সম্প্রতি,’ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত ‘ শীর্ষক একটি তথ্যকে একাত্তর টিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে পারে শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষেে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একাত্তর টিভির আদলে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরির মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথমে একাত্তর টিভির আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। যেহেতু উক্ত ফটোকার্ডটি একাত্তর টিভির ফটোকার্ডে প্রচারিত হচ্ছে, তাই উক্ত ফটোকার্ডে থাকা তথ্য অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে একাত্তর টিভির ওয়েবসাইট, ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে আরও পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত ফটোকার্ডে দেওয়া পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ছবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড একাত্তর টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ফটোকার্ড দুইটিতে থাকা তথ্যের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।
Image comparison: Rumor Scanner
একাত্তর টিভির ফটোকার্ডটিতে দেওয়া ছিলো,’এইচএসসির স্থগিত চার পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা।’
বিপরীতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে দেওয়া হয়, ‘এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত।’
পরবর্তীতে একাত্তর টিভির ফটোকার্ডে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাত্তর টিভির ওয়েবসাইটে গত ১৩ আগস্ট ‘এইচএসসির স্থগিত চার পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Ekattor TV website
প্রতিবেদনে দলটিতে বলা হয়, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম চারটি বিষয়ের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।’
অর্থাৎ, একাত্তর টিভির ফটোকার্ডে দেওয়া তথ্যের উপর ভিন্ন একটি তথ্য জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডে সূত্র হিসেবে ‘নাফ’ এর নাম উল্লেখ থাকলেও এই নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা বিষয়ক কোনো নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব মেলেনি।
মূলত, সম্প্রতি চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার তারিখ পেছানো এবং নম্বর পুনর্বন্টনসহ চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ফেসবুকে একাত্তর টিভির আদলে তৈরি ফটোকার্ডে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে যে, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেখা যায় একাত্তর টিভির আদলে তৈরি উক্ত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
সুতরাং, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে পারে শীর্ষক দাবিতে একাত্তর টিভির আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি ভুয়া এবং আলোচিত দাবিটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘কানাডার জনপ্রিয় র্যাপার ক্লেয়ার হোপের রহস্যজনক মৃত্যু’ হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কানাডার জনপ্রিয় র্যাপার লিল টে ওরফে ক্লেয়ার হোপ মারা যাননি বরং তিনি জীবিত আছেন বলে নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট লিল টের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তার ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়।
Screenshot from TMZ: The Deleted Insta Post
এছাড়া লিল টের ম্যানেজমেন্টও ভ্যারাইটিকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তবে প্রতিবেদনে থাকা এ সংক্রান্ত ইনস্টাগ্রামের পোস্টটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেটি ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
Screenshot: variety.com
তবে ম্যাগাজিনটি পরবর্তীতে এই বিষয়টি হালনাগাদ করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলয়েড সংবাদ মাধ্যম টিএমজেডের বরাতে জানায়, লিল টে মারা যাননি। তিনি জীবিত আছেন এবং তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে এ নিয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সংবাদ মাধ্যম ভক্সে ১০ আগস্ট ‘Lil Tay’s reported death hoax, explained as much as possible’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার লিল টের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৯ আগস্ট দেওয়া একটি পোস্টে লিল টে ও তার ভাই মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়।
তবে এ সংবাদ মাধ্যমটিও গত ১০ আগস্ট টিএমজেডকে দেওয়া লিল টের সাক্ষাতকারটিকে উদ্ধৃত করে জানায়, লিল টের দাবি অনুযায়ী তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছিল। তার ও তার ভাই নিরাপদ ও জীবিত আছেন। তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি তৃতীয় পক্ষের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল এবং তার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়িয়েছিল, এমনকি তার নামটিও ভুল ছিল। তার লিগ্যাল নাম Tay Tian, ’Claire Hope’ নয়।
