সম্প্রতি, “পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ফেঁ*সে গেলো প্রধানমন্ত্রী।” শীর্ষক শিরোনাম ও প্রায় সমজাতীয় তথ্যযুক্ত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশের ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটি সম্পর্কে দুইটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিও দুইটির কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই ১
ভিডিওটিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মাছরাঙা নিউজ এর ইউটিউব চ্যানেলে “৪ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের খণ্ডাংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
অর্থাৎ, ওবায়দুল কাদেরের উক্ত ভিডিওটির খণ্ডাংশ কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ২
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দাবিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি ভিডিও দেখানো হয়। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়,’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন তার কতজন মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময় প্রয়োজন…।’
বিষয়টি যাচাইয়ে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে গত ১৭ অক্টোবর ‘Top 71’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “নির্বাচনকালীন কতজন মন্ত্রী প্রয়োজন, সেটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত: আইনমন্ত্রী। Anisul Hu। Top 71” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি বিশ্লেষণে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে গত ১৮ অক্টোবর আমাদের সময় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “নির্বাচনকালীন মন্ত্রী কতজন,সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে এ নিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থাৎ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের ভিডিওটিকেও কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ৩
আলোচিত ভিডিওটির পরবর্তী ভিডিওতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়। উক্ত ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ অক্টোবর “শেখ হাসিনা বিদেশে যান দেশের জন্য : ওবায়দুল কাদের। Obaidul Quader। Awami league । Somoy Tv।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর খণ্ডাংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ঘোষণা করেননি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও পুনর্বহাল করার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং আলোচিত ভিডিওটিতেও এই সংক্রান্ত কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তবে এই দাবিকে সবসময় প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মাঝে সম্প্রতি ‘পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ফেঁ*সে গেলো প্রধানমন্ত্রী।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই পুরোনো ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থা আর পূর্ণবহাল করা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা দাবিতে তথ্য প্রচার হলে সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগের ঘোষণা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Maasranga News : টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ
- Top 71 : নির্বাচনকালীন কতজন মন্ত্রী প্রয়োজন, সেটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত: আইনমন্ত্রী। Anisul Hu। Top 71
- Amader Shomoy : নির্বাচনকালীন মন্ত্রী কতজন,সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর
- Somoy Television : শেখ হাসিনা বিদেশে যান দেশের জন্য : ওবায়দুল কাদের। Obaidul Quader। Awami league । Somoy Tv।