Home Blog Page 614

ভিডিওটি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার নয়

সম্প্রতি,“আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের জানাজায় লক্ষ কোটি মানুষ! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা সুবহানাল্লাহ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার নয় বরং এটি গত ১৮ মে সিলেটে অনুষ্ঠিত হেফাজত নেতা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাজার ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির ওপরের ডানকোনে সংযুক্ত একটি লোগো দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। লোগোটিতে লেখা আছে, ‘Times Of Sylhet’। 

পরবর্তীতে উক্ত নামের সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একই নাম সম্বলিত একটি ফেসবুক পেজে গত ১৮ মে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে সাঈদীর জানাজার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Collage by Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি গত ১৮ মে সিলেটে অনুষ্ঠিত মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী হুজুরের জানাজার ভিডিও। 

এছাড়া, একই তারিখে ‘Islamic Religion TV’ নামক ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিও থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

Screenshot from Facebook

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালেরকণ্ঠ এর ওয়েবসাইটে গত ১৮ মে ‘সিলেটের প্রবীণ আলেম মাওলানা মুহিব্বুল হকের ইন্তেকাল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৭ মে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেটের জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন(১৮ মে) দুপুর ২টায় সিলেট শাহি ঈদগাহ মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার নয়।

মূলত, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার দৃশ্য দাবিতে এই ভিডিওটি শর্ট ভিডিও প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি গত ১৮ মে সিলেটে শাহি ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার পরিচালক মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাজার। 

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

উল্লেখ্য, পূর্বে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর খবরে ইন্টারনেটে প্রথম আলো’র আদলে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার ভিডিও দাবিতে মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাজার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাঈদীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার শিকার দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী হুজুরের লাশবাহী গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে ।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ),  পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট  (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে একই দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার শিকার হয়নি বরং উক্ত দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকায় জানাজার দাবিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তার লাশ বহনকারী ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ এর অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা পাংচার করে দিলে তার লাশ ‘ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করে সেটিতে করেই পিরোজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। 

দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে। ভিডিওটি  থেকে দেখা যায়, দুর্ঘটনার শিকার হওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি সিনা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এবং অ্যাম্বুল্যান্সটির গায়ে কিছু নাম্বার খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই নাম্বারের সূত্রে রিউমর স্ক্যানার টিম অ্যাম্বুলেন্সটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান সিনা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানা যায়, ‘শাহবাগ থেকে আসার পথে পিজির সামনে নিয়ন্ত্রণ হারায়। ড্রাইভারেরও গাফিলতি ছিল। গাড়ি শাহবাগেই ছিল। লাশ ছিল না, খালি গাড়ি ছিল।’

অর্থাৎ দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্সটির মালিকানা প্রতিষ্ঠানের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই অ্যাম্বুলেন্সটি খালি ছিল এবং এটিতে কোনো মরদেহ ছিল না।

সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে 

অপরদিকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও ও প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায়, সাঈদীর মরদেহ দুইটি আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে বহন করা হয়েছিল। তবে এ দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সিনা প্রতিষ্ঠানের কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। 

এ নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ১৫ আগস্ট ‘বিএসএমএমইউ থেকে বের হলো সাঈদীর মরদেহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে সাঈদীকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্সের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ঐ অ্যাম্বুলেন্সটিতে ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ শীর্ষক একটি লেখা খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Dhaka Post 

এছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ১৫ আগস্ট ‘ঢাকায় সাঈদীর জানাজার দাবিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে একই অ্যাম্বুলেন্সের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangla Vision 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত অ্যাম্বুলেন্সটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Image Collage: Rumor Scanner 

পরবর্তীতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ২৪ এ একইদিনে ‘পিরোজপুরের পথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,’সাইদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল থেকে বের করতে গেলে ভক্ত ও জামায়াতের কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা দাবি জানান, রাজধানীতে যেন সাঈদীর একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি বের করার সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় জামায়াতের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরে তারা অ্যাম্বুলেন্সের চাকা পাংচার করে দেন ও গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে পুলিশ শাহবাগ মোড় থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি বদল করে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।’

Screenshot: Bangla News24

পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার ফেসবুক পেজে ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর রাতে কি ঘটেছিলো?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাঈদীর মরদেহ  ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

