সম্প্রতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যা বলল আমেরিকা– শীর্ষক শিরোনাম এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বলল আমেরিকা, রাজি হয়ে একি বলল রাষ্ট্রপতি– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বলেনি এবং রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন তত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজি হয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন কয়েকটি ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কালবেলা’র লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন রয়েছে।
কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১০ নভেম্বর “বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের প্রেস ব্রিফিং নিয়ে করা প্রতিবেদন এটি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কালবেলা অনলাইনে গত ১০ নভেম্বর “বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকার, রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান করবে।
বাংলাদেশে কোনো ধরনের অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে কি না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে বেদান্ত বলেন, নিশ্চিত যে, আমি গতকাল বা তার আগের দিন বা তার আগের দিন এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি অতীতেও আমাদের বলতে শুনেছেন যে, আমরা কোনো দেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকার, রাজনৈতিক দল বা কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সমর্থন করি না এবং সে ক্ষেত্রে যেখানে নির্বাচন চলছে সেখানে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- এই নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু উপায়ে অনুষ্ঠিত হবে যাতে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা হবে।’
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিটির সূত্রের খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে অনুসন্ধানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বলেছে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ৬ নভেম্বরে “Department Press Briefing – November 6, 2023” শীর্ষক প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং শিরোনামে প্রকাশিত প্রেস ব্রিফিং এ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
বেদান্ত প্যাটেলকে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা এবং এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে কিনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন।
প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এটি আমরা আগেও বলেছি, আপনার বন্ধুর প্রশ্নের জবাবে আমরা এটি পুনরুল্লেখ করেছি। একটি দলের বিপরীতে আমরা আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস হচ্ছে আগামী জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে ৯ নভেম্বর “বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত ৮ নভেম্বররের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এর আরও একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী বিএনপির পক্ষে প্রশ্ন করলে বেদান্ত প্যাটেল স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে ওয়াশিংটন।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছে।
পাশাপাশি, আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের মূল ভিডিওটি অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এটিএন বাংলা’র ফেসবুক পেজে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যেন নির্বাচিত হয়: মো. সাহাবুদ্দিন” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
মো: সাহাবুদ্দিনের ৪ মিনিট ৮ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকারটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
মূলত, সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বললো যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন রাজি হয়েছে- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এবং রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া এবং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে বললো যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন রাজি হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kalbela YouTube Video
- Kalbela-
- state.gov- Department Press Briefing – November 6, 2023
- Daily Jugantor- বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র
- ATN Bangla Facebook Post