Screenshot: vox.com
পাশাপাশি লিল টের বাবার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি উল্লেখ করে গণমাধ্যমটি জানায়, তার বাবা লিল টের মৃত্যুর বিষয়ে ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে কোনো মন্তব্য করেননি এবং নিজেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নিশ্চিত করেননি। এছাড়া লিল টেয়ের এক সাবেক ম্যানেজারও জানান, লিল টের বাবা তার মেয়ের মৃত্যুর খবরটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি লস অ্যাঞ্জেলেস বা ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ বিভাগের কেউও লিল টে ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না বলে জানায়।
মূলত, গত ৯ আগস্ট তারকা র্যাপার লিল টের নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে তার ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, লিল টে গত ১০ আগস্ট গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ও তার ভাই সুস্থ আছেন। তার ইনস্টাগ্রাম অ্য্যাকাউন্টটি হ্যাক করে তৃতীয় পক্ষের কেউ তাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল।
সুতরাং, কানাডার জনপ্রিয় র্যাপার লিল টে ওরফে ক্লেয়ার হোপ ও তার ভাইয়ের মৃত্যু দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান রাজনৈতিক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হয়েছেন’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের রাজনৈতিক বিষয়ক কোনো পরীক্ষায় বিশ্বে প্রথম হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি বরং ২০২১ সালে জাইমা রহমান নামে একটি ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে এই তথ্যটি ছড়ানো হয়।
মূলত, ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের নামে পরিচালিত একটি ভুয়া ফেসবুক পেজে (Zaima Rahman) কোনো প্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ‘জাইমা রহমান লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষা দিয়ে বিশ্বে প্রথম হয়েছেন’ শীর্ষক তথ্যটি প্রথম প্রচার করা হয়। যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে তারেক কন্যা জাইমা এ ধরনের কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় এটি মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, দেশীয় গণমাধ্যম চ্যানেল ২৪ এ ‘সৌদিতে বাড়ি, গাড়ী এমনকি বিমানও দেয়া হচ্ছে নেইমারকে!’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয় সৌদি আরব দেশটিকে নিয়ে ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্ট করলেই প্রায় ৬০ কোটি টাকা পাবেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমার।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবকে প্রোমোট করে দেওয়া প্রতি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের জন্য ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমারের ৬০ কোটি টাকা পাবার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরবকে প্রোমোট করে দেওয়া প্রতি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য নেইমার ঠিক কত টাকা পাবেন তার অফিশিয়াল কোনো তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় সৌদি আরব নিয়ে প্রতি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের জন্য নেইমার প্রায় ৬ কোটি টাকা পাবেন বলে দাবি করা হয়/উল্লেখ করা হয়।
সংবাদটির শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবকে প্রমোট করে নেইমার যদি কোনো পোস্ট দেন তাহলে প্রতি পোস্টের জন্য পাবেন ৪.৫ কোটি টাকা।’
Screenshot: Channel24
অর্থাৎ, ওয়েব আর্টিকেলে সৌদিকে প্রমোট করে করা প্রতি পোস্টের জন্য নেইমার ৪.৫ কোটি টাকা পাবেন উল্লেখ করা হলেও ভিডিও প্রতিবেদনে ৬০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়। যার মাধ্যমে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবকে প্রোমোট করে এমন প্রতিটি পোস্ট বা স্টোরি আপলোড করার জন্যে ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে ৪৩০০০০ পাউন্ড অর্থ প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
গুগলের আজকের এক্সচেঞ্জ রেট অনুসারে ১ পাউন্ড = ১৩৯.৩৫ টাকা। সে অনুসারে ৪৩০০০০ পাউন্ড = ৫৯৯১৯৯৩৬.৩৬ টাকা। যা প্রায় ৬ কোটি টাকার সমান
উক্ত সংবাদেও নেইমারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি আরবকে প্রমোট করে প্রতিটি পোস্টের জন্যে ৪.৩০ লাখ পাউন্ড পাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: DailyStar
অপদরিকে Worldsoccertalk নামের একটি ফুটবল ভিত্তিক অনলাইন পোর্টালে Neymar to be paid $500K per social media post by Saudi Arabia শিরোনামে গত ১৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে সৌদি আরব নিয়ে প্রতি সোস্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য নেইমার ৫০০ হাজার ডলার পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়।
