প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দুবাই থেকে ফেরত পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারলেন না সালমান এফ রহমান. আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

 ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে  সালমান এফ রহমানের বিষয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

গুজবের সূত্রপাত

দাবিটির  সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টগুলোতে তথ্যসূত্র হিসেবে UK Kashba TV নামে একটি সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব পোস্টের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে  UK Kashba TV নামের একটি চ্যানেলে গত ৩ জুলাই ‘দুবাই হয়ে আমেরিকা যাইতে চাইলে॥দুবাই ইমিগ্রেশন আটকে দেয়॥ সালমান এফ রহমান কে (আর্কাইভ)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: UK Kashba TV

ভিডিওটির শুরুতেই উপস্থাপক বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেকিং নিউজ নিয়ে এসেছি। হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ বেক্সিমকোর মালিক এফ সালমান রহমানকে আটকে দিয়েছে বলে আমাদের কাছে গভীর জায়গা থেকে আমাদের কাছে একটি তথ্য এসেছে। আমরা আশা করছি এই তথ্যটি ভুল হবে না, সঠিক হবে।’

অর্থাৎ সালমান এফ রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্র  UK Kashba TV ও তার দাবির পক্ষে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে না পারলেও তাকে সূত্র উল্লেখ করেই পরবর্তীতে সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকে দেওয়ার দাবিটি প্রচার করা হয়। 

এছাড়া দাবিটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অধিকতর অনুসন্ধানেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সালমান এফ রহমান যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের একজন চলমান সংসদ সদস্য, তাই স্বাভাবিকভাবেই দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক তাকে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হওয়ার বিষয়টি অনুমেয়। 

সালমান এফ রহমান প্রকৃতপক্ষে কোথায় ছিলেন?

রিউমর স্ক্যানার টিম দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অবস্থান নিয়ে অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে সৌদি আরব যান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

Screenshot: Independent TV

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে সৌদি আরবে সালমান এফ রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। এতে দেখা যায়, গত ২৮ জুন সালমান এফ রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘With Hon’ble President Mohommad Shahabuddin after performing Hajj on 10th Zilhaj in Royal Guest Palace Mina.’ শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট দেন।  

Screenshot: Salman F Rahman Facebook Post

পোস্টটির বিস্তারিত বিবরণীতে দেখা যায়, ছবিটি হজ পালন শেষে গত ১০ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ২৮ জুন) মিনার রয়েল গেস্ট প্যালেসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাথে তোলা। 

এটি ছাড়াও সালমান এফ রহমানের ফেসবুক পেজেই গত ৩ জুলাই ‘Honoured to meet HRH Mohammed Bin Salman in Mina Palace on 11th Zilhaj’ শীর্ষক আরও একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Salman F Rahman Facebook Post 

এই পোস্টটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি আরবি ১১ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ২৯ জুন) সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাতের ছবি।

পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আল্ভীর ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২ জুলাই ‘Good meetings with Bangladesh President Mr Shahabuddin in Mecca, Mina & Madina.’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি টুইট থেকে জানা যায়, 

Screenshot: Pakistan’s President Twitt

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন এবং এই সময় সেখানে সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন। 

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসেবে হজের পুরো সময়টাই তার সঙ্গে ছিলেন এবং একই সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে,দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক সালমান এফ রহমানকে আটকে দেওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন। 

Screenshot: Bangla Vision Youtube

পাশাপাশি এই প্রতিবেদন লেখার সময়েই ফেসবুকে আরেকটি দাবি (আর্কাইভ) ছড়িয়ে পড়ে যে, ‘দুবাই নয় আবুধাবি থেকেই ইতিহাদের যুক্তরাষ্ট্র গামী ফ্লাইটের গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সালমান এই রহমানকে. উনি ইতিহাদেই হজ্জ্ব করতে গেছিলেন।’

Screenshot: Facebook claim post

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালমান এফ রহমান হজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট নং: বিজি ৩৩১) এ  রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসেবে গত ২৩ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। 

Screenshot: Dhaka Times

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন দেখুন হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন রাষ্ট্রপতি (এনটিভি), হজে গেলেন রাষ্ট্রপতি (আরটিভি)। 

মূলত, গত ২৩ জুন সৌদি সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসেবে হজ পালন করতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এই হজযাত্রায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান হজ করে দুবাই হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পথে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালমান এফ রহমানকে দুবাইতে ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক আটকে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে আরব আমিরাত থেকে ইউএস ইমিগ্রেশনের ফেরত পাঠানো ও তার যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পারার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img