রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি হযরত আদম (আঃ) কবর মোবারকের নয়। প্রকৃতপক্ষে ওমানে অবস্থিত হযরত ইমরান এর কবর মোবারকের ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে Malik Naveed Awan নামের এক্স একাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০১৭ সালের ১১ মার্চে “Nabi Imran A.S tomb” শিরোনামে প্রকাশিত একটি টুইট থেকে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে গুগল ম্যাপস-এ কবরটির অবস্থান নিশ্চিতের পাশাপাশি ট্রাভেল কোম্পানি ‘ট্রিপ এডভাইজর’ এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, আলোচিত কবরটি হযরত ইমরান এর যেটি ওমানের সালালাহ শহরে অবস্থিত। সাম্প্রতিক সময়ে হযরত ইমরান এর কবর মোবারকের আলোচিত ছবিকেই হযরত আদম (আঃ) এর কবর মোবারক দাবিতে ইন্টানেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ছবিটি হযরত আদম (আঃ) এর কবর মোবারক দাবি করা হলে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “ নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।। Bangladesh Election Update News।। BnP News Update” শীর্ষক শিরোনাম এবং “নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিল হলো” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল হয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীও নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরনো কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে ভিডিওটির শুরুতেই একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ এবং কয়েকটি পুরনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে সেই নির্বাচনে সরকার গঠনের পর সেই সরকার ভেঙ্গে দিয়ে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কথাটি বলেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে হবে কারন তিনি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৭ জানুয়ারি যেন নির্বাচন না হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন৷ সুতরাং ৭ তারিখ নির্বাচন না হওয়ার কিন্তু জোর দাবি রয়েছে..।”
সংবাদপাঠ অংশে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রথম ও দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত প্রথম দুইটি ভিডিও ক্লিপই গত ২৮ ডিসেম্বর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে থাকা বিএনপির সঙ্গে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের বৈঠকের ঘটনায় এটিএন নিউজ ও কালবেলা’য় (১,২) প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
Video Comparison : Rumor Scanner Video Comparison : Rumor Scanner
তৃতীয় ভিডিও যাচাই
আলোচিত ভিডিওতে দেখানো তৃতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ ডিসেম্বর “বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে নেই :প্রধানমন্ত্রী। Sheikh Hasina । Barisal । Election 2024” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিও প্রতিবেদনের একটি অংশকে আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
Video Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনে গত ২৯ ডিসেম্বর বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
সর্বশেষ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়। ভিডিওটির অনুসন্ধানে Surma Times নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ “শীঘ্রই আরও একটি নির্বাচন হবে। Sheikh Hasina। Hasina Talks about Election” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গণভবনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের খণ্ডাংশ বর্তমানে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, একটি দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরবর্তীতে যদি নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয় অর্থাৎ পূর্ব ঘোষিত তারিখে যদি নির্বাচন না হয় তাহলে সে বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়া স্বাভাবিক। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিল কিংবা নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পায়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে প্রচারিত দাবিগুলো মিথ্যা।
মূলত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে দফায় দফায় কর্মসূচি ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে দলটি। অপরদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে ক্লান্তিহীন প্রচারণা চালাচ্ছে স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন – বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল। উক্ত বৈঠকে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দলগুলো। এরই মধ্যে উক্ত ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে “ নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী ৭ তারিখ নির্বাচন বাতিল ” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও একাধিক ছবি ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নতুন নির্বাচনের ঘোষণা এবং আগামী ৭ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়গুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, ড.ইউনুসকে তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে বিএনপি’র বৈঠক, ৭ জানুয়ারিতে নির্বাচন করবে বিএনপি– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি বৈঠক করেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি কোনো বৈঠক করেনি এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে কোনো ঘোষণা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে। এছাড়া, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আয়োজিত কারারুদ্ধ বাংলাদেশ, ডামি নির্বাচনের ফাঁদ ও ভোটাধিকার– শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তাদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখানো হয়। প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় “IBTV USA” শীর্ষক একটি লোগো রয়েছে। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে IBTV USA নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ ডিসেম্বর “সংলাপ হলে বসতে রাজি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটির সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা সংবাদ প্রতিবেদনটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ৭ তারিখ অনেক দূরে আছে…আপনারা ভাবুন, চিন্তা করুন, আলোচনায় বসুন, সংলাপ করুন। এই হিংসাত্মক সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। আপানাদের অনুরোধ এই কারণে যে, আপনারা সরকারে আছেন, কাজেই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে দায়িত্ব সেটা কিন্তু সরকারের ওপর বর্তায়।
