সম্প্রতি, গত ১৫ নভেম্বর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে “তফসিল ঘোষণা নিয়ে উত্তপ্ত নির্বাচন কমিশন। সিইসিকে হুমকি দিলো চরমোনায় ও তারেক” শীর্ষক শিরোনাম এবং “এইমাত্র নির্বাচন কমিশন ঘেরাও সংঘর্ষ চরমোনায় পীরের উপর হামলা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে ( আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার বিশ্বস্ত তথ্যসূত্র ছাড়া একাধিক ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে চরমোনাই পীরের উপর হামলা বিষয়ক কোনো সংবাদ বা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৬ মিনিটের এই ভিডিওটিতে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে দুইটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওতে থাকা তথ্যের সাথে ভিডিওর থাম্বনেইল এবং শিরোনামে থাকা তথ্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে প্রথম ভিডিওটিতে থাকা ডিবিসি নিউজের লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে আজ ( ১৫ নভেম্বর) ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে “নির্বাচন কমিশনের অভিমুখে ইসলামি আন্দোলনের গণমিছিল। DBC NEWS” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটির একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,আজ (১৫ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এর প্রতিবাদে ও তফসিল ঘোষণা বন্ধের দাবিতে গণমিছিল করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলটি পল্টন-কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে আসলে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়।
অর্থাৎ উক্ত ভিডিওটিকে কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তী ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেখানো হয়। তারেক রহমানের কথার সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ৫ নভেম্বর “অবরোধ সফল করায় জনগনকে ধন্যবাদ এবং সীমিত সামর্থের নির্বাচন কমিশনকে পদত্যগের আহ্বান” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায়,গত ৫ নভেম্বর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় বিএনপি। উক্ত অবরোধকে সফল হয়েছে দাবি করে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা চরমোনাই পীরের আহত অবস্থার ছবিটি যাচাইয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টে’র ওয়েবসাইটে গত ১৩ জুন “চরমোনাই পীরের ওপর হামলার নিন্দা রওশন এরশাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা ছবির অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার মেয়র প্রার্থী চরমোনাই পীরের ওপর দুষ্কৃতিকারীদের হামলার ঘটনার।
মূলত, আগামী ৭ জানুয়ারী রবিবার ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল। উক্ত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার বিষয়কে কেন্দ্র করে তসফিল ঘোষণার পূর্বে আজ বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের আয়োজন করে। পরবর্তীতে উক্ত গণমিছিলের একটি ভিডিওর সাথে থাম্বনেইলে চরমোনাইয়ের ওপর হামলার পুরোনো একটি ছবিসহ ‘নির্বাচন কমিশন ঘেরাও সংঘর্ষ চরমোনায় পীরের উপর হামলা’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘর্ষ কিংবা হামলার ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে সংঘর্ষ ও চরমোনায় পীরের ওপর হামলা দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।