সম্প্রতি, ‘শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। দয়া করে কেউ এড়িয়ে যাবেন না, সাহায্য করতে না পারলেও দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে কোনো দানশীল ব্যক্তির নজরে আসে।’ শীর্ষক ক্যাপশনে চারটি ছবিসহ একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিতে প্রার্থনারত যে নারীর ছবি তার সাথে পোস্টের নারীর ছবির সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage by Rumor Scanner
মূলত, ছবিটি ভারতের রহমতুল্লাহ নামে এক শিশুর। গত ফেব্রুয়ারী মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে রহমতুল্লাহকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হলে তাকে হায়দ্রাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিশুটির মস্তিষ্কের রোগ ধরা পড়ে। ফান্ডরাইজিং ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়, শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬১০ ডলার সংগ্রহ করতে অক্ষম শিশুটির পরিবার।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে আবির নামে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদনকৃত ফেসবুক পোস্টগুলোয় উল্লিখিত ব্যক্তিগত বিকাশ ও নগদ এবং রকেট নাম্বারে যথাক্রমে (01820859521, 01820859521, 01820859521-5) যোগাযোগ করা হলে উক্ত দাবির বিষয়েকোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভারতীয় রোগাক্রান্ত শিশুর ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশের কথিত রোগাক্রান্ত শিশু আবিরের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আর্থিক সাহায্য চেয়ে করা পোস্টগুলোকে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং,বাংলাদেশের কথিত রেগাক্রান্ত শিশু আবিরের চিকিৎসার জন্য অর্থ চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক এবং মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘৮ বছরের একটা বাচ্চার দাদা রাশেদ ইকবাল এখন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ছাত্রদলকে এখন আর চাচ্চুদল নয়, বলতে হবে দাদাদল’ শীর্ষক শিরোনামে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বক্তব্য দাবিতেআলোচিত এই ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং ইন্টারনেট থেকে তার একটি ছবি ডাউনলোড করে এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদনা করে একটি ভয়েস যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook
২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে বলতে শোনা যায়, “আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নতুন সভাপতি রাশেদ ইকবাল। আমার বয়স মাত্র ৪৭ বছর। আমার বড় ছেলে তাওহীদ, ওর বয়স ২৭ বছর। তাওহীদের আবার ৮ বছরের একটা মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি জোবায়দা রহমানের ক্লাসমেট। প্রিয় ছাত্রসমাজ, সবাই আমাকে চাচাজী বা দাদা বলে ডাকবেন এবং সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
এছাড়াও ভিডিওটির বামপাশের নিচের দিকে D ID লেখা লোগো দেখা যায়। ডি-আইডি একটি জেনারেটিভ এআই টুল। এটির মাধ্যমে একটি ছবিকে ভয়েস সহকারে ভিডিওতে রূপান্তর করা যায়।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির কি-ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Rashed Iqbal Khan Facebook
অর্থাৎ, রাশেদ ইকবাল খানের ফেসবুক পেজ থেকে এই ছবিটি সংগ্রহ করে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ভয়েস যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও দেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে গত ০৯ আগস্ট ‘ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বয়স ৪৭ বছর নয়’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Daily Campus
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাশেদ ইকবাল ২০০৫ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এছাড়াও প্রতিবেদনে উল্লেখিত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রাশেদ ইকবালের জন্ম পহেলা ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স দাড়ায় ৩৬ বছর।
এছাড়াও প্রতিবেদনে উল্লেখিত ছাত্রদল সভাপতির বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং ২০০৩ সালে এসএসসি ও ২০০৫ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন।
উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটি বাস্তব নয় এবং ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বয়সও ৪৭ বছর নয়।
মূলত, গত ০৮ আগস্ট ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সংগঠনটির সিনিয়র সহ সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরই তার বয়স ৪৭ বছর এবং তার ছেলের বয়স ২৭ বছর শীর্ষক দাবিসহ তার পরিবারকে জড়িয়ে বেশকিছু তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উক্ত দাবি সম্বলিত ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের কথিত বক্তব্যের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত এই ভিডিওটি বাস্তব নয় এবং ইন্টারনেট থেকে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বয়সও ৪৭ নয়। প্রকৃতপক্ষে রাশেদ ইকবাল খানের গত ২১ ফেব্রুয়ারির প্রোগ্রামের একটি ছবি সংগ্রহ করে করে এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদনা করে একটি ভয়েস যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইনভেস্টোপিডিয়া অনুযায়ী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হলো মেশিন বা প্রোগামের মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ করা। অথবা বলা যেতে পারে মানুষের মত চিন্তা করতে পারে এমন প্রোগ্রামকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। কৃত্তিম উপায়ে এই বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয় বলে বলে একে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি বাস্তব দাবিতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবালের ভিডিওকে তার দেওয়া বাস্তব বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
চলতি বছরের (২০২৩) প্রথম ছয় মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় একটি করে ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অবাক হচ্ছেন? এটাই বাস্তব সত্য। রিউমর স্ক্যানারের সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসের গণমাধ্যম কর্তৃক প্রচারিত ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই পাওয়া গেল।
এক নজরে…
পরিসংখ্যান কী বলছে?
রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত ছয় মাসের তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে দেশের নিবন্ধিত ১৭৬ টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যাচাই করেছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে সর্বোচ্চ ৩৮ টি থেকে সর্বনিম্ন একটি ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে।
পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচারের দরুণ প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ‘সময় টিভি’। ভুল তথ্য ছিল এমন শনাক্ত হওয়া ১৭৯ টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৩৮ টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মূলধারার এই সংবাদমাধ্যম। ক্ষেত্র বিবেচনায় শুধু টেলিভিশনের তালিকাতেও সময় টিভিই প্রথম। পত্রিকার তালিকায় ২৬ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইনকিলাব। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় শীর্ষ স্থানে এসেছে ডেইলি বাংলাদেশ। গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে মে মাসে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে। পরিসংখ্যানে বেসরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভুল সংবাদ প্রচারের তালিকায় যেমন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও রয়েছে তেমনি বাদ যায়নি বিদেশী গণমাধ্যমগুলোও।
গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৭৯ টি প্রতিবেদনকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ টি ভুল তথ্য (১৯ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে মে মাসে। মার্চে শনাক্ত ৩১ টি (১৭.২২ শতাংশ)। তবে এর পূর্বের দুই মাস অর্থাৎ, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ভুল তথ্য শনাক্তের সংখ্যা একই (৩০)।
তবে প্রথম তিন মাসে গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের সংখ্যা সমান বা উর্ধ্বমুখী হলেও এপ্রিলে সংখ্যাটি নিম্নমুখী হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ মাসে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদনের সংখ্যা ২৪ টি যা আগের মাসের চেয়ে ৭ টি কম। এরপরের মাসে গিয়ে অবশ্য লাফিয়ে বেড়েছে এ সংখ্যা, গিয়ে ঠেকেছে ৩৫ এ। তবে জুন মাসে সংখ্যাটি ফের নিম্নমুখী (২৯) হতে দেখা গেছে।
ছয় মাসের সর্বমোট ১৮১ দিনে ১৭৯ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যা গড়ে প্রতিদিন অন্তত একটি!
মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর সংবাদের ছড়াছড়ি
২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) মোট ১৭৯ টি ঘটনায় ৯৮ টি মিথ্যা, ৭৭ টি বিভ্রান্তিকর, ০১ টি আংশিক মিথ্যা, ০১ টি অধিকাংশই মিথ্যা, ০১ টি স্যাটায়ার এবং ০১ টি বিকৃত তথ্যকে সত্য তথ্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৭৯ টি ঘটনায় মিথ্যা তথ্য প্রচারের হার ছিল প্রায় ৫৪.৭৪ শতাংশ। তাছাড়া, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হারও নেহায়েত কম নয়, প্রায় ৪৩.০১ শতাংশ। তবে একটি করে স্যাটায়ার এবং বিকৃত তথ্য সম্বলিত সংবাদকে সত্য হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার নিঃসন্দেহে শঙ্কার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে।
গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের এই পরিসংখ্যানে ছয় মাসের তথ্য বলছে, তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে দেশের অন্যতম ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভি। সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৮ টি ভুল সংবাদ প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ টি ভুল সংবাদ প্রচার হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে, শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৩৯.৪৭। খেলার বিষয়ে প্রচারিত ১০ টি ভুল সংবাদের মধ্যে ক্রিকেট বিষয়ক ভুল ছিল ০৩ টি এবং ফুটবল বিষয়ে ভুল ছিল ০৭ টি। এই দুই বিষয় মিলিয়ে ভুলের হার প্রায় ৬৫.৭৯ শতাংশ। এছাড়া, ধর্মীয় বিষয়ে ০৪ টি, শিক্ষা বিষয়ক ০৩ টি, বিনোদন বিষয়ক ০২ টি এবং জাতীয়, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ০১ টি করে ভুল সংবাদ প্রচার করেছে সময়।
ক্যাটাগরি বা বিষয়ের বাইরে ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় সময় টিভির সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল তথ্য কেন্দ্রিক ভুল (১৯), যা মোট ভুলের অর্ধেক। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে সময় টিভি সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ১৩ টি, যা মোট ভুলের ৩৪.২১ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রকাশের হার ১৫.৭৯ শতাংশ।
রিউমর স্ক্যানার কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদভিত্তিক এই পরিসংখ্যান প্রকাশের ক্ষেত্রে তিন ক্ষেত্রের সংবাদমাধ্যমের সংবাদগুলো যাচাই করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যম। যদিও এই তিন ধরণের মাধ্যমেরই ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্যই যাচাই করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় তালিকার শীর্ষ পাঁচে যারা আছে তাদের নাম উপরে উল্লিখিত টেবিলেই দেখতে পাচ্ছেন।
ক্ষেত্র বিবেচনায় পত্রিকার তালিকায় ২৬ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইনকিলাব। পরের অবস্থানে যুগান্তর, যাদের ভুল সংবাদের সংখ্যা ২৪ টি৷ ২৩ টি ভুল সংবাদ প্রচার করে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে দেশ রূপান্তর এবং দৈনিক আমাদের সময়। পরের অবস্থানে রয়েছে কালের কণ্ঠ (২২ টি)। পঞ্চম অবস্থানে ভাগ বসিয়েছে তিনটি পত্রিকা – মানবজমিন, কালবেলা, ভোরের কাগজ, যাদের ভুলের সংখ্যা ১৯ টি।