অর্থাৎ, উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি’র বৈঠক এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ করবে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে দুই বক্তাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং ভিডিওতে BV71 শীর্ষক একটি লিখা দেখা যায়। এই BV71 এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে BV71 নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ ডিসেম্বর “তোলপাড় শুরু! ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে যাচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে বক্তব্যদের দেওয়া বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, শুরুতে বক্তা ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বক্তব্যে ডক্টর ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া, ৩৪ সেকেন্ড থেকে এক বক্তা বক্তব্য দেন। তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইস্তেহার নিয়ে সমালোচনা করেন।
অর্থাৎ, এখানের দুই বক্তার কেউই ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি’র বৈঠক এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ করবে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ভিডিও যাচাই- ৩
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে বক্তাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Ariful Islam নাম একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ ডিসেম্বর “কারারুদ্ধ বাংলাদেশ, ডামি নির্বাচনের ফাঁদ ও ভোটাধিকার- শীর্ষক আলোচনা সভা”- ক্যাপশনে একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
উক্ত লাইভ ভিডিওটির শুরুর ৫ মিনিটের পর থেকে বক্তার দেওয়া বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা বক্তার বক্তব্যের মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
১৮ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ৫ মিনিটের পর থেকে বক্তা বর্তমান সরকার নিয়ে সমালোচনা করছেন এবং আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহবান জানান।
অর্থাৎ, এখানেও ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি’র বৈঠক এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ করবে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি’র বৈঠক করার এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি শীর্ষক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। তবে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “ড.ইউনুসকে তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে বিএনপি’র বৈঠক, ৭ জানুয়ারিতে নির্বাচন করবে বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় ভিন্ন বিষয় নিয়ে নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ডক্টর ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব দিতে বিএনপি’র বৈঠক এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রচারিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ব্রেকিং নিউজ হিসেবে জানিয়ে ফেসবুকের কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছেনা। এর দায় শুধু নির্বাচন কমিশন নিবেনা, সরকারকেও নিতে হবে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিইসি হাবিবুল আউয়াল এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছেনা শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং তিনি বলেছেন, যদি নির্বাচন অনিরপেক্ষ হয় বা নির্বাচন যদি খুব বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় সরকারের ওপরও সে দায় পড়বে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা’র ওয়েবসাইটে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাক্ষাৎকারের ভিডিওটিও সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ৩০ মিনিটের ভিডিওটি গত ১৭ ডিসেম্বর ধারণ করা হয়৷
Screenshot: VOA Bangla
আমরা পুরো ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। ২৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় থেকে দেখা যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারি শতরূপা বড়ুয়া সিইসিকে জিজ্ঞেস করেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে পদত্যাগ করবেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব হাবিবুল আউয়াল বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কোনো জবাব দেবো না৷ এটা খুব সঙ্গত প্রশ্ন নয়। আমরা আমাদের দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাব। আমরা আশাবাদী সকলের প্রচেষ্টায় যে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে এই প্রত্যাশা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সেই চেষ্টাটা সেই প্রয়াস থাকবে। একইসাথে আমরা ঘুরে ঘুরে এই মেসেজটা দিয়ে যাচ্ছি, নির্বাচনটাকে যারা প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করবেন তারা যেন দায়িত্বের সাথে এই দায়িত্বটা পালন করবেন। হ্যাঁ, তারা যদি দায়িত্বটা পালন না করার কারণে অনিয়ম হয়, তার কিছুটা দায়ভার তো আমাদের ওপর এসে পড়বে। কিন্তু সার্বিকভাবে বা এককভাবে নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। এখানে সরকার একটা বড় জিনিস। সরকারের ওপর আমাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে। সরকারের যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং তা বারংবার ব্যক্ত করা হয়েছে যে এবারের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। আমি বলছি না, এটা সরকারের কথা। আমাদের আইনে রয়েছে, সরকার আমাদের সহায়তা দিতে হবে এবং সরকারের এই সহায়তার মধ্যে আন্তরিকতা, সদিচ্ছা থাকতে হবে।..
