সম্প্রতি, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে ছবিতে থাকা ব্যক্তি আমেরিকান সাবেক জেনারেল টমাস হার্লি গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্থিন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকান জেনারেল মারা যায়নি বরং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ২০০৫ সালের ৩০ নভেম্বর ইরাকে কর্মকালীন তোলা অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল জর্জ ক্যাসির।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ফটোর ওয়েবসাইট ‘gettyimage’ এ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি ২০০৫ সালে ৩০ নভেম্বর সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে মার্কিন অপারেশন চলাকালীন সময়ে ইরাকে কর্মরত মার্কিন জেনারেল জর্জ ক্যাসির ছবি।
জর্জ ক্যাসির বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগের ওয়েবসাইট ‘U.S.Department of Defence থেকে জানা যায় তিনি প্রায় ৪১ বছর যাবৎ মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর ৩৬ তম চিফ অব স্টাফ জেনারেল ক্যাসি ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল অবসর গ্রহণ করেন।
এছাড়া প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘ Cornell SC Johnson College of Business’ এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় বর্তমানে তিনি কর্ণেল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।
অর্থাৎ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি কথিত মার্কিন জেনারেল টমাস হার্লির নয় এবং প্রচারিত ছবির ব্যক্তির নাম জর্জ ক্যাসি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে কোনো মার্কিন জেনারেলের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে মার্কিন সামরিক মুখপাত্র সার্জেন্ট পাবলো সেজ এএফপি-কে জানিয়েছেন, তার জানা তথ্য মতে মার্কিন সেনাবাহিনীতে টমাস হার্লি নামের একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, যিনি সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্য ছিলেন, তিনি ১৮৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৩ সালে মারা যান।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল- ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদানের একটি রিপাবলিকান পরিকল্পনা পাস করেছে । কিন্তু প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন ইসরায়েলের পক্ষে কোনো সৈন্যকে যুদ্ধে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেয়।
মূলত, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই এক পক্ষের বিরুদ্ধে আরেক পক্ষকে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের নানা তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হত্যাকাণ্ডে আমেরিকান কথিত জেনারেল টমাস হার্লি নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে, আলোচিত দাবিতে ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি ২০০৫ সালে ইরাকে দায়িত্ব পালনকালে তোলা তৎকালীন মার্কিন জেনারেল জর্জ ক্যাসির। তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করে বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন। এছাড়া, বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীতে টমাস হার্লি নামের কোনো জেনারেল নেই এবং চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে কোনো আমেরিকান জেনারেলও নিহত হননি।
সুতরাং, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আমেরিকান জেনারেল টমাস হার্লি নিহত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Getty image : Iraqi Border Security Restored Along Iraqi-Syrian Border
- Al Jazeera : US House passes $14.5bn military aid package for Israel
- U.S.Department of Defence : Gen.George Casey Jr. speaks at the conclusion of his retirement ceremony
- Cornell SC Johnson College of Business : Official Website
- AFP : International News Agency