সম্প্রতি, “রমজান উদযাপনে বিনামূল্যে 50 GB ইন্টারনেট” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে।
Screenshot from What’s App
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায় যে, রমজান উপলক্ষে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট অফার লিংকটি ভুয়া এবং উক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫০ জিবি ইন্টারনেট পাওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা।
লিংকটিতে ঢুকলে প্রথমেই বিনামূল্যে ইন্টারনেট নেওয়ার জন্য একটি অপশন আসে এবং তারপর মোবাইল নাম্বর দিতে হয়। মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর তারা আরও কিছু ধাপ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। ওই ধাপগুলো অনুসরণ করলে ৫ মিনিটের মধ্যে ৫০ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট অফারের কনফার্মেশন মেসেজ পাওয়া যাবে বলে ওয়েবসাইটটি জানান দেয়।
Screenshot from rh7y4.top
মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর ৫০ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি পেতে হলে এই লিংকটি হোয়াটস অ্যাপে এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে ১২ জন বন্ধুকে পাঠাতে বলা হয়।
Screenshot from rh7y4.top
অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার তাদের সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। কিন্তু কোনো ধরণের ইন্টারনেট অফার পাওয়া যায়নি। শেয়ারকৃত ১২ জনও সকল নির্দেশনা অনুসরণ করেছে, তবে সেই ১২ জনের কেউই ৫০ জিবির ইন্টারনেটের এই ফ্রি অফারটি পায়নি।
মূলত, ওয়েবসাইটটি নিজেদের প্রচারণার স্বার্থে রমজান উপলক্ষে ৫০ জিবি ইন্টারনেটের প্রলোভন দেখিয়ে এই লিংকটি ছড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, এ ধরণের স্ক্যাম লিংকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া আইডি হ্যাক, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অনলাইন নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার নজির রয়েছে।
সম্প্রতি নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে ক্লোজড বা প্রত্যাহার করা হয়নি বরং এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার অংশ হিসেবেই ঐ ১১ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজশাহীতে আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জেসমিনকে আটকে অভিযান চালানো র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের ঐ দলের প্রত্যেককেই জয়পুরহাট থেকে রাজশাহীতে র্যাবের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এখন রাজশাহীতেই অবস্থান করছে। মূলত তদন্ত কমিটি এই সদস্যদের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের উত্তর জানছেন। তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার অংশ হিসেবেই তাদের রাজশাহীতে আনা হয়েছে। এটি ‘প্রত্যাহার’ কিংবা ‘ক্লোজড’ পর্যায়ের বিষয় নয়।
একই বিষয়ে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Times এ ৩০ মার্চ ‘জেসমিনের মৃত্যুতে কর্মকর্তাদের ‘ক্লোজের খবর’ সম্পূর্ণ মিথ্যা: র্যাব‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র্যাব সদর দপ্তরের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। র্যাব-৫ এর ব্যাটেলিয়ন সদরদপ্তরে তদন্ত দল ওই দিনের অভিযানে অংশ নেওয়া ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এখানে ক্লোজের কোনো বিষয় নেই। যাদেরকে ডাকা হয়ে তারা সবাই জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্য।’
Screenshot: Dhaka Times
প্রতিবেদনটিতে তাকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, তদন্ত শেষে ক্যাম্পের সদস্যরা পুনরায় তাদের কর্মস্থলে যোগদান করবেন। মূলত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাদেরকে ডাকা হয়েছে।
পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৩০ মার্চ ‘হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: র্যাবের ১১ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাবের ১১ সদস্য নওগাঁয় আবার তাঁদের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় একজন মেজর, পুলিশের এএসপিসহ অন্যান্য সদস্য ও গাড়িচালক রয়েছেন।’
Screenshot: Daily Prothom Alo
আরেকটি জাতীয় দৈনিক কালবেলার ‘জেসমিনের মৃত্যু : জিজ্ঞাসাবাদের মুখে র্যাবের সেই ১১ সদস্য‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র্যাব সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। গত ২২ মার্চের ওই অভিযানে থাকা র্যাব-৫ এর ১১ জনকে জয়পুরহাট ক্যাম্প থেকে র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে তলব করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তারা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে ক্লোজড করা হয়নি।’
Screenshot: Kalbela
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম র্যাব-৫ অপারেশনস কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সনজয় কুমার সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে।
এই সময়ে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কোনো চিঠি বা অফিসিয়ালি কোনো আদেশ আমি পাইনি। আমার জানা মতে, ক্লোজের এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।
জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা নিয়ে আইনমন্ত্রী কি বলেছেন?
জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় আইনমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে র্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ গণমাধ্যম এই সংক্রান্ত তথ্যের উৎস হিসেবে বিডিনিউজ২৪ কে ব্যবহার করেছে৷
তবে এই ঘটনায় বিডিনিউজ২৪ বাদে অন্য গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের যেসব বক্তব্য পাওয়া যায়, সেসবে জেসমিন মৃত্যুর ঘটনায় র্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী জেসমিনকে র্যাবের হাতে আটক এ মারা যাওয়ার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
এসব বক্তব্যের কোথাও এই ঘটনায় র্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে র্যাব সদস্যদের ক্লোজড করার বিষয়ে বিডিনিউজ২৪ এর সূত্রে সংবাদ প্রচার করলেও তাদের প্রতিবেদনেও এই প্রসঙ্গে
Screenshot: DW Bangla
মূলত, গত ২২ মার্চ নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী জেসমিনকে আটক করে র্যাব। পরে ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তাকে আটকের সাথে জড়িত র্যাব সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। এই উদ্দেশ্যে ওই অভিযানে থাকা র্যাব-৫ এর ১১ জনকে জয়পুরহাট ক্যাম্প থেকে র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। তলবের এই ঘটনাটিকেই পরবর্তীতে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের উদ্ধৃতিতে আবার কোথাও আঈনমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে র্যাব সদস্যদের ক্লোজড করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
সুতরাং, নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের ১১ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, দেশের গণমাধ্যমগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে।
গণমাধ্যমে যা দাবি করা হয়েছে
জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো‘ দাবি করেছে, “হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘ফাইন্ডিং ওয়ার্ল্ড ফিউচার লিডার্স’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয় ১৪ মার্চ। বিতর্ক হয় অনলাইনে। অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিক। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।”
Screenshot source: Prothom Alo
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘ভবিষ্যতের নেতা খুঁজতে’ প্রতিবছর দুটি ক্যাটাগরিতে সংসদীয় বিতর্ক আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি ব্রিটিশ সংসদীয় বিতর্ক, অন্যটি এশিয়ান সংসদীয় বিতর্ক। এবারের আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন দেশ রাশিয়া। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হল্যান্ড লোপ মিশিগান এবারের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা হয়েছে। আর বাংলাদেশি স্কুলছাত্র রাকিব ৫৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা বিতার্কিক হয়েছে। রাকিব টানা ১৪৪টি বিতর্কে অংশ নিয়ে সব কটি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের রেকর্ডবুকে নাম উঠেছে রাকিবের। রাকিবের আগে লুইস অ্যান্ডারসন নামের একজন টানা ১৩৯টি বিতর্কে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। ”
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশি স্কুলছাত্র শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। রাকিব সেখানে দাবি করেন, গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় ওয়াশিংটন হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেফ জায়েন্টস। ভিসা পাইনি বলে সরাসরি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি।
Screenshot source: TBS
আবেদন এবং নিবন্ধনে তার কোনো খরচ লাগেনি বলেও প্রতিবেদনে দাবি করেন রাকিব।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বরং হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া একটি প্রতিযোগিতায় রাকিব সেরা বিতার্কিক হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
প্রতিযোগিতাটির অস্তিত্বই নেই
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার টিম গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখার চেষ্টা করেছে।
গণমাধ্যমের তথ্যের সূত্র ধরে প্রতিযোগিতাটির শিরোনামটি (Finding World Future Leaders) কিওয়ার্ড সার্চ করে এই ধরনের কোনো প্রতিযোগিতার অস্তিত্ব ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিযোগিতাটি হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ড এবং ম্যানুয়াল সার্চ করে এমন কোনো প্রতিযোগিতার বিষয়ে তথ্য পায়নি।
বাইডেন ২৮ মার্চ কথিত প্রতিযোগিতাটিতে উপস্থিত ছিলেন?