Screenshot: Worldsoccertalk
অর্থাৎ, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটের দাবি অনুযায়ী নেইমার সৌদি আরবকে প্রোমোট করে দেওয়া প্রতিটি পোস্টের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা পাবেন। আন্তর্জাতিক কোনো মিডিয়া বা সাইটে প্রতি পোস্টের জন্য ৪৩০ হাজার ডলার বা ৫০০ হাজার ডলার (৫ কোটি ৪৫ লাখ বা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি) এর বেশি কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
মূলত, সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমার সৌদি আরবের আল হিলাল ক্লাবের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়। সেই প্রেক্ষিতেই গত ১৫ আগস্ট চ্যানেল ২৪ এ সৌদি আরবে ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে কি কি সুবিধা প্রদান করা হবে তা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এবং লিখিত প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ওয়েব আর্টিকেলে সৌদিকে প্রোমোট করে প্রতি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের জন্য নেইমার ৪.৫ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলোও ভিডিও প্রতিবেদনে ৬০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সাইটে ৬-৭ কোটি টাকার বেশি কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, নেইমার ঠিক কত পাবেন এর অফিশিয়াল কোনো ঘোষণা না থাকলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া/সাইটের তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবকে প্রোমোট করে দেওয়া প্রতি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য নেইমার ৬ কোটি থেকে ৭ কোটি টাকা পাবেন বলে জানা যায়।
সুতরাং, সৌদিকে প্রমোটে প্রতি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য নেইমারের ৬০ কোটি টাকা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজার মামলা নয় বরং তার মৃত্যুর পর ঢাকায় জানাজার দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিভ্রান্তিকর তথ্যের সূত্রপাত
দাবিটির সূত্রপাত সম্পর্কে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি নিউজের বাংলা সংস্করণ বিবিসি বাংলায় ১৭ আগস্ট ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি মামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: BBC Bangla
প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটির সূচনা অংশে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে ঢাকা ও কক্সবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় সাত হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ রয়েছে।
Screenshot: BBC Bangla
অর্থাৎ গণমাধ্যমটির শিরোনামের সাথে মূল সংবাদের তথ্যের গড়মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি এ গড়মিল শুধরে নিয়ে শিরোনামে ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর সারাদেশে ৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা’ শীর্ষক পরিবর্তন করে।
Image Collage: Rumor Scanner
অর্থাৎ বিবিসি বাংলায় সাত হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যদিও প্রতিবেদনের ভিতরে তথ্যের উপস্থাপন ঠিক ছিল।
অপরদিকে গণমাধ্যমটি ভুল শিরোনামটি সংশোধন করে নিলেও এর মধ্যেই সেটি কপি-পেস্ট হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার হতে থাকে।
সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ের ঘটনায় ঢাকা ও কক্সবাজারে কতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে?
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজারে সহিংসতার মামলা নিয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘কক্সবাজারে ৬ মামলায় জামায়াতের ১২ হাজার আসামি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সমর্থকদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ২ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।
Screenshot: Dhaka Post
একই তথ্য পাওয়া যায়, জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরে উল্লেখিত তথ্য থেকেও।
Screenshot: Desh Rupantor
মূলত, গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ঢাকায় তার জানাজার দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠান ও এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত খবরটি প্রচার করতে গিয়ে বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে সঠিক তথ্য উল্লেখ করলেও সংবাদের শিরোনামে ৭ হাজার মানুষের স্থলে ৭ হাজার মামলা বলে উল্লেখ করে। যার ফলে ৭ হাজার মামলা দাবিতে ইতোমধ্যে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক গুজব নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের ফ্যাক্টস্টোরি দেখুন
গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পর পরদিন তার জানাজার নামাজে অংশগ্রহণে জনস্রোতের দৃশ্য দাবিতে ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাঈদীর জানাজায় অংশগ্রহণে জনস্রোতের দৃশ্য শীর্ষক যে দাবিটি করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং ভিডিওটি গত জুন থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। অথচ সাঈদীর মৃত্যু হয়েছে গত ১৪ আগস্ট। তাই ভিডিওটি সাঈদীর জানাজা কেন্দ্রিক হওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে চলতি বছরের জুনে একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
১১ জুন প্রকাশিত এই ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি জামায়াতে ইসলামীর মিছিলের ভিডিও।
Screenshot source: Facebook
কিন্তু ভিডিওটি গত জুন মাসের ধারণকৃত বলে প্রতীয়মান হয়নি আমাদের কাছে। এর পেছনে দুইটি কারণ পেয়েছি আমরা।
প্রথমত, গত ১০ জুন দীর্ঘদিন পর জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায়। সেদিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। কিন্তু সেদিন দলটির কর্মী ও সমর্থকদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করেও আলোচিত ভিডিওটির সাথে মিল পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত, ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মুসল্লিদের পরনে শীতের পোশাক রয়েছে। বাংলাদেশে জুনে গ্রীষ্মকাল (বাংলা জৈষ্ঠ্যমাস) থাকায় সেসময় শীতের পোশাক পরে না সাধারণত কেউ।
Screenshot: Facebook
অর্থাৎ, ভিডিওটি গত জুনের নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ২০১৮ সালের ০৭ ডিসেম্বর মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজি নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মুসু্ল্লিদের মিছিলের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। মিছিলটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়। সেসময় শীতকাল হওয়ায় এই ভিডিওতে অনেককেই শীতের পোশাক পরা অবস্থায় দেখেছি আমরা।
Screenshot: Facebook
জনাব রাজির সেদিন করা অন্য পোস্টেও ফ্লাইওভারের নিচে মুসুল্লিদের জমায়েত লক্ষ্য করা গেছে।
Screenshot: Facebook
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র সেদিনের এক ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বিশ্ব ইজতেমায় আধিপত্য নিয়ে গত ০১ ডিসেম্বর টঙ্গিতে তাবলিগ জামাতের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। সেই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে সমাবেশ ও মিছিল করেছে মাওলানা সাদ কান্ধলভী-বিরোধী অংশ। প্রথম আলোর ভিডিওতে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে মুসুল্লিদের ভীড় দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Screenshot: Facebook
তবে আমরা যে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করছি সেটি একই ঘটনার বা সেদিনেরই কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভিডিও বিশ্লেষণে সেদিনের ঘটনারই বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তবে এটা নিশ্চিত যে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে সাঈদীর জানাজা অভিমুখে জনস্রোতের নয়।
মূলত, গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরদিন তার জানাজার নামাজ অভিমুখে জনস্রোতের দৃশ্য দাবিতে ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। একই ভিডিও গত জুন থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার দৃশ্য দাবিতে কিছু ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হলেও সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
সুতরাং, পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে সাঈদীর জানাজা অভিমুখে জনস্রোতের দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কাবা শরীফে পড়ার অনুমোদন।’ শীর্ষক শিরোনামে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবা শরীফে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার অনুমোদন দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং গত জুলাইতে Gulf Cooperation Council (GCC & CA) সামিটে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বক্তব্যের একটি খন্ডিত অংশকে ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের প্রচারিত ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউণ্ডে ‘GCC… Summit’ শীর্ষক একটি লেখা খুঁজে পাওয়া যায়।
০২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ইউটিউবের এই ভিডিওটির ২০ সেকেন্ড থেকে ৩১ সেকেন্ড পর্যন্ত ফুটেজের সাথে কাবা শরীফে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার অনুমোদন দেওয়ার দাবিতে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের প্রচারিত ভিডিওটির বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
সামিটে মুহাম্মদ বিন সালমান চলমান বিশ্বের নানা চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করে এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেন।
পাশাপাশি সামিটে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতাকে সম্মান করার এবং অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন।
