সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে Mo Rahman Masum নামের একটি ফেসবুক পেইজে গত ৩ জুলাই ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সালমান এফ রহমান (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Mo Rahman Masum Facebook Post
ভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যেতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রগামী প্লেনের গেইট থেকে ফেরত পাঠিয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন। উনি হজ করে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন, তবে এমিরেটাস বিমানের গেইট থেকে উনাকে দেশে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।’
কিন্তু ভিডিওতে এসব দাবির পক্ষে তিনি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। বরং ভিডিওটিতে তিনি UK Kashba TV নামের একটি চ্যানেলের ভিডিওকে (আর্কাইভ) তার দাবির পক্ষে সূত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন।
Screenshot: UK Kashba TV
তবে অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটিতেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিপরীতে ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওতে উপস্থাপক দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকে দিয়েছে বলে গভীর জায়গা থেকে একটি তথ্য এসেছে। তবে তিনি আশা করছেন, তার এই তথ্যটি ভুল হবে না, সঠিক হবে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তিও তার দাবির পক্ষে কোনো সুনিশ্চিত তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
এছাড়া দুই ব্যক্তির কেউই তাদের ভিডিওতে সালমান এফ রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি।
সালমান এফ রহমান কি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়েছেন?
দাবিটির সত্যতা অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ৬ জুন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গত ৬ জুন বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
Screenshot: Daily Prothom Alo
বৈঠকটি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বক্তব্য ছিল। সে সব বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে সালমান এফ রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে ভিন্ন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সালমান এফ রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot: U.S. Department of the treasury
পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও সালমান এফ রহমানের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ফেসবুক পেইজ ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজেও এমন কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দাবিটি গুজব হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
মূলত, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ায় দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দিয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সালমান এফ রহমান নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ব্রাজিলের ফুটবলার ফিলিপ কুতিনহো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার বিষয়ে তার ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, কুতিনহো তার ফেসবুক পেজের স্টোরিতে একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। প্রশ্নটি এমন, বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড়কে তিনি চেনেন কিনা। জবাবে কুতিনহো জানান, তিনি জামাল ভূঁইয়াকে চেনেন এবং জামাল ভূঁইয়া তার প্রিয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফিলিপ কুতিনহো জামাল ভূঁইয়া প্রসঙ্গে তার ফেসবুক পেজে কোনো স্টোরি দেননি বরং কুতিনহোর নামে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজ থেকে উক্ত ফেসবুক স্টোরিটি দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট থেকে পাওয়া সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘P.Coutinho’ নামক পেজটিতে (আর্কাইভ) আলোচিত স্টোরিটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot from Facebook
পেজটির ‘About’ সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্টই লেখা রয়েছে যে পেজটি কুতিনহোর একটি ফ্যান পেজ।
Screenshot from Facebook
পরবর্তীতে পেজটির ট্রান্সপারেন্সি (আর্কাইভ) সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় পেজটি ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট তৈরি করা হয়েছে।
আরো পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পেজটি বাংলাদেশি একজন এডমিন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot from Facebook
অর্থাৎ, কুতিনহো জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে ফেসবুকে যে স্টোরি দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে তা কুতিনহোর নামে চালু থাকা একটি ফ্যান পেজের স্টোরি।
অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Philippe Coutinho’ নামে কুতিনহোর মূল পেজটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
পেজটিতে ২০১৫ সালের ০৭ আগস্ট এক ভিডিও বার্তায় (আর্কাইভ) কুতিনহো নিজেই এই পেজটি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ বলে জানান।
Screenshot from Facebook
উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কুতিনহো সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি তার পেজে সক্রিয় ছিলেন। সেদিন তিনি তার পেজের Bio সেকশন আপডেট করে জানান, এটি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফেসবুকে আর কোনো পোস্ট করেননি তিনি।
Screenshot from Facebook
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিপ কুতিনহোর ফেসবুক পেজ ছাড়াও অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে বাংলাদেশি ফুটবল খেলোয়াড় জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো পোস্ট খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
মূলত, সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার কুতিনহো ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলার জামাল ভুঁইয়াকে চেনেন বলে জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ‘P.Coutinho’ নামক ফেসবুক পেজটি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা ফিলিপ কুতিনিহোর আসল পেজ নয় বরং কুতিনহোর নামে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি ফ্যান পেজের স্টোরিকে আসল ভেবে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ঢাকা সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সেই সময় চেষ্টা করেছিলেন মার্টিনেজের সাথে দেখা করতে কিন্তু তিনি দেখা করতে পারেননি বলে দাবি এসেছে গণমাধ্যমে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা ফিলিপ কুতিনহোর ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার কুতিনহো ফেসবুক পেজে স্টোরি দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলার জামাল ভুঁইয়াকে চেনেন বলে জানিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেপালে গত জুনে ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং নেপালের পূর্বের বন্যার ঘটনার পুরোনো ছবিকে দেশটির সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই- ১
