সম্প্রতি, “এই সোনার বাংলা জালাাইয়া দিল শেখের বেটি হাসিনা।” শীর্ষক একটি গান তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ গেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ ‘এই সোনার বাংলা জ্বালাইয়া দিল শেখের বেটি হাসিনা’ শীর্ষক গানটি গাননি বরং ২০২০ সালে আরটিভিতে হাসান মাহমুদের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ‘বধু মিছে রাগ করো না’ গানটির ভিডিওর সাথে আলোচিত ‘এই সোনার বাংলা জ্বালাইয়া দিলো শেখের বেটি হাসিনা’ শীর্ষক গানটির অডিও ডিজিটাল এডিটিং এর মাধ্যমে যুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
One Plus ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটিতে গাওয়া গানের সাথে অর্থাৎ ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ড অডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড অডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায় এই গানটি বাউল মদন কুমার বিএনপির একটি সমাবেশে গেয়েছিলেন।
মূলত,‘এই সোনার বাংলা জ্বালাইয়া দিল শেখের বেটি হাসিনা’ শীর্ষক একটি গান তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ গেয়েছেন দাবিতে সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উক্ত গানটি তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ গাননি। প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালে আরটিভিতে হাসান মাহমুদের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের ভিডিওর সাথে মদন কুমার নামের জনৈক বাউল শিল্পীর আলোচ্য গানের অডিও জুড়ে দিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “জাতিসংঘের জরিপে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কা ধানের শীষ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতিসংঘের জরিপে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কা ধানের শীষ আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি শীর্ষক তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, জাতিসংঘ থেকে এ ধরণের কোনো জরিপ পরিচালনা করা হয়না। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে, জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এই ধরণের কোনো জরিপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া, জাতিসংঘ ব্যতীত অন্য কোনো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গ্রহণযোগ্য সংস্থা বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় মার্কা নিয়ে জরিপ করেছে এমন কোনো তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অন্যদিক, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জাতিসংঘের এই জরিপ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয় নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “হাছিনা পাঁক্কা ঈমানদার, গোপালগঞ্জের গোলাপি আর কত কাল জ্বলাবি আর করিস না শেখ শেখ দেশের দিকে চাইয়া দেখ, হাঠা হাছিনা বাঁচা দেশ এটা আমার সোনার বাংলাদেশ” শীর্ষক দাবিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে এক নারী কর্তৃক সিঁদুর পরানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
কী দাবি করা হচ্ছে
ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এক নারী রঙিন চশমা পরিহিত শেখ হাসিনাকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন। পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ, পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে সিঁদুর পড়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে সিঁদুর পরানোর ছবিটি আসল নয় বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার ছবিতে সিঁদুর পরানোর একটি ছবি জুড়ে দিয়ে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারী দুইদিনের সফরে ভারতের আগরতলায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদানের সময় তোলা একটি ছবিতে এডিটে করে ‘ভিন্ন কোনো ছবি থেকে এক নারী কর্তৃক সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার’ ছবি বসিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই বিষয়টি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মী বহিষ্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্যাডে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দাবি করে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে ‘ইসলামপন্থী’, ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ এবং ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত এই বিজ্ঞপ্তিটি এডিটেড এবং ছাত্রলীগ তাদের নেতা-কর্মী বহিষ্কার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে ‘ইসলামপন্থী’, ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ কিংবা ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক বিশেষণ ব্যবহার করেনি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যাডের ডিজাইনে প্রচারিত এই বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে ‘ইসলামপন্থী’ এবং ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক দাবি লেখা রয়েছে। পাশাপাশি ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ শীর্ষক একটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ আগস্ট ২০২৩। এবং বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরদাতা হিসেবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের নাম উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে বহিস্কার নিয়ে গত ১৯ আগস্ট প্রকাশিত ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BSL Facebook
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিটির কোথাও ‘ইসলামপন্থী’ এবং ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক শব্দ দুটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ শীর্ষক লেখাটিও পাওয়া যায়নি।