একইভাবে ভুল সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের তালিকায় শীর্ষ স্থানে আছে সময় টিভি (৩৮ টি)। পরের অবস্থানে দেখা যাচ্ছে ডিবিসি নিউজকে (২৭ টি)। তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছে যমুনা টিভি এবং বাংলাভিশন, যাদের ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ২৪ টি। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চ্যানেল২৪ (২২ টি) এবং একাত্তর টিভি (১৮ টি)।
অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় শীর্ষ স্থানে এসেছে ডেইলি বাংলাদেশ (৩৫ টি)। পরের চার অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে ঢাকা মেইল (৩২ টি), জুম বাংলা (২৭ টি), ঢাকা পোস্ট (২৬ টি) এবং আমাদের সময়.কম (২৩ টি)।
Banner: Rumor Scanner
কোন ক্যাটাগরিতে বেশি ভুল?
গণমাধ্যমগুলো চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রচারিত ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে (৭২ টি), শতকরার হিসেবে যা ৪০.২২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাধূলা বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে এর মধ্যে ফুটবল বিষয়ক ভুল সংবাদ ছিল ২৪ টি এবং ক্রিকেট বিষয়ে ছিল ০৯ টি। জাতীয় বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল ২৩ টি, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর বাইরে শিক্ষা বিষয়ে ১৪ টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ১২ টি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। ধর্মীয় ও বিনোদন বিষয়ে সমানসংখ্যক (০৯ টি) ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। তবে সে তুলনায় স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল বেশ কম (০১ টি)। নির্বাচনের এই বছরে নির্বাচন কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারের হার বাড়ার শঙ্কা ছিল, তবে প্রথম ছয় মাসে এ বিষয়ে মাত্র ০১ টি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। কিন্তু রাজনীতি বিষয়ে পাঁচটি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যম। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে শেষ দুই ক্যাটাগরিতে ভুল সংবাদ প্রচারের হারও বাড়তে দেখা অমূলক হবে না।
ধরনভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ ছিল তথ্য কেন্দ্রিক (৯৬ টি), যা মোট ভুলের ৫৩.৬৩ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ৬১ টি, যা শতকরা হিসেবে ৩৪.০৮ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ২২ টি।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একাধিক বিষয়েই অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা বিষয়ে গণমাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর আসলে সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, মোখা’য় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেনি। অনুসন্ধান শেষে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেশের ৬২ টি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
বেশি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে এমন তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চলতি বছরের হজ বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এই বছরের হজে অংশগ্রহণকারী হাজিদের সংখ্যা ও এই হজকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হজ দাবি করে ভুল তথ্য প্রচার করেছে ৫৫ টি সংবাদমাধ্যম। এসব গণমাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের হাজিদের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে এই বছর হজে অংশগ্রহণকারী হাজির সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন।
তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্যাক্টচেকটি ছিল বহুল আলোচিত বগুড়া-৪ আসনের নির্বাচন কেন্দ্রিক৷ গত ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম ৩৯৯, ৫৯১, ৯০৪, ৯৫১, ১০০১ ও ১২৪৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন দাবিতে ৫১ টি গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো যাচাই করে সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। হিরো আলম মূলত ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন এই নির্বাচনে।
গত ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমের সংবাদে দাবি করা হয় সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয় বরং সেসময় সূর্যের প্রমিনেন্স বা প্লাজমা বিচ্ছিন্ন হয়ে সূর্যের উত্তর মেরুতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সূর্যের কোনো অংশই “ভাঙেনি”। প্লাজমার এই ঘটনা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তাছাড়া, সংবাদগুলোয় ড. তামিথাকে নাসার কর্মকর্তা এবং ছবিটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বলে যে দাবি করা হয়েছিল সেটিও সঠিক ছিল না। এ বিষয়ে ৪৮ টি গণমাধ্যম ভুল সংবাদ প্রচার করেছে, ফলে এই সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবদনটি এই তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
তালিকার পঞ্চম অবস্থানে দেখা যাচ্ছে, বিনোদন বিষয়ক একটি ফ্যাক্টচেক। গত এপ্রিলে কেডি- দ্য ডেভিল নামক একটি সিনেমার শুটিংয়ে ব্যাঙ্গালোরে অবস্থানরত বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি দেশের ৪২ টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে সঞ্জয় দত্ত নিজেই এক টুইট বার্তায় বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
কোন ইস্যুতে বেশি ভুল?
