সম্প্রতি, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রথম ছবিটি থাম্বনেইলে ব্যবহার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ(আর্কাইভ) গত ২৯ জুন এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভি(আর্কাইভ) গত ৩০ জুন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে সুইডেনের সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও এই ছবিটি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গণমাধ্যম চট্টলার খবর।
এছাড়াও এই দুটো ছবি ব্যবহার করে সুইডেনের সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে প্রচারিত এই ছবি দুটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং পূর্বে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পুরোনো দুটি ছবিকে সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
গত ২৯ জুন ঈদুল আযহার দিনে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। ইরাক থেকে আসা সলমন মোমিকা নামের এক অভিবাসী আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমে পবিত্র কোরআনের পাতা ছেঁড়ে, তারপর তা পোড়ায়। আরেকজন ব্যক্তি তাকে সাহায্য করে।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সংবাদে একটি পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় ফেসবুকে সম্প্রতি প্রচারিত একাধিক পোস্টেও একই ছবি সহ আরও একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই-০১
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম REUTERS এর ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারি “Protests in Stockholm, including Koran-burning, draw condemnation from Turkey” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি সুইডেনের স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের বাইরে কোরআন পোড়ানোর সময়ের ছবি এটি।
ছবি যাচাই-০২
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Al Jazeera-র ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক চরমপন্থী ডেনিস নাগরিক সুইডেনের নাগরিকত্ব চেয়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার ছবি এটি।
অর্থাৎ, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর সাম্প্রতিক ঘটনায় গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দুটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, গত ২৯ জুন সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে এই ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে পূর্বে কোরআন পোড়ানোর পৃথক দুটি ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
প্রসঙ্গত, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সুইডেনে পবিত্র কোরআনের পোড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিন্দা ও উদ্বেগ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও গণমাধ্যমে ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সুইডেনে সম্প্রতি কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি পুরোনো ঘটনার ছবি প্রচার করা হয়েছে ; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- REUTERS: Protests in Stockholm, including Koran-burning, draw condemnation from Turkey
- Al Jazeera
- DW Bangla: ঈদের দিনে সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানো হলো
- The Daily Star: সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ওআইসিতে বাংলাদেশের নিন্দা
- Rumor Scanner’s Own Analysis