যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেনি

সম্প্রতি, ‘তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে বললো যুক্তরাষ্ট্র।বিপদে প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেনি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই এবং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ইন্টারনেটে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিটির সূত্রের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য  খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ৬ নভেম্বরে “Department Press Briefing – November 6, 2023” শীর্ষক প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং শিরোনামে প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং এ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from state.gov

বেদান্ত প্যাটেলকে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা এবং এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে কিনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন।

প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এটি আমরা আগেও বলেছি, আপনার বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে আমরা এটি পুনরুল্লেখ করেছি। একটি দলের বিপরীতে আমরা আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস হচ্ছে আগামী জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে ৯ নভেম্বর “বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত ৮ নভেম্বররের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এর আরও একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী বিএনপির পক্ষে প্রশ্ন করলে বেদান্ত প্যাটেল স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে ওয়াশিংটন।”

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছে।

তবে উক্ত দুই প্রেস ব্রিফিং এ কোথাও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে হবে এমন তথ্য বলেনি।

মূলত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তির আলাপচারিতা এবং বক্তব্যে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া এবং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জড়িয়ে ইন্টারনেটে একাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে:

সুতরাং, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে হবে এমন কোনো বিবৃতি যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি এবং উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img