Screenshot: Al Arabiya News
এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সৌদি যুবরাজ কর্তৃক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কিংবা অন্য কারো জন্য কাবা শরীফে গায়েবানা জানাজা পড়ার অনুমোদন দেওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, সাঈদীর মৃত্যু হয়েছে গত ১৪ আগস্ট। তাই ১৯ জুলাইয়ের উক্ত সামিটে জানাজার বিষয়টি আসা অমূলক।
এছাড়া প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করেও সৌদি যুবরাজ কর্তৃক কাবায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কারো গায়েবানা জানাজা পড়ার অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবা শরীফসহ মসজিদে নববীতে গায়েবানা জানাজা পড়ার বিষয়ে মসজিদ দুইটির তত্ত্বাবধায়ক সৌদি বাদশাহ সিদ্ধান্ত দেওয়ার রীতি রয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন– এখানে, এখানে।
Screenshot: Saudi Gazette
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাবায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। তবে এ নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবা শরীফে নিয়মিতই মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা পূর্বক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত, গত ১৪ আগস্ট মারা যাওয়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কাবা শরীফে পড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি করে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। গত ১৯ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায় উপসাগরীয় ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে GCC-Central Asia Summit অনুষ্ঠিত হয়। এই সামিটে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি বক্তব্য থেকে ১৫ সেকেন্ডের একটি ফুটেজ কেটে নিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত সামিটে দেওয়া সৌদি যুবরাজের বক্তব্যে এমন কোনো বিষয় ছিল না। তাছাড়া, পরবর্তীতে সৌদি যুবরাজ এমন কোনো অনুমোদন দিয়েছেন মর্মে কোনো তথ্য গণমাধ্যমে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া পুরোনো বক্তব্যের অংশকে কাবা শরীফে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার অনুমোদন দিয়ে মুহাম্মদ বিন সালমান বক্তব্য দিচ্ছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের সময় কাউয়া কাদের বলে স্লোগান দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ওবায়দুল কাদের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় স্লোগান বন্ধ করো- শীর্ষক মন্তব্য করছেন। তার এই মন্তব্যের সময় “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক একটি স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সময় কাউয়া কাদের বলে স্লোগান দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ওবায়দুল কাদেরের “স্লোগান বন্ধ কর” বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওটিতে “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক ভিন্ন ঘটনার একটি অডিও এডিট করে বসিয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Md Faridujjaman Jahid নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পোস্ট (আর্কাইভ) করা একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকায় কর্মী সম্মেলনে উৎসুক জনতাকে স্লোগান বন্ধ করতে ওবায়দুল কাদের “স্লোগান বন্ধ করো” শীর্ষক মন্তব্যটি করেন।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ওবায়দুল কাদের বলছেন, স্লোগান বন্ধ করো, আমি নয়তো কথা বলবো না।
তবে সেখানে “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক কোনো স্লোগান দিতে শোনা যায়নি।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ইউটিউবে চ্যানেলে “লালবাগ থানা এবং ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ এর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২২” শীর্ষক ক্যাপশনে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
১ ঘন্টা ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটির ৪১ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে দেখা যায় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠেন।
ভিডিওটির ৪২ মিনিট ৫ সেকেন্ডে কর্মীদের স্লোগান থামাতে তিনি “স্লোগান বন্ধ করতে হবে, স্লোগান বন্ধ, স্লোগান বন্ধ। তা নাহলে আমি কথা বলবো না। স্লোগান বন্ধ করতে হবে। আমি না-হয় কথা বলবো না। স্লোগান বন্ধ করো, এই তুমি বন্ধ করো…।” শীর্ষক মন্তব্য করেন।
Screenshot: Bangladesh Awami League Official YouTube Channel
এই ভিডিওতেও “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক কোনো স্লোগান দিতে শোনা যায়নি।
পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম bdnews24 এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই সম্মেলনের বিষয়টি উল্লেখ পাওয়া যায়।
