও একটি বিড করে। এই মর্যাদা পেতে জাতিসংঘের সদস্যপদের মতো নিরাপত্তা পরিষদের ইতিবাচক সুপারিশের প্রয়োজন জরুরী নয়। ফলে এই মর্যাদা সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে পারে।

২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ “জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের স্টাটাস” শিরোনামে রেজুলেশনটি গৃহীত হয়, যেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষে ১৩৮টি দেশ, বিপক্ষে ৯টি এবং ৪১টি দেশ কোনো পক্ষেই ভোট প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। প্রয়োজনের চেয়ে অধিকসংখ্যক ভোট পাওয়ায় প্রস্তাবটি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রদান করে এবং এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করে।

ফিলিস্তিনের এই মর্যাদা লাভের ওপর ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর রয়টার্সে “ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের সার্বভৌম রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত স্বীকৃতি জিতেছে” (অনূদিত) শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৩ জাতির জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ডি ফ্যাক্টো স্বীকৃতির অনুমোদন দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষকের মর্যাদাকে “সত্তা” থেকে “সদস্যহীন রাষ্ট্র” এ উন্নীত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩৮টি দেশ, বিপক্ষে ৯টি দেশ এবং ৪১ টি অনুপস্থিত ভোট পড়ে।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদর দফপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও স্বীকৃতি মিলে।

সুতরাং, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের ১৩৮টি সদস্য দেশ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. State of Palestine – Palestine UN 
  2. Countries that Recognize Palestine 2023 by World Population Review
  3. Status of Palestine – Palestine UN
  4. Palestinian UN “observer state” status: what it really means by UNA-UK
  5. Palestinians win implicit U.N. recognition of sovereign state– Reuters 

অ্যালান ডোনাল্ডকে জড়িয়ে ক্রিকেটার শরিফুল ইসলামের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

0

সম্প্রতি, চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ কে কেন্দ্র করে “শেষ অনুশীলনের আগে স্যার আমায় বলেছিলো, তোমাদের বোর্ডে অনেক পরিবর্তন দরকার” শীর্ষক মন্তব্যকে বাংলাদেশের ক্রিকেটার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “শেষ অনুশীলনের আগে অ্যালান ডোনাল্ড আমায় বলেছিল তোমাদের বোর্ডে অনেক পরিবর্তন দরকার” শীর্ষক কোনো মন্তব্য ক্রিকেটার শরিফুল ইসলাম করেননি। বরং ক্রিকেটার শরিফুল ইসলাম এর নামে ভুয়া এ মন্তব্য প্রচার করা হয়েছে।

গুজবের সূত্রপাত

ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, গত ১২ নভেম্বর রাত ১ টা ২৬ মিনিটে ‘Sports X‘ নামক একটি ফেসবুক পেজে “শেষ অনুশীলনের আগে স্যার (ডোনাল্ড) আমায় বলেছিলো, তোমাদের বোর্ডে অনেক পরিবর্তন দরকার। শরিফুল” শিরোনামে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি (আর্কাইভ) করা হয়। স্পোর্টস এক্স নামের পেজের পোস্টটিতে এই প্রতিবেদন লেখার সময় অব্দি প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রিয়্যাক্ট করেছে, শেয়ার হয়েছে প্রায় ৫০০ বার। ফলে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উক্ত মন্তব্যটি কপি-পেস্ট হয়ে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। 

তাছাড়া স্পোর্টস এক্স নামের এই পেজটিতে বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলা বিষয়ক ভুয়া তথ্য এবং মন্তব্য প্রচার করা হয়। উক্ত পেজ থেকে প্রচারিত গুজবের এমন দুটি ফ্যক্টচেক দেখুন এখানে এবং এখানে। 

উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে ক্রিকেটার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম এর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম) পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু তার কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তার পক্ষ থেকে ডোনাল্ডকে নিয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে গত কয়েকদিনে ক্রিকেটার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত  সংবাদগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেও তার এমন কোনো মন্তব্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিয়তার জন্য রিউমর স্ক্যানার এর পক্ষ থেকে ক্রিকেটার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে মন্তব্যটিকে পুরোপুরি মিথ্যা এবং ভুয়া বলে নিশ্চিত করেন।