একই প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, যদি নির্বাচন অনিরপেক্ষ হয় বা নির্বাচন যদি খুব বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় সরকারের ওপরও সে দায় পড়বে। সেজন্য এবার সরকার খুবই সচেতন। আমরাও সরকারের ওপর সে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছি।
আমরা সিইসির পুরো সাক্ষাৎকারে আসন্ন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছেনা শীর্ষক কোনো মন্তব্যের উল্লেখ পাইনি। তবে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত দাবিতে “এর দায় শুধু নির্বাচন কমিশন নিবেনা, সরকারকেও নিতে হবে।” শীর্ষক মন্তব্যের অস্তিত্ব পেয়েছি এভাবে যে, যদি নির্বাচন অনিরপেক্ষ হয় বা নির্বাচন যদি খুব বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় সরকারের ওপরও সে দায় পড়বে।
মূলত, গত ১৭ ডিসেম্বর ভয়েস অফ আমেরিকাকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সাক্ষাৎকার তিনি বলেন, যদি নির্বাচন অনিরপেক্ষ হয় বা নির্বাচন যদি খুব বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় সরকারের ওপরও সে দায় পড়বে। সিইসির এই বক্তব্যকে “এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্তিতামূলক ও গ্রহনযোগ্য হচ্ছেনা. এ দায় শুধু নির্বাচন কমিশন নিবেনা” শীর্ষক মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম সিইসির পুরো সাক্ষাৎকার পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি।
সুতরাং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে “আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছেনা। এর দায় শুধু নির্বাচন কমিশন নিবেনা, সরকারকেও নিতে হবে।” শীর্ষক মন্তব্য করার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
গত ৩০ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এইমাত্র নির্বাচন স্থগিত করলো রাষ্ট্রপতি, পুনরায় তফসিল ঘোষণা নির্দেশ দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘এইমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করলো প্রধান নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় দেড় হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
পরবর্তীতে এই ভিডিওটি আরও একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। সেটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন। উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নির্বাচন স্থগিত করার কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি।
ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “অবশেষে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় তফসিল ঘোষণার কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এদিকে নির্বাচন স্থগিত করায় বিপদে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।”
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধান করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠ এর অনলাইন সংস্করণে চলতি বছরের ১১ মার্চ ‘ইসি সব সময় ইভিএমে নির্বাচন করার পক্ষে : সিইসি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একটি ছবির মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে গত ৪ নভেম্বর ‘নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে কমিশন: সিইসি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের অপর একটি ছবির মিল পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, উক্ত ছবিটি’র সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার তথ্যটি সঠিক নয়।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচারিত হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০ ডিসেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এইমাত্র নির্বাচন স্থগিত করলো রাষ্ট্রপতি, পুনরায় তফসিল ঘোষণা নির্দেশ দিলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার’ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘এইমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করলো প্রধান নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “আজ মধ্য রাত থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই জিএম কাদেরকে গ্রেফতার Bd latest news today” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হননি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে মাঠে নেমেছে বিজিবি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বরাত দিয়ে উক্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানোর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়েছেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্তে নির্বাচনে এসেছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন সুষ্ঠ না হলে ভোট বর্জন করবে তার দল।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জি এম কাদেরের প্রতিপক্ষ হিসেবে এবার নির্বাচনে লড়ছেন তৃতীয় লিঙ্গের এক প্রার্থী।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে, ভিডিওর আলোচক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, ভিডিওগুলো অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে সেনাবাহিনীর হাতে জি এম কাদেরের গ্রেফতারের দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে “আজ মধ্য রাত থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই জিএম কাদেরকে গ্রেফতার” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব বাহিনী ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামবে। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করবে।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর হাতে জি এম কাদের গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর গুলির নির্দেশ সংক্রান্ত ওবায়দুল কাদেরের কোনো ফোনালাপ ফাঁস হয়নি হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিওর খণ্ডাংশ এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণের সময় পুলিশের উপস্থিতির কারণে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