Screenshot: ATN Bangla News 

জামায়াতে ইসলামীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওটিতেও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্সটি দেখতে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Bangladesh Jamaat-e-Islami

অর্থাৎ সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে ছিল ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে  সিনা প্রতিষ্ঠানের কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। 

মূলত, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকায় জানাজার দাবিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তার লাশ বহনকারী ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ এর অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা পাংচার করে দিলে তার লাশ ‘ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করে সেটিতে করেই পিরোজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে একইদিনে পিজি হাসপাতালের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হয় ‘সিনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্স। পরবর্তীতে এই অ্যাম্বুলেন্সটিকেই সাঈদীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং,  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সাঈদীর মৃত্যুতে অভিনেতা শাকিব খানের কাঁদার দাবিতে বানোয়াট ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি,’সাঈদীকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন শাকিব খান‘ শীর্ষক শিরোনাম ও ‘অঝোরে কাঁদলেন সুপারস্টার শাকিব খান‘ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পেস্ট দেখুন পোস্ট ( আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে অভিনেতা শাকিব খানের কাঁদার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ধারণকৃত শাকিব খানের একাধিক ছবি যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ১৬ আগস্ট ‘ Ajaira TV ‘ নামের একটি পেজ থেকে ‘সাঈদীকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন শাকিব খান‘ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং শাকিব খানের ছবি ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে  অভিনেতা শাকিব খানের ভিন্ন ভিন্ন ছবি যুক্ত করে তৈরি করা একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। 

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন বাংলার সুপারস্টার শাকিব খান।তিনি বলেন, বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসিরে কোরআন ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। 

এই মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক যা দেশবাসীকে ব্যথিত করেছে। তাঁর মতো একজন ইসলামিক স্কলার এবং সত্য উচ্চারণে নির্ভীক মানুষের পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াতে এক গভীর শূণ্যতার সৃষ্টি হলো। ইসলামের জন্য তাঁর অবদান মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সরকারি ষড়যন্ত্রে বিচারিক হত্যার শিকার হয়েছেন। সহজ সরল ভাষায় ইসলামি জ্ঞানের প্রচারে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে বরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদেও তিনি তাঁর বাগ্মিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি এমন একজন সম্মানিত আলেম যাঁকে দেশের মানুষ সবসময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এসব কথা বলতে গিয়ে শাকিব খানের চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসছিলো। তিনি বলেন,আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, ভক্ত, গুনগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে গত ১৫ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : Tarique Rahman’s Facebook page 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, তারেক রহমান এর প্রকাশিত পোস্টটি দাবিকৃত ভিডিওতে হুবহু পাঠ করা হয়েছে। 

পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত শাকিব খানের ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘CITY NEWS DHAKA’ ওয়েবসাইটে ‘ Shakib Khan says emotional goodbye to ‍‍’Mia Bhai‍‍‘ শীর্ষক শিরোনাম প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফারুকের চলে যাওয়া নিয়ে তিনি শোক ব্যাক্ত করেন।’ 

অর্থাৎ দাবিকৃত ভিডিওটির থাম্বনেইলে এবং সংবাদ পাঠের অংশে প্রদর্শিত শাকিব খানের ছবিটি উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি দেশীয় অন্যান্য গণমাধ্যমও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে অভিনেতা শাকিব খানের কাঁদা বা শোক জানানো সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি।

মূলত, গত ১৪ আগস্ট যুদ্ধপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে অঝোরে কাঁদলেন সুপারস্টার শাকিব খান’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত শাকিব খানের ভিন্ন ভিন্ন ছবি যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এবং ভিডিওটিতে সাঈদীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টটি হুবহু পাঠ করা হয়েছে।

সুতরাং, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে অভিনেতা শাকিব খানের কাঁদার দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

ভাইরাল ছবির এই ব্যক্তি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নয়

0

সম্প্রতি, “১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত দেলু রাজাকার এর ছবি” শীর্ষক একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে ছবির ব্যক্তিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাবি করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে দেখা যায় এটি অন্তত ২০১৩ সাল থেকে ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়ে আসছে। ২০১৬, ২০১৮, ২০১৯ সহ বিভিন্ন বছরে এটি প্রচারিত হতে দেখা গেছে।

ছবিটি পোস্ট করার মাধ্যমে যে দাবিগুলো করা হয়েছে: 