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতাটির বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম জো বাইডেনের ২৮ মার্চের পুরো দিনের সিডিউল (১,২) বিশ্লেষণ করে দেখেছে। উক্ত সিডিউল অনুযায়ী তাঁর দিনের অফিসিয়াল কর্মসূচী শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় ডেইলি ব্রিফিং গ্রহণ করার মাধ্যমে। পরবর্তীতে দিনব্যপী নানান কর্মসূচীতে যোগদান শেষে বিকেল পাঁচটায় বাইডেন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন।
সিডিউলটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন বাইডেনের হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে কোনো কর্মসূচী ছিল না। তিনি সকাল সাড়ে আটটায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর দিনের কর্মসূচী শুরুই হয়েছিল সকাল সাড়ে নয়টায়।
বাইডেন অবশ্য পরদিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে একটি ডেমোক্রেসি সামিটে অংশ নিয়েছিলেন। এই কর্মসূচীর তথ্য তাঁর ২৯ মার্চের সিডিউলে উল্লেখ ছিল।
বাইডেন এবং হোয়াইট হাউস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়মিতই আপডেট দেওয়া হয় হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Briefing Room এবং Press Briefing নামক দুইটি সেকশনে।
প্রতিযোগিতাটির বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়েছে কিনা বা বাইডেন এমন কোনো প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি উপস্থিত ছিলেন কিনা সে বিষয়ে জানতে উক্ত দুই সেকশনের গেল এক মাসের (১ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) বিবৃতিগুলো বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
অর্থাৎ, আলোচিত বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি।
‘সেরা বিতার্কিক’ রাকিবের খোঁজে
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে রংপুরের স্কুলছাত্র শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়।
অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রাকিব নিয়মিতই তার ‘সাম্প্রতিক সাফল্যের’ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো শেয়ার করছেন।
Screenshot source: Facebook
লিগ্যাল ডকুমেন্টসে ভুয়া স্বাক্ষর
রাকিব তার অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) আলোচিত প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে চারটি ছবি যুক্ত করেন।
Screenshot source: Facebook
রিউমর স্ক্যানার টিম ছবিগুলো বিশ্লেষণ এবং যাচাই করে দেখেছে। ১ম ছবিতে ‘Whitehouse International Debate Competition 2023’ শিরোনামের একটি সার্টিফিকেট দেখা যায়। যেখানে লেখা রয়েছে, শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানকে White House International Debate 2023 প্রতিযোগিতায় Debator of the Tournament হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
খেয়াল করলে দেখবেন, সার্টিফিকেটের শিরোনামে দেওয়া প্রতিযোগিতার নাম আর মূল লেখায় উল্লিখিত প্রতিযোগিতার নামে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শিরোনামে Whitehouse শীর্ষক দুইটি শব্দ একসাথে থাকলেও ভেতরের মূল লেখায় আলাদা রয়েছে। শিরোনামে Debate এর পর Competition শব্দটি থাকলেও মূল লেখায় তা নেই।
তাছাড়া, মূল লেখায় একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও কী সেই রেকর্ড সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
সার্টিফিকেটে মোট তিনটি স্বাক্ষর রয়েছে। প্রথম স্বাক্ষরটি হোয়াইট হাউসের Head Counsel বলে দাবি করা হয়েছে।
Screenshot collage: Rumor Scanner
কিওয়ার্ড সার্চ করে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, হোয়াইট হাউসের কাউন্সেল হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন স্টুয়ার্ট ডেলেরি (Stuart Delery)। তার স্বাক্ষরের সাথে আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় স্বাক্ষরটি (ডানে উপরে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তার স্বাক্ষরের সাথে অবশ্য আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল রয়েছে। অবশ্য তাঁর স্বাক্ষর কিওয়ার্ড সার্চ করে তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টসহ একাধিক ওপেন সোর্সেই (১,২) পাওয়া যায়।
Image collage: Rumor Scanner
এই দুইজনের স্বাক্ষর রয়েছে পরের অর্থাৎ দ্বিতীয় ছবিতেও। এই ছবিতে আরেকটি সার্টিফিকেট রয়েছে যেটি রাকিবকে উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
তৃতীয় ছবিতে রাকিবের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার (030829723105), রেজিস্ট্রেশন কোড (AB07) উল্লেখ করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ১৪৪ টি ডিবেট জয় লাভ করায় হোয়াইট হাউসের রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন। ছবিতে আরও লেখা রয়েছে, এই ফলাফল ১৭ মার্চ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও ব্রিটিশ রুল এবং রেগুলেশনের কারণে এখন সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরপর এই ফলাফল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অফিসিয়াল কোন ওয়েবসাইটটে ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল সে বিষয়ে উল্লেখ নেই ছবিতে। মার্কিন একটি প্রতিযোগিতা ব্রিটিশ নিয়ম মেনে কেন ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সরিয়ে ফেলতে হল সেটিও প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এই ছবির নিচে জেফরি জিয়ান্টস (Jeffrey Zients) নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে যিনি উপরের বিবৃতির বিষয়টি স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার একটি স্বাক্ষরও রয়েছে যা অন্য তিন ছবিতেও ছিল।
অর্থাৎ, চারটি ছবিতে (১ম ও ২য় ছবির তৃতীয় স্বাক্ষর) যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি জেফরি জিয়ান্টস নামে এক ব্যক্তির। তার পদবি উল্লেখ নেই ছবিতে।
Image collage: Rumor Scanner
রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে, জেফরি জিয়ান্টস হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বাক্ষরের সাথে আলোচিত সার্টিফিকেটের স্বাক্ষরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, সার্টিফিকেটসহ রাকিবের পোস্ট করা চারটি ছবিতে যে তিনজনের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্যতিত বাকি দুইজনের স্বাক্ষর জাল বা ভুয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে স্বাক্ষর ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ এই স্বাক্ষরটি বাইডেনের টুইটার অ্যাকাউন্টসহ একাধিক ওপেন সোর্সের ডকুমেন্টে সহজেই পাওয়া যায়।
Image collage: Rumor Scanner