এসময় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে ঘটনার বর্ণনা করতে শোনা যায়। তবে, উক্ত প্রতিবেদনে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির আলাপ ও পরিচয় জানানো হয়নি।
অর্থাৎ, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া উক্ত ফোনালাপে ওবায়দুল কাদেরকে জড়ানো হয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বায়তুল মোকাররমের সামনে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ মিছিল করে। সে বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মী ও পুলিশের মুখোমুখি অবস্থানের ভিডিও এটি।
সুতরাং, উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওর সাথে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কর্তৃক পুলিশকে বিএনপির ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনার দাবির সত্যতা জানা যায়নি এবং এ সংক্রান্ত কোনো ফোনালাপও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় “বিএনপিকে গুলি করতে পুলিশকে ফোন পুলিশ ও কাদেরের ফোন আলাপ ফাঁস” দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পুলিশকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে উক্ত ঘটনার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে বলে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিতে থাকা জুব্বাটি হযরত ইব্রাহিম (আ.) নয় বরং হাদিস অনুসরণ করে বানানো হযরত আদম (আ.) এর রেপ্লিকা (নকল) জুব্বার ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Yayasan Restu’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৩ সালের ২০ জুন আলোচিত জুব্বার মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটি থেকে জানা যায়, এটি আদম (আ.) এর রেপ্লিকা (নকল) জুব্বা যা ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত “WARISAN RASUL AND ANBIYA” নামের একটি উৎসবে দেখানো হয়েছিলো এবং উক্ত অনুষ্ঠানটি ২০১৩ সালের ২১ জুন থেকে ০৭ জুলাই পর্যন্ত চলেছিলো।
মূলত, ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরে অবস্থিত ইসলামিক আর্ট সেন্টার ‘Yayasan Restu’ তে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি প্রদর্শনীতে দেখানোর জন্য হাদিস অনুসরণ করে হযরত আদম (আ.) এর রেপ্লিকা (নকল) জুব্বা তৈরি করা হয়। প্রদর্শনীতে দেখানো উক্ত জুব্বার একটি ছবিকে ‘হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জুব্বা’ দাবি করে ফেসবুকে একটি তথ্য বেশ কিছুদিন যাবত ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও এই জুব্বার ছবিটি হযরত আদম (আঃ) এর জুব্বা মোবারকের ছবি দাবি করা হলে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
মার্কিন গায়ক চার্লি পুথ বাংলাদেশে আসছেন জানিয়ে সম্প্রতি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে প্রকাশ হয়ে আসা এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের খবরগুলোয় দাবি করা হচ্ছিল, আগামী ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন এই গায়ক বাংলাদেশে আসছেন বলে দেশীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান সিলভারলাইন ইভেন্ট জানিয়েছে। তারা এ সংক্রান্ত টিকেটের মূল্যও নির্ধারণ করেছে বলে জানানো হয় খবরগুলোতে৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চার্লি পুথ বাংলাদেশে আসার খবরটি সঠিক নয় বরং আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চার্লি পুথের আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার খবর জানিয়ে ফেসবুক পেজে টিকেট বিক্রি এবং প্রচারণা চালিয়েছে। তবে চার্লি পুথের পক্ষ থেকে তার বাংলাদেশে আসার খবরটি সঠিক নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ২৫ ডিসেম্বর দেশের একাধিক গণমাধ্যমের (১, ২, ৩) খবরে ‘সিলভারলাইন ইভেন্টস’ নামে একটি পেজের পোস্টের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার্লি পুথ বাংলাদেশে আসবেন৷ তারিখ এখনও চূড়ান্ত না হলেও টিকিট বিক্রি শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানানো হয় খবরে। একই সাথে জানানো হয়, একই কনসার্টে বাংলাদেশের দুই শিল্পীও গান করবেন। এরা হলেন জেফার রহমান এবং তানভীর ইভান।
আমরা এই তথ্যগুলোর সূত্র ধরে আলোচিত পেজটির সন্ধান পাই যেখানে “Get ready to be swept off your feet! Excitement is building as we proudly announce the BIGGEST concert of the year – CHARLIE PUTH LIVE IN DHAKA on February 2024!” শিরোনামে এ সংক্রান্ত ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও (আর্কাইভ) আপলোড করে তথ্যগুলো জানানো হয়।
Screenshot: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিম পেজটি (আর্কাইভ) পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, এটি ২০১৫ সালের ৩০ জুন খোলা হয়। সেসময় পেজটির নাম ছিল কুইন্স কলেজ, ঢাকা। গেল ১০ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই পেজটির নাম বদলে রাখা হয় সিলভারলাইন ইভেন্টস।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, একটি কলেজ নাম বদলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে রূপ নিল!
