শুক্রবার, অক্টোবর 4, 2024
spot_img

পুলিশ নয়, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত এই ভিডিওতে প্রদর্শিত ব্যক্তিরা যুবদলের সদস্য

সম্প্রতি, ‘বাসে আগুন দেয় আওয়ামী পুলিশ লীগ আর নাম হয় বিএনপির’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

বাসে আগুন

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত দৃশ্যে গোল চিহ্নিত ব্যক্তি পুলিশ সদস্য নন বরং ভিডিওতে গোল চিহ্নিত যে ব্যক্তিকে বাসে আগুন লাগাতে দেখা যাচ্ছে তার নাম মহিউদ্দিন হৃদয়। তিনি রমনা থানাধীন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক। বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরবর্তীতে সময়ে এই ব্যক্তিকে  জ্যাকেট বা ভেস্ট পরিহিত যে ব্যক্তির সঙ্গে দেখা গিয়েছে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। 

এবিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ফেসবুক পেজে গত ০৫ নভেম্বর ‘যেভাবে বাসে আগুন লাগায় যুবদল নেতা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Kalbela Facebook

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন এবং তার সহযোগী রমনা থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন হৃদয়কে শনাক্ত করে ডিবি পুলিশ।

এই ভিডিও প্রতিবেদনে দেখানো উক্ত দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner
Video Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে “গাড়িতে আগুন দেওয়া সেই ভেস্ট পরা যুবক শনাক্ত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই দিনে একই পোশাকে তোলা যুবদল নেতা নয়নের একটি স্পষ্ট ছবি খুঁজে পাওয়া। 

Image Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ছবিতে নয়নের পাশে হলুদ টি শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি বাসে আগুনের ঘটনায় ধারণকৃত একই ভিডিওতে নয়নের সাথেই ছিলেন।

এছাড়াও, মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৫ নভেম্বর ‘বাসে আগুন দেয়া সেই যুবদল নেতার জবানবন্দি; যেভাবে আগুন দেয়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jamuna TV

উক্ত প্রতিবেদন থেকেও গত ২৮ নভেম্বর কাকরাইলে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রচারিত ভিডিওতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ নয় বরং যুবদলের সদস্যরা জড়িত ছিল।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে গত ২৮ অক্টোবর কোথাও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার প্রমাণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের সাথে বিএনপি নেতা কর্মীদের সংঘর্ষে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে একদল লোক একটি বাসে আগুন দেয়। ঘটনা পরবর্তী সময়ে ঐ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িত রমনা থানাধীন ১৯নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন হৃদয়কে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যমতে ঐ ভিডিওতে ভেস্ট বা জ্যাকেট পরিহিত ব্যক্তি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নকে শনাক্ত করে পুলিশ। যা নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের অডিও কাট করে তাতে

‘বাসে আগুন দেয় আওয়ামী পুলিশ লীগ আর নাম হয় বিএনপির’ শীর্ষক বাক্য যুক্ত করে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও অবরোধে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করে ইন্টারনেটে প্রচারিত দুইটি ভিডিওকে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিবেদনগুলো দেখুন-

উল্লেখ্য,  গত ২০ নভেম্বর ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ১৮৫টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৫ টি যানবাহনের মধ্যে ১১৮ টিই বাস বলে জানা গেছে।

সুতরাং, অবরোধে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের সদস্যদের বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার ভিডিওকে পুলিশ কর্তৃক বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে টিকটকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img