একই মন্তব্য ক্রিকেটার হাসান মাহমুদের নামে প্রচার

স্পোর্টস এক্স নামের পেজ থেকে ক্রিকেটার শরিফুল ইসলামের নামে “শেষ অনুশীলনের আগে স্যার অ্যালান ডোনাল্ড আমায় বলেছিলো, তোমাদের বোর্ডে অনেক পরিবর্তন দরকার” শীর্ষক ভুয়া মন্তব্যটি প্রচারের পর তা ভাইরাল হলে একই পেজ থেকে অনুরূপ মন্তব্যটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের আরেক ক্রিকেটার হাসান মাহমুদের নামেও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে হাসান মাহমুদেরও এমন কোনো মন্তব্য কোথাও করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অ্যালান ডোনাল্ড

মূলত, বিসিবির সঙ্গে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের চুক্তি এ মাসের শেষ দিকে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই বিসিবির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাংলাদেশকে অ্যালান ডোনাল্ড এর বিদায় বলার এ বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ অনুশীলনের আগে অ্যালান ডোনাল্ডের বলা কথা দাবিতে ক্রিকেটার শরিফুল ইসলামের নামে ভুয়া এ মন্তব্য প্রচার করা হয়। 

সুতরাং, ‘শেষ অনুশীলনের আগে স্যার (ডোনাল্ড) আমায় বলেছিলো, তোমাদের বোর্ডে অনেক পরিবর্তন দরকার – শরিফুল’ শীর্ষক মন্তব্যটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Analysis 
  • Statement of Cricketer Shoriful Islam 

ডাবল সেঞ্চুরির পর ম্যাক্সওয়েলের শচীনের পা ছোঁয়ার ছবিটি এডিটেড

0

সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বিশ্বকাপে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর শচীন টেন্ডুলকারের পা ছুঁয়েছেন দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ম্যাক্সওয়েল

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরির পর শচীন টেন্ডুলকারের পা ছোঁয়ার ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ছবিটিতে শচীন টেন্ডুলকারের হাতের অবয়বে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়।

Indication By Rumor Scanner

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ফটোস্টক ওয়েবসাইট getty image-এ ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর “Australia & Afghanistan Net Sessions – ICC Men’s Cricket World Cup India 2023” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ছবিতে শচীন টেন্ডুলকারকে এক আফগান ক্রিকেটারের সাথে করমর্দন করতে দেখা যায়। উক্ত ছবিতে শচীন টেন্ডুলকারের দেহভঙ্গি এবং পোশাক পরিচ্ছদে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ছবির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ট্রেনিং সেশনের পূর্বে আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের সাথে কুশল বিনিময়ের সময় চিত্রগ্রাহক Robert Cianflone ছবিটি ধারণ করেন।  

পাশাপাশি, ফটো স্টক ওয়েবসাইট getty ইমেজের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর “Australia v Afghanistan – ICC Men’s Cricket World Cup India 2023” শীর্ষক শিরোনামের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ছবির সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ম্যাক্সওয়েলের ছবির দেহভঙ্গির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ছবির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, চিত্রগ্রাহক Robert Cianflone গত ৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের সময় ছবিটি ধারণ করেন।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে India Today এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর “Fact Check: Did Maxwell touch Sachin’s feet? Viral pic is photoshopped” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনে, SportsTak এর সাংবাদিকের বরাত দিয়ে জানানো হয় গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে শচীন টেন্ডুলকার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত-ই ছিলেন না।

মূলত, গত ৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ম্যাচ পূর্ববর্তী অনুশীলন সেশনে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের সাথে কুশল বিনিময় করেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার। সে সময় আফগানিস্তানের এক ক্রিকেটারের সাথে করমর্দনের একটি ছবিকে ৭ নভেম্বর ম্যাচ চলাকালীন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের একটি ছবির সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরির পর শচীন টেন্ডুলকারের পা ছোঁয়ার ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র