বিপরীতে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে ইসলাম পন্থীর স্থলে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পন্থীর স্থলে শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়ের স্থলে সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় শীর্ষক শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আলোচিত বিজ্ঞপ্তি এবং ছাত্রলীগের ভেরিফাইড পেজে প্রচারিত মূল বিজ্ঞপ্তিটির পাশাপাশি তুলনা দেখুন।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও আলোচিত এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখে (১৯ আগস্ট) ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আরও তিনটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তি তিনটি দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম সমকালের অনলাইন সংস্করণে গত ১৯ আগস্ট ‘প্রক্সিকাণ্ডে অভিযুক্ত রাবির ৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী স্থায়ী বহিষ্কার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Samakal
প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের বহিস্কারের বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে ‘প্রক্সি চুক্তি’র টাকার জন্য তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি এবং জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ।
অর্থাৎ, আলোচিত এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখে বা তার আগে পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ‘ইসলামপন্থী’, শৃঙ্খলা পন্থী’ কিংবা ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক বিশেষণ ব্যবহার করে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ সভাপতি আল আমিন রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এই বিজ্ঞপ্তিটি এডিটেড। ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে এমন কোনো শব্দচয়ন ব্যবহার করা হয়নি। শিবিরের নেতা-কর্মীরা এটি ছড়াচ্ছে।”
মূলত, গত ১৯ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে ‘প্রক্সি চুক্তি’র টাকার জন্য তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি এবং জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিস্কারের একটি বিজ্ঞপ্তি ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়৷ পরবর্তীতে উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে সেখানে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে ‘ইসলামপন্থী’, ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ এবং ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক বিশেষণ যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ ও ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ২৩২ জন নেতা-কর্মীকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ হিসাবও সম্পূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ছাত্রলীগকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্যাডে ‘ইসলামপন্থী’, ‘শৃঙ্খলা পন্থী’ এবং ‘নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়’ শীর্ষক বিশেষণ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি এডিটেড বা বিকৃত।
সম্প্রতি, “সাকিব আল হাসানের চাওয়াতে এশিয়া কাপ খেলবেন মাহমুদুল্লাহ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রচারিত ভিডিওতে যা দাবি করা হচ্ছে
আইসিসির নতুন নিয়মে কপাল খুলছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। আর সেই সুযোগটাই যেনো নিলো সাকিব আল হাসান। বললেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে না নিলে তিনিই বিশ্বকাপ খেলবেন না এবং ২৪ ঘন্টার ভেতর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাকিব আল হাসানের চাওয়াতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এশিয়া কাপ খেলার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ান ডে সংস্করণের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এশিয়া কাপের দলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের থাকা না থাকা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কি না তা নিয়ে অনুসন্ধান করে।
এ প্রতিবেদনটিতে এশিয়া কাপ নিয়ে সাকিবের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমরা ভালো খেলতে পারি।’
এসব প্রতিবেদনের কোথাও সাকিব আল হাসানের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এশিয়া কাপ খেলা নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্য কোনো গণমাধ্যমেও সাকিব আল হাসানের চাওয়াতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এশিয়া কাপের দলে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সাকিব আল হাসানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ঘুরেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে দেখা যায়, টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটির শিরোনামে এশিয়া কাপের কথা বলা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে বিশ্বকাপের কথা বলা হয়েছে। যদিও এখনো বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করেনি বিসিবি।
পরবর্তীতে আরটিভি অনলাইনে গত ১৯ আগস্ট “বিসিবির পরিকল্পনায় মাহমুদউল্লাহসহ ৮ ক্রিকেটার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০ আগস্ট থেকে এশিয়া কাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দল ক্যাম্প শুরু করবে। এই ক্যাম্পের পাশাপাশি জাতীয় দলের আরও আট ক্রিকেটারকে নিয়ে বিশেষ ক্যাম্পের পরিকল্পনা রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। উক্ত ক্যাম্পে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও অংশগ্রহণ করবেন।
Screenshot from RTV
