চটকদার থাম্বনেইলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার ভুয়া খবর প্রচার 

সম্প্রতি, “হঠাৎ বৈঠকের পর পদত্যাগের ঘোষনা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!। BD Politics। Caretaker Government ” শীর্ষক শিরোনাম এবং প্রায় একই দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। 

এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ০১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ভিন্ন তিনটি ভিডিও ক্লিপের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড.ফয়জুল হক এবং চ্যানেল ২৪ এর একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ। 

ভিডিও যাচাই 

অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৬ অক্টোবর “বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।Sheikh Hasina। Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রথম ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে এক সাংবাদিকের আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কাউন্সিল ডিসেম্বরে। আওয়ামী লীগ প্রতিবারেই ডিসেম্বরে কাউন্সিল করে থাকে। আগামী কাউন্সিলে নেতৃত্বে নতুন কোনো চমক থাকছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে যদি একজন কাউন্সিলরও তাকে নেতৃত্বে না চায় তাহলে তিনি থাকবেন না। তিনি বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।

ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর সময় টেলিভিশন এর ওয়েবসাইটে “বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর বিকেলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ দিনের সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, যেদিন থেকে আওয়ামী লীগে আমার অবর্তমানে আমাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে তখন থেকেই আমি এই শর্ত মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে Dr. Fayzul Huq নামক ইউটিউব চ্যানেলে “ব্রেকিং নিউজ।। পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা।। যেকোনো সময় গ্রেফতার। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ড. ফয়জুল হল ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত দ্বিতীয় ভিডিওটির অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন বলে উল্লেখ করেন।

অনুরূপভাবে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সর্বশেষ ভিডিওটির অনুসন্ধানে গত মে মাসে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে আমাকে সরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: শেখ হাসিনা। BBC। Sheikh Hasina। Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা তৃতীয় ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরে বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশটি হইতো তাকে আর ক্ষমতায় চায় না।তাই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনীর উপর।’

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে ডয়েচ ভেলের বাংলা সংস্করণে গত ১৬ মে “যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসির ইয়ালদা হাকিমের সাথে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে র‍্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জানতে চানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷ তাঁর দাবি,গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে৷’

অর্থাৎ কোনপ্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

মূলত,’Sabai sikhi’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে পদত্যাগের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায় অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। পাশাপাশি দেশের নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদত্যাগ ঘোষণা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img