চতুর্থ ছবিতে রাকিবের উক্ত প্রতিযোগিতার স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে, যেখানে তার নাম, ঠিকানা, জিমেইল, রেজিষ্ট্রেশন নম্বরসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি রয়েছে। কার্ডে উল্লেখ রয়েছে, তিনি রেজিষ্ট্রেশন করেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট
রাকিবের অ্যাকাউন্টে আরো স্ক্রল করে দেখা যায়, গত ২০ মার্চ ‘The Real Goat is Here’ ক্যাপশনে একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দুইটি পত্রিকার ছাপা সংস্করণের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন রাকিব।
Screenshot source: Facebook
বামদিকের ছবিতে থাকা পত্রিকার নাম পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। তবে The New শীর্ষক দুইটি শব্দ দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, পত্রিকাটির নামের শুরুর দুই শব্দ এবং ফন্ট মার্কিন সংবাদমাধ্যম The New York Times এর সাথে মিল পাওয়া যায়।
দেখুন ছবিতে –
Image collage: Rumor Scanner
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবরটি ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। খবরটির স্ক্রিনশটে এই তারিখটি উল্লেখ দেখা যাচ্ছে।
এই তথ্যের সূত্র ধরে ১৯ মার্চের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সকল পাতা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রাকিবের পোস্টের ডানদিকের ছবিতে থাকা পত্রিকার নামও পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। তবে BBC New এই দুই শব্দ দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, এই নামে পৃথিবীতে একটি সংবাদমাধ্যমই রয়েছে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম BBC। কিন্তু সংবাদমাধ্যমটির লোগোর ফন্টের সাথে রাকিবের ছবিতে থাকা bbc news এর ফন্টের মিল নেই।
দেখুন ছবিতে –
Image collage: Rumor Scanner
তাছাড়া, বিবিসি কোনো দেশেই পত্রিকা প্রকাশ করে না।
অর্থাৎ, রাকিব যে দুই সংবাদমাধ্যমের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন সেগুলো আদতে ভুয়া।
দুইটি স্ক্রিনশট এডিট করে বানানো এমন সন্দেহ থেকে রিউমর স্ক্যানার টিম সার্চ ইন্জিন গুগলে প্রাসঙ্গিক একাধিক ভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করার পর fodey নামে একটি ওয়েবসাইটের সন্ধান পায়।
ওয়েবসাইটটির হোমপেজে একটি পত্রিকার স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে যার ফরমেট এবং লেখার ধরণের সাথে রাকিব যে দুই সংবাদমাধ্যমের খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন সেগুলোর মিল পাওয়া যায়।
Screenshot source: Fodey
এই সাইটটির মাধ্যমে মূলত বিনোদনের উদ্দেশ্যে পত্রিকার নাম, তারিখ, শিরোনাম এবং খবর বসিয়ে স্ক্রিনশট তৈরি করে নেওয়া যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিম বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ একটি স্ক্রিনশট তৈরি করেছে।
দেখুন ছবিতে –
Screenshot source: fodey
অর্থাৎ, একইভাবে রাকিবের পোস্টে উল্লিখিত দুইটি সংবাদমাধ্যমের স্ক্রিনশটও তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রতিযোগিতার বিষয়ে ১৯ মার্চের আগে কোনো পোস্ট দেননি রাকিব
রাকিব আলোচিত এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) দেন ১৯ মার্চ। নিজের ছবি এবং সেরা বিতার্কিক শীর্ষক তথ্য সম্বলিত ছবির সাথে পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের একজন বিতার্কিক হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক বড় প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করা আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি অন্যদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তারা কেবল দুর্দান্ত ছিল, বিশেষত ফ্রেডরিক উইলিয়ামস! সেসব স্মৃতি আমি কখনো ভুলব না। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন। (অনূদিত)”
Screenshot source: Facebook
গণমাধ্যম ও তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার সময়কাল ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ। ফলাফল প্রকাশ ১৭ মার্চ। এই পুরো সময়টায় রাকিব আলোচিত প্রতিযোগিতার বিষয়ে কোনো পোস্ট করেননি তার অ্যাকাউন্টে।
ওয়ার্ডপ্রেসে ভুয়া ওয়েবসাইটে তৈরি করে আয়োজনের আপডেট
রাকিবের পোস্টে একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখেছি যেখানে এমন কোনো প্রতিযোগিতার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যেহেতু দাবি করা হয়েছে, ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেহেতু রিউমর স্ক্যানার টিম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের গেল এক মাসের আর্কাইভ পেজগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে। কিন্তু আর্কাইভেও এমন কোনো প্রতিযোগিতার তথ্য মেলেনি।
পরবর্তীতে বিভিন্ন কি ওয়ার্ড এবং প্রাসঙ্গিক ম্যানুয়াল সার্চের মাধ্যমে http://whitehouse.gov.unaux.com (আর্কাইভ) নামে একটি সাইটের খোঁজ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
একইসময়ে রাকিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও আমাদের একই ওয়েবসাইটের লিংক পাঠান।
সাইটটতে প্রবেশের শুরুতেই একটি সতর্কীকরণ বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি হয়ত একটি ভুয়া সাইট। আক্রমণকারীরা হুবহু একই রকম সাইট তৈরির জন্য url পরিবর্তন করে থাকতে পারে।
Ignore অপশনটি ক্লিক করে (০১ এপ্রিল) সাইটটিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, এটি ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে তৈরিকৃত একটি সাইট। সাইটে দুইটি পোস্ট এবং একটি Sample Page রয়েছে।
১৭ মার্চ করা প্রথম পোস্টের শিরোনাম White House International Debate Competition 2023 Results। অর্থাৎ, আলোচিত প্রতিযোগিতাটির ফলাফল এখনও এই সাইটে রয়েছে। যদিও রাকিবের পোস্টের ছবিতে দাবি করা হয়েছিল, ফলাফলটি সাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পোস্টে গণমাধ্যমে উল্লিখিত তথ্যগুলোই পাওয়া যায়। পোস্টে রাকিব ছাড়াও আরও দুই ব্যক্তির (এর বাইরে আরও দুইজনের নাম ছিল। ২৮ মার্চের ফলাফল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জো বাইডেন, এবং বিশেষ অতিথি জেফ জিয়ান্টস হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দাবি করা হয়েছে) নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। একজন রাশিয়ার হলান্ড লোপ মিশিগান (Holland Lop Michigan), যিনি ফাইনালের সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চ এমন কোনো ব্যক্তির নাম পাওয়া না গেলেও ফেসবুকে Holland Lop of Michigan নামে একটি প্রাইভেট গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়।
অন্য ব্যক্তি লুই আন্ডারসন (Louie Anderson)। এই ব্যক্তির রেকর্ডই রাকিব ভেঙেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই ব্যক্তির নাম কি ওয়ার্ড সার্চ করে আমরা একই নামে মার্কিন একজন কৌতুক অভিনেতা (যিনি ২০২২ সালে মারা যান) ভিন্ন আর কারো তথ্য খুঁজে পাইনি।