Screenshot source: Dhaka Post
নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয় জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দেশীয় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট, সংবাদ প্রকাশ, সময় ট্রিবিউন।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফরাসি সংবাদ সংস্থা AP এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
AP নেপালের পুলিশের মুখপাত্র বসন্ত বাহাদুর কুনওয়ারের বরাদ দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে একশোর বেশী মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল।
Screenshot source: AP
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, একটি গণমাধ্যম উক্ত ছবিটি সূত্র হিসেবে NDTV’র নাম উল্লেখ করেছে।
পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ জুন প্রকাশিত নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
NDTV তাদের প্রতিবেদনে এই ছবিটি যুক্ত করে ক্যাপশনে “প্রতীকী” ছবি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিটি সাম্প্রতিক ঘটনার সময়ের নয়।
Screenshot source: NDTV
এ বিষয়ে তাই আরো অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৮ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়।
Reuters এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধসে ভারত এবং চীনা নাগরিকসহ অন্তত ২৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
Screenshot source: Reuters
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
ছবি যাচাই – ৩
Screenshot source: ManobKantha
নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনার বিষয় জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে দেশীয় গণমাধ্যম দৈনিক মানবকণ্ঠ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেপালের মূলধারার গণমাধ্যম THE KATHMANDU POST এর ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পায়।
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ভারী বর্ষণের ফলে নেপালে বন্যার সৃষ্টি হয়। সেইসময় নেপালের দারচুলা জেলার মহাকালী নদীর ছবি এটি।
Screenshot: The Kathmandu Post
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলোর ছবিসূত্র হিসেবে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে। কতিপয় গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখেনি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে বিদেশী গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, সম্প্রতি নেপালে ভারী বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নেপালের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সাম্প্রতিক ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নেপালের সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সুতরাং, সম্প্রতি নেপালের ভারী বর্ষণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ২৮ এপ্রিল মূল ধারার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল আই “বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী সম্মানসূচক ড. বাংলাদেশের রুশো” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে দাবি করে, “বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সে বিজ্ঞানে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলো বাংলাদেশের মাহির আলী রুশো। যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনির্ভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড স্যোশ্যাল সায়েন্স তাকে এই ডিগ্রি দিয়েছে।”
একইদিন চ্যানেল আই এর ইউটিউব চ্যানেলও এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গত ১০ মে আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনও বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন বাংলাদেশের রুশো শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করে, বিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্তির গৌরব এখন বাংলাদেশের হাতে। মাত্র ১৪ বছর ১০ মাস বয়সেই সেই সম্মান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের মাহের আলী রুশো, অর্থাৎ দশম শ্রেণী পড়ুয়া রুশো এখন ড.মাহের আলী রুশো। ডিসটেন্টস লার্নিং ও জিনিয়াস অলিম্পিয়াডে গবেষণা পত্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্স রুশোকে প্রদান করেন সম্মানসূচক এই ডক্টরেট ডিগ্রি । ২৫ এপ্রিল আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস এক ইমেইলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একই দাবিতে আরেক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ডিজি বাংলা।
একই দাবিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন AP, Forbes Mexico।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহের আলী রুশো যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পাননি বরং ভুয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে হংকং থেকে পরিচালিত নামসর্বস্ব একটি কথিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থের বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন রুশো।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে মাহের আলী রুশোর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের গত ০৬ মে এর আর্কাইভ সংস্করণে আলোচিত ডক্টরেট ডিগ্রিটির সার্টিফিকেট এবং এ সংক্রান্ত একটি চিঠি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot collage: Rumor Scanner
সার্টিফিকেটে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের লোগো রয়েছে যারা যৌথভাবে রুশোকে এই সম্মাননা দিয়েছে।
সার্টিফিকেটের তথ্যমতে, রুশোকে গত ২৫ এপ্রিল Doctor of Science নামক এই সম্মাননা দেওয়া হয়। QAHE এর পক্ষ থেকে গত ২৯ এপ্রিল লেখা এক চিঠিতে রুশোর এই সম্মাননার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে জনস্বাস্থ্য ও সমাজের জন্য অবদান রাখার স্বরূপ রুশোকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে AUBSS এবং QAHE এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
AUBSS কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়?
