প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করলেন হাসিনা, ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকার শীর্ষক শিরোনাম এবং ডক্টর ইউনুসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করলেন হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় দেড় হাজার একশত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূসকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে দেশিয় বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজ এর সংবাদ আয়োজন নিউজ বুলেট এর একটি প্রতিবেদন লক্ষ্য করা যায়।

Screenshot: Youtube

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া ATN News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর “অতীতের ভুলের জন্য ক্ষম চাইলেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ এর তফসিল ঘোষণা করার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমার নিজের ও দলের পক্ষ থেকে যদি ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসী আপদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি’।

অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর ২০১৮ সালে নির্বাচনী তফসিলে দেওয়া বক্তব্য পদত্যাগ করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, IBTV Digital নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ ডিসেম্বর “সংলাপে বস্তে রাজি বিএনপি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রকাশিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, আগামী ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে সংকট নিরসনে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্যের প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূসও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও এবং গত ৩০ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান কর্তৃক আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধ করে সংলাপে বসার কথা জানানোর সংবাদ একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করেছেন এবং ড. মোহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img