পরবর্তীতে, ২২ মার্চ ‘Preparing for Prize Ceremony’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত দ্বিতীয় পোস্টটির লিংকে প্রবেশ করার পর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায় যেটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর জন্য প্রস্তুতিমূলক বিশেষ বোর্ড মিটিংয়ের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে
কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বরের। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় University American College Skopje এর সপ্তম বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি এটি।
Image collage: Rumor Scanner
একই পোস্টে ২৮ মার্চ ৬ টি ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
একইসাথে ঐ দিনের বোর্ড মিটিংয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। সিদ্ধান্তগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
১ম সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ইভেন্টের খবরগুলো অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল সাইট www.whitehouse.gov উল্লেখ) ছাড়া অনলাইনে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যেকোনো ওয়েবসাইটে থাকা মানেই সেটি অনলাইনেই থাকা বোঝায়। তাছাড়া এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্যই নেই।
২য় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, এই ওয়েবসাইটটি সাময়িক সময়ের প্রয়োজনে এই বছরের ইভেন্টের জন্য খোলা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউস কর্তৃক এমন টেম্পোরারি ওয়েবসাইট খোলার নজির নেই যেটি কিনা ওয়ার্ডপ্রেসে তৈরি এবং সাইটে প্রবেশের সময়ই ভুয়ার সম্ভাবনা সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
৩য় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সাইটটি ২৮ মার্চের পর মুছে দেওয়া হবে। যদিও আজ ০১ এপ্রিল এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সাইট সক্রিয় রয়েছে।
৪র্থ সিদ্ধান্তে এসেছে, শুধু প্রতিযোগিতার বিতার্কিকরাই সাউথ কোর্ট অডিটরিয়ামের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু অনুসন্ধানে আগেই পেয়েছি, এমন কোনো আয়োজন ২৮ মার্চ সাউথ কোর্ট অডিটরিয়ামেরল হয়নি যেখানে বাইডেন উপস্থিত ছিলেন।
৫ম এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কেউ কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না। ধারণ করলে বিতার্কিকরা সমস্যায় পড়বেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সচরাচর রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় ছবি বা ভিডিও ধারণের এমন কড়াকড়ি নজরে আসে না।
পোস্টের শেষে একটি ইমেইল দেওয়া হয়েছে যা হোয়াইট হাউস ওয়েবসাইটের ডোমেইন থেকে তৈরি নয় বরং এটি জিমেইল পরিষেবার মাধ্যমে তৈরি।
অর্থাৎ, একটি ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে আলোচিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়ে আপডেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিস্তারিত বিবরণ বা নিয়মিত কোনো আপডেট ছাড়াই ১৭ মার্চ প্রতিযোগিতার ফলাফল এবং ২২ মার্চ পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি বিষয়ক দুইটি পোস্ট রয়েছে সাইটটিতে। পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার যে ছবি রয়েছে একটি পোস্টে সেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি। তাছাড়া, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছবি/ভিডিও ধারণ করা যাবে না, অনলাইনে এ বিষয়ে নিউজ পাওয়া যাবে না শীর্ষক নানা সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে যা স্পষ্টই প্রমাণ করে এটি একটি ভুয়া প্রতিযোগিতা।
মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে আয়োজিত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেরা বিতার্কিক হয়েছেন শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি এবং এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সাথে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে। রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার লিগ্যাল ডকুমেন্টস দাবিতে যে ছবিগুলো দিয়েছেন তাতে দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া, রাকিব দুইটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। এমনকি এই কথিত আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতি সভার একটি ছবি রয়েছে ভুয়া সাইটটিতে, যেটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি।
সুতরাং, হোয়াইট হাউসের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি রাকিবের সাফল্যের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক সহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দ্যা ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রিস গেইল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি অবসরের ঘোষণা দেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবটির উৎস কী
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) এর অন্যতম দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কর্তৃক সম্মান স্বরূপ তাদের সাবেক দুই খেলোয়াড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান এবিডি ভিলিয়ার্সের জার্সিকে অবসরে পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে একাধিক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১৮ মার্চ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলের জার্সি অবসরে‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
screenshot: Prothom Alo
প্রতিবেদনে বলা হয়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে (আরসিবি) এবি ডি ভিলিয়ার্স ১৭, আর ক্রিস গেইল ৩৩৩ নম্বর জার্সি পরতেন। দুজনের কেউই আর আইপিএলে নেই। আরসিবি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টি–টোয়েন্টির দুই মহাতারকাকে সম্মান জানাতে তাঁদের জার্সি নম্বর আর কাউকে দেওয়া হবে না। ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলের জার্সিকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে আইপিএল এর টিম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর টুইটার অ্যাকাউন্টে ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক টুইটে এই দুই তারকা খেলোয়াডের জার্সিকে অবসরে পাঠানোর ঘোষণাটি খুঁজে পাওয়া যায়।
screenshot: Twitter
অর্থাৎ ১৭ মার্চ উক্ত টুইটটি প্রকাশ হওয়ার পরই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গেইল কি আসলেই অবসর নিয়েছেন?