রুশোকে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামক যে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইট এর About us পেজ থেকে জানা যাচ্ছে, এটি একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় বলে দাবি করছে তারা, যারা ডিসট্যান্স লার্নিং এর সুযোগ দিয়ে থাকে।
কীভাবে এই ডিসট্যান্স লার্নিং এর কাজটি চলে তা জানতে এ সংক্রান্ত পেজে গিয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। দেখুন এখানে।
ওয়েবসাইটের একটি পেজে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে Prof. David Ackah নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে একই নামে ঘানার একজন ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়, যার লিংকডইন অ্যাকাউন্ট (আর্কাইভ) থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে লেকচারার হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তবে তার প্রোফাইলে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) এর নাম উল্লেখ নেই। একই নামে ভিন্ন কোনো ব্যক্তির খোঁজ না পেয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে Prof. David Ackah এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ওয়েবসাইটটির Faculty Members সেকশনে এডুকেটর হিসেবে চার ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। এরা হলেন Mr. Yeoh Wee Win, Dr. Deborah S. Brockman, Ms. Mykim Tran এবং Dr. Joseph J. LeVesque।
Screenshot source: AUBSS
এর মধ্যে Mr. Yeoh Wee Win এর লিংকডইন অ্যাকাউন্টে এডুকেটর হিসেবে American University of Business and Social Sciences (AUBSS) এর নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে Ms. Mykim Tran এর লিংকডইন অ্যাকাউন্ট এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে জানতে Ms. Mykim Tran এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার পক্ষ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া Dr.Deborah Brockman নামে কোনো ব্যক্তির লিংকডইন বা নির্ভরযোগ্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব মেলেনি।
তালিকায় Dr. Joseph J. LeVesque নামে চতুর্থ যে ব্যক্তির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, তিনি গেল বছরের (২০২২) জানুয়ারিতে মারা (১, ২) গেছেন। এর পূর্বে তিনি AUBSS এ এডুকেটর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পরবর্তীতে তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির Contact Us সেকশনে গিয়ে একটি ঠিকানা (8 The Green STE A, Dover, DE 19901) ও ফোন নম্বর (302-335-7477) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot source: AUBSS
উক্ত লোকেশন গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি The Delaware Company House এর মালিকানাধীন। উক্ত ঠিকানার আশেপাশের স্থাপনায় American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
Screenshot collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে ফোন নম্বরটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ShipToBox নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ফোন নাম্বার।
Screenshot source: BBB
আরও অনুসন্ধান করে কথিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে (আর্কাইভ) আরেকটি ঠিকানা (444 Alaska Avenue Suite, Los Angeles, CA, United States, 90503) খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ঠিকানার মিল নেই।
Screenshot source: Facebook
উক্ত ঠিকানাটি গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি Shipito নামে একটি পণ্য পরিবহন কোম্পানির ওয়্যারহাউজ। উক্ত ঠিকানা এবং এর আশেপাশের স্থাপনায় American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব মেলেনি।
Screenshot source: Google Street View
AUBSS এর ফেসবুক পেজটির Page transparency (আর্কাইভ) সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ০২ এপ্রিল চালু করা পেজটি হংকং থেকে এক ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot source: Facebook