মূলত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কর্তৃক দলটির একটি সম্মেলনে দেওয়া “স্লোগান বন্ধ করো, এই তুমি স্লোগান বন্ধ করো” শীর্ষক একটি মন্তব্যের সাথে “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক একটি স্লোগান সম্বলিত ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের সাথে “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক অডিওটি এডিট করে বসানো হয়েছে।
সুতরাং, ওবায়দুল কাদেরের “স্লোগান বন্ধ করো, এই তুমি বন্ধ করো” শীর্ষক মন্তব্যের সাথে “কাউয়া কাদের তওবা কর, খালেদা জিয়ার পায়ে ধর” শীর্ষক স্লোগান সম্বলিত ভিডিওটি এডিটেড।
সম্প্রতি, ‘ভূমিকম্পের কারনে পেছাতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা ‘ শীর্ষক একটি তথ্যকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফডোকার্ডের মধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমিকম্পের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কোনো মন্তব্য করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথম আলোর আদলে একটি ফটোকার্ড তৈরির মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ আগস্ট ২০২৩।
এছাড়া প্রথম আলো ছাড়াও অন্য কোনো গণমাধ্যমেও প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে ‘ভূমিকম্পের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে পারে’ শীর্ষক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটিতে শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়,”পরীক্ষার সময় যদি কোনো স্থান প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত হয়, তবে সেখানে স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া সারাদেশে পরীক্ষা চলবে।”
তিনি আরো বলেন, “কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকলে শুধু সেই স্থানেই পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী ১৭ আগস্ট পরীক্ষা দেয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।”
অর্থাৎ, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ‘ভূমিকম্পের কারনে পেছাতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা’ শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।
পাশাপাশি, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ‘ ভূমিকম্পের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে পারে’ শীর্ষক দাবিটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বক্তব্য দেননি এবং কোনো গণমাধ্যমও উক্ত মন্তব্য সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রচার করেনি।
মূলত, আগামীকাল ১৭ই আগস্ট শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এরই মধ্যে গত ১৪ আগস্ট সোমবার রাত ৮ টা ৪৯ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ ঘটনায় ‘ভূমিকম্পের কারনে পেছাতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা’ শীর্ষক একটি মন্তব্যকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মন্তব্য দাবিতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া, অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেখা যায়, প্রথম আলোর আদলে তৈরি উক্ত ফটোকার্ডটিও ভুয়া।
সুতরাং, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বরাত দিয়ে ভূমিকম্পের কারনে এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে পারে দাবিতে প্রথম আলোর আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি ভুয়া এবং আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।
গত ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ৮৩ বছর বয়সী সাঈদীর।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, রাজনীতিতে সক্রিয়তা এবং ধর্মীয় বক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ার দরুণ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য এবং প্রাসঙ্গিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা ছিল রিউমর স্ক্যানার টিমের। জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ড নজরে আসার মধ্য দিয়ে এই আশঙ্কাই যেন সত্যি হল।
সাঈদীর মৃত্যুর পরের দিন সকালে ফেসবুকে ‘একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার সাইদীর মৃত্যু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর আদলে একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
Screenshot: Facebook
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, সংবাদমাধ্যমটি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রচারই করেনি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গতকাল সাঈদীর লাশ ঢাকা থেকে পিরোজপুরে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পিরোজপুরে লাশ নিয়ে যাওয়ার আগেই তার সমর্থকরা ঢাকায় জানাজার আয়োজন করার দাবি জানায়। এর জন্য তারা সাঈদীর লাশ বহনকারী ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ এর অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা পাংচার করে দিলে তার লাশ ‘ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করে সেটিতে করেই পিরোজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ‘সিনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সের দুর্ঘটনার দৃশ্যকে সাঈদীর লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের দাবিতে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