অনুসন্ধানে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে ক্রিস গেইল এর অবসরের বিষয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তবে ক্রিস গেইল অবসর নিলে কি করবেন কিংবা সতীর্থদের অবসর বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায় গণমাধ্যমে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিভার্স বস’ নামে পরিচিত গেইল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেননি এবং সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সর্বশেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পাঞ্জাব কিংসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে এটা বোঝা যায় যে, গেইল এখনো সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিস গেইল সতীর্থ কাইরন পোলার্ডের অবসর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মজার ছলে বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে পোলার্ড তার আগে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্রিস গেইল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্রিস গেইল ২০২২ আইপিএলে অংশ না নিলেও তিনি পরের বছর আসরটিতে ফিরে আসতে চান। যদিও তিনি এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি তবে তার সমসাময়িক পোলার্ড এবং ব্রাভো ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ক্রিস গেইলের অবসর বিষয়ক তথ্যের ক্ষেত্রে জানা যায়, ৬ নভেম্বর ২০২১-এ, গেইল শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন তবে তিনি এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি। জ্যামাইকায় তার নিজ অঞ্চলের জনতার সামনে তিনি অবসর নিতে চেয়েছিলেন।
অর্থাৎ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেননি।
মূলত, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ মার্চ ফ্যাঞ্চাইজিটির সাবেক ক্রিকেটার ক্রিস গেইল এবং এবিডি ভিলিয়ার্সকে সম্মান জানিয়ে তাদের জার্সি অবসরে পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে গেইলের আন্তর্জাতিক এবং সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইলের অবসরের ঘোষণা দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি অবসরের ঘোষণা দেননি।
উল্লেখ্য, প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ২০২১ সালেও ক্রিস গেইলের এই ফরম্যাটে অবসরের বিষয়টি আলোচনায় আসলে গেইল নিজে তখন সংবাদ সম্মলনে জানান, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে এখনই পুরোপুরি অবসরে যাচ্ছেন না তিনি। নিজেকে নাকি ‘সেমিরিটায়ার্ড’ বলেই ভাবছেন, এ প্রসঙ্গে বলেছেন “আমি পুরোপুরি অবসরে যাইনি। আমাকে আপনারা সেমিরিটায়ার্ড বলতে পারেন। প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে আমি দর্শক ও ভক্তদের সঙ্গে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম, তাই ওভাবে ব্যাট উঁচিয়ে ধরা।”
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বিনোদন ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশকিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “আন্তর্জাতিক এবং সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ক্রিস গেইল অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি,‘প্রত্যেকের ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনের একটি আলাদা ব্যক্তিগণ নাম রয়েছে’ দাবিতে বেশকিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত পোস্টগুলোতে বলা হচ্ছে যে, কেউ যদি তার মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট (উদাহরণস্বরূপ: ৩৩৩) কে কমেন্ট সেকশনে @[333:0] শীর্ষক ফরমেটে লিখে তাহলে সেখানে যে নামটি চলে আসবে তাই হচ্ছে আপনার মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা খায়, কোনো ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট ফেসবুকে কমেন্ট করলে যদি কোনো নাম আসে তাহলে সেটি ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম নয় বরং এটি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ইউজার আইডি নাম্বার।
সাধারণত আমরা কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ কিংবা গ্রুপকে কমেন্টে ম্যানশন করতে চাইলে @ লিখে তারপর ওই গ্রুপ/পেজ/আইডি এর নাম লিখি। যেমন: রিউমর স্ক্যানারের ফেসবুক পেজকে ম্যানশন করতে চাইলেন @Rumor Scanner টাইপ করে কাঙ্ক্ষিত পেজকে ম্যানশন করা হয়।
Screenshot source: Facebook
তবে, এই পদ্ধতিটি ছাড়াও ফেসবুকে কাউকে ম্যানশন করার ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে আর সেটি হচ্ছে ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে ম্যানশন করা (যদিও অনেক মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে এই পদ্ধতি কাজ করে না)।
প্রতিটি ফেসবুক একাউন্ট, গ্রুপ এবং পেজের একটি ইউনিক ‘User ID Number’ রয়েছে যা অন্য যেকোনো ফেসবুক একাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপ হতে সম্পূর্ন আলাদা এবং কোনো ব্যাক্তি চাইলেই সেই ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফেসবুক একাউন্ট, গ্রুপ অথবা পেজকে কমেন্ট বক্সে ম্যানশন করতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ: ফেসবুকের CEO মার্ক জাকারবার্গ এর যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেটির ইউজার আইডি নম্বর হচ্ছে 4। এখন আপনি কমেন্ট সেকশনে @[4:0] লিখে কমেন্ট করেন তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হবে।
আবার, রিউমর স্ক্যানারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইউজার আইডি হচ্ছে ‘100063242680226’। এখন কেউ যদি কমেন্ট সেকশনে @[100063242680226:0] লিখে কমেন্ট করে তাহলে রিউমর স্ক্যানার পেজের নাম প্রদর্শিত হবে।
Image: Scanner পেজের লিংকে user ID number দেখা যাচ্ছে।
তবে, অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে যে কাউকে ম্যানশন করা যায় এই ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাপারটিকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
যেমন: বেশ কয়েকবছর আগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছিলো, “যদি আপনি কমেন্ট সেকশনে @[4:0] কমেন্ট করার পর মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হতে দেখেন তাহলে বুঝে নিবেন আপনার আইডি হ্যাক হয়নি। আর যদি মার্ক জাকারবার্গের আইডি প্রদর্শিত না হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে।”
যেহেতু কিছু মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে ইউজার আইডি নম্বর ব্যবহার করে কাউকে ম্যানশন করার পদ্ধতিটি কাজ করেনা তাই অনেকের ক্ষেত্রেই @[4:0] কমেন্ট করার পর মার্ক জাকারবার্গের নাম প্রদর্শিত হচ্ছিল না। এতে করে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ধরে নিয়েছিল তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে।
