ঢাকায় সদরঘাটে লঞ্চে আগুন দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে গত ১৮ অক্টোবর বেলা আড়াইটার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এর পর অন্তত গত মধ্যরাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আজ (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে লঞ্চে আগুনের দুইটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় আগুনের পর এবার ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চে ভয়াবহ আগুন লেগেছে।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট : দেশ রূপান্তর, সারাবাংলা, ফেস দ্যা পিপল, বাংলা ম্যাগাজিন, বরিশাল বার্তা২৪

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে ভিডিও প্রচার করে পরবর্তীতে সরিয়ে নেওয়া গণমাধ্যম : নয়া দিগন্ত।

গণমাধ্যম ছাড়াও নানা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকেও আলোচিত দাবি প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লঞ্চে আগুন লাগার এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন ঢাকার সদরঘাটে ময়ূর-৭ নামক লঞ্চে আগুন লাগার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘সদরঘাটে ময়ূর-৭ লঞ্চে আগুন’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৩০ জুনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও, সেসময় প্রথম আলোর ফেসবুক পেজেও আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অপর ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘সংবাদ সবসময়’ নামক একটি ফেসবুক পেজে একইদিন অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ জুন ‘রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে থাকা ময়ূর-৭ নামক একটি লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে প্রদর্শিত স্থান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও লঞ্চের ছবির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিডিও দুইটি একইদিন ও একই ঘটনার।

Comparison : Rumor Scanner

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে ‘রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চে আগুন’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৩০ জুনে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানীর সদরঘাটে একটি লঞ্চে আগুন লেগেছে। আজ (২০২৩ সালের ৩০ জুন) বেলা ১১টার দিকে এ আগুন লাগে। লঞ্চটি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তাঁর সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কথা বলার সময় আগুন জ্বলছিল। সদরঘাটের যে লঞ্চে আগুন লেগেছে, এর নাম ময়ূর-৭ বলে জানান আনোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চটি লালকুঠি ঘাটের ২২ নম্বর পন্টুনে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। এতে কোনো যাত্রী ছিল না। আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট সেখানে চলে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর, সদরঘাট, সদরঘাট (নদী) ও সূত্রাপুর থেকে ইউনিটগুলো লঞ্চের আগুন নেভাতে গেছে বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে একই রকম তথ্য সে সময়ে আরো একাধিক গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রেও জানা যায়।

এদিকে সম্প্রতি সদরঘাটে কোনো লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রুহুল আমিন নামে এক সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে তিনি বলেন, তিনি সরেজমিনে সদরঘাট পরিদর্শন করে এরূপ কোনো অগ্নিকাণ্ড দেখেননি৷ আলোচিত দাবিটি গুজব। তিনি আরো বলেন, ‘যে ময়ূর-৭ লঞ্চে আগুন লাগার কথা বলা হয়েছে সেটা তো সদরঘাটেই নেই’। এছাড়াও, আজ (১৯ অক্টোবর) মূলধারার গণমাধ্যম ‘একাত্তর’ টিভির ফেসবুক পেজে সদরঘাটের একটি ভিডিও প্রচার করে বলা হয়েছে, সদরঘাটে আগুনের খবর গুজব। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার ভিডিও গত আগস্ট মাসে প্রচার করে ভিডিওটি গত আগস্টের ভিডিও দাবি করা হলে সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ২০২৩ সালে ঢাকার সদরঘাটে ময়ূর-৭ নামক লঞ্চে আগুন লাগার ভিডিওকে সম্প্রতি সদরঘাটে লঞ্চে আগুনের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img