পেজের পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে আরো চমকপ্রদ তথ্য মিললো। দেখা গেল, ২০১৯ সালে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে পেজ থেকে। কিন্তু সেই ছবি সম্বলিত পোস্টটি পাবলিশ করা হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর। অর্থাৎ, ফেসবুকের বিজনেস ম্যানেজার টুলস ব্যবহার করে ব্যাক ডেটে পোস্ট পাবলিশ করা হয়েছে পেজে। একই উপায় ব্যাকডেটে একাধিক পোস্ট করা হয়েছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
ফেসবু্কে নাফিসা নাওয়াল নামে এক ব্যক্তির পোস্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যাচ্ছে, পেজটি থেকে যে কয়েকটি ক্যারিয়ার মেলার ছবি পোস্ট করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত দুইটি সংশ্লিষ্ট মেলার ছবিই নয়।
Screenshot: Facebook
সিলভারলাইন ইভেন্ট নামের তথাকথিত এই প্রতিষ্ঠানটি চার্লি পুথের কনসার্টের জন্য ২৮ ডিসেম্বর টিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা পোস্ট (আর্কাইভ) করে তাদের পেজে।
Screenshot: Facebook
ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঢাকার আইসিসিবি এক্সপো জোনে কনসার্টটি আয়োজনের তথ্য উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার নয়, শনিবার।
Screenshot: Silverline Events Website
আমরা ঢাকার আইসিসিবি এক্সপো জোন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলছেন, কথিত প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল তবে বুকিং কনফার্ম করেনি। অর্থাৎ, ভেণ্যু চূড়ান্ত না হওয়ার পরও ওয়েবসাইটে ভেণ্যু হিসেবে উক্ত স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটের একই পাতায় প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা লেখা রয়েছে, 73/74 Karim’s Icon, Asian Highway, Chattogram 4100। কিন্তু আমরা যাচাই করে দেখেছি, এই ঠিকানায় সিলভারলাইন ইভেন্ট নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস নেই বরং ‘ডিএইচএল এক্সপ্রেস সার্ভিস পয়েন্ট’ নামে একটি কুরিয়ার ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য মোট তিন ধরণের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায় টিকেট ক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
Screenshot: Silverline Events Website
এই ওয়েবসাইটটির ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বর।
অর্থাৎ, পেজটির নাম বদলের পরই ওয়েবসাইটটি চালু করা হয়েছে।
আমাদের এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে সিলভারলাইন ইভেন্টের পেজ এবং টিকেট বিক্রির ওয়েবসাইটটিতে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
তবে এর পূর্বেই অনেকেই টিকেট ক্রয় করে ফেলেছেন ওয়েবসাইট থেকে।
Screenshot: Silverline Events Website
চার্লি পুথের আসন্ন কনসার্টগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিতে রিউমর স্ক্যানার টিম তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখেছে, সেখানে এই মুহূর্তে আসন্ন কোনো কনসার্টের তারিখের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই৷
চার্লি পুথ কনসার্টটির বিষয়ে অবগত কিনা এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে আমরা চার্লি পুথের এজেন্ট ম্যাট এলামের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলছিলেন, আমি নিশ্চিত নই কীভাবে এই সংবাদটির উৎপত্তি হলো। কিন্তু এটি সঠিক সংবাদ নয়। চার্লির বাংলাদেশে আসার কোনো সূচী নেই।
চার্লি পুথের আরেক এজেন্ট ব্রেন্ট স্মিথ রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, চার্লি কিংবা তার মুখপাত্র কারো সাথেই কেউ এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। তাদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনাও নেই।
জনাব স্মিথ রিউমর স্ক্যানার টিমকে বলেছেন, তারা আলোচিত এই বিষয়টির বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। তারা চান এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।
আলোচিত এই ঘটনার পেছনে কারা আছে সে বিষয়টিও যাচাই করার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা অন্তত তিনটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছি, যারা তাদের অ্যাকাউন্টের পরিচিতিতে সিলভারলাইন ইভেন্টে কাজ করেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে প্রথমটি এখন ডিএক্টিভ। পরের দুইটি লক অবস্থায় রয়েছে।
Screenshot: Facebook
প্রথমজনের নাম রাফাত খান (Rafat Khan)। প্রোফাইল ছবিতে স্যুট টাই পরিহিত কথিত এই ব্যক্তি ঢাকায় থাকেন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমরা যাচাই করে দেখেছি, প্রোফাইলের ছবিটি বিভিন্ন মাধ্যমের একাধিক অ্যাকাউন্টে (১, ২) রয়েছে। অর্থাৎ, ভুয়া ছবি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটি চালু ছিল।
Screenshot collage: Rumor Scanner
দ্বিতীয় ব্যক্তির (আর্কাইভ) নাম বৃষ্টি সূত্রধর পূজা। নিজেকে তিনি সিলভারলাইন ইভেন্টের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার বলে উল্লেখ করেছেন। এই অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য মেলেনি। সিলভারলাইনের কথিত এই কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সাথে (১, ২) গত কয়েকদিনে কথা বললেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে তার নাম্বারটি বর্তমানে বন্ধ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