১. লাল চিহ্নিত ব্যক্তির নাম রাজাকার দেলু সিকদার কিংবা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যাকে পিরোজপুরে আটক করা হয়েছে।

২. এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘দৈনিক সংবাদ’ এ প্রকাশিত হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবির গোল চিহ্নিত যে ব্যক্তিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলে দাবি করা হচ্ছে সে ব্যক্তি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নয় বরং ছবির ঐ ব্যক্তি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় কাদেরিয়া বাহিনীর হাতে খুন হওয়া একজন রাজাকার। এছাড়াও, এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার দাবিটিও মিথ্যা। 

ছবির ব্যক্তি কি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী?

আলোচিত ছবিটিতে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলে দাবি করা হয়েছে। 

ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গেটি ইমেজ এর ওয়েবসাইটে Prisoners Last Moments শিরোনামে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

গেটি ইমেজে থাকা ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার উইলিয়াম লাভলেস এবং এটি কয়েকজন আটককৃত রাজাকারকে হত্যার আগ মুহুর্তের ছবি।

Screenshot: Getty Images

ছবিটির বর্ণনায় লেখা হয়েছে,  Guerrilla fighters of the pro-independence Mukti Bahini forces preparing to beat, torture and execute men accused of being members of the pro-Pakistani Razakar paramilitary force, at a political rally at a racecourse in Dhaka, Bangladesh, two days after the Pakistani surrender at the end of the Bangladesh War of Independence, 18th December 1971. Five prisoners were tortured and killed at the event. (Photo by William Lovelace/DailyExpress/Hulton-Deutsch Collection/CORBIS/Corbis via Getty Images)

বিস্তারিত বর্ণনাতে মুক্তিবাহিনীর গোরিলা যোদ্ধা কর্তৃক আটককৃত ৫ জন (মতান্তরে ৪) রাজাকারকে হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। 

এছাড়া, ফটো স্টক ওয়েবসাইট Alamy তে এপির ফটোগ্রাফারের তোলা আটককৃত ঐ রাজাকারদের ভিন্ন কোণের একটি ছবিতেও একই বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির বর্ণনায় যুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার অভিযোগে চারজনকে নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময়ের মারধরের ছবি বলে উল্লেখ করা হয়।

 Screenshot : Alamy

তাছাড়া, এলামির স্টক ফটোতে উক্ত ঘটনার তাদের হত্যার আগের ও পরের বেশকিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিটির ছবির বর্ণনাতেও তাদের ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর হত্যা করার বিষয় উল্লেখ করা হয়।

Screenshot : Alamy

অনুসন্ধানে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটের আর্কাইভ সেকশনে ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর  ‘4 Tortured, Slain at Dacca Rally‘ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় এবং উক্ত প্রতিবেদনে থেকে ঐ চার রাজাকারকে হত্যার ব্যাপারে অধিকতর নিশ্চিত হওয়া যায়। 

Photo : The New York Times

পরবর্তীতে এই চার (বা পাঁচ) রাজাকারকে হত্যার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘সংগ্রামের নোটবুক’ এ ২০১৮ সালে ‘1971.12.18 কাদেরিয়া বাহিনীর হটকারী কার্যক্রম’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ঐ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য, বেশকিছু ছবি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের প্রিন্ট ভার্সনের ছবি পাওয়া যায়। 

Screenshot : Songramer Notebook

নিবন্ধতে বলা হয়, “পল্টন ময়দানে জনসভা শেষ হওয়ার পর কাদের সিদ্দিকি ৫ বিহারী রাজাকার বা সন্ত্রাসীর বিচারে সাজা কার্যকর করেন। উপস্থিত ডজন খানেক বিদেশী সাংবাদিকদের সামনেই তাদের হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক এদের মধ্যে ছিলেন হর্সট ফাস, মাইকেল লরেনট এবং অরিয়ানা ফেলাচি।”

আরও লেখা হয়, “কাদের সিদ্দিকি পরে তার প্রকাশিত বই ‘স্বাধীনতা ৭১’ এ লিখেছেন, এমন সময় বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা দুটো ডাটসান গাড়ির ভেতর থেকে কিশোরী কণ্ঠে আর্তচিৎকার শোনেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দুটো ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনীর অন্য সদস্যরা। দুজন যুবক দৌড়ে পালায়, ধরা পড়ে চার জন। ভীত সন্তস্ত্র কিশোরী দু’জনের কাছে যা জানা গেল, তারা অবাঙ্গালী। এই ছয়জন তাদের বাসায় লুটপাট চালিয়ে, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও দু বোনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের বৃদ্ধ মোটর মেকানিক পিতাকে বেধে রাখা হয়েছে গাড়ির পেছনের বনেটে। ঠিকই দেখা যায় সত্যি বলছে মেয়েরা।