গত ০৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর আসে গণমাধ্যমে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। রিউমর স্ক্যানার টিম তুরস্কের ভূমিকম্পের শুরু থেকেই গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরগুলোয় নজরে রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা কেন্দ্রিক সর্বমোট ১০ টি ভুল সংবাদ শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্যাক্টচেকগুলো দেখুন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একক কোনো ঘটনা বিবেচনায় তুরস্কের ভূমিকম্পেই সর্বোচ্চ ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো।
কার বিষয়ে বেশি ভুল?
পর্তুগাল এবং বর্তমানে সৌদি আরবের আল নাসর ক্লাবের ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলতি বছরের শুরু থেকেই একাধিক খবরের শিরোনাম হয়েছেন। নিজ দেশের খেলা কেন্দ্রিক সংবাদ নয় অবশ্য, তাকে বারবার শিরোনাম হতে হয়েছে ক্লাব ফুটবলের কারণেই। রিউমর স্ক্যানারের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে রোনালদোর বিষয়েই সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে, সংখ্যার হিসেবে যা নয়ে (৯) গিয়ে ঠেকেছে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন ১, ২, ৩, ৪,৫, ৬, ৭,৮, ৯।
তবে এই বিষয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রোনালদোর চেয়ে একটি কম ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির বিষয়ে। মেসির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুল সংবাদ শনাক্ত করে প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন ১, ২,৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’ এর ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট থাকলেও এসব প্লাটফর্মে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেনি রিউমর স্ক্যানার। তবে রাষ্ট্রীয় আরেক সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’ এর ওয়েবসাইটে প্রথম ছয় মাসে পাঁচটি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। সেসব সংবাদের ফ্যাক্টচেক দেখুন ১, ২, ৩, ৪, ৫।
প্রচারিত ভুল সংবাদগুলোর মধ্যে চারটিই ছিল ছবি কেন্দ্রিক ভুল, একটি ছিল তথ্য কেন্দ্রিক ভুল।
Image : BSS
বিদেশী গণমাধ্যমগুলোও বাদ যায়নি
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা এবং ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একটি করে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি দাবিতে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রচার করা হয়৷ ছবিটির ক্যাপশন ছিল এমন, “তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বহু ভবন বিধ্বস্ত কিংবা হেলে পড়েছে।”
Screenshot source: BBC Bangla
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, এটি ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ডুজসে শহরে হওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। ফেব্রুয়ারির ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি তুরস্কের ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
অন্যদিকে ডয়চে ভেলে বাংলা’র ওয়েবসাইটে গত এপ্রিলে প্রকাশিত একটি ফটো স্টোরিতে দাবি করা হয়, ১৯৩৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কর্ম’ সিনেমায় বলিউডের প্রথম স্ক্যান্ডাল ছিল এবং চার মিনিট স্থায়ী ছিল এই চুম্বন।
Screenshot source: DW Bangla
কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধারাবাহিকভাবে দুই মিনিটের কম সময়ের উক্ত চুম্বনের দৃশ্যের পূর্বে বলিউডের অন্য সিনেমায়ও চুম্বনের দৃশ্য ছিল।
অর্থাৎ, দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি এই দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশী গণমাধ্যমও ভুল সংবাদ প্রচার করেছে।
গণমাধ্যমে কেন এত ভুল?
গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে ভুলগুলোর পেছনে একাধিক কারণ নজরে এসেছে। প্রথমটি মূল সূত্রে না পৌঁছানো।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন স্পেস ওয়েদার পদার্থবিদ ড. তামিথা স্কোভ এক টুইটে জানান, সূর্যের উত্তরের প্রমিনেন্স (অঞ্চল) থেকে আসা উপাদান মূল ফিলামেন্ট থেকে ভেঙ্গে দূরে সরে গেছে এবং তখন সূর্যের উত্তর মেরুতে একটি বিশাল মেরু ঘূর্ণিতে সঞ্চালিত হচ্ছিল। তামিথার টুইটের বরাতে ভারতের NDTV, যুক্তরাষ্ট্রের Space সহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। Space এর প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওটি নাসার সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরির তোলা বলা হলেও এনডিটিভি বলেছে, এটি নেওয়া হয়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখা যায়, অধিকাংশ গণমাধ্যম ‘Space’ এবং ‘NDTV’ এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এর প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে এই ঘটনাকে সূর্যের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করা হয়। অর্থাৎ, মূল সূত্র ব্যবহার কিংবা মূল সূত্রে দেওয়া তথ্য ক্রসচেক না করেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে দেশীয় গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশ করে এ বিষয়ে।
রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, সূর্যের একটি প্রমিনেন্স বা প্লাজমা বিচ্ছিন্ন হয়ে সূর্যের উত্তর মেরুতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু সূর্যের কোনো অংশই “ভাঙেনি”। প্লাজমার এই ঘটনা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তাছাড়া, ড. তামিথাকে নাসার কর্মকর্তা এবং ছবিটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বলে যে দাবি করা হয়েছিল তাও সঠিক নয়। কিন্তু এই তিন ভুল তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে দেশীয় প্রায় অর্ধশতাধিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে। এমন একাধিক বিষয়ে একই ধরণের ভুল করতে দেখা গেছে দেশীয় গণমাধ্যমগুলোকে।
গণমাধ্যমে ভুলের ধরণে দ্বিতীয় যে বিষয়টি নজরে এসেছে আমাদের তা হলো কোনো একটি ঘটনার খবরে ঐ ঘটনার ছবি ভেবে পুরোনো ছবি ব্যবহার। প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন স্থানের ভুল ছবি ব্যবহার করে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে ৬১ টি, যা শতকরা হিসেবে মোট ভুল সংবাদের ৩৪.০৮ শতাংশ। প্রতিবেদনগুলোতে প্রচারিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো সংশ্লিষ্ট ঘটনার বলেই প্রতীয়মান হবে যার ফলে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।
পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণে তৃতীয় যে বিষয়টি নজরে এসেছে, সেটি কিছুটা শঙ্কারই বলতে হবে। সারাবিশ্বেই গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘নির্ভরযোগ্য’ গণমাধ্যমের উপর আস্থা রাখে, প্রকাশ করে তাদের দেওয়া তথ্য। কিন্তু তারাই যদি ভুল তথ্য দেয়? এমনটিই ঘটছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ২০২২ সালের ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান লিওনেল মেসি। সেসময় ফরাসি ফুটবলার অহেলিয়া চুয়ামেনির নামে তৈরি একটি ভেরিফাইড ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সর্বকালের সেরা উল্লেখ করে একটি পোস্ট করা হয়। সে পোস্টকে চুয়ামেনির আসল ফেসবুক প্রোফাইলে করা পোস্ট ভেবে চুয়ামেনি রোনালদোকে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছেন দাবি করা হয় খোদ ইএসপিএনের পেজে। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক এখানে। যদিও দেশীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি আসেনি তবে এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে৷
Banner: Rumor Scanner
ভুলের বৃত্ত থেকে বের হওয়া কতটা কঠিন?
গণমাধ্যমে ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান প্রকাশের উদ্দেশ্য একটাই, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করা। গণমাধ্যম তার আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলুক, এমন প্রত্যাশা আমরা করি না। সেই লক্ষ্যে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক সূত্র থেকে ক্রসচেক করে নেওয়া, প্রয়োজনে মূল সূত্র থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারে গণমাধ্যমগুলো। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ঘটনার ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির ব্যবহার করে ছবিটি পুরোনো কিনা সে বিষয়ে সহজেই নিশ্চিত হয়ে নেওয়া সম্ভব (এই পদ্ধতির বিস্তারিত এখানে)।
তবে কিছু সংবাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্রসচেক কিংবা প্রচলিত অনুসন্ধান কাজে দেয় না। এ ধরণের সংবাদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া একটি সাধারণ বিষয়। বাংলাদেশেও এ বিষয়টির চর্চা শুরু হতে দেখেছি আমরা। দেশের একাধিক গণমাধ্যম তথ্য যাচাইয়ে বিগত সময়ে রিউমর স্ক্যানারের সহায়তা নিয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতারই আশ্বাস দিয়ে থাকে।
সম্প্রতি ‘Grameenphone – 25th Anniversary Government Subsidy’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মেসেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত ক্যাম্পেইনের ওয়েবসাইটটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া লিংকের স্ক্রিনশট দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কোনো উপহার বা সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না বরং প্রতারণার উদ্দেশ্যে গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইট নকল করে উপহার প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ক্যাম্পেইনটির সত্যতা যাচাইয়ে ক্যাম্পেইন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Fake Website
পরবর্তীতে সেখানে পর্যায়ক্রমে চারটি প্রশ্ন সামনে আসে। সেখানে বয়স, লিঙ্গ এবং গ্রামীনফোন সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়।
Image Collage by Rumor Scanner
সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর এই ধাপটি পার হয়। এরপর অভিনন্দন জানিয়ে এই ধাপটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, বক্সের ভেতরে থাকা গিফট পেতে হলে সঠিক গিফট বক্স সিলেক্ট করতে হবে এবং এর জন্য ৩ বার সুযোগ দেওয়া হবে। অনুমানের ভিত্তিতে একটা বক্স বাছাই করলে সেখানে দুঃখপ্রকাশ করে জানানো হয় বাছাইকৃত বক্সটি খালি এবং এখনো দুইবার সুযোগ রয়েছে।
Image Collage by Rumor Scanner
পরবর্তী ধাপে সেখানে ৯টি গিফট বক্স দেখা যায়। এই ধাপটি যাচাই করার জন্য প্রদর্শিত গিফটবক্স থেকে অনুমানের ভিত্তিতে একটি বক্স সিলেক্ট করলে সেখানে বাছাইকৃত বক্সটি থেকে স্মার্টফোন বের হতে দেখা যায়। এরপর অভিনন্দন জানিয়ে একটি স্মার্টফোন জেতার কথা বলা হয়।
Image Collage by Rumor Scanner
পরের ধাপে ৫ টি ফেসবুক গ্রুপ অথবা ২০ জন বন্ধুকে এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানাতে বলা হয়। ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানাতে মেসেজিং প্লাটফর্ম মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের অপশন দেওয়া হয়। সেগুলোয় ক্লিক করলে উক্ত অ্যাপগুলোতে একটি লিংক পাঠানোর অপশন সামনে আসে।
অর্থাৎ, উক্ত ওয়েবসাইটে নির্দেশিত সকল ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করে ক্যাম্পেইনটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে দাবিকৃত কোনো উপহার পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
গ্রামীণফোন কি এমন কোনো অফার দিচ্ছে?