মূলত, গত ১২ আগস্ট আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করে ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে ১৭ সদস্যের এই দলে জায়গা পাননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সাকিব আল হাসানের চাওয়াতে এশিয়া কাপ খেলবেন মাহমুদুল্লাহ । তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এশিয়া কাপ খেলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সাকিব আল হাসান। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এশিয়া কাপ ২০২৩ এর ১৭ জনের দলেও অন্তর্ভুক্ত নন।
সুতরাং, সাকিব আল হাসানের চাওয়াতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এশিয়া কাপ খেলবেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল এবং ‘গয়েশ্বরএবং ভিপি নুরের হামলার ভিডিও দেখে খেপলো জাতিসংঘ প্রধান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ০৫ আগস্ট Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল ব্যবহার করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ১ মিনিট এক সেকেন্ডে বলা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কড়া বার্তা দিলো জাতিসংঘ। বিরোধী দলের সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও নির্যাতন নিয়ে কঠোর হুশিয়ারি দিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোরিও গুতেরেস। ভিডিও বার্তায় বলা হয় পুলিশের দমন নিপীড়নের ফলে বিরোধী দল তাদের সমাবেশ কিরতে পারছে না। এর ফলে গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর জন্য জাতিসংঘ তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লিখিত দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে সব রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন। একই সাথে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টির অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ব্রিফিংয়ে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, গত কয়েক মাসে বিরোধীদের বেশ কয়েকটি সমাবেশে সহিংসতা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ সেখানে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করেছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকের ব্যক্তিদের প্রতিবাদকারীদের দমনে হাতুড়ি, লাঠি, ব্যাট ও লোহার রডসহ নানা ধরনের বস্তু ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ব্রিফিংয়ে পুলিশের ব্যাপারে বলা হয়, আমরা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, কেবল জরুরি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রিতভাবে বল প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি করতেই হয়, বৈধতা, সংযমের ভিত্তিতে এবং যৌক্তিক কারণ সাপেক্ষে তা করতে হবে। অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টি অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে (০৪ আগস্ট) জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস এর ওয়েবসাইটে “Bangladesh Protests” শীর্ষক শিরোনামে একই তথ্যে প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিংটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: ohchr.org
এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের শতাধিক কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Screenshot from US Embassy Bangladesh
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মূলত, সম্প্রতি ‘শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক টাইটেল এবং ‘গয়েশ্বর এবং ভিপি নুরের হামলার ভিডিও দেখে খেপলো জাতিসংঘ প্রধান’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই এবং আলোচিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কর্তৃক বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো ভাবেই বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূতের পক্ষে এমন কাজ করার সুযোগও নেই।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ও বাহিনীটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার ছবির সাথে প্রচারিত ছবিগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের জানাজার ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জানাজার দৃশ্যটি একটি চলচ্চিত্রের অংশ। তাঁর জানাজার কোনো প্রকৃত ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেট বা অন্য কোনো সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার দৃশ্যের ছবিটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
গত ১৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া জামায়েত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজা গত ১৫ আগস্ট পিরোজপুর জেলার বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি মূলত জিয়াউর রহমানের জানাজার নয়।
Image: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানারের দীর্ঘ অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ১৯৬৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার ছবি। অপরদিকে জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিলো মানিক মিঞা এভিনিউতে।
এ নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের বিস্তারিত অনুসন্ধানপড়ুন
অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সত্যতা যাচাই করে।
এ নিয়ে যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে জেলা তথ্য অফিস, ঝালকাঠির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১১ আগস্ট ‘চলচ্চিত্র: আগস্ট ১৯৭৫‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত চলচ্চিত্রের ১ ঘন্টা ২৮ মিনিট সময়কালে বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি একটি চলচ্চিত্রের অংশ, কোনো বাস্তব দৃশ্য নয়।
বঙ্গবন্ধুর জানাজায় প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ ছিল?