Collage: Rumor Scanner
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এটা সত্য তবে এতে কোনো লাশ ছিল না বলে নিশ্চিত করেছে অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, দুর্ঘটনার সময় এই অ্যাম্বুলেন্সটির আশেপাশে কোনো পুলিশ বা সাঈদী সমর্থকদেরও দেখা যায়নি ভিডিওতে।
জনাব দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে দেশ এবং দেশের বাইরে একাধিক ব্যক্তি এবং দলকেই শোক জানাতে দেখা গেছে। কিন্তু সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো শোক জানানোর তথ্য সাঈদীর দল এবং গণমাধ্যম সূত্রে না পাওয়া গেলেও ফেসবুকে দাবি করতে দেখা গেছে, সাঈদীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের সরকার (যুবরাজ বিন সালমান)।
Screenshot: Facebook
তবে এই তথ্য ছাড়াও শোক বিষয়ক আরেকটি তথ্য বেশ ভাইরাল হতে দেখা গেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে সাঈদীর মৃত্যুতে কাবার ইমাম আব্দুল রহমান আল সুদাইস শোক জানিয়ে টুইট করেছেন।
Screenshot: Facebook
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, আব্দুল রহমান আল সুদাইসের ফেসবুক এবং টুইটারে অফিশিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শোক বার্তার তালিকায় আল সুদাইসের নাম পাওয়া যায়নি।
গতকাল দিনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহগুলোয় নজর রেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তারই ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যমে বরাতে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স বদলের পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিরোজপুরের ইঁদুরকানীতে সাঈদীর প্রতিষ্ঠান সাঈদী ফাউন্ডেশনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ নেয়া হয়। পরবর্তীতে অসংখ্য মুসুল্লির অংশগ্রহণে জানাজা হয় বলেও খবর এসেছে গণমাধ্যমে। কিন্তু ফেসবুকের একাধিক পোস্টে দুইটি ছবি বেশ ভাইরাল হতে দেখা গেছে যেগুলো সাঈদীর জানাজার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে।
Screenshot: Rumor Scanner
কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, ছবি দুইটি ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার আড়াইবাড়ী দরবার শরিফের পীর ও ইসলামিক বক্তা মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদীর জানাযার দৃশ্য।
জানাজা বিষয়ক একটি পুরোনো ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম, যাতে দাবি করা হয়েছে, জনাব দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় লক্ষ কোটি মানুষ সমবেত হয়েছে।
Screenshot: Tiktok
কিন্তু রিউমর স্ক্যানার এই ভিডিও যাচাই করে দেখতে পায়, এটি চলতি বছরের ১৮ মে সিলেটের প্রবীণ আলেম শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হকের (গাছবাড়ি) জানাজার দৃশ্য।
Screenshot collage: Rumor Scanner
শুধু দেশেই নয়, সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র কাবা শরীফকে জড়িয়েও সাঈদীর বিষয়ে গতকাল দিনভর একাধিক ভুল তথ্য ছড়াতে দেখা গেছে।
গত ১৪ আগস্ট সাঈদীর মৃত্যু খবর আসার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি কাবা শরীফ থেকে ফেসবুক লাইভে এসে জানান, মাগরিবের পর সেখানে গায়েবানা জানাজা হবে, যাতে তিনি সাঈদীর জন্য গায়েবানা জানাজা পড়বেন। তার এই লাইভ ভিডিওকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ‘সাঈদীর জন্য কাবায় গায়েবানা জানাজা হয়েছে’ শীর্ষক তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এর সাথে ‘পৃথিবীর ইতিহাসে ৩ জন ব্যক্তির কাবায় গায়েবানা জানা হয়েছে এবং ৩য় ব্যক্তি মাওলানা সাঈদী’ শীর্ষক দাবিটি যুক্ত হয়ে গতকাল ফেসবুকে অসংখ্য পোস্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
Photo Card: Rumor Scanner
কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের এ বিষয়ে করা অনুসন্ধানে কাবা শরীফের সেসময়ের লাইভ স্ট্রিম বিশ্লেষণ করে সাঈদীর নাম উল্লেখ পূর্বক তার জানাজার কোনো ঘোষণার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার টিম সৌদিতে অবস্থানরত একাধিক ব্যক্তির সাথেও যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছে, মূলত এটি ছিল ব্যক্তি উদ্যোগে আদায় করা গায়েবানা জানাজা। তাছাড়া, প্রাসঙ্গিকভাবে ছড়ানো ‘কাবায় শুধুমাত্র ৩ জনের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার’ দাবিটিও মিথ্যা। নিয়মিতই মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা পূর্বক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার নজির রয়েছে কাবা শরীফে।