যে ওয়েবসাইট থেকে এই উপহার প্রদানের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে সেটি একটি ভুয়া ওয়েবসাইট। পাশাপাশি গ্রামীণফোনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্যকোনো সূত্রে উক্ত অফারের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, উক্ত ক্যাম্পেইন ওয়েবসাইটে গ্রামীণফোনের ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই উপহার প্রদানের কথা বলা হলেও গ্রামীনফোন তাদের ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী গতবছর পালন করে। অর্থাৎ, গ্রামীনফোন চলতি বছরের ২৬ মার্চ তাদের ২৬ তম বছর পেরিয়ে বর্তমানে ২৭ তম বছরে পদার্পণ করেছে। সে হিসেবে তাদের পক্ষ থেকে এবছর ২৫ তম এনিভার্সারি গিফট প্রদানের বিষয়টি অসত্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে গ্রামীনফোন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের বক্তব্য জানা যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা নিশ্চিত যে, গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে উক্ত ক্যাম্পেইনে উল্লেখিত এমনকোনো অফার দেওয়া হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে তাদের ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্মার্টফোন উপহার প্রদানের দাবিতে একটি ক্যাম্পেইন লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মেসেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রামীণফোনের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এমন কোনো অফার দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে একাধিকবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নকল করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রলোভন দেখানো হয়। সেসময় উক্ত বিষয়গুলোকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, গ্রামীণফোনের ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্মার্টফোন উপহার দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ক্যাম্পেইনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভুয়া।
সম্প্রতি,’ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি -২০২৩ ‘ শীর্ষক দাবিতে প্রথম আলোর নামে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন পোস্ট ( আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপনটি নকল। প্রকৃতপক্ষে প্রথম আলোর প্রিন্ট বা অনলাইন সংস্করণে এমন কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়নি। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের নিয়োগ নিয়ে বাস্তবে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি।
এই অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলোর নামে প্রচারিত কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। যেহেতু উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন নামে প্রচারিত হচ্ছে সেহেতু উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রথম আলোর ওয়েবসাইট, ই প্রিন্ট সংস্করণ, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণেউক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো বিজ্ঞপ্তি বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে আজ ২০ আগস্ট প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেইজে ‘মিথ্যা প্রচারণা‘ শীর্ষক একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টে প্রথম আলো জানায়, প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই বিজ্ঞপ্তিটি নকল। এটি তাদের তৈরি নয়।
Screenshot : Daily Prothom Alo Facebook Page
এছাড়া, কথিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে Community Based Health Care- CBHC এর ফেসবুক পেজে আজ (২০ আগস্ট) প্রকাশিত একটি সতর্কীকরণ পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : CBHC Facebook Page
উক্ত পোস্টের মাধ্যমে জানা যায়, ‘আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটির সাথে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সরাসরি এবং সরকারি।’
মূলত, সম্প্রতি প্রথম আলোর নামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি- ২০২৩ এর একটি বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। এছাড়া, প্রথম আলোতে এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, একটি বানোয়াট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম আলোর লোগো সংযুক্ত করে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি কেন্দ্রের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিজ্ঞাপটি নকল এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চিমস দাবিতে যে কুকুরের ছবি প্রচার করা হয়েছে সেটি চিমস নয় বরং কাবোসু নামে জীবিত আরেক মিম কুকুরের ছবিকে চিমস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইন্সটাগ্রামে kabosumama নামের একটি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ০৭ জুন প্রকাশিত একটি পোস্টে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Instagram
এই পোস্ট থেকে জানা যায়, কুকুরটির নাম কাবোসু (Kabosu)। অ্যাকাউন্টটি কুকুরটির মালিক পরিচালনা করছেন। এই কুকুরের এই ছবিটি ভাইরাল হয়ে মিমডগ নামে খ্যাতি পেয়েছে কাবোসু।
কুকুরটির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৭ বছর বয়সী কাবুসো সেসময় লিউকেমিয়া এবং লিভার ডিজিজে আক্রান্ত ছিল।
Screenshot: The Guardian
পরবর্তীতে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে কাবুসোর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গতকাল (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত এক পোস্টে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে কাবুসোর কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কোনো তথ্য না দেওয়া হলেও কুকুরটি যে এখনো অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
Screenshot: Instagram
ইনস্টাগ্রামের পাশাপাশি কুকুরটির বিষয়ে নিয়মিত একটি ব্লগসাইটেও আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