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার দৃশ্যের সাথে জিয়াউর রহমান ও বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্যের তুলনা আনা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে এই তিনজনের জনপ্রিয়তা বুঝাতে৷
যদিও ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তার জানাজার নয়। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি একটি চলচ্চিত্রের অংশ, কোনো বাস্তব দৃশ্য নয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জানাজার তারিখও ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানে বঙ্গবন্ধুর জানাজার কোনো বাস্তব ছবি বা ভিডিও ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে ইতিহাসের বিবরণী থেকে বঙ্গবন্ধুর জানাজার বিভিন্ন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়।
যেমন, ১৯৭৫ সালে ঢাকা সেনানিবাসে স্টেশন কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদ পি.এস.সি’র লেখা ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা‘ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর জানাজার একটি চিত্র পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে বইটিতে আব্দুল হামিদ লিখেন, বঙ্গবন্ধুর মরদেহ ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার যোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হামলার আশংকায় হেলিকপ্টারটি ছিল অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত। এই হেলিকপ্টার যখন টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছায় তখন আশপাশের লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
Screenshot: তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদ আরও লিখেন, বঙ্গবন্ধুর লাশ বয়ে নিয়ে যাওয়া হেলিকপ্টারটির দায়িত্বে থাকা মেজর মহিউদ্দিন পুলিশের সহায়তায় কোনোক্রমে ১৫/২০ জন লোক জানাজার জন্য জড়ো করতে সক্ষম হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর জানাজার আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের লেখা ‘আগস্টের একরাত’ বই থেকে। ‘আগস্টের একরাত’ বইটি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডের পটভূমিতে রচিত হিউম্যান ট্রাজেডির উপাখ্যান।
এ হত্যাকান্ডের বিচারে ৬১ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এমনই একজন সাক্ষীর মুখ থেকে বইটিতে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য।
বইটির ২২৪ পৃষ্ঠায় ১৯৭৫ সালে টুঙ্গিপাড়া শেখ সায়রা খাতুন রেডক্রস হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকরি করা আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তির জবানবন্দী খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: আগস্টের একরাত
আব্দুল হাইয়ের জবানবন্দি থেকে বঙ্গবন্ধুর জানাজার যে বিবরণ পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর জানাজা হয় ১৬ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর দাফনকাজ সব পুলিশের সামনেই করা হয়েছে। এসময় বাইরে হাজার হাজার লোক ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরের লোক ভিতরে আসতে বাধা দেয়। ফলে ভিতরে যারা ছিল, তারাই কেবল জানাজায় অংশ নেয়।
Screenshot: আগস্টের একরাত
আব্দুল হাইয়ের জবানবন্দি থেকে আরও জানা যায়, যে স্থানে বঙ্গবন্ধুর জানাজা হয়েছিল সেখানে আরও ২ হাজারের মতো লোকের জায়গা হতো। তবে সব লোক সংকুলান করা যেত না সেখানে।
বঙ্গবন্ধুর জানাজার আরও বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দাফনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তৎকালীন পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাজী সিরাজুল ইসলামের বর্ণনা থেকে।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকে গোসল করানোসহ দাফন-কাফনের সেদিনের ঘটনা।
এসময় বঙ্গবন্ধুর জানাজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জানাজায় ২০-২৫ জন লোক ছিলাম। পুলিশ স্টাফ আর হাসপাতালের লোক জানাজায় অংশ নিলেন। জনসাধারণকে জানাজায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
Screenshot: RTV
এ সকল বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধুর জানাজায় প্রকৃত অর্থেই অল্প লোকের উপস্থিতি ছিল। একইসাথে সে সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ছিল ভিন্ন।
মূলত, গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান। পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট পিরোজপুরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তার জনপ্রিয়তা বুঝাতে এই জানাজার একটি চিত্রের সাথে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে দুইটি চিত্র জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, জিয়াউর রহমানের জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার দৃশ্য এবং বঙ্গবন্ধুর জানাজার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি একটি চলচ্চিত্রের অংশ; কোনো বাস্তব দৃশ্য নয়।
উল্লেখ্য, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জনপ্রিয়তা বুঝাতে তার জানাজার ছবির সাথে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের জানাজা দশ্যের তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ১৯১৪ সালের পহেলা জানুয়ারি শুরু হয়েছিল। ফ্লাইটটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ২৩ মিনিট। যাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১ জন” শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হওয়ার দাবিতে প্রচারিত বিমানের ছবিটি উক্ত ঘটনার নয় বরং এটি ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মধ্যে চালু হওয়া প্যান-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ ক্লিপারের ‘ফ্লাইং ক্লাউড’ নামক একটি বিমানের প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরুর আগ মুহূর্তের ছবি। ।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন IATA এর ওয়েবসাইটে ‘The story of the world’s first airline’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: IATA