প্রতিষ্ঠানটির ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৯ সালের পহেলা এপ্রিল। এর পরদিনই ফেসবুক পেজটি খোলা হয়৷
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামক কথিত আন্তর্জাতিক সংগঠনটির ফেসবুক পেজের Page transparency (আর্কাইভ) সেকশনও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর চালু করা পেজটি হংকং থেকে তিন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
Screenshot source: Facebook
কিন্তু সংগঠনটির ওয়েবসাইটে তাদের লোকেশন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানা (1406 N. Dupont Hwy. Suite # HK0033 New Castle DE 19720) উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত ঠিকানাটি গুগলের স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, উক্ত ঠিকানাটি Fedx নামে একটি পণ্য পরিবহন কোম্পানির দোকান। উক্ত ঠিকানার আশেপাশের স্থাপনায় International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই।
Screenshot collage: Rumor Scanner
সংগঠনটি ডেলাওয়ার রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন করা বলে দাবি করা হলেও ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় সংগঠনটির কোনো হদিস মেলেনি।
সংগঠনটির ডোমেইন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এর পরদিনই ফেসবুক পেজটি খোলা হয়৷
AUBSS এর কি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় দেশটিতে অনুমোদিত তা সার্চ করে দেখা যায়। আমরা American University of Business and Social Sciences (AUBSS) নামটি সেখানে সার্চ করে এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের সাথে কথা বলেছে। দেশটির ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের সহযোগী অধ্যাপক রাগিব হাসান রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন,
“এই বিশ্ববিদ্যালয়ের .edu ডোমেইনও নেই। এটির ওয়েবসাইট দেখে এটি একটি শতভাগ জাল সাইট বলে মনে হচ্ছে।”
রুশোকে কি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে অর্থ খরচ করতে হয়েছে?
মাহের আলী রুশোকে AUBSS এর সাথে যৌথভাবে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানকারি আরেক প্রতিষ্ঠান International Association for Quality Assurance in Pre-tertiary and Higher Education (QAHE) এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে আবেদনকারিদের ১২০০ ডলার খরচ করতে হবে৷
Screenshot collage: Rumor Scanner
একই ওয়েবসাইটের আরেকটি পেজে এই ডিগ্রির জন্য আবেদন করার নিয়মাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শুরুতে একটি নমিনেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর তাদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হবে। পরবর্তীতে যোগ্য বিবেচিত হলে আবেদনকারিকে ফি এর রশিদ পাঠানো হবে। পেপালের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করার ৭-১০ দিনের মধ্যে ইমেইলে ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ড এবং ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে অ্যাওয়ার্ডের হার্ডকপি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে রিউমর স্ক্যানার টিমের আবেদন, অতঃপর…
রুশোর ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন সদস্য ছদ্মবেশে গত ২০ জুন “ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে চায়” জানিয়ে এর জন্য কী কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে তা জানতে চেয়ে QAHE কে ইমেইল করে। মেইলে আমরা জানাই, হিরণ নামে ১২ বছর বয়সী একজন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিটি পেতে আগ্রহী। একইদিন ফিরতি ইমেইলে তারা হিরণের সিভি পাঠাতে বলে। তবে আমরা পরবর্তীতে আর তাদের সাথে যোগাযোগ করিনি।
কিন্তু এর দিন ছয়েক পর, গত ২৮ জুন QAHE থেকে রিউমর স্ক্যানার টিমের উক্ত সদস্যকে মেইল করে জানানো হয়, হীরণের বয়স কম হওয়ায় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সে Young Achiever Award 2023-2024 এর জন্য আবেদন করতে পারে।
এই বিষয়টি কীভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইমেইলে তা লক্ষ্য করুন, “We suggest that we could apply for our Young Achiever Award 2023-2024.”
যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “আমরা পরামর্শ দেই যে আমরা আমাদের ইয়াং অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২০২৪ এর জন্য আবেদন করতে পারি।”
Screenshot source: Email from QAHE
একই ইমেইলে উক্ত অ্যাওয়ার্ডের ফি ৪০০ মার্কিন ডলার এবং এর সাথে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ফি পরিশোধ করার পর আমাদেরকে ইমেইলের মাধ্যমে ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ড পাঠানো হবে। ওয়েবসাইটে হীরণের নাম এবং খবর প্রকাশ করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে হীরণের সিভি পাঠাতে বলা হয় এবং এরপর তারা ফি এর রশিদ পাঠাবে বলে জানায়।
তবে আমরা ফিরতি ইমেইলে জানিয়ে দেই, আমাদের ডক্টরেট ডিগ্রিই প্রয়োজন।
কিন্তু QAHE কর্তৃপক্ষ আমাদের ইমেইলের ভাষা বুঝতে পারেনি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ, তারা পরবর্তীতে যে ইমেইলটি পাঠিয়েছে তাতে শুরুতেই যা লেখা তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে, “আমাদের ইয়াং অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২৪ -এর মনোনয়নের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
এরপর তারা তাদের সংগঠন এবং এই অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে শেষ প্যারায় লিখেছে, অতিমারী চলার কারণে এখন সশরীরে কোনো অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান হবে না।
Screenshot source: Email from QAHE
তবে অতিমারী শেষ হওয়ার ঘোষণা এখনও না এলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বৈশ্বিক যে জরুরি অবস্থা ছিল তার আর নেই এখন। কিন্তু অতিমারীর কারণ দেখিয়ে কোনো অনুষ্ঠান না হওয়ার কথা বলছে QAHE।
এই ইমেইলের জবাবে আমরা QAHE কে আমাদের পাঠানো পূর্বের মেইলটি আবার পড়ার পরামর্শ দিলে তারা জানায়, তাদের একাডেমিক বোর্ড এই নমিনেশন গ্রহণ করতে পারছে না। এরপর আর আমাদের যোগাযোগ হয়নি।
অর্থাৎ, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে QAHE এর কাছে আবেদন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাদের বয়সের কারণ দেখিয়ে অন্য একটি অ্যাওয়ার্ড এবং তার যাবতীয় ফি সম্পর্কে জানিয়েছে। তবে এই ইমেইল চালাচালিতে তাদের ইমেইলে একাধিক শব্দগত এবং বোঝার ভুল লক্ষ্য করা গেছে।
সম্মানসূচক ডক্টরেট পেতে কি ফি দিতে হয়?
রাগিব হাসান বলছিলেন, “প্রকৃত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধুমাত্র বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। সত্যিকার বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করতে কখনো ফি গ্রহণ করবে না। যদি এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান যারা অর্থের বিনিময়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে বলে আপনার সাথে যোগাযোগ করে, তাহলে এটি শতভাগ প্রতারণা। অর্থের বিনিময়ে অমুক জায়গা থেকে কেউ যদি ‘ডক্টরেট’ পায়, তবে তারা হয় খুব বোকা, নয়তো নিজেরাই প্রতারক বলে বিবেচিত হবে।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম মাহের আলী রুশোর সাথে যোগাযোগ করলে তার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে তিনি আমাদের জানান।
এপি-ফোর্বসে অর্থের বিনিময়ে রুশোর বিষয়ে প্রতিবেদন?
মার্কিন সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ (এপি) গত ২৩ মে রুশোর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রুশো সবচেয়ে কম বয়সে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
প্রতিবেদনের শুরুতেই এপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি পেইড কন্টেন্ট যা KISSPR নামক সাইট থেকে নেওয়া। এপির নিউজ স্টাফদের এই কন্টেন্টের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই।
Screenshot source: AP
পরবর্তীতে KISSPR এর ওয়েবসাইটে আলোচিত কন্টেন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
নিচের স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করুন, কন্টেন্টটি জনাব মাহের আলী রুশোই লিখেছেন বলে দেখা যাচ্ছে।
Screenshot source: KISSPR
ফোর্বস মেক্সিকোতে রুশোর বিষয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত ০৪ জুলাই। এই প্রতিবেদনেও রুশোর সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি উঠে এসেছে।
তবে ফোর্বসের এই প্রতিবেদনের লেখক হিসেবে কারো নাম উল্লেখ নেই, লেখকের স্থলে Forbes Content উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষে লেখা রয়েছে, কন্টেন্ট হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয় সেগুলোর দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড ও তাদের মুখপাত্র বা এজেন্টদের এবং ফোর্বস মেক্সিকো-এর অবস্থান এবং সম্পাদকীয় লাইন এ ব্যাপারে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
তবে ফোর্বসের স্টাফ বা সংবাদমাধ্যমটির অথোর কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উক্ত শেষ প্যারাটি উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, ফোর্বস মেক্সিকো’তে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করানো সম্ভব। এমন একটি ওয়েবসাইট পেয়েছি আমরা, যেখানে বলা হচ্ছে, ফোর্বস ম্যাক্সিকোতে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে। এই ধরনের একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে।