এরপর দুস্কৃতিকারি ৪(৫) জনকে জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে নিয়ে বক্তব্য রাখেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান এবং মঞ্চে তোলা হয় মেয়ে দুটোকে। তাদের বক্তব্য শোনার পর, জনতার কাছে রায় চাওয়া হয়- তারা সমস্বরে দাবি জানান মৃত্যুদণ্ডের। পরে চারজন (৫)কে একটি করে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে শাস্তি কার্যকর করে কাদেরিয়া বাহিনী।”

অর্থাৎ, আলোচিত ছবির চিহ্নিত ব্যক্তি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নয়।

ছবিটি কি ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি হিসেবে ‘দৈনিক সংবাদ’ এ প্রকাশ হয়েছিল? 

ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে ছবিটির সাথে কিছু কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে,

“১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ছবি। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী কর্তৃক পিরোজপুরে আটককৃত রাজাকার দেলু সিকদার (বর্তমান দেলোয়ার হোসেন সাইদি) ও তার দলের অন্যান্য সদস্যরা। ওই মুহূর্তে রাজাকার দেলু সিকদার (বর্তমান দেলোয়ার হোসেন সাইদি) এর চুলের মুঠি ধরে রাখেন একজন মুক্তিযোদ্ধা।”

তবে এই দাবিও সঠিক নয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দৈনিক সংবাদের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং এতে তাদের এক সিনিয়র সাংবাদিক আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রায় ৯ মাস দৈনিক সংবাদের প্রকাশনা বন্ধ থাকে। ১৯৭১ সালের মার্চের এর শেষ সপ্তাহ থেকে ১৯৭২ সালের এর ৯ জানুয়ারি অব্দি দৈনিক সংবাদের প্রকাশনা বন্ধ ছিল। 

বিষয়টি আরো অধিকতর নিশ্চিতে বাংলাপিডিয়ায় দৈনিক সংবাদ নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধ পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে লেখা আছে, “পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বরাবরই সংবাদ পত্রিকার প্রতি বিরূপ ছিল। দেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে সংবাদ একাত্ম ছিল এবং এর দপ্তরে বারবার পুলিশের আক্রমণ হয়েছে। আদর্শের জন্য সংবাদকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে ১৯৭১ সালের মার্চে। সংবাদের প্রেস, মেশিনপত্র, অফিস সবই পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অগ্নিকান্ডে নিহত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সংবাদ প্রকাশিত হয় নি। ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি পুনরায় এর প্রকাশনা শুরু হয়।”

অর্থাৎ, ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর আলোচিত ছবি এবং ছবির চিহ্নিত ব্যক্তিটিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাবি করে  দৈনিক সংবাদ এ প্রকাশের দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক সংবাদরে প্রকাশনা বন্ধ ছিল।

মূলত, ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে কাদেরিয়া বাহিনীর হাতে রাজাকার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজনের একটি ছবিতে থাকা এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে প্রথম ২০১৩ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাবি করে প্রচার করা হয়। রিউমর স্ক্যানার এর অনুসন্ধানে দেখা যায় ছবির যে ব্যক্তিকে সাঈদী বলে দাবি করা হয়েছে সেই ব্যক্তি ১৯৭১ সালেই খুন হয়েছেন। সম্প্রতি, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই ভুয়া তথ্যটি পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

সুতরাং, ১৯৭১ সালে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে রাজাকার অভিযোগে কাদেরিয়া বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া ব্যক্তির ছবিকে সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  1. Main source and details of the photo – Getty 
  2. Some more before and after execution photos of the event -Alamy
  3. News on the execution -The New York Times
  4. Details on the execution events- Songramer Notebook
  5. Dainik Sangbad – Banglapedia 

সাঈদীর মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ সালমান শোক প্রকাশ করেননি