অর্থাৎ, মারা যাওয়ার দাবিতে চিমস নামে যে কুকুরটির ছবি প্রচার করা হয়েছে সেটি চিমসের ছবি নয়। বরং ছবির কুকুরটির নাম কাবোসু। সে এখনো বেঁচে আছে।
চিমস এর বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে আজ (২০ আগস্ট) সকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চিমস (Balltze নামে পরিচিত) নামের কুকুরটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট মারা গেছে। কুকুরটির মালিক ইন্সটাগ্রামে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। Balltze ও ভাইরাল মিম ডগ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিল।
পরবর্তীতে ইন্সটাগ্রামে balltze নামে একটি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে কুকুরটির মৃত্যু বিষয়ক পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়৷
Screenshot: Instagram
অর্থাৎ, মারা যাওয়া কুকুরের দাবিতে ভিন্ন এক কুকুরের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
Image Comparison: Rumor Scanner
মূলত, গত ১৮ আগস্ট ভাইরাল মিম কুকুর ‘চিমস’ মারা যাওয়ার খবরে কতিপয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিমস দাবিতে একটি কুকুরের ছবি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ছবিটি চিমসের নয়। কাবোসু নামে জীবিত একটি মিম কুকুরের ছবিকে চিমস দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, কাবোসু নামে জীবিত একটি মিম কুকুরের ছবিকে সদ্য মারা যাওয়া আরেক মিম কুকুর চিমস দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
২১ আগস্ট, ২০২৩ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়েও কতিপয় গণমাধ্যমে একই দাবি প্রচার করার প্রেক্ষিতে সেসব গণমাধ্যমকেও দাবি হিসেবে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।
সম্প্রতি, এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে– শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
গত ১৭ আগস্ট এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল সকাল ১০ টায়। এর পূর্বে সকাল ৯ টা ১ মিনিটে ফেসবুকে “Adnan Hasib Arnob” নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, HSC Bangla 1st Paper Question প্রশ্ন এটাই আসবে ১০০% সিওর। সকল বোর্ডের প্রশ্ন আপলোড দেয়া তো সম্ভব না। এখানে ৩ টা প্রমান দিলাম। ঢাকা বোর্ড, কুমিল্লা বোর্ড এবং যশোর বোর্ড প্রমান দিলাম তাও পরীক্ষার এর ১ ঘন্টা আগে।
Screenshot: Facebook
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত একটি পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে একই পোস্ট এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি সংযুক্ত করা হয়।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (HSC) পরীক্ষা বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে ১ টায় শেষ হবে।
অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্টটিতে থাকা প্রশ্নপত্রগুলোর সাথে এইচএসসি পরীক্ষার মূল প্রশ্নের (আর্কাইভ) মিল পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তীতে, Adnan Hasib Arnob’ নামক আলোচিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত পোস্টটির ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯ টা ১ মিনিটে যখন পোস্ট করা হয়, তখন পোস্টের সাথে প্রশ্নপত্রের কোনো ছবি যুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে বিকাল ২ টা ৩৪ মিনিটে প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়। এরপর ২ টা ৪৩ মিনিটে পোস্টটি আবারও এডিট করা হয়।
সর্বশেষ ২ টা ৪৩ মিনিটে পোস্টটি এডিট করে ঢাকা, রাজশাহী ও কুমিল্লা বোর্ডের জায়গায় ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোর বোর্ড লিখা হয়।
Screenshot: Facebook
এছাড়া, “Fahad Ahmmed” নামের আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার গুজব ছড়ানো (আর্কাইভ) হয়েছে।
উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টটির ‘Edit History’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯ টা ২ মিনিটে তিনিও ছবি ছাড়া পোস্ট দেন এবং পরবর্তীতে ২ টা ২৬ মিনিটে ছবি যুক্ত করে এবং সর্বশেষ ২টা ৪৫ মিনিটে বোর্ডের নাম সংশোধন করেন।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ পোস্টগুলোতে কোনো ছবি যুক্ত না করে পোস্ট করা হয়েছে সকালে এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রশ্নপত্রটি যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া শীর্ষক কোনো তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৭ আগস্ট এইচএসসি-২০২৩ এর বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার পূর্বে প্রকাশিত দুইটি পোস্টে দাবি করা হয়, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। উক্ত পোস্টগুলোর সাথে প্রশ্নপত্রের একটি ছবিও যুক্ত করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা পর পোস্টগুলো এডিট/সম্পাদনা করে প্রশ্নপত্রের ছবি যুক্ত করা হয়।
সম্প্রতি ‘প্রশ্ন কিনে চান্স পেয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজের ২২ বা ১১ জনের ভর্তি বাতিলকরা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি মেডিকেল ভর্তি ফাঁস চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোর তথ্যসূত্র খোঁজার চেষ্টা করে। তবে পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে এ নিয়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ জাতীয় কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে বেসরকারি সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ আগস্ট ‘ডাক্তার নামে ওরা কারা?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রায় ১৬ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Channel 24
প্রতিবেদনটির ১১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিঞার একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