প্রবন্ধটি থেকে জানা যায়, ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হয়। তবে উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিমানের প্রথম ফ্লাইটের ছবির সাথে এই প্রবন্ধে পাওয়া প্রথম ফ্লাইটের ছবির মিল পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গেটি ইমেজে ‘Pan-Am Aircraft’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Getty Images
ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ১৯৪৯ সালে প্যান-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ ক্লিপারের ‘ফ্লাইং ক্লাউড’ নামক একটি বিমানের প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্ক এবং লন্ডনের মধ্যে ওড়ার আগ মুহূর্তের র্তের ছবি।
Image Comparison by Rumor Scanner
মূলত, সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ছবিটি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি ১৯৪৭ সালে প্যান-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ ক্লিপারের ‘ফ্লাইং ক্লাউড’ নামক একটি বিমানের নিউ ইয়র্ক এবং লন্ডনের মধ্যে প্রথমবারের মতো ওড়ার আগ মুহূর্তের।
উল্লেখ্য, সেন্ট পিটার্সবার্গ-টাম্পা এয়ারবোট লাইন ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। ফ্লাইটটি ২৩ মিনিট সময় নিয়ে ১৮.৬ মাইল ভ্রমণ করে উক্ত ফ্লাইটের প্রথম যাত্রী ছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রাক্তন মেয়র আব্রাম ফিল এবং চালক ছিলেন টনি জানুস থমাস। প্রাক্তন মেয়র আব্রাম ফিল উক্ত ফ্লাইটের জন্য ৪০০ ডলার প্রদান করেছিলেন।
সুতরাং, বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ছবি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
অতি সম্প্রতি, হরতালের কারণেএইচএসসির আজকের (২২ আগস্ট) ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে‘ শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল২৪ এর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী “স্টুডেন্টদের জীবনের ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের মতো ইংরেজিতেও সময় থাকা উচিত।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলেও দাবি করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এক ব্যক্তিকে এই বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চেয়ে পোস্টও করতে দেখা গেছে একটি গ্রুপে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
তাছাড়া, আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনের সূত্র ব্যবহার করেও আজকের ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত একই দাবি ছড়াতে দেখা গেছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হরতালের কারণে আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত দাবি করে চ্যানেল২৪ কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং বাংলাভিশনও এমন কোনো সংবাদ দেয়নি। প্রকৃতপক্ষেে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় চ্যানেল২৪ এর আদলে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরির মাধ্যমে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে, কিওয়ার্ড সার্চ করে একাধিক গণমাধ্যমের (১,২) খবর থেকে জানা যায়, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দেশজুড়ে দিনব্যাপী ‘অহিংস’ হরতালের ডাক দিয়েছে প্রকৌশলী ম ইনামুল হকের নেতৃত্বাধীন সর্বজন বিপ্লবী দল।
কিন্তু এই হরতালের কারণে আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য গণমাধ্যম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও আজকের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক কোনো খবরও গণমাধ্যমে আসেনি।
পরবর্তীতে চ্যানেল২৪ এমন কোনো ফটোকার্ড বা খবর প্রকাশ করেছে কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানে চ্যানেল২৪ এর ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত হওয়ার পর এটির সূত্র অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, ‘,HSC Discussion Group 2023‘ নামক প্রায় তিন লক্ষাধিক মেম্বারের একটি গ্রুপে Anonymous হিসেবে একজনকে এই বিষয়ে পোস্ট করতে দেখা যায় গতকাল (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায়।
ফটোকার্ড ব্যতিত শুধু স্ট্যাটাস হিসেবে আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয় উক্ত পোস্টে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Screenshot : Facebook
কিন্তু কে এই ব্যক্তি? এমন প্রশ্নে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, গ্রুপটিতে সাধারণ কোনো মেম্বার Anonymous Participant হিসেবে পোস্ট করতে পারে না।
Screenshot : Facebook
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গ্রুপের এডমিন প্যানেলেরই কেউ এই পোস্টটি করে থাকতে পারেন। এডমিন প্যানেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। এরা হলেন, আরিফ হক, সিয়াম রহমান এবং নাফিস সাব্বির।
Screenshot : Facebook
আলোচিত তথ্যটির বিষয়ে নজর রাখতে থাকি আমরা। এ বিষয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করে রাত একটার কিছু পরে চ্যানেল২৪ এর আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি প্রথম পোস্ট করা হয় একই গ্রুপে। মুরাদ বাহাদুর নামক একটি অ্যকাউন্ট থেকে পোস্টটি প্রকাশ করে এটির সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এর পূর্বে কোনো পাবলিক পোস্টে এই ফটোকার্ড পাইনি আমরা। এরপর ফের আজ সকালে একই গ্রুপে ফটোকার্ডটি পোস্ট করতে দেখা যায়।
