সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ভবন দখলের ভুয়া খবর

গত ১৫ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয় ও নির্বাচন ভবন দখলে নিলো জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

সেনাবাহিনী

ইউটিউবে প্রচারিত  ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি ২ লক্ষ ৮ হাজার ১ শত ৮২ বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে প্রায় ৫ হাজার সংখ্যক লাইক দেওয়া হয়েছে।

উক্ত ইউটিউব ভিডিওটি বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি থেকেও পোস্ট করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ভবন দখলে নেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার সাম্প্রতিক ও পুরোনো বিক্ষোভ এবং মশাল মিছিলের দুইটি ভিডিও ক্লিপ ও কিছু ছবি যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিও ক্লিপ দুটির বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম ভিডিওটি গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলের। 

Video Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তী ভিডিও ক্লিপে দেখানো ভিডিওটি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা দাবিতে গত ১৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের মশাল মিছিলের।

Video Comparison by Rumor Scanner 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা এই দুই ভিডিও ক্লিপের কোনটিতেই সচিবালয় বা নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও করার কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাছাড়া উক্ত ঘটনার সাথে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতারও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচন কমিশন ভবন এবং সচিবালয় ঘেরাওয়ের পথে জামায়াত-শিবিরের হাজারো নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করছেন জামায়াত শিবিরের লাখো নেতাকর্মী। জামায়াতের নেতাকর্মীরা হুশিয়ার দিয়ে বলেন, অবিলম্বে তফসিল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ভবন দখলে নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘রাতেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয় ও নির্বাচন ভবন দখলে নিলো জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ভবন দখলে নেওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img