সম্প্রতি, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান শোক প্রকাশ করেছেন শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শোক প্রকাশ করেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ক্রাউন প্রিন্স কোর্ট, রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়েবসাইট বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান বিন সৌদের শোক প্রকাশের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত (আর্কাইভ) ইসলামিক বক্তাদের শোক বার্তার তালিকায় সৌদি যুবরাজের নাম পাওয়া যায়নি।

Screenshot : Facebook

মূলত, গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ শোক প্রকাশ করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সৌদি যুবরাজ সালমান কর্তৃক সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।

সুতরাং, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শোক প্রকাশ করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Crown Prince Court: website
  • Bangladesh Embassy, Riyad: website
  • Rumor Scanner’s Own Analysis

লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির ছবি দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ‘লুসিয়ানো সানচেজ – আর্জেন্টাইন তরুণ উদীয়মান এই ফুটবলারের পুরো ক্যারিয়ার টাই শেষ করে দিল, মার্সেলো।এমনভাবে পা টা ভেঙ্গে দিয়েছে, দেখলেই শরীরের লোম শিউরে উঠে! ফুটবল খেলা তো দূরে থাক, বাকি জীবনে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা সেটাই অনিশ্চিত।এর আগে মেসিকেও কনুই দিয়ে নাকে মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছিলো এই রেসলিং প্লেয়ার মার্সেলো।’ শীর্ষক শিরোনামে ফুটবলার লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Facebook

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির দাবিতে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি সানচেজের নয়  বরং এই ঘটনাটির অনেক আগে থেকেই ছবিটি ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ছবিটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল মেডিকেল লানিং কমিউনিটি MEDizzy এর ওয়েবসাইটে Medicalpedia নামক আইডি থেকে Bike accident resulting in severe knee dislocation শীর্ষক শিরোনামে 2020 সালে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

পোস্টটিতে ব্যবহার করা ছবিটির সাথে লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের এক্সে-রে’র ছবি দাবিতে আরেকটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। 

Screenshot: Facebook

ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, চিলির খেলাধুলা বিষয়ক সংবাদমাধ্যম Deportes 13 এর একটি ছবি গুগল ইমেজে খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshoot: Google

উক্ত ছবিটির সাথে যুক্ত লিংকে ক্লিক করলে Deportes 13 এর ওয়েবসাইটে The chilling image that comes to light about the injury of Luciano Sánchez caused by Marcelo in Copa Libertadores শীর্ষক শিরোনামে গত ৩ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের এক্স-রে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিটির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয় উক্ত ছবিটি দূঘর্টনা পরবর্তী লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের এক্স-রে’র ছবি। 

Screenshot: Deportes13

পরবর্তী অনুসন্ধানের প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে OUL নামের ব্রাজিলিয়ান একটি গণমাধ্যমর ওয়েবসাইটে Website shows how the knee of a player injured by Marcelo would have looked শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: OUL

প্রতিবেদনটিতে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লুসিয়ানো সানচেজের দুঘটনা পরবর্তী পায়ের ছবি এবং তার পায়ের এক্স-রে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: OUL

এছাড়াও পরবর্তীতে কিভাবে স্ক্রুর সাহায্যে অপারেশনের মাধ্যমে সানচেজের হাটু জোড়া লাগানো হয়েছে তারও একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: OUL

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংবাদ মাধ্যমটি ছবির সূত্র হিসেবে Reproduction/Daily Stars নামটি ব্যবহার করেছে। 

ছবিরগুলোর সূত্রের সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্রিটেনের ট্রাবলয়েড পত্রিকা Daily Star এর অনলাইন পোর্টালে ‘Horrific new pics and X-rays of ‘worst injury ever’ show extent of Marcelo’s tackle’‘ শীর্ষক শিরোনামে গত ৬ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Dailystar

প্রতিবেদনটিতে ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যমে ব্যবহৃত লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ছবিগুলো দেখা যায়।

Screenshot: Dailystar

অর্থাৎ, লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বহু আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান তবে তার পায়ের এক্স-রে’র ছবি দাবিতে প্রচারিত অপর ছবিটি বর্তমান সময়ের এবং সেটি লুসিয়ানো সানচেজের ইঞ্জুরির এক্স-রের প্রকৃত ছবি। 

