সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েছে দাবি করে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপ ও ছবি সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১৪ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের এক ইউটিউব চ্যানেলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েই মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে এবং ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী! ভয়ে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটিতে এক লাখ চুরাশি হাজারের বেশি ভিউ এবং আড়াই হাজারের বেশি লাইক ও ৭৫টি মন্তব্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আরও দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পূর্বের কিছু কার্যক্রম দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে গোপন বৈঠক করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের অনুরোধ জানান। পিটার হাস বলেন, সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি। এজন্য সেনাপ্রধান বলেন, নির্বাচনে যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।”

উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Somoy TV’র ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ০৪ জুন ‘মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রতিহত করবে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে সেসময়ে দেশের জনগণের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর দিকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের সাথে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও, ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Channel I’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনকে ঘিরে যে কোনো সহিংসতা রোধে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুর অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এটি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রচারিত সংবাদের ভিডিও; যার সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তাছাড়া, ভিডিওটি’র পরবর্তী অংশে প্রচারিত অপর একটি ভিডিও ক্লিপের সাথে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম Independent TV’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘মধ্যরাতে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রচারিত সংবাদের ভিডিও; যার সাথে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পাওয়া বা মাঠে নামার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রবণতা বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ নভেম্বর Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েই মাঠে নামছে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক শিরোনামে এবং ‘রাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেলো সেনাবাহিনী! ভয়ে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল যুক্ত করে একটি ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পেয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img