আরো অনুসন্ধান করে, এই প্রতিবেদনের বিষয়েই চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে ২১ আগস্ট প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, চ্যানেল২৪ এর ফটোকার্ডে দেওয়া তথ্যের উপর ভিন্ন একটি তথ্য জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, অতি সম্প্রতি চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের আজকের ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষা হরতালের কারণে স্থগিত করা হয়েছে’ শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল২৪ এর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। আরেক সংবাদমাধ্যম বাংলাভিশনের সূত্র ব্যবহার করেও আজকের পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত একই দাবি ছড়াতে দেখা গেছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দুই গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত কোনো খবর বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। অন্যান্য গণমাধ্যমে হরতালের কারণে এইচএসসি স্থগিত সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে ২১ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিন্ন খবরের ফটোকার্ডে দেওয়া তথ্যের উপর আলোচিত দাবিটি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, একটি গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ফটোকার্ড এবং আরেক গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে চলতি বছরের এইচএসসির ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইস্যুতে লাইভে এসে মুখ খুললেন তামিম ইকবাল খান।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও পোস্টটি দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ভিডিওতে তামিম ইকবাল যা বলছেন
‘ছোট একটা এনাউন্সমেন্ট ছিল। আমি কিছুক্ষণ আগে আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাপন ভাই আর আমাদের টিম সিলেক্টর নান্নু ভাইয়ের সাথে… আমি উনাদেরকে ফোন করেছিলাম, ফোন করে আমি কিছু জিনিস শেয়ার করেছি। যেটা আমি সবার সাথেই শেয়ার করতে চাই… আমি উনাদের বলেছি, আমার মনে হয় না যে আমার ওয়ার্ল্ড কাপ টিমে থাকা উচিত। আইএম বেসিকলি নট অ্যাভিয়েলেবল ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড কাপ। এটার দুই-তিনটি কারণ আছে। আমার কাছে মনে হয় যে গেইম টাইম ইজ ওয়ান অফ দ্যা বিগেস্ট রিজন। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে খেলছি না এই ফর্মেটটা ৷ সেকেন্ডলি ইঞ্জুরি, বাট ইঞ্জুরি মনে হয় না অত বড় সমস্যা। বিকজ আমি আশা করি, যে ওয়ার্ল্ড কাপের আগেই ঠিক হয়ে যাবো। বাট যে জিনিসটা আমাকে এই ডিসিশন নিতে ট্রিক করেছে… লাস্ট প্রায় ১৫/১৬ টা টি–টোয়েন্টি খেলি নাই, প্লাস আমার জায়গায় যারা খেলছিল আমার কাছে কোনোভাবেই মনে হয় না যে এটা ফেয়ার হতে তাদের প্রতি, যদি আমি হঠাৎ করে এসে ওদের জায়গাটা নিয়ে নেই। প্রবাবলি হয়তো বা আমি ওয়ার্ল্ড কাপ টিমে থাকতাম… বাট আমার কাছে মনে হয় না যে এটা ফেয়ার হতো।… প্রববলি এই ওয়ার্ল্ড কাপে আপনারা আমাকে দেখবেন না।… আবার ক্লিয়ার করে দেই, আইএম নট রিটায়ারিং। আমি রিটায়ার করছি না। বাট প্রবাবলি এই ওয়ার্ল্ড কাপটা আমার খেলা হবে না। আমার কাছে মনে হয় যে ইট’স এ ফেয়ার ডিসিশন…।’
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তামিম ইকবালের লাইভে এসে দেওয়া বক্তব্যটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে কেন্দ্র করে দেওয়া নয় বরং এটি ২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তামিম ইকবালের নিজের ফেসবুক পেজ থেকে আসা একটি লাইভ ভিডিও।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তামিম ইকবালের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিরোনামে কিছু ইমোজি ব্যবহার করে প্রচারিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Tamim Iqbal Facebook Post
৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এই ভিডিওটির সঙ্গে মাহমুদুউল্লাহ রিয়াদ প্রসঙ্গে তামিম ইকবালের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
এছাড়া ভিডিওটিতে তামিম ইকবাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে কিছু বলেননি। মূলত এখানে তিনি ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল। নিজের ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
অর্থাৎ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে কেন্দ্র করে তামিম ইকবালের ফেসবুক লাইভে এসে মুখ খোলার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরানো এবং এই ভিডিওটিতে তামিম ইকবাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং এখানে তিনি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই জাতীয় দলের আট ক্রিকেটারকে নিয়ে বিশেষ ক্যাম্পের পরিকল্পনার কথা জানায় বিসিবি। সেই আট ক্রিকেটারের মধ্যে অন্যতম একজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
Screenshot: RTv
মূলত, গত ১২ আগস্ট আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করে ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে ১৭ সদস্যের এই দলে জায়গা পাননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এরপর থেকেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এরই প্রেক্ষিতে তামিম ইকবাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইস্যুতে লাইভে এসে মুখ খুলেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটিতে কথাগুলো তামিম ইকবাল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে কেন্দ্র করে নয় বরং এটি ২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিতে তামিম ইকবালের ফেসবুক পেজ থেকে আসা একটি লাইভ ভিডিও।
সুতরাং, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইস্যুতে লাইভে এসে তামিম ইকবালের কথা বলার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।