তৃতীয় ব্যক্তি (আর্কাইভ) মাশা আহমেদ (Masha Ahmed)। ইনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন৷ তার প্রোফাইল লক থাকলেও লাইফ ইভেন্টের আপডেট বলছে, গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি একটি তথ্য আপডেট করেন যাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি ২০২২ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, এই ব্যক্তির প্রোফাইল পিকচার হিসেবে থাকা ছবিটিও কথিত রাফাত খানের মতো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। ইন্টারনেটের একাধিক মাধ্যমে থাকা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে (১, ২) এই ছবিটির অস্তিত্ব মিলেছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ, ভুয়া ছবি ব্যবহার করে এই অ্যাকাউন্টটিও চালু রয়েছে।
জেফার রহমান এবং তানভীর ইভান এ বিষয়ে অবগত কিনা সেটিও জানার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। জেফার দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, “এ রকম একটি প্রস্তাব আমি পেয়েছিলাম। তবে আমার প্রতিটা কনসার্টে কিছু বিষয় থাকে, সে বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমি প্রতিষ্ঠানটি থেকে চেয়েছি। তবে তাঁদের সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি হয়নি।” তানভীর ইভানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম আমরা। তবে তার পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
মূলত, গত ২৫ ডিসেম্বর দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, সিলভারলাইন ইভেন্ট নামে কথিত একটি দেশীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান মার্কিন গায়ক চার্লি পুথকে ঢাকায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আইসিসিবি এক্সপো জোনে চার্লি পুথের কনসার্টটি আয়োজনের কথা জানানো হয় খবরে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখেছে, সিলভারলাইন ইভেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানটি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান যারা ভিন্ন নামে থাকা একটি পেজের নাম বদলে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রচারণা এবং টিকেট বিক্রি শুরু করে। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পেজ এবং ওয়েবসাইটটি সরিয়ে নিয়েছে তারা৷ তাছাড়া, চার্লি পুথের পক্ষ থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়েছে, তার আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই৷
সুতরাং, মার্কিন গায়ক চার্লি পুথ বাংলাদেশ আসছে দাবি করে আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে চার্লি পুথের তথাকথিত কনসার্টের টিকেট বিক্রি করেছে সিলভারলাইন নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেনি। অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে গতবছরের ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষের একটি ভিডিও ফুটেজের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও গতবছরের ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ভিডিও এবং এটিএন বাংলা’র একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে পুলিশের সাথে জনগণের সংঘর্ষের একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলা ভিশনের লোগো রয়েছে এবং একজন সাংবাদিক লাইভ করছেন।
লোগো এবং সাংবাদিকের লাইভে বলা কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বাংলা ভিশনের ফেসবুক পেজে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর “মুন্সিগঞ্জে ৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে পুলিশ-বিএনপি সং ঘর্ষ; আ হ ত দুই শতাধিক” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল ৩টার পর মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসিসহ ২৫-৩০ জন ও বিএনপির ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ে নয় বরং গতবছরের ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার ভিডিও এটি।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একজন সংবাদ উপস্থাপককে সংবাদ উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এছাড়া, বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা’র লোগোও দেখা যায়।
লোগো এবং উপস্থাপিত সংবাদের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এটিএন বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ডিসেম্বর “ভোট ঠেকাতে ৭ দিনের পরিকল্পনায় বিএনপির সঙ্গী জামায়াত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)
আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটির হুবহু মিল রয়েছে।
Video Comparison: Rumor Scanner
ভিডিও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিএনপি এবং জামায়াত মিলে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কী কী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তা নিয়ে করা সংবাদ প্রতিবেদন এটি।
অর্থাৎ, এখানেও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে সম্প্রতি পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জে বিএনপি- পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনা নিয়ে প্রায় সবদেশীয় গণমাধ্যমই সংবাদ প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশন একটি লাইভ করে। পরবর্তীতে এই লাইভের সাথে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা’র ভিন্ন ঘটনার একটি সংবাদ ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে “এইমাত্র পুলিশ বিএনপি ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশকে কঠিন পিটালো বিএনপি” শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ এবং পুলিশকে বিএনপি পেটানোর দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।