পরবর্তীতে এই দাবিটিকে Snopes, Africa Check সহ আরো অনেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিথ্যা সাব্যস্ত করে।
মূলত, সম্প্রতি কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, কেউ যদি তার মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট @[333:0] শীর্ষক ফরমেটে লিখে কমেন্ট করে তাহলে সেখানে যে নামটি চলে আসবে তাই হচ্ছে আপনার মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবির সাথে মোবাইলের ব্যক্তিগত নাম থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনে @[User ID number:0] লিখে কমেন্ট করলে কোনো ব্যক্তির নাম প্রদর্শন করার মানে হচ্ছে সেই ফেসবুক ব্যবহারকারীকে তার ইউজার আইডি নম্বর দিয়ে ম্যানশন করা হয়েছে।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের মোবাইল নম্বরের শেষ তিন ডিজিট কে কমেন্ট সেকশনে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে লেখার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নাম প্রদর্শিত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
গত ৩১ মার্চ, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রলয় গ্যাং’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টিভি চ্যানেল একাত্তর টিভির একটি প্রতিবেদনে প্রলয় গ্যাং এর ছবি দাবি করে কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি গ্রুপ ফটো প্রকাশ করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রলয় গ্যাংয়ের দাবিতে একাত্তর টিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একটি ছবিতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে তারা কেউ উক্ত গ্যাংয়ের সদস্য নয় বরং ছবিতে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ৪ জন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন এবং সকলেই ঢাবির অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আরিফ পাটোয়ারীর ফেসবুক একাউন্টে গত ২৬ মার্চ ‘উদ্যান গ্যাং এবং আমাদের গ্যাং‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি স্ট্যাটাস খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Arif Patwary Facebook Post
স্ট্যাটাসটিতে আরিফ পাটোয়ারী লিখেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত অপরাধ সংগঠিত হয় তার প্রায় ৯০% ঘটনা উদ্যান কেন্দ্রিক। প্রায় প্রত্যেক ইয়ার ভিত্তিক বা একসাথে উদ্যান কেন্দ্রিক গ্রুপ আছে।
…অনার্স প্রায় শেষের দিকে এখনো সন্ধ্যার পর উদ্যানে যাওয়া হয় নাই! (বই মেলা ব্যতীত)। বলতে পারেন এটা আমার ব্যার্থতা! এখন যে “প্রলয় গ্যাং”, “ব্লু নাইট” এসব গ্যাং দেখছেন এদের ন্যায় আমাদেরও একটা গ্যাং ছিল নাম ছিল ‘Special Gang DU’ যদিও সদস্য এতো বেশি ছিল না।…
আরিফ পাটোয়ারী এই Special gang সম্পর্কে আরও লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের এখনো অনার্স শেষ হয় নাই কিন্তু আমাদের Special gang এর সবাই ক্যাম্পাসে সুপরিচিত এবং এই বয়সেই সবাই তার অবস্থানে মোটামুটি সফল। প্রায় কারো ফ্যামিলি থেকে টাকা আনা লাগে না বরং বাড়িতে টাকা পাঠায়। এই সফলতাই আমাদের আড্ডার আলোচ্য বিষয় ছিল।”
Special gang এর সদস্যদের পরিচয় সম্পর্কে আরিফ পাটোয়ারী লিখেন, “‘Amjad Hossen Hridoy , বর্তমানে “ঢাকা পোস্ট” পত্রিকার বর্ষসেরা রির্পোটার। নুরুল ইসলাম নূর, কবি ও লেখক। তাওসিফুল ইসলাম Daily observe এর সুদক্ষ সাংবাদিক, প্রক্টর অফিসের চাঁদাবাজির মুখোশ উম্মচনকারী। Rakib Uddin দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের ইংলিশ টিচার। Md Ashikur Rahman Mondol সেইও একটা বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারের টিচার। বন্ধু Siddik Faruk, ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পাওয়ারফুল সাংবাদিক আজকের পত্রিকার জনপ্রিয় রির্পোটার। Khaled Mahmud যদিও একটু পরে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে সেও ইতিহাস সাক্ষী ‘দৈনিক সংবাদ’ এর রির্পোটার। আমিও তখন সাংবাদিকতা করতাম কিন্তু সাংবাদিকতার চেয়ে ব্যবসা শিখাটা আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, ছোটখাটো একটা অনলাইন বিজনেস দাড় করিয়েছি যেটার আয় দিয়ে নিজের খরচ চলে। আর রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমাদের সেই গ্যাং এখনো আছে কিন্তু সবার ব্যস্তার কারণে আগের মত একটিভ না। এখনো আমাদের আড্ডা হয় কিন্তু সেটা টিএসসি আর ফুলার রোডে না কবি জসীম উদ্দীন হলের গার্ডেনে। আলোচনার বিষয় সেই আগের গুলোই সাথে যুক্ত হয়েছে বিয়ের ব্যাপারটা!…”
স্ট্যাটাসটিতে আরিফ পাটোয়ারী দুইটি ছবিও ব্যবহার করেন৷ এই দুইটি ছবির মধ্যে একটি ছবির সঙ্গে একাত্তর টিভিতে প্রচারিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রলয় গ্যাং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Collage: Rumor Scanner
বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম আরিফ পাটোয়ারীর স্ট্যাটাসে উল্লেখিত আরও তিন ব্যক্তি যথাক্রমে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ঢাবি প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন হৃদয়, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভারের ঢাবি প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলাম ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি লিটারেচার সোসাইটির সদস্য নুরুল ইসলাম নূরের ফেসবুক স্ট্যাটাস খুঁজে পায়।
যেখানে ঢাকা পোস্টের ঢাবি প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন হৃদয় লিখেন, “কত বড় জঘন্য কাজ করল একাত্তর!!!! আমাদের বন্ধুদের ছবিকে কোনো যাচাই-বাছাই না করে প্রলয় গ্যাংয়ের সাথে জড়িয়ে দিলো!! কী করা উচিত এদের বিরুদ্ধে?”
Screenshot: Amjad Hossen Hridoy Facebook Post
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভারের ঢাবি প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলাম লিখেন, “একাত্তর টিভি প্রথম আলোর ছবি আর ক্যাপশন সামঞ্জস্য না হওয়ায় অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। আর আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রলয় গ্যাং নিয়ে তাদের একটা রিপোর্টে আমি আছি এরকম গ্রুপ ছবি ব্যবহার করেছে যাচাই-বাছাই না করে। আরে ভাই, আমরাই প্রলয় গ্যাংয়ের মুখোশ উন্মোচন করেছি। আমরাই প্রক্টরিয়াল টিমের চাঁদাবাজি বের করেছি। একাত্তর টিভি এখন কি জবাব দিবে?”
Screenshot: Tausiful Islam Facebook Post
ঢাকা ইউনিভার্সিটি লিটারেচার সোসাইটির সদস্য নুরুল ইসলাম নূর লিখেন, “একাত্তর টিভির সাংবাদিক কত বড় জঘন্য কাজ করল দেখেন, কোনো যাচাই-বাছাই না করে প্রলয় গ্যাংয়ের সাথে আমাদের এই গ্রুপ ছবিটা জড়িয়ে দিলো। এগুলো কি রকম সাংবাদিকতা?”