মূলত, গত ০১ আগস্ট কোপা লিবার্তাদোরেসে ফ্লুমিনেন্স ও আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের মধ্যকার ম্যাচে ডিফেন্ডার লুসিয়ানো সানচেজের ডিফেন্স ট্যাকেল করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে সানচেজের পায়ে আঘাত করেন ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক লেফটব্যাক মার্সেলো। মর্মান্তিক এই দূঘর্টনার ভিডিও রাতারাতি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর পাশাপাশি সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির এবং এক্স-রের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ব্যাপক প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি প্রায় তিন বছর আগে থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান। কিন্তু তার পায়ের এক্স-রের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বর্তমান সময়ের এবং সেটি সানচেজের পায়ের এক্স-রের প্রকৃত ছবি। 

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লুসিয়ানো সানচেজের পায়ের ইঞ্জুরির ছবি দাবিতে পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কাবা শরীফ থেকে বের হওয়ার এই ছবিটি এডিটেড 

0

সম্প্রতি,’ সারা বিশ্বের মধ্যে ৫ জন লোক কাবা’ শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন। তার মধ্যে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব একজন ছিলো’ শীর্ষক শিরোনামে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কাবা’ শরীফ থেকে বের হওয়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে ( আর্কাইভ), এখানে ( আর্কাইভ), এখানে ( আর্কাইভ) এখানে ( আর্কাইভ) এবং এখানে ( আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নয় বরং নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদু বুহারী এর কাবা ঘর থেকে বের হওয়ার সময়কালীন একটি ছবিকে এডিট করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখমণ্ডল যুক্ত করে এই ভুয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

মূলত, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাইজেরিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া কামনায় দেশটির রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদু বুহারী এবং তার একটি প্রতিনিধি দল মক্কার কাবা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন। দোয়া শেষে পবিত্র কাবাঘরের ভেতরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে ধারণকৃত একটি ছবিকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখমণ্ডল যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot : The Guardian Nigeria website 

পূর্বেও একই দাবিতে ছবিটি প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সাঈদীর মৃত্যুতে কাবা শরীফের ইমাম টুইটে কোনো শোকবার্তা দেননি

0

সম্প্রতি, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইস‏ শোক প্রকাশ করে একটি টুইট বার্তা প্রকাশ করেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইস দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে কোনো টুইট প্রকাশ করেননি বরং শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইসের ব্যক্তিগত কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট-ই নেই। গণমাধ্যমেও উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: Facebook

দাবি করা হচ্ছে, কাবা ঘরের ইমামগণ দেলাওয়ার হুসাইন সাইদি (রহ.) মৃত্যুতে এক টুইটার বিবৃতিতে শোকবার্তা জানিয়েছেন।

টুইটটি এরকম –

الشيخ دلوار حسين السعيدي عالم إسلامي شهير من بنغلادش ، نشعر بحزن عميق لوفاته ، تقبل الله خدمته للقرآن وأعطاه مكانة عالية في جنات الفردوس.

The Bird of Quran…- – 
টুইটের বাংলা অনুবাদও করা হয়েছে এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে। 

বাংলা অনুবাদটি এমন, “শায়েখ দিলওয়ার হুসাইন সাইদি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার। আমরা তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত, আল্লাহ উনার কুরআনের খিদমতকে কবুল করুক এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।” (বানান অপরিবর্তিত)

টুইটকারির নাম শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আল সুদাইসি (হা.ফি.) যিনি খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।   

উক্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইস এর শোক বার্তা দাবিতে প্রচারিত আরবি লেখাটি গুগল সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। 

Screenshot: Facebook

অনুসন্ধানে উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে কোনো তথ্য গুগল সার্চের মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সৌদি আরব ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Al Arabiya এর ওয়েবসাইটে  No accounts for Al-Sudais on Twitter and Facebook শীর্ষক শিরোনামে ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Al Arabiya

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইসের টুইটার কিংবা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাকে উদ্ধৃতি করে অনলাইনে প্রচার করা কোনো তথ্যও সত্য নয়। 

তবে পরবর্তীতে তার কোনো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে আব্দুল রহমান আস-সুদাইসের নাম আরবি ভাষায় ব্যবহার করে একটি ভেরিফাইড পেজ (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে জানা যাচ্ছে, এটি মিশর থেকে পরিচালিত হচ্ছে। 

Screenshot: Facebook

অর্থাৎ, আব্দুল রহমান আস-সুদাইসের নামে একটি ভুয়া ভেরিফাইড পেজ পরিচালিত হচ্ছে ফেসবুকে। 

এছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত (আর্কাইভ) ইসলামিক বক্তাদের শোক বার্তার তালিকায় আল সুদাইসের নাম পাওয়া যায়নি।

Screenshot : Facebook

পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে সৌদি আরবের একাধিক গণমাধ্যম এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ১৪ আগস্ট রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পর তার মৃত্যুতে মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইস‏ শোক প্রকাশ করে একটি টুইট বার্তা প্রকাশ করেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইসের টুইটারে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই এবং তিনি সাঈদীর মৃত্যুতে কোনো শোকও প্রকাশ করেননি।  

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে পূর্বেও একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শায়েখ ড. আব্দুল রহমান আস-সুদাইস‏ শোক প্রকাশ করে টুইট বার্তা প্রকাশ করার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সাঈদী কি বিনা অনুমতিতে কাবা শরীফে প্রবেশ করতে পারতেন?

0

সম্প্রতি, “সারা বিশ্বের ৫ জন লোক কাবা শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে, তার মধ্যে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব একজন।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ সারা বিশ্বের ৫ জন লোক কাবা শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসছে।

মূলত, সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত কাবাঘরের অভ্যন্তরে একসময় সকল মুসলমানের প্রবেশের সুযোগ থাকলেও পরবর্তীতে কাবাঘরে ঢুকতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সুযোগটি সীমিত করা হয়। এর পরিবর্তে মুসলিম গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সৌদি সরকার কাবাঘরের ভিতরে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ সারা বিশ্বের ৫ জন লোক কাবা শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি এই সুযোগপ্রাপ্তির তালিকায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছাড়া বাকী চারজন কারা এমন কোনো তথ্যও ফেসবুকের পোস্টগুলো থেকে পাওয়া যায়নি। বরং অনুসন্ধানে, বিভিন্ন দেশের মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে কাবাঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

পূর্বেও একই দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাবায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাবায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)। 


টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন – পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাবায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কিংবা কাবা শরীফে ঘোষণা দিয়ে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবিগুলো মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে কাবায় সাঈদীর জানাজাটি ব্যক্তি উদ্যোগে আদায় করা এবং সেখানে নিয়মিতই মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা পূর্বক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার নজির রয়েছে।

কাবা শরীফ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ছিল ব্যক্তি উদ্যোগে

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১৪ আগস্ট রাত ১০ টা ১২ মিনিটে Hafez Shahid Laxmipur (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Hafez Shahid Laxmipur Facebook Post 

৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই লাইভটিতে দেখা যায়, ভিডিওটিতে জনাব হাফেজ শহীদ জানান, ‘আমরা কাবা চত্ত্বরে সালাতুল মাগরিব (মাগরিবের নামাজ) শেষ করেছি। এখন জানাজার নামাজ হবে। সে জানাজার নামাজের সাথে আমরা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের গায়েবানা জানাজা পড়বো। এখনই ঘোষণা হবে জানাজার নামাজের কাবা চত্ত্বরে।  আমরা আশা করি, আপনারাও গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণে দোয়া করবেন।’

তার এই বক্তব্যের মধ্যেই মসজিদের মাইকে আরবি ভাষায় একটি ঘোষণা দেওয়া হয়।  তারপর তিনি বলেন, ‘অলরেডি নামাজে জানাজার ঘোষণা হয়ে গেছে। আমরা এই নামাজে জানাজার সাথেই কাবা চত্ত্বরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের গায়েবানা জানাজায় আমি অংশগ্রহণ করবো।’ 

লাইভকারী ব্যক্তির এই বক্তব্য বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, কাবা শরীফ ঘোষণা দিয়ে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা হয়নি। বরং এই ব্যক্তি কাবা শরীফ ভিন্ন আরেকটি জানাজার সঙ্গে মিলিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। 

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে গত ১৪ আগস্ট কাবা শরীফে মাগরিবের নামাজের সময় থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত সময়কালে মসজিদুল হারাম বা কাবা শরীফের ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিং বিশ্লেষণ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম উল্লেখ পূর্বক তার গায়েবানা জানাজার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী সম্পর্কিত ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট যাচাই করেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

একইসাথে এ নিয়ে অনুসন্ধানে ১৫ আগস্ট হাসান নোমান (আর্কাইভ) নামে একজন সৌদি প্রবাসীর ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Hasan Noman Facebook Post 