মূলত, সম্প্রতি দেশের কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনির্ভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড স্যোশ্যাল সায়েন্স বাংলাদেশের মাহির আলী রুশো নামক এক শিক্ষার্থীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নয় এবং এর কোনো স্বীকৃতি বা অনুমোদন নেই। ভুয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ওয়েবসাইটে দিয়ে হংকং থেকে সাইটটির ফেসবুক পেজ পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া, উক্ত কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে যৌথভাবে QAHE নামক যে সংগঠন এই ডিগ্রি দিয়েছে তারাও সাইটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছে। সাইটটির দেয়া তথ্যমতে, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে ১২০০ ডলার খরচ করতে হয়। কিন্তু স্বীকৃতি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানে কোনো অর্থ গ্রহণ করে না।
উল্লেখ্য, পূর্বে মাহের আলী রুশো কলোরাডো ইউনিভার্সিটি বোল্ডারে মাস্টার্সে ৯০ শতাংশ স্কলারশিপ পেয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হলে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, অনুমোদনহীন ভুয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিকে মাহের আলী রুশো কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, অনলাইন পোর্টাল রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটের আদলে গণমাধ্যমটির লোগোযুক্ত একটি ছবিতে এবং কিছু পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে “যত সময় বসে কাঁচা মরিচের দামের স্ট্যাটাস দেন, তত সময় ছাদের টবে একটা মরিচ গাছ লাগালে দৈনন্দিনের চাহিদা মিটে যেতো। গাছ না লাগালে তো ৭০০ টাকা কেজি হবেই।” শীর্ষক একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটের আদলে গণমাধ্যমটির লোগোযুক্ত ছবি ব্যবহার করে এবং কিছু পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে উক্ত মন্তব্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে রাইজিং বিডি নামের একটি অনলাইন পোর্টালের লোগো দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook Claim Post
এই লোগোর সূত্রে রাইজিং বিডি অনলাইন পোর্টালটিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য নিয়ে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পোস্টটিতে অনলাইন পোর্টালটি জানায়, রাইজিংবিডির নামে ছড়ানো এই ছবিটি নকল। ছবিটি আমাদের তৈরি নয়। এমনকি ছবিতে ব্যবহৃত বক্তব্যের সঙ্গেও রাইজিং বিডির কোনো সম্পর্ক নেই। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ফলো করুন।
অর্থাৎ, রাইজিং বিডির ছবি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আলোচিত মন্তব্যটি প্রচার কর হলেও অনলাইন পোর্টালটি জানায়, এই ছবিটি নকল এবং এর সঙ্গে রাইজিং বিডির কোনো সম্পর্ক নেই।
বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানেও অন্য কোনো গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত আলোচিত মন্তব্যটি নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সোমবার (৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শাপলা হলে খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মরিচ উৎপাদন করতে ছাদবাগান, ভাসমান বাগান বা ঝুলন্ত বাগান করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। কেন করতে হবে? আমি জানি বর্ষাকালে খেতে পানি উঠে যায়। মরিচ তোলা যায় না বা মরিচ পচে যায়। সেজন্য সমস্যা হয়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২১ জুন (বুধবার) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের ক্ষেতে কেউ মরিচ তুলতে যেতে পারে না। কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। সবাইকে আহ্বান করবো, এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন, বর্ষাকালে যখন দাম বাড়বে তখন সেখান থেকে খাওয়া যাবে। একটু পানি লাগলেই তাজা হয়ে যায়, আবার রান্না করে খাওয়া যায়, সহজ বুদ্ধি।’
মূলত, সম্প্রতি দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে এবং ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি মন্তব্য অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডির লোগো ব্যবহার করে এবং অনেক পোস্টে রাইজিং বিডির লোগো ব্যতীতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাঁচা মরিচ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া প্রসঙ্গে ও একইসাথে ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো নিয়ে কোনো মন্তব্য কিংবা রাইজিং বিডির ওয়েবসাইটে এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় কাঁচা মরিচের দাম। তবে পরবর্তীতে ভারত থেকে আমদানি করার কারণে কাঁচা মরিচের দাম কমে আসে। গত ৩ জুলাই দেশের শীর্ষস্থানীয় কাঁচা বাজার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৫০-২০০ টাকায়।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে এবং ছাদের টবে মরিচ গাছ লাগানো প্রসঙ্গে প্রচারিত মন্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘মাইকেল জ্যাকসনের শেষ গান যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়নি তার কপিরাইট সৌদি আরব সরকার কিনে নিয়েছে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পপ সংগীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের গাওয়া শেষ গানের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে উল্লেখিত গানটি তাঁর গাওয়া নয় বরং উক্ত গানটি পাকিস্তানি বংশদ্ভূত কানাডিয়ান গীতিকার ইরফান মক্কীর। তাছাড়া উক্ত গানটির মেধাস্বত্ত্ব সৌদি আরবের কিনে নেওয়ার তথ্যটিও মিথ্যা।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইউটিউবে Awakening Music নামের একটি চ্যানেলে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই ‘Irfan Makki – Waiting For The Call | Official Lyric Video‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ওয়েটিং ফর দ্যা কল গানটির শিল্পী ইরফান মাক্কী, এটি তার নতুন অ্যালবাম ‘I Believe’ এর একটি গান।
