সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে– শীর্ষক শিরোনাম এবং পদত্যাগের ঘোষনা দিলো প্রধানমন্ত্রী, ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো চরমোনাই– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওতে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। ভিডিও দুইটির কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই- ১
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক সমকালের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ নভেম্বর “চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
লাইভ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারের তৃতীয় তলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের আগামী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
অর্থাৎ, ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের উক্ত লাইভ ভিডিওটির কিছু খণ্ডাংশ কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই- ২
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া একটি ভিডিও দেখানো হয়।
ভিডিওটিতে বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভি’র লোগো দেখা যায়। দেশ টিভি’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ১২ নভেম্বর “আমেরিকার যে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে, এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা দেননি এবং আলোচিত ভিডিওটিতেও এই সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তবে এই দাবিকে সবসময় প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মাঝে সম্প্রতি ‘পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী,ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো চরমোনাই’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে তথ্য প্রচার হলে সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।