সেখানে তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নিউজ ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে, বাইতুল্লাহ (কাবা শরীফে) আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়েছিল। কারণ আমি এখন  মদিনায় অবস্থান করছি। এখানে এমন কিছু দেখিনি কোনো সালাতের পরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্যে আমি মক্কার জামায়েতের একজন দায়িত্বশীলকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, বাইতুল্লায় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর কোনো গায়েবানা জানাজা হয়নি। তবে ১৫ আগস্ট এশার নামাজের পরে মক্কা জামায়েতে ইসলামীর উদ্যোগে তারা বাইতুল্লার আশেপাশে কোথাও গায়েবানা জানাজার আয়োজন করেছেন।’ 

অর্থাৎ কাবা শরীফে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আনুষ্ঠানিক কোনো গায়েবানা জানাজা হয়নি।

কাবা শরীফে গায়েবানা জানাজা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার টিম কাবা শরীফে গায়েবানা জানাজার ইতিহাস নিয়ে যাচাই করে। এতে দেখা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাবায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে সেখানে নিয়মিতই মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা পূর্বক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অনুসন্ধানে এ জাতীয় বেশ কিছু সংবাদও খুঁজে পাওয়া যায়।

যেমন, ২০২২ সালের ১৩ মে কাবা শরীফে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শায়েখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের গায়েবানা জানাজার পড়ার বিষয়ে জানা যায় সৌদি আরব ভিত্তিক গণমাধ্যম সৌদি গেজেটে ‘Funeral prayer in absentia performed in Two Holy Mosques for late UAE president’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে।

Screenshot: Saudi Gazette 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর তত্ত্বাবধায়ক বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় মসজিদ দুইটিতে সেসময় মাগরিবের পর আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শায়েখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয়।

এটি ছাড়াও কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার সূত্রে ২০১৮ সালে হত্যাকান্ডের শিকার সৌদি নাগরিক সাংবাদিক জামাল খাশোগির জন্যও মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে গায়েবানা জানাজা পড়ানোর বিষয়ে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Al Jazeera

পাশাপাশি ২০১১ সালে সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ দেশটির যুবরাজ সুলতান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের গায়েবানা জানাজা মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীসহ সৌদি আরবের সকল মসজিদে পড়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

Screenshot: gov.sa

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে গায়েবানা জানাজা পড়ার বিষয়টি একটি সাধারণ ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে কেবল তিনজন ব্যক্তির কাবা শরীফে গায়েবানা জানাজা হয়েছে শীর্ষক তথ্যটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। 

উল্লেখ্য, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রাজনৈতিক দল জামায়েতে ইসলামীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ঘুরেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে তার গায়েবানা জানাজার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলেও কাবা শরীফে ঘোষণা দিয়ে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

মূলত, গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান। তার মৃত্যুর পর সেদিন রাতেই সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি কাবা শরীফ থেকে ফেসবুক লাইভে এসে জানান, মাগরিবের পর সেখানে গায়েবানা জানাজা হবে, যাতে তিনি সাঈদীর জন্য গায়েবানা জানাজা পড়বেন। পরবর্তীতে তার এই বক্তব্য সূত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, কাবা শরীফে ঘোষণা দিয়ে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সাঈদী সহ পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র তিন ব্যক্তির গায়েবানা জানাজা কাবা শরীফে অনুষ্ঠিত হলো। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবা শরীফে সাঈদীর জানাজাটি ছিল ব্যক্তি উদ্যোগে, এবং একইসাথে প্রচার হওয়া  ‘কাবায় শুধুমাত্র ৩ জনের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার’ দাবিটিও মিথ্যা। সেখানে নিয়মিতই মৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা পূর্বক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর হয়ে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুইবার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। পরে ২ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকেই কারাগারে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মোট বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে তিনি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দুটো অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আদালত ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ২০১৪ সালে আপীল বিভাগ সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদীর পৃথক রিভিউ আবেদন খারিজ করে ২০১৭ সালের ১৫ মে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর থেকে কারাগারে থেকেই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।

সুতরাং, কাবা শরীফে ঘোষণা দিয়ে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়া এবং সাঈদীসহ মাত্র তিনজনের কাবা শরীফে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবিগুলো মিথ্যা।

তথ্যসূত্র