Screenshot: Nurul Islam Nur Facebook Post
পাশাপাশি রিউমর স্ক্যানার টিম ডেইলি অবজারভারের ঢাবি প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলামের সাথেও যোগাযোগ করে৷
এ সময় তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “এই ছবিটা আমাদের প্রথম বর্ষের ছবি। এখানে আমরা দুইজন সাংবাদিক আছি৷ ঢাকা পোস্টের আমজাদ হোসেন হৃদয় ও আমি তাওসিফুল ইসলাম। ডানদিক থেকে প্রথম হচ্ছে আমজাদ, তিন নাম্বার হচ্ছি আমি। বাকিরা আমাদের অন্যান্য বিভাগের বন্ধু।”
তিনি বলেন, ‘আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছিল উদ্যানের প্রলয় গ্যাং ও আমাদের গ্যাং কেমন ছিল সেটা নিয়ে। আমাদের সবাই একেকজন একেক জায়গায় কাজ করতেছি। কেউ সাংবাদিকতা করছে, কেউ ব্যবসায় করছে, কেউ শিক্ষক কোচিং সেন্টারের এ ধরনের একটা পোস্ট দিয়েছিল৷ পরবর্তীতে একাত্তর টিভি আমাদের এই ছবিটাই একাত্তর টিভি প্রলয় গ্যাংয়ের প্রতিবেদনে যাচাই-বাছাই না করেই ব্যবহার করে ফেলেছে এবং প্রলয় গ্যাংয়ের সাথে আমাদের সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।’
অর্থাৎ আরিফ পাটোয়ারী যে ছবিটিকে তার বন্ধু-বান্ধবের সমন্বয়ে গঠিত স্পেশাল গ্যাং হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, সেই ছবিটিকেই একাত্তর টিভি প্রলয় গ্যাংয়ের ছবি হিসেবে তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে।
তবে একাত্তর টিভি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রলয় গ্যাং’ শিরোনামে তাদের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদন সরিয়ে নেয় এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনটির প্রাইভেসি প্রাইভেট করে।
ইউটিউবের ভিডিওটি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্কের এক নাম প্রলয় গ্যাং!‘ শীর্ষক শিরোনামে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও সংযুক্ত ছিল। ইউটিউবে প্রতিবেদনটির প্রাইভেসি প্রাইভেট করায় ওয়েবসাইটেও ভিডিওর প্রাইভেসিও ‘প্রাইভেট’ দেখা যাচ্ছে।
Screenshot: Ekattor TV
তবে ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও এই সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী তাদের প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশোধনী বার্তা সম্পর্কিত কোনো ফেসবুক পোস্টও করেনি সংবাদমাধ্যমটি।
ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়ার পর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। প্রতিবেদনটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
মূলত, গত ৩১ মার্চ বেসরকারি সংবাদ চ্যানেল একাত্তর টিভি ঢাবির প্রলয় গ্যাং নিয়ে তাদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পাশাপাশি একই বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্কের এক নাম প্রলয় গ্যাং!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি প্রলয় গ্যাংয়ের ছবি দাবিতে কিছু শিক্ষার্থীর একটি দলীয় ছবি ব্যবহার করে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রলয় গ্যাংয়ের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিতে থাকা শিক্ষার্থীরা কেউ প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য নয় এবং তাদের সাথে প্রলয় গ্যাংয়ের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই বরং এই শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা সহ বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত।
প্রসঙ্গত, প্রলয় গ্যাং হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২০-২১ সেশনের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর গড়ে তোলা একটি গ্যাং। গ্যাংটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কের ভেতরের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অফিসে আস্তানাও বানায়। তবে সম্প্রতি তাদের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ঢাবি কর্তৃপক্ষ একটি আন্ত:হল তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইতোমধ্যে প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে বহিষ্কার করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
সুতরাং, একাত্তর টিভি ঢাবির চতুর্থ বর্ষের একদল ভিন্ন শিক্ষার্থীর গ্রুপ ছবিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি প্রলয় গ্যাংয়ের গ্রুপ ছবি দাবিতে প্রচার করেছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা করায় চাকরি গেলো প্রধানশিক্ষিকার’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষিকার চাকরি খোয়ানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার।
ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তর এর অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ মার্চ ‘ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা, চাকরি গেলো প্রধান শিক্ষিকার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: deshrupantor.com
এছাড়া, শিক্ষাভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল শিক্ষা বার্তা এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ মার্চ ‘ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ন নিয়ে আলোচনা, চাকরি গেল প্রধানশিক্ষিকার’ শিরোনামে সমজাতীয় আরেকটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও বিস্তারিত অংশে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির বরাতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা করার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। আর চাপের মুখে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন প্রধানশিক্ষিকা। তবে বাংলাদেশের নেটিজেনরা সংবাদের বিস্তারিত না জেনেই বিষয়টি বাংলাদেশের মনে করেছেন। অন্যদিকে একাধিক ফেসবুক পেজ যথাযথভাবে যাচাই না করে অথবা অধিক রিচ পাওয়ার আশায় বিস্তারিত উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করেছে। ফলে ঘটনাটি আমেরিকার ফ্লোরিডার হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
Omar Faruk নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘শিক্ষাবার্তা ডট কম’ নামের পেজ থেকে প্রচারিত পোস্টটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন(আর্কাইভ) ‘আর এদিকে ছাত্রীদের ইজ্জত লুটেপুটে খাচ্ছে তাদের কোন বিচার নাই।’
Screenshot: Facebook
Mohammad Majharul নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘Educational News of Bangladesh’ নামের পেজ থেকে প্রচারিত পোস্টটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন(আর্কাইভ) ‘উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ডুড’।
Screenshot: Facebook
এছাড়া যেসব পেজ থেকে তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে সেসব পেজের কমেন্টবক্স যাচাই করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।
Collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে অধিকতর অনুসন্ধানে বিবিসি নিউজে ২৫ মার্চ ‘Principal resigns after Florida students shown Michelangelo statue’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে মূল ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়।
Screenshot: BBC News
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফ্লোরিডার তাল্লাহাসি ক্লাসিক্যাল স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা হোপ ক্যারাসকিল্লা ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেনেসাঁর শিল্পকলা প্রসঙ্গে ক্লাস নিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে ইতালির বিখ্যাত শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর ভাস্কর্য ‘ডেভিড’ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, নগ্ন পুরুষের মূর্তিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পর্নোগ্রাফি চিনিয়ে দিয়েছেন প্রধানশিক্ষিকা। পরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ দেন এবং এরপরেই প্রধানশিক্ষিকাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষিকার চাকরি খোয়ানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার।