যেখানে তিনি বলেন, ‘যারা এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছেন, এই টোটাল ব্যাপারটা যদি প্রমাণিত হয় এবং কারা ভর্তি হয়েছেন সেটাও যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তাদের ব্যাপারে কারো সিম্প্যাথি থাকা উচিত না।’
Screenshot: Channel 24
একই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে। যাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ঢাকা ও খুলনা মেডিকেল কলেজের দুইটি চিঠি দেখানো হয়।
এই দুইটি চিঠি সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চিঠি দুইটিতে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ২২ শিক্ষার্থীর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো চিঠিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে তদন্তের স্বার্থে খুলনা মেডিকেলে অধ্যায়নরত/এম.বি.বি.এস. উত্তীর্ণ ১১ জন ছাত্র/ছাত্রীর তথ্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ দীন-উল ইসলামের কাছে পাঠানো হয়েছে।
Screenshot: Channel 24
এই চিঠি ও পাশাপাশি চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনটি থেকে কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ দীন-উল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে।
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবিটির কোনো সত্যতা নেই। তিনি ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাননি।
এছাড়া একই কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মেহেদী নেওয়াজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ সংক্রান্ত দাবিগুলো সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন, ‘ইনফরমেশনটা সঠিক নয় আমরা এই ধরনের কোন ইনফরমেশন কলেজ পাইনি।’
মূলত, সম্প্রতি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি ১৭০ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে। যাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিঠিও পাঠাতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি চিঠি খুলনা মেডিকেল কলেজেও পাঠানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি খুমেক কর্তৃপক্ষও উক্ত দাবিটির কোনো সত্যতা নেই উল্লেখ করে তারা এমন কোনো চিঠি পায়নি বলে জানান।
সুতরাং, প্রশ্ন কিনে চান্স পাওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজের কথিত ২২ বা ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘গভীর রাতে নয়াপল্টনে মির্জা আব্বাস-গয়েশ্বর সহ বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট রাতে গ্রেফতার হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছিলেন না বরং তারা দুজনই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার পরবর্তী দলের কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে গত ২০ আগস্ট ‘মধ্যরাতে নয়াপল্টনে আব্বাস-গয়েশ্বর, নেতাকর্মী গ্রেফতারের অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jagonews24.com
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে শনিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এই খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন।
পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে গত ২০ আগস্ট ‘গভীর রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আব্বাস-গয়েশ্বর’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ittefaq
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এতে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ১৯ আগস্ট মধ্যরাতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিএনপির এই দুই নেতা ছিলেন না।
মূলত, গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে ১৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মধ্যরাতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পরবর্তীতে এই বিষয়টিকে বিকৃত করে বিএনপির এই দুই নেতা সহ ১৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ আগস্ট) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ পদযাত্রা কর্মসূচি নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিএনপিকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, গত ১৯ আগস্ট মধ্যরাতে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি,‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে প্রথম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটিকস ইন্টারন্যাশনাল শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক বিবেচিত হয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, বাশার আল-আসাদ এবং তৃতীয় নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিমজং উন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং অনির্ভরযোগ্য কিছু ওয়েবসাইটের জরিপের বরাতে করা ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টালের সংবাদের সূত্রে ধরে উক্ত তথ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।
মূলত, অস্তিত্বহীন কিছু সাইট ও দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) নামের একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের জরিপকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক/ নিকৃষ্ট শাসক/ একশত বছরে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাঁচজন সরকার প্রধান দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। ফলে কেউ যখন এসব কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে অনুসন্ধান করে তখন গুগল তার ডাটাবেইজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব কি-ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে ফলাফল হিসেবে অনুসন্ধানকারীর সামনে উপস্থাপন করে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব ফলাফলকেই ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী লিখে Google-এ অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শিত হওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷
পূর্বেও একই দাবিতে ছবিটি প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।