সাঈদী যখন বেঁচে ছিলেন তখনও তাকে নিয়ে হরহামেশাই-ই ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা যেত। চাঁদে তাকে দেখতে পাওয়ার গুজবটি এর মধ্যে বেশ ভাইরাল ছিল। তবে গতকাল এ বিষয়ে পুনরায় গুজব ছড়াতে দেখা না গেলেও বিগত বছরগুলোয় প্রচার হওয়া দুইটি গুজব ফের নতুন করে আলোচিত হতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। মজার বিষয় হচ্ছে, দুটোই সাঈদীর কাবা শরীফে প্রবেশ কেন্দ্রিক তথ্য। প্রথমটিতে দাবি করা হয়, ‘সারা বিশ্বের ৫ জন লোক কাবা’শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন। তার মধ্যে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব একজন’।
Screenshot: Facebook
তবে অনুসন্ধান বলছে, সকল মুসলমানের জন্য পূর্বে কাবা শরীফে প্রবেশের সুযোগ ছিল, তবে বর্তমানে শুধু গণ্যমান্য মুসলমান ব্যক্তিদের কাবায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাছাড়া, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তার জীবদ্দশায় একবার কাবায় প্রবেশ করেছিলেন বলে তার পুত্র সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে পূর্বেও বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
Photo Card: Rumor Scanner
অন্যদিকে, সাঈদীর কাবা শরীফ থেকে বের হওয়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি বেশ ভাইরাল গেল কয়েক বছর ধরেই। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই ছবি আবারও গতকাল প্রচার হতে দেখা গেছে। কিন্তু অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদু বুহারীর কাবা শরীফ থেকে বের হওয়ার সময়কালীন তোলা একটি ছবিকে এডিট করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখমণ্ডল যুক্ত করে এই ভুয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদীও ২০১৮ সালে ছবিটিকে নকল/এডিটেড হিসেবে চিহ্নিত করে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছিলেন।
Photo Card: Rumor Scanner
তবে এতসব ভুল তথ্য আর ছবির ভীড়ে পুরোনো একটি ছবি গতকাল বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ভাইরাল ছবিতে এক ব্যক্তিকে মার্ক করে দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তিই রাজাকার দেলু সিকদার (বর্তমানে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী), যাকে পিরোজপুরে আটক করা হয়েছে। এটাও দাবি করা হচ্ছে যে, এটি ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘দৈনিক সংবাদ’ এ প্রকাশিত ছবি।
Screenshot: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিমের সদস্যরা গতকাল দিনভর এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে, জানার চেষ্টা করেছে এ বিষয়ে আসল সত্যটি কী। অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট গেটি ইমেজে মূল ছবিটি খুঁজে পেয়েছি যেখানে বলা হয়েছে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার উইলিয়াম লাভলেস। ছবিটি Prisoners Last Moments শিরোনামে গেটিতে পাওয়া যায়। যা থেকে বোঝা যায়, এটি কয়েকজন বন্দী রাজাকারকে হত্যার আগ মুহুর্তের ছবি। ছবিটির বিস্তারিত বর্ণনাতে এ বন্দি ৫ (মতান্তরে ৪) রাজাকারকে হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। ছবির বর্ণনায় ছবির রাজাকারদের কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে ছবির রাজাকারদের হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়। একই ব্যক্তিদের বিষয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) একটি প্রতিবেদন, নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন এবং মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘সংগ্রামের নোটবুকে’ একই তথ্যের উল্লেখ পেয়েছি আমরা। অর্থাৎ, ছবিতে থাকা সেই রাজাকার তার অন্তত ৩ জন সঙ্গীসহ ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাদেরিয়া বাহিনীর হাতে নিহত হন এবং এই ব্যক্তি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নয়।
Banner: Rumor Scanner
দ্বিতীয় দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সংবাদটির আর্কাইভ খুঁজতে গিয়ে ‘দৈনিক সংবাদ’ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের কোনো আর্কাইভ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দৈনিক সংবাদের ১৯৭২ সালের জানুয়ারি এবং এর পরের আর্কাইভ পাওয়া যায়৷ পরবর্তীতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক সংবাদ যুদ্ধকালীন প্রায় ৯ মাস বন্ধ ছিল। ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দৈনিক সংবাদের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং এতে তাদের এক সিনিয়র সাংবাদিক আগুনে পুড়ে নিহত হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর এর ৯ জানুয়ারির আগ অব্দি দৈনিক সংবাদ এর প্রকাশনা বন্ধ ছিল। অর্থাৎ, ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঐ ছবি দৈনিক সংবাদে প্রকাশের দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ সময় দৈনিক সংবাদের প্রকাশনা বন্ধ ছিল।
এমন করেই যুদ্ধপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো ছবি-ভিডিও আর ভুল তথ্যে ঘটনাবহুল একটি দিন পার করলো বাংলাদেশ।