মূলত, সম্প্রতি ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষিকার চাকরি খোয়ানোর ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। যা নিয়ে বিবিসি নিউজে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে বিবিসি নিউজের সূত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ করা হলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি যথাযথ যাচাই না করে শুধুমাত্র শিরোনাম কপি পেস্ট করে ফেসবুকে প্রচার করছেন। ফলে ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হলেও দেশটির নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসে পর্ণ নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষিকার চাকরি খোয়ানোর ঘটনাটি বাংলাদেশে ‘ফ্লোরিডা’ শব্দ উল্লেখ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “২৪ বছর ধরে মাটির নিচের কারাগারে সুদানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম ছামসাদিন” শীর্ষক দাবিতে মুমূর্ষু ব্যক্তির ছবি সম্বলিত একটি তথ্যসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃদ্ধ ব্যক্তির মুমূর্ষু ছবিগুলো সুদানের সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম শামসউদ্দিন এরনয় বরং এগুলো ২০১৯ সালে কেনিয়ায় দুর্ভিক্ষের কবলে পরা এক বৃদ্ধ ব্যক্তির ছবি। এছাড়া, ফেসবুক পোস্ট ও ভিডিওতে দাবি করা সামরিক পোশাক পড়া ব্যক্তিটি সুদানের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী নয় বরং এটি সুদানের সেনা শাসিত রাজনৈতিক দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওমর জেইন আল আবেদীনের ছবি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত বিবিসি আফ্রিকার সংবাদ কর্মী Roncliffe Odit এর টুইট পোস্টে আলোচিত বৃদ্ধ মুমূর্ষু ব্যক্তির ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Twitter
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম BBC তে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ “Kenyan anger over Turkana ‘starvation’ being ignored” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে সেসময়ের কেনিয়ার দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়।
Screenshot from BBC
এছাড়া সুদানের ডিফেন্স মিনিস্ট্রির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, কর্নেল ছামসাদিন ইব্রাহিম নামক একজন ব্যক্তি সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। যিনি ২০০১ সালে এক বিমান দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
মূলত, ২০১৯ সালে কেনিয়ায় ভয়াবহ খরার কবলে পড়লে সেদেশে দুর্ভিক্ষ হয়। সেসময় বিবিসি আফ্রিকার সংবাদকর্মী Ronecliffe Odit দুর্ভিক্ষেরকবলে আক্রান্ত একজন বৃদ্ধের ছবি তুলে তার ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে টুইট করেন। উক্ত ছবিগুলোর ব্যক্তিকে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়া সুদানের সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ছবিগুলো সুদানের কথিত সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আকদ ইব্রাহিম এর দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় দাবিটিকে মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানা।
সম্প্রতি, “কাশ্মীরে চেনাব নদীর উপর তৈরী বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতুর উপর আজ ট্রেনের ট্রায়াল রান হয়ে গেল সফলতার সাথে! জয় ভারত” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি কাশ্মীরে চেনাব নদীর উপরের সেতুতে ট্রেন ট্রায়ালের নয় বরং এটি চীনের বেইপানজিয়াং নদীর উপরের সেতুতে ট্রেন চলাচলের ভিডিও ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুইহং রেলওয়ে বেইপানজিয়াং ব্রিজটি (চীনের) লিউপানশুই শহরের শুইচেং জেলার ইংপান টাউনশিপ এবং জিনজি টাউনশিপের সংযোগস্থলে বেইপানজিয়াং নদী উপত্যকায় অবস্থিত।“
Screenshot from DDPC
পাশাপাশি ‘Highestbridge.com’ নামক সেতুর তথ্য বিষয়ক সাইটে “Beipanjiang Railway Bridge Shuibai” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ভিডিওর স্থিরচিত্র সম্বলিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যদিও এই প্রতিবেদনটি অন্তত ৬ বছরের পুরোনো হওয়ায় এখানে পূর্বের নাম (শুইবাই) উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot from Highestbridge
কাশ্মীরের চেনাব নদীর উপর নির্মিত সেতুর বিষয়ে কি জানা যায়
মূলত, গত ২৬ মার্চে ভারতের রেল মন্ত্রী আশ্বীনি বিষ্ণু কাশ্মীরে্র চেনাব নদীর উপর নির্মিত সেতু পরিদর্শন করেন। সেখানে রেললাইনে লড়িতে চড়ে একটি প্রথমিক ট্রায়ালে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে প্রায় একইরকম দেখতে চীনের একটি সেতুতে রেল চলাচলের ভিডিওকে কাশ্মীরের চেনাব নদীর উপর তৈরী সেতুতে রেলের ট্রায়াল দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের সংবাদ সাইট ‘DDPC’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “শুইবাই রেলওয়ে নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে শুইহং রেলওয়ে রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বেও ভিডিও ভিত্তিক প্রচারিত বেশকিছু তথ্য যাচাই করে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চীনের একটি সেতুতে ট্রেন চলাচলের ভিডিওকে কাশ্মীরের চেনাব নদীর উপরের সেতুতে ট্রেন ট্রায়ালের ভিডিওটি দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পুর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘ইফতারি শেষেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়নি বরং ঘটনাটি ইজরাইলের এবং ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
গত ২৭ মার্চ News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজে এবং Faridpur TV নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘ইফতার শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। সেখানে বলা হয়, চলমান আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢাললো ইসরায়েলি সরকার। ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার’ প্রস্তাব বাতিল তো দূরের ব্যাপার, ইস্যুটি নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। স্পষ্ট ইঙ্গিত তার, প্রশাসনের বিরোধিতা করলে, যেকেউ পাবে মোক্ষম জবাব। ক্ষুব্ধ ইহুদিদের অভিযোগ, দেশকে স্বৈরশাসনের দিকে নিচ্ছে কট্টর ডানপন্থী প্রশাসন। এ অবস্থা চলতে থাকলে, সরকারের পতন অনিবার্য।
ভিডিওটির কমেন্টবক্স যাচাই করে দেখা যায় সেখানে ফেসবুক ইউজাররা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করেছেন। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘোরাওয়ের বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে করে সেখানে নেটিজেনদের আপত্তিকর কমেন্ট করতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত ভিডিওটির সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত ২৭ মার্চ অর্থাৎ ওই ভিডিও প্রকাশের দিনেই মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির অনলাইন সংস্করণে ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্তের জেরে উত্তাল ইসরায়েল; প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jamuna TV Online
প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের বরাতে জানানো হয়, চলমান আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢাললো ইসরায়েলি সরকার। ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার’ প্রস্তাব বাতিল তো দূরের ব্যাপার, ইস্যুটি নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। স্পষ্ট ইঙ্গিত তার, প্রশাসনের বিরোধিতা করলে, যেকেউ পাবে মোক্ষম জবাব। ক্ষুব্ধ ইহুদিদের অভিযোগ, দেশকে স্বৈরশাসনের দিকে নিচ্ছে কট্টর ডানপন্থী প্রশাসন। এ অবস্থা চলতে থাকলে, সরকারের পতন অনিবার্য।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে যমুনা টিভির প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু দাবিকৃত ভিডিওতে পাঠ করা হয়। এছাড়া প্রচারিত ভিডিও’র প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও অংশে ব্যবহৃত ছবিটিও যমুনা টিভির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।
Collage: Rumor Scanner
পাশাপাশি, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও নিয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়নি বরং বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘটনাটি ইজরায়েলের।
মূলত, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্তের জেরে উত্তাল ইসরায়েলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা হয়। তবে প্রচারিত নিউজ বুলেটিন ভিডিওতে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘ইফতারি শেষেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ শীর্ষক ক্যাপশন এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত ঘটনায় পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ‘ইফতারির পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।