এছাড়া অনুসন্ধানে মাইকেল জ্যাকসনের ‘ওয়েটিং ফর দ্যা কল’ নামে কোনো গান এবং সৌদি আরব কর্তৃক তার মেধাস্বত্ত্ব কিনে নেওয়ার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাইকেল জ্যাকসনের গাওয়া গান দাবীতে যে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি মূলত ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে S M Mostafizur Rahman নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “O Allah i am waiting for the call” শিরোনামে আপলোড করা হয়।
Screenshot: S M Mostafizur Rahman
তবে ইউটিউব ভিডিওটির বর্ণনায় ইরফান মাক্কির কথাই উল্লেখ ছিলো সেখানে।
Screenshot: S M Mostafizur Rahman
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ২০২১ সালেও আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সে সময়েও বিষয়টিকে মিথ্যা উল্লেখ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।
সম্প্রতি, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রথম ছবিটি থাম্বনেইলে ব্যবহার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ(আর্কাইভ) গত ২৯ জুন এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভি(আর্কাইভ) গত ৩০ জুন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে সুইডেনের সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও এই ছবিটি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণমাধ্যম চট্টলার খবর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে প্রচারিত এই ছবি দুটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পূর্বে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পুরোনো দুটি ছবিকে সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
গত ২৯ জুন ঈদুল আযহার দিনে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। ইরাক থেকে আসা সলমন মোমিকা নামের এক অভিবাসী আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমে পবিত্র কোরআনের পাতা ছেঁড়ে, তারপর তা পোড়ায়। আরেকজন ব্যক্তি তাকে সাহায্য করে।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সংবাদে একটি পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় ফেসবুকে সম্প্রতি প্রচারিত একাধিক পোস্টেও একই ছবি সহ আরও একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই-০১
Image Collage by Rumor Scanner
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম REUTERS এর ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারি “Protests in Stockholm, including Koran-burning, draw condemnation from Turkey” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: REUTERS
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি সুইডেনের স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের বাইরে কোরআন পোড়ানোর সময়ের ছবি এটি।
ছবি যাচাই-০২
Screenshot: Facebook
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera-র ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Al Jazeera
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক চরমপন্থী ডেনিস নাগরিক সুইডেনের নাগরিকত্ব চেয়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার ছবি এটি।
অর্থাৎ, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর সাম্প্রতিক ঘটনায় গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দুটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, গত ২৯ জুন সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে এই ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে পূর্বে কোরআন পোড়ানোর পৃথক দুটি ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
প্রসঙ্গত, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সুইডেনে পবিত্র কোরআনের পোড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিন্দা ও উদ্বেগ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সুইডেনে সম্প্রতি কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি পুরোনো ঘটনার ছবি প্রচার করা হয়েছে ; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, কলকাতার অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের ‘I’M NOT VIRGIN’ শীর্ষক লেখা সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘I’M NOT VIRGIN’ লেখা সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত মধুমিতা সরকারের এই ছবিটি আসল নয় বরং ইন্টারনেট থেকে মধুমিতা সরকারের টি-শার্ট পরিহিত একটি ছবি সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে উক্ত ছবিটি তৈরী করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কলকাতার অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Madhumita Facebook Page
এই পোস্টে মধুমিতা সরকারের কয়েকটি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে আলোচিত ছবির সদৃশ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Madhumita Facebook Page
তবে এই ছবিতে প্রদর্শিত টি-শার্টের কোথাও ‘I’M NOT VIRGIN’ শীর্ষক লেখাটি দেখা যায়নি।
Image Comparison by Rumor Scanner
তবে আলোচিত ছবির সাথে মধুমিতার ফেসবুক পোস্টে প্রচারিত ছবির মধুমিতার টি-শার্টের রঙ, ব্যাকগ্রাউন্ড, অঙ্গভঙ্গি এবং হেয়ারস্টাইল এর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, মধুমিতার টিশার্টে ‘I’M NOT VIRGIN’ লেখা সম্বলিত এই ছবিটি আসল নয়।
মূলত, সম্প্রতি কলকাতার অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের ‘I’M NOT VIRGIN’ লেখা সম্বলিত কালো টি-শার্ট পরিহিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্টারনেট থেকে মধুমিতার কালো টি-শার্ট পরিহিত একটি ছবি সংগ্রহ করে তাতে ফটোশপের মাধ্যমে ‘I’M NOT VIRGIN’ শীর্ষক লেখাটি যুক্ত করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন দাবিতে ইন্টারনেটে এডিটেড ছবি প্রচারিত হলে ছবিগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, কলকাতার অভিনেত্রী মধুমিতা সরকারের ‘I’M NOT VIRGIN’ লেখা সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত এই ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
একই দাবিতে ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০১৫ সালে চিলির বন্যার সময়কার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Wall Street Journal এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ ‘Chile Declares State of Emergency in Rain-Hit North’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Wall Street Journal
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ চিলির বন্যার দৃশ্য।
এই প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটির মূল সোর্স হিসেবে European Pressphoto Agency এর নাম উল্লেখ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে European Pressphoto Agency এর ওয়েবসাইটে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: European Pressphoto Agency
উক্ত ছবির বিস্তারিত বিবরণী থেকেও চিলির বন্যার বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
Screenshot Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, চিলিতে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আট বছরেরও বেশি পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ছবিটি সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ করায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি চিলির সাম্প্রতিক বন্যার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, গত জুনে চিলিতে বন্যার ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ চিলিতে বন্যায় নদীতে পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সময়ের ছবি। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য না দেওয়ায় ছবিটি সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বে কঙ্গোতে ভারী বর্ষণে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে একাধিক পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, চিলিতে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আট বছরের বেশি পূর্বের ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সেখানে দাবি করা হয়, গত ছয় ঘন্টা ধরে ঢাকা ১৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলমের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নাগরিক টিভি অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে নোমিনেশন প্রত্যাহার করে ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে হিরো আলমকে চাপ প্রয়োগ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে! হায়রে আরাফাত, হিরো আলমকেও এত ভয়? হয়তো চাপের কারণে আগামীকালকেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন হিরো আলম!
Screenshot: Facebook
এরপরই হিরো আলমের গুম হওয়ার দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম কি-ওয়ার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের গণমাধ্যম গুলোতে উক্ত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ পায়নি।
তবে এই দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় হিরো আলমের গুম হওয়ার খবরটিকে গুজব বলে জানান তার বান্ধবী রিয়া মনি।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে ২৬ জুন প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের নিকট সাক্ষাৎকার দেন হিরো আলম এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তার গুম হওয়ার বিষয়টিকে গুজব বলে জানান। সাক্ষাৎকারটি দেখুন এখানে।
Screenshot: Youtube
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত থেকে এটি নিশ্চিত যে হিরো আলম গুম হননি।
মূলত, সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে গুম করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জানা যায়, হিরো আলম গুম হয়নি। তিনি নিয়মিত সশরীরে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার গুম হওয়ার বিষয়টি গুজব বলে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন
প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের শূন্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
উল্লেখ্য, পূর্বেও হিরো আলমকে নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